৪. মানিকচক থেকে ইংরেজবাজার

মানিকচক থেকে ইংরেজবাজার পর্যন্ত ছেড়ে দিলেও, ইংরেজবাজার থেকে এ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশ মাইল রাস্তা গাড়ি একটানা চলেছে। উদিত হাত উলটে ঘড়ি দেখল। প্রায় একটা বাজে। ওয়ারি থেকে বিহার রাজ্য পড়বে। পূর্ণিয়া জেলার ভিতর দিয়ে যেতে হবে। সেখানকার রাস্তার অবস্থা কোথায় কী, জানা নেই। তবে এই পথেই নারায়ণ আর মিহির এ গাড়ি নিয়ে এসেছিল। তার থেকেও দুশ্চিন্তার বিষয়, ছিনতাই আর ডাকাতদের জন্য। একটাই রক্ষে, ছোট গাড়ি নয়, ট্রাক। লুট করবার উদ্দেশ্য থাকলে, ট্রাকও আক্রমণ করতে পারে। ভেবে অবিশ্যি লাভ নেই, করলে দেখা যাবে।

সুতপার গা আর চুল থেকে সুন্দর একটা গন্ধ লাগছে। সুতপার মাথা ওর কাঁধে ঠেকে রয়েছে। ওর নাম কি সত্যি সুতপা। ও কে, মেটেলিতে কেন যাচ্ছে। পরিচয় চাপছে, বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু কেন। উদিত নারায়ণ যদি ওর পরিচয় পায়, তা হলে ক্ষতির কী থাকতে পারে। নারায়ণের কি সত্যি চেনা মুখ বলে মনে হয়েছে সুতপাকে, নাকি একটা বাজে কথা বলছে। অবিশ্যি, নারায়ণের অনেক জায়গায় যাতায়াত, অনেক রকম পরিবেশে। জিপের লোকগুলো সুতপাকে এমনভাবে দেখছিল, যেন চেনে, অথবা অন্য কোনও মতলায় এক বার তাকাল। হঠাৎ যেন বিমনা মহকিছর মধ্যে উদিতের ওপর সুতপার কোনও মতলব নিয়ে, পিছন নিতে চাইছিল। সুতপা সুন্দরী, বেশ বড়লোকের মেয়ে, বোঝা যায়।

উদিত ঘাড় ফিরিয়ে এক বার তাকাল। হঠাৎ যেন বিমনা হয়ে পড়ল। সামনের দিকে তাকিয়ে গাড়ি ঠিক রাখল। কিন্তু মনটা কেমন চঞ্চল হয়ে উঠল। বিপদ ভয়, সবকিছুর মধ্যে উদিতের ওপর সুতপার এত ভরসা কীসের। এত নির্ভরতা কেন, কেবল কি তা-ই। আজ সকালের দিকে হাওড়ার বুকস্টলে যে মেয়েকে দেখেছিল, মানিকচক থেকে যে মেয়েকে সে হাতে ধরে ট্রাকে তুলেছিল, একি সেই মেয়ে, যে অনায়াসে ওর কাঁধে মাথা পেতে দিয়ে ঘুমোচ্ছে। এ কি কেবল বিশ্বাস, না আর কিছু মীনা আর নারায়ণের কথা মনে পড়ে গেল, উদিতকে নাকি সুতপার খুব ভাল লেগেছে।

কী থেকে সেটা বোঝা যায়, উদিত জানে না। শুধু এইটুকু মনে হচ্ছে, কলকাতায় বউদির বোনও বোধ হয়, এমন অনায়াসে ওর কাছে নিজেকে ছেড়ে দিতে পারেনি। অথচ আজ সকালে সুতপাকে ও চোখে দেখেছে, সন্ধ্যায় কথা, তাও অপরিচিতই বলতে হবে। এটা কী করে সম্ভব হচ্ছে পুরুষ হিসাবে উদিতকে কি সুতপার ভয় নেই।

কাঁধের কাছে একটু চাপ লাগতে উদিত আর এক বার তাকাল। সুতপা ওর দিকে চেয়ে আছে। নিচু স্বরে বলল, খুব কষ্ট হচ্ছে, না?

কেন?

একলা জেগে জেগে গাড়ি চালাচ্ছেন?

কষ্ট হচ্ছে না, চোখ বুজে আসার ভয় লাগছে।

একটু চুপচাপ। সুতপার গলা আবার শোনা গেল, আপনি আমাকে মেটেলি অবধি পৌঁছে দেবেন?

উদিত অবাক হয়ে বলল, শিলিগুড়ি থেকে ট্রেনেই তো যেতে পারবেন।

রেলরাস্তা যদি ঠিক থাকে।

তা সত্যি।

যদি ঠিক না থাকে?

তা হলে একটা ব্যবস্থা করতে হবে।

কী ব্যবস্থা?

এখন কী করে বলব।

 আমি আপনার সঙ্গে যেতে চাই।

উদিত সুতপার দিকে তাকাল। সুতপার মতো মেয়ের চোখের অনুরাগ ওর চেনা নেই। কিন্তু সুতপার চোখের দিকে চেয়ে ওর বুকে কেমন দোলা লেগে গেল। সুতপা মাথাটা সরাচ্ছে না। আবার বলল, আপনার কি অনেক কাজ আছে?

উদিত বলল, আমি বেকার।

 আবার চুপচাপ, কেবল এঞ্জিনের শব্দ।

এবার উদিত জিজ্ঞেস করল, আমাকে এত বিশ্বাস করছেন কেন বলুন তো।

সুতপা বলল, কথাটা আমিও সন্ধেবেলা থেকে ভাবছি। কেন তা আমিও জানি না।

উদিত আবার তাকাল। সুতপার স্থির চোখ, ওর ওপর নিবদ্ধ। ঠোঁটে কেমন একটা হাসি, দাঁত দেখা যাচ্ছে না। উদিত সামনে তাকাল। সুতপার নিচু স্বর শোনা গেল আবার, মানুষের মন বোঝা যায় না, আমি আমার মনই বুঝি না। বুঝতে পারছি না।

উদিতের এক বার মনে হল, বড়লোকের মেয়ে, প্রেম প্রেম খেলার অভ্যাস আছে হয়তো। কিন্তু কথাটা ওর নিজের কাছেই বেমানান লাগল। প্রেম প্রেম খেলা কি এইরকম। সেরকম চটুলতা তো সুতপা এক বারও দেখায়নি। ঢং বা ঢলাঢলি যাকে বলে, সুতপার আচার আচরণে তার কিছুই নেই। যেন অনেক দিনের চেনাশোনার মতো, উদিতের কাছে অনায়াসে নিজেকে সঁপে দিয়েছে।

সুতপার গলা আবার শোনা গেল, মানুষ চিনতে পারি কি না, জানি না। কিন্তু আমার এরকম কখনও হয়নি।

উদিত জিজ্ঞেস করল, কী রকম?

 সামান্য চেনা একটা মানুষের সঙ্গে–পুরুষের সঙ্গে, এভাবে মিশে যাওয়া।

উদিত কিছু বলল না। ওর কাঁধে, সুতপার নরম চুলের চাপ লাগল আবার। শোনা গেল, আপনার কী মনে হয়।

উদিত জিজ্ঞেস করল, কীসের?

আমাকে? আমাকে আপনার কী মনে হচ্ছে। রাস্তার একটা বাজে খারাপ মেয়ে, না?

তা কেন মনে হবে।

 তবে?

উদিতের বুকের কাছে কিছু যেন দাপাদাপি করছে। কথা বলতে পারছে না। এখন তাকাতেও পারছে না। ওর ভিতরের আবেগটা যেন কেমন রক্তিম আর মাতাল হয়ে উঠতে চাইছে। একটু পরে বলল, আমি যেন ঠিক ভাবতে পারছি না।

আমিও না।

বলতে বলতে সুতপা এক হাত দিয়ে উদিতের বলিষ্ঠ গলা স্পর্শ করল, উদিত সুতপার মুখের দিকে তাকাল, ওর বুকটা ধকধক করতে লাগল, কনুইয়ের কাছে ওর হাতের ওপর রাখা সুতপার নখ-রাঙানো ফরসা হাতটা এক বার দেখল। বলল, আমি একটা সামান্য ছেলে।

আমি কি অসামান্য?

মনে হয়।

কী রকম?

 সব ব্যাপারেই। রূপ গুণ অবস্থা। সকালবেলা স্টলের কথা মনে আছে?

মানিকচক থেকে প্রথম মনে পড়েছিল, কোথায় যেন এ মুখ সকালে দেখেছি।

 তখন আমার মনে হয়েছিল, বড়লোকের অহংকারী মেয়ে।

বড়লোক হয়তো, হ্যাঁ আমি বড়লোকের মেয়ে, কিন্তু অহংকারী না।

উদিত আবার তাকাল। সুতপার মুখটা একটু এগিয়ে এল, বলল, আমি অসামান্য নই।

উদিতের বুকের মধ্যে ধকধকানি বাড়ল। গাড়ির স্পিড ক্রমে কমতে লাগল। সুতপার শরীরের স্পর্শ লাগছে ওর বাঁদিকের গায়ে। সুতপা আবার বলল, আমার মনে হচ্ছে, আমার পিছনে কিছু নেই, সামনে কিছু নেই, আছে শুধু এই বর্তমানটা। এই বর্তমানের মধ্যেই আমার হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে।

উদিত বলল, তা কি যাওয়া যায়?

 বিচার করতে ইচ্ছা করছে না। বরং আমার গান করতে ইচ্ছা করছে।

গান?

হ্যাঁ, এই ভদ্রলোক না থাকলে, আমি গান করতাম। যাব না যাব না যাব না ঘরে।

 সুতপার কথা শেষ হল না। পিছনে একটা আলোর ঝলক দেখা গেল। উদিত চকিত হয়ে, ভিউ ফাইন্ডারের দিকে তাকাল। সেই জিপ, দুরন্ত গতিতে এগিয়ে আসছে। ওর ভুরু কুঁচকে উঠল, মুখ শক্ত হল। সুতপা এত কাছে, ওর কোলের ওপর দিয়ে, গিয়ারে হাত দিল। স্পিড অনেক বাড়িয়ে দিল।

সুতপার চোখে উদ্বেগ ফুটল আবার, জিজ্ঞেস করল, সেই তারা?

মনে হচ্ছে।

আমার মনে হয় ওদের একটা উদ্দেশ্য আছে।

 কী উদ্দেশ্য?

আমাকে ধরতে চায়।

ধরতে চাইবে কেন?

হয়তো ধরিয়ে দিতে চায়।

তার মানে?

তার মানে, আমি পালিয়েছি।

উদিত দ্রুত এক বার সুতপার মুখে চোখ বুলিয়ে নিল। জিপটা অনেকখানি এসে পড়েছে। বোধ হয়। ওরাও আশি মাইল স্পিড তুলেছে। নারায়ণের ঘুম ভেঙে গেল। জানালা দিয়ে তাকাল। জিপটা প্রায় পিছনেই। নারায়ণ কোমর থেকে রিভলবার বের করল। জিপটা বারে বারে হর্ন দিচ্ছে।

নারায়ণ বলল, না আর পারা যাচ্ছে না, আমি ওদের চাকায় গুলি করব।

উদিত ধমকে উঠল, একেবারেই না, বসে থাক।

কিন্তু এভাবে কতক্ষণ চলতে পারে?

ওদের আমি এগোতে দেব না।

কী চায় ওরা?

উদিত সুতপাকে এক বার দেখে নিয়ে বলল, কিছু হয়তো চায়।

 নারায়ণ রাস্তার দিকে তাকাল। বলল, ওয়ারি পার হয়ে এসেছি না?

হ্যাঁ।

 মহানন্দার জল রাস্তায় উঠে পড়েছে কি না কে জানে। সকালবেলা তো ওঠেনি দেখেছি।

দেখা যাক।

এই সময় সামনের দিক থেকে একটা গাড়ি আসতে দেখা গেল। সামনের গাড়িটাও জিপ বলে মনে হচ্ছে। উদিত লাইটের সিগনালিং করল, অফ করল, জ্বালল। সামনের গাড়িটা রেসপনস করল, আলো জ্বালিয়েই এগিয়ে আসতে লাগল। উদিত দু-তিনবার সিগনাল করল, তারপরে আলো জ্বেলেই, সমান গতিতে এগিয়ে চলল। যা হয় হবে, স্পিড কমানো চলবে না। ওর হাবভাব দেখে, সামনের জিপ আলোটা একবার অফ করল। উদিতের মনে হল, পুলিশের গাড়ি। উদিত বেরিয়ে যেতে চাইল, সামান্য একটু সাইড রেখে, একই গতিতে চলল, আলো নেভাল না। এখন সামনে পিছনে হর্ন বাজছে।

সুতপা এক বার বলে উঠল, পুলিশের গাড়ি না?

উদিত বলল, মনে হচ্ছে।

 এ গাড়িটা দাঁড় করাতে চাইছে, মনে হচ্ছে।

চলে যাব।

 মাঝখান থেকে সরছে না তো।

সরবে।

উদিত শক্ত গলায় বলল। ও যতই এগিয়ে গেল, সামনের গাড়িটা ততই হর্ন দিচ্ছে, সিগনাল করছে। উদিত কোনওরকম রেসপনস না করে গোঁ গোঁ করে এগিয়ে গেল। সামনের জিপটা যেন ছিটকে খানিকটা সরে গেল আর একটা চিৎকার শোনা গেল, সোয়াইন।

নারায়ণ সঙ্গে সঙ্গে পিছনে তাকিয়ে বলল, পিছনের জিপটা দাঁড়িয়ে পড়েছে, অন্য জিপটা তার পাশে।

উদিত চালাতেই লাগল। সুতপা পিঠের কাছে ওর জামা চেপে ধরে আছে। নারায়ণ আবার বলল, দুটো জিপই এদিকে আসছে মনে হচ্ছে।

উদিত বলল, পিছনে যে-ই আসুক, জোর করে না থামাতে পারলে, আমি থামছি না।

অত্যন্ত দৃঢ় শোনাল ওর গলা। ও সুতপার দিকে তাকাল! সুতপাও ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। বলল, আপনাকে কেউ থামাতে পারবে না।

.

প্রায় তোরবেলা, তখনও আকাশে আলো পরিষ্কার হয়ে জেগে ওঠেনি, শহরের আলো নিভে যায়নি, ওরা এসে শিলিগুড়ি শহরে পৌঁছুল।

নারায়ণ বলল, এখন আর অফিসের দিকে না গিয়ে বাড়ির দিকেই যাওয়া যাক।

উদিত নারায়ণদের বাড়ি চেনে। সুতপা বলল, হ্যাঁ, বাড়িতে ওঠাই ভাল, আমার একটু কোথাও থামা দরকার।

নারায়ণদের বাড়ির সামনে গাড়ি দাঁড়াল। দারোয়ান জেগে ছিল। সে দরজা খুলে দিল। সুতপা জানতে চাইল বাথরুম কোথায়। নারায়ণ বউদিকে ডেকে তুলে, তার হাতে সুতপাকে দিয়ে এল। নীচে এসে উদিতকে বলল, মেয়েটা তোর প্রেমে পড়ে গেছে একেবারে।

তার কথা শেষ হবার আগেই, বাড়ির সামনে একটা জিপ এসে দাঁড়াল। শিলিগুড়ি পুলিশের জিপ। উদিত দেখল একজন অফিসার নেমে, নারায়ণের ট্রাকটা দেখল। ঘরের দিকে এগিয়ে এল। চেনা অফিসার। জিজ্ঞেস করল, এ ট্রাকটা কখন এল?

নারায়ণ বলল, এই তো আসছে।

ড্রাইভার কোথায়?

তাড়াতাড়ি উদিত বলল, মিহির ট্রাক রেখেই বাড়ির দিকে গেল, সেই চালিয়েছে।

কোথা থেকে ট্রাকটা এল এখন?

মানিকচক, মালদহ।

এ গাড়িতে কোনও মেয়ে ছিল?

উদিত বলল, না তো, কী ব্যাপার?

অফিসার উদিতকে চেনে না, বলল, থাকার কথা। খবর আমরা আগেই পেয়েছি। কিন্তু ট্রাকটা শিলিগুড়ি ঢোকবার আগে ধরতে পারিনি। আর কে কে ছিল ট্রাকে।

নারায়ণ এক বার উদিতকে দেখে বলল, এ আর আমি।

কিন্তু নারায়ণবাবু এ ট্রাকে নিশ্চয়ই একজন মেয়ে ছিল। যদি জানেন তা হলে বলুন, তা না হলে, ব্যাপার অনেক দূর গড়াবে। যে মেয়ের কথা আমি বলছি, তার নাম নয়ন সিনহা। আজ তিন দিন ধরে, তার জন্য কলকাতা থেকে তরাই পর্যন্ত, ওদিকে বাগডোগরা এয়ারপোর্ট, সবখানে জাল ফেলে রাখা হয়েছে, যাতে তাকে ধরা যায়। আমাদের কাছে খবর হচ্ছে, এই নম্বরের, এই মিলিটারি মাঝারি ট্রাকে তাকে দেখা গেছে।

উদিত বলল, আমাদের কী লাভ বলুন মিথ্যে কথা বলে। আমরা নিশ্চয়ই তাকে ইলোপ করতে চাইনি বা, এরকম কোনও মেয়েকে আমরা চিনিই না।

অফিসার বলল, ইলোপ করবেন কেন। তাকে হাতে রাখতে পারলে, অনেক টাকাও রোজগার করতে চাইবে। কোটিপতির মেয়ে। যে তাকে ধরে রাখবে, সেই কিছু টাকা চেয়ে বসবে। কিন্তু আইনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে কেউ ধরিয়ে দিতে পারলে, নিশ্চয়ই টাকা পাবে, অনেক টাকাই পাবে। আর চালাকি করলে, তখন সেটা দুষ্কৃত বলে ধরা হবে।

নারায়ণ উদিত কিছুই বলল না। অফিসার বলল, তা হলে আপনারা কিছুই জানেন না?

নারায়ণ বলল, না আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

নারায়ণদের বিরাট প্রতিপত্তি। অফিসার বিশেষ কিছু না বলে, খালি বলল, ট্রাকটা যেন আর কোথাও পাঠাবেন না, আপনারা দুজনে বাড়ি ছেড়ে কোথাও যাবেন না।

অফিসার চলে গেল। নারায়ণ আর উদিত অবাক হয়ে পরস্পরের দিকে তাকাল। এ সময়ে সুতপা নেমে এল। উদিত আচমকা বলল, আপনার নাম নয়ন সিনহা।

সুতপা চমকে উঠল। নারায়ণ পুলিশের কথা বলল। সুতপা ভয়ার্ত মুখে বলল, তা হলে আর আমি এক মুহূর্ত এখানে থাকতে চাই না। আমার পালানো দরকার।

উদিত বলল, ব্যাপার কী?

সুতপা বলল, পরে সব বলব, আপনি আমাকে মেটেলিতে পৌঁছে দিন।

কিন্তু কী করে যাব! চারদিকে আপনার জন্য জাল ফেলা হয়েছে।

এখনও একটু অন্ধকার আছে। অন্য একটা গাড়ি নিয়ে, আমরা মেটেলিতে যেতে পারি।

উদিত নারায়ণের দিকে তাকাল। নারায়ণ বলল, একটা জিপ ব্যবস্থা হতে পারে, কিন্তু কোন পথে যাবি?

উদিত বলল, আমার মনে হয়, সেবক ব্রিজ দিয়ে গেলে, ওদিকে ধরে ফেলবে। কারণ ভাববে ওদিক ছাড়া রাস্তা নেই। আমরা যদি জলপাইগুড়ি হয়ে বার্নেস দিয়ে আবার উজোন যাই মেটেলিতে, ধরতে পারবে না।

ঠিক বলেছিস।

উদিত বলল, কিন্তু আমার জানা দরকার, আমি এমন কোনও অপরাধ করছি কি না। যেটা আমাকে অপমানিত করবে।

সুতপা ওর হাত ধরে বলল, আপনি কোনও অপরাধই করছেন না। শেষে সব জানতে পারবেন, হয়তো আপনি ঈশ্বরের আশীর্বাদ পাবেন। পরে সবই আপনাকে আমি বলব।

আর দেরি না করে, নারায়ণের গ্যারেজ থেকে জিপ বের করল উদিত। সব দেখেশুনে সুতপাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ল, জলপাইগুড়ির পথে।

.

সকাল নটার মধ্যেই বার্নেস পেরিয়ে, মালবাজারের রাস্তায় পড়ল। মেটেলির চা বাগান অঞ্চলে, ওরা যখন পৌঁছল তখন প্রায় বারোটা। সুতপার কথানুযায়ী মেটেলির পাহাড়ে টিলার ওপরে, যে বিশাল বাংলো প্রাসাদে এসে ওরা উঠল, উদিত সেটাকে প্রচুর চা বাগানের মালিক, টি-কিং দীপেন্দ্র সিংহের বাংলো বলেই জানে। দীপেন্দ্র সিংহ মারা গিয়েছেন কয়েক মাস। তাঁর স্ত্রী এখন এখানে আছেন।

সুতপা দৌড়ে বাংলোয় ঢুকল। চাকর দারোয়ান আয়া লোকজন সব হইহই করে উঠল। আর পিছনে পিছনে এল আরও কয়েকটা গাড়ি। সবই পুলিশের এবং অন্যান্য আরও কিছু।

প্রথমেই একজন অফিসার এসে, উদিতের হাত চেপে ধরল। আর সেই মুহূর্তেই বাংলোর বারান্দায়, সুতপাকে দেখা গেল এক মহিলার সঙ্গে। তিনি সুতপাকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। তিনি পুলিশ অফিসারকে বললেন, ওকে ছেড়ে দিন, আমার কাছে আসতে দিন। এই আমার মেয়ে আমার কাছে।

পুলিশ অফিসার অবাক হয়ে উদিতকে ছেড়ে দিল। উদিত বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল।

সমস্ত ঘটনার আকস্মিকতায়, উদিত বিস্মিত এবং চমকিত। যদিও, সমস্ত ঘটনা ওর এখনও জানা হয়নি। ইতিমধ্যেই যা ঘটেছে, তাতেই ও অবাক। সুতপা এখন আর সুতপা নয়, নয়ন সিন্হা বলাই উচিত। উদিতের পক্ষে যেন বিশ্বাস করাই কঠিন, তরাইয়ের বিখ্যাত চা ম্যানুফ্যাকচারার, যাকে টি-কিং বলা হত, সেই ডি সিনহা–অর্থাৎ দীপেন্দ্র সিংহের বিলাসবহুল বাংলোয় ও বসে আছে। আর নয়ন সেই দীপেন্দ্র সিংহেরই একমাত্র মেয়ে। যাকে বলা যায় কোটিপতির মেয়ে। এখন নারায়ণের কথা ওর বিশেষভাবে মনে পড়ছে। নারায়ণ যে বার বার বলেছিল, নয়নের মুখ তার চেনা চেনা লাগছে, সেটা মিথ্যা না। নারায়ণ নিশ্চয়ই এর আগে নয়নকে দেখেছে। নানা কারণেই, নারায়ণ মেটেলিতে এসেছে। নয়নও নিশ্চয়ই অনেক বার শিলিগুড়িতে গিয়েছে এবং সবাই এক ডাকেই, ডি সিনহার মেয়েকে চিনতে পেরেছে। শুধু শিলিগুড়িতে কেন, আরও অনেক জায়গাতেই হয়তো নয়নকে দেখা গিয়েছে।

সমস্ত ঘটনা জানবার জন্য, উদিতের মনে তীব্র কৌতূহল জেগে উঠল। নয়নের কাছ থেকেই সমস্ত ঘটনা জানতে হবে। কিন্তু আপাতত তার সুযোগ নেই। বসবার ঘরে, প্রায় একটা সভা বসে গিয়েছে। জেলা পুলিশের বড় কর্তা পর্যন্ত হাজির। তা ছাড়া অন্যান্য অফিসাররাও আছেন। টি-এস্টেটের বড় বড় কর্মচারীরাও রয়েছেন।

উদিত দেখল, নয়নের মা, মিসেস হেমলতা সিনহা এক ব্যক্তিত্বশালিনী মহিলা। সকলের ওপরেই যে তাঁর বিশেষ প্রতিপত্তি, তা তাঁর ব্যবহারেই বোঝা গেল। যদিও, এই মুহূর্তে তিনি খুশি ও আবেগে ভরপুর। সবাইকে চা-খাবারে আপ্যায়ন করে, সকলের কাছেই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন, ধন্যবাদ জানালেন। জেলা পুলিশের বড় কর্তাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানালেন। বললেন, আমার মেয়েকে ফিরে পাবার ব্যাপারে, আপনারা যথেষ্ট সাহায্য করেছেন।

জেলার কর্ণধার গাম্ভীর্যের মধ্যেই একটু হেসে বললেন, আমরা মিস সিনহাকে নিরাপদে এখানে নিয়ে আসার যথেষ্ট চেষ্টা করেছি, তবে ব্যাপারটা আমাদের হাতে ছিল না।

বলে তিনি উদিতের দিকে কুটি করে তাকালেন। বললেন, আমি এই উদিতবাবুর কোনও পরিচয় জানি না। মালদহ থেকে শিলিগুড়িতে খবর আসে যে, একটি মেয়েকে নিয়ে, দুজন যুবককে একটি ট্রাকে রওনা হতে দেখা গেছে। কিন্তু কোথায় তারা রওনা হয়েছে, সে খবর সঠিক জানা যায়নি। পরে অবিশ্যি আমরা জানতে পেরেছি, ট্রাকটি শিলিগুড়িতেই এসেছে। ট্রাকটিকে অনুসরণ করে আমরা ঠিক জায়গাতেই গেছলাম। কিন্তু পুলিশের কাছে উদিতবাবুরা মিথ্যে কথা বলেছিলেন। মিস সিনহার কথা উদিতবাবু অস্বীকার করেছিলেন। এক্ষেত্রে তার উচিত ছিল, পুলিশের কাছে সারেন্ডার করা।

উদিত অপ্রস্তুত হয়ে, সকলের দিকে একবার তাকাল। নয়ন বলে উঠল, সেটা উদিতবাবুর দোষ নয়, আমিই বারণ করেছিলাম।

জেলা কর্ণধার একটু নরম সুরে, সম্ভ্রমের সঙ্গে বললেন, সেটা আপনি ঠিক করেননি মিস সিনহা।

প্রথমত আপনার মায়ের অনুরোধে, সমস্ত ব্যাপারটাই গোপন ছিল। তিনি চাননি, কলকাতার আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আপনি যে পালিয়েছেন, সেটা এ অঞ্চলে জানাজানি হোক। কিন্তু ধরে নেওয়া হয়েছিল আপনি যে ভাবেই হোক, এদিকেই আসবেন। সেইজন্য আজ চার দিন ধরে, আমরা সবখানে আপনার জন্য জাল পেতেছিলাম। বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে সমস্ত ঘাঁটিতে। আপনার নিরাপত্তার জন্যই।

নয়ন লজ্জিতভাবে বলল, আমি সত্যি দুঃখিত।

জেলা কর্ণধার হাসলেন। তাঁকে একটু বিব্রতও দেখাল। বললেন, অবিশ্যি এক হিসাবে ভালই হয়েছে। আমরা ব্যাপারটা গোপন রাখতে চাইলেও, একেবারে গোপন থাকেনি। কিছু বাজে এলিমেন্ট খবরটা পেয়ে যায়। কী ভাবে পায় তা জানি না। তাদের সোর্স কলকাতাও হতে পারে। তারাও আপনার পিছু নিয়েছিল। ওদের দুটো উদ্দেশ্য থাকতে পারে। এক, আপনাকে এখানে পৌঁছে দিয়ে, আপনার মায়ের কাছ থেকে মোটা টাকা পুরস্কার পাওয়া। অথবা, কলকাতায় নিয়ে যাওয়া।

উদিতের সঙ্গে নয়নের এক বার চোখাচোখি হল। নয়ন ঠোঁট টিপে হাসল। বলল, তাদের বোধ হয় ইংলিশবাজারেই আমরা দেখেছি।

হ্যাঁ, সেখান থেকেই, তারা আপনাদের পিছু নিয়েছিল। তারা তোক খুব মারাত্মক, মার্ডারাস ওয়েপনস তাদের সঙ্গে ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল, দরকার হলে রক্তারক্তি করেও আপনাকে ছিনিয়ে নেবে।

নয়নের চোখে আতঙ্ক ফুটে উঠল। মিসেস সিনহা শঙ্কিত গলায় বলে উঠলেন, ভগবান বাঁচিয়েছেন।

জেলার কর্ণধার উদিতের দিকে তাকালেন। বললেন, সেটা অবিশ্যি উদিতবাবুরই কৃতিত্ব। উনি নির্ভয়ে খুব জোরে গাড়ি চালিয়েছিলেন। ওদের চিৎকারে বা ধমকে থামেননি, বা ওদের সাইড দেননি। কিন্তু, সামনে পুলিশের জিপ দেখেও নামেনি। আর একটু হলে পুলিশের জিপ খানায় পড়ে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যেত।

উদিতের চোখের সামনে সেই দৃশ্য ভেসে উঠল। ও নয়নের দিকে এক বার দেখল, মাথা নিচু করল। জেলা কর্ণধার বললেন, কিন্তু যারা পিছু নিয়েছিল, তারা সেই প্রথম জানল, ঘটনার পিছনে পুলিশ ঢুকে পড়েছে। তখন তারা সরে পড়ে। এনি হাউ, এখন আমরা ধরে নিচ্ছি, যা হয়েছে, তা মঙ্গলই হয়েছে। মিস সিনহা নিরাপদে পৌঁছেছেন।

বলে তিনি উঠে দাঁড়ালেন। তাঁর সঙ্গে প্রায় সকলেই। মিসেস সিনহা বললেন, সেজন্য আমি আপনাদের সকলের কাছেই কৃতজ্ঞ।

একে একে সকলেই বিদায় নিলেন। উদিতের মনে হল, ওর-ও এবার বিদায় নেওয়া উচিত। ও বাইরের বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল। মিসেস সিনহা বলে উঠলেন, তুমি কোথায় যাচ্ছ?

উদিত বলল, আমি এখন শিলিগুড়ি ফিরে যাব।

মিসেস সিনহা ঘাড় নাড়িয়ে বললেন, অসম্ভব। তুমি আমার নয়নকে ফিরিয়ে এনেছ। তোমাকে আমি এখন ছাড়তে পারব না। তুমি ঘরে গিয়ে বসো।

নয়ন তখন সকলের সঙ্গে নমস্কার বিনিময়ে ব্যস্ত। উদিত সেদিকে একবার দেখল।

মিসেস সিনহা আবার বললেন, তুমি বসো, আমি নয়নকে ডেকে দিচ্ছি।

উদিত একটু লজ্জা পেল মিসেস সিনহার কথা শুনে। মুখ ফিরিয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকল। অবিশ্যি সমস্ত ঘটনাটা আনুপূর্বিক জানবার কৌতূহল ওর রয়েছে। তা ছাড়া, এভাবে যে ছাড়া পাবে না, সেটা ও বুঝতে পারছে। কিন্তু নারায়ণের গাড়ি নিয়ে এসেছে। বেশি সময় ওর পক্ষে এখানে থাকা সম্ভব নয়। আজকের মধ্যেই ফিরে যেতে হবে।

উদিত এসে বসতে না বসতেই নয়ন এসে ঘরে ঢুকল। জিজ্ঞেস করল, আপনি নাকি এখনই শিলিগুড়ি ফিরে যাবেন বলছেন?

উদিত বলল, আমার কর্তব্য তো শেষ হয়েছে।

 নয়ন বলল, আপনার হয়তো হয়েছে, আমার তো হয়নি। ধরেছি যখন, এত সহজে ছাড়ছি না।

কথাটা বলেই, নয়নের মুখে রং ধরে গেল। লজ্জা পেয়ে চোখের পাতা এক বার নামাল। কিন্তু তেমন কোনও আড়ষ্টভাব নেই।

উদিত বলল, কিন্তু নারায়ণদের গাড়িটা নিয়ে এসেছি।

 নয়ন বলল, তা হোক। নারায়ণবাবুদের একটা গাড়ি নয়, অনেক গাড়ি আছে। বলেন তো, আপনার বন্ধুকে ডেকে পাঠাই।

উদিতের চোখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, নারায়ণ এলে খুব ভাল হত। একসঙ্গে ফিরে যেতাম।

নয়ন বলল, নারায়ণবাবুরও তা হলে সন্দেহ ঘুচত। উনি তো আপনাকে অনেক বারই বলেছেন, আমার মুখটা ওঁর চেনা চেনা লেগেছে।

উদিত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল, সে কথা আপনি শুনতে পেয়েছেন?

নয়ন মুখে কিছু না বলে, ঠোঁট টিপে হাসল। বোঝা গেল, শুধু এই কথাই নয়, নারায়ণের অনেক কথাই নয়ন শুনেছে। উদিত লজ্জায় ঠোঁট কামড়ে ধরল। নয়নের চোখের দিকে তাকাল। নয়নের চোখে হাসির ঝিলিক। বলল, আমি নারায়ণবাবুকে ট্রাঙ্ককল করছি। আমাদেরই একটা গাড়ি এখুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি ওঁকে নিয়ে আসবার জন্য। আমাদের জন্য না থাকেন, বন্ধুর টানে থেকে যান।

নয়নের হাসির মধ্যে একটু অভিমানের রেশও রয়েছে। উদিত বলল, তা কেন। আপনাদের জন্যই থেকে যাব। তবে নারায়ণ এলে ভাল হয়।

 নয়ন বলল, আমারও ভাল লাগবে।

তারপরেই সে ব্যস্ত হয়ে উঠে বলল, এখন চলুন তো। তাড়াতাড়ি চান করে জামাকাপড় বদলে খেয়ে নিয়ে শুতে যাবেন। কাল সন্ধে থেকে একটানা গাড়ি চালিয়েছেন।

 উদিত একটু অবাক হয়ে বলল, সবই করব, কিন্তু জামাকাপড়ও বদলাব কী করে। আমি তো কিছুই নিয়ে আসিনি।

নয়ন বলল, আপনার গায়ে মানিয়ে যাবার মতো পায়জামা-পাঞ্জাবি দিতে পারব। আসুন।

কেমন করে তা সম্ভব উদিত জানে না। ও নয়নকে অনুসরণ করল।

.

উদিত বাথরুমে ঢুকল। মোজাইকের মেঝে আর চীনামাটির টালির দেওয়াল, পুরোপুরি আধুনিক স্নানের ঘর। সেখানে পাট করা নিভাঁজ ধোয়া পায়জামা-পাঞ্জাবি তোয়ালে সবই ছিল। তেল সাবান শাম্পু থেকে কিছুই বাদ নেই। এ রকম বিলাসে অভ্যস্ত থাকলেও, মনটা বেশ খুশি হয়ে উঠল।

চান করে বেরিয়েই নয়নের সঙ্গে ওর দেখা। ঝি-চাকরেরা আশেপাশে থাকলেও, উদিতকে দেখাশোনার সব দায়িত্ব নয়নের নয়ন ওকে একটি ঘরে নিয়ে গেল। সেখানে খাটে মোটা গদির বিছানা এবং ড্রেসিংটেবিল।

নয়ন বলল, মাথা আঁচড়ে খেতে চলুন।

উদিত বলল, একলা খেতে যাব? আপনি আপনারা?

আমি পরে।

আপনিও তো সেই কাল সন্ধে থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

 তা হোক। মেয়েদের তাতে কষ্ট হয় না। আপনি খেয়ে শুতে আসবেন, তারপরে আমার ব্যবস্থা।

উদিত জানে, মেয়েরা এ ব্যাপারে একটু বেশি কষ্টসহিষ্ণু। কিন্তু এ ধরনের পরিবারের মেয়েদের ক্ষেত্রে, সেটা ওর জানা নেই।

নয়ন আবার বলল, আপনার বন্ধুকে ট্রাঙ্ককল করা হয়ে গেছে। গাড়িও বেরিয়ে গেছে। রাত্রের খাবার সময়ের আগেই পৌঁছে যাবেন।

উদিত বলে উঠল, আপনি দেখছি সবই খুব তাড়াতাড়ি করতে পারেন।

 নয়ন ঘাড় বাঁকিয়ে বলল, যথা?

উদিত থমকে গেল। সহসা একটু অপ্রস্তুতও। তারপরে বলল, এই কাজকর্মের কথা বলছি।

নয়ন ঘাড় নেড়ে, চোখে ঝিলিক হেনে বলল, আর কিছু নয় তো?

বলেই পিছন ফিরল। দু পা গিয়ে, আবার উদিতের দিকে ফিরে ডাকল, আসুন।

উদিত তাকে অনুসরণ করল। মনে মনে বলল, হ্যাঁ, আরও কিছু। তাড়াতাড়ি মন চুরি করতেও পারে এই মেয়ে।

খাবার ঘরে মিসেস সিনহা আগেই বসে ছিলেন। উদিতকে ডেকে বসালেন, এসো বাবা, বসো।

খেতে বসে প্রধানত, মানিকচক থেকে মেটেলি পর্যন্ত আসার বিষয়েই কথা হল। উদিতের থেকে নয়ন বেশি বলল, মিসেস সিনহা বারবারই উদিতকে বললেন, ভগবানই নয়নকে তোমায় জুটিয়ে দিয়েছিলেন। তা না হলে, আমার নয়নকে ফিরে পেতাম কি না কে জানে।

উদিত বিব্রত লজ্জায় প্রতিবাদ করল। মিসেস সিনহা সে কথা বোধ হয় শুনতেই পেলেন না। উদিতকে বারে বারে আশীর্বাদ করলেন।

.

নরম গভীর শয্যার শুয়ে উদিতের যেন ঘুম আসতে চাইল না। এতটা বিলাসে ভোগে ও অভ্যস্ত না। তা ছাড়া নতুন জায়গা, অপরিচিত পরিবেশ। কিন্তু শরীর অসম্ভব ক্লান্ত। খানিকটা নিঝুম হয়ে পড়ে রইল। আর সমস্ত ব্যাপারটাই ওর কাছে, অভাবিত আর অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে। গতকাল বিকালেও ও জানত না, নয়নের সঙ্গে ওর এভাবে পরিচয় হবে। এখানে এভাবে আসতে হবে। ভাবতেও পারেনি, নয়ন হল দীপেন সিংহের মেয়ে, চা-জগতে যাকে বলা হয় জায়ান্ট। উদিত এখন সেই জায়ান্টের বিলাস-প্রাসাদের এক ঘরে শুয়ে বিশ্রাম করছে। কোনও রকমেই যেন ভাবা যায় না। ভাবা যায় না, সুতপা নামে যে মেয়েটিকে ও একসময়ে খানিকটা করুণা-ই করেছিল, সে হল নয়ন সিনহা, যে আজকে বিরাট টি-এস্টেটের মালিক। অথচ নয়ন ওর সঙ্গে যে রকম ব্যবহার করেছে, এখনও করছে সেগুলোও যেন বিশ্বাস করা যায় না।

খানিকটা চোখ বোজা নিঝুম অবস্থাতেই শুয়ে প্রায় ঘণ্টা তিনেক কেটে গেল। ঘুম না হলেও, বিশ্রাম হল। শরীর এখন অনেকটা ঝরঝরে। উদিত উঠে বসল। ঘরের দরজাটা খোলা। মোটা পরদা ঢাকা দেওয়া রয়েছে। উদিত উঠে বসে দরজার দিকে তাকাতেই, পরদা একটু ফাঁক হল।

নয়নের মুখ দেখা গেল। চোখাচোখি হতে, নয়ন ঘরে ঢুকল। জিজ্ঞেস করল, ঘুম হল?

উদিত উঠে দাঁড়িয়ে বলল, এক রকম। আপনি ঘুমোননি?

নয়ন বলল, আমার ঘুম আসছে না। আমি এখনও রীতিমতো উত্তেজিত। বাড়িতে আসতে পেরেছি, সেটাই আমার উত্তেজনা।

উদিত নয়নকে দেখল। সত্যি, তাকে ক্লান্ত বলে মনে হচ্ছে না। একটু চোখের কোণ বসা। কিন্তু তার সারা মুখে একটি চকচকে ভাব। চোখের দৃষ্টি ঝকঝকে।

উদিতের চোখ ফেরাতে একটু দেরি হল। এখন যেন নয়নকে ও অন্য চোখে দেখছে। নয়ন হঠাৎ জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবেন?

উদিত যেন একটু থতিয়ে গেল। বলল, না, মানে—

একটু ভেবে নিয়ে আবার বলল, সমস্ত ঘটনাটা আমার জানতে ইচ্ছে করছে।

নয়ন ঘাড় নেড়ে বলল, কোন ঘটনা? আমার কলকাতা থেকে পালানো?

উদিত বলল, যদি কোনও অসুবিধে না থাকে।

 তাও আবার আপনাকে?

নয়নের চোখে ঝিলিক হানল। বলল, আপনাকে না বলতে পারলে, আর কাকে বলা যাবে। চলুন, চায়ের টেবিলে যাই। মা আর আমি দুজনেই আপনাকে সব কথা বলব।

চলুন।

নয়নের সঙ্গে উদিত গিয়ে দেখল, মাথা ঢাকা চওড়া বারান্দায় চায়ের টেবিল। সামনে সবুজ লন। চারপাশে ফুলের সমারোহ। টিলার ওপর থেকে, দূরে দেখা যায় চালসা ফরেস্ট। বিকেলের আলো নেই। সবই মেঘে ঢাকা। তবে বৃষ্টি হচ্ছে না। টিলার এই প্রাসাদের বারান্দায় বসে, বন্যার অবস্থা কিছুই বোঝা যায় না। কিন্তু ইতিমধ্যেই যে বন্যা পরিস্থিতির সে রকম কোনও পরিবর্তন হয়নি, তা অনুমান করা যায়।

চায়ের টেবিলে হেমলতা বসে ছিলেন। ডাকলেন, এসো উদিত। ঘুম হয়েছে তো একটু।

উদিত বলল, অনেকটা বিশ্রাম হয়েছে।

চাকর ট্রেতে করে টি-পট, চায়ের সব সরঞ্জাম টেবিলের ওপর বসিয়ে দিয়ে গেল। আর একজন রেখে গেল কিছু খাবার।

নয়ন হেমলতাকে বলল, মা, উদিতবাবুকে তুমি সমস্ত ঘটনা বলো।

 হেমলতা বললেন, আমি কেন, তুই-ই বল না। তোকে নিয়েই তো ঘটনা।

 কিন্তু কথা শুরু করলেন হেমলতা।

.

মা আর মেয়ে, দুজনের কথা থেকে যা জানা গেল, তা হল একটি নিখুঁত ষড়যন্ত্রের কাহিনী। দীপেন্দ্র সিংহের এক ভাই থাকেন কলকাতায়। অর্থাৎ নয়নের কাকা, বীরেন্দ্র সিংহ। বীরেন্দ্র কলকাতার একটি বেসরকারি ফার্মের বড় চাকুরে। তাঁর বাড়ির চাল-চলনে পুরো বিলিতিয়ানা। দীপেন্দ্র সিংহের আর্থিক সঙ্গতির তুলনায়, বীরেন্দ্রকে গরিব বলতে হয়। কিন্তু দীপেন্দ্র তাঁর ছোট ভাইকে নানাভাবে সাহায্য করতেন।

দীপেন্দ্রর মৃত্যুর পরে, বীরেন্দ্র হেমলতাকে বলে, তাঁর সম্মতি আদায় করে, নয়নকে নিয়ে গিয়েছিলেন কলকাতায়। তাঁর সদুদ্দেশ্য ছিল, নয়নকে কলকাতার উচ্চতর সমাজে পরিচিত করানো, সেই সমাজের চাল-চলনে পাকা করে তোলা। বীরেন্দ্রের বাড়িতে নাকি কলকাতার উচ্চ সমাজের যুবকদের যাওয়া-আসা। তাদের সঙ্গে নয়নের পরিচয় হলে, সব দিক দিয়েই ভাল। কারণ নয়নের উপযুক্ত পাত্র কলকাতার উচ্চ সমাজেই আছে। ভবিষ্যতে যে বিখ্যাত ডি. সিনহা টি-এস্টেটের দায়িত্ব নিতে পারবে।

কিন্তু বীরেন্দ্রর আসল উদ্দেশ্যটা ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। নয়ন সেটা কিছুদিনের মধ্যেই বুঝতে পেরেছিল। উচ্চ সমাজ সম্পর্কে নয়নের যে একেবারে কোনও ধারণা ছিল না, তা নয়। ছেলেবেলা থেকে, ও একটা বিশেষ সমাজের মধ্যেই মানুষ হয়েছে। দার্জিলিঙে থেকে পড়াশোনা করেছে। কলকাতায় ও কম যাতায়াত করেছে বটে, উচ্চ সমাজটা ওর অপরিচিত ছিল না। কিন্তু কলকাতায় কাকার বাড়িতে যে উচ্চ সমাজের স্পর্শে ও এসেছিল, তারা এক ধরনের মুখোশ-আঁটা, শহুরে ফেরেববাজ ছাড়া আর কিছু না।

নয়ন আগে কখনও কাকার পরিবারের সঙ্গে এত ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশা করেনি। ক্রমে, কাকাকেও ওর কলকাতার সেই সব তথাকথিত উচ্চ পর‍্যায়ের মুখোশ-আঁটা লোক বলে মনে হয়েছিল। পরিবারের চেহারাটাও ওর ভাল লাগেনি। ওর খুড়তুতো বোনেরা নাচ গান মদ্যপানে অভ্যস্ত। সকলেরই অনেক পুরুষ বন্ধু। অধিক রাত্রের আগে কেউ বাড়ি ফেরে না। কাকার নিজের বন্ধুবান্ধব আড্ডাও নয়নের ভাল লাগেনি। তিনি নিজেও একজন মাতাল।

মদ সম্পর্কে নয়নের কোনও কুসংস্কার নেই। কিন্তু সীমাহীন মত্ততা, উচ্ছ্বঙ্খলতা ও সহ্য করতে পারে না। দীপেন্দ্র সিংহ নিজে ছিলেন সাত্ত্বিক প্রকৃতির কর্মঠ মানুষ। তথাপি তিনি ক্লাবে যেতেন, বাড়িতে পার্টি দিতেন, সবাইকে পান-ভোজনে আপ্যায়ন করতেন। কিন্তু সে চেহারাটা সম্পূর্ণ আলাদা।

কাকার বাড়িতে নয়নের তা ভাল লাগেনি। ক্রমেই যেন ওর নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। যে সব যুবকের সঙ্গে ওর পরিচয় হয়েছিল, তারা এক ধরনের লোভী উচ্চুঙ্খল। চেহারায় বেশবাসে তারা যতই মার্জিত হোক, আর গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়াক, তাদের আসল চেহারাটা চিনতে ভুল হয়নি। নয়ন সব কথাই ওর মাকে লিখে জানাত। কিন্তু ওর সে সব কোনও চিঠিই কোনওদিন হেমলতার কাছে পৌঁছয়নি।

নয়ন কার্যত কাকার বাড়িতে বন্দি হয়ে পড়েছিল। কাকা তাঁর নিজের পছন্দমতো যুবকদের সঙ্গে, নয়নের বিয়ের প্রস্তাব করেছিলেন। নয়ন সবগুলোই নাকচ করেছিল। বুঝতে পেরেছিল, সেই সব যুবকেরা সবাই কাকার বিশেষ অনুচর। তাদের কারোর সঙ্গে নয়নের বিয়ে হলে, সে হবে কাকার একটি প্রভুভক্ত জীব। অথচ মা যে ওর সত্যিকারের কোনও খবরই পাচ্ছেন না। সেটা ও বুঝতে পেরেছিল। আর কাকার চিঠিতে হেমলতা জানতে পারতেন, নয়ন কলকাতায় বেশ বহাল তবিয়তে আছে। মাকে চিঠি লেখার সময়ও ওর নেই।

বীরেন্দ্র শেষ পর্যন্ত যখন বুঝতে পেরেছিলেন, নয়নকে বাগে আনা যাবে না, তখনই উনি স্থির করেছিলেন একটি ছেলের সঙ্গে জোর করেই নয়নের বিয়ে দেবেন। উদ্দেশ্য নয়নের ওপরে ভবিষ্যতে পূর্ণ কর্তৃত্ব বজায় রাখা। যদি বিয়ে দিতে না পারেন, তা হলে নয়নকে কোথাও লুকিয়ে ফেলবেন।

নয়ন সমস্ত বুঝতে পেরেই, কাকার বাড়ি থেকে পালিয়েছিল। কাকার বাড়ি বা পরিচিতদের ছাড়াও, নয়নের আরও জানাশোনা দু-একটি পরিবার ছিল। দার্জিলিঙের কলেজেই সেই পরিচয়। গত পাঁচ দিন আগেই, ও পালিয়ে গিয়ে উঠেছিল সেইরকম একটি বাড়িতে। সেখান থেকে হেমলতাকে চিঠি লিখেছিল। ট্রেনে রওনা হবার আগের দিন টেলিগ্রাম করেছিল। নয়ন কলকাতাতেই কয়েক দিন লুকিয়ে ছিল। বীরেন্দ্রের বাড়ি থেকে বেরিয়ে, সোজা উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হলে, ট্রেনেই ধরে ফেলতে পারত। নয়ন জানত, কাকা ওর পালাবার কথা জানা মাত্র চারদিকে তাঁর অনুচরদের ছড়িয়ে দেবেন। দিয়েছিলেনও নিশ্চয়ই। তিন-চার দিনেও কোনও খোঁজ খবর না পেয়ে, হতাশ হয়ে ধরে নিয়েছিলেন, নয়ন ওর মায়ের কাছে পালিয়ে গিয়েছে। আসলে নয়ন চার দিন পরে, হাওড়া স্টেশনে গিয়েছিল। তারপরের ঘটনা উদিতের মোটামুটি সবই জানা।

উদিত অবাক হয়ে সব শুনল। মনে মনে নয়নের সাহসের প্রশংসা না করে পারল না। কিন্তু স্বার্থের জন্য, অর্থের জন্য, নিজের ভাইঝির জীবনকে কেউ এভাবে বিপন্ন করে তুলতে পারে, এরকম চরিত্রের কথা ওর জানা ছিল না।

.

রাত্রে খাবার আগেই, নারায়ণ এসে পৌঁছুল। সে এসেই হইচই শুরু করে দিল। নয়ন খুশি হয়ে উঠল। নারায়ণকে হেমলতারও ভাল লেগেছে বোঝা গেল। নারায়ণের খালি এক কথা, আরে আমার চোখকে কখনও ফাঁকি দেওয়া যায়? আমি তো বারে বারেই বলেছি, এ মুখ আমার চেনা।

হেমলতা বেশি রাত করলেন না। ওদের তিন জনকে গল্পের আসরে বসিয়ে, তিনি শুতে চলে গেলেন। ওরা তিনজন অনেক রাত অবধি গল্প করল। কিন্তু নারায়ণের কথায় কথায় ইশারা আর ইঙ্গিত, উদিতকে রীতিমতো বিব্রত আর ত্রস্ত করে তুলল। অথচ যার জন্যে উদিত বিব্রত এবং ত্রস্ত, সেই নয়ন কেবল চোখে ঝিলিক হেনে হাসল।

পরের দিনও মেটেলি ছেড়ে যাওয়া হল না। হেমলতাই ছাড়লেন না। নয়নের তো কথাই নেই। উদিত লক্ষ করে দেখল, হেমলতার সঙ্গে নারায়ণের আলাদা কথাবার্তা হচ্ছে। একবার নয়নের সঙ্গেও, ওদের যেন কী কথাবার্তা হল।

বিকেলবেলা চায়ের টেবিলে, সকলের সামনেই, হেমলতা বললেন, উদিত, তোমার কি চলে যাওয়ার খুবই দরকার।

উদিত বলল, বাড়িতে.তো আমাকে যেতেই হবে। তা ছাড়া আমি বেকার মানুষ, শুনেছি বাবা একটা কী ব্যবস্থা নাকি করেছেন।

হেমলতা বললেন, তোমাকে এমনি একটা চাকরি দেব, সে কথা আমি ভাবতে পারছি না। তবে, বুঝতেই পারছ, আমাদের কেউ দরকার। যে আমাদের নিজেদের লোক হিসেবে, এস্টেট দেখাশোনা করবে, দায়িত্ব নেবে। তুমি কি সে দায়িত্ব নিতে পার না?

উদিত চোখ কপালে তুলে বলল, আমি!

নারায়ণ বলে উঠল, হ্যাঁ, তুই।

 উদিত নয়নের দিকে দেখল। চোখাচোখি হল।

 উদিত বলল, অসম্ভব। আমার সে যোগ্যতা নেই।

 হেমলতা বললেন, যোগ্যতা অর্জন করতে হয় বাবা। তুমি আরম্ভ করো। আমিও আছি। আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।

নারায়ণ বলল, নিশ্চয়ই। উদিত আগামীকাল আমার সঙ্গে চলুক। বাড়িতে গিয়ে দেখা করে, দু দিন বাদেই আবার ফিরে আসবে। আমিও আসব ওর সঙ্গে।

হেমলতা বললেন, সেই ভাল।

 উদিত যেন সমস্ত ব্যাপারটার কিছুই বুঝতে পারল না। স্তম্ভিত হয়ে বসে রইল, এবং এরকম একটা অবিশ্বাস্য ঘটনা ভাবতে ভাবতে, একেবারে অন্যমনস্ক হয়ে গেল। কতক্ষণ এভাবে বসেছিল, খেয়াল নেই। হঠাৎ ওর কানে এল, কী দুর্ভাবনায় পড়ে গেলেন?

উদিত চমকে তাকিয়ে দেখল, নয়ন ওর সামনে। সেখানে আর কেউ নেই।

উদিত বলল, কী করে পারব, তাই ভাবছি। আপনি কী বলেন?

আমি?

 নয়নের চোখে একবার ঝিলিক দিল। তারপরে যেন ওকে একটু গম্ভীর দেখাল। বলল, না পারলে কী করে চলবে? অন্তত আমার জন্যও পারতে হবে।

উদিতের মনে বিস্ময়ের চমক। নয়নের দিকে চেয়ে, কয়েক মুহূর্ত কথা বলতে পারল না। তারপরে উচ্চারণ করল, আপনার মুখ চেয়ে–?

নয়ন বলল, আপনার নয়, তোমার।

বলতে বলতেই নয়নের মুখে রঙের ছোপ লেগে গেল। উদিত সেই মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকাল। নয়ন এক বার মুখ নামাল। আবার চোখ তুলে তাকাল। দুজনেই হাসল, উদিতের মনে হল, নয়নের একটা নতুন পরিচয় যেন এই মাত্র পেল।

3 Comments
Collapse Comments

I got and read this book after 37 years later. Thank you so much.

I got and read this book after 37 years later. It’s one of my favorite story. Thank you so much.

নুরুল হাসান, December 20, 2022 at 6:44 am

বইটি পড়েছিলাম কলেজের প্রথম বর্ষে, মনে দাগ কেটেছিল। অনেক বই এর মাঝে হারিয়ে যেতে দেইনি, জীবনের তাগিদে পৃথিবীর বিভিন্ন কর্নারে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। বইটির নামটি ভুলিনি তবে লেখকের নাম ভুলে গিয়েছিলাম। আন্তরিকভাবে দুঃখিত। দেশে ফিরেছি কিছুদিন হল।এখনো বইয়ের পোকা, গতকাল নীলক্ষেতের (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে) বইয়ের বাজারে বইটি দেখে খুব আনন্দিত হয়ে কিনে নিলাম। ফিরে গিয়েছিলাম সেই যৌবনে, খুবই ভালো লেগেছে তবে অনুভূতিটি আর সেই রকম নেই। লেখক (স্বর্গীয়) কে সশ্রদ্ধ নমস্কার এবং ভালোবাসা থাকলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *