৪. জেলাইল ইউ ডিন
সন্ধ্যাবেলা সবাই পড়তে বসেছে। বসা পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু আসলেই পড়ছে কি না সেটা জানার কোনো উপায় নেই। পড়ুক আর না-ই পড়ুক, পড়ার সময়টা এখানে বসতে হবে সেইটা নিয়ম।
আজকে দেখা গেল শান্ত হাতে সবুজ রঙের এক টুকরো কাগজ নিয়ে সেটা দেখছে এবং মুখে টিং টিং ডিং ডিং করে শব্দ করছে। বোঝাই যাচ্ছে সে চাইছে কেউ তাকে জিজ্ঞেস করুক তার হাতে এটা কী।
তাই শেষ পর্যন্ত টুনি জিজ্ঞেস করল, “শান্ত ভাইয়া, তোমার হাতে এইটা কী?”
শান্ত তার সব দাঁত বের করে হাসল, বলল, “এইটা হচ্ছে একটা টিকিট।”
“কিসের টিকিট?”
“ফেসবুক সেলিব্রেটি জেলাইল ইউ ডিনের মোটিভেশনাল স্পিচ। প্রমি ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “জেলাইল ইউ ডিন কোন দেশের মানুষ? কোন ভাষায় স্পিচ দেবে?”
টুনি বলল, “আমার কি মনে হয় জানো প্রমি আপু?”
“কী?”
“জেলাইল ইউ ডিনের আসল নাম হচ্ছে জলীল উদ্দিন। এইটাকে স্টাইল করে বলে জেলাইল ইউ ডিন। নিশ্চয়ই বাংলায় স্পিচ দেবে।”
শান্ত ভুরু কুঁচকে তার টিকিটটা উল্টেপাল্টে দেখল, তারপর মুখটা গম্ভীর করে মাথা নাড়ল। বলল, “টুনি ঠিকই বলেছে, টিকিটের উল্টো দিকে ছোট ছোট করে লেখা জলীল উদ্দিন। উচ্চারণ হচ্ছে জেলাইল উই ডিন।”
শাহানা জিজ্ঞেস করল, “জলীল উদ্দিনের নামের উচ্চারণ কেন জেলাইল ইউ ডিন?”
প্রমি বলল, “এটা ফেসবুক সেলিব্রেটিদের নিয়ম। সবকিছু স্টাইল করে করতে হবে।
শাহানা শান্তর দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, “তোর হঠাৎ মোটিভেশনাল স্পিচ শোনার দরকার হলো কেন?”
টুম্পা জিজ্ঞেস করল, “মোটিভেশনাল স্পিচ মানে কী?”
সবাই শান্তর দিকে তাকাল। শান্ত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “মোটিভেশনাল স্পিচ মানে অ্যাঁ অ্যাঁ–” তারপর থেমে গিয়ে মাথা চুলকাতে লাগল।
শাহানা বলল, “কী হলো, থামলি কেন? কথা শেষ করো–”
শান্ত বলল, “মানে যেটা শুনলে মোটিভেশন হয়।”
টুম্পা এত সহজে মেনে নিল না। জিজ্ঞেস করল, “মোটিভেশন মানে কী?”
শান্ত খুবই বিরক্ত হয়ে বলল, “আমি এত কিছু বলতে পারব না।
“ টুনি বলল, “আমি তোকে বুঝিয়ে দেই। মনে করো একজনের কোনো কিছুতে উৎসাহ নাই-”
“ভ্যাবলা টাইপের?”
“চাইলে বলতে পারিস। যদি কথাবার্তা বলে তাকে উৎসাহ দেওয়া যায় সেইটা হচ্ছে মোটিভেশনাল স্পিচ।”
টুম্পা বুঝে ফেলার মতো করে মাথা নাড়ল। তারপর বলল, “বুঝেছি। ভ্যাবলাদের জন্য স্পিচ হচ্ছে মোটিভেশনাল স্পিচ। সেই জন্য শান্ত ভাইয়া শুনতে যাচ্ছে।”
শান্ত গরম হয়ে বলল, “আমি মোটেই ভ্যাবলাদের জন্য স্পিচ শুনতে যাচ্ছি না।”
“তাহলে কেন যাচ্ছ?”
“আমি যাচ্ছি- আমি যাচ্ছি–” বলে শান্ত আবার থেমে গেল।
টুম্পা হাল ছেড়ে দিল না, জিজ্ঞেস করল, “বলো, কেন যাচ্ছ?”
“সত্যি শুনতে চাস?”
“হ্যাঁ।”
শান্ত সবার মুখের দিকে তাকাল, তারপর বলল, “আমি ঠিক করেছি যে আমি মোটিভেশনাল স্পিকার হব। সেই জন্য কেউ মোটিভেশনাল স্পিচ দিলেই আমি সেটা শুনতে যাই। দেখতে চাই কেমন করে স্পিচ দিতে হয়।“
শান্তর কথা শুনে বড়রা শব্দ করে হাসল, ছোটরা শব্দ না করে হাসল, যারা বেশি ছোট তারা কী করবে বুঝতে না পেরে অন্যদের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।
শান্ত মুখ শক্ত করে বলল, “তোমরা হাসছো কেন? ভাবছ আমি পারব না?”
শাহানা বলল, “মোটিভেশনাল স্পিচ মানে মানুষজনকে উৎসাহ দেওয়া। যারা জীবনে বড় কিছু করেছে তারা নিজেদের জীবনের কথা বলে। অন্যরা সেটা শুনে উৎসাহ পায়! তুই তোর জীবনে কী করেছিস?”
শান্ত বলল, “আপু, তুমি দুনিয়ার কোনো খোঁজ রাখো না।”
শাহানা চোখ কপালে তুলে বলল, “আমি দুনিয়ার কোনো খোঁজ রাখি না? আমি প্রত্যেক দিন কয়টা পত্রিকা পড়ি তুই জানিস?”
“এইটাই সবচেয়ে বড় ভুল। আজকাল পত্রিকা পড়তে হয় না। দুনিয়ার খবর নিতে হয় ফেসবুকে। যারা পত্রিকা পড়ে তারা পুরনো মডেল। তোমাকে প্রথমে ফেসবুক সেলিব্রেটি হতে হবে। তাহলেই অন্যরা তোমার মোটিভেশনাল স্পিচ শুনবে।”
টুনি বলল, “শান্ত ভাইয়া, তুমি আমাদেরকে একটা মোটিভেশনাল স্পিচ শোনাবে?”
“সত্যি শুনতে চাস?”
“হ্যাঁ। তাড়াতাড়ি শুনিয়ে দাও। আমার হোমওয়ার্ক বাকি আছে।”
“কিসের ওপর শুনবি?”
টুনি একটু অবাক হয়ে বলল, “তুমি কিসের ওপর জানো?”
“আত্মবিশ্বাস, ব্যবসায়ে সাফল্য, নেতৃত্ব, পারিবারিক বন্ধন, রোমান্স—”
শাহানা চমকে উঠে বলল, “তুই রোমান্সও জানিস?”
শান্ত বলল, “জানি। কিন্তু এখানে ছোটরা আছে, এটা নিয়ে মোটিভেশনাল স্পিচ দেওয়া যাবে না।”
টুনি বলল, “তুমি নেতৃত্ব নিয়ে বলো দেখি।”
শান্ত তখন তড়াক করে দাঁড়িয়ে গেল। প্রমি বলল, “তোর দাঁড়াতে হবে না। বসে বসেই বল
শান্ত মাথা নাড়ল, বলল, “উঁহু। বসে বসে মোটিভেশনাল স্পিচ হয় না। দাঁড়িয়ে বলতে হয়।
“ঠিক আছে, বল।”
শান্ত ঘরের মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে গম্ভীর মুখে বলল, “নেতৃত্বের কথা বলতে হলে সবার আগে বলতে হয় ভিক্টর ফারগুসনের কথা। তাঁর জন্ম ইতালির প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। যখন তার বয়স ষোলো-”
শাহানা জিজ্ঞেস করল, “ভিক্টর ফারগুসন কে? তার কথা তুই কোথায় পড়েছিস?”
“কোথাও পড়ি নাই।“
শাহানা অবাক হয়ে বলল, “তাহলে জানলি কেমন করে?”
“জানি না তো!”
“মানে?”
“আমি বানিয়ে বানিয়ে বলছি। মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে হলে কিছু জানতে হয় না। সবকিছু বানিয়ে বানিয়ে বলা যায়–”
শাহানা কিছুক্ষণ শীতল চোখে শান্তর দিকে তাকিয়ে রইল, তারপর মেঘ স্বরে বলল, “অনেক হয়েছে। তোকে আর মোটিভেশনাল স্পিচ দিতে হবে না। বস। বসে হোম ওয়ার্ক শেষ কর।”
“তাহলে আমার স্পিচ শুনবে না?”
“না। শোনার শখ মিটে গেছে। এই যদি মোটিভেশনাল স্পিচের নমুনা হয় তাহলে দুনিয়ার কারো যেন কোনোদিন মোটিভেশনাল স্পিচ শুনতে না হয়।”
“কী আশ্চর্য!”
শাহানা মুখ শক্ত করে বলল, “পড়তে বস। বসে হোম ওয়ার্ক কর। করে আমাকে দেখা কী করেছিস।”
শান্ত বিরস মুখে গজগজ করতে লাগল, “এই বাসায় কারো কাছ থেকে কোনো কিছুতে কোনো উৎসাহ পাই না। খালি বড় হয়ে নেই তখন দেখো।”
.
দুই দিন পর শান্ত দুপুরবেলা সেজেগুজে বের হয়ে গেল। ঘণ্টা দুয়েক পরে সে আনন্দে ঝলমল করতে করতে ফিরে এলো। টুনি জিজ্ঞেস করল, “মোটিভেশনাল স্পিচ শুনে এসেছো?”
শান্ত হাত ভাঁজ করে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলল, “ইয়েস-স্-স্!”
“কেমন ছিল?”
“একেবারে ফাটাফাটি।”
টুনি বলল, “গুড।” তারপর জিজ্ঞেস করল, “নতুন করে মোটিভেশান হয়েছে তোমার?”
“হয়নি আবার? কত কী শিখেছি তুই চিন্তা করতে পারবি না।”
“কী শিখেছো, বলবে একটু?”
শান্ত উৎসাহে হাত নেড়ে বলল, “যেমন মনে কর বই লেখা। কী রকম করে বেস্ট সেলার বই লিখতে হয় শিখে এসেছি।
“সত্যি?”
“হ্যাঁ।”
টুনি যথেষ্ট অবাক হলো। সে জেনে এসেছিল যে লেখকরা বই লেখে, কোনো কোনো বই পাঠকেরা পছন্দ করে তখন সেটা হয়তো বেস্ট সেলার হয়। কিন্তু বেস্ট সেলার হিসেবেই যে বই লেখা যায় সেটা সে জানত না। তাই জিজ্ঞেস করল, “কেমন করে বেস্ট সেলার বই লিখতে হয়?”
“খুবই সোজা। যা কিছু ভালো আছে সেগুলোকে গালি দিলেই বই বেস্ট সেলার হয়ে যায়। যত বড় বড় মানুষ আছে তাদের সম্পর্কে খারাপ খারাপ কথা লিখতে হয়।”
টুনি চোখ কপালে তুলে বলল, “ভালো মানুষ সম্পর্কে খারাপ খারাপ কথা লিখতে হয়?”
“হ্যাঁ।”
“যদি ভালো মানুষদের কোনো কিছু খারাপ না থাকে?”
“তাহলে বানিয়ে লিখতে হয়।”
“জলীল উদ্দিন তাই বলেছে?”
শান্ত গম্ভীর মুখে বলল, “জলীল উদ্দিন না, জেলাইল ইউ ডিন। সবাই তাকে জেলাইল ইউ ডিন ডাকে।
“সবার সামনে সে ভালো মানুষদের সম্পর্কে খারাপ কথা লিখতে বলেছে? বানিয়ে বানিয়ে?”
“সবার সামনে বলে নাই। পরে যখন আমি আলাদাভাবে তার বইয়ে অটোগ্রাফ নিয়েছি তখন বলেছে। আরও অনেক কিছু বলেছে।”
টুনি জিজ্ঞেস করল, “আর কী বলেছে?”
“বই লিখলে সবসময় সেখানে বিজ্ঞানের আবিষ্কারের বিরুদ্ধে লিখতে হয়। তাহলে বই বেস্ট সেলার হয়।”
“বিজ্ঞানের আবিষ্কারের বিরুদ্ধে?”
“হ্যাঁ, যেমন মনে কর লিখতে হয় মানুষ আসলে চাঁদে যায় নাই। এটা ভুয়া।’
“চাঁদে যায় নাই?”
“হ্যাঁ। আর লিখতে হয় বিবর্তন ভুয়া। ডারউইন ভুয়া।”
“সত্যি?”
“হ্যাঁ। লিখতে হয় পৃথিবীতে এলিয়েন এসেছিল। “এলিয়েন?”
“হ্যাঁ। পৃথিবীটা গোল না, পৃথিবীটা আসলে চ্যাপ্টা। সেইটাও লেখা যায়।”
টুনি মাথা নাড়ল, বলল, “শান্ত ভাইয়া। তোমার জেলাইল ইউ ডিন নিয়ে আমার খুবই সন্দেহ হচ্ছে। যে মানুষ এই রকম জিনিস দিয়ে বই লিখতে বলে তাকে বিশ্বাস করা ঠিক না।’
শান্ত মুখ বাঁকা করে হাসল, বলল, “তুই বললেই হবে নাকি? তুই জানিস জেলাইল ভাই আমাকে টাকা রোজগার করার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন?”
টুনি ভুরু কুঁচকে বলল, “তোমায় কী করতে হবে?”
“কিছুই করতে হবে না। “
“তোমার কিছুই করতে হবে না। আর তোমার টাকা রোজগার হবে?”
“হ্যাঁ।”
“তুমি আমাকে এটা বিশ্বাস করতে বললে?”
শান্ত মুখ বাঁকা করে বলল, “তুই বিশ্বাস না করলে নাই। তুই কি মনে করেছিস তোকে বিশ্বাস করানোর আমার ঠেকা পড়েছে?”
টুনি বলল, “না, পড়ে নাই। কিন্তু—”
“কিন্তু কী?”
“তোমার জেলাইল ইউ ডিন মানুষটাকে আমার একটুও সুবিধার মানুষ মনে হচ্ছে না। সে যদি তোমাকে টাকা কামাই করার ব্যবস্থা করে দেয় সেটা নিশ্চয়ই দুই নম্বুরি! তুমি কোন বিপদে পড়বে কে জানে। তাছাড়া–”
“তাছাড়া কী?”
“তাছাড়া তুমি তো বড় হও নাই- স্কুলে পড়ো। তোমার তো এখান থেকে সেখান থেকে টাকা কামাই করার কথা না-”
শান্ত রেগে উঠল। বলল, “যেটা বুঝিস না সেইটা নিয়ে কথা বলিস না। আমাকে নিয়ে তোর চিন্তা করতে হবে না।”
বলে সে পা দাপিয়ে চলে গেল।
.
শান্তকে নিয়ে টুনি সবসময় দুশ্চিন্তায় থাকে। সবাই আস্তে আস্তে বড় হয়, শান্ত মনে হয় আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে।
ঘণ্টাখানেক পরে শান্ত নিজেই টুনির কাছে ফেরত এলো। এসে বলল, “তুই আসলেই বিশ্বাস করিস না যে জেলাইল ভাই আমাকে টাকা রোজগারের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন?”
“না। কোনো কাজ না করলে টাকা ইনকাম হয় না, তাহলে দুনিয়ার সবাই এইভাবে টাকা ইনকাম করত।”
“ঠিক আছে। কীভাবে আমার টাকা ইনকাম হবে তোকে বলি, কিন্তু তুই কাউকে বলতে পারবি না।”
টুনি তার চশমাটা ঠিক করে বলল, “যদি বেআইনি না হয় তাহলে কাউকে বলব না। “
শান্ত গরম হয়ে বলল, “বেআইনি কেন হবে? তোর ধারণা আমি বেআইনি কাজ করব?”
“না জেনে করতেও পারো।”
“আমাকে এত গাধা ভাবিস না।”
টুনি বলল, “ঠিক আছে, ভাবব না। এখন বলো।”
“তুই কিন্তু কাউকে বলতে পারবি না।”
“বলব না।”
“বল, খোদার কসম।”
“খোদার কসম।”
“জেলাইল ভাই অনেক চিন্তা করে এই টেকনিকটা আবিষ্কার করেছে। ফাটাফাটি বুদ্ধি। জেলাইল ভাই হচ্ছে একটা জিনিয়াস।”
টুনি ধৈর্য ধরে জিনিয়াস জেলাইল ভাইয়ের ফাটাফাটি বুদ্ধিটা শোনার জন্য অপেক্ষা করে।
শান্ত বলল, “জেলাইল ভাই একটা ক্লাব তৈরি করেছে, সেইটার নাম জেলাইল ফ্যান ক্লাব। যে কেউ সেই ক্লাবের মেম্বার হতে পারবে। মেম্বারশিপ ফি মাসে মাত্র দশ টাকা। আর মজা কী জানিস সেই দশ টাকাটাও পরে উঠে আসবে।”
টুনি বলল, “বুঝতে পারছি।”
“মনে করো আমি এই ক্লাবের মেম্বার হলাম। আমাকে কি করতে হবে জানিস?”
টুনি বলল, “জানি।
শান্ত ভুরু কুঁচকাল, “আমি এখনও কিছু বলি নাই, তুই কেমন করে জানিস?”
“যেভাবে হোক জানি।”
শান্ত অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে বলল, “বল দেখি কী করতে হবে?”
“তোমাকে অন্যদের মেম্বার করতে হবে। সেই মেম্বারদের আবার অন্যদের মেম্বার করতে হবে। তারা আবার অন্যদের মেম্বার করবে। “এইভাবে চলতে থাকবে।”
শান্তর চোয়ালটা যেন কেমন ঝুলে পড়ল। আমতা আমতা করে বলল, “তুই কেমন করে জেনেছিস?”
“তার কারণ এইটা তোমার জিনিয়াস জেলাইল ইড ডিন ভাইয়ের আবিষ্কার না। এটা জুয়াচোর মানুষদের অনেক পুরানো টেকনিক। এটার নাম পিরামিড স্কিম।”
“পি-পিরামিড স্কিম?”
“হ্যাঁ। মেম্বাররা তাদের ফি দেবে যে তাকে মেম্বার করেছে তাকে। তারা কিছু টাকা নিজে রেখে বাকিটা দেবে যে তাকে মেম্বার করেছে তাকে। সে আবার সেই টাকার কিছু রেখে বাকিটা দিবে তাকে যে মেম্বার করেছে তাকে। এইভাবে চলতে থাকবে।”
শান্ত টুনির কথা শুনে এত অবাক হলো যে কথা বলতে ভুলে গেল। হাঁ করে টুনির দিকে তাকিয়ে রইল।
টুনি বলল, “এইভাবে যদি দেখো, দেখবে সবচেয়ে বেশি টাকা আসবে যে সবার আগে মেম্বার করা শুরু করেছে তার কাছে। তোমার বেলায় জেলাইল ইউ ডিনের কাছে।”
শান্ত বলল, “বা বা বা–” কথাটা শেষ করতে পারল না।
“আর ঠকবে যারা সবচেয়ে পরে মেম্বার হয়েছে তারা। যেহেতু তারা এখনও কাউকে মেম্বার করে নাই তাই তারা কোনো টাকা পাবে না। কিন্তু তাদের টাকা আগের মেম্বাররা ভাগাভাগি করে খেয়ে ফেলবে।“
শান্ত আবার কথা বলার চেষ্টা করল, বলল, “বা বা বা–” কিন্তু এবারেও কথা শেষ করতে পারল না।
টুনি বলল, “আসলে কেউই বেশি টাকা-পয়সা পাবে না। এই দুই নম্বুরি টেকনিক শুরু হওয়ার কয়দিন পরেই সবাই টের পেয়ে যাবে। তখন যারা মেম্বার করেছে তাদেরকে ধরে অন্যরা মার দিতে পারে। তুমি সাবধানে থেকো। “
শান্ত একেবারে চুপ করে গেল। অনেকক্ষণ পর শুকনো মুখে বলল, “তার মানে তুই বলছিস এটা সবাই জানে?”
“হ্যাঁ। এটা সবাই জানে। আর সেই জন্য এটা বেআইনি। যারা শুরু করবে পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যাবে। কমপক্ষে দশ দিনের রিমান্ড।”
“সত্যি?”
টুনি উদাস মুখে বলল, “আমার কথা বিশ্বাস না করলে গুগল ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে দেখো।”
“গুগল ভাইয়া?”
“হ্যাঁ।” বলে টুনি তার চশমা ঠিক করে উঠে গেল। শান্ত মুখ হাঁ করে বসে রইল।
.
সপ্তাহ খানেক পর সবাই সন্ধের পর পড়তে বসেছে। টুম্পার হাতে একটা খবরের কাগজ। সে কাগজটা নাড়তে নাড়তে বলল, “শান্ত ভাইয়া শান্ত ভাইয়া এই দেখো, পত্রিকায় তোমার জেলাইল ইউ ডিনের ছবি ছাপা হয়েছে।”
কোনো একটা বিচিত্র কারণে শান্ত ছবিটা দেখার কোনো আগ্রহ দেখাল না। তবে অন্যরা খবরের কাগজটা নিয়ে টানাটানি শুরু করল। একজন জোরে জোরে পড়তে শুরু করল, “প্রতারক জলীল উদ্দিন গ্রেপ্তার। উল্লেখ্য, সোশ্যাল নেটওয়ার্কে তিনি জেলইল ইউ ডিন নামে পরিচিত। পিরামিড স্কিম নামে একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে তিনি সাধারণ মানুষের অর্থ আত্মসাতের সাথে জড়িত ছিলেন।…”
শান্ত হঠাৎ করে তার পাঠ্য বইয়ে অতিরিক্ত মনোযোগ দিয়ে ঝুঁকে পড়ল।