৪. খাওয়া দাওয়ার পর

চার

খাওয়া দাওয়ার পর আমি একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করুলাম, “কি একটু হাঁটবেন? আমাকে কয়েক মিনিটের জন্যে স্কুলে যেতে হবে, কালকে পড়ানোর নোটটা ফেলে এসেছি।”
একেনবাবু টেবিলের ওপর পা তুলে বসেছিলেন। সেই অবস্থাতেই ঠ্যাঙ নাচাতে নাচাতে বললেন, “আপনি স্কুল বললেন কে স্যার, ইউনিভার্সিটিতে যাবেন বলুন!”
“এখানে ইউনিভার্সিটিকে লোকে স্কুল বলে।”
“ভেরি কনফিউসিং। স্কুল হচ্ছে স্কুল। মানে ক্লাস ওয়ান থেকে টেন বা টুয়েলভ অবধি। তারপর কলেজ, তারপর ইউনিভার্সিটি। এখানে কি তার উলটো নাকি?”
“উলটো নয়, এখানে সব কিছুই স্কুল।“
একেনবাবু একটু মাথা চুলকোলেন। তারপর উঠে ক্লজেট থেকে ওঁর মান্ধাতা আমলের ওভারকোটটা বার করে বললেন, “চলুন স্যার, ডিনারের পর হাঁটাটা স্বাস্থ্যকর।”
আমি ওঁকে ইনভাইট করেই কিন্তু মনে মনে আফশোস করতে শুরু করেছি। সারাটা পথ বকিয়ে মারবেন। মারছিলেনও , শুধু বাঁচোয়া প্রমথর সঙ্গে রাস্তায় দেখা হয়ে গেল। প্রমথ স্কুল থেকে ফিরছিল। বলল সুপারমার্কেটে যাচ্ছে, বাজার করে বাড়ি ফিরবে।
আমি জিজ্ঞেস করলাম, “এত রাত্রে?”
“আর বলিস না, অবিনাশের আঙ্কল ডি.এম কাল রাত্রে হঠাৎ এসে হাজির।”
আঙ্কল ডি.এম হলেন অবিনাশের মামা কিরিট প্যাটেল। ভদ্রলোক ডায়মন্ড মার্চেন্ট বলে প্রমথ ওঁকে আড়ালে ওই নামে ডাকে।
“তোর কাছে বেড়াতে এসেছেন!” আমি আমি আশ্চর্য হলাম।
“বেড়াতে নয়, নিরুপায় হয়ে। ওঁর বাড়ির হিটিং হঠাৎ খারাপ হয়ে গেছে। এদিকে আজকেই আমার আবার হেক্টিক স্কেজুল।”
“আমাকে একটা ফোন করে দিলেই পারতিস। আমাদের সঙ্গেই না হয়ে খেয়ে নিতেন।”
“আরে না, সেকি আমার মাথায় আসে নি নাকি! ঝামেলা হল, ভদ্রলোক হচ্ছেম স্ট্রিক্ট ভেজিটেরিয়ান – এমন কি পেঁয়াজ পর্যন্ত খান না। বাড়িতে এদিকে কোনো তরিতরকারি নেই। যাইহোক, গুড নিউজ হল ভদ্রলোক কালই ইন্ডিয়া কাটছেন।”

নিউ ইয়র্কে ফেব্রুয়ারি মাসে বাড়িতে হিট না থাকা যে কি সমস্যা, সেটা ভুক্তভোগীরাই বুঝতে পারবে। জমে কুলপি না হলেও নির্ঘাৎ নিমোনিয়া! তবে অবিনাশের আত্মীয়্র জন্যে প্রমথর মাথাব্যথা দেখে আমি বেশ অবাক হলাম। অবিনাশ প্রমথর সঙ্গে প্রায় এক বছর হল অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করছে ঠিকই, কিন্তু দুজনের মধ্যে সম্পর্কটা আপাতত মোটেই মধুর নয়।
আমার বুঝতে দেরি হল না একেনবাবু কোনদিকে যেতে চান। বাজার করতে যাওয়ায় একেনবাবুর প্রচণ্ড আগ্রহ। প্রত্যেকটা জিনিসের দরদাম পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পড়েন, আর দেশের সঙ্গে তার অনবরত তুলনা করেন!
আমি একেনবাবুকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি, আপনি প্রমথর সঙ্গে যাবেন নাকি?”
একেনবাবু বোধহয় লজ্জা পেলেন। “না, না স্যার, আপনার সঙ্গে বেরিয়েছি, আপনার সঙ্গেই ফিরব।“
“তাতে কি হয়েছে, আমার সঙ্গে বেরিয়েছেন বলেই আমার সঙ্গে ফিরতে হবে?”
প্রমথও হৈ হৈ করে উঠল। “আরে চলুন, চলুন। আমার আবার একা একা বাজার করতে বোর লাগে।”

আমি ভেবেছিলাম চট করে ফিরব,কিন্তু সেটা হল না। কলেজ থেকে বেরনোর মুখেই প্রায় এক ঘন্টা ধরে প্রচণ্ড বৃষ্টি, আর তার সঙ্গে পিলে চমকানো বাজ। ফিরতে ফিরতে প্রায় দশটা বেজে গেল। বাড়ির সামনে পৌঁছে দেখি রাস্তার ওপর দুটো পুলিশের গাড়ি, একটা অ্যাম্বুলেন্স আর কিছু লোকের জটলা। পুলিশের গাড়ির ওপরে লাগানো লাল-নীল লাইটগুলো ঘুরপাক খেয়ে চারিদিকে আলোর ঘুর্ণী তুলেছে। নিউ ইয়র্কে এটা অবশ্য খুব একটা অস্বাভাবিক দৃশ্য নয়। আমাদের বিল্ডিং-এ বেশ কিছু বৃদ্ধ-বৃদ্ধা থাকেন। তাঁদেরই কেউ হয়ত অসুস্থ বা কারো হার্ট অ্যাটাক।
গেটের মুখে দাঁড়ানো এক পুলিশ অফিসারকে জিজ্ঞেস করলাম, “কি হয়েছে?”
অফিসারটি কাঁধ ঝাঁকিয়ে হাত ওল্টালো। বুঝলাম জবাব দিতে চায় না। কিন্তু আমি দরজার দিকে এগোতেই আমাকে থামিয়ে প্রশ্ন করল, “ড্যু ইউ লিভ হিয়ার?”
“ইয়েস, আই ডু।”
উত্তরটা শুনে আর আটকাল না।
আমি লিফটে চেপে তেতালায় উঠতেই শুনলাম নীচের তলায় একটা গোলমাল হচ্ছে। এই প্রথম আমার বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠল। সিঁড়ি ধরে নামতেই দেখি প্রমথর অ্যাপার্টমেন্টের দরজাটা হাট করে খোলা ! দরজায় দুজন পুলিশ, আর তার একটু দূরে ল্যাণ্ডিং-এর ঠিক মাঝখানে প্রমথ আর একেনবাবু দাঁড়িয়ে। প্রমথর মুখ দেখে বুঝলাম খুব বিচলিত।
“কি হয়েছে?” আমি উদ্বিগ্ন হয়ে একটু চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
ও ধরা গলায় উত্তর দিল, “মিস্টার প্যাটেল ডেড।”
“ডেড! কি বলছিস যা-তা!
আমি ছুটে কাছে যেতেই প্রমথ আমার হাতটা চেপে ধরে বলল, “ওদিকে চল, বলছি।”

ল্যান্ডিং-এর অন্য পাশে জানলার ধারে আমরা তিনজন দাঁড়ালাম। তারপর প্রমথর কাছে সব শুনে আমার রক্তও হিম হয়ে গেল। ঘটনাটা হচ্ছে, প্রমথরা বাড়ি ফিরেছে আধ ঘণ্টাটাক হল। সঙ্গে অনেক জিনিসপত্র থাকায় একেনবাবু সোজা তিনি তলায় না উঠে প্রমথর সঙ্গে দোতলায় থেমেছিলেন। প্রমথ ডোর বেল বাজিয়ে কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চাবি দিয়ে দরজা খোলে। ঘরে ঢোকা মাত্র চোখে পড়ে মিস্টার প্যাটেল চেয়ারে বসে, মাথাটা ডাইনিং টেবিলের ওপর। পেছনটা খালি দেখা যাচ্ছিল, কারণ মুখটা জানলার দিকে। কয়েক মুহূর্তের জন্যে প্রমথ বুঝতে পারে নি ব্যাপারটা কি। তারপরেই দেখে সারা টেবিল রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মেঝেতেও রক্ত – টেবিলের পায়া বেয়ে বেয়ে নেমেছে। মিস্টার প্যাটেলের বাঁ হাতটা সোজা অবস্থায় টেবিলের ওপর ছড়ানো, আর তার কয়েক ইঞ্চি দূরে একটা রিভলবার পড়ে আছে। গুলিটা ঢুকেছে মাথার বাঁ দিক, ঠিক রগের ওপর। প্রমথ এমনিতে খুব শক্ত। কিন্তু এরকম ভয়াবহ রক্তাক্ত দৃশ্য দেখে প্রায় কোলাপস করছিল। ভাগ্যিস একেনবাবু সঙ্গে ছিলেন! শেষমেষ দু’জনে শক্তি সংগ্রহ করে পুলিশকে করে।
প্রমথর কথা শেষ হয় নি, সিঁড়িতে জুতোর আওয়াজ। তাকিয়ে দেখি দুজন লোক তাড়াহুড়ো করে উঠছে। একজন স্পোর্টস জ্যাকেট পরা প্রায় সাড়ে ছফুট লম্বা সাদা আমেরিকান। দ্বিতীয় লোকটা কালো, লম্বায় প্রায় আমাদেরই মত – পাঁচ ছয় কি পাঁচ আট হবে। গলা পর্যন্ত জিপার লাগানো উইন্টার জ্যাকেট, কাঁধে ঝুলছে পেল্লাই সাইজের ফ্ল্যাশ লাগানো ক্যামেরা। লম্বা লোকটা আমাদের দিকে একবার আড়চোখে তাকিয়ে অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকে গেল। প্রথমে মনে হয়েছিল প্রেসের লোক। কিন্তু ভেতরে ‘ক্যপ্টেন’ সম্বোধন শুনে অনুমান করলাম হোমিসাইড স্কোয়াডের ডিটেক্টিভ।
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখান থেকে প্রমথর অ্যাপার্টমেন্টের শুধু একফালি দেখা যায়। কিছুক্ষণ অন্তর অন্তর দরজার ফাঁক দিয়ে ক্যামেরার ফ্ল্যাশের ঝলকানি চোখে পড়ছে। আমি দেয়ালে ঠেস দিয়ে প্রায় স্ট্যাচু হয়ে আছি। প্রমথটা ছোট্ট ল্যান্ডিং-এর ভেতরেই নার্ভাসনেসটা কাটানোর জন্যে অস্থির ভাবে পায়চারি করে বেড়াচ্ছে। বক্কেশ্বর দি গ্রেট একেনবাবুও চুপচাপ। মধ্যে শুধু একবার দরজার সামনে উঁকুঝুঁকি মারার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু পুলিশের তাড়া খেয়ে ফিরে এসেছেন। সময়ের দিক থেকে হয়তো আধ ঘন্টার বেশী হবে না, কিন্তু আমার মনে হল বোধহয় প্রায় এক যুগ ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এমন সময় লম্বা ভদ্রলোকটি বেরিয়ে এসে আমাদের ভেতরে ডাকলেন। ঠিকই ধরেছিলাম হোমিসাইডের লোক। নিজের পরিচয় দিলেন ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট বলে।

ডেডবডিটা ইতিমধ্যে কালো প্ল্যাস্টিক দিয়ে ঢেকে ফেলা হয়েছে। ওয়াল টেলিফোনের নীচে বাজারের ব্যাগগুলো ইতস্তত ছড়িয়ে আছে। কিচেনের ডাইনিং টেবিলে আর তার ঠিক নীচে মেঝের দিকে না তাকালে ঘরের আর সব কিছুই স্বাভাবিক। এখানে যে একটু আগে এত বড় একটা কান্ড ঘটে গেছে, সেটা বোঝার জো নেই।
একজন পুলিশ অফিসার দেখলাম ফিঙ্গার প্রিন্ট কিট নিয়ে সাইড টেবিলে রাখা টাইপ রাইটারের চাবিতে ফিঙ্গার প্রিন্ট খুঁজছে। কেন, প্রথমে সেটা বুঝি নি। কিন্তু কাছে গিয়ে দাঁড়াতে কারণটা স্পষ্ট হল। টাইপ রাইটার রোলারে যে কাগজটা আটকানো – সেখানে লেখা ‘আই ডোণ্ট ওয়ান্ট টু লিভ এনি মোর।’ ব্যস ঐটুকুই! কেন বাঁচতে চান না – কি কারণ, কি বৃত্তান্ত – কোথাও কোনো উল্লেখ নেই। কাগজ লাগানো অবস্থায় টাইপরাইটারটা ওখানে অনেক দিন ধরে পড়ে আছে, ওটা প্রমথ আজকাল ব্যবহার করে না। ফিতের কালিগুলো প্রায় শুকিয়ে গেছে। লেখাগুলো তাই আবছা, তবে পড়া যাচ্ছে। মিস্টার প্যাটেলকে আমি এক-আধবারই দেখাছি। কিন্তু সব সময়েই মনে হয়েছে ব্রেভিটি ইজ নট হিস স্ট্রং পয়েন্ট। তাই এই সংক্ষিপ্ত সুইসাইড নোটটা একটু যেন অস্বাভাবিক।

ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট ইতিমধ্যে আমাদের সামনেই প্রমথর জবানবন্দি নিতে শুরু করলেন। আমি ভেবেছিলাম প্রত্যেককে আলাদা আলাদা করে স্টেটমেন্ট নেবেন। কিন্তু ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট মনে হল এ ব্যাপারে একটু ক্যাসুয়াল। ওঁর হাতে একটা ছোট্ট নোটবই। প্রশ্ন করছেন, আর মাঝেমাঝে সেখানে দুয়েকটা পয়েন্ট লিখছেন। মিস্টার প্যাটেল যে এখানে থাকতেন না – হঠাৎ এসেছিলেন, সেটা শুনে উনি প্রমথকে জিজ্ঞেস করলেন, “ওঁর এখানে আসার কথা আর কি কেঊ জানতো?”
প্রমথ উত্তর দিল, “আর কারোর কথা বলতে পারব না, তবে মিস্টার ব্রিজ শাহ জানতেন।”
“ব্রিজ শাহ কে?”
“ব্রিজ শাহ ওঁর অ্যাটর্নি।”
“আই সি। কিন্তু আপনি জানলেন কি করে যে, মিস্টার শাহ জানতেন?”
“আজ দুপুরে আমার সামনেই উনি মিস্টার শাহকে ফোন করে বলেছিলেন উনি আমার এখানে আছেন।”
“এ ছাড়া আর কি কথাবার্তা হয়েছিল মনে আছে?”
“তা বলতে পারব না, কারণ ঠিক ওই সময়ে আমি আমার ঘরে কিছুক্ষণের জন্যে যাই। তবে যখন বেরিয়ে আসি তখন শুনি মিস্টার শাহকে উনি বলছেন কাল সকালে ন’টার আগে অবশ্য করে একটা ফোন করতে।”
“আই সি। কেন ফোন করতে বলেছিলেন আপনি জানেন?”
“না, আমার কোনও ধারণাই নেই।”
“আর কারোর সঙ্গে ওঁর কথা হয়েছিল?”
“আমি যতক্ষণ বাড়িতে ছিলাম – হয় নি।”
“আপনি কতক্ষণ পর্যন্ত বাড়িতে ছিলেন?”
“একটা নাগাদ আমি স্কুলে যাই।”
“ওঁর আচার ব্যবহারে কোনও অস্বাভাবিকতা লক্ষ করেছিলেন নি?”
“হি অয়াজ নট ইন দ্য বেস্ট অফ স্পিরিট।” প্রমথ এক মুহূর্ত চিন্তা করে উত্তর দিল।
“হোয়াই ডু ইউ সে দ্যাট?”
“আমার মনে হয়েছিল উনি একটূ ডিপ্রেসড ছিলেন। আসার পর থেকে বাড়ির বাইরে কোথাও বেরোন নি। শুধু তাই নয়, কারো সঙ্গে দেখা হোক – সেটাও উনি চান নি। আমাকে বলেছিলেন ওঁর এখানে আসার কথাটা কাউকে না জানাতে।”
“আপনি কাউকে জানিয়েছিলেন?”
“না।”
এক্সেপ্ট আস, আমি মনে মনে বললাম।
এর পর ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট জানতে চাইলেন মিস্টার স্টুয়ার্ট লেফট হ্যান্ডেড ছিলেন কিনা। প্রমথ বলল, ও আগে জানত না। তবে সকাল বেলায় মিস্টার প্যাটেল যখন কয়েকটা জিনিস আনার জন্যে লিস্ট লিখছিলেন, তখনই প্রথম খেয়াল করে।
“লিস্টটা কোথায়?” ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট জিজ্ঞেস করলেন।
“শেষ পর্যন্ত লিস্টটা উনি শেষ করেন নি,” প্রমথ উত্তর দিল। “একটা মাত্র জিনিস হলেই চলবে বলেছিলেন।”
“কি জিনিস?”
“নাইলনের একটা শক্ত দড়ি।”
“নাইলনের দড়ি! এনি আইডিয়া, হোয়াই?”
“না,” কথাটা প্রমথ বলল বটে, কিন্তু আমার চোখ এড়ালো না যে, প্রসঙ্গটাতে ও অসোয়াস্তি বোধ করছে।
“সামথিং রঙ?” ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট প্রশ্ন করলেন।
“একটা কথা উনি বলেছিলেন, তখন সেটাকে আমি গুরুত্ব দিই নি। কিন্তু …” এটুকু বলে প্রমথ হঠাৎ চুপ করে গেল।
“কি বলেছিলেন?”
“আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কি-রকম সাইজের দড়ি উনি চাইছেন। উনি … উনি অদ্ভুত উত্তর দিয়েছিলেন।” প্রমথ আবার একটু থামল। “…আই থট ইট ওয়াজ এ জোক… আই স্টিল থিঙ্ক…।”
“হোয়াট দ্য হেল ডিড হি সে?” ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের স্বরে অসহিষ্ণু ভাবটা স্পষ্ট।
“ফাঁস লাগানো যায় এমন দড়ি।” কোনো মতে কথাগুলো বলল প্রমথ।
আমি নিজের অজান্তেই কড়িকাঠের দিকে তাকালাম। শুধু আমি নই। ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টও পলকের জন্যে একবার উপরে তাকালেন।
“দড়িটা কোথায়?”
“আমি একেবারেই ভুলে গিয়েছিলাম ওটার কথা, কেনা হয় নি।”
“আই সি।“ কয়েক সেকেন্ড চুপ করে কি জানি ভাবলেন ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট। তারপর প্রমথ কি করে, কি না করে, একটার সময়ে বেরিয়ে এর মধ্যে বাড়িতে এসেছিল কিনা, টেবিলের রিভলবারটা আগে দেখেছে কিনা, ওর নিজের কোনও বন্দুক বা রিভলবার আছে কিনা – ইত্যাদি, ইত্যাদি হাজার গন্ডা প্রশ্ন করলেন। আমি ও একেনবাবুও রেহাই পেলাম না। তবে একেনবাবুর ক্ষেত্রে ভোগান্তিটা একটু বেশীই হল। উনি এদেশে ভিসিটার শুনে ওঁর পাসপোর্ট দেখতে চাইলেন। তারপর কেমন জানি সন্দিগ্ধ ভাবে ওঁর দিকে তাকালেন। আমার কেমন সন্দেহ হচ্ছিল এবার কিছু একটা ঘটবে! ঠিক তাই। জেরা করার জন্যে ওঁকে সোজা অন্য একটা ঘরে নিয়ে গেলেন। আমি আর প্রমথ দুজনেই বেশ নার্ভাস হয়ে বসে রইলাম। নিউ ইয়র্ক পুলিশ কোন কারণে কিছু সন্দেহ করে বসলে সর্বনাশ! আর বাক্যবাগিস কি বলতে কি বলে বসবেন – কে জানে! তবে যাঁর ভয় পাওয়ার কথা, তাঁরই কোনও বৈকল্য নেই! একটা কথা আছে না, ‘হোয়্যার এঞ্জেলস ফিয়ার টু ট্রেড, দ্য ফুল রাশেস ইন’!
কিছুক্ষণ বাদে দিব্বি কান চুলকোতে চুলকোতে ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্টের পেছন পেছন বেরিয়ে এলেন। শুধু তাই নয়, ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট যখন চলে যাচ্ছেন, তখন দুম করে একটা প্রশ্ন করে বসলেন, “আপনার কি মনে হয় স্যার, এটা মার্ডার?”
এভাবে যে কেউ ওঁকে প্রশ্ন করতে পারে, সেটা বোধহয় ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট কল্পনা করেন নি। একটু থমকে দাঁড়ালেন। তারপর বললেন, “ওয়েল, নাথিং ইজ ইম্পসিবল।”
“কিন্তু দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ ছিল!” প্রমথ বলল।
ক্যাপ্টেন স্টুয়ার্ট প্রমথর দিকে বেশ একটু অবজ্ঞাভরে তাকালেন। দরজার নবটা ঘোরাতে ঘোরাতে বললেন, “এই দরজা একটা ক্রেডিট কার্ড ঢুকিয়েও খোলা যায়। একটা ডেড বোল্ট লাগিয়ে নেবেন। নিউ ইয়র্ক ইজ নট এ সেফ প্লেস।”