৩. ভরা পূর্ণিমা

০৩.

ভরা পূর্ণিমা। জোছনার ফিনকি ফুটেছে। জানালা ভেঙে যশোধরার শোবার ঘরের খাটে জোছনা ঢুকে পড়েছে। তরুণী যশোধরা পুত্র রাহুলকে নিয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। পাশেই তার রূপবান তরুণ স্বামী। স্বামী হঠাৎ জেগে উঠলেন। অপূর্ব জোছনা দেখে তার হৃদয় আবেগে মথিত হলো। সর্ব রূপের আঁধার যে ঈশ্বর তার সন্ধানের জন্যে তিনি ব্যাকুল হলেন। স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে গৃহত্যাগের সংকল্প নিয়ে বিছানায় বসলেন। ঘুমের ঘোরে স্ত্রী যশোধরা তাঁর গায়ে হাত রাখলেন। তিনি সাবধানে সেই হাত সরিয়ে রেখে যখন বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়াতে গেলেন তখন পুত্র অব্যক্ত স্বরে ডেকে উঠল, বাবা! তিনি চমকে উঠলেন, কিন্তু সংকল্পচ্যুত হলেন না। গৃহত্যাগ করলেন।

প্রাচীন সেই ভারতে তখন থালা হাতে অনেক ভিক্ষুক পথে পথে ঘুরত। তারা মুখে খাবার চাইত না। গৃহস্থের দিকে থালা বাড়িয়ে দিত।  

যশোধরার স্বামী এই কাজটিই করলেন। থালা হাতে মানুষের দরজায় দরজায় ঘুরতে লাগলেন।

মানুষটিকে সারা পৃথিবী চেনে। তিনি গৌতম বুদ্ধ। রবীন্দ্রনাথের একটি কবিতায় হুবহু এই ঘটনাটা আছে, কিন্তু তিনি সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থ দাঁড় করিয়েছেন। তাঁর কবিতায় স্বামী যখন স্ত্রী-সন্তানকে ফেলে ঈশ্বরের সন্ধানে গৃহত্যাগ করছেন। তখন ঈশ্বর আক্ষেপের সুরে বলছেন–

দেবতা নিঃশ্বাস ছাড়ি কহিলেন, ‘হায়
আমারে ছাড়িয়া ভক্ত চলিল কোথায়?’

 আমরা এখন আছি গৌতম বুদ্ধের দেশে। যেখানেই চোখ যায় সেখানেই গৌতম বুদ্ধের ধ্যানী মূর্তি। একেকটি ছ’তলা সাততলা দালানের সমান। প্রতিটি পাহাড়ের চূড়ায় মূর্তি। প্রকাণ্ড সব স্তূপা। স্তূপা নির্মিত হয় বুদ্ধের ব্যবহৃত জিনিসপত্র লুকিয়ে রাখার জন্যে।

ক্যান্ডিতে আছে গৌতম বুদ্ধের পবিত্র দাঁত। নাজমা ভাবি গৌতম বুদ্ধের দাঁত দেখার জন্যে অত্যন্ত ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। তার একটাই কথা, ডলার খরচ করে এসেছি গৌতম বুদ্ধের দাঁত না দেখে ফিরে যাব? এটা কেমন কথা!

আমার কথা হচ্ছে, দাঁত শরীরের একটি মৃত অংশ। অন্য একজন মানুষের দাঁতের সঙ্গে এই পবিত্র দাঁতের কোনো পার্থক্য থাকার কথা না।

নাজমা ভাবি রাগী গলায় বললেন, এটা কী বললেন! আপনার দাঁত আর উনার দাঁত একই?

আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, অবশ্যই না। দাঁত থেকে DNA টেস্টের মাধ্যমে যদি জিন স্ট্রাকচার বের করা যায় তাহলে দেখা যাবে দুজনের জিন-গঠন ভিন্ন। চলুন দাঁত দেখতে যাব।

আমি রাজি হলাম, কিন্তু আমার মনের খুঁতখুঁতানি দূর হলো না। খুঁতখুঁতানি প্রধান কারণ, ভূপর্যটক এবং মহান পণ্ডিত রাহুল সাংকৃত্যায়ন। তিনি লংকার কলম্বোর একটি বৌদ্ধ বিহারের সম্মানিত শিক্ষক ছিলেন। আঠারো মাস সেখানে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি তার অভিজ্ঞতা আমার জীবন যাত্রা গ্রন্থে লিখে গেছেন।

এই গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে গৌতম বুদ্ধের দাঁত প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, এই দাঁত বুড়ো আঙুলের মতো মোটা। লম্বায় প্রায় দুই ইঞ্চি। এটা মানুষের দাঁত হতে পারে না। মূল দাঁত পর্তুগীজ জলদস্যুরা পুড়িয়ে ফেলে। তারা নকল একটি দাঁত দান করে।

আমরা গৌতম বুদ্ধের দাঁত দেখতে যাচ্ছি–এই খবরে পূত্র নিষাদ অত্যন্ত উল্লসিত হলো। তার উল্লাসের কারণ ধরতে পারলাম না। গৌতম বুদ্ধের বিশাল বিশাল মূর্তি দেখে সে এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে কি না কে জানে!

আমি তাকে বললাম, বাবা তুমি গৌতম বুদ্ধের দাঁত দেখতে চাচ্ছ কেন?

নিষাদ বলল, সে তার ভাই নিনিতের জন্যে সেখান থেকে দাঁত কিনে ভাইয়ের মুখে লাগিয়ে দেবে। দাঁতের অভাবে তার ভাই চকলেট খেতে পারছে না–এই জন্যে তার খারাপ লাগে।

শেষ পর্যন্ত দাঁত দেখা হলো না। কারণ ড্রাইভার দিগায়ু বলল, বিশেষ বিশেষ দিন ছাড়া এই দাঁত সর্বসম্মুখে বের করা হয় না। আজ সেই বিশেষ দিন না।

গৌতম বুদ্ধের পবিত্র দাঁত দর্শনার্থীরা সবসময় দেখতে পারে। দিগায়ুর মিথ্যা ভাষণে আমার ভূমিকা আছে। গৌতম বুদ্ধের দেখা পাওয়া মহা সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাঁর দাঁত দেখার কিছু নেই। যে মঠে গৌতম বুদ্ধের দাঁত আছে, সেখানে তাঁর মাথার চুলও সংরক্ষিত আছে। এই চুল উপহার হিসেবে বাংলাদেশ দিয়েছে শ্রীলংকাকে। বাংলাদেশে গৌতম বুদ্ধের চুল কীভাবে এসেছে সেটা বলা যেতে পারে।

বুদ্ধ এসোসিয়েসনের প্রধান অজিত রঞ্জন বড়ুয়া বলেন, তিব্বতের এক সাধু (শাক্য ভিক্ষু) পবিত্র চুল বাংলাদেশে আনেন ১৯৩০ সালে। আরেক সূত্র বলছে, চট্টগ্রাম বৌদ্ধ বিহারের ভন্তে শ্রমন (বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের প্রধান) গত শতাব্দীর প্রথম ভাগে রেঙ্গুন থেকে কিছু চুল নিয়ে আসেন।

গৌতম বুদ্ধের চুল বাংলাদেশ থেকে উপহার হিসেবে যাওয়ার অনেক আগেই শ্রীলংকায় এসেছিল। প্রাচীন পলি গ্রন্থ জাতক কথায় বলা হয়েছে ভারতবর্ষের দুই ব্যবসায়ী গৌতম বুদ্ধের একগোছা চুল নিয়ে শ্রীলংকায় আসেন। তাদের একজনের নাম থাপাসু (Thapassu}, অন্যজনের নাম ভালুকা (Bhalluka)। চুল থাকতেও শ্রীলংকা আবার বাংলাদেশ থেকে কেন চুল নিল জানি না।

সম্রাট অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় বৌদ্ধধর্ম দ্রুত প্রসার লাভ করে। দলে দলে হিন্দুধর্মাবলম্বীরা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করতে থাকেন। এতে শঙ্কিত হয়ে শংকরাচার্য সুন্দর একটা প্যাঁচ খেলেন। তিনি ঘোষণা করেন, গৌতম বুদ্ধ হিন্দুদের অষ্টম অবতার। তিনি হিন্দু সনাতন ধর্মেরই একজন। কাজেই তার কৃপালাভের জন্যে বৌদ্ধ হওয়ার প্রয়োজন নেই। বৌদ্ধধর্ম গ্রহণের প্রবল স্রোত বাধাগ্রস্ত হলো।

শেষ খেলা খেললেন রাজা অজাতশত্রু। বিচিত্র কোনো কারণে তিনি বৌদ্ধধর্মালম্বীদের উপর ক্ষেপে গেলেন। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করলেন। ঘোষণা করলেন, গৌতম বুদ্ধের অনুসারীদের দেখামাত্রই হত্যা করা হবে।

প্রাণভয়ে ভীত বৌদ্ধ ভিক্ষুরা পালিয়ে পাহাড়-পর্বতের দিকে চলে গেলেন। আজও পাহাড়-পর্বতেই এই ধর্মের মানুষের ঘনত্ব বেশি। সমতলে নেই।

.

এই সময়ে পৃথিবীজুড়েই বৌদ্ধধর্মের প্রতি প্রবল আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। পত্রপত্রিকায় প্রায়ই খবর আসছে হলিউডের অমুক তারকা বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেছেন। তাদের আগ্রহের মূল কারণ এই ধর্মে ঈশ্বর নেই। সোজা-সাপটা ঈশ্বর নেই বলাটা ঠিক হচ্ছে কি না তাও বুঝতে পারছি না। কারণ এক ভক্ত গৌতম বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করল, গুরুজি, ঈশ্বর কি নেই?

বুদ্ধ বললেন, ঈশ্বর নেই এমন কথা কি আমি বলেছি?

ভক্ত মহা আনন্দিত। কারণ সে মনেপ্রাণে একজন ঈশ্বর চাইছে। ভক্ত বলল, গুরুজি, তাহলে কি ঈশ্বর আছে?

বুদ্ধ বললেন, ঈশ্বর আছেন এমন কথা কি আমি বলেছি?

গৌতম বুদ্ধের নিজের মধ্যে সংশয় ছিল–এমন কথা কি বলা যায়? তিনি ঈশ্বরের কথা বলেন নি, নির্বাণের কথা বলেছেন। কিন্তু নির্বাণ আসলে কী তা কখনো পরিষ্কার করে বলেন নি। একবার বললেন, জ্বলন্ত শিখাকে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দেওয়াই নির্বাণ। তার কথা হলো, মানুষকে চারটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতেই হবে।

শোক
ব্যাধি
জরা
মৃত্যু

মানুষ বারবার পৃথিবীতে জন্মাবে (জন্মান্তরবাদ)। কীটপতঙ্গ হিসেবে, পশু হিসেবে, মানুষ হিসেবে। তার সুকীর্তির কারণে একটা সময় আসবে যখন আর তাকে পৃথিবীতে ফিরে আসতে হবে না। এটাই নির্বাণ।

আমার কাছে বারবার পৃথিবীতে ফিরে এসে শোক, ব্যাধি, জরা মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ অনেক আকর্ষণীয় মনে হয়। শোকের সঙ্গে থাকবে আনন্দ, জোছনাপ্লাবিত রজনী, প্রিয় সখার কোমল করস্পর্শ। যে নির্বাণ ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয় সেই নির্বাণ আমার কাছে গ্রহণযোগ্য না। আমি গৌতম বুদ্ধের যুক্তিই তাঁকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। গৌতম বুদ্ধ বলেছেন, ‘যে ঈশ্বর ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নয়, তার বিষয়ে কি বলা যাবে?’

কমিউনিস্টদের আধুনিক কমিউনের শুরুটা গৌতম বুদ্ধ করে গেছেন। তাঁর কমিউনের নাম সংঘ (সংঘং শরণং গচ্ছামি)। সেখানে সবার খাবার একত্রে রান্না করা হতো। সংঘে নারীদের প্রবেশাধিকার ছিল না। ভিক্ষুরা ভোরবেলা শূন্য থালা হাতে বের হতেন। সারা দিন ভিক্ষা করে যা পাওয়া যেত তা-ই রান্না হতো। সবাই মিলে তা-ই খেতেন। সংঘে নারীদের প্রবেশ ছিল নিষিদ্ধ।

গৌতম বুদ্ধের খালা প্রজাপতি গৌতমী ছিলেন এক অর্থে গৌতম বুদ্ধের মা। তিনিই গৌতম বুদ্ধকে লালনপালন করেছিলেন। এই মহিলা বহু কষ্টে, পায়ে হেঁটে বহু পথ অতিক্রম করে তাঁর পালকপুত্রের কাছে এলেন। সংঘে যোগ দিবেন। বাকি জীবন সংঘে কাটাবেন।

গৌতম বুদ্ধ বললেন, না। সংঘে নারী নিষিদ্ধ।

 একবার না, পরপর তিনবার তিনি এই বাক্য উচ্চারণ করলেন।

কাঁদতে কাঁদতে ফিরে গেলেন প্রজাপতি। গৌতম বুদ্ধের সার্বক্ষণিক সঙ্গী আনন্দ তখন বুদ্ধের কাছে কাতর আবেদন করলেন। তিনি যুক্তি দিলেন নারীরাও তো আলোকপ্রাপ্তির সুযোগ পেতে পারে। নারীদের বাদ দেওয়া মানে মানবজাতির অর্ধেককে বাদ দেওয়া।

গৌতম বুদ্ধ অনিচ্ছার সঙ্গে রাজি হলেন। তবে শর্ত জুড়ে দিলেন।

শর্ত হচ্ছে, নারীভিক্ষুরা যত উচ্চবর্ণের হোক তাদের পদমর্যাদা হবে সব পুরুষ ভিক্ষুর নিচে। যখনই নারীর সামনে কোনো পুরুষ ভিক্ষু দাঁড়াবে তখনই ভিক্ষুনীকে উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান দেখাতে হবে।

আনন্দ একবার জানতে চাইলেন, নারীদের প্রতি তাহলে আমরা কী আচরণ করব?

বুদ্ধ বললেন, তুমি তাদের দিকে ফিরেও তাকাবে না। তাহলেই কী আচরণ করবে সেই প্রশ্ন উঠবে না।

গৌতম বুদ্ধ নারীদের সাধনার বিঘ্ন মনে করতেন। স্বামী বিবেকানন্দও তা-ই করেছেন। তাঁর প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ মিশনে নারী নিষিদ্ধ ছিল। এখনো আছে। আমার খুবই অবাক লাগে, এই দুই মহাপুরুষ কী করে নারীর গর্ভে জন্মেও নারীদের সাধনার বাধা হিসেবে চিহ্নিত করলেন!

বুদ্ধ বলছেন, সকল প্রাণী সুখী হোক! শক্তিশালী কী দুর্বল, উচ্চ মধ্য বা নিচু গোত্রের, ক্ষুদ্র বা বৃহৎ, দৃশ্য বা অদৃশ্য, কাছের বা দূরের, জীবিত বা জন্ম প্রত্যাশী সকলেই সুখী হোক।

সর্বজীবে কি আমরা আসলেই দয়া করতে পারি? একটা কেউটে সাপ আমাকে ছোবল দিতে আসছে, আমি কি তাকে দয়া করব? তার ছোবল খাব? তাকে মারব না!

কলেরা, টাইফয়েড, সিফিলিসের ভয়ঙ্কর জীবাণুরাও তো জীব। তাদের প্রতি দয়া করতে হলে পেনিসিলিন ব্যবহার করা যাবে না। তাও কি সম্ভব!

নিয়তির পরিহাস হচ্ছে, যে দেশে অহিংস যুদ্ধের জয়জয়কার, চারদিকে তাঁর ধ্যানী মূর্তি, সেখানেই জন্মেছে কঠিনতম হিংসা। আত্মঘাতী বোমা হামলার শুরু শ্রীলংকায়। টাইগার প্রভাকরণের ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ তরুণ-তরুণী শরীরে বোমা বেঁধে নিজেকে উড়িয়ে দিচ্ছে।

গৌতম বুদ্ধের একটি বাণী আমার খুব পছন্দের। তিনি ভক্তদের বলছেন, আমার কথা হলো নদী পার হওয়ার ভেলা। একবার নদী পার হওয়ার পর ভেলা মাথায় নিয়ে বেড়ানোর কিছু নেই।

এই ধর্মের আরেকটি বিষয় আমাকে আলোড়িত করে, পূর্ণচন্দ্রের সঙ্গে এর সম্পৃক্ততা।

আষাঢ়ি পূর্ণিমা : গৌতম বুদ্ধের গৃহত্যাগ।

বৈশাখী পূর্ণিমা : বুদ্ধের মহাজ্ঞান লাভ।

 শারদীয় পূর্ণিমা : কঠিন চিবরদান অনুষ্ঠান।

ভাদ্র পূর্ণিমা (মধু পূর্ণিমা) :কঠিন তপস্যার সময় বানররা গৌতম বুদ্ধকে মধু পান করিয়েছে বলে মধু পূর্ণিমা।

আশ্বিনী পূর্ণিমা : বুদ্ধ তার চুল কেটে আকাশে উড়িয়েছিলেন। এই পূর্ণিমায় বৌদ্ধরা আকাশে ফানুস উড়ায়।

মাঘি পূর্ণিমা : এই দিনে বুদ্ধ ঘোষণা করেন, আর তিনমাস পর তাঁর মহাপ্রয়াণ হবে।

ফাল্গুনী পূর্ণিমা : এই তিথিতে বুদ্ধ কপিলাবস্তুতে যান। বাবা-মার সঙ্গে শেষবার দেখা করার জন্যে।

গৌতম বুদ্ধের জন্ম ও মৃত্যু একই দিনে হয়েছিল। কাকতালীয় হলেও দু’বারই আকাশে ছিল পূর্ণচন্দ্র।*

* অভিনেতা এবং আবৃত্তিকার জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায় ‘বৌদ্ধধর্ম ও পূর্ণিমা’ বিষয়ে আমাকে অনেক সঠিক তথ্যের সঙ্গে একটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেন, পৌষ পূর্ণিমায় গৌতম বুদ্ধ শ্রীলংকা গিয়েছিলেন। তথ্যটা ভুল। ধর্মপ্রচারের জন্যে গৌতম বুদ্ধ কখনো শ্রীলংকা আসেন নি।

.

পুনশ্চ

বৈরাগ্য
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

 কহিল গভীর রাত্রে সংসারে বিরাগী
“গৃহ তেয়াগিব আজি ইষ্টদেব লাগি।
কে আমারে ভুলাইয়া রেখেছে এখানে?”
 দেবতা কহিলা, “আমি।”–শুনিল না কানে।
সুপ্তিমগ্ন শিশুটিরে আঁকড়িয়া বুকে
প্রেয়সী শয্যার প্রান্তে ঘুমাইছে সুখে।
 কহিল, “কে তোরা ওরে মায়ার ছলনা?”
দেবতা কহিলা, “আমি।”–কেহ শুনিল না।
 ডাকিল শয়ন ছাড়ি, “তুমি কোথা প্রভু?”
দেবতা কহিলা, “হেথা।”–শুনিল না তবু।
 স্বপনে কাঁদিল শিশু জননীরে টানি–
 দেবতা কহিল, “ফির।” শুনিল না বাণী।
 দেবতা নিশ্বাস ছাড়ি কহিলেন, “হায়!
আমারে ছাড়িয়া ভক্ত চলিল কোথায়?”

 সরাসরি গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের কবিতা আছে, নাম ‘ব্রাহ্মণ’। এখানে সত্যকাম গিয়েছিলেন গৌতম বুদ্ধের কাছে দীক্ষা নেওয়ার জন্যে। গৌতম তাকে ফিরিয়ে দেন। সত্যকাম মা’কে বলেন,

কহো গো জননী, মোর পিতার কী নাম,
 কী বংশে জনম। গিয়াছিনু দীক্ষাতরে
 গৌতমের কাছে, গুরু কহিলেন মোরে–
 বৎস, শুধু ব্রাহ্মণের আছে অধিকার
ব্রহ্মবিদ্যা লাভে। মাতঃ কী গোত্র আমার?
 শুনি কথা, মৃদুকণ্ঠে অবনত মুখে
কহিলা জননী, যৌবনে দারিদ্রদুখে
 বহু পরিচর্যা করি পেয়েছিনু তোরে;
 জন্মেছিস ভর্তৃহীনা জবালার ক্রোড়ে,
গোত্র তব নাহি জানি তাত।’

কৌতূহলী পাঠক পুরো কবিতাটি পড়তে পারেন।

রবীন্দ্রনাথ গৌতম বুদ্ধকে নিয়ে কিছু প্রবন্ধও লিখেছেন। তিনি এই ধর্ম প্রচারককে শতাব্দীর গুরুত্বপূর্ণ মানুষ বলে বিবেচনা করেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *