বিদেশীয়দের অনুবাদে গীতা
গীতার অনুবাদ প্রসঙ্গে
ভারতবর্ষের যে কয়টি গ্রন্থ নিয়ে বিদেশিরা সর্বাধিক মাথা ঘামিয়েছেন সেগুলি হল রামায়ণ, মহাভারত ও গীতা। ভারত বিদ্যাচর্চার অপরিহার্য অঙ্গ স্বরূপ ছিল এই তিনটি গ্রন্থের আলোচনা। পরবর্তীতে কালিদাসের ‘শকুন্তলা’ও বিশেষভাবে আলোচ্য সূচিভুক্ত হয়। কিন্তু সংখ্যাধিক্যের বিচারে আবার গীতার অনুবাদ ও গীতা সম্পর্কিত আলোচনাই সর্বাধিক।
বিদেশীয়দের দৃষ্টিতে প্রথম যিনি গীতাকে উপস্থপিত করেন তিনি চার্লস উইলকিনস। ইনি কলকাতায় এসেছিলেন ১৭৭০ খ্রিস্টাব্দে সাধারণ কেরানি রূপে। কিন্তু উইলকিনস অনতিকালের মধ্যে পারদর্শী হয়ে উঠলেন বাংলা ও ফারসিতে। তাঁর ভাষা শিক্ষার অদম্য উৎসাহ তাঁকে সংস্কৃত ভাষার প্রতি মনোযোগী করে তোলে। ওয়ারেন হেস্টিংস উইলকিনসকে কাশীতে গিয়ে উত্তম রূপে সংস্কৃত শেখার জন্য পাঠালেন। কলকাতায় ফিরে তিনি আত্মনিয়োগ করেন শ্রীমদ্ভগবদ গীতার অনুবাদে। অনুবাদ কর্ম শেষ হলে হেস্টিংস সেটি পাঠিয়ে দেন লন্ডনে কোম্পানির অফিসে। সঙ্গে সুপারিশ করেন কোম্পানি যেন পান্ডুলিপিটি নিজেদের খরচে ছাপে। পালিত হল হেস্টিংস এর নির্দেশ। ১৭৮৫ সালে চার্লস উইলকিনস-এর অনূদিত গীতা প্রকাশিত হল। সঙ্গে মুদ্রিত হল হেস্টিংস এর ভূমিকা। ভূমিকায় হেস্টিংস লিখলেন —
‘a proof of sublimity beyond the excellence of Milton in the true adoration of the Supreme Being.’
হেস্টিংস বিশ্বাস করতেন গীতায় বিধৃত হয়েছে হিন্দু প্রজ্ঞার সারবস্তু আর যে ভাষায় গীতা রচিত হয়েছে তা মিলটনের কাব্যে ব্যবহৃত ভাষার তুলনায় মহত্তর। পরমাত্মার ভজনা করা হয়েছে গীতাতে। অর্থাৎ যত না জ্ঞান চর্চার প্রতি হেস্টিংস এর দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল তদপেক্ষা তিনি অধিকতর ভাবে আকৃষ্ট হয়েছিলেন গীতার আধ্যাত্মিকতায়। ঈশ্বরীয় বিশ্বাসই তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছিল গীতার প্রতি, এটির ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশে।
উইলকিনস-এর অনুবাদটিই প্রথম ইউরোপীয় ভাষায় প্রকাশিত গীতার অনুবাদ। এটির ঐতিহাসিক মূল্য অনস্বীকার্য। উইলকিনস গীতার অনুবাদ করেছিলেন গদ্যে। সমালোচকের দৃষ্টিতে তাঁর ‘গদ্যশৈলী স্বভাবতই আঠারো শতাব্দীর পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছতোয়া ইংরেজি গদ্যের সহধর্মী।’ উইলকিনস এর অনুবাদের কিঞ্চিৎ নমুনা প্রকাশিত হল —
বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোহপরাণি।
তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যন্যানি সংযাতি নবানি দেহী।। ২২
নৈনং ছিন্দন্তি শস্ত্রাণি নৈনং দহতি পাবকঃ
ন চৈনং ক্লেদয়ন্ত্যাপো ন শোষয়তি মারুতঃ।। ২৩
অচ্ছেদ্যোহয়মদাহ্যোহয়মক্লেদ্যোহশোষ্য এব চ।
নিত্যঃ সর্বগতঃ স্থাণুরচলোহয়ং সনাতনঃ।। ২৪
অব্যক্তোহয়মচিন্ত্যোহয়মবিকার্যোহয়মুচ্যতে।
তস্মাদেবং বিদিত্বৈনং নানুশোচিতুমহর্সি।। ২৫ (দ্বিতীয় অধ্যায়)
এবারে উইলকিনস এর অনুবাদ —
‘As a man throweth away old garments, and putteth on new, even so the soul, having quitted its old mortal frames entereth into others which are new. The weapen divideth it not, the fire burneth it not, the water corrupteth it not, the wind drieth it not away; for it is eternal, universal, permanent, immoveable; it is invisible, it is inconceivable and unalterable; therefore, believing it to be thus, thou should not grieve.’
উইলকিনসের গীতার অনুবাদের সুবাদে ইংরেজ কবিকুলের অনেকেই গীতার সঙ্গে শুধু পরিচিত হলেন তাই নয়, সেইসঙ্গে তাঁদের কাব্যে গীতার প্রভাব প্রতিফলিত হল অনিবার্য রূপে। ব্রিস্টল লাইব্রেরিতে বসে S.T. Coleridge এই অনুবাদ পড়েছিলেন। তাঁর Note – Books-এর একাধিক স্থানে উইলকিনসের গীতার উল্লেখ লভ্য। গীতার পরোক্ষ প্রভাব পড়েছিল Coleridge এর অভিন্ন হৃদয় সুহৃদ Wordsworth এর কাব্যেও। এই প্রসঙ্গে ওয়ার্ডসওয়ার্থের ‘টিনটার্ন অ্যাবে’ এবং ‘ইনর্মটালিটি ও ডে’র উল্লেখ করা যায়।
অন্যান্য কবিদের মধ্যে গীতাতত্ত্বের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন যাঁরা, তাঁদের মধ্যে উল্লেখ্য Shelly, Mathew Arnold, থোরো, এমার্সন, হুইটম্যান, ইয়েটস, এলিয়ট এমন কি র্যাবঁো এবং স্প্যানিস কবি হিসেনেথ উল্লেখ্য। এঁরা সকলেই যে উইলকিনসের গীতার অনুবাদ পাঠ করেছিলেন এমন নয়, অন্যভাবেও গীতা তত্ত্বের সঙ্গে এঁদের পরিচয় লাভ ঘটেছিল।
চার্লস উইলকিনস-এর পর স্মরণীয় অনুবাদক রূপে উল্লেখ্য আউগুস্ত ভিলহেলম ফন শ্লেগেলের নাম। জাতিতে ইনি ছিলেন জার্মান। ইনি ছিলেন সংস্কৃতজ্ঞ পন্ডিত এবং ভারততত্ত্ববিদ। শ্লেগেল রামায়ণেরও অনুবাদ করেছিলেন। রামায়ণ এবং শ্রীমদ্ভগবদ গীতার অনুবাদ প্রকাশিত হল একই বছরে ১৮২৯এ। গীতার অনুবাদ করা হয়েছে ল্যাটিনে, কিন্তু গীতার শ্লোকগুলি দেবনাগরী হরফে মুদ্রিত। উল্লেখ্য শ্লেগেলের পূর্বেই গীতার জার্মানিতে অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। জার্মানিতে ভারত বিদ্যাচর্চায় ইন্ধন জুগিয়েছিল শ্লেগেলের গীতার ল্যাটিন অনুবাদ।
ফরাসি ভাষায় গীতার অনুবাদ করেন ইউজিন বুর্নুফ ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দে। ফ্রান্স লরিনগের জার্মানিতে অনুবাদ করেন ১৮৬৯-এ। গ্রিক ভাষায় গীতার অনুবাদ করেন দোমোত্রিয়া, ১৮৫৮এ। ক্রমে ইউরোপের অধিকাংশ ভাষাতেই গীতার অনুবাদ, আলোচনা প্রকাশিত হতে থাকে। সর্বাধিক আলোচনা হয় ইংলণ্ডে, আমেরিকায় এবং অবশ্যই ভারতবর্ষে।
Swami Prabhabananda and Christopher Isher wood রচনা করেন ‘The song of God : Bhagavad gita’ ১৯৪৪ এ। এটি প্রকাশিত হয় নিউ ইয়র্ক থেকে। এটির ভূমিকা লেখেন Aldous Huxley। Huxley গীতাকে আখ্যায়িত করেছেন Perennial Philosophy বলে। This focus of Indian religion is also one of the clearest and most comprehensive summaries of this Perennial Philosophy ever to have been made. Hence its enduring value, not only for Indians, but for all mankind.
Huxley মানবাত্মাকে পরম লক্ষ্যে উপনীত হতে কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ তিনটিকেই স্বীকার করে নিয়েছেন। ‘the way of work, the way of knowledge and the way of devotion. তাঁর মতে, ‘In Hindu thought the outlines of this completes and more adequate classification are clearly indicated;’ আমরা এবারে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গীতার অনুবাদ ও তাত্ত্বিক আলোচনার উল্লেখ করব যেগুলি বিদেশীয়দের দ্বারা সম্পাদিত কিংবা যাঁদের গ্রন্থাদি বিদেশ থেকে প্রকাশিত—
J. Cockburn Thomson, The Bhagavad Gita Hertford, 1855.
Hurry chand chintamon, A commentary on the Text of the Bhagavad Gita, London, 1874.
William Oxley, he philosophy of Spirit. Manchester, 1881.
John Davis, Bhagavad Gita, Hindu Philosophy, London 1882.
Edwin Arnold, The Song celestial, London, 1885.
L.D, Barnett, The Bhagavad Gita, The Lords’ song, London, 1905.
Neil Alexander, Gita and Gospel, Calcutta, 1903.
W.L. Wilm hurst, The chief Scripture of India and its Relation to Present Events, Edinburgh, 1906.
Charles Johnston, The Songs of the Master, Newyork, 1908
Arthur Frank Crane, The Bhagavad Gita, Chicago, 1918.
H.E. Sampson, The Bhagavad Gita, London, 1923.
Elizabeth Sharpe, Sri Krishna and Bhagavad Gita, London 1924.
W. Douglas Hill, Bagavad Gita, London, 1928.
H.Milford, The Bhagavad Gita, London, 1928.
A. W. Ryder, The Bhagavad Gita, London, 1929.
Edward J. Thomas, The song of the Lord : Bhagavad Gita, London, 1931.
Richard Carlyle, The bhagavad Gita, Los Angeles, 1933.
Franklin Edgerton, The Bhagavad Gita, Cambridge, 1944.
Wesley La violette, The Bhagavad Gita : An Immotal song, Los Angeles, 1945.
John M. Watkins, The Yoga of Bhagavad Gita, London, 1948.
Eliot Deutsch, Bhagavad Gita, New York, 1968.
Juan Mascaro, The Bhagavad Gita, Hermondsworth, 1968
R. C. Zaehner, Bhagavad Gita, London, 1969.
Ann Stanford, The Bhagavad Gita, New yoork, 1970.
এবারে অন্যান্য ভাষায় রচিত, অনূদিত কয়েকটি গীতা সম্পৃক্ত গ্রন্থ—
Rudolf Jamicek, the Bhagavad Gita, Jaroslav, 1945 (চেক)
Domotria, Bhagavad Gita, Athens, 1858. (গ্রীক)
Ida Vassalini, Bhagavad Gita, Bari, 1943. (ইটালীয়)
M. L. Kirby La, Bhagavad Gita, O poema Divino, Rome, 1905 (ইটালীয়)
Oleh Romo Samarang, Bhagavad Gita, Mandira, 1962. (ইন্দোনেশীয়)
Kwoe Tek Hoay, Bhagavad Gita Interpreted, Djakarta, 1961. (ঐ)
T. R. S. Peiper, Bhagavad Gita, das hohe Lied doe Indus, Leipzig, 1834. (জার্মানি)
Von. F. Lorinser, Die Bhagavad Gita, (Two Volumes) Brestaum 1869. (জার্মানি)
Richard K. V. Garbe, Die Bhagavad Gita, Tubingen, 1905. (ঐ)
Paul Deussen, Der gesang des heilgen (Bhagavad Gita), Leipzing, 1911. (ঐ)
Curt Bottger, Die Bhagavad Gita, Wur ttemberg, 1924. (ঐ)
Rudolf otto, Die Bhagavad Gita, Stuttgart, 1935. (ঐ)
W. kirfel, Verse Index to the Bhagavad Gita, Leipzig 1938. (ঐ)
J. A. B. Van Buitenen, Ramanuj on the Bhagavad Gita, Leiden Graven, hage, 1954. (ডাচ)
J. A. Blok, De Bhagavad Gita, Devanter, 1962. (ডাচ)
Paul Tuxen, Bhagavad Gita, Copenhagen, 1962. (ডেনিশ)
Emile Bur nouf, La Bhagavad Gita (In 2 volumes) Paris 1825. (ফরাসি)
Etienne Lamotte, Notes Sur La Bhagavad Gita, Paris, 1928. (ফরাসি)
E. Frankfurter, La Pensee religiense de la Bhagavad – Gita, Paris. 1934 (ফরাসি)
Sylvain Levi and J. T. Stickney, Bhagavad – Gita, Paris, 1965, (ফরাসি)
Emile Senart, La Bhagavad – Gita, Paris 1967, (ফরাসি)
A. Petrov, Pesn’ gospondnya (Bhagavad – Gita) Moscow, 1788. (রুশ)
A. P. Kaznacheeva, Bhagavad – Gita, Vladimir, 1909. (রুশ)
Boris Smirnov, Bhagavad – Gita, Ashkhabad, 1956. (রুশ)
A. Kamenskaya and I. Mantsiarli, Bhagavad – Gita, Kaluga, 1914. (রুশ)
A. W. Schlegel, Bhagavad – Gita, sive almi Crishnae et Arjunae Bonn, 1823. (লাতিন)
Federico Climent Terrer, Bhagavad – Gita, el mensaje del Maestro, Barcelona, 1928. (স্পেনীয়)
Immanuel Olsvanger, The Bhagavad – Gita, Jerusalem, 1956. (হিব্রু)
জগদীশ চন্দ্র কাপুর ১৯৮৩ সালে ভাগবত গীতার যে আন্তর্জাতিক গ্রন্থপঞ্জী প্রকাশ করেছেন তা থেকে জানা যাচ্ছে ১৭৮৫ থেকে ১৯৭৯তে সালের মধ্যে অর্থাৎ প্রায় দুই দশকের সময়কালে পঞ্চাশটি ভাষায় রচিত ২৭৯৫টি গীতা গ্রন্থের গ্রন্থভুক্তি ঘটেছে, ৬০০০টি Citations ও উল্লিখিত হয়েছে এই কাল সীমায়। ১৯৭৯ যে তথ্য প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে যাবার পর গীতার দৃশ্য শ্রাব্য রুপান্তর লাভের সূচনা ঘটেছে, পেতে শুরু করেছি C.D. ROM এবং Internet ও। মোটামুটিভাবে বলা যেতে পারে দুই শতাধিক ইংরেজি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে গীতার।
বিভিন্ন ভাষায় যেমন গীতার অনুবাদ হয়েছে, তেমনি অনুবাদেরও প্রকারভেদ আছে। প্রথমেই যে প্রশ্নটির সমাধান আবশ্যক তা হল গীতার অনুবাদে এত সংখ্যাধিক্য কেন? গীতা নিছক হিন্দু ধর্ম গ্রন্থের পরিচিতি নিয়ে থাকেনি, ব্যাপক পরিচিতি তার। মানুষের জ্ঞানের, মননের, চিন্তার বিস্ময়কর সমাবেশ লক্ষ্য করেছেন পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষজন গীতার ৭০০ শ্লোকে। মূলে গীতা সংস্কৃতে রচিত। বলাবাহুল্য সংস্কৃত ভাষা শিক্ষা করে গীতার রসাস্বাদন অধিকাংশের পক্ষেই সম্ভব নয়। মধুসূদন কাশীরাম দাসের মহাভারতের বঙ্গানুবাদকে তারিফ করে যে চতুর্দশপদী রচনা করেছিলেন এক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য—
চন্দ্রচূড় জটাজালে আছিলা যেমনি জাহ্নবী ভারত রস ঋষি দ্বৈপায়ন ঢালি সংস্কৃত হ্রদে রাখিলা তেমতি। তৃষ্ণায় আকূল বঙ্গ করিত রোদন।
গীতার অনন্যতায় আকৃষ্ট হয়ে অনেকেই এর সঙ্গে পরিচিত হতে আগ্রহী হলেন। সংস্কৃত না জানা বাঙ্গালী এবং পাশ্চাত্য দেশীয় মানুষ, উভয়ের ক্ষেত্রেই তাই গীতার অনুবাদের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হল। পাঠকের চাহিদা মেটাতে কিংবা অনুবাদক আগ্রহী পাঠকের দৃষ্টি গীতার প্রতি আকৃষ্ট করতেই অনুবাদ কর্মে যুক্ত হলেন। যা ভাল, মানুষ স্বার্থপরের মত তা একাকী ভোগ করতে চায় না, অন্যকেও তার শরিক করে নিতে চায়। এই মানসিকতা থেকেই গীতার অনুবাদের সূচনা। গীতার অনুবাদকে আমরা বেশ কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করতে পারি। এক শ্রেণীর অনুবাদক গীতার আদ্যন্ত কাব্যানুবাদে ব্রতী হয়েছেন, যেহেতু গীতা ছন্দোবদ্ধ পদে রচিত, মহাভারত মহাকাব্যের অংশ। পদ্যানুবাদের ক্ষেত্রে উল্লেখ্য হলেন, Edwin Arnold, Parrinder, Easwaran, Barbara Miller, P. Lal, Woodham, Sanderson Beck and Stephen Mitchell. একাধিক বাঙ্গালীকে কাব্যানুবাদ করতে দেখা গেছে গীতার। যাঁরা কাব্যানুবাদ করেছেন তাঁদের কেউ কেউ যেমন কবি আবার কেউ কেউ কবি না হয়েও প্রয়াস করেছেন ছন্দে গীতার অনুবাদে। Edwin Arnold নিজে ছিলেন কবি, অন্যদিকে নবীনচন্দ্র সেনও গীতার কাব্যানুবাদ করেছেন। গীতার গদ্যানুবাদকের সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। বাংলায় যেমন রাজশেখর বসু ইংরেজীতে তেমনি Jack Hawley’l The Bhagavad Gita A Walk through for westners, Ramesh S. Balsekar, Bibek Dabroy ইত্যাদি। তৃতীয় এক ধরনের অনুবাদেরও সাক্ষাৎ মিলছে যা গদ্য ও পদ্য উভয়ের মাধ্যমে রচিত। যেমন প্রভাবানন্দ এবং Isher wood এর রচনা। এঁরা গীতার কাব্যিক ভাবের অনুবাদে ছন্দের আশ্রয় নিয়েছেন। অন্যদিকে দার্শনিক তত্ত্বের অনুবাদের আশ্রয় নিয়েছেন গদ্যের। গীতার পদ্যানুবাদ করেছেন John Davies, Brian Hodg Kinson, George Thompson, Juan Mascaro, W. Dougles, P. Hill, প্রমুখ।
এক শ্রেণীর অনুবাদ পাই যেগুলি আপাতমস্তক Academic। এইসব গ্রন্থে গ্রন্থে গীতার আক্ষরিক অনুবাদ সন্নিবিষ্ট হয়েছে, যুক্ত করা হয়েছে যথোপযুক্ত ভাবে প্রাসঙ্গিক ব্যাখ্যা এবং টীকা। যেমন এদের মধ্যে পাই Telang, Edgerton, Deutsch, Zaehner, Bolle, Buitenen প্রমুখকে। আবার অনেকে গীতার অনুবাদ করেছেন পাঠকের দিকে দৃষ্টি রেখে যাতে অনুবাদ তত্ত্বের এবং তথ্যের ভারে তাদের কাছে ভারাক্রান্ত বলে না মনে হয়। একথা ত সত্যিই যে আপাত মস্তক পান্ডিত্যপূর্ণ গীতার আলোচনা ও অনুবাদে পাঠক খুব বেশি আকৃষ্ট হয় না, যাকে বলে জনপ্রিয়তা এসব বই তা লাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকে। তবে নির্ভর যোগ্যতার দিক দিয়ে, নিশ্চয়তার প্রেক্ষিতে এ সব গ্রন্থের তুলনা নেই।
গীতার অনুবাদে প্রয়াসী হয়েছেন বেশ কিছু ধর্মীয় সংস্থা অথবা ধর্মবেত্তাগণ। এঁদের অনুবাদে স্বভাবতই হিন্দু ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব, বৈশিষ্ট্য, কৃষ্ণের অবিসংবাদিত অবতারত্ব এগুলিই বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। এরকম ধর্মপ্রাণ আলোচক তথা অনুবাদকদের মধ্যে রয়েছেন Judge, Annie Besant, Sarupananda, Paramananda, Sivananda, Nikhilananda, Yogananda, Mahesh Yogi, Prabhupada, Chinmayananda, Virewarananda, Chidbhavananda Tapasyananda, Adhidevananda, Ramananda Prasad, Satchidananda, Gambhirananda, Lokeswarenanda, অন্যদিকে এমন অনুবাদকের সন্ধান মিলছে যাঁরা বিশেষ ধর্মীয় ভাবনার দ্বারা চালিত না হয়ে ধর্ম বিমুক্ত জিজ্ঞাসু মন নিয়ে গীতার অনুবাদে প্রয়াসী হয়েছেন যেমন রামকৃষ্ণ বসু, সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ। এঁদের অনুবাদে অনেক বেশি ধর্ম নিরপেক্ষতার প্রতিফলন লক্ষণীয়।
অনুবাদকদের আমরা প্রাচ্য দেশীয় ও পাশ্চাত্য দেশীয় এই দুই শ্রেণীতেও বিভক্ত করতে পারি। ব্যতিক্রমী প্রয়াস হিসাবে উল্লেখনীয় প্রভাভানন্দ ও ঈশার উডের যুগ্ম প্রয়াস। আপাতভাবে মনে হতে পারে গীতার ৭০০ শ্লোকের অনুবাদে অনুবাদক পাশ্চাত্য দেশীয় না প্রাচ্য দেশীয় এ প্রশ্নের অবতারণা অবান্তর। কিন্তু একটু সূক্ষ্ম ভাবে দেখলে বোঝা যাবে পার্থক্যটিকে। কি সেপার্থক্য? পার্থক্য লক্ষিত হবে পাঠকের প্রেক্ষিতে। পাশ্চাত্য দেশীয় অনুবাদক গীতার অনুবাদ করেছেন ইংরেজিতে। ইংরেজিতে অনূদিত গ্রন্থের পাঠক কেবল তাঁরাই হবেন যাঁরা ইংরেজি জানেন, যাঁরা ইংরেজিতে পারদর্শী নন তাঁদের কাছে ইংরেজি অনুবাদ মূল্যহীন। মূলতঃ পাশ্চাত্য দেশীয় অনুবাদকদের লক্ষ্য পাশ্চাত্য দেশীয় পাঠক। অবশ্য ইংরেজি জানা ভারতবাসী তা সেতারা ভারতেই অবস্থান করুন কিংবা বহির্ভারতে তাঁরাও এই ধরনের গ্রন্থের পাঠক হবার যোগ্যতা সম্পন্ন। প্রাচ্য দেশীয় অনুবাদকের মূল লক্ষ্য এ দেশীয় পাঠক। বালগঙ্গাধর তিলকের গীতা রহস্য মূলে মারাঠী ভাষায় রচিত, পরবর্তীতে ভারতের অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে ভিন্ন ভাষাভাষীদের সুবিধার্থে। যেখানে ভারতীয় অনুবাদক ইংরেজিতে গীতার অনুবাদ করেছেন যেমন P. Lal, সেখানে মূল লক্ষ্য ভারতীয় পাঠক, তারপর বিদেশীয় বা ইংরেজি জানা পাশ্চাত্যবাসী। মনে করা হয় পাশ্চাত্য দেশীয় অনুবাদকের অনুবাদ প্রাচ্যদেশীয় অনুবাদকদের তুলনায় অনেক বেশি সহজ সরল তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই তা মূলানুগ হয় না।
এই প্রসঙ্গেই আরও একটি তুলনা এসে পড়ে। সরাসরি সংস্কৃতে রচিত গীতা থেকে অনুবাদ এবং সংস্কৃত না জানা ব্যক্তিদের গীতার ইংরেজি অনুবাদ থেকে অনুবাদ। স্বভাবতঃই সংস্কৃত থেকে সংস্কৃত জানা কেউ যদি অনুবাদ করেন তবে তা অনেকাংশেই মূলানুগ হবে, কিংবা অনুবাদের অনুবাদে সেটা সম্ভব নয়। এমন অনেক শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে গীতায় যেগুলি বিশেষ তাৎপর্যবাহী যেমন আত্মন, ব্রহ্ম, ধর্ম, যজ্ঞ, গুণ ইত্যাদি। এছাড়ায় রয়েছে বহু পৌরাণিক চরিত্র এবং সেগুলির বিশেষণ। সংস্কৃত না জানা ব্যক্তির পক্ষে এই সব পরিভাষা অথবা শব্দ বা বিশেষণের তাৎপর্য অনুধাবন অনেক ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় নি দেখা গেছে। এদিক দিয়ে সংস্কৃত জানা অনুবাদকের অনেকখানি সুবিধা। দু’একটি দৃষ্টান্তের সাহায্যে আমরা বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে পারি। গীতায় অর্জুনকে অভিহিত করা হয়েছে ‘গূঢ় কেশ’ বলে। গূঢ়ক শব্দের অর্থ হল নিদ্রা, ‘ঈশ’ শব্দের অর্থ হল প্রভু। তাহলে গূঢ়কেশ শব্দের অর্থ দাঁড়াল নিদ্রার প্রভু। গূঢ়কেশ শব্দে কেশের কোন প্রসঙ্গই নেই। কিন্তু Tayler এবং Stanley গূঢ়কেশ শব্দে কেশের সন্ধান করে বসেছেন। অনুরুপ ভাবে কৃষ্ণকে বলা হয়েছে ‘জনার্দন’। কারণ কৃষ্ণ ‘জন’ নামীয় এক অসুরকে নিধন করেন। ‘অর্দন’ শব্দের অর্থ হল হত্যা। Tayler এবং Stanley ‘জনার্দন শব্দের অর্থ করে বসেছেন জনতার ‘বিরক্তি উৎপাদনকারী’ রূপে (herasser of men)। তাঁরা ‘জন’ শব্দে মানুষকে বুঝিয়েছেন। কৃষ্ণের আর একটি নাম হল ‘হৃষীকেশ’। হৃষীকা শব্দের অর্থ হল ইন্দ্রিয়, এই সুবাদে ‘হৃষীকেশ’ হলেন ইন্দ্রিয়ের দেবতা। কিন্তু আধুনিক অনুবাদকরা অনেকেই এক্ষেত্রে ‘কেশ’ শব্দটিকে চুল অর্থে নিয়েছেন এবং হৃষীকেশ অর্থ করে বসেছেন ক্ষুদ্রকেশ বিশিষ্ট। অনুবাদকদের আমরা আর একটি প্রেক্ষিতে দুটি ভাগে বিভক্ত করতে পারি— মহাভারত পাঠ করে মহাভারতের প্রেক্ষিতে গীতার অনুবাদ করেছেন আর অন্য যারা মহাভারত পাঠ না করে বিচ্ছিন্নভাবে গীতার অনুবাদে ব্রতী হয়েছেন। অনেক নামের ক্ষেত্রে প্রকৃত তাৎপর্যের সন্ধান মিলবে মহাভারতে। তাই মহাভারত পাঠ না করে গীতার অনুবাদে অনেক বিভ্রান্তি থাকার অবকাশ থেকে যায়। যেমন ধরা যাক ‘মহারথ’ শব্দটি। ‘মহারথ’ বলতে বোঝায় সেই বীরকে যিনি একসঙ্গে ১০ হাজার তীরন্দাজের মোকাবিলায় সক্ষম, সক্ষম নিজের রথ ও অক্ষত রাখায়। এমনই আর একটি শব্দ হল ‘যুযুধা’। ‘যুযুধা’ হল সাত্যকির একটি নাম। সাত্যকি ছিল যাদব বংশীয় অর্জুনের ছাত্র।
১ম অধ্যায়ের ৩য় শ্লোকের অনুবাদ করেছেন রামানন্দ প্রসাদ :
O Master, behold their mighty army of the Pandava, arranged in battle formation by your other talented disciple ! There are many great warriors, valiant men, heroes, and mighty archers.
মূল শ্লোকটি হল—
পশ্যৈতাং পান্ডু পুত্রাণামাচার্য মহতীং চমূম।ব্যূঢ়াং দ্রুপদপুত্রেণ তব শিষ্যেণ ধীমতা।। ১। ৩
রামাপ্রসাদ এখানে বেমালুম দ্রুপদ পুত্র ধৃষ্টদ্যুম্নের নামটি এড়িয়ে গিয়েছেন। বলা হবে মূল শ্লোকে ত ‘দ্রুপদ পুত্র’ ই আছে ধৃষ্টদ্যুম্নের নামটি ত অনুল্লিখিত রয়ে গেছে। অনুবাদে অন্ততঃ পক্ষে দ্রুপদ পুত্রের উল্লেখ করে ব্রাকেট মধ্যে ধৃষ্টদ্যুম্নের নামটি রাখতে হত তাতে পাঠকের বোঝার সুবিধা হত।
একই অধ্যায়ের ৪নং শ্লোকের প্রভুপাদ কৃত অনুবাদটি হল—
Here in this army are many heroic bowman equal in fighting to Bhima and Arjuna; great fighters like Yuyudhana, virata and Drupada.
মূল শ্লোকটি হল এইরকম—
অত্র শূরা মহেষ্বাসা ভীমার্জুনসমা যুধি।
যুযুধানো বিরাটশ্চ দ্রুপদশ্চ মহারথঃ।। ১। ৪
‘যুযুধান’ বলতে যে সাত্যকীকে বোঝানো হয়েছে, তার কোনো উল্লেখ করা হল না, শুধু তাই নয় প্রভুপাদ দিব্বি ‘মহারথ’ শব্দটিকে অনুবাদে বাদ দিয়ে দিয়েছেন। বিবেক দেবরায়ের প্রশ্ন মূল শ্লোকে যুযুধান, বিরাট এবং দ্রুপদের সঙ্গে যে আরও অনেক বিখ্যাত যোদ্ধার কথা বলা হয়েছে তাদের উল্লেখ কই অনুবাদে:
There are also other great warriors mentioned, in addition to Yuyudhana, Virata and Drupada. Where did they disappear?
স্বামী গম্ভীরানন্দ এই একই শ্লোকের, অনুবাদ করেছেন এইভাবে :
Here are the heroes wielding great bows, who in battle are compeers of Bhima and Arjuna, Yuyudhana (Satyaki) and Virata, and the maharatha (great chariot rider) Drupada.
গম্ভীরানন্দ প্রভুপাদের একটি ত্রুটির সংশোধন করেছেন, যুযুধান যে সাত্যকী, ব্রাকেটে সেটি উল্লেখ করে দিয়েছেন। কিন্তু তিনি একমাত্র দ্রুপদের বিশেষণ রূপে ব্যবহার করেছেন মহারথ। মূল শ্লোক অনুধাবন করলে দেখা যাবে ‘মহারথ’ তিন জনের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হয়েছে যুযুধান, বিরাট এবং দ্রুপদের ক্ষেত্রে শুধু দ্রুপদের ক্ষেত্রে নয়।
প্রথম অধ্যায়ের পঞ্চম শ্লোকটির প্রসঙ্গে আসা যাক—
ধৃষ্টকেতুশ্চেকিতানঃ কাশীরাজশ্চ বীর্যবান।
পুরুজিৎ কুন্তিভোজশ্চ শৈব্যশ্চ নরপুঙ্গবঃ।।৫
বিবেক দেবরায় কৃত অনুবাদটি হল :
Dhristaketu and Chekitana, the valiant king of Kashi, Purujit from the kunti bhojaclan and shaibya, greatest among men.
এক্ষেত্রে ধৃষ্টকেতু এবং চেকিতানের প্রসঙ্গের টীকার প্রয়োজন না থাকায় অনুবাদক শুধু নাম দুটিরই হুবহু উল্লেখ করেছেন, কিন্তু প্রশ্ন হল পুরুজিৎ কে? কুন্তীভোজই বা কে? পুরুজিৎ ব্যক্তি বিশেষের নাম ত বটেই, কিন্তু ‘কুন্তীভোজ’ মোটেই ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়। বংশের নাম। পুরুজিৎ কুন্তীভোজ বংশীয়। কিন্তু মজার ব্যাপার হল বহু অনুবাদকই পুরুজিৎ এবং কুন্তিভোজ দু’জন ব্যক্তি ভেবে বসেছেন। যাঁরা এমনটি ভেবেছেন এবং তদনুরুপ অনুবাদ করেছেন তাঁরা হলেন— Sanderson Beck, Prabhupada, Edwin Arnold, Telang, Radha Krishnan, Gambhirananda, Chinmayananda, Vireswarananda। গান্ধীজী-কৃত অনুবাদটি প্রসঙ্গত উল্লিখিত হল যেখানে কুন্তিভোজকে ভিন্ন ব্যক্তি রূপে উপস্থাপিত করা হয়নি :
Dhristaketu, Chekitana, Valorom Kashirojn, Purujit the Kuntibhoja, and Shaibya, Chief among menz.
পুরোজিৎ এর বিশেষণ রূপে ‘কুন্তিভোজ’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। অথচ কোনো ব্যক্তি হিসাবে উল্লিখিত হয়নি।
সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ পর্যন্ত কুন্তিভোজকে ব্যক্তি বিশেষ মনে করে বলেছেন :
Dhristaketu, cekitana and the valiant king of kasi, also Purujit, Kuntibhoja and Saibya the foremost of men.
দশম অধ্যায়ের ১৩ সংখ্যক শ্লোকটি হল—
আহুস্ত্বামৃষয়ঃ সর্বে দেবর্ষির্নারদস্তথা।অসিতো দেবলো ব্যাসঃ স্বয়ং চৈব ব্রবীষি মে।।১৩ ১০। ১৩
বিবেক দেবরায় শ্লোকটির অনুবাদ করেছেন :
All the sages and Devarshi Narada and Asita-Devata and Vyasa describe you thus. You have yourself also told me this.
কিন্তু বিবেকবাবুর গ্রন্থে একটি সামান্য ত্রুটি রয়ে গেছে, শ্লোকের সংখ্যাটি ১৫র পরিবর্তে হবে ১৩।
রামানন্দ প্রসাদের অনুবাদে অসিতা-দেবলার নাম অনুল্লিখিত রয়ে গেছে। প্রভুপাদ অনুবাদ করেছেন :
All the great sages such as Narada, Asita, Devala and Vyasa confirm this truth about you, and now you Yourself are declaring it to me.
রাধাকৃষ্ণনের অনুবাদে পাই :
All the sayes say this of thee, as well as the divine sur Narada, so also Asita, Devala, Vyasa and there theyself declarest it to me.
প্রভুপাদ এবং রাধাকৃষ্ণন অসিতা ও দেবলা দুজন পৃথক ব্যক্তিত্ব বলে মনে করেছেন, আসলে কিন্তু তা নয়। সরস্বতী নদীর তীরে বসবাসকারী ঋষিরা কখনও অভিহিত হতেন অসিতা নামে, কখন ও বা দেবলা নামে। আবার কখনও একসঙ্গে অসিতা-দেবলা নামেও।
কেবল নাম নিয়েই এই সমস্যা নয়, অন্য সমস্যাও রয়েছে। তৃতীয় অধ্যায়ের অন্তর্গত নবম সংখ্যক শ্লোকটি হল—
যজ্ঞার্থাৎ কর্মণোহন্যত্র লোকোহয়ং কর্মবন্ধনঃ।তদর্থং কর্ম কৌন্তেয় মুক্তসঙ্গঃ সমাচার।।৯ ৩। ৯
বিবেক দেবরায়ের এই শ্লোকটির অনুবাদ হল :
All action other than that for sacrifices shackles people to the bondage of action. Therefore, do action for that purpose, without attachment.
এই শ্লোকটির প্রভুপাদ-কৃত ব্যাখ্যা হল :
Work done as a sacrifice for Vishnu has to be performed, otherwise work binds one to this material world. Therefore, O son of Kunti, perform your prescribed duties for His satisfaction, and in that way you will always remain unattached and free from bondage.
Jayaram অনুবাদ করেছেন :
Works in this world can cause bondage unless done with a sense of sacrifice. Therefore, O son of Kunti, perform your actions for the sake of sacrifice only, free from attachment.
Telang-এর অনুবাদটি হল :
This world is fettered by all acion other than action for the purpose of the sacrifice. Therefore, O son of Kunti! do your, casting off attachment, perform action for that pursose.
প্রভুপাদ তাঁর অনুবাদে ‘বিষ্ণু’কে এনেছেন, কিন্তু শ্লোকমধ্যে কোথাও বিষ্ণুর নাম গন্ধও পাই না। নিখিলানন্দের অনুবাদেও ‘বিষ্ণু’ উল্লিখিত।
অন্য একটি সমস্যার কথা বলা যাক। গীতায় ‘যজ্ঞ’ শব্দটির ভিন্ন তাৎপর্য রয়েছে। অধিকাংশ অনুবাদকই সেই তাৎপর্য অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং ‘Sacrifice’ শব্দটিকে যজ্ঞের স্থলাভিষিক্ত করেছেন।
বিবেক দেবরায়ের মন্তব্যটি এই প্রসঙ্গে স্মরণীয় :
Words like Dharma, Sankhya, arya, Vikara, brahman atmana Yoga, gunas, shruti, samadhi, prakriti, yajna, Vijnana, maya, dvanda, purusha, Vedas have no ready English equivalents and the meaning sometimes varies from context to context. That is, the meaning is different in different places within the Gita. This becomes particularly relevant in translation by Westerners. Since they are often targeted at purely Western audiences there is a tendency to over simplify and avoid usage of all sanskrit words. This may make the English smoother, but the translation does not quite ring true.
দ্বিতীয় অধ্যায়ের ৪৮ সংখ্যক শ্লোকটি হল :
যোগস্থঃ কুরু কর্মাণি সঙ্গং ত্যক্ত ধনঞ্জয়।
সিদ্ধ্যসিদ্ধো: সমো ভূত্বা সমত্বং যোগ ডচ্চতে।।৪৮
এই শ্লোকের অনুবাদ করেছেন Barbara Miller এভাবে :
Perform actions, firm in discipline, relinquishing attachment ; be impartial to failure and success this equanimity is called discipline.
এবারে এই একই শ্লোকের বিবেক দেবরায় কৃত অনুবাদটি কিরুপ দেখা যাক :
O Dhananjoya ! perform action by resorting to Yoga. Give up attachment. Look upon success and failure equally. This equal attitude is known as Yoga.
বারবারা কথিত discipline এবং বিবেক দেবরায় উল্লিখিত ঢষফত যে অভিন্ন নয় বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারতীয় অনুবাদকরা কিছু কিছু সংস্কৃত শব্দকে হুবহু রেখে দিয়েছেন কারণ তাঁরা সঙ্গত কারণেই উপলব্ধি করেছেন এই শব্দগুলির ব্যাখ্যা অসম্ভব। কিন্তু পাশ্চাত্য দেশীয় অনুবাদকরা এই অসম্ভব কাজটি করতেই সচেষ্ট হয়েছেন, ফলে তাঁরা বাঞ্ছিত সাফল্য অর্জন করেন নি। ভারতীয় অনুবাদকরা পাশ্চাত্য অনুবাদকদের তুলনায় গীতার বিষয়বস্তুকে অনেক বেশী যথাযথভাবে প্রকাশ করেছেন, রক্ষা করেছেন।
গীতা রচিত হয়েছে ছন্দোবদ্ধ পদে। গীতা কাব্য। তাই সহজ বুদ্ধিতেই বোঝা যায় যে গীতার কাব্যানুবাদ করা উচিত। কিন্তু এ সত্যও ত অনস্বীকার্য যে কাব্যের অনুবাদ অত সহজ ব্যাপার নয়, অত্যন্ত দুরূহ। কাব্যের অনুবাদ নয় তার নবতর সৃষ্টি বা trans creation সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও প্রয়োজন কবি প্রতিভার। অর্থাৎ যিনি নিজে কবি নন, তাঁর পক্ষে কাব্যের অনুবাদ অনুবাদ করা সহজসাধ্য ব্যাপার নয়। এ জন্যই মনে করা হয় যে কাব্যানুবাদ কখনই নির্ভরশীল হতে পারে না, হওয়া সম্ভব নয়। কেননা অনুবাদকের এক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনতা প্রয়োজন মূলের আক্ষরিক অনুসরণ কখনই সম্ভব নয়। গীতার তৃতীয় সর্গের অন্তর্গত ২৫ ও ২৬ সংখ্যক শ্লোক দুটি হল যথাক্রমে—
সক্তা: কর্মণ্যবিদ্বাংসো যথা কুর্বন্তি ভারত।
কুর্যাদ বিদ্বাংস্তথাসক্তশ্চিকীর্ষুর্লোক সংগ্রহম।।
ন বুদ্ধিভেদং জনয়েদজ্ঞানাং কর্মসঙ্গিনাম।
জোষয়েৎ সর্বকর্মাণি বিদ্বান যুক্তঃ সমাচরন।।
বিবেক দেবরায় এই দুটি শ্লোকের অনুবাদ করেছেন এভাবে :
O Descendant of Bharata! Ignorant people perform action by being attached to that action. But the wise perform similar action unattached, for the welfare and preservation of the worlds. The wise will not befuddle the minds of the ignorants who are attached to action. Being knowledgeable, they will themselves perform all action and keep them engaged.
Woodham শ্লোক দুটির অনুবাদ করেছেন :
Foolish people seeking gain, work hard all day and night. Sages also work quite hard to set the people right. Sages never stop the wrok of those who seek reward; they instruct them how to work in service to the Lord.
মূলের ছন্দোবদ্ধ পদ্যানুবাদ মিললেও আর যাই হোক একে অনুবাদের মর্যাদা দেওয়া কি সম্ভব? এই দুটি শ্লোকের Barbara Miller অনুবাদ করেছেন এভাবে :
As the ignorant act with attachment to actions. Arjuna, so wise men should act with detachment to preserve the world. No wise man disturbs the understanding of ignorant man attached to action; he should inspire them, performing all actions with discipline.
গীতার একাদশ অধ্যায়ের অন্তর্গত ১৫ ও ১৬ সংখ্যক শ্লোক দুটির অনুবাদ করেছেন বিবেক দেবরায় এভাবে :
O Lord! In your body I see all the gods and all the different types of beings, the divine sages and all the serpents and the creator Brahma, seated on a lotus.
O Lord of the Universe ! O Universal Form ! I see you, with many arms, many stomachs, many faces and many eyes, every where. And I dont see an end, a middle or a begining to you.
এ দুটি শ্লোকেরহ B Barbara Miller কৃত অনুবাদ হল :
I see the gods in your body, O God, and hordes of varied creatures !Brahma, the cosmic creator, on his lotus throne, all the seers and celestial serpents. I see your boundless from every where, the countless arms, bellies , mouths, and eyes; Lord of All, I see no end, or middle or beginning to your totality.
Stephlur Mitchell-এর অনুবাদ হল :
I see all gods in your body and multitudes of beings, Lord, and Brahma on his lotus throne, and the seers, and the shining angels I see you every where, with billions of arms, eyes, bellies, faces, without end, middle, or beginning, your body, the whole universe, Lord.
Prabhavananda এবং Isherwood এ দুটি শ্লোকের অনুবাদ করলেন :
Ah, my God, I see all gods within your body ; Each in his degree, the multitude of creatures ; See Lord Brahma throned upon the lotus; See all the sages, and the holy serpents. Universal Form, I see you without limit; Infinite of arms, eyes, mouths and bellies – I see, and find no end, midst or beginning.
এবারে Edwin Arnold-এর অনুবাদ প্রসঙ্গ :
Yea ! I have seen ! I see ! Lord! All is wrapped in thee! The gods are in Thy glorious frame ! The creatures/ OF earth, and heaven, and hell / In Thy Divine from dwell, And in Thy countenance shine all the features / Of Brahma, sitting lone / Upon His lotus this throne; Of saints and sages, and the serpent races Ananta, Vasuki; Yea! Mightiest Lord, I see / Thy thousand arms and breasts and faces, And eyes, on every side / Perfect, diversified; And now here end of Thee, nohere end of the nowhere beginning, Nowwhere a centre!
এসব অনুবাদে আত্মময়তা দুর্নিরীক্ষ্য নয়। আরও লক্ষণীয় কাব্যানুবাদে মূলকে অনুসরণ করার দৃঢ়তা অনুপস্থিত, অর্থাৎ অনুবাদকরা বেশ কিছুটা স্বাধীনতা ভোগ করেছেন. তবু এ সব অনুবাদে যে কাব্যের উষ্ণতার স্পর্শ অনুভূত হয় তা অনস্বীকার্য। এককথায় যিনি কাব্যানুবাদে অধিকতর আকৃষ্ট, তাঁর কাছে Edwin Arnold কিংবা প্রভাবানন্দ Isher wood অথবা Barbara Miller-এর অনুবাদ অনেক বেশি উপভোগ্য ও আস্বাদনগম্য।
গীতার কাব্যানুবাদে পাদটীকা বা মন্তব্য কিংবা সংযোজনের মত বিষয়গুলি দেখা যায় না। দু’একটি দৃষ্টান্তেই আমাদের বক্তব্য পরিস্ফুট হবে।
গীতার ১ম অধ্যায়ের ১৫শ শ্লোকটি হল :
‘পাঞ্চজন্যং হৃষীকেশো দেবদত্তং ধনঞ্জয়ঃ।
পৌন্ড্র% দধৌ মহাশঙ্খং ভীমকর্মা বৃকোদরঃ।।১৫
Barbara Miller অনুবাদ করেছেন :
Krishna blew, Pancajunya (or Pancha Janya), won from a demon; Arjuna blew Devadatta, a gift of the gods; ferice wolf bellied Bhima blew Paundra his great conch of the east.
বিবেক দেব রায় কৃত অনুবাদটি হল :
Hrishi Kesha blew the conch shell named Panchajunya and Dhananjoya blew the conch shell named Devadetta. Vrikodara, whose deedes give rise to fear, blew the giant conch shell named Poundra.
লেখক পাঞ্চজন্য, দেবদত্ত এবং বৃকোদর সম্পর্কিত ব্যাখ্যা পৃথকভাবে টীকায় দিয়েছেন এতে অনুসন্ধিৎসু পাঠকের সুবিধা হয়।
আরও একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন উত্থাপন জরুরী। গীতার অনুবাদে কি নিছকই অনুবাদ স্থান পাবে না কি তৎসহ মূল সংস্কৃত text ও প্রদত্ত হওয়া চাই। আমরা লক্ষ্য করি এক বিরাট সংখ্যক পাশ্চাত্য অনুবাদক অপ্রাসঙ্গিক বিবেচনায় গীতার অনুবাদে মূল পাঠ যেটি সংস্কৃতে রচিত সেটি দেন না। এঁদের রেওয়াজ হল একটি অধ্যায়ের আনুপূর্বিক অনুবাদ, এঁরা শ্লোক ধরে ধরে অনুবাদ করায় উৎসাহী নন। যেমন এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় Sanderson Beak, Edwin Arnold এবং প্রভাভানন্দ ও ঈশার হুডের নাম। এঁদের অনুবাদে সংস্কৃত text টি না থাকায় অনুবাদ মূলের সঙ্গে মেলানোর অবকাশ থাকে না। অবশ্য আধুনিক অনুবাদকগণ সংস্কৃত text সংযোজন গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং অনুবাদকের সঙ্গে text টাও দিয়ে দেন।
অন্য একটি সমস্যার কথা এখানে প্রাসঙ্গিক বোধেই উত্থাপন করা যায়। গীতার কিছু কিছু অধ্যায়ে দুটি শ্লোককে একত্রিত করে ভাবের এবং বক্তব্যের পূর্ণতা দান করা হয়েছে, যেমন প্রথম অধ্যায়ের ২৬ এবং ২৯ সংখ্যক শ্লোক, একই অধ্যায়ের ৩৮ এবং ৩৯ সংখ্যক শ্লোক। ৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ২৪ ও ২৫ সংখ্যক শ্লোক, ৮ম অধ্যায়ের ১২ ও ১৩ সংখ্যক শ্লোক, দশম অধ্যায়ের ৪-৫ সংখ্যক শ্লোক, একাদশ অধ্যায়ের ২৬ – ২৭ সংখ্যক শ্লোক, কিংবা দ্বাদশ অধ্যায়ের ৩ – ৪, ৬-৭, ১৩-১৪, ১৮-১৯ সংখ্যক শ্লোকগুলি।
যখন অনুবাদক একাধিক শ্লোকের অনুবাদ এক সঙ্গে করেন, তখন তাঁর পক্ষে কাজটি সহজতর হয় নি:সন্দেহে, কিন্তু পাঠকের ক্ষেত্রে তা হয় কষ্ট সাধ্য। তাই প্রতিটি শ্লোক ধরে ধরে অনুবাদ করলে পাঠকের পক্ষে তা অনেক বেশি স্বস্তিদায়ক হয়। গীতায় উল্লিখিত বিভিন্ন নামের ব্যাখ্যা দান জরুরী আগেই বলা হয়েছে, অবশ্যই পাঠকের স্বার্থে, সেইসঙ্গে এ কথাও বলা দরকার এমন বেশ কিছু বিষয় রয়ে গেছে গীতায় সেগুলিরও বিস্তারিত টীকা সংযোজন জরুরী, অন্যথায় পাঠকের পক্ষে অর্থ অনুধাবন সম্ভব হয় না, বা হলেও তা অসম্পূর্ণতা দোষে দুষ্ট থাকে। যেমন পাপী কে? (১ম অধ্যায়, ৩৬ সংখ্যক শ্লোক), পঞ্চেন্দ্রিয় বলতে কাদের বোঝায়? (তৃতীয় অধ্যায় ৬ষ্ট সংখ্যক শ্লোক), জনক কে? (তৃতীয় অধ্যায় ২০ সংখ্যক শ্লোক), জ্ঞান ও বিজ্ঞানের পার্থক্য (৩য় অধ্যায় ৪১ সংখ্যক শ্লোক), মনু, ঈক্ষুকু বিবস্বত কারা (৪র্থ অধ্যায় ১ম সংখ্যক শ্লোক), রাজর্ষি কে? (৪র্থ অধ্যায়,২য় সংখ্যক শ্লোক), যুগ কি? (৪র্থ অধ্যায়, ৮ম শ্লোক), নবদ্বার কি কি? (পঞ্চম অধ্যায় ১৩ সংখ্যক শ্লোক), সপ্তর্ষি কারা (১০ম অধ্যায়, ৬ষ্ঠ শ্লোক),আদিত্য ও মরুৎ কারা (১০ম অধ্যায়, ২১ সংখ্যক শ্লোক), রুদ্র ও বসু কারা? (১০ অধ্যায়, ২৩ সংখ্যক শ্লোক), সর্প ও নাগের পার্থক্য কী? (১০ অধ্যায়, ২৮-২৯ সংখ্যক শ্লোক), মার্গ শীর্ষ কেন বৎসরের প্রথম মাস (১০ম অধ্যায়, ৩৫ সংখ্যক শ্লোক), চার প্রকারের খাদ্য কী কী, (১৫ম অধ্যায়, ১৪ সংখ্যক শ্লোক)।
সমস্যা হল টীকা টিপ্পনী কণ্টকিত অনুবাদ জনপ্রিয়তা অর্জনের পরিপন্থী। অন্যদিকে টীকা টিপ্পনী অথবা ব্যাখ্যা ব্যতিরেকে অনুবাদের গ্রহণযোগ্যতা, পূর্ণতা প্রশ্নচিহ্নের সম্মুখীন হয়। একটি কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করতে হয়। গীতার শ্লোকগুলির ব্যাখ্যায় একের সঙ্গে অন্যের খুব বেশি পার্থক্য হয় না, কেননা তা হবার নয়। বিবেক দেব রায়ের মূল্যায়ন উল্লেখের দাবী রাখে :
In 10 percent of the text, there are indeed variations between translations. But in 90 percent of the slokas , one finds little difference between words chosen in different translations …
এ বক্তব্য অবশ্য কাব্যানুবাদ নয় গীতার গত্যানুবাদ প্রসঙ্গে প্রযোজ্য। দেব রায় যথার্থই বলেছেন :
There will be permutations and combinations of the same words. The difference lies in the notes and their quality.
টীকা টিপ্পনীর ক্ষেত্রেও পার্থক্য চোখে পড়ে। কি রকম? যাঁরা টীকা টিপ্পনী সংযোজিত করেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাঁদের দৃষ্টি নিবদ্ধ থাকে ধর্মীয় অথবা দার্শনিক বিষয়ে। জাগতিক বিষয়গুলিকে তাঁরা তেমন গুরুত্ব দেন না বা দিতে চান না। আবার একটি শব্দের ভিন্ন ভিন্ন অর্থ ও ব্যাখ্যাও করা হয়েছে, স্বভাবতই এতে অনুবাদের মানের পার্থক্য ঘটে গেছে। যেমন গীতার প্রথম অধ্যায়ের ৩৫ সংখ্যক শ্লোকে বলা হয়েছে—
নিহত্য ধার্তরাষ্ট্রান নঃ কা প্রীতি: স্যাজ্জনার্দন।
পাপমেবাশ্রয়েদস্মান হত্বৈতানাততায়িনঃ।। ১/৩৫
রাজশেখর বসু অনুবাদ করেছেন :
ধার্তরাষ্ট্রগণকে হত্যা করে আমাদের কি প্রীতি (সুখ) হবে? এই সকল আততায়ীদের হত্যা করলে আমাদের পাপই আশ্রয় করবে।
বিবেক দেবরায়ের এই শ্লোকটির অনুবাদ হল :
what pleasure will we derive from klling the sons of Dhritarashtra? Although they are criminals, sin alone will be our lot if we kill them!
অন্যদিকে Isher wood-দের অনুবাদে দেখি :
Tell me how can / we hope to be happy / slaying the sons / of Dhritarashtra? Evil they may be, worst of the wicked, Yet if we kill them our sin is greater.
‘আততায়ী’ হুবহু রেখে দিলেন রাজশেখর বসু, বিবেক দেবরায় তার অনুবাদ করলেন ‘Criminal’, অন্যদিকে Isher wood-রা করলেন ‘evil’, ‘worst of the wicked’.
সংস্কৃতে আততায়ী শব্দের অর্থ হল গৃহদায়ক, বিষদাতা, ভূমি-দারা-ধন অপহারক, শস্ত্রপাণি। ‘evil’ বললে কি কিংবা ‘worst of the wicked’ বললে কি এই সব অর্থগুলি মেলে? রাজশেখর ‘আততায়ী’ শব্দটিকে অবিকৃত ভাবে ব্যবহার করেছেন অনুবাদে তাতে অর্থগত কোনো পার্থক্য ঘটতে পারেনি।
উল্লেখ করা যাক তৃতীয় অধ্যায়ের ২০ সংখ্যক শ্লোকটি—
কর্মেণৈব হি সংসিদ্ধিমাস্থিতা জনকাদয়ঃ।
লোকসংগ্রহমেবাপি সংপশ্যন কর্তুমর্হসি।।২০
রাজশেখর অনুবাদ করলেন জনকাদি কর্ম দ্বারাই সংসিদ্ধি পেয়েছিলেন। লোক সংগ্রহের (লোকরক্ষার) প্রতি দৃষ্টি রেখেও তুমি কর্ম করতে বাধ্য। এই শ্লোকের অনুবাদে বিবেক দেবরায় লিখলেন :
Janoka and others attained liberation through action. One should perform action with an eye to preserving the world.
উল্লিখিত জনকের একটি মাত্র পরিচয় নয়। বিবেক দেবরায় বলেছেন তাঁর প্রদত্ত টীকায় :
‘Righteous’ কিন্তু এটি প্রথম জনকের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইনি ছিলেন মিথির পুত্র যাঁর নামে মিথিলা রাজ্যের নামকরণ। কিন্তু সীতার পিতা যে জনক তিনি স্বতন্ত্র। চিন্ময়ানন্দ ব্যাখ্যা দিয়েছেন :
Thus the wise kings of yore, such as Janoka and Aswapati had tried to attain perfection.
চতুর্থ অধ্যায়ের ১ম শ্লোকটি হল—
ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবাহনমব্যয়ম।
বিবস্বান মনবে প্রাহ মনুরিক্ষুকবেহব্রবীৎ।। ১
রাজশেখর বসু অনুবাদ করেছেন, আমি বিবস্বান (সূর্য) কে এই অপরিবর্তনীয় যোগ বলেছিলান, বিবস্বান (তৎ পুত্র) মনুকে বলেছিলেন; মনু (তৎ পুত্র) ইক্ষ্বাকুকে বলেছিলেন। সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন অনুবাদ করেছেন এইভাবে :
I proclaimed this imperishable Yoga to Vivasvan; Vavasvan told it to Mamu and Manu spoke it to iksvaku অর্থাৎ রাজশেখর কিংবা রাধাকৃষ্ণন মনু, বিবস্বান, ইক্ষ্বাকু এঁদের সম্পর্কে কোনো কিছু বিস্তারিত করেন নি।
বিবেক দেবরায় কৃত অনুবাদটি হল :
I instructed this eternal Yoga to Vivasvat and Vivasvat told it to Manu Manu told to Ikshvaku.
বিবেক দেবরায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা যুক্ত করেছেন বিবস্বান, মনু এবং ইক্ষ্বাকু সম্পর্কে। কি রকম?
One of the twelve Adityas born to the sage Kashyap and Aditi. Vivasvat is thus a manifestation of the sun god and his dynasty is the solar dynasty (Surya Vansha). Vivasta’s son is Manu known as Vaivatavta Manu. Manu is actually a title and the fourteen Manus Vaivasvata Manu, or the present Manu is the seventh in the live of fourteen and the reference is to begnning of Treta Yaga ….. Vivasvat Manu’s son was Ikshvaku and Rama was born into the dynasty much later.
অনুবাদের সময় এইসব তথ্যাদি উল্লিখিত হওয়ার সুযোগ কম, বিবেক দেবরায় তাই পৃথকভাবে এই সব টিপ্পনীর সংযোজন ঘটিয়েছেন। রাধাকৃষ্ণন বা রাজশেখর সেদিকে যান নি।
গীতার কিছু কিছু শ্লোক এমনই যে সেগুলির অনুবাদ যেমন সহজ তেমনি সেগুলিতে কোনো টীকা টিপ্পনীর প্রয়োজন হয় না। কিন্তু কিছু কিছু শ্লোক আছে শতকরা হিসাবে সেগুলি বেশি নয় হয়তো কিন্তু সেগুলির ক্ষেত্রে উপযুক্ত টীকা টিপ্পনীর সংযোজন প্রয়োজন। অনুবাদক যদি ধরে নেন পাঠক সব ক্ষেত্রেই অর্থ অনুধাবন করবে অনুবাদের অতিরিক্ত কিছু সংযোজন অনাবশ্যক তবে সেক্ষেত্রে পাঠকের প্রতি সুবিচার করা হবে না বলা চলে।
এফ লরিনসারের ডাই ভাগবদ
Dr. F. Lorinser ভাগবত গীতার জার্মানি অনুবাদ করেছেন, তাঁর অনূদিত গ্রন্থটি হল Die Bhagavad Gita. Breslan থেকে এটি 1869 খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত। এই গ্রন্থে অনুবাদক New Testament-এর সঙ্গে ভাগবত গীতার বিভিন্ন শ্লোকের তুলনা টেনেছেন বক্তব্যের সাযুজ্যের প্রেক্ষিতে। New Testament-এর সঙ্গে ভাগবদগীতার বিভিন্ন অধ্যায়ের যেসব শ্লোকের বক্তব্যগত মিল লেখক খুঁজে পেয়েছেন সেগুলি হল—
৩য় অধ্যায়ের ৬ষ্ঠ শ্লোক
৩য় অধ্যায়ের ৩২সংখ্যক শ্লোক
৩য় অধ্যায়ের ৩৪ সংখ্যক শ্লোক
৪র্থ অধ্যায়ের ৪র্থ শ্লোক
৪র্থ অধ্যায়ের ৫ম শ্লোক
৪র্থ অধ্যায়ের ৮ম শ্লোক
৪র্থ অধ্যায়ের ৪০সংখ্যক শ্লোক
৫ম অধ্যায়ের ৮, ১০, ১৫, ১৬ ও ২৩ সংখ্যক শ্লোক
৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ১০সংখ্যক শ্লোক
৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ১৬সংখ্যক শ্লোক
৬ষ্ঠ অধ্যায়ের ৩৯সংখ্যক শ্লোক
৭ম অধ্যায়ের ১, ২, ১৪, ১৫, ১৬, ২২, ২৭, ২৮, ২৯ সংখ্যক শ্লোক
৮ম অধ্যায়ের ৭, ৯, ২২ সংখ্যক শ্লোক
৯ম অধ্যায়ের ১, ১১, ১২, ২১, ২৩, ২৯, ৩০, ৩৩, ৩৪ সংখ্যক শ্লোক
১০ম অধ্যায়ের ১, ৩, ১৪, ১৫ সংখ্যক শ্লোক
১১শ অধ্যায়ের ২০, ২১, ২২, ৫২ সংখ্যক শ্লোক
১২শ অধ্যায়ের ৭, ৮, ১৪ সংখ্যক শ্লোক
১৩শ অধ্যায়ের ১৭, ২৫ সংখ্যক শ্লোক
১৪শ অধ্যায়ের ২, ১৪ সংখ্যক শ্লোক
১৫শ অধ্যায়ের ১৫, ১৯ সংখ্যক শ্লোক
১৬শ অধ্যায়ের ৫, ৯, ১১, ১২ – ১৫, ২৪ সংখ্যক শ্লোক
১৭শ অধ্যায়ের ২০, ২৮ সংখ্যক শ্লোক
১৮শ অধ্যায়ের ৪৬, ৫৫, ৬৭ সংখ্যক শ্লোক
দেখা যাচ্ছে গীতার প্রথম ও দ্বিতীয় অধ্যায় ব্যতিরেকে অন্যান্য সব অধ্যায়ের কোনো না কোনো শ্লোকের সঙ্গে New Testament-এর বক্তব্যগত সাযুজ্য লেখক পেয়েছেন। সর্বাধিক সাযুজ্যের সন্ধান মিলেছে ৭ম ও ৯ম অধ্যায়ে। মোট নয়টি করে শ্লোক উল্লিখিত হয়েছে। সর্বাপেক্ষা কম শ্লোক উল্লিখিত হয়েছে ১৩শ, ১৪শ, ১৫শ এবং ১৭শ অধ্যায় থেকে। প্রতিটি অধ্যায় থেকে মাত্র ২টি করে শ্লোকের সঙ্গে New Testament-এর বক্তব্যগত সাযুজ্যের সন্ধান পেয়েছেন লেখক। আপাদমস্তক গ্রন্থটি জার্মানি ভাষায় রচিত তাই অন্য ভাষাভাষীদের পক্ষে এই গ্রন্থের বক্তব্য অনুধাবন সহজসাধ্য নয়।
দি ভাগবদগীতা
স্যার এডুইন আর্নল্ড
গীতার অনুবাদপ্রসঙ্গে প্রথমেই যাঁর নামটি মনে আসে স্বাভাবিক কারণে, তিনি স্যার এডুইন আর্নল্ড। তাঁর ‘Bhagavad Gita ‘The song celestial’ প্রকাশিত হয় ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে। স্যার এডুইনের জন্ম ১৮৩২ সালে। অক্সফোর্ডে তাঁর শিক্ষা, এখান থেকেই স্নাতক হন। ভারতে তিনি দীর্ঘকাল অতিবাহিত করেন। পুনার সরকারী স্কুলে (Deccan Government School) প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তিনি সংস্কৃত জানতেন। স্যার এডুইনের গীতার অনুবাদ সারা পৃথিবীব্যাপী আদৃত। উল্লেখ্য, মহাত্মা গান্ধী যখন তাঁর তরুণ বয়সে ব্যারিষ্টারী পাশ করে দক্ষিণ আফ্রিকার ভারতীয়দের অধিকার রক্ষার সংগ্রামে ব্যাপৃত ছিলেন, তখন তাঁর হাতে গিয়ে পড়ে আর্নল্ডের গীতার একটি কপি। এভাবেই মহাত্মা গান্ধীর সঙ্গে গীতার পরিচয় ঘটে।
গীতার গদ্য অনুবাদ অনেকেই করেছেন, কিন্তু আর্নল্ড-কৃত অনুবাদ নানা কারণেই উল্লেখের দাবী রাখে। আর্নল্ড ছিলেন ভিক্টোরিয়া যুগের একজন লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবি। তিনি লাভ করেন সুখ্যাত Newdigata Poetry Prize; ভগবান বুদ্ধের কাব্যিক জীবন নিয়ে রচনা করেন ‘Light of Asia’; লর্ড টেনিসন প্রয়াত হলে Poet Laureate হিসাবে তাঁর নাম উঠে আসে। কিন্তু সেসময়ের বহুলপ্রচলিত ও প্রচারিত The Daily Telegraph পত্রিকার সম্পাদক পদে আসীন থাকায় পাছে তাঁর পোয়েট লরিয়েট পদে নির্বাচনকে রাজনৈতিক দৃষ্টিতে দেখা হয় তাই এই সম্মানলাভে বঞ্চিত হন। কিন্তু তিনি ‘নাইটহুড’ সম্মানে ভূষিত হন।
খ্যাতকীর্তি কবি আর্নল্ড গীতার অনুবাদে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বলা হয় :
Arnold was a celebrated poet whose gifts enabled him to translate the Gita in the best traditions of English prosody. His translation conveys the full lyricism and emotional quality of the dramatic text.
আর্নল্ড গীতার কাব্যিক অনুবাদে বেছে নিয়েছিলেন বীরত্বব্যঞ্জক অমিত্রাক্ষর ছন্দকে (Blank Verse)। কিন্তু তাই বলে তিনি এই ছন্দ ব্যবহারে অনমনীয় থাকেন নি, প্রয়োজনে ‘expanded into lyrical measures when the text demanded’, পরিণামে তাঁর অনুবাদ স্বীকৃতি পেয়েছে ‘a tour de force of poetic genius’ রূপে।
Alan Jacobs এডুইন আর্নল্ডের গীতার সংক্ষিপ্ত অথচ আকর্ষণীয় ভূমিকায় গীতা সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন প্রকাশ করেছেন। Jacobs-এর মতে গীতা আধ্যাত্মিক গ্রন্থাপেক্ষা অনেক বেশি কিছু, গীতা দর্শন, মহাকাব্য, উপভোগ্য কাব্য, প্রভাব উদ্রেককারী জ্ঞানভান্ডার, অধ্যাত্মজগতের মানুষের কাছে প্রার্থিত উপদেশ, আত্মোপলব্ধির পথপ্রদর্শক :
The Bhagavad Gita is much more than a spiritual classic, philosophy or esoteric doctrine. It is an Epic poem intended to be universally popular. It is multi-levelled and can be enjoyed simultaneously as a thrilling narrative, magnificent poetry, inspirational wisdom, serious advice on spiritual practice, and the way to Redisation of the self. It fulfils all of these aims magnificently and hence merits its commanding place in the religious and spiritual literature of the world.
Jacobs বিশ্বাস করেন গীতার রচনাকাল খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দী। গীতা মানুষকে সর্ববিধ দুশ্চিন্তা ও দুঃখ নিরসনের পথের সন্ধান দিয়েছে। যার সাহায্যে মানুষ আত্মস্বরূপকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়। পরিণতিতে মানুষ লাভ করে স্বর্গীয় শান্তি, ঘটে আত্মোপলব্ধি, সঞ্জীবিত হয় সার্বিক আত্মনিবেদনে। গীতা Jacobs-এর মতে :
a beautiful symphony, melodiously infolding until it reaches the grand coda of spiritual freedom or moksha!
এবারে আমরা কিছু অনুবাদের দৃষ্টান্ত গ্রহণ করব—
Do thine allotted task!
Work is more excellent than idleness ;
The body’s life proceeds not, lacking work.
There is a task of holines to do,
Unlike world-binding toil, which bindeth not
The faithful soil ; such earthly duty do
Free from desire, and thou shalt well perform
Thy heavenly purpose. (chapter-3)
Lies in the mind which given, the will that serves ;
And these are gained by reverence by strong search,
By humble heed of those who see the Truth
And teach it Knowing Truth, thy heart no more
Will ache with error, for the Truth shall show
All things subdued to thee, as thou to Me. (chapter-4)
That man I love ! who, unto friend and foe
Keeping an equal heart, with equal mind
Bears shame and glory; with an equal peace
Takes heat and cold, pleasure and pain, abides
Quit of desires, hears praise or calumny
In passionless restraint, unmoved by each; (chapter-12)
লক্ষণীয়, এখানে পৃথক পৃথকভাবে শ্লোকগুলির অনুবাদ করা হয়নি, অর্জুন অথবা কৃষ্ণের সব বক্তব্যকে একত্রিত করে অনুবাদ করেছেন লেখক।
দি ভাগবদগীতা
এ্যানি বেসান্ত ও ভগবান দাস
এ্যানি বেসান্ত ভাগবদগীতার অনুবাদ করেছেন পুর্নমুদ্রম : ১৯৮৬। তাঁর অনুবাদ ও ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে :
Neither sectararian in interpretation nor individualistically melting like moon stone at the sight of the moon.—অর্থাৎ অনুবাদ বা ব্যাখ্যায় নিরপেক্ষতা রক্ষিত হয়েছে। কোনো ভাবাবেগ অথবা উদ্দেশ্যপ্রবণতা কার্যকরী হয় নি। অনুবাদপ্রসঙ্গে আরও মন্তব্য করা হয়েছে :
It is a running literary translation. Whatever is translator’s own is their straight- forward rendering of the originally poetic ideas in the foot-notes.
এ্যানি বেসান্ত গীতার অনুবাদ উপলক্ষে তাঁর নিজস্ব কোনো উদ্দেশ্যের কথা বলেন নি, বলেন নি গীতা সম্পর্কে তাঁর ধ্যান-ধ্যারণার কথাও। কোনো তাত্ত্বিক আলোচনারও ধার ধারেন নি। তিনি সীমাবদ্ধ থেকেছেন গীতার আক্ষরিক অনুবাদে। এমনকি শ্লোকের বিশদ ব্যাখ্যাতেও যান নি। কিংবা কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ বা ভক্তিযোগ নিয়ে পৃথক কোনো মন্তব্য বা মতামত জানান নি। দেবনাগরী ভাষায় মূল শ্লোক উপস্থাপিত হয়েছে। তারপর সেই শ্লোকের ইংরেজি অনুবাদ প্রদত্ত হয়েছে। এরপর শ্লোকের অন্তর্গত প্রতিটি পদের পৃথক পৃথক উল্লেখে সেগুলির ইংরেজি প্রতিশব্দ উল্লিখিত হয়েছে। ক্ষেত্রবিশেষে পাদটীকায় মন্তব্য বা টীকা সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। অনুবাদের পদ্ধতিটি প্রাচীন।
যেহেতু গীতা সংস্কৃত ভাষায় রচিত, তাই পাঠকের সুবিধার্থে লেখক সংস্কৃত ব্যাকরণের সংক্ষিপ্তাকারে আলোচনা করে নিয়েছেন। সন্ধি, ক্রিয়া, ক্রিয়ার কাল, বাচ্য, বাক্য, বিসর্গ, স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ ইত্যাদি সম্পর্কে আলোচনা স্থান পেয়েছে। আমরা এ্যানি বেসান্তের অনুবাদকর্মের কিছু নিদর্শন গ্রহণ করব তিনটি অধ্যায় থেকে নির্বাচিত কিছু শ্লোকের অনুবাদের উল্লেখে।
গীতার তৃতীয় অধ্যায়ের দ্বিতীয় শ্লোকটি হল—ব্যামিশ্রেণেব বাক্যেণ বুদ্ধিং মোহয়সীব মে ইত্যাদি। এর অনুবাদ করা হল—
In the world there is a two-fold path, as I before said, o sinless one, that of yoga by knowledge, of the Sankhya; and that of Yoga by action, of the Yogis. (page-55).
ঐ একই অধ্যায়ের ৮ম শ্লোকটি হল—নিয়তং কুরু কর্ম ত্বং কর্ম জ্যায়ো হ্যকর্মণঃ ইত্যাদি। এ্যানি বেসান্তের অনুবাদ—Perform thou right action, for action is superior to inaction and inactive, even the maintenance of thy body would not be possible.
৩য় অধ্যায়ের ২৫ সংখ্যক শ্লোকটি হল—সক্তা: কর্মণ্যবিদ্বাংসো যথা কুর্বন্তি ভারত ইত্যাদি। অনুবাদ করলেন বেসান্ত :
As the ignorant act from attachment to action, o Bharata, so should the wise act without attachment, desiring the welfare of the world. (page-63).
চতুর্থ অধ্যায়ের ৮ম শ্লোকটি হল— পরিত্রাণায় সাধূনাং বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম ইত্যাদি। এটির অনুবাদ হল এই রকম— For the protection of the good, for the destruction of evil-doers, for the sake of firmly establishing righteousness, I am born from age to age. (page—75)
১৪ সংখ্যক শ্লোকটি হল—ন মাং কর্মাণি লিম্পন্তি ন মে কর্মফলে স্পৃহা ইত্যাদি। Nor do actions affect Me, nor is the fruit of action desired by Me. He who thus knoweth Me is not bound by action. (page-77)
৩৬ সংখ্যক শ্লোকটি হল—অপি চেদসি পাপেভ্যঃ সর্বেভ্যঃ পাপকৃত্তমঃ ইত্যাদি। অনুবাদ—Even if thou art the most sinful of all sinners, yet shalt thou cross over all sin by the raft of wisdom. (page-86).
৩৯ সংখ্যক শ্লোকটি হল—শ্রদ্ধাবান লভতে জ্ঞানম তৎপরঃ সংযতেন্দ্রিয়ঃ ইত্যাদি। The man who is full of faith obtaineth wisdom, and he also who hath mastery over his senses; and having obtained wisdom, he goeth swifty to the supreme peace. (page-87)
দ্বাদশ অধ্যায়ের ১৯ সংখ্যক শ্লোকটি হল—তুল্যনিন্দাস্ততিমৌনী সন্তুষ্টো যেন কেনচিৎ ইত্যাদি। Taking equally praise and reproach, silent, wholly content with what cometh homeless firm in mind, full of devotion, that man is dear to Me. (page-212).
১৮ সংখ্যক শ্লোক—সমঃ শত্রৌ চ মিত্রে চ তথা মানাপমানয়ো: ইত্যাদি। Alike to foe and friend, and also in fame and ignominy, alike is cold and heat, pleasure and pains, destitude of attachment. (page-218)
১৭ সংখ্যক শ্লোক—যো ন হ্যষ্যতি ন দ্বেষ্টি ন শোচতি ন কাঙ্ক্ষতি ইত্যাদি। He who neither loveth nor hateth, nor grieveth, nor desireth, renouncing good and evil, full of devotion, he is dear to Me. (page-218)
১৬ সংখ্যক শ্লোক—অনপেক্ষঃ শুচির্দক্ষ উদাসীনো গতব্যথঃ ইত্যাদি। He who wants nothing, is pure, expert, passionless, untroubled, renouncing every undertaking, he, My devotee, is dear to Me. (page-217)
৮ সংখ্যক শ্লোকটি হল—ময্যেব মন আধৎস্ব ময়ি বুদ্ধিং নিবেশয় ইত্যাদি। Place thy mind in Me, into Me, let thy reason enter then without doubt thou shalt abide in Me hereafter. (page-214).
অনুবাদ আক্ষরিক হয়েছে বোঝা যাচ্ছে। তবে প্রাচীনপন্থী, তাই knoweth, shalt, obtaineth, hath, goeth, cometh, loveth, hateth, grieveth, desireth ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়েছে। ক্রিয়াপদগুলির ক্ষেত্রেই এই প্রাচীন রূপগুলি লভ্য। অনুবাদকের নিষ্ঠা সম্যকভাবে তাঁর অনুবাদে প্রতিফলিত।
দি ভাগবদগীতা
ডবলিউ. ডগলাস পি. হিল
১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত হল W. Douglas P. Hill-এর ‘The Bhagavad Gita’। লেখক গীতার ইংরেজিতে অনুবাদই শুধু করেন নি, প্রয়োজনীয় টীকা-টিপ্পনী বেশ উল্লেখযোগ্য পরিমাণেই সন্নিবিষ্ট করেছেন। দীর্ঘ একটি ভূমিকা সন্নিবিষ্ট করা হয়েছে। এতে আলোচিত হয়েছে The cult of Krishna Vasudeva, the Bhagavad Gita এবং The Doctrine of the Bhagavad Gita.
লেখকের মতে গীতার রচনাকাল বিশেষত বর্তমানরূপে, দ্বিতীয় খ্রিস্টপূর্বাব্দে। কৃষ্ণই ব্রহ্ম। জ্ঞানীরা বলেন বসুদেবই সব। ‘This is the central doctrine of the Bhagavad Gita.’১ লেখক আরো মনে করেন উপনিষদের ব্রহ্মণ এবং গীতার ব্রহ্মণ একই। ব্রহ্মণ জগতে দুটিরূপে প্রকাশিত—আত্মন বা self এবং প্রকৃতি বা not self, রূপে। তবে এ দুটিই সত্য কারণ ব্রহ্মণ সত্য, কিন্তু প্রকৃতি (not self) মায়ার প্রভাবে বিভ্রান্তিকর রূপে প্রতারিত করে। আত্মন হল ব্রহ্মণের স্বভাব বা true nature। লেখক বিশ্বসংসারের স্বরূপটিকে চমৎকার- ভাবে বর্ণনা করেছেন :
The Universe is a Puppet-show; Brahman is sole producer, Brahman is scenery and players, Brahman is sole spectator. The Universe is Brahman, sportively self-deluded, taking delight in itself. The means of production is the power of delusion, or maya; Scenery and puppets are Brahman, self-stamped with ‘name and form’, its ‘cower nature’—prakriti; as spectator it is purusa, retaining its proper nature.২
পুরুষ ও প্রকৃতি সম্পর্কিত রূপকের ব্যাখ্যায় লেখক বললেন :
The Field is the area of ceaseless activity, of growth and change and death; the function of the knower is nothing but to know Unconscious Prakriti for ever acts; inactive purusa experiences her action.৩
গীতা রচয়িতা মানুষ ও তার ভাগ্য সম্পর্কেই আগ্রহী। কারণ সৃষ্টির মধ্যমণিই হল মানুষ। অপরদিকে Brahman প্রতিটি জীবের মধ্যেই সমভাবে আসীন। অর্জুন, লেখকের মতে সাধারণ মানুষের প্রতিভূ। সকল ভাল মানুষের মত অর্জুনও অশুভ শক্তিকে ভয় পান এবং তা অতিক্রমণে ইচ্ছুক। অন্যদিকে বিবেক তাঁকে তাঁর কর্তব্যপালনে উদ্বুদ্ধ করে কিন্তু মানবপ্রীতির কারণে তিনি ইতস্ততঃ করেন।
লেখক স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন গীতায় যে কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের কথা বলা হয়েছে সেগুলির সব ক’টিরই গুরুত্ব সমান। এদের যে কোনো একটিকে আশ্রয় করেই লক্ষ্যে উপনীত হওয়া সম্ভব :
. . . these three methods are throughout the Gita regarded as complementary, each no more than the application of the simple theory of control to one department of man’s control.৪
অন্যত্র লেখক বলেছেন :
. . . from first to last work must be done, and knowledge soughtly and devotion practised, the proportion of each will vary according to the grade attained.৫
জীবনটা লেখকের দৃষ্টিতে ‘a school of progressive discipline’; তিনটি বিশেষ পর্যায়ের উল্লেখ করা হয়েছে :
the first period-which may be called a period of probation—is specially characterized by right work ‘work is said to be the means’; the second period-the period of progress to adeptship-is marked by quiet contemplation and the growth of knowledge-. . . and during the final stage-the period of ‘living release’ or ‘Brahmahood’ devotion to Krishna is predominent. . .৬
কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তির সমন্বয়ের ওপর লেখক গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তাই বলেছেন :
. . . all work must be performed with knowledge (Jnana).
আবার বললেন :
. . . the worker must be filled with a spirit of devotion (bhakti) to Krishna as incarnate God, and thus do all his works as an offering to him . . . Thus he who works with knowledge and devotion and without desire, wins liberation.৭
এবারে লেখক কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের যে পৃথক পৃথক আলোচনা করেছেন তার পরিচয় দেব।
কাজকে লেখক পাঁচটি ভাগে বিভক্ত করেছেন—নিত্য, নৈমিত্তিক, সহজ, শরীর রক্ষার্থে কৃত কার্য এবং অন্যান্য সকল কাজ। জাতি বা বর্ণ অনুযায়ী প্রত্যেকের কাজ করা উচিত বলে লেখক মনে করেন, কারণ ‘caste order is of divine institution.’৮
বাসনাযুক্ত কর্ম মানুষকে বন্ধনে আবদ্ধ করে, পক্ষান্তরে বাসনামুক্ত কাজে বন্ধনমুক্ত হওয়া সম্ভব :
It is therefore essential in the performance of work to abandon all desire for fruit, all motive, all thought of consequence.৯
জ্ঞানযোগপ্রসঙ্গে লেখকের স্পষ্টস্পষ্টি বক্তব্য :
… the whole content of the Gita lies in the field of knowledge, জ্ঞান কাকে বলে? সাংখ্য মতে, ‘the knowledge of the self and other things, acquired from the scriptures and from a teacher.’ প্রাথমিকভাবে জ্ঞান হল আত্ম-সম্পর্কিত, self, কিন্তু জ্ঞানের লক্ষ্য হল ‘realizing the oneness of the self with the absolute.১০
তাহলে মোদ্দা কথা হল, জ্ঞান বললে বুঝতে হবে—Krishna is all—the self of every being; আপাতভাবে জ্ঞান ও কর্ম পরস্পরের বিপরীত কোটিতে অবস্থানরত মনে হলেও আসলে তা নয়। ‘Knowledge and work, are not opposed’, two sides of one well-balanced mode of life. Knowledge must find its complement in work.’১১
এবারে ভক্তিযোগের প্রসঙ্গ। ইষ্টদেবতার উদ্দেশে নিবেদিত ভালবাসারই অপর নাম ভক্তি। এর মূলে থাকে বিশ্বাস আর পরিণামে মেলে প্রসাদ। ভক্তির প্রকাশ ঘটে তখনই :
when god is conceived of as personal, a saviour worthy of trust and ready to be gracious.১২
গীতাতে যে ভক্তির কথা পাই লেখক তাকে অযৌক্তিক উচ্ছ্বাস বলে মেনে নেননি, কিংবা কর্ম থেকে তা বিচ্ছিন্ন হওয়াও নয়। ভক্তি হল :
one essential element in a religious attitude, when knowledge and work play their due part.১৩
গীতার ভক্তিতত্ত্ব লেখকের মতে খুবই সরল। Bhakti in the Gita is man’s side of a personal relationship with Krishna Vasudeva. জ্ঞানের যেমন অগ্রগমন ঘটে, উত্তরোত্তর উন্নতি ঘটে, ভক্তির ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটে। গীতায় অর্জুন প্রথমাবধি কৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমান কিন্তু যতই উভয়ের কথোপকথন এগিয়েছে, অর্জুনের কৃষ্ণভক্তি ততই বেড়েছে। শ্রেষ্ঠ ভক্তই হলেন শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী, কিংবা শ্রেষ্ঠ জ্ঞানীই শ্রেষ্ঠ ভক্ত।
আলোচ্য গ্রন্থের Subject Index-টি খুবই প্রশংসনীয়। দীর্ঘ পরিসরে তা করা হয়েছে। শ্রম সাপেক্ষ এই কাজ। লেখক গীতার অনুবাদে প্রতিটি অধ্যায়ের ক্ষেত্রে Reading the First, Reading the Second এমন করে উল্লেখ করেছেন। অধ্যায়ের বিষয়বস্তুর কথা প্রকাশ করেন নি। তবে অধ্যায়ের শেষে যে পরিচিতি লেখক দিয়েছেন তা যেমন অভিনব তেমনি লেখকের শ্রদ্ধাবোধের পরিচয়বাহী। যেমন ৩য় অধ্যায়ের পরিসমাপ্তিতে বলা হয়েছে—
Thus Endeth the Third Reading
The Glorious Song of the Blessed Lord,
The Mystical Lesson,
The Wisdom of the Absoloute,
The Scripture of Control,
The Converse of Lord Krishna and Arjuna;
And its name is
Work.
অবশেষে কিছু অনুবাদকর্মের পরিচয় গ্রহণ করব।
i. Therefore without attachment ever perform the work that thou must do; for if without attachment a man works, he gains the Highest. (19 / 3rd canto)
ii. As is a man’s own nature, so he acts, even a man of Knowledge, all creatures follow Nature; What will restrainst effect? (33 / 3rd canto)
iii. He perishes who has no knowledge and no faith, a man of doubt; this world is not for him who doubts, nor that beyond, nor happiness. (40 / 4th canto)
iv. That man whose every enterprise is without desire or motive, whose work is burnt up in the fire of knowledge, the wise call learned. (19 / 4th canto)
v. For better is knowledge than constant practice; and than thou knowledge meditation is more excellent ; than meditation, abondonment of the fruit of work; after abondonment, peace ensures. (12 / 12th canto)
vi. He who hates not any being, he who is friendly and compassionate, without a thought of Mine or I, regarding pain and pleasure as all one, long suffering. (13 / 12th canto)
ভাগবদগীতা
স্টিফেন মিচেল
Stephen Mitchell-এর ‘Bhagavad Gita’-র ইংরেজি অনুবাদের প্রকাশকাল (১৯৪৩)। গীতার ইংরেজি অনুবাদগুলির মধ্যে এটি একটি উল্লেখযোগ্য স্থানের অধিকারী। Huston Smith-এর ভাষায় :
of this world—beloved, timeless classic, this is the most poetic renduring.
Mitchell নানা বিষয়ে লিখেছেন :
(কাব্য), The Fog Prince এবং Meetings with the Archangel (উপন্যাস), The Gospel According to Jesus (আলোচনা), Real Power : Business Lessons from the Tao Te Ching, Full woman, Fleshly Apple, Hot Moon : Selected Poems of Pablo Neruda (অনুবাদ অথবা আশ্রিত রচনা)। ভূমিকায় লেখক গীতা সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন, মূল্যায়ন করেছেন। তাঁর মতে গীতা আসলে কাব্য। গীতার কেন্দ্রীয় ভাব হল letting go of the fruit of action—again and again, গীতা not a systematic manual, এর পদ্ধতি ‘not linear but circular and descriptive’।
গীতায় ভক্তিবাদেই সর্বাধিক গুরুত্ব প্রদত্ত হলেও বিভিন্ন মানসিকতার মানুষের কথা স্মরণে রেখে অন্যান্য পথগুলিকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
he is aware that for people of different constitutions and affinities, different paths are appropriates, when he says that one particular path is superior, his statement does not come at the expense of the other paths. All paths and all people are included.
লেখক গীতাকে বিখ্যাত দার্শনিক কাব্য বলে স্বীকার করলেও, ঈশ্বরের উদ্দেশে রচিত প্রেমের কাব্য বলে বেশি করে মনে করেন :
The Gita is usually thought of as a great philosophical poem. It is that, of course. It is also an instruction manual for spiritual practice and a guide to peace of heart. But essentially it is, as its title implies, a love song to God.
শুধু ঈশ্বর নন, বাস্তবতার উদ্দেশে রচিত প্রেমের কাব্যও তা—যা কিছু সুন্দর, মহৎ সবকিছুরই প্রশংসা গাথা—The Gita is a love song to reality, a hymn in praise of everything excellent and beautiful and brave.
লেখক গীতার climax-এর সন্ধান পেয়েছেন একাদশ অধ্যায়ে যেখানে কৃষ্ণ তাঁর স্বরূপ উদঘাটন করেছেন অর্জুন সমীপে। লেখকের ভাষায় :
It is a terrifying theophany, a glimpse into a level of reality that is more than the ordinary mind can bear.
বিশ্ব সাহিত্যের ইতিহাসে গীতার একাদশ অধ্যায়টির গুরুত্বপূর্ণ স্থান বলে লেখকের বিশ্বাস :
The eleventh chapter of the Gita is one of the great moments in world literature.
গীতার ইংরেজি অনুবাদ প্রসঙ্গে এবারে আসা যাক। লেখক গীতায় ব্যবহৃত কিছু কিছু গুরুত্বপূর্ণ ভাবব্যঞ্জক সংস্কৃত শব্দাদির অনুবাদে যান নি, হুবহু শব্দগুলি ব্যবহার করেছেন। এমনই কয়েকটি শব্দ হল যোগ, গুণ, সত্ত্ব, রজঃ, তম। তাঁর মতে :
attempts to find English equivalents for such concepts have been uniformly unsuccessful and confuse more than they clarify.
গীতার অনুবাদে লেখক আশ্রয় করেছেন শিথিল ‘trimeter quatrain’-এর গীতার অনুবাদে কোন ছন্দ হবে আদর্শ এই নিয়ে লেখক ভাবিত ছিলেন, যাইহোক শেষ পর্যন্ত তিনি এভাবেই, সমস্যার সমাধান করেন—
Performing all actions for my sake,
desireless, absorbed in the self,
indifferent to ‘I’ and ‘mine’.
let go of your grief and fight !
Men who constantly practice
this teaching of mine, Arjuna,
who trust it with all their heart,
are freed from the bondage of action. (তৃতীয় অধ্যায়, ৩০-৩১ শ্লোক)
Whenever righteousness falters
and chaos threatens to prevail,
I take on a human body
and manifest myself on earth.
In order to protect the good,
to destroy the doers of evil,
to ensure the triumph of right,
in every age I am born.
whoever knows, profoundly,
my divine presence on earth
is not reborn when he leaves
the body, but comes to me. (চতুর্থ অধ্যায়, ৭ -৯ সংখ্যক শ্লোক)
Those who love and revere me,
who surrender all actions to me,
who meditate upon me
with undistracted attention.
Whose minds have entered my being–
I come to them all, Arjuna,
and quickly resume them all
from the ocean of death and birth.
Concentrate every thought
on me alone ; with a mind
fully absorbed, one-pointed,
you will live within me, forever. (১২শ অধ্যায়, ৬-৮ শ্লোক)
শ্রীমদ্ভগবদগীতা
ফ্রাঙ্কলিন এডগারটন
১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে Franklin Edgerton-এর The Bhagavad Gita প্রকাশিত হয়। মূলত এটি গীতার অনুবাদ। The Harvard Oriental Series-এর ৩৮ সংখ্যক গ্রন্থ এটি। গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন Walter Eugene Clark। অনুবাদক Franklin Edgerton ছিলেন Yale University-র সংস্কৃত ও তুলনামূলক দর্শনের অধ্যাপক।
গ্রন্থের ভূমিকায় লেখক যথার্থই মন্তব্য করেছেন :
It is a prime source of inspiration for many of the political and intellectual leaders of the Indian people ….
লেখক বলেছেন, ইংরেজিভাষীর কাছে বাইবেল না জানা যেমন অসম্ভব, তেমনি অসম্ভব হিন্দুর কাছে গীতা না জানা।
Edgerton-এর মতে :
গীতা হল ‘One of the great religious books of the world, the most important and influential Bibles of India (page x)’.
বর্তমান অনুবাদের বৈশিষ্ট্য হল বামদিকের পৃষ্ঠায় গীতার সংস্কৃত Text ইংরেজি হরফে মুদ্রিত করে ডানদিকের পৃষ্ঠায় ইংরেজি অনুবাদ উপস্থাপিত করেছেন। অনুবাদ হয়েছে মূলানুগ এবং আক্ষরিক। অনুবাদকের দাবী :
‘a method never before tried with either text or translation of the Gita’, তাঁর আরও স্বীকারোক্তি ‘Nor yet wholly unfaithful to the style and spirit of the original’.
পূর্বসূরীদের যে ব্যাখ্যার সঙ্গে অনুবাদকের মতপার্থক্য ঘটেছে সেগুলি সম্পর্কে উল্লিখিত হয়েছে। মুদ্রণ- বৈশিষ্ট্য হল :
Both are divided into lines so that a single line of print is devoted to a single quarter stanza of the text.
গ্রন্থের পরিশিষ্টে গুরুত্বপূর্ণ টিকা সন্নিবিষ্ট হয়েছে প্রতিটি অধ্যায়ের সঙ্গে। Edgerton সাহেবের অনুবাদের কিছু নিদর্শন আমরা এবারে গ্রহণ করব। প্রথমে কর্মযোগের (Discipline of Action) নির্বাচিত শ্লোকের—
১. ৯ নম্বর শ্লোকের লেখককৃত অনুবাদ—
Except action for the purpose of worship,
This world is bound by actions;
Action for the purpose, son of Kunti,
Perform thou, free from attachment (to its fruits).
২. ১৮ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
He has no interest whatever in action done,
Nor any in action not done in this world,
Nor has he in reference to all beings
Any dependence of interest.
৩. ১৯ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
Therefore unattached ever
Perform action that must be done,
For performing action without attachment
Man attains the highest.
৪. ২৪ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
These folk would perish
If I did not perform action,
And I should be an agent of confusion ;
I should destroy these creatures
৫. ২৫ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
Fools, attached to action,
As they act, son of Bharata,
So the wise man should act (but)
Unattached,
Seeking to effect the central of the world.
এইবার জ্ঞানযোগের অনুবাদের নমুনা, অবশ্যই নির্বাচিত শ্লোকের ।
১. ৩৬ নম্বর শ্লোকের আনুবাদ—
Even if thou art of sinners
The worst sinner of all,
Merely by the boat of knowledge all
(The Yea’ of) evil shalt thou cross ever.
২. ৩৭ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
As firewood a kindled fire
Reduces to ashes, Arjuna,
The fire of knowledge all actions
Reduces to ashes even so.
৩. ৩৮ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
For not like unto knowledge
Is any purifier found in this world
This the man perfected in discipline himself
In time finds in himself.
৪. ৩৯ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
The man of faith gets knowledge
Intent solely upon it, restraining his senses.
Having got knowledge, to supreme peace
In no long time he goes.
৫. ৪২ নম্বর শ্লোকের অনুবাদ—
Therefore this that springs from ignorance,
That lies in the heart, with the sword of knowledge thine own
Doubt cutting off, to discipline
Resort : arise, son of Bharata!
দ্বাদশ অধ্যায়ের ভক্তিযোগের নিদর্শন—
১. ১২ নম্বর শ্লোক—
For knowledge is better than practice,
And meditation is superior to knowledge,
And abandonment of the fruit of actions is better than meditation
From abandonment (comes) peace immediately.
২. ১৪ নম্বর শ্লোক—
The disciplined man who is always content
Whose self is controlled of firm resolve,
Whose thought and consciousness are fixed on Me,
Who is devoted to Me, he is dear to Me.
৩. ১৫ নম্বর শ্লোক—
He before whom people do not tremble,
And who does not tremble before people,
From joy impatience, fear and agitation
Who is free, he too is dear to Me.
৪. ১৬ নম্বর শ্লোক—
Unconcerned, pure, capable
Disinterested, free from perturbation,
Abandoning all undertaking,
Who is devoted to Me, is dear to Me.
৫. ১৭ নম্বর শ্লোক—
Who neither delights nor loathes,
Neither grieves nor craves,
Renouncing good and evil (Objects)
Who is full of devotion, he is dear to Me.
অনুবাদ স্বচ্ছন্দ, আন্তরিক এবং মূলানুগ। চেষ্টাকৃত জটিলতার সন্ধান মেলে না। বিশেষত লেখকের শব্দচয়নের প্রশংসা করতে হয়। সহজবোধ্য, সকলের বোধগম্য। প্রতিটি শ্লোকের শব্দ ধরে ধরে অনুবাদ করা হয়েছে। নিছক ভাবানুবাদে লেখক তাঁর দায়িত্ব শেষ করেন নি।
ভগবদগীতা
সঙ অফ দি লর্ড রিচার্ড গটস্যালক
Richard Gotshalk ছিলেন Harvard University’-র স্নাতক, North Western University’-র ডক্টরেট, Pennsylvania University’-র দর্শনের অধ্যাপক। এহেন Richard Gotshalk Bhagavad Gita’-র ইংরেজী অনুবাদ করেছেন সঙ্গে তাঁর মন্তব্যও যুক্ত করেছেন। কাজটি করেছেন তিনি ১৯৮৫তে। ভূমিকায় লেখক বলেছেন :
In our own (European and American) tradition there seems nothing that is quite parallel to the Bhagavad Gita or Song of the Lord.
গ্রন্থটির বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে লেখক আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন এইভাবে—
ক. I have appended a commentary. This should be of some assistance to the reader’s understanding of the poem….
খ. I have appended a number of notes, bearing on alternatives translation or interpretations of particular words or verse.
গ. I have sought to provide sufficient information to make possible a reader’s preliminary orientation to the terms and notions referred to in the course of the poem. That information primarily of a historical nature, has been placed in the notes.
ঘ. In order to facilitate the reader’s entry into the drama and the dramatic situation, I have offered a brief summary of the relevant part of the epic. This will enable the readers to place the Gita in its larger setting.
ঙ. I have sought to provide a translation which would make it possible for a reader to reach the thought of the Gita through an English rendering that expressed the acknowledgement that the poetic characters of the Gita is integral to its meaning.
চ. I have been guided by the notion that in a translation sacrifice of anything of the poetic character of the Gita must concern the level of specially not that of meaning. Thus not only I have sought accurate expression of the meaning and thought constituting the content of the conversation, but I have also played special attention to the dramatic elements seeking to render them right down to the epithets used of each other by the speaker.
ছ. I have tried as much as possible to keep interpretation to a minimum, after using or mentioning the Sanskrit terms and always seeking such expression as would admit as many as possible of the varied interpretation that could relevantly be put upon the Sanskrit, no translation can avoid being also an interpretation.
Richard নিছক অনুবাদক ছিলেন না তিনি সম্যকভাবে অবহিত ছিলেন যে, কোনো সাধারণ গ্রন্থের অনুবাদকর্মে তিনি ব্রতী নন, তিনি নিজে দর্শনের অধ্যাপক হওয়ায় গীতার তাৎপর্য যথার্থভাবে অনুভব করতে সক্ষম হন এবং তদনুযায়ী তাঁর অনুবাদকর্ম সম্পাদন করেন। তিনি শেষ পর্যন্ত অবহিত ছিলেন যে তাঁকে দুটি দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে যা অনুবাদ তাই আবার ব্যাখ্যা। সাধ্যমত ব্যাখ্যাদানে তিনি চরম সংযম রক্ষা করেছেন। মূলের প্রতি তিনি বিশ্বস্ত থেকেছেন কেননা গীতার মত কাব্যিক গ্রন্থের চরিত্র সম্পর্কিত কোনোকিছু বাদ দেওয়ার অর্থ পাঠকের প্রতি চরম অবিচার করা। সেই অবিচার করা থেকে বিরত থেকেছেন। পাঠকের সুবিধার্থে যা যা করণীয় সবই করেছেন লেখক অত্যন্ত নিষ্ঠা সহকারে। আমরা লেখকের অনুবাদকর্মের কিছু পরিচয় নেব-
i. If to your mind buddhi is superior to action (Karman), …. why, Fair—hair, do you enjoin me to this dreadful deed (Karman)? (১ম)
ii. Do your allotted action (Karman), for action (Karman) is superior to inaction (akarman)! Besides, if you engage in no action at all, you cannot even win the substance of your body. (৮ম শ্লোক)
iii. Therefore perform the action (Karman) to be done, continually free from attachment, for by performing action (Karman) without attachment, a man reaches the supreme. (১৯ সংখ্যক শ্লোক)
৪র্থ অধ্যায়ের কয়েকটি শ্লোকের অনুবাদের নিদর্শন :
Even if you are the must sinful of sinners, you will cross beyond all wickedness by the boat of Jnana alone. Just as a fire reduces its fuel to ashes, Arjuna, so the fire of Jnana reduces all activities (Karman) to ashes. For no equal to Jnana as a purifier is known on earth, through himself, the one who has perfected himself in disciplined union (Yoga) finds it in himself with time. (৩৬-৩৯ সংখ্যক শ্লোক)
১২শ অধ্যায়ের একটি শ্লোকের অনুবাদ :
Set your mind on me alone, settle your buddhi down at home in me, you will dwell in me alone thereafter, of that. (৮ম সংখ্যক শ্লোক)
গ্রন্থটির বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল লেখকের গীতার নাটকীয়ত্ব নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ—
The diological whole of the Gita is constituted by a dialogue within a dialogue, that is, by an indirectly, narrated dialogue. The main dialogue, that of Krishna with Arjuna is presented through Sanjaya, when we overhear relating that dialogue to Dhritarastra, the blind king whose sons are the leading force in the army arrayed over against the army led by Arjuna and his brothers. Sanjoya, a character, can relate the dialogue to his master while the two are at a distance from the scene due to supernatural power given him by Vyasa for the purpose. (page-xiv)
কুরুক্ষেত্র যুদ্ধাঙ্গনে যুদ্ধরত কৌরব ও পান্ডবপক্ষ। যুদ্ধের বিবরণ অন্ধ রাজা ধৃতরাষ্ট্রকে শোনাচ্ছেন সঞ্জয়, বলাবাহুল্য, সঞ্জয় ও ধৃতরাষ্ট্র অকুস্থল থেকে বহুদূরে অবস্থানরত। মহর্ষি ব্যাসপ্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতাবলে সঞ্জয় এই বিবরণ দিয়েছেন। এদিকে সমগ্র গীতা কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথনের আঙ্গিকে রচিত। মূল কথোপকথন কৃষ্ণার্জুনের, সঞ্জয়ের মাধ্যমেই আমরা তা প্রাপ্ত হয়েছি। লেখক যথার্থই বলেছেন :
The diological whole of the Gita is constituted by a dialogue within a dialogue….
দি ভাগবদগীতা
বারবারা স্টোলার মিলার
Barbara Stoler Miller গীতার অনুবাদ করেন ১৯৮৬তে। Miller ছিলেন Samuel R. Milbank Professor of Asian and Middle Eastern culture-এর অধ্যাপিকা, তাঁর কর্মস্থল ছিল কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত বার্ণার্ড কলেজ। সংস্কৃত সাহিত্যের প্রতিষ্ঠিত অনুবাদক এবং সেইসঙ্গে তিনি ভারতীয় সঙ্গীত ও শিল্পেরও বিশেষজ্ঞ ছিলেন। বিভিন্ন কাব্য ও নাটকের তিনি হয় অনুবাদ করেছেন, নতুবা সম্পাদনা করেছেন। তিনি দর্শনশাস্ত্রের পাঠ নিয়েছিলেন, ডক্টরেট ডিগ্রী ছিল সংস্কৃত ও ভারত বিদ্যায়। এ ডিগ্রী তিনি অর্জন করেন Pennsylvania University থেকে। ‘গীতগোবিন্দে’র তাঁর কৃত অনুবাদটি হল Love song of the Dark Lord. Miller-এর জীবনাবসান ঘটে ১৯৯৩ এ। তাঁর গীতার অনুবাদের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ড. রবার্ট এফ গহীন, যিনি ছিলেন Princeton University-র সভাপতি এবং ভারতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দূত, Ainslee Embree, columbia University-র ইতিহাসের অধ্যাপক।
Miller তাঁর ভূমিকায় জানিয়েছেন গীতা মোটেই ‘Lyric’ নয়, এটি ‘Philosophical poem’, যা রচিত হয়েছে অর্জুন ও কৃষ্ণের কথোপকথনের আঙ্গিকে। গীতায় কৃষ্ণপ্রদত্ত উপদেশ হল প্রত্যেকেরই উচিত নিজ নিজ কর্তব্য সম্পাদন, প্রয়োজনে বলপ্রয়োগের আশ্রয় নিতে হলেও। কিন্তু বারবারা বলেছেন গভীর অভিনিবেশ সহকারে গীতা অনুধ্যান করলে এর ভিন্নতর তাৎপর্য ধরা পড়বে :
if we listen carefully to the compelling urguments and imagery of the discourse, we cannot but hear the voice of a larger reality.
গীতায় কৃষ্ণ উপস্থাপিত হয়েছেন অর্জুনের সহচর ও শিক্ষকরূপে, যিনি ভক্তিবাদের ওপর জোর দিয়েছেন— Who commands devotion. আমরা Miller-এর অনুবাদ কর্মের কথঞ্চিৎ পরিচয় নেব—
A man cannot escape the force
of action by abstaining from actions;
he does not attain success
just by renunciation. (৩য় অধ্যায়, ৪র্থ শ্লোক)
Surrender all actions to me,
and fix your reason on your innerself
without hope or possessiveness,
your fever subdued, fight and battle !
Men who always follow my thought,
trusting it without finding fault,
are freed
even by their actions. (৩য় অধ্যায়, ৩০-৩১ শ্লোক)
Even if you are the most evil
of all sinners,
you will cross over all evil
on the raft of knowledge.
Just as a flaming fire reduces
wood to ashes, Arjuna,
so the fire of knowledge
reduces all actions to ashes.
No purifier equals knowledge,
and in time
the man of perfect discipline
discovers this in his own spirit. (৪র্থ অধ্যায়, ৩৬-৩৮ শ্লোক)
Focus your mind on me,
let your understanding enter me;
then you will dwell
in me without doubt.
If you cannot concentrate
your thought firmly on me,
then seek to reach me, Arjuna
by discipline in practice.
Even if you fail to practice,
dedicate yourself to action ;
performing actions for my sake,
you will achieve success. (১২শ অধ্যায়, ৮-১০ শ্লোক)
লেখিকার অনুবাদ প্রাঞ্জল এবং মূলানুগ। Miller কাব্যিক অনুবাদ করেছেন। পাঠক এই অনুবাদে মূলের স্বাদ পাবেন। সমালোচক যথার্থই বলেছেন :
It is a translation that affords pleasure no less than edification.
দি ভাগবদগীতা
জ্যাক হাউলে
Jack Hawley-র The Bhagavad Gita A Walk through for westerners-এর প্রকাশকাল ২০০১। প্রকাশস্থল নোভাটো, ক্যালিফর্ণিয়া। মোট চারটি পর্যায়ে বিন্যস্ত। প্রকাশক New World Library। প্রকাশকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মানবসমাজে গত কয়েক প্রজন্মের অন্যতম শ্রেষ্ঠ দান, অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ—The Gita has proven itself over hundreds of generation to be one of the greatest gifts ever given to humanity, one of the greatest scriptures ever written.
Hawley গীতা ভাললাগার কারণ স্বরূপ জানিয়েছেন, মানুষ কেমন করে বাঁচবে, আমাদের কাজের পরিণাম কী সেসম্পর্কে স্পষ্ট নির্দেশ দান, ধর্ম সম্পর্কে গীতার অতি সততা, পার্থিব উত্তেজনা প্রশমনে তার অনন্য ভূমিকা। গীতার তাত্ত্বিক জ্ঞানই শুধু নয় সেইসঙ্গে তার ব্যবহারিক দিক ইত্যাদি।
ভূমিকায় লেখক গীতার গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন, কী তা :
The Bhagavad Gita contains the inner essence of India, the moral and spiritual principles found in the very earliest scripture of the ancient India.১
লেখকের কাছে গীতার তাত্ত্বিকতা বা আধ্যাত্মিকতার তুলনায় এর কাব্যিকতার আবেদনই অধিক, গীতা তাঁর কাছে সার্বজনীন প্রেমগাথা, বিশেষ কোনো ধর্মে একে সীমাবদ্ধ রাখা চলে না।
The Gita after all, is not theology or religion—its poetry. It is a Universal love song sung by God to his friend man. It can’t be confined to any creed.২
গীতা নিছক একটিগ্রন্থ মাত্র নয়, কিছু শব্দনিচয় কিংবা ধারণানিচয় নয়, তার থেকেও অনেক অনেক বেশি কিছু :
The Gita is more than just a book, more than more words or concepts.৩
লেখক কর্মযোগ প্রসঙ্গে তাঁর নিজস্ব মূল্যায়ন প্রকাশ করেছেন, তা হল :
This is the path of selfless, God dedicated action. By making this your path you can live a spiritual life and yet stay fully active in the world. You can remain a man of action, achieving your very best, and yet not be bound or caught by the worldly.৪
লেখকের অনুবাদের কিছু নিদর্শন উদ্ধৃত হল—
i) Engage in action, do your work, but with full control of your mind, and senses. And be aware that the work you do should contribute in some way, directly or indirectly, to the higher of humanity. (৩য় অধ্যায়, ৭ম শ্লোক)
ii) One is obliged to work, to act, even to maintain one’s body—bathing, eating, sleeping, breathing. so do your obliged duties, Arjuna. Duty-bound action is far better than inaction. (৩য় অধ্যায়, ৮ম শ্লোক)
iii) But even great sages somethimes were perplexed as to what is action and what is inaction. I will tell you which actions (Karmas) you should perform and which ones to avoid. This secret can actually free you from this wheel of death and rebirth. (৪র্থ অধ্যায়, ১৬-১৭ সংখ্যক শ্লোক)
iv) This world is not for the person who performs no sacrifice, no worship. But those who actually live their lives as an offering partake of the of nectar God. Through selflessness thy reach the Divine. (৪র্থ অধ্যায়, ১১ম শ্লোক)
v) It is true that one is where one’s mind is. So fix your mind on Me. Be absorbed in Me alone. Focus your devotion on Me. Still yourself in Me. Without a doubt you will then come and live within Me. (১২শ অধ্যায়, ৮ম শ্লোক)
vi) If you are unable to become absorbed in Me, you can your mind away from the world and reach Me by constantly, concentrating on Me. I know this may seem impossible, but as I said, the ‘impossible’ can be made possible through regular practice (abhyasa yoga). (১২শ অধ্যায়, ৯ সংখ্যক শ্লোক)
ব্যাপকভাবে Hawley-র অনুবাদ প্রচারিত বিশেষত পাশ্চাত্য জগতে। পাশ্চাত্য জগৎ এটিকে নিছক গীতার অনুবাদ বলে গ্রহণ করেনি, গ্রহণ করেছে নিষ্ঠাবান সাধকের উপহার হিসাবে। বলা হয়েছে, ‘Hawley created this prose version to speak afresh to Westerners.’ অনুবাদে ‘clarity’ এবং ‘flow’ দুই-ই রক্ষিত হয়েছে। অনুবাদের সারল্য এবং বোধগম্য ভাষা গ্রন্থটির পাঠযোগ্যতাকে বৃদ্ধি করেছে। দূরূহ শ্লোকগুলির অনুবাদেও লেখক বাঞ্ছিত নৈপুণ্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। অনুবাদ যেমন খুব সংক্ষিপ্ত হয়নি তেমনি অতি বিস্তারিতও হয়নি, সামঞ্জস্য রক্ষিত হয়েছে এই দুইয়ের।
ভাগবদগীতা
স্বামী প্রভাবানন্দ ও ক্রিস্টোপার ইসার উড
ভাগবদগীতার ইংরেজি অনুবাদ অনেকেই করেছেন, তবু অসংখ্য অনুবাদের মধ্যে যে কয়টির পরিচিতি ব্যাপকতর ক্ষেত্রে স্বামী প্রভাবানন্দ এবং ক্রিস্টোফার ইসারউডের যুগ্মভাবে কৃত অনুবাদটি অন্যতম। উল্লেখ্য এটির ভূমিকা লিখেছেন Aldous Huxley স্বয়ং। প্রকাশকাল প্রথম সিগনেট ক্ল্যাসিক প্রিন্টিং, জুলাই, ২০০২-এ।
ভূমিকায় অনুবাদকদ্বয় কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন গীতা সম্পর্কে এবং তাঁদের অনুবাদ কর্ম সম্পর্কেও। বলা হয়েছে, গীতার প্রথম অধ্যায়টি পুরোপুরি মহাকাব্য, মহাভারতের পুরো মেজাজটিই এখানে প্রতিফলিত। যোদ্ধাদের রণ, কোলাহল, হ্রেষাধ্বনি এসব কিছু ছাপিয়ে বড় হয়ে আমাদের কাছে হাজির হয়েছে কৃষ্ণার্জুনের কথোপকথন। বলা হয়েছে, the Gita is an exposition of vedanta Philosophy, based upon a very definite picture of the Universe!
অনুবাদকরা সর্বতোভাবে সচেষ্ট হয়েছেন গীতার Cosmology বা বিশ্বতত্ত্বকে সাধ্যমত সহজ সরলভাবে প্রকাশ করতে পরিশিষ্টে। আত্মন, ব্রহ্মণ, প্রকৃতি কিংবা গুণের মত বহুলব্যবহৃত সংস্কৃত শব্দগুলি অবিকৃতভাবে গ্রন্থে ব্যবহৃত। গীতার চিরন্তন বাণী হল অনন্ত ও কালমুক্ত। বলা হয়েছে, গীতা বিশেষ কোনো ভাষা, গোষ্ঠী বা জাতির নয়। গীতা হচ্ছে ‘greatest religious documents of the world’. গীতা অনুবাদের সময় বিস্মৃত হতে হবে বেদান্ত দর্শন কিংবা সংস্কৃত পরিভাষাগুলি। বিস্মৃত হতে হবে কৃষ্ণ-অর্জুন, অতীত-বর্তমান, প্রাচ্য-পাশ্চাত্য সম্পর্কেও। গীতাকে সর্বজনবোধ্য করতে অনুবাদকরা বিচিত্র আঙ্গিকের সাহায্য নিয়েছেন। কিয়দংশ গদ্যে এবং কিয়দংশ পদ্যে অনুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদকরা অনুবাদে একটি বিষয়ে স্বাধীনতা নিয়েছেন—কৃষ্ণকে অভিহিত করা হয়েছে গোবিন্দ, কেশব, মধু হত্যাকারী রূপে। একইভাবে অর্জুন অভিহিত হয়েছে কুন্তীসুত, পৃথার পুত্র, ভরত বংশধর রূপে। অনুবাদে দু’একটি বিশেষণ মাত্র ব্যবহৃত হয়েছে।
অনুবাদ গ্রন্থটির গৌরব বৃদ্ধি হয়েছে Aldous Huxley-র সুচিন্তিত ভূমিকার সংযোজনে। Huxley’-র মতে গীতা occupies an intermediate position between scripture and theology; শাস্ত্রের কাব্যময়তা এবং ধর্মতত্ত্বের পদ্ধতিকে যুক্ত, সমন্বিত হতে দেখেছেন তিনি গীতায়। Huxley’-র মতে, গীতা can be regarded as the focus of all Indian religion. আনন্দকুমার স্বামীর মত। গীতার মূল্য তাঁর মতে কেবল ভারতীয়দের কাছেই নয় তামাম মানব জাতির কাছেই। Huxley মন্তব্য করেছেন :
The Bhagavad Gita is perhaps the most systematic scriptural statement of the perennial philosophy.
এবারে কর্ম, জ্ঞান ও ভক্তিযোগ থেকে কিছু নির্বাচিত অনুবাদ নমুনা স্বরূপ উদ্ধার করা গেল—
Smoke hides fire,
Dust hides a mirror
The womb hides the embryo ;
By lust the Atman is hidden.
Lust hides the Atman in its hungry flames,
The wiseman faithful foe.
Intellect, senses and mind
Are fuel to its fire ;
Thus it deludes
The dweller in the body,
Bewildering his judgment.
Therefore, Arjuna, you must first control your senses, then kill this evil thing which obstructs discriminative knowledge and realization of the Atman.
The senses are said to be higher than the sense objects. The mind is higher than the senses. The intelligent will be higher than the mind. What is higher than the intelligent will? The Atman itself. (Karma Yoga)
He who sees the inaction that is in action, and the action that is in inaction, is wise indeed. Even when he is engaged in action he remains poised in the tranquility of the Atman.
The seers say truly
That he is wise
Who acts without lust or scheming
For the fruit of the act ;
His act falls from him,
Its chain is broken,
Melted in the flame of my knowledge.
Turning his face from the fruit,
He needs nothing !
The Atman is enough,
He acts, and is beyond action. (Renunciation through Knowledge)
His attitude is the same toward friend and foe. He is indifferent to honour and insult, heat and cold, pleasure and pain. He is free from attachment. He values praise and blame equally. He can control his speech. He is content with whatever he gets. His home is everywhere and nowhere. His mind is fixed upon me, and his heart is full of devotion. He is dear to me. This true wisdom I have taught will lead you to immortality. The faithful practise it with devotion, taking me for their highest aim.
(The yoga of Devotion)
ভাগবদগীতাব্রায়ান হজকিনসন
Brian James Hodgkinson-এর পড়াশুনা Oxford-এর Balliol College-এ। এখানে তিনি পাঠ নিয়েছিলেন দর্শন, রাজনীতি, অর্থনীতির। এরপর তাঁর অধ্যাপনা সাসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ে, অধ্যাপনার বিষয় ছিল তাঁর দর্শন। British Economy Survey পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। বর্তমানে তিনি অক্সফোর্ডে অধ্যাপনারত। তাঁর আজীবনের আকর্ষণ দর্শনশাস্ত্রে। Brian Hodgkinson ২০০৩ সালে গীতার ইংরেজি কাব্যানুবাদ করেন। তাঁর অনুবাদের বৈশিষ্ট্য হল ইংরেজি Iambic Pentameters-এ সংস্কৃতে রচিত গীতার অনুবাদ। গীতার শ্লোকগুলি যে ছন্দে রচিত তার সঙ্গে ল্যাটিন ও গ্রীকের গভীর সাযুজ্য। কিন্তু এ ছন্দ ইংরেজি কাব্যের ক্ষেত্রে দৃষ্ট হবার নয়। প্রশ্ন হল Hodgkinson কেন Iambic Pentameter-এ গীতার অনুবাদ করলেন। করলেন তার কারণ ইংরেজি মহাকাব্য এই ছন্দে রচিত।
এবারে অনুবাদ সম্পর্কে কিছু কথা। অধ্যাপক Hodgkinson দর্শনের অধ্যাপক তাই গীতার অনুবাদে তিনি জোর দিয়েছেন গীতার দার্শনিকতার ওপর। গ্রন্থের ভূমিকায় সেই আলোচনা সন্নিবিষ্ট। তাঁর মতে কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ব্রোঞ্জ যুগের সমাপ্তিতে। অর্জুনের দুঃখবোধ লেখকের মতে ব্যক্তিবিশেষের পরিবার-পরিজন হারানোর বেদনার তুলনায় অনেক বেশি। লেখক অর্জুনের দুঃখবোধে প্রত্যক্ষ করেছেন বৃহত্তর সত্যকে :
It is the profound despair of one who feels himself to be an agent in the down fall of mankind itself, a cause of the secular deterioration of human life.১
অর্জুনের ভূমিকা লেখকের মতে মোটেই কাপুরুষের ভূমিকা নয়, কিংবা তাঁর আচরণে সহানুভূতি প্রকাশিত হয়নি কিংবা প্রকাশিত হয়নি প্রিয়জনদের জন্য তাঁর ভালোবাসা বা অনুরাগ। মানবিকতার ধ্বংসের প্রেক্ষিতেই অর্জুনের বিষাদ-ভারাক্রান্ত চিত্তের আত্মপ্রকাশ :
it is the perennial problem of all who find themselves taking part in destructive actions that appear to jeopardize the future of humanity, from Kurukshetra to Hiroshima২
লেখকের মতে পশ্চিমে যেমন খ্রিস্ট, পূর্বে তেমনি কৃষ্ণ। তাঁর মতে গীতার তাৎপর্য এখানেই :
as the Bronze Age gives way to Iron, the final resort of all men is a teaching which will sustain them in the wilderness that the collapse of civilization has endangered.৩
যা কিছু দৃশ্যমান বস্তু অথবা তাদের গুণাবলী, আসলে এগুলি কয়েকটি নাম আর অবয়ব ছাড়া কিছুই নয়, এসবের আসলে কোনো অস্তিত্বই নেই। বাস্তবতার লক্ষণ কি? না পরিবর্তনশীলতা। সবকিছুই পরিবর্তিত হয়, সবকিছু আসে আবার চলে যায়। কিন্তু গীতার মতে এমনটা নয়। যা কিছু আসীন চিরকালই তা থেকে এসেছে, এবং চিরকাল তা থেকেও যাবে। একমাত্র বাস্তব হল আত্মন (self), যা চেতনার সঙ্গে অভিন্ন। লেখক গীতার সঙ্গে কঠোপনিষদের সাযুজ্য প্রত্যক্ষ করেছেন :
The Gita echoes the Katha upanisad when it asserts the eternity of the self.৪
লেখক মায়ার প্রকৃতি বিশ্লেষণে প্রয়াস করেছেন। উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, মায়া হল সিনেমার পর্দায় দেখা ছবির মত এর আসল কোনো অস্তিত্বই নেই। আপাত অস্তিত্বের জন্য মায়াকে পরিপূর্ণভাবে নির্ভর করতে হয় বাস্তবতা তথা সত্যের ওপর, লেখকের মতে সেটা হল চেতনা :
Maya is like a picture on a cinema screen, …. realistic, easy to identify with, but ephemeral and completely wiped out the instant the light is turned off.৫
গীতার দার্শনিক আলোচনায় দর্শনের অধ্যাপক তুলনামূলক দর্শনের পথে হেঁটেছেন। তিনি David Hume, Marsilio Ficino, Ludwig witt genstein, Immanuel Kant এঁদের তত্ত্বগুলির প্রসঙ্গ এনেছেন।
গীতায় অর্জুন ও কৃষ্ণের কথোপকথনের সূত্রে অর্জুনের উপলব্ধির কথা বলেছেন লেখক। কী সেই উপলব্ধি?
it becomes increasingly clear to Arjuna that the only reasonable course for him, and for all men, is to discover the union with Lord who is the Self of all.৬
কৃষ্ণ তিনটি পথের নির্দেশ দিয়েছেন—কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ। কিন্তু সেইসঙ্গে কৃষ্ণ জানিয়েছেন, যে কোনো একটি পথ অবলম্বন করলেও চলবে, নির্দিষ্ট পথ অনুসরণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই :
Three ways in particular are elaborated : Karma yoga, Bhakti yoga and Jnana yoga, corresponding, more or less, to the paths to be followed through action, devotion and intellect, but available as one way with three aspects for those who are not especially inclined to any one.৭
লেখক একবার বললেন, তিনটি পথের মধ্যে কৃষ্ণ জ্ঞানযোগের ওপরই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন, অন্য দুটি পথ হল এরই প্রস্তুতিপর্ব মাত্র, কিন্তু তারপরই আবার মন্তব্য করলেন ভক্তিযোগের পথিকরা তাঁর কত প্রিয়, কৃষ্ণ তার ওপরই গুরুত্ব আরোপ করেছেন। এক্ষেত্রে লেখক স্পষ্ট করলেন না কোনটি তবে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানযোগ না ভক্তিযোগ?
Krishna indicates that Jnana yoga is the highest of these and that the others are preparations for it, though his emphasis upon how dear to him are the followers of bhakti yoga suggests that devotion alone may be sufficient.৮
লেখক কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগ সম্পর্কেও বিস্তারিত আলোচনা করেছেন গীতার অনুষঙ্গে। প্রথমে আসা যাক কর্মযোগের প্রসঙ্গে। সূচনায় লেখক ঈশোপনিষদের একটি শ্লোকের উল্লেখ করেছেন, যেখানে বলা হয়েছে কর্ম সম্পাদন করেই মানুষের শতবর্ষ জীবিত থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করা উচিত, কর্ম ব্যতিরেকে অন্য কিছু বিকল্প নেই। অর্জুনকেও কৃষ্ণ কর্মযোগে যোগদানের আহ্বান জানিয়েছেন। বলেছেন :
a sincere follower of the latter (Karma yoga) may eventually reach a purified state suitable for Jnana yoga.৯
লেখক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন :
The lowest form is to surrender the fruits of action, that is to give up the thought that an action is to be judged or valued by its results or rewards.১০
কর্ম করতে হবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে তার অর্থ এই নয় যে, কর্ম করতে হবে লক্ষ্যহীনভাবে। লেখক সুচিন্তিতভাবে ‘purpose’ এবং ‘aim’ শব্দ দুটি ব্যবহার করেছেন। বলেছেন, ‘all actions have an aim’; কিন্তু সচেতন থাকতে হবে যাতে লক্ষ অন্য পথে চালিত না হয় :
without diverting the attention at all from the moment of action to anything consequent upon it১১
যিনি কর্মযোগী ‘action’ তাঁর জীবনের কেন্দ্রাতিগ শক্তি, কিন্তু প্রায়শই কর্মযোগের অনুসরণকারী যে ভুলটি করে বসে তা হল বিশেষ একটি কাজ আমিই করছি, আমিই তীর নিক্ষেপ করছি, বলকে আঘাত করছি, কিন্তু সত্য হল :
the shooting and the hitting, the speaking or the writing, take place according to the natural laws that govern the element. The hand releases, or the tongue vibrates, most efficiently when there is no identification with the ego, when the action just takes place of itself.১২
কর্মযোগের সর্বোত্তম প্রকাশ হল :
to offer every action to the Self or the Lord. This dedication of action is made by the mind in acknowledgement of the ultimate source of all action, from which arise all the constituents of action, the body, agent, organs, their function and a presiding deity.১৩
ভক্তিযোগের আলোচনায় লেখক প্রশ্ন তুলেছেন :
without devotion how would the aspirant keep to the path of reason or of action?
অর্থাৎ ভক্তি ব্যতিরেকে কর্মযোগ কিংবা জ্ঞানযোগের সাধনা অসম্ভব। আবেগপ্রবণ মানুষদের কাছে ভক্তিযোগ গ্রহণযোগ্য অনেকখানি। নৈব্যক্তিক শাশ্বত ব্রহ্মকে আরাধনা করা কঠিন, তাই ভক্তিযোগের অনুসারীদের কর্তব্য হল— should be devoted to the Lord who dwells within all creatures, who becomes ‘ere’ long this saviour from the ocean of despair. এবং এই ধরনের ভালবাসার কথা সকল ধর্মের মূল।
দেবতাকে নিজের থেকে পৃথক করে দেখার সুবিধা আছে :
Devotion to God, if god is understood as outside or beyond oneself, has its advantages, of course, and may be a great deal better than a lack of devotion or disbelief in God…..১৪
ধর্মের আন্তর সত্য কী? অদ্বৈত বোধ। লেখক যীশু প্রবর্তিত খ্রিস্টধর্মের প্রসঙ্গ টেনেছেন। বলেছেন, Love between God and the devotee is an incomplete condition, এই কথার প্রতিধ্বনি মিলেছে সক্রেটিস- কৃত-Plato’-র Symposium-এর ব্যাখ্যাতেও। জ্ঞানযোগের আবেদন যুক্তির কাছে। কৃষ্ণ অর্জুনের কাছে তার কাপুরুষের মত দুঃখবোধের প্রেক্ষিতে যথার্থ বাস্তব সত্যের স্বরূপ উদঘাটন করেছেন। অর্জুনের ক্লেশবোধের অন্তরালে এই সত্য অবস্থান করছিল। কৃষ্ণ ব্যাখ্যা করেছেন :
pain and pleasure are transient and illusory, স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, মানুষের মৃত্যু মানে তার দেহের মৃত্যু কিন্তু আত্মা অবিনশ্বর। Self is beyond birth and death and undergoes no change.
জ্ঞানযোগে যে যুক্তির অবস্থান তার কাজ কী?
to remove identification with the separate element. Having heard the scriptural statement, about the Self or Brahman, reason becomes capable of discriminating between this-its own Self and each elements.১৫
লেখকের দুটি আলোচনার অভিনবত্বের সপ্রশংস উল্লেখ করতে হয়। গীতায় যে নৈতিক আচরণের কথা বলা হয়েছে (action for duty’s sake and action for good of all) তার সঙ্গে দার্শনিক Kant-এর ‘Moral Principles’-এর তুলনামূলক আলোচনা। দুইয়েরই উদ্দেশ্য ‘Welfare of the world’ এবং ‘the care of all mankind.’
অর্জুনের সঙ্গে শেক্ষপীয়রের Hamlet-এর তুলনা করা হয়েছে। অদ্বৈতদর্শন এলিজাবেথীয় থিয়েটারে কোনো ভাবে প্রবিষ্ট হয়েছিল বলে লেখকের অনুমান। শেক্ষপীয়র stoic philosophy দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন, বিশেষত প্রভাবিত হয়েছেন Seneca’-র দ্বারা আর তাতেই হ্যামলেট নাটকে গীতার প্রতিধ্বনি লক্ষিত হয়েছে।
হিন্দু ও খ্রিস্টধর্মের মূলে লেখক অদ্বৈত দর্শনের প্রভাবের কথা বলেছেন। বলেছেন, যীশু ও কৃষ্ণ দুজনের অবতারত্ব বিষয়ে, দুজনেরই আবির্ভাব ঘটেছে :
Both were incarnations (avatars) who look upon themselves the task of revitalizing the word at a time of degeneration…….১৬
যীশু ও কৃষ্ণ লেখকের দৃষ্টিতে অভিন্ন :
Krishna, like Jesus, is the redeemer of mankind …. To seek refuse in Krishna, to seek refuse in christ, is one and the same.১৭
সবশেষে লেখকের কিছু অনুবাদের পরিচয় নেওয়া যেতে পারে—
A two-fold path beloved of devotees,
The way of knowledge first, then action’s way.
Freedom from action never shall be found
By mere inaction, nor shall renouncing
Bring men to that end ; for in each moment
Actions are performed. All men are helpless,
Driven on to act by those three gunas
Which per fade the world ; and those who curb
Their outward acts alone are hypocrites,
Who dwell within intent on sensual lust,
Deluded by themselves ; esteemed the more
That man, quite unattached, whose mind controls
The wanderings of sense, although he acts. (chapter iii; 4-7)
You will perceive all beings in yourself,
And hence within. Me also. Were you still
The worst of sinful men, yet would you cross
The sea of evil deeds on wisdom’s boat ;
For just as blazing fire turns wood to ash,
So knowledge burns away an act’s effect
Nothing in this world so purifies.
Whoever’s freed by Yoga finds in time,
This knowledge for himself within Himself.
He who devotes himself to wisdom’s cause,
Restrains his senses, and in full of faith,
Attains that wisdom and, soon after, peace ;
But ignorant and faithless men are lost ;
More so the man who will forever doubt ;
Nor this world even, nor the joys of heaven,
Nor any happiness, may he expect. (chapter iv, 36-41)
He who be friends all creatures, hating none,
Compassionate, without the thought of ‘mine’,
Devoid of ego, patient and content,
Unmoved by pain and pleasure, self-controlled,
Steady in contemplation, sure of mind,
His thought and reason stead fastly on Me!
Who loves Me thus is specially dear to Me.
He who does not agitate the world,
Nor whom the world disturbs, unmoved by fear,
Beyond impatience, pleasure or regret ;
Such a one is specially dear to Me.
He who depends on nothing pure at heart,
Who does not hesitate when called to act,
Without anxiety or desire to please,
Whose undertakings offer no reward ;
Such a one is specially dear to Me. (chapter xii; 13-17)
দি ভাগবদগীতাজর্জ থমসন
গীতার অনুবাদ অনেকেই করেছেন, তন্মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য নাম হল George Thompson, যিনি দীর্ঘ বিশ বছরের অধিককাল গীতার পাঠ দিয়ে এসেছেন কলেজে। জর্জ থম্পসন বেদজ্ঞ এবং সংস্কৃতজ্ঞ। কর্মসূত্রে তিনি ম্যাসাচুসেটস-এর Montserrat college of Art in Beverly’-র সঙ্গে অধ্যাপনার সুবাদে যুক্ত।
থম্পসনের বিশেষত্ব হল তিনি কেবল গীতার অনুবাদই করেন নি, সেই সঙ্গে একটি দীর্ঘ পান্ডিত্যপূর্ণ ভূমিকায় গীতার বৈশিষ্ট্য এবং গুরুত্ব সম্পর্কেও অনেক মূল্যবান কথা বলেছেন। প্রথমেই গীতা সম্পর্কে লেখকের সামগ্রিক মূল্যায়ন কী দেখা যাক :
the Bhagavad Gita, no matter how it came to have the form that it now has, continues to be an enormously important document within the context of world literature. No one can any longer claim to be well-read and literate who has not read and responded thought fully to the very challenging questions that the Bhagavad Gita asks of us about ourselves.১
পৃথিবীর সাহিত্যের ইতিহাসে গীতার গুরুত্বপূর্ণ স্থান স্বীকৃত হয়েছে, গীতা অধ্যয়ন ব্যতিরেকে একজন নিজেকে শিক্ষিত বলে দাবি করতে অক্ষম, গীতায় যেসব প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে আমাদের কাছে আমাদের সম্পর্কে সেগুলির গুরুত্বও অপরিসীম। গীতার বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে লেখক যেসব তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য করেছেন এবারে সেগুলির পরিচয় নেওয়া যাক—
গীতার রচনাকাল লেখকের মতে first century C.E. গীতার প্রেরণাসূত্রেরও সন্ধান করেছেন লেখক। তাঁর মতে যখন সংস্কৃত মহাকাব্যদ্বয় রচিত ও সংগৃহীত হচ্ছিল তখনই ভারতে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক পট পরিবর্তন ঘটে, যা নূতন ধরনের আধ্যাত্মিকতার উন্মেষ ঘটায়। গীতা এর থেকেই প্রেরণা সংগ্রহ করে। ভারতবর্ষে যে নূতন ভক্তিবাদের সূচনা হয় সেসম্পর্কে লেখক আলোচনা করেছেন :
Around the second century B.C.E. expression of an intense personal devotion to a particular deity began to emerge, with increasing passion. This new devotionalism, called Bhakti in Sanskrit, was radically different from the traditional Vedic spirituality (dated roughly 1200 to 500 B.C.E.) that had preceded it by several centuries.২
লেখক আরো বললেন :
in the Bhagavad Gita itself—bhakti devotionalism was an explicit turning away from the generally more impersonal sacrificial ritualism of the Vedas…..৩
গীতা প্রাণিত করেছে ঈশ্বরে ব্যক্তিগতভাবে সমর্পণের জন্য। ঈশ্বরে আত্মসমর্পণের উপদেশ দান গীতার একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য। এই সুবাদেই ভক্তিবাদের পৃষ্ঠপোষকতা দেখি ভাগবত গীতায় :
The Bhagavad Gita thereby solidified bhakti devotionalism as a major cultural force in classical India and centered it on the god Krishna.৪
ভাগবত গীতায় ‘আত্মনে’র গুরুত্বপূর্ণ স্থান। ‘আত্মনে’র ধারণা সম্পর্কে ব্যাখ্যাও প্রদত্ত হয়েছে।
In the Bhagavad Gita, the atman is eternal, and is ultimately unaffected by events in the natural world (Prakriti) and its three qualities (gunas).৫
পুনর্জন্মের তত্ত্বটিও গীতায় চমৎকার ভাবে উপস্থাপিত :
Another feature of the philosophy of the Bhagavad Gita that deserves attention is the fact that reincarnation is so well-entrenched in it that it is simply taken for granted.৬
পুনর্জন্মের তত্ত্বটি হল আত্মনের জন্ম হয়, মৃত্যুও হয়, আবার তার জন্ম হয়। এইভাবে জন্ম মৃত্যুর ঘটনার মধ্য দিয়ে পরিণতি লাভ ঘটে—যখন ব্যক্তি ব্রহ্মণের সঙ্গে একাত্মতা অনুভব করে। একথা ঠিকই যে ভাগবত গীতা এই তত্ত্বের উদগাতা নয়, কিন্তু গীতা তত্ত্বটিকে জনপ্রিয়তা দান করেছে।
গীতার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল কর্মযোগ প্রসঙ্গের উত্থাপন। কর্ম মাত্রেরই অনিবার্যভাবে প্রতিক্রিয়া পরিণাম আছে। কেবল এ জীবনেই নয় পরবর্তী জীবনেও তার জের চলতে থাকে। বস্তুত ভারতীয় সংস্কৃতিতে এ দুটিই—পুনর্জন্মবাদ এবং কর্মবাদ বহুলপরিচিত ও বহু মানুষের দ্বারাই গৃহীত।
লেখক লক্ষ্য করেছেন, গীতায় অহিংসার বহুল প্রভাব, চার-চারবার ‘অহিংস’ শব্দটির ব্যবহার উল্লিখিত হয়েছে। এর থেকেই লেখকের সিদ্ধান্ত :
The Bhagavad Gita at times does gesture toward a philosophy of non violence….৭
কিন্তু তাই বলে গীতা অহিংসার প্রচার করেনি, করেনি যে তার কারণ কর্মের মতই হিংসা অনিবার্য সত্য :
in this world violence, like action is inevitable.৮
J. Robert oppenheimer যিনি ‘আণবিক বোমার জনক’ বলে পরিচিত, তিনি হার্ভার্ডে পড়াশুনা করার সময় সংস্কৃত ও প্রাচ্য দর্শনের পাঠ নিয়েছিলেন, তাঁর ওপর গীতার প্রভাব ছিল সুগভীর। লেখক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, প্রথম আণবিক বোমার বিস্ফোরণে তিনি তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাতে গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ের ১২ এবং ৩২ সংখ্যক শ্লোক দুটি উদ্ধার করেছিলেন।
গীতায় সময়ের প্রসঙ্গও এসেছে, লেখকের দৃষ্টিতে :
in the Bhagavad Gita, time is cyclical and thus unending.৯
গীতায় ‘যোগ’ শব্দটিকে কমপক্ষে নব্বইবার ব্যবহৃত হতে দেখেছেন লেখক। লেখকের মতে :
Yoga is in the Bhagavad Gita the most basic tool of spiritual development.১০
যোগের সাহায্যেই মানুষ যথার্থ জ্ঞানের অধিকারী হয়, নিজেকে জানতে পারে। যদিও গীতায় কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ ও ভক্তিযোগের কথা বলা হয়েছে, লেখকের মতে :
Bhakti is the best Yoga, because it is the most accessible form of Yoga, available to as many people as possible.১১
দুই বিরুদ্ধ মতবাদের সমন্বয় সাধনের কারণে গীতার শ্রেষ্ঠত্ব অনুভব করেছেন লেখক। কী বিরুদ্ধ মতবাদ? বর্ণাশ্রম প্রথা নিয়ন্ত্রিত সমাজ এবং এর থেকে মুক্ত হয়ে মুক্তি লাভ :
The Bhagavad Gita effectively resolved the tension between two opposed sets of values. It preserved the caste-oriented social institutions that held the culture together and, at the same time allowed an individual to seek salvation outside of them … This was one of the Bhagavad Gita’s greatest and most enduring achievements …..১২
ভাগবত গীতার প্রথম অধ্যায়টির সূচনা নামের তালিকা নিয়ে। লেখক স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, এটা হল মহাকাব্যের একটি বৈশিষ্ট্য। ইলিয়াডেও দেখা গেছে জাহাজের তালিকা। লেখকের প্রাসঙ্গিক মন্তব্য :
In epic traditions it was obligatory to list the names of the heroes and heroic families who participated in epic wars.১৩
লেখকের মতে গীতা কেবল প্রভাবশালী ধর্মীয় সঙ্গীত মাত্র নয়, একই সঙ্গে সুন্দর কাব্যও তা। ভাগবত গীতা প্রাথমিকভাবে কৃষ্ণ ও অর্জুনের কথোপকথন। কিন্তু রচয়িতা এক্ষেত্রে দ্বৈত ভূমিকায় অবতীর্ণ। কী রকম?
When he speaks in the role of Arjuna, he impersonates Arjuna, and when he speaks in the role of Krishna, he impersonates Krishna.১৪
ভাগবদগীতায় অবতারতত্ত্ব স্বীকৃত। যখন ভাগবত গীতা রচিত হয় তখন ভারতে তিন দেবতার বহুল প্রচার। এঁরা হলেন ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বর। ব্রহ্মা হলেন স্রষ্টা, বিষ্ণু হলেন রক্ষাকর্তা আর শিব হলেন ধ্বংসের দেবতা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় ভাগবত গীতায় এঁরা কেউই বারংবার উল্লিখিত হন নি, যিনি উল্লিখিত হয়েছেন তিনি কৃষ্ণ, বিষ্ণু নন, বিষ্ণুর অবতার তিনি। লেখক লক্ষ্য করেছেন ভাগবত গীতায় বিষ্ণু উল্লিখিত হয়েছেন তিনবার, তন্মধ্যে দ্বিতীয় অধ্যায়েই দু’বার এবং শিব উল্লিখিত হয়েছেন একবার মাত্র।
ভাগবত গীতার রচয়িতার একটিই মাত্র উদ্দেশ্য ছিল, তা হল কৃষ্ণের অবতারত্ব প্রতিপাদন। দেবশ্রেষ্ঠ রূপে তাঁর প্রতিষ্ঠা।
লেখকের স্পষ্ট অভিমত প্রাচীন ভারতকে জানতে হলে এমনকি আমাদের ভারতকে জানতেও গীতা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান :
For any one who wishes to come to an understanding of and a feeling for classical India, and for India today as well, the Bhagavad Gita is a crucial source.১৫
গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়টি সম্পর্কে লেখকের বক্তব্য এটি ভাগবত গীতার পরিবর্তে অর্জুনের গীতায় পরিণত— কারণ অর্জুনের নিরিখেই এটি রচিত। দ্বিতীয় অধ্যায়টি ত্রুটিপূর্ণ বলে লেখকের অভিমত :
In fact chapter ii does not appear to fit within its immediate context.১৬
Thompson গীতার অনুবাদ করা প্রসঙ্গে তাঁর কৈফিয়তে বলেছেন :
long felt the need for one that is both accurate and engaging and perhaps even eloquent … The Bhagavad Gita were awkward, stiff, and sometimes hardly poetic at all … to make a vigorous, rhythmic prose translation is also rooted in my aim to make, first of all an accurate translation.১৭
গীতার স্বতঃস্ফূর্ত এবং যথার্থ অনুবাদে প্রয়াসী লেখক চেয়েছিলেন পদ্যানুবাদের পরিবর্তে গদ্য অনুবাদ করতে, কারণ :
The Bhagavad Gita is composed in a metrical form, mostly in a quatrain of eight-syllable lines known in Sanskrit as the sloka, or the anustubh ….. But I think it has been a mistake to try to imitate or reproduce the quatrain stanzas in English.১৮
লেখক তাঁর অনুবাদের লক্ষ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন :
I have decided to compromise literal accuracy for the sake of intelligibility, for a general non-Hindu audience.১৯
কেন তিনি অর্জুন এবং কৃষ্ণের সম্পর্কে ব্যবহৃত বিশেষণগুলি পরিত্যক্ত হয়েছে তারও কৈফিয়ৎ দিয়েছেন :
Throughout the Bhagavad Gita, Arjuna and Krishna address each other directly by name, but frequently their names are replaced by numerous popular epithets that are well- known even today to an Indian audience. These epithets add nuance and texture to their personalities, and in case of Krishna also to the history of his assimilation to Vishnu… However to a contemporary American audience, and especially to an inexperienced student audience, these epithets create a good amount of confusion. I have preferred for the most part neither to retain them nor to translate them at all, …২০
পরিশেষে Thompson-এর অনুবাদদক্ষতার সামান্য কিছু পরিচয় গৃহীত হল :
i) As the fire is obscured by smoke and the mirror by stains, as the embyro is enveloped by the membrane, so this world is obscured by that desire. (৩য় অধ্যায়, ৩৮ সংখ্যক শ্লোক)।
ii) They say that the senses are superior to sense objects but the mind is superior to the senses. And indeed insight is superior to the mind. But there is the one who is superior even to insight. (৩য় অধ্যায়, ৪২ সংখ্যক শ্লোক)
iii) I created the four castes of the world, distinguishing them according to their qualities and their actions. And though I am the agent of this world, know that I am also the eternal no non-agent. (৪র্থ অধ্যায়, ১৩ সংখ্যক শ্লোক)
iv) You should understand what action is and distinguish it from wrong action. And from these you must distingush non-action. The path of action is hard to understand. (৪র্থ অধ্যায়, ১৭ সংখ্যক শ্লোক)
v) The yogin who is always content and self-restrained and firm in his resolve, and who directs his mind and his awareness upon me and he is my devotee, and he is dear to me. (১২শ অধ্যায়, ১৪ সংখ্যক শ্লোক)
Thompson-এর অনুবাদ সাবলীল এবং মোটের ওপর মূলানুগ। অনুবাদ গদ্যে হলেও এতে কাব্যের আভাস দুর্নিরীক্ষ্য নয়। অনুবাদ স্বচ্ছ ও স্নিগ্ধোজ্জ্বল।
.
দি ভাগবদগীতা / ডবলিউ. ডগলাস পি হিল:
১. The Bhagavad Gita; W. Douglas P. Hill ; Introduction, p-24
২. Ibid, p-35
৩. Ibid, p-38
৪. Ibid, p-54
৫. Ibid, p-55
৬. Ibid, p-55
৭. Ibid, p-61-62
৮. Ibid, p-61
৯. Ibid, p-61
১০. Ibid, p-64
১১. Ibid, p-63
১২. Ibid, p-65
১৩. Ibid, p-67
দি ভাগবদগীতা / জ্যাক হাউলে:
১. Introduction; page-xvii
২. Introduction; page-xxv
৩. Introduction; page-xxv
৪. The path of knowledge; page – 18-19
ভাগবদগীতা / ব্রায়ান হজকিনসন:
১. Introduction, Bhagavad Gita; page – 11
২. Introduction, Bhagavad Gita; page – 11
৩. Introduction, Bhagavad Gita; page – 11
৪. Introduction, Bhagavad Gita; page – 13
৫. Introduction; page – 13
৬. Introduction; page – 22
৭. Introduction; page – 22
৮. Introduction; page – 23
৯. Introduction; page – 23
১০. Introduction; page – 23
১১. Introduction; page – 23
১২. Introduction; page – 24
১৩. Introduction; page – 24 – 25
১৪. Introduction; page – 27
১৫. Introduction; page – 28
১৬. Introduction; page – 35
১৭. Introduction; page – 36 – 37
দি ভাগবদগীতা / জর্জ থমসন:
১. Introduction; page – xlvii
২. Introduction; page – xxvi
৩. Introduction; page – xxvi
৪. Introduction; page – xxviii
৫. Introduction; page – xxviii
৬. Introduction; page – xxix
৭. Introduction; page – xxx
৮. Introduction; page – xxx
৯. Introduction; page – xxxv
১০. Introduction; page – xxxviii
১১. Introduction; page – xxxviii
১২. Introduction; page – xxxix
১৩. Introduction; page – xi
১৪. Introduction; page – xli
১৫. Introduction; page – xlv
১৬. Introduction; page – xlvi
১৭. Introduction; page – xii
১৮. Introduction; page – xii
১৯. Introduction; page – xvi
২০. Introduction; page – xvi