অধ্যায় ৩১ – গ্রিসের মাইসেনীয় জাতি
গ্রিক উপদ্বীপে খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১৪০০ সালের মধ্যে মাইসেনীয় শহরগুলো তাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে গিয়েছিল। তারা তাদের বাণিজ্যিক কার্যক্রম সমুদ্রপথে পরিচালনা করতেন।
ইতোমধ্যে, ক্রিটের মিনোয়ানরা জীর্ণতা ও অনিয়মের দিকে আগাতে থাকলেও দ্বীপটির উত্তরে অবস্থিত উপদ্বীপের শহরগুলো ধীরে ধীরে সমৃদ্ধির দিকে আগাচ্ছিল।
খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ সালের মধ্যে মাইসেনীয়রা তাদের প্রয়াত শাসকদের দ্বীপের কেন্দ্রে অবস্থিত পাহাড়ে প্রচুর ধনসম্পদ সহ কবর দিতে শুরু করে। এই রাজাদের পরিচয় যাই হোক-না কেন, তারা জীবদ্দশায় যথেষ্ট পরিমাণ প্রভাব-প্রতিপত্তি আদায় করে নিতে পেরেছিলেন। ফলে মৃত্যুর পর তাদেরকে এতটা সম্মান দেওয়া হচ্ছিল। তবে তাদের সেই আধিপত্য মাইসেনীর প্রাচীর পেরিয়ে খুব বেশিদূর যায়নি। মাইসেনীর রাজকীয় প্রাসাদের সমতুল্য আরেকটি প্রাসাদ ছিল উত্তর-পূর্ব দিকের শহর থেবেসে। এছাড়াও, তৃতীয় আরেকটি প্রাসাদ দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে পাইলোস শহরে তৈরি করা হয়। ছোট একটা ভূমি পেরিয়ে এথেন্সে নির্মাণ করা হয় চতুর্থ রাজপ্রাসাদ। গ্রিক উপদ্বীপের একেকটি শহরের মাঝে ছিল উঁচু পাহাড়ের দেয়াল। প্রাচীন যুগে প্রতিটি শহরের নিজস্ব শাসনব্যবস্থা ছিল।
স্বাধীন শহরগুলোর মাঝে ছিল কার্যকর বাণিজ্যিক সম্পর্ক। বাসিন্দারা একই ভাষায় কথা বলতেন এবং তাদের সংস্কৃতিও একই ধরনের ছিল। উপদ্বীপের সবচেয়ে বড় শহরের নাম ছিল মাইসেনী। এ কারণেই ইতিহাসবিদরা একে ‘মাইসেনীয় সংস্কৃতি’ নাম দেন। তাদের এই নামকরণের কারণে অনেকের ধারণা হয় : থেবেস, অ্যাথেন্স ও পাইলোস—তিন শহরেই মাইসেনীয়দের বসবাস ছিল।
গ্রিক ইতিহাসবিদ প্লুটার্ক ও অন্যান্যদের বর্ণনায় জানা যায়, মিনোয়ান আর মাইসেনীয়দের মধ্যে খুব অল্পদিনের মধ্যেই দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছিল। মিনোসের একজন নাগরিক কোনো এক অজানা কারণে ঘুরতে ঘুরতে উত্তরের উপদ্বীপে চলে আসে। তাকে চিনতে না পেরে শত্রু ভেবে হত্যা করে মাইসেনীয়রা। রক্তের বদলে রক্ত নীতি অবলম্বন করতে যেয়ে মিনোস মাইসেনীয় শহরগুলোর ওপর একধরনের বোঝা চাপিয়ে দেয়। তাদের প্রতি নির্দেশ আসে, নসোস-প্রাসাদের পাতালে বসবাসরত মহিষ-মানব মিনোটরের খাবার জোগানোর জন্য জ্যান্ত নারী ও পুরুষ পাঠাতে হবে।
৩১.১ মাইসেনীয়রা
প্লুটার্ক জানান, এই দায়িত্ব মূলত অ্যাথেন্স শহরের ওপর বর্তায়। প্রায় ২ বছর ধরে অ্যাথেন্সের জনগণ তাদের পুত্র ও কন্যাদের মিনোটরের খাবার হওয়ার জন্য পাঠাতে বাধ্য হয়। তবে তৃতীয় বছরের শুরু থেকেই অ্যাথেন্সের পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের মিনোটরের কাছে পাঠাতে অনীহা প্রকাশ করতে শুরু করেন। তারা তিক্ততার সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে ক্ষমতাহীন রাজা এইজিয়াসের মুণ্ডূপাত করতে থাকেন। তিনি নিজেকে মিনোসের স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে অসহায় হিসেবে দাবি করেন। এইজিয়াস নিজে কিছু না করলেও তার বড়ছেলে থেসিউস বসে থাকতে রাজি ছিলেন না। তিনি মিনোটরের খাবারের তৃতীয় চালানের সঙ্গে রওনা দেন। উদ্দেশ্য, মিনোটরের বিরুদ্ধে লড়ে তাকে পরাস্ত করা। তিনি ছিলেন জাহাজের সপ্তম পুরুষ আরোহী।
তার ছেলে মিনোটরকে পরাজিত করে জয়ীর বেশে অক্ষত অবস্থায় ফিরে আসবে, এই আশা তিনি করেননি। তারপরেও, থেসিউসকে বহনকারী জাহাজটিতে প্রথাগত কালো রঙের পালের পাশাপাশি একটি বাড়তি পাল যুক্ত করেন রাজা এইজিয়াস। জাহাজের মাস্টারের সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করেন তিনি, যদি থেসিউস জয়ী হন, তাহলে জাহাজে উড়বে সাদা পাল। যদি অন্যদের মতো তিনিও নিহত হন, তাহলে শোকের চিহ্নপ্রকাশক কালো পাল উড়বে আকাশে। সেক্ষেত্রে জাহাজ কূলে ভেড়ার আগেই পিতা জেনে যাবেন তার প্রাণপ্রিয় পুত্রের পরিণতি।
ক্রিটে পৌঁছানোর পর থেসিউস ও অন্যান্যদের নসোস-প্রাসাদের পাতালে অবস্থিত প্যাঁচানো সুড়ঙ্গপথ ল্যাবিরিন্থে পাঠানো হল। অন্যান্য ভুক্তভোগীদের মতো, তারা হয় সেখানে ঘুরতে ঘুরতে না-খেয়ে মারা যাবেন অথবা মিনোটরের খাবার হবেন। এটাই ছিল সম্ভাব্য পরিণতি, কারণ সেই দুরূহ ও দুর্গম পথ থেকে কেউ বেঁচে ফিরে আসার নজির ছিল না।
কিন্তু মিনোসের মেয়ে আরিয়াডনের সুনজরে পড়েন থেসিউস। তিনি তাকে গোপনে একটি সুতার বল দেন। যখন তাকে থেসিউসকে গোলকধাঁধায় নিয়ে যাওয়া হয়, তিনি ল্যাবিরিন্থের প্রাচীরে সে বলটি রাখেন এবং সেটি ঢাল বেয়ে গড়াতে গড়াতে ল্যাবিরিন্থের ভাসমান কেন্দ্রবিন্দুতে চলে যায়। সেখানে যেয়ে তিনি মিনোটর দানবের গুহা আবিষ্কার করেন। খুব সহজেই অসতর্ক মিনোটরকে হত্যা করেন থেসিউস এবং আবারো সেই সুতার পথ ধরে সেখানে থেকে বের হয়ে আসেন। বলাই বাহুল্য, সুতার বলটি নিচের দিকে ছেড়ে দেওয়ার আগে সেটার একপ্রান্তকে একটি দৃঢ় দরজার হাতলের সঙ্গে বেঁধে রাখার সুবুদ্ধি তার মাথায় ছিল।
এরপর তিনি বাকি বন্দিদের খুঁজে বের করেন এবং দ্রুত তাদেরকে বহনকারী জাহাজে চেপে নিজ শহরের উদ্দেশে রওনা দেন। জাহাজে ওঠার আগে তারা ক্রিটদের সব জাহাজের তলায় ফুটো করে রেখে আসেন, যাতে সহজে তাদেরকে কেউ তাড়া করতে না পারে। কিন্তু এসব উত্তেজনায় ছোট, কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয় ভুলে যান থেসিউস। পরিকল্পনা অনুযায়ী কালো পাল বদলে সাদা পাল উত্তোলন করতে ভুলে যান তিনি। দূর থেকে জাহাজের কালো পাল দেখে শোকসন্তপ্ত পিতা এইজিয়াস অ্যাথেন্সের একটি পাহাড়ের চূড়া থেকে সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করেন। বিজয়ীর বেশে দেশে ফিরে থেসিউস আবিষ্কার করেন, সবাই তার প্রয়াত পিতার জন্য শোকের মাতমে ব্যস্ত। রাজা এইজিয়াসের প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য তখন থেকেই সে সাগরের নাম হয়ে যায় ‘এইজিয়ান সি’।
এখানে মিথোলজি বা পৌরাণিক গল্পের প্রভাব প্রছন্ন হলেও, এর মাঝে বাস্তব কিছু সত্যও লুকিয়ে আছে। মাইসেনীয়দের নৌযান চালনার দক্ষতা দেখতে পাই আমরা থেসিউসের মাঝে। শত্রুপক্ষের জাহাজের তলায় ফুটো করে দেওয়া এবং নিজ জাহাজকে গভীর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে দ্রুততম সময়ের মাঝে নিজ দেশে ফিরে আসা-এসবই নৌচালনায় দক্ষতার নমুনা। গ্রিক কবি হোমারের মহাকাব্য ইলিয়াডেও মাইসেনী শহর নিয়ে বলা হয়েছে, তারা যৌথ গ্রিক নৌবাহিনীতে ১০০টি জাহাজ পাঠায়।
থেসিউসের ঘটনার প্রায় ৮০০ বছর পরের ঘটনাপ্রবাহে আরও জানা যায়, ট্রয়ের বিরুদ্ধে অভিযানে মাইসেনীর রাজা ছিলেন অন্যতম শক্তিশালী প্রতিপক্ষ এবং এই শক্তিমত্তার পেছনে কাজ করছিল তার শক্তিশালী নৌবাহিনী। তবে মজার ব্যাপার হল, হোমারের জীবদ্দশায় মাইসেনী পরিণত হয় এক জীর্ণশীর্ণ শহরে। ততদিনে তাদের কোনো ধরনের সামরিক শক্তিমত্তা অবশিষ্ট ছিল না। ইলিয়াডে বর্ণিত নৌবহরের বর্ণনা তুলে আনা হয়েছে আরও অনেক বছর আগের মাইসেনীয় নৌ-ঐতিহ্য থেকে।
মাইসেনীয় জাহাজগুলোতে পৌরাণিক চরিত্র মিনোটরের খাবার হিসেবে জ্যান্ত নারী-পুরুষের পরিবর্তে খুব সম্ভবত বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য ও অন্যান্য পণ্য বোঝাই ছিল। মাইসেনীয় কুমারদের হাতের কাজের নিদর্শন খুঁজে পাওয়া গেছে একেবারে পূর্বপ্রান্তের কার্চেমিশ শহরে এবং উত্তর-পূর্ব দিকে মাসাটে (হাসাসের উত্তরে অবস্থিত)। মাইসেনীয় জাহাজের মিশর যাওয়ার প্রমাণও পাওয়া গেছে। ফারাও রাজা টুথমোসিস তৃতীয়’র কবরের সঙ্গে সমাধিস্থ একজন কর্মকর্তার হাতে (অবশ্যই, তাকে প্রয়াত ফারাওর সেবার জন্য জ্যান্ত কবর দেওয়া হয়েছিল) মাইসেনীয়দের নির্মাণ করা কাপ পাওয়া গেছে।
তবে সন্দেহাতীতভাবে, মাইসেনীয়দের বাণিজ্য মূলত ক্রিটের মিনোয়ানদের সঙ্গেই হতো। মাইসেনীর রাজকীয় কবরগুলোতে প্রচুর পরিমাণে মিনোয়ান তৈজসপত্র, মিনোয়ান চিত্রশৈলী ব্যবহার করে আঁকা বিভিন্ন ছবি এবং মিনোয়ান পোশাক পরিহিত মাইসেনীয়দের প্রতিকৃতি খুঁজে পাওয়া গেছে। নসোসের সৈন্যদের ব্যবহৃত মহিষের চামড়ার ঢালের ওপর বসানো গোলাকৃতির চিহ্নগুলো মাইসেনীয়দের ঢালেও পাওয়া গেছে। মিনোয়ানদের কাছ থেকে মাইসেনীয়রা লেখনীর ব্যবহার শেখে। মিনোয়ানদের ছিল নিজস্ব লেখার ধাঁচ, যেটি তারা হাজার বছরেরও বেশি সময় ধরে তৈরি করে। অন্যান্য সভ্যতার মতো তারাও প্রথমে পণ্য বোঝানোর জন্য চিহ্ন, তারপর ছবি এবং অবশেষে সুনির্দিষ্ট লেখনীর প্রচলন করে। ক্রিটে ছড়িয়েছিটিয়ে থাকা ট্যাবলেট ও পাথরের গায়ে খোদাই অবস্থায় এই লিপির বিভিন্ন নিদর্শন পাওয়া যায়। মূলত এর দুটি আকার ছিল : লিনিয়ার-এ ও লিনিয়ার-বি। লিনিয়ার-বি ছিল অপেক্ষাকৃত জটিল, যেটি পরবর্তীতে মাইসেনীয়দের মাঝে জনপ্রিয়তা পায়।
এই দুই জাতির মধ্যে ঐতিহ্যগত দিক দিয়ে মিল থাকলেও সভ্যতার একেবারে শুরু থেকেই তাদের মাঝে যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থেকেছে। থেসিউসের বিজয় ছিল এক হিংস্র ও বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা জাতির বিরুদ্ধে একটি সভ্য ও চৌকশ জাতির বিজয়গাথা। এ ঘটনার মধ্যদিয়ে পরবর্তী যুগে গ্রিকদের অন্যান্য সভ্যতার প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাবের একটি আভাস পাওয়া যায়। প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ হেরোডোটাস নিজেই এই ঘৃণাসুলভ মনোভাবের বর্ণনা লিখে রেখে গেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন, গ্রিক শাসক পলিক্রেটিস ছিলেন প্রথম মানব, যিনি সমুদ্রের ওপর নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য নৌবাহিনী তৈরি করেছিলেন। হেরোডোটাস বলেন, ‘আমি নসোসের মিনোস বা মিনোসের আগে অন্য কোনো শাসকের সমুদ্রজয়ের দাবিকে নাকচ করছি।’
‘আমি পলিক্রেটিসকেই প্রথম মানব হিসেবে এই কীর্তির (সমুদ্র দখল) যথার্থ দাবিদারের স্বীকৃতি দিচ্ছি’, যোগ করেন হেরোডোটাস।
এই দুই জাতির মধ্যে সমুদ্রের আধিপত্য নিয়ে প্রতিযোগিতা কখনোই থেমে থাকেনি। সঙ্গে ছিল একে ওপরের প্রতি বিদ্বেষ। উভয় জাতির নৌবাহিনী নির্ঝঞ্ঝাটে ভূমধ্যসাগরে টহল দিয়ে বেড়াত, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মিশরের সঙ্গে সোনা ও হাতির দাঁতের বাণিজ্য খুব বেশি মাত্রায় মূল্যবান ছিল। দুই রাজাই এক্ষেত্রে একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে পারলে লাভবান হতেন। ক্রিট ছিল কৌশলগত দিক দিয়ে অপেক্ষাকৃত ভালো অবস্থানে। ক্রিটের দক্ষিণ অংশ থেকে সরাসরি মিশর পর্যন্ত বাণিজ্যপথ বিস্তৃত ছিল।
মাইসেনীয়দের কবরে মিনোয়ান পণ্য খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারটা ক্রিটদের সাময়িক আধিপত্যের প্রমাণস্বরূপ। তবে থেরা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের পর, ক্রিট ও গ্রিক সভ্যতা দুটি ভিন্নপথে হাঁটতে শুরু করে। মিনোয়ানদের বাড়িঘরে মাইসেনীয় শিল্পীদের হাতে তৈরি মাটির জিনিসপত্র ও কাপের সংখ্যা বেড়ে যায়। ১৫০০ সাল নাগাদ ক্রিটদের কবরগুলো মাইসেনীয় নকশায় তৈরি হতে শুরু করে, যা এর আগে সেখানে দেখা যায়নি। আগে অ্যাথেন্স থেকে নসোসে উপঢৌকন হিসেবে মানুষ পাঠানো হত, কিন্তু কালের প্রবাহে পাশার দান পুরোপুরি উল্টে যায়। বিজয়ী থেসিয়াসের মতো, মাইসেনীয় শহরগুলোও দক্ষিণের দ্বীপগুলোর তুলনায় অনেক এগিয়ে যায়।
এ অবস্থায় ১৪৫০ সালের দিকে নসোস শহর লুণ্ঠনের শিকার হয়। তবে কোনো এক বিচিত্র কারণে রাজপ্রাসাদ অক্ষত থেকে যায়। অপরদিকে মাল্লিয়া ও ফাইস্টোসের প্রাসাদগুলোকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়। ক্রিটের বেশকিছু শহর পরিত্যক্ত হয় এবং অন্যগুলো আকারে সংকুচিত হয়ে যায়। মনে হয় যেন হটাৎ করেই তাদের সব তরুণ যোদ্ধারা যুদ্ধক্ষেত্রে আত্মত্যাগ করেন অথবা অন্য কোথাও পালিয়ে যান।
তবে নতুন কোনো সংস্কৃতির উদ্ভব ঘটেনি এ সময়। আমরা শুধু ধরে নিতে পারি যে মাইসেনীয় এবং মিনোয়ানদের সম্পর্ক এতটাই খারাপ হয়ে গেছিল যে, তা দৈনন্দিন যুদ্ধবিগ্রহে রূপান্তরিত হয়। নসোসের রাজপ্রাসাদের টিকে থাকা এটাই প্রমাণ করে যে আক্রমণকারীদের মধ্যে এমন কেউ ছিল, যে মিনোয়ানদের সরকারব্যবস্থাকে নিজের কাজে লাগাতে ইচ্ছুক ছিলেন। আক্রমণকারী মাইসেনীয় রাজা যেই হোক না কেন, যুদ্ধজয়ের পরে সম্ভবত তিনি নসোসকেই নিজের সদর দফতর হিসেবে ব্যবহার করেন।
তবে এই আগ্রাসনের পরেও ক্রিটের বাসিন্দাদের জীবনে বৈপ্লবিক কোনো পরিবর্তন আসেনি। কবরগুলোর নকশা আগের মতোই থেকে যায় এবং লিনিয়ার- বি লেখনীর ব্যবহার চলতে থাকে। মিনোয়ানদের মাটির তৈরি তৈজসপত্রও হঠাৎ করে পরিবর্তিত হয়নি। যেসব মাইসেনীয় যোদ্ধা নসোস দখল করে নেন, তারা মিনোয়ানদের থেকে খুব একটা ভিন্ন ছিলেন না। তাদের দখল নেওয়ার বিষয়টি কিছুটা এক ভাইয়ের রাজ্য অন্য ভাইয়ের দখল করে নেওয়ার মতো বিষয় ছিল। দুটি রাজ্য, যুগ যুগ ধরে একে অপরের সঙ্গে প্রায় সবকিছুই আদানপ্রদান করে আসছিল। সেই ধারার হাত ধরে ক্ষমতাও হাত পরিবর্তন করে।
কাব্যিকভাবে বলতে গেলে, মিনোয়ানদের ভেতরে মাইসেনীয়রা ঢুকে পড়ে, তাদের আমূল পরিবর্তন ঘটায়, এবং বস্তুত, ল্যাবিরিন্থে তারা অনুপ্রবেশ করে।