ঘুম ভাঙার পরই অভিজিৎ ধড়মড় করে উঠে বসল! সে কোথায়? নিজেরই তো ঘর, নিজের বিছানা। কাল রাত্রে সে কখন বাড়ি ফিরল? কে পৌঁছে দিল? কিছুই মনে নেই।
নিজের শরীরের দিকে তাকাল। পাজামা আর গেঞ্জি পরে আছে। তার শার্ট প্যান্ট তো অন্য কেউ খুলে দেয়নি, সে নিজেই খুলেছে নিশ্চয়ই। জুতোও খুলেছে, কিন্তু মোজা খোলা হয়নি। কখন বাড়ি ফিরল সে? সুমিত্রা কোথায়? ঘরে সুমিত্রা নেই। অভিজিতের একটু একটু মনে পড়ল যে, কাল সন্ধ্যে বেলা মানিকতলা থেকে সুমিত্রাকে তার নিয়ে আসার কথা ছিল। কিন্তু সে যায়নি। কখন সে নিজে বাড়ি ফিরেছে কিছু মনে নেই। সুমিত্রা কি রাত্রে ফেরেনি?
ঠিক তক্ষুনি সুমিত্রা ঘরে ঢুকল। সকাল বেলাতেই স্নান করে নিয়েছে। পিঠের ওপর ভিজে চুল মেলা। একটা চওড়াপাড় শাড়ি পরা। মুখখানা গম্ভীর।
অভিজিৎ মনে মনে দারুণ অপরাধী হয়ে আছে। অনুশোচনায় বুক পুড়ে যাচ্ছে। এখন সে সুমিত্রার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতেও রাজি। কিন্তু প্রথমে কথাটা কীভাবে শুরু করবে, তাই ভেবে পাচ্ছে না।
সুমিত্রা একটাও কথা না-বলে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
অভিজিতের মাথাটা ধরে আছে। দারুণ জলতেষ্টা পেয়েছে। সাধারণত মাথার কাছে ছোটো টেবিলে একটা জলের জাগ আর গেলাস থাকে, আজ নেই। কী কী হল কাল রাত্রে? নিখিল আর বাদল তাকে ধরে নিয়ে গেল একটা ফ্ল্যাটে। সেখানে একটা লোক–কী যেন নাম? দুরছাই নামটা মনে পড়ছে না। যাক গে, সেই লোকটা একটা বড়ো কাজের প্রস্তাব দিয়েছিল…তারপর সেখান থেকে বেরিয়ে পার্ক স্ট্রিটে একটা বারে। কেন অভিজিৎ সেখানে ঢুকেছিল? সুমিত্রাকে আনতে না গিয়ে, সে কেন নিজেই একটা বারে ঢুকে পড়েছিল? মনে পড়ছে না…সেখানে কার সঙ্গে যেন দেখা হল? খুব চেনা একজন–অথচ মুখটা মনে নেই গলার আওয়াজটাও, প্রিয়ব্রত, প্রিয়ব্রতর সঙ্গে দেখা হয়েছিল-তারপর? মনে নেই, আর কিছু মনে নেই।
তাড়াতাড়ি উঠে গিয়ে সে প্যান্টের পকেট থেকে মানিব্যাগটা বার করল! ভেতরে তিনটে টাকা আর কিছু খুচরো পয়সা পড়ে আছে। কাল তার পকেটে প্রায় নব্বই টাকা ছিল, অফিসে একটা এক-শো টাকার নোট ভাঙিয়েছিল মনে আছে, তা হলে এতগুলো টাকা কোথায় গেল! পার্ক স্ট্রিটের বার থেকে বেরিয়ে আর কোথাও যাওয়া হয়েছিল? প্রিয়ব্রতর সঙ্গে আবার দেখা না হলে কিছুই জানা যাবে না।
সুমিত্রা এক কাপ চা এনে মাথার কাছে ছোটো টেবিলটায় রাখল।
অভিজিৎ বলল, আগে এক গেলাস জল দাও তো, আর মাথা ধরার কোনো ট্যাবলেট যদি থাকে
কথাটা বলেই সে বুঝল যে, সে ভুল করেছে। আগেই সুমিত্রার কাছে ক্ষমা না চেয়ে সে হুকুম করছে। আগেই কি সুমিত্রার হাত জড়িয়ে ধরে মিষ্টি সুরে ক্ষমা চেয়ে নেওয়া উচিত ছিল না?
সুমিত্রা এক গেলাস জল আর দুটো ট্যাবলেট এনে রাখল। তখন অভিজিৎ লক্ষ করল, সুমিত্রার ডান হাতের কড়ে আঙুলে একটা ছোট্ট ব্যাণ্ডেজ বাঁধা।
তোমার আঙুলে কী হয়েছে?
সুমিত্রা উত্তর দিল না।
তুমি কাল কার সঙ্গে এলে?
সুমিত্রা তবুও চুপ করে রইল।
তুমি কি কাল একলাই চলে এলে নাকি? চিনতে পারলে?
এবার সুমিত্রা বলল, স্নান করার জন্যে গরম জল লাগবে?
সুমিত্রার গলার আওয়াজ শুনে নিশ্চিন্ত হয়ে অভিজিৎ বলল, না, এক্ষুনি স্নান করব কী, একটু পরে! শোনো, কালকে একটা দারুণ ব্যাপার হয়েছে। এক পার্টি একটা খুব বড়ো কাজ…
সুমিত্রা সবটা না-শুনেই বেরিয়ে গেল ঘর থেকে। অভিজিৎ একটু আহত বোধ করল। কথার মাঝখানে কেউ উঠে গেলে তার একটুও ভালো লাগে না।
সুমিত্রা তক্ষুনি কিন্তু ফিরে এল।
অভিজিৎ একটু কড়া গলায় বলল, কথাটা না-শুনেই চলে গেলে যে!
সুমিত্রার মুখে কোনো রেখা নেই। রাগ বা অভিমান কিছুরই যেন চিহ্ন নেই। খুব শান্তভাবে সে বলল, গ্যাসের উনুনে স্নানের জল চাপানো ছিল, সেটা বন্ধ করে দিয়ে এলাম।
স্নানের জল এক্ষুনি কী?
সাড়ে নটা বাজে।
অভিজিৎ দারুণ চমকে উঠল। সাড়ে নটা? কী সর্বনাশ। ঠিক দশটার সময় তার অফিসে পৌঁছোনোর কথা। সকাল থেকে পর পর অনেকগুলো অ্যাপয়েন্টমেন্ট হয়ে আছে। এমনই অফিস যে কাজে ফাঁকি মারার উপায় নেই। বাইরে থেকে লোকেরা এসে বসে থাকবে।
এক চুমুকে চা-টা শেষ করে অভিজিৎ তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে বলল, শিগগির স্নানের জল দাও। আমাকে এক্ষুনি বেরোতে হবে।
খাট থেকে নামতেই অভিজিৎ বুঝল, তার পা টলে যাচ্ছে, মাথাটা ঘুরছে। শরীর অসম্ভব খারাপ লাগছে। কিন্তু সুমিত্রাকে তা বুঝতে দেওয়া চলে না। অতিরিক্ত উৎসাহ দেখিয়ে সে ছুটে গেল দাড়ি কামাতে।
প্রাতঃকৃত্য সারবার পর অভিজিৎ দেখল স্নানের জল তৈরি। বাথরুমে তার গেঞ্জি ও শুকনো তোয়ালে ঝুলছে। সুমিত্রার কোনো কাজে ভুল হয় না।
ঝুপঝাপ করে মাথায় খানিকটা জল ঢেলেই বেরিয়ে এল অভিজিৎ! প্রায় দৌড়ঝাঁপ করেই পোশাক পরে নিল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধতে বাঁধতেই চাকরের উদ্দেশ্যে হাঁক পাড়ল, সনাতন, একটা ট্যাক্সি ডাক
শোয়ার ঘর থেকে বেরিয়ে সামনেই খাওয়ার জায়গা। টেবিলের ওপর অভিজিতের খাবারের প্লেট সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুমিত্রা।
আমি আজ খাব না। আমার খাওয়ার সময় নেই।
সুমিত্রা কোনো কথা বলল না। বুড়িমা নামে যে স্ত্রীলোকটি রান্না করে, সে বলল, একটু খেয়ে যাও দাদাবাবু কতক্ষণ আর লাগবে।
না না, আমার একটুও সময় নেই। তবু প্লেট থেকে একটা মাছভাজা তুলে নিল অভিজিৎ।
সুমিত্রাকে বলল, চললাম।
মাছভাজাটা খেতে খেতেই সিঁড়ি দিয়ে দৌড়োল। দশটা বাজতে দশ। অসম্ভব দেরি হয়ে যাবে। এখান থেকে ট্যাক্সি পাওয়ার আশা কম। মোড়ের মাথায় শেয়ারের ট্যাক্সি পাওয়া যায় এইসময়। সব মিলিয়ে আধ ঘণ্টা তো লাগবেই। ভিলাই থেকে ওদের পি. আর. ও. এসে বসে থাকবে। যদি লোকটা চটে গিয়ে উঠে চলে যায় তাহলে সর্বনাশ!
মাছভাজাটা শেষ করে, রুমাল দিয়ে হাতের তেল মুছে, অভিজিৎ বাড়ির বাইরে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে দাঁড়াল। চিন্তা করল দু-এক মুহূর্ত। সে যেন, শুনতে পাচ্ছে একটা কিছু শব্দ। যদিও রাস্তায় গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ ছাড়া আর কোনো বিশেষ শব্দই নেই।
অভিজিৎ আবার সিঁড়ি দিয়ে উঠে এল ওপরে! দ্রুত পদক্ষেপে নয়, আস্তে আস্তে! শোয়ার ঘরের খাটের ওপর বসে আছে সুমিত্রা। অভিজিৎকে দেখে একবারমাত্র তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল।
সুমিত্রা নিঃশব্দে কাঁদছে। গালের ওপর দিয়ে গড়িয়ে আসছে দু-টি জলের রেখা। তবু অভিজিৎকে দেখে সে কান্না লুকোতে চাইল।
অভিজিৎ বলল, না। আমি কিছু নিতে ভুলে যায়নি।
কাছে এসে সুমিত্রার পাশে বসে পড়ে বলল, জানি, তুমি খুব রাগ করেছ। আমি খুবই অন্যায় করেছি কাল
সুমিত্রা ঠাণ্ডাভাবে বলল, তোমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
হোক দেরি! শোনো, কাল হঠাৎ আটকে গেলাম, একটা খুব বড়ো কাজের অর্ডার পাওয়ার চান্স আছে। সে নিয়ে কথা বলতে গিয়েই
কাজের কথা বলতে গেলে বুঝি অজ্ঞান হয়ে বাড়ি ফিরতে হয়?
মোটেই আমি অজ্ঞান হয়ে ফিরিনি। নিজেই আমি জামাপ্যান্ট বদলেছি…মানে, কথায় কথায় অনেক রাত হয়ে গেল, তোমাকে আনতে যেতে পারলাম না, তুমি কী করে এলে?
এসেছি তো শেষ পর্যন্ত।
তোমার আঙুলটা কাটল কী করে?
তোমার অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি আছে বলছিলে—
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অভিজিৎ উঠে দাঁড়াল। সত্যিই আর দেরি করার উপায় নেই। সুমিত্রার কাঁধে হাত রেখে অভিজিৎ গাঢ় গলায় বলল, সুমিত্রা, আমি ক্ষমা চাইছি! সত্যি, আমি এ-রকম চাইনি!
অভিজিৎ ক্ষমা কথাটা উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গে সুমিত্রা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলল। অভিজিৎ তার মুখখানা দু-হাতের মধ্যে রেখে ব্যাকুলভাবে বলল, কেঁদো না, লক্ষ্মীটি। আমি কথা দিচ্ছি আর কক্ষনো এ রকম–
না, তোমাকে কথা দিতে হবে না।
সত্যি, বিশ্বাস করো।
আমি কতবার বিশ্বাস করব? কতবার তুমি কথা দেবে?
সুমিত্রা, আমি এবার নিজেকে বদলাব। শুধু তোমার জন্যে। এমন ঝামেলার মধ্যে পড়ে যেতে হয় অথচ আমি চাই তোমাকে খুশি করতে।
তুমি এখন যাও।
যাচ্ছি। আজ রাত্রে এসে কথা হবে।
অভিজিৎ এবার বাড়ি থেকে বেরিয়েই সৌভাগ্যক্রমে একটা ট্যাক্সি পেয়ে গেল। অফিস থেকে গাড়ি কেনার জন্যে ধার দেবে বলছে। এবার একটা গাড়ি কিনে ফেলতে পারলেই হয়। গাড়ি থাকলে আর ঠিক সময় বাড়ি ফেরার কোনো অসুবিধে থাকে না।
অফিসে এসেই অভিজিৎ কাজের মধ্যে একেবারে ডুবে গেল। অনবরত টেলিফোন, অনবরত লোক, এক মিনিট নিঃশ্বাস ফেলার সময় নেই। মাথাটা এখনও ধরে আছে। সেইজন্য ঘন ঘন কালো কফি খাচ্ছে। সেই এক টুকরো মাছভাজা ছাড়া পেটে আর কোনো খাদ্যই পড়েনি। কাল রাত্তিরেও নিশ্চয়ই কিছু খাওয়া হয়নি।
অফিসের অন্যান্য লোকজনরা লাঞ্চে বেরিয়ে গেছে। অভিজিৎ এখনও সময় করতে পারছে না। দোকানে গিয়ে আর লাঞ্চ খাওয়া হবে না তার। বেয়ারাকে দিয়ে কিছু আনিয়ে নিতে হবে। সত্যি খুব খিদে পাচ্ছে। পেটে খিদের জ্বালা টের পেলে অভিজিতের বেশ আনন্দ হয়। খিদে পাওয়া মানেই লিভারটা এখনও ঠিক আছে।
দেড়টার সময় টেলিফোন করল কল্যাণ। কাল ওদের বাড়িতেই গিয়েছিল সুমিত্রা। টেলিফোনটা ধরেই রাগ হয়ে গেল অভিজিতের। এই টেলিফোনটাই তো যত নষ্টের গোড়া।
কল্যাণ জিজ্ঞেস করল, কী শরীর কেমন আছে আজ?
অভিজিৎ ব্যঙ্গের সুরে বলল, আমার শরীর কোনোদিনই খারাপ থাকে না। কিন্তু তোমাদের টেলিফোনের শরীর ভালো হয়ে গেছে দেখছি।
তার মানে?
কাল সন্ধ্যে বেলা অন্তত দশ বার তোমাদের বাড়িতে একটা টেলিফোন করার চেষ্টা করেছি, কিছুতেই পাইনি।
এ-রকম তো হয়ই। এ আর নতুন কী? কাল রাতে তুমি কী করলে বলো তো?
কী আবার করব, জরুরি কাজে আটকে পড়েছিলাম।
তা বলে রাত একটার সময়
অ্যাঁ? অভিজিতের বুকের মধ্যে ছ্যাঁৎ করে উঠল। রাত একটার সময়? তখন কোথায় ছিল সে? কল্যাণ তাকে দেখলই-বা কী করে? কল্যাণ তো বেশি রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকে না।
খুব সাবধানে সে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছিল কাল রাত একটায়?
তুমি এসে আমাদের বাড়ির সামনে ট্যাক্সি থামিয়ে সুমিত্রার নাম ধরে চিৎকার করছিলে! মনে নেই তোমার? অত রাত, লোকের ঘুম ভাঙিয়ে পাড়া জাগিয়ে চিৎকার–তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল?
অভিজিৎ মিনমিন করে বলল, সুমিত্রা আছে কি না দেখতে গিয়েছিলাম। ওকে তো আমারই নিয়ে আসার কথা ছিল
তা বলে রাত একটার সময়? অত রাতে কেউ রাস্তায় দাঁড়িয়ে কোনো মেয়ের নাম ধরে চিৎকার করে ডাকে? আমার মা তো ভেবেছিলেন বুঝি হঠাৎ কোনো বিপদ-আপদ হয়েছে।
সুমিত্রা কার সঙ্গে গেল?
তুমি এখনও সেটা জানো না? কেন, রাত্রে বাড়ি ফেরোনি? দেখা হয়নি সুমিত্রার সঙ্গে?
তা হয়েছে, মানে—
সুমিত্রাকে তো আমিই পৌঁছে দিয়ে এলাম, প্রায় রাত দশটা পর্যন্ত তোমার জন্যে অপেক্ষা করেছিলাম–তুমি কাল কোথায় গিয়েছিলে? একেবারে দাঁড়াবার ক্ষমতা ছিল না, হাঁটতে পারছিলে না, আমি তো ভেবেছিলাম আমাদের বাড়িতেই তোমাকে শুইয়ে রাখব। তা তোমার এক বন্ধু
কে বন্ধু?
তা আমি কী করে জানব? ট্যাক্সির মধ্যে বসেছিল, হঠাৎ বেরিয়ে এসে তোমার হাত ধরে এমন টানাটানি শুরু করে দিল, সে এক বিশ্রী দৃশ্য। রাত্রিতে তুমি বাড়ি ফিরতে পারবে কি না তা ভেবেই ভয় পাচ্ছিলাম। এখন শরীর ঠিক আছে?
হ্যাঁ। আচ্ছা কল্যাণ, একটু জরুরি কাজ আছে, কাল তোমার সঙ্গে কথা বলব।
ঠিক আছে, তুমি কাজ করো। তবু একটা কথা বলি অভিজিৎ, এতটা বাড়াবাড়ি মোটেই ভালো নয়। মদ খাওয়াটা এমন কিছু দোষের নয়, কিন্তু তুমি যা করছ, কাল তোমার মুখখানা যেরকম ভয়াবহ হয়ে উঠেছিল
ঠিক আছে, ঠিক আছে, পরে কথা হবে।
ফোন ছেড়ে দিয়ে অভিজিৎ গুম হয়ে বসে রইল। কেউ উপদেশ দেওয়ার চেষ্টা করলেই রাগ হয়। অভিজিৎ নিজেই তো মরমে মরে আছে। কাল তাহলে খুব কেলেঙ্কারিই হয়েছিল। ইস, কল্যাণদের বাড়ি অত রাত্রে, কল্যাণের মা-বাবা সবাই জেনে গেছেন–
প্রিয়ব্রতকে ফোন করলে সব ঘটনাটা জানা যেত। কিন্তু প্রিয়ব্রতর বাড়িতে ফোন নেই এখন। অফিসে টেলিফোন ছিল, চাকরি ছাড়ার পর লাইন কেটে দিয়েছে। প্রিয়ব্রত কী যেন বলছিল কাল? নিজের ব্যবসার কথা। প্রিয়ব্রতর দ্বারা ওসব হবে না, কিছু করতে গেলে আরও ডুববে।
কল্যাণ কী এখন তার বাড়িতে ফোন করবে? সুমিত্রাকে বলে দেবে কালকের ঘটনাটা। এক- একজন লোক আছে, খুব গল্প করে বেড়াতে ভালোবাসে। তা ছাড়া এটা তো বেশ মুখরোচক গল্প। বাড়ির জামাই মাতাল হয়ে রাত একটার সময় বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচামেচি করেছে। ইস, সত্যি কাজটা বড্ড খারাপ হয়ে গেছে। না, এ-রকম আর চলবে না। নিশ্চয়ই প্রিয়ব্রতটা তাকে জোর করে খাইয়েছে!
বেয়ারাকে দিয়ে কিছু স্যাণ্ডউইচ আর কফি আনিয়ে অভিজিৎ লাঞ্চ সেরে নিল। আবার ডুব দিল কাজে। মুখ তুলল প্রায় সাতটার সময়।
সহকর্মীরা প্রায় সবাই চলে গেছে। চলো অভিজিৎদা, বাড়ি যাওয়ার পথে একটু বিয়ার খেয়ে যাই।
অভিজিৎ বলল, না ভাই, আমাকে আজ বাড়ি ফিরতে হবে। তুমি যাও।
বিমানের পরবর্তী অনুরোধ-উপরোধ সম্পূর্ণ অগ্রাহ্য করতে পারল অভিজিৎ। আজ সে সাংঘাতিক দৃঢ়। সোজা গিয়ে বাড়ি ফেরার মিনিবাস ধরল।