৪. নিঝুম রাত

নিঝুম রাত। জেগে আছে চরণ। অন্ধকার। বাতি নেভানো যদি কুটে পাগলা আসে। কিন্তু কার জন্য জেগে থাকা। এ কে চরণের। কেউ নয়, তবু জাগতে ইচ্ছে করছে। ভালবাসতে ইচ্ছে করছে সুনির্মলকে। কয়েকবার চুপিসারে হাত বুলিয়েছে সে সুনির্মলের গায়ে। এরা ভয়ানক, এরা ভাল, এরা পবিত্র। এদের বাবা মা বাড়ি, এদের লেখাপড়া, সব কিছু মিলিয়ে চরণ কত তুচ্ছ, এরা কোনওদিন কি জীবনে কোনও নোংরামি দেখেছে? চরণের মতো অভিশপ্ত হয়ে ওদের কি কোনও দিন বাঁচতে হবে। না! ওদের ভাগ্য আলাদা। ওদের কাজ আলাদা তাই ওরা কত মহৎ কাজ করে, স্বদেশী করে, জেলে যায়। সেই তুলনায় আমি কত হীন, কত কুৎসিত ঘরে আমার জন্ম। সেই বীভৎস মা নিষ্ঠুর বাবা।

কিন্তু এ শুধু তাই নয়। রণের ঘুমহীন নিঃসঙ্গ রাত্রে আজ সে সঙ্গী পেয়েছে। একাকীত্ব সে আর সহ্য করতে পারে না। তার সে একাকীত্ব ঘুচিয়েছে সুনির্মল। তার মনের মতো মানুষ। ইদানীং তার ফাঁকা মনটা নিয়তই কাউকে চাইছিল। যাকে ভাল লাগে, যাকে একটু ভালবাসা যায়। আজ সে পেয়েছে সুনির্মলকে। শীত খুব। তবু নিজের গায়ের কাঁথাটা সে সুনির্মলকে দিয়েছে। কাঁথাটা নোংরা, তবু দিয়েছে। সে সব দিতে পারে, সব। কারও জন্য, অনেকের জন্য, মনের মানুষদের জন্য নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রাণ চায় তার।

সকালবেলা ভজন দোকানে আসতে না আসতে সুনির্মলের বাবা এসে হাজির। সারা রাত প্রায় ঘুম হয়নি ভজনের। মেচেতা পড়া চোখের কোল তার আরও বসে গিয়েছে। রুগণ দেখাচ্ছে মুখটা। তার সঙ্গে সঙ্গে সারা রাত জেগেছে যুঁই। সারা রাত, কেঁদেছে অন্ধকারে আর ভজনের আরামের জন্য সেবা করেছে। একটু ঘুম এনে দেওয়ার জন্য অপরাধবোধে ভজন নির্বাক ছিল, রোগের যন্ত্রণার উপরে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছিল আর একটা যন্ত্রণা। তার উপরে আর একটা দুশ্চিন্তা ছিল দোকানের জন্য। সুনির্মল সুস্থ হয়ে যেতে পারে, কিন্তু দোকানটা নষ্ট হলে এ সংসারটা যে অচল হয়ে পড়বে।

সুনির্মলের বাবা এলেন হাঁপাতে হাঁপাতে, রাতজাগা উৎকণ্ঠা নিয়ে। শুধু উৎকণ্ঠা নয়, ভয়ে প্রাণ উড়ে গিয়েছে ভদ্রলোকের। তাঁর ছেলের সর্বনাশা পথের কথা তিনি জানতেন। সাদা সরল মানুষ এসেই ভজনের হাত ধরে প্রায় ড়ুকরে উঠলেন, আমার ছেলে কোথায় বলে।

আপনারা ছেলে। অবাক হওয়ার ভান করল ভজন।

হ্যাঁ, আমার ছেলে, যার মাথাটি তোমার দাদা খেয়েছেন। আমার সেই একমাত্র ছেলে সুনির্মল। দোহাই তোমার, বলল সে কোথায়?

ভজন বলল, এই মরেছে, আমি কী করে জানব? আমি কি ওদের দলের লোক?

সুনির্মলের বাবা প্রায় কেঁদে উঠলেন, বাবা, আমায় লুকোসনি, আমি জানি, তুই ওদের লোক। খুব ভাল, এরকম ভাবেই নিজেকে গোপন করে রাখ। কিন্তু ছেলেটা কোথায় বল। সে যে কাল দুপুরে বেরিয়েছে, আর তো ফিরল না সারা দিনে রাতে। বলে দাও, আমি আর কোনও দিন ওকে তোমার এ দোকানে আসতে বারণ করব না।

আর কোনও দিন এ দোকানে আসতে বারণ করবেন না, দলের লোক এসব কী বলছেন ভদ্রলোক। অবাক হল, হাসি পেল ভজনের। বুকের কোথায় যেন খচখচ করতে লাগল। ও! তাই বুঝি ভাবে সবাই ভজনকে। ভজুলাটকে। মাতালটাকে। মনে মনে ছি ছি করল সে নিজেকে, ছি ছি করল লোককে। তবু তাকে ভেক নিতে হল। বলল, দেখুন কাকাবাবু, কাল সুনির্মল আমার কাছে এসেছিল।

তারপর? উদগ্রীব হয়ে উঠলেন সুনির্মলের বাবা।

আমাকে বলল, ওর কোন কলেজের বন্ধুর সঙ্গে কদিন কোথায় বেড়াতে যাবে।

সে কী, কলেজ থেকে যে ওর নাম কাটিয়ে দিয়েছে? বন্ধু আসবে কোত্থেকে?

প্রমাদ গণল ভজন, তা তো জানিনে। আমাকে এই বলেছিল। আচ্ছা আপনি যান, আমি খবর নিচ্ছি। পুলিশে খবর-কবর দেবেন না, তা হলে একটা গণ্ডগোল হয়ে যেতে পারে। আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে বাড়ি যান।

সত্যি বলছিস বাবা?

সত্যি বলছি।

ভদ্রলোক একটু যেন নিশ্চিন্ত হলেন। যেতে গিয়ে আবার ফিরে দাঁড়িয়ে নিচু গলায় বললেন, ছেলে যে আমার খারাপ নয়, তা আমি জানি। তা সে যে যা-ই বলুক। দেখছি তো পাড়ার ছোঁড়াগুলোকে। ওরকম হলে আমি গলায় দড়ি দিতুম। কিন্তু বড় ভয় করে বুঝলে। সারাটা রাত এল না। মানে, ছেলে কিনা, মানে…গলাটা বন্ধ হয়ে গেল ভদ্রলোকের। হাসতে গেলেন, ঠোঁট দুটো বেঁকে গেল। ফিসফিস করে বললেন, যাচ্ছি নিশ্চিন্ত হয়ে।

চলে গেলেন সুনির্মলের বাবা। ভজন ফিরে দাঁড়িয়ে দেখল, চরণ হাসছে দাঁত বের করে।

ভজন খেঁকিয়ে উঠল, অত হাসি কীসের। আমাকে বিপদে পড়তে দেখে হাসি হচ্ছে।

বলে এগুতেই চরণ চড়চাপড় খাওয়ার ভয়ে শক্ত হয়ে দাঁড়াল। কিন্তু তাকে কিন্তু মা বলে ভজন ভেতরে ঢুকে দেখল, সুনির্মলও শুয়ে শুয়ে হাসছে। মুখটা তার শুকনো, ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে। বলল, উঃ, আমি ভাবছিলুম, ভেতরে ঢুকে পড়ল বুঝি। ভজুদা মাথা থেকে কথাটা কে বার করেছ তো?

তোর জন্যে কি বলেছি? বলেছি আমার দোকানটার জন্য। বুড়ো হাঁক হাঁক করে ঢুকত, লোক জানাজানি হত। বেকায়দায় পড়তুম আমি। ধরে নিয়ে যেত তোকে, আর গণেশ উলটে বসে থাকত আমার। কিন্তু এ-সব রমজানি এখানে আর কদিন চালাবে। ভজন কোমরে হাত দিয়ে ঘাড় কাত করে দাঁড়াল।

সুনির্মল বলল, আমি তো রথীনকে বলেছিলুম, সন্তোষ মাসিমার ওখানে নিয়ে যেতে।

তবে সেখানে গেলেই হত। শেষটায় মিছে কথা বলালি আমাকে দিয়ে। বুড়ো আবার না এসে কী ছাড়বে! বলে দলের লোক।

খানিকটা আপন মনে বলল, আমার বয়ে গেছে। এ দেশের লোকের আর খেয়েদেয়ে কাজ নেই, তাই সব তিল থেকে তাল করে বেড়াচ্ছে।

বলে সে রান্নাঘরে ঢুকে থমকে দাঁড়াল। দেখল, উনুনের ধারে বড় প্লেটের উপর ডবল ডিমের মামলেট আর মাখন রুটি সাজানো রয়েছে। কী ব্যাপার। সে ডাকল, চরণ।

চরণ তার পিছনেই ওই ডাকের জন্য তটস্থ হয়ে অপেক্ষা করছে। ধরা পড়ে যাওয়া অপরাধীর ভাব তার চোখে মুখে। কিন্তু হাসিটি ছাড়েনি। বলল, আজ্ঞে।

আজ্ঞে এদিকে এসো তো। বলে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকাল সে চরণের দিকে। ভাবল, এ হারামজাদাও কি লুকিয়ে খায় নাকি। বলল, সকালবেলা খদ্দেরের খ নেই, ও খাবার কার জন্য সাজিয়েছ চাঁদ?

আজ্ঞে। বলতে গিয়ে তেমনি সলজ্জ হেসে থেমে গেল চরণ। তবে ভজনের হাতের রেঞ্জের বাইরে।

আজ্ঞে কেন, বলে ফ্যাল না হারামজাদা। খেঁকিয়ে উঠল ভজন।

চরণ সুনির্মলকে দেখিয়ে বলল, ওই বাবুর জন্যে।

মাইরি? ভজনের চোখ কুঁচকে উঠল। বাছার আমার বাবুঅন্ত প্রাণ দেখছি। দামটা কে দেবে?

চরণ বলল, বাবুর শরীরটা…

ভজন ধমকে উঠল, চুপ! যেন কতকেলে বাবু ওর।

বেশি অবাক হয়েছে সুনির্মল। সে ব্যাপারটা কিছুই জানে না। বলল, আমার জন্য খাবার? কই আমি তো কিছু

ভজন হাত তুলে ভেংচে উঠল, থাক তোমাকে আর ভালমানুষি করতে হবে না। শালা-একটা আমাকে খেয়ে ফতুর করার তালে তালে ছিল, আর একটা খাইয়ে ফতুর করবে দেখছি।

চরণের দিকে ফিরে বলল, দাও আর কেন? তা বাবুর তোমার কালকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গিয়েছে। ওই ডিম রুটির সঙ্গে একটু দুধ জ্বাল দিয়ে দাও, উবগার হবে।

চরণ বুঝল খ্যাঁকানির আড়ালে এটা আসলে নির্দেশ। সে অতিমাত্রায় ব্যস্ত হয়ে উঠল দুধ জ্বাল দিতে।

ভজন সেদিকে তাকিয়ে বলল, তারপর দেখছি আমি তোর ওস্তাদিটা। ব্যবসা গুটিয়ে দূর করে দেব এখান থেকে তোকে দাঁড়া। তার আগে চল থলেটা নিয়ে বাজার ঘুরে আসি।

বলে সে সামনের ঘরে চলে গেল। চরণ হাসি মুখ নিয়ে ফিরে তাকাল সুনির্মলের দিকে। সুনির্মলের মুখেও হাসি। এদিক থেকে ভজনের স্বরূপটা তারা জানে।

.

নতুন বছর পড়ে গেল। ইংরেজি নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি আচমকা মুক্ত হয়ে এলেন নারায়ণ।

বিকালবেলা, বিনা সংবাদে তিনি এসে দাঁড়ালেন স্টেশনের রকে। অবাক হয়ে তাকালেন শ্রীমতী কাফের দিকে। পিছনে দুজন কুলি বিছানা বাক্স মাথায়।

নারায়ণ এসে দাঁড়ালেন সিঁড়ির সামনে। শ্রীমতী কাফের মাথায় পিছন থেকে ড়ুবন্ত সূর্যের আলো পড়েছে তাঁর মুখে। তাঁর মুখে বিস্ময়, হাসি হাসি ভাব, একটা দ্বিধা, একটা বেদনার আভাস। কিন্তু তার চেয়েও বেশি তাঁর চোখে মুখে ছড়িয়ে আছে একটা মুক্তির উল্লাস। তার ক্ষুধার্ত চোখ, লুব্ধ শিশুর জিহ্বার মতো সমস্ত কিছু গোগ্রাসে গিলছে! সবই যেন তেমনটি আছে কেবল শ্রীমতী কাফেটি ছাড়া। এই লাল ধুলো ভরা রাস্তা, ঘোড়াগাড়ির আস্তানা, দোকানের সারি। হঠাৎ বাঁক নিয়ে মোড় ফেরানো গঙ্গামুখোপশ্চিমের রাস্তাটা, মোড়ের ন্যাড়া ন্যাড়া অশ্বত্থ গাছটা, তলায় সেই মুচি, দোকানদারদের সেই পরিচিত মুখগুলো, তারপর দক্ষিণের দীর্ঘ সড়ক। দুপাশে তার গাছের সারির মধ্যেই ওদিকে কোথায় লুকিয়ে আছে একটা একতলা বাড়ি। একটা বাড়ি, তার খান কয়েক ঘর, রক, পাতকুয়ো, খিড়কি দ্বার, পাঁচিলের গায়ে একটা পেয়ারাগাছ, পিছনে পাড়া আর প্রতিবেশী।

নারায়ণের চোখ ছলছল করে উঠল। মাকে মনে পড়ছে। মা, বকুলমা, বাবা, ভজন, তার বউ আর ছেলে। বুকটা যেন যুগপৎ শুন্যতায় পূর্ণতায় ভরে উঠল। ইচ্ছে হল ওই ধুলো ভরা রাস্তাটাকে দুহাতে আঁকড়ে ধরেন; মুখটি খুঁজে দেন রাস্তার কোলে। তাঁর সারা দেহ রোমাঞ্চিত হয়ে উঠল। চোখের জল তিনি কিছুতেই রোধ করতে পারলেন না।

রাস্তায় ভিড় বিকালের, ট্রেনের। পথচারীদের মধ্যে হঠাৎ কয়েকজন দাঁড়িয়ে পড়েছে। অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে কয়েকজন দোকানি। ভুনু আর দু-একজন গাড়োয়ান চেঁচাতে গিয়ে থমকে গিয়েছে। যাত্রীটি শাঁসালো নিঃসন্দেহে কিন্তু এ যেন ঠিক তেমন যাত্রীটি নয়। সকলেরই যেন চিনি চিনি মনে হয়, তবু বলা যাচ্ছে না মুখ ফুটে।

হঠাৎ কুটে পাগলা চেঁচিয়ে উঠল, ওগো, লারান ঠাকুর এসেছে গো। লারান ঠাকুর এসেছে।

বলতে বলতে খপ করে এসে নারায়ণের হাতটা চেপে ধরলে সে। আর এক হাত দিয়ে চিবুক ধরে বলল, এবার কোথা যাবে আমার গোরাচাঁদ? সুর করে বলল, আর তো তোমায় ছাড়ব না হে, কাঁটা হয়ে রইব পথে।

মুহূর্তে যেন শোর পড়ে গেল। নারায়ণ এসেছে, নারান ঠাকুর, বটঠাকুর। লাটঠাকুরের দাদা গো, সেই যে সায়েব মেরে জেলে গিয়েছিল। হ্যাঁ, নেকো হালদারের বড় ছেলে। পাঁচ বচ্ছর বাদে ফিরল। পাঁচ বচ্ছর না মুণ্ডু, দশ বচ্ছর বাদে। চোদ্দো বছর হে! রাম ফিরেছেন বনবাস থেকে। কিন্তু ফাঁসি হওয়ার কথা ছিল যে! পারেনি। পারেনি শালার সরকার। আহা দ্যাখ দ্যাখ গায়ে যেন সূর্যের ছটা বেরুচ্ছে।

হ্যাঁ, সুর্যেরই ছটা। তবু কৃশ হয়েছেন নারায়ণ অনেকখানি। মুখটা যেন আরও ফরসা দেখাচ্ছে। যেন বাউলের চিকন মুখোনি। তার চোখ পড়ল সকলের দিকে। আশ্চর্য, কেউ ভোলেনি। সবাই যেন ফিরে পাওয়া আত্মজনের দিকে তাকিয়ে আছে। এগিয়ে আসছে কেউ কেউ। নারায়ণ তাড়াতাড়ি চোখ মুছে সিঁড়ি নামতে গেলেন।

কুটে পাগলা জোর করে হাত চেপে ধরল, বলল, কোথা যাবি ঠাকুর? যাবি তো চারটে পয়সা দিয়ে যা। নইলে ছাড়ব না।

ছাড়বে না। হেসে ফেললেন নারায়ণ। তেমনি আছে পাগলটা। বদলায়নি একটুও। পুরনো হওয়ার অবসর দিলে না নারায়ণকে। যেন পুরনো মানুষটিই দাঁড়িয়ে আছে ওর কাছে। তিনি পকেট থেকে পয়সা বের করে দিলেন কুটের হাতে। তারপর নেমে এসে উঠলেন শ্রীমতী কাফেতে।

হীরেন আর কৃপাল কী কথায় ব্যস্ত ছিল। তারা চমকে উঠল নারায়ণকে দেখে। লাফিয়ে উঠল। হীরেন এসে জড়িয়ে ধরল নারায়ণকে! কৃপাল হাত চেপে ধরল। পরিচিত খদ্দেররা উঠে এল চেয়ার ছেড়ে কথা বলার জন্য। একদল লোক উঠে এল দোকানের উপর রাস্তা ছেড়ে।

চরণ অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ভেতরের দরজার কাছে। দেরি হয়নি চিনতে তার। ওই চেহারার কথা সে অনেকবার শুনেছে, তার চেয়েও বেশি শুনেছে নামটা। একটা অদ্ভুত ধারণা ছিল এ মানুষটির সম্পর্কে তার। প্রাণে বড় সাধ ছিল, এই মূর্তিটি সে একবার দেখবে। পায়ে হাত দিয়ে ধুলো নেবে। কিন্তু পারল না দাঁড়িয়ে রইল। রূপ দেখতে লাগল সে। প্রাণ ভোলানো রূপ।

শুধু দেখছে না ভজন। বিকালের ঝোঁকেই নেশা করেছে সে। মাথা এলিয়ে দিয়ে পড়ে আছে টেবিলের উপর। জানতেও পারছে না কে এসেছে, ভাবতেও পারছে না।

নারায়ণের চোখ ভজনের উপর পড়ল। বুঝলেন, ভজন মাতাল হয়ে পড়ে আছে। নানা রকমের খবর পেয়েছেন জেলে বসে ভজনের মদ খাওয়ার কথা। ভজন মাতাল। প্রখর বুদ্ধিতে আর সাহসে যার জুড়ি ছিল না এ তল্লাটে, সেই ভজন। কিন্তু কেন ও মাতাল হল। বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল নারায়ণের। যন্ত্রণা করতে লাগল, অপরিসীম বেদনায় ভরে উঠল বুকটা। কেন, কেন এমন হল ভজনের! তাঁর বড় প্রিয়, বড় আদরের দুবিনীত ভজন।

তিনি ভজনের মাথার উপর একটি হাত রেখে ডাকলেন, ভজন…, ভজুরে।

সবাই চুপচাপ। আরও লোক জমছে। পরিচিত পথচারীরা সবাই ঢুকছে। যেন শহর নয়, গাঁয়ের মুদিখানার মতো ভিড় করছে সবাই। গাঁয়ের ছেলে এসেছে জেল থেকে। সবাই দেখছে। দেখছে দুই ভাইয়ের ব্যাপারটা। কেউ কেউ খানিকটা বা মত্ত ভজনের মাতলামি দেখবার জন্য উঁকি দিচ্ছে। কুলি দুটোর মাথা থেকে একজন বোঝাগুলো নামিয়ে দিল। কতক্ষণ আর দাঁড়িয়ে থাকবে ওরা।

নারায়ণ আবার ডাকলেন, ভজন…ভজু।

ভজন টেবিলে মুখ ঘষতে ঘষতে মোটা জড়ানো গলায় বলে উঠল, ও মায়া ডাক অনেক শুনেছি বাবা। ওতে আর ভজুলাট ভুলছে না।

দু-চারজন হেসে উঠল নিঃশব্দে। বাদবাকিরা ভ্রূ কোঁচকালো তাদের দিকে তাকিয়ে।

চরণের গলাটা যেন চুলকে উঠল। ইচ্ছে হল, চিৎকার করে বাবুকে ডেকে সে উঠিয়ে দেয়।

নারায়ণভজনের মাথাটা ধরে ঝাঁকানি দিলেন। বললেন, ভজু, আমি এসেছি রে।

ভজন তার রক্ত শিবনেত্র তুলে হেসে উঠল বলল,

কে গো তুমি সন্ধ্যাবেলা সন্ধ্যামালতি
জ্বালতে এলে অন্ধ বুকে প্রেমের বাতি।

আবার একটা চাপা হাসি দেখা গেল কয়েকটা মুখে। ভিড় বাড়ছে। ভিড় দেখে ভিড় করেছে অনেকে। জিজ্ঞেস করছে, কী হয়েছে? কিছু হয়নি, কিছু না। নারায়ণ ফিরে এসেছেন।

নারায়ণ বললেন, আমি নারায়ণ, তোর দাদা।

ভজনের চোখ এবার বিস্ফারিত হয়ে উঠল। সামনে ভূত দেখার মতো চমকে উঠল সে। তাড়াতাড়ি দুহাতে মুখ ঢেকে সে বলল, দাদা এসেছ? দাদা তুমি? আমার শ্রীমতী কাফেতে? কিন্তু, কিন্তু আমি যে মদ খেয়েছি।

সেকথা শুনেও অনেকে হাসল। নারায়ণ হাত ধরলেন ভজনের। বুকের মধ্যে আড়ষ্ট ব্যথায় কথা আটকে গেল তার ভজনের কথা শুনে, আমি যে মদ খেয়েছি। কিন্তু কেন? কেন। খেয়েছিস?

ভজন আবার বলল, দাদা তুমি সত্যি এসেছ? আর আমি, আমি যে মাতাল হয়ে পড়েছি।

ভজনের মুখটা আরও লাল হয়ে উঠল। লাল হয়ে উঠল নারায়ণের মুখও। দুজনেই চুপচাপ। দুজনেরই গলার কাছে কী যেন ঠেলে আসছে, কথা বেরুচ্ছে না। অনেকদিন অনেক বছর বাদে তারা দুই ভাই বাইরে মিলেছে। জেলখানার বাইরে, খোলা আকাশের তলায়, বহু লোকের মাঝে। ভাইয়ের চেয়েও বড়, তারা দুই বন্ধু। কিন্তু, তাদের আর কথা সরছে না মুখ থেকে। তারা পয়শনে যেন কী হারিয়েছে, সেই ব্যথায় তারা নিশ্চুপ।

সংবাদ এর মধ্যেই রটে গিয়েছে নারায়ণ এসেছেন। প্রিয়নাথ এসেছে। রথীন এসেছে। এসেছে আরও ছেলেরা।

এমন সময় এল ছোকরা পুলিশ অফিসার। তার একটু দেরি হয়েছে। সে এসেছিল নারায়ণকে স্টেশনে রিসিভ করতে। এখানে রিসিভ অর্থে নিজের পরিচয় দান। পুরুক্তি প্রতে আসছিল নারায়ণের উপর সরকারের বিধিনিষেধের ফিরিস্তি। যে বিধিনিষেধের অডার পড়ে নামায় সই করে এসেছেন জেল থেকে। কিন্তু শ্রীমতী কাফেতে এত ভিড় দেখে চমকে উঠল সে। এত ভিড় কেন? লোকটা জেল থেকে এসেই সভা করতে আরম্ভ করল নাকি? কিন্তু বক্তৃতা করতে নিষেধ আছে যে।

অফিসার এসে দাঁড়াতেই জনতার চোখ মুখের ভাব পালটে গেল। অনেকে সরে পড়তে লাগল এদিকে ওদিকে। যাকে বলে কেটে পড়তে লাগল। মাঝখান দিয়ে ভাগ করে ভেতরে যাওয়ার জায়গা করে দিল অফিসারকে।

অফিসার ভেতরে ঢুকে টুপিটা খুলল। চিনতে ভুল হল না নারায়ণকে। বলল, আপনার কোনও সভা-সমিতি করা সম্পূর্ণ নিষেধ।

নারায়ণ অবাক হলেন এবং সেই সঙ্গে সকলেই। সভা কোথায় হচ্ছে? নারায়ণ বললেন, সভা কোথায় দেখলেন? আমরা পরস্পরের সঙ্গে দেখা করছি।

ও! অফিসার খানিকটা বিমুঢ় ও বিস্মিত চোখে ভিড়ের দিকে ফিরে তাকাল। আশ্চর্য! এরা সব দেখা করতে এসেছে। এত লোক, এই পথচারী, দোকানি, গাড়োয়ানগুলো।

ভজন হঠাৎ তার মেজাজে ফিরে গেল। বলল, মশাইয়ের এটা সভাস্থল বলে মনে হল! বেশ, সভাস্থলই হয়ে উঠুক তবে এটা। চা-পানের সভা। উঠে এসো সব, চলে এসো ভেতরে। চলে এসো।

বলেই হাঁক দিল, চরণ, সবাইকে চা দে। কেউ যেন ফিরে না যায়। চলে এসো।

অনেকেই ভেতরে ঢুকে এল, কেউ কেউ চলে গেল ভয়ে। কিন্তু বেশির ভাগই ভেতরে ঢুকে এল। ভেতরে যাদের জায়গা হল না, বারান্দায় রইল তারা।

অফিসার হাসতে চেষ্টা করল। বলল, কিছু মনে করবেন না, আমি অন্য কথা ভেবেছিলুম। আচ্ছ, চলি নারায়ণবাবু। আপনি তা হলে রোববার দিন আসছেন থানায়। বলে নমস্কারের একটা ভঙ্গি করে বেরিয়ে গেল সে। জ্বালা ধরে গিয়েছে তার বুকটার মধ্যে। মনে হল সমস্ত লোকগুলো এক-একটা পয়লা নম্বরের শয়তান। ব শয়তানগুলো আসছে মনে মনে। কিন্তু চিরদিন এরকম যাবে না। বিশেষ ওই মাতাল ভজুলাটের কথাগুলো যেন সাপের ছোবলানি। ওকে কি একদিনও হাতে পাওয়া যাবে না।

এবার প্রণামের পালা। প্রথমে রথীন তারপর সুনির্মল। তার হাতের ঘা শুকিয়ে গিয়েছে। প্রণাম করছে আরও অন্যান্য ছেলেরা। নারায়ণ সবাইকে বুকে জড়িয়ে ধরছেন। কোলাকুলি করলেন আবেগ ভরে প্রিয়নাথের সঙ্গে, লজ্জায় আর আনন্দে অভিভূত হয়ে উঠেছেন নারায়ণ। তবু বুকের মধ্যে অস্বস্তি। কেন যেন টনটন করে উঠছে বারবার। ভজনের জন্য ভয় পেয়েছেন তিনি।

চরণ এসে প্রণাম করল। নারায়ণ বললেন, দেখছি, দোকানেই সবাই দেখা করবে। চরণকে টেনে নিয়ে বললেন, তুমি কে ভাই?

সারা গায়ের মধ্যে শিউরে উঠল চরণের। তুমি কে ভাই শুনে যেন ঘুম ঘোরে কেঁদে ওঠার মতো কান্না পেল চরণের। এমন কথা শোনবার জন্য প্রস্তুত ছিল না তার হৃদয়। এমন প্রাণ ঢালা কথা, এত বড় লোকের মুখ থেকে। ছেলেমানুষের মতো ঠোঁট কেঁপে গেল। বলল, চরণ।

চরণ। বলল ভজন, শ্রীমতী কাফের হেড বাবুর্চি।

ভয়ে উৎকণ্ঠায় থমকে গেল চরণ। হেড বাবুর্চি শুনে হয়তো স্পর্শ ও গলার স্বর বদলে যাবে নারায়ণের। কিন্তু না। বরং নারায়ণ চরণকে আর একটু আকর্ষণ করলেন। হেসে বললেন, হেড বাবুর্চি বুঝি? কিন্তু তার চেয়ে চরণ অনেক ভাল। কি বলো চরণ?

না, রোধ করা গেল না চোখের জল। চরণ তাড়াতাড়ি পালিয়ে বাঁচল। কেঁদে বাঁচল রান্নাঘরে গিয়ে। আমি চরণ, চরণ বাবুর্চি। আমার সয় না এত ভালবাসা, ভালবাসার কথা।

তারপর এর একথা, তার সেকথা। চেনা মানুষদের সব নানান প্রশ্ন, কুশল জিজ্ঞাসা।

ভুনু গাড়োয়ান, সারথী দূরে হাঁ করে দাঁড়িয়ে আছে। দেখছে লারাইন ঠাকুরকে। দিল বলছে হ্যাঁ, এ যেন দেবতাই। সবাইকে প্রণাম ও নমস্কার করতে দেখে, সেও দূরে দাঁড়িয়েই কপালে হাত টুকছে! একে তাড়ি গিলেছে, তায় গাড়োয়ান। ইয়ে বাবু তো আর লাটবাবু নয়। সামনে যেতে তাই তার বড় সঙ্কো ও ভয়।

বাঙালি আসেনি এখনও, নইলে চেঁচামেচি খানিকটা বেশি হত। তারপর শুরু হয় নারায়ণের শ্রীমতী কাফে দেখার পালা। নারায়ণের মনে হল সে নিজে সাজিয়েছে। এমনই মনের মতো হয়েছে তার। শুধু মনটা খারাপ হয়ে গেল তার ঘড়ির পেণ্ডুলামে কঙ্কালের ছবিটা দেখে।  ওটা ভাল নয়। সুন্দর নয়। কে একজন তারস্বরে শোনাচ্ছে নারানকে বিশের মৃত্যুকাহিনী।

সূর্য অস্ত গিয়েছে। শীতের সন্ধ্যা এসে পড়েছে কোন ফাঁকে। বাতিওয়ালা বাতি জ্বালাতে আরম্ভ করেছে। আর দেরি করা যায় না। বাড়ি থেকে সংবাদ এসেছে, নারায়ণ যেন আর দেরি না করেন। নারায়ণ বাড়ি চললেন। সেখানেও দেখা করার পালা, অস্বস্তি শুধু বাবার কাছে গিয়ে দাঁড়ানো।

অনেক রাত। ভজন বাড়ি এল, নারায়ণ ঘুমোননি। তিনি অপেক্ষা করছিলেন ভজনের জন্যই। তাকে ডেকে তিনি নিজের ঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলেন। ডাকলেন, ভজন।

বলো।

তোর সঙ্গে কয়েকটা কথা না বললে, আমার ভাল লাগছে না ভাই। বোস।

ভজন আবার বলল, বলল। বলে সে বসল।

নারায়ণ বারকয়েক ইতস্তত করলেন। দেখলেন, ভজন যেন তার চেয়েও বুড়িয়ে গিয়েছে। বার্ধক্যের রেখা পড়েছে তার মুখে। বললেন, হ্যাঁ রে, তোর কয়েকটি ছেলে হয়েছে, তবু জিজ্ঞেস করছি, বউকে কি তোর পছন্দ হয়নি?

ভজনের মুখ লাল হয়ে উঠল। লজ্জায় নয়, বেদনায়। বুঝল, দাদা শান্তি পাচ্ছে না। বলল, ওর চেয়ে ভাল মেয়ে তুমি আর কোথায় পাবে এ দেশে? বরং আমি ওর মর্যাদা দিতে পারিনি।

নারায়ণ তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালেন ভজনের মুখের দিকে। না, মিথ্যে নয়, এ অকপট স্বীকারোক্তি। তবে এমন হল কেন? বললেন, বাবার জন্য কি তোর এ সংসার ভাল লাগে না?

ভজনের মুখটা যেন আরও দুমড়ে যেতে লাগল। কথা ফুটতে চায় না তার গলায়। বলল, মাঝে মাঝে ভারী রাগ হয় বাবার পরে। কিন্তু দাদা, বাবার জন্য আমার ভারী কষ্ট হয়। ওই ভাবে বসে থাকতে দেখে আমার ভারী মায়া হয়। মনে হয়, ছেলেমানুষ যেন।

এবার দুজনেই চুপচাপ। খানিকক্ষণ কারও মুখে কথা নেই। দুজনেই বোধহয় বাবার কথাটা মনে মনে একবার ভেবে দেখল। তারপরে নারায়ণ আবার বললেন, বকুলমার পরে কি তোর রাগ হয়েছে?

ভজন হাসতে চাইল। কত কী ভাবছেন দাদা তার সম্পর্কে। না তো। রাগ কেন হবে?

তবে বুঝি তোর আমার পরে রাগ হয়েছে? গলার স্বর চেপে এল নারায়ণের।

চমকে উঠল ভজন। কেন দাদা?

আমি তোর জন্য, বউমা আর ছেলেদের জন্য কিছুই করতে পারিনে।

তুমি তো দেশের কাজ করো। তোমার আলাদা কাজ রয়েছে। তার জন্য আমি রাগ করব? ভজনের মুখ বিকৃত হয়ে উঠল। ছি ছি, আমার সে কথা কোনও দিন মনে হয়নি।

নারায়ণ হাত ধরলেন ভজনের। সন্ত্রাসবাদীর ভয়ঙ্কর চোখ ছলছল করে উঠল। তবে ভাই কেন এমন হল?

ভজন ঢোক গিলছে। কীসে যেন আটকে যাচ্ছে কথা গলার মধ্যে। তবু জোর করে প্রায় ফিসফিসিয়ে বলল, জানিনে আমি জানিনে দাদা কেন এমন হল। আমি আমার নিজেকে বুঝতে পারিনি তোমাকে কী বলব। বিশ্বাস করো, আমি বোধহয় শেষ হয়ে গেছি, কত কি ভেবেছি জীবনে, তাকিয়ে দেখি শেষটায় বদ্ধ মাতাল হয়েছি।

গলার স্বর বন্ধ হয়ে গেল ভজনের। তবু বলল, আমাকে আর কিছু বলল না দাদা।

কিন্তু নারায়ণ না বলে পারলেন না, ভজন, তুই আমার চেয়ে বেশি লেখাপড়া করেছিস। তুই পাশ করেছিস। আমার দ্বারা তাও হয়নি।

অসহ্য যন্ত্রণায় ভজন ধিক্কার দিয়ে উঠল নিজেকে, ছি ছি ছি, ওকথা আর বলল না দাদা। আমি লেখাপড়া জানি, সেকথাটাও আমি ভুলে গেছি। দাদা, আমার কটি ছেলে রয়েছে। নিজের কথা ভাবলে আমার ভয় করে, তাই আমি ভাবিনে। দাদা, বাঙালি আর ভুনু গাড়োয়ানের সঙ্গে বসে আমি মদ খাই। দুটো ভদ্রলোকের সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলিনে। আমার মান অপমান জ্ঞানও নেই। দাদা, আমি হার মেনেছি।

কার কাছে?

সকলের, সব কিছুর কাছে। ভগবানের দোষ দিইনে, আমি আমার পথ চিনিনি। ব্যবসা করি কিন্তু বুঝি, সেখানেও আমার হার। আমি সকলের ভার, সকলের বোঝা।

চুপ কর, ভজন, অমন করে বলিসনে। ভজনকে থামিয়ে দিয়ে নারায়ণ অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন।

ভজন বসে রইল মাথা নিচু করে। অস্থির হয়ে উঠেছে তার প্রাণ। এমন সব কথার মুখোমুখি কোনও দিন দাঁড়াবার কথা ভাবেনি সে। ভাববার অবসর হয়নি। ভাবনা এলে এড়িয়ে গিয়েছে।

নারায়ণ বললেন, ভজন, নিজের উপর ভাই এমন করে বিশ্বাস হারালে চলবে না। আমি বুঝতে পারিনে সর, কেন এমনটা হয়। কিন্তু মাথা তুলে না দাঁড়াতে পারলে সব গণ্ডগোল হয়ে যাবে। তোর উপর যে অনেক দায়িত্ব এসে পড়েছে, সেকথা ভুললে চলবে না।

এমন সময় বাইরে থেকে শিশুর কান্না শোনা যেতেই নারায়ণ চমকে উঠলেন। তাড়াতাড়ি বললেন, যা ভজু, বউমা তোর জন্যে বোধহয় বসে আছেন। খেয়ে নে, গে।

ভজন বেরিয়ে গেল। দরজা খুলে বাইরে এসে চমকে গেল। দেখল দূরে, জানলার কাছে দাঁড়িয়ে রয়েছে যুঁই। রাত্রে আধয়া চাঁদ উঠেছে। ঝাপসা আলোয় দেখল, বুইয়ের গালে চকচক করছে জল। হয়তো সব কথা শুনেছে সে।

কেবল নারায়ণ বসে রইলেন। গালে হাত দিয়ে ভাবছিলেন ভজনের কথাগুলো।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *