কৌথুমী শাখা – মহানাম্নী আর্চিক
এই মন্ত্রগুলির ঋষি–প্রজাপতি।
দেবতা–ত্রৈলোক্য-আত্মা ইন্দ্র৷ মন্ত্রসংখ্যা-১০।
বিদা মঘবন্ বিদা গাতুমনুশংসিষো দিশঃ। শিক্ষা শচীনাং পতে পূর্বাণাং পুরূবসো॥ ১৷৷ আভিমভিষ্টিভিঃ স্বাহগ্নাংশু। প্রচেতন প্রচেতয়েন্দ্র দ্যুম্নয় ন ইযে৷৷ ২৷৷ এবা হি শক্রো রায়ে বাজায় বজ্বিবঃ। শবিষ্ঠ বজিঞ্জস মংহিষ্ঠঃ বজিঞ্জস। আ যাহি পিব মৎস্য৷৷ ৩৷৷ বিদা রায়ে সুবীর্যং ভুববা বাজানাং পাতবর্শা অনু। মংহিষ্ঠ বজিঞ্জসে যঃ শবিষ্ঠঃ শূরানা৷৷ ৪৷৷ যো মংহিষ্ঠো মযোনামংজুন্ন শোচিঃ। চিকিত্বো অভি নো নযেন্দ্রো বিদে তমু স্তুহিঃ। ৫৷৷ ঈশে হি শকুস্তমূতয়ে হবামহে জেতারমপরাজিত। স নঃ স্বৰ্ষদতি দ্বিষঃ কতুচ্ছ ঋতং বৃহৎ ৬৷৷ ইন্দ্রং ধনস্য সাতয়ে হবামহে জেতারমপরাজিত৷ স নঃ স্বর্ষদতি দ্বিষঃ স নঃ স্বর্ষদতি দ্বিষঃ। ৭৷৷ পূর্বস্য যত্তে অদ্রিবোংশুমদায়। সুম আ ধেহি নো বসো পূর্তিঃ শবিষ্ঠ শস্যতে। বশী হি শকো নূনং তন্নব্যং সন্যসে। ৮। প্রভো জনস্য বৃহসমযেষু ব্ৰবহৈ। শূরো যো গোষু গচ্ছতি সখা সুশেবো অদ্বয়ুঃ। ৯। (পঞ্চ পুরীষদপদ)। এবাহ্যেৎ৩২৩২৩ব। এবা হ্যগ্নে। এবাহীন্দ্র। এবা হি পূষন্। এবা হি দেবাঃ। ওঁ এবাহি দেবাঃ। ১০৷৷
মন্ত্ৰার্থ— ১/২/৩ পরমধনদাতা হে দেব! আপনি সর্বজ্ঞ; আপনার জন্য উচ্চারিত আমাদের স্তুতি গ্রহণ করুন, আমাদের সৎমার্গ প্রদর্শন করুন; প্রভূত সৎকর্ম-সাধন-সামর্থ্য-প্রদাতা পরমধনদাতা হে দেব! আমাদের কৃত প্রার্থনায় প্রীত হয়ে আপনি আমাদের পরমধন প্রদান করুন; সর্বজ্ঞ হে দেব! দিব্যজ্যোতিঃসম্পন্ন আপনি আমাদের জ্ঞানসম্পন্ন করুন; আপনিই নিশ্চিতরূপে ধনদানে সমর্থ, আমাদের দিব্যজ্যোতিঃ এবং সিদ্ধি প্রদান করুন; রক্ষাস্ত্রধারী হে দেব! আমাদের ধনদান এবং শক্তিদানের জন্য প্রসন্ন হোন; মহাশক্তিসম্পন্ন রক্ষাস্ত্রধারী হে দেব! আমাদের পরমধনপ্রদানে সমৃদ্ধ করুন; পরমধনদাতা রক্ষাস্ত্রধারী হে দেব! আমাদের পরমধন প্রদান করুন; হে দেব! প্রীত হয়ে আগমন করুন এবং আমাদের হৃদয়স্থিত সৎ-ভাব-রূপ অর্ঘ্য গ্রহণ করুন। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে-হে ভগবন! কৃপাপূর্বক আপনি আমাদের সৎকর্মসাধনসমর্থ করুন; আমাদের পরাজ্ঞান এবং পরমধন মোক্ষ দান করুন)। [মহানাম্নী আর্চিকের মোট দশটি মন্ত্র চারভাগে বিভক্ত। প্রথম তিনভাগে তিনটি করে নটি এবং চতুর্থ ভাগে একটি মন্ত্র আছে। প্রথম তিনটি মন্ত্রের ব্যাখ্যা একসঙ্গে দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এই তিনটি মন্ত্রকে একটি বৃহৎ মন্ত্র বলা যেতে পারে। তিনটির ব্যাখ্যা পৃথক পৃথক করা যায় না। ভাষ্যকারও তিনটি মন্ত্রকে একত্র ব্যাখ্যা করেছেন। মন্ত্রটি শফরী ছন্দে গ্রথিত। এ সম্বন্ধে যে বিবাদ বিতর্ক উপস্থিত হয়েছে, তা সায়ণ-ভাষ্যে উল্লেখিত আছে। –তিনটি মন্ত্রই প্রার্থনামূলক; তিনটিই একসুরে বাঁধা। পরাজ্ঞান লাভের জন্য, সৎকর্ম-সাধনসামর্থ্য লাভের জন্য, মুক্তিলাভের জন্য প্রার্থনাই এ তিন মন্ত্রের মর্মার্থ। এই মন্ত্রের ব্যাখ্যায় ভাষ্য ইত্যাদির সাথে আমাদের বিশেষ কোন অনৈক্য ঘটেনি। ভগবান্ পরমধনদাতা, তিনি সর্বজ্ঞ তিনি মানুষের সৎমার্গ-প্রদর্শক ও রিপুর আক্রমণ হতে রক্ষাকারী–এই সত্যই মন্ত্রে প্রকটিত হয়েছে। সুতরাং স্বভাবতই মানুষ ভগবানের চরণে আত্মসমর্পণ করে কৃতার্থ হতে চায়–পিব পদে ঐ ভাবেরই দ্যোতনা দেখতে পাই। অন্যান্য বিষয় মন্ত্রার্থেই প্রকটিত। –মহানাম্নী-আর্চিক, ছন্দ-আর্চিক বা উত্তর-আর্চিকের মধ্যে পাওয়া যায় না। সর্বত্রই মহানাম্নী আর্চিক একটু স্বতন্ত্রভাবে ছন্দার্চিকের শেষ এবং উত্তরার্চিকের পূর্বে পরিদৃষ্ট হয়। আরণ্যগানেও এটি পরিশিষ্টভাবে প্রদত্ত হয়েছে] [এই তিনটি মন্ত্রের একটি গেয়গান আছে]।
৪/৫/৬– হে ভগবন! সর্বশক্তিসম্পন্ন আপনি প্রার্থনাকারী আমাদের পরমধন লাভের জন্য আত্মশক্তি প্রদান করুন; রক্ষাস্ত্রধারী হে দেব! যিনি পরমধনদাতা, সর্বশক্তিমান্ সেই আপনি আমাদের পরমধন দানে প্রবৃদ্ধ করুন। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে, -হে ভগবন! কৃপাপূর্বক আমাদের পরমধন প্রদান করুন)। হে আমার মন! পরমজ্যোতির্ময় যে বলৈশ্বর্যাধিপতি দেবতা ধনসম্পন্নদের পরমধনদাতা, যিনি সর্বজ্ঞ সেই দেবতাকেই আরাধনা করো। সর্বজ্ঞ হে ভগবন! আপনি আমাদের পরমধন প্রদান করুন। (মন্ত্রটি আত্ম-উদ্বোধক এবং প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে, আমি যেন ভগবৎপরায়ণ হই; ভগবান্ কৃপাপূর্বক আমাদের পরমধন প্রদান করুন)। শত্রুনাশক। দেবতাই সকলের প্রভু হন; চিরজয়ী অপ্রতিহতশক্তি সেই দেবতাকে শত্রুর কবল হতে রক্ষা পাবার জন্য আমরা যেন আরাধনা করি; সেই পরমদেবতা আমাদের রিপুদের বিনাশ করুন; আমাদের সৎকর্ম প্রার্থনা ইত্যাদি সত্যজ্ঞান মহৎ হোক। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে, –সেই ভগবান্ কৃপাপূর্বক আমাদের রিপুজয়ী করুন, আমাদের পরাজ্ঞান এবং সৎকর্ম সাধনের শক্তি প্রদান ও করুন)। [চতুর্থ মন্ত্রটি সরল প্রার্থনামূলক। প্রচলিত ব্যাখ্যাকারদের সাথেও আমাদের বিশেষ কোন অনৈক্য নেই। ভগবান্ পরমধনদাতা। তাঁর কৃপাতেই মানুষ নিজের কাম্যবস্তু লাভ করতে পারে। তা লাভ করবার জন্য ভগবানের চরণে একান্তভাবে প্রার্থনা করা প্রয়োজন। তিনি শূরাণাং শবিষ্ঠঃ। তার তুল্য শক্তিশালী আর কেউ নেই। আর থাকবেই বা কিভাবে? তার শক্তির কণা পেয়ে অন্য সকল শক্তিশালী হয়। সুতরাং শক্তির সেই আদি প্রস্রবণের সাথে শক্তির প্রতিযোগিতায় কে সমর্থ হবে? ভগবানের এই সর্বশক্তিমত্তা মন্ত্রের মধ্যে প্রখ্যাপিত হয়েছে। তার ইচ্ছায় বিশ্ব পরিচালিত হয়, সুতরাং তিনি ইচ্ছা করলেই মানুষকে পরমধনের অধিকারী করতে পারেন। সেইজন্য তার চরণে প্রার্থনা করা হয়েছে। পঞ্চম মন্ত্রটি দুভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে আছে–আত্ম-উদ্বোধন এবং দ্বিতীয় ভাগে আছে প্রার্থনা। প্রথমে সাধক নিজের হৃদয়কেই ভগবৎপরায়ণ হবার জন্য উদ্বোধিত করছেন। তাই আমরা একবচনান্ত স্তুহি পদ দেখতে পাই। তারপরেই প্রার্থনা। এই প্রার্থনায় বিশ্বজনীন ভাব পরিদৃষ্ট হয়। আত্ম-উদ্বোধনের পরেই সাধক বিশ্ববাসী সকলের জন্য প্রার্থনা করছেন। বিশ্বের সকলেই যেন পরমধনের অধিকারী হয়, কেউই যেন ভগবানের কৃপায় বঞ্চিত না হয়। তিনিই একমাত্র ধনদাতা। তারই কুবেরভাণ্ডার হতে মানুষ নিজের অভীষ্ট ধন লাভ করে। সূর্যের আলোক পেয়ে যেমন চন্দ্র ইত্যাদি গ্রহ উপগ্রহ আলোকময় হয়, তেমনি জগতে যাঁরা জ্ঞানী অথবা পরমার্থপরায়ণ তারা সেই অসীম ধনসম্পন্ন ভগবানের কৃপাতেই সেই ধনের অধিকারী হন। তাই তিনি মঘোনাং মংহিষ্টো। সেই পরম দেবতার কাছেই মহাধন লাভের জন্য প্রার্থনা পরিদৃষ্ট হয়। ষষ্ঠ মন্ত্রটি চারভাগে বিভক্ত। প্রথম ভাগে নিত্যসত্য, দ্বিতীয় ভাগে আত্ম-উদ্বোধনমূলক প্রার্থনা এবং শেষ দুটি অংশে প্রার্থনা আছে। ভগবান্ শত্রুনাশক। তার শত্রু? তিনি তো অজাতশত্রু। দুর্বল মানুষকে রিপুকবল থেকে উদ্ধার করবার জন্য তাঁকে রিপুসংগ্রামে অগ্রসর হতে হয়। তার কৃপায় মানুষের রিপুগণ পরাজিত বিধ্বস্ত হয়। মন্ত্রের প্রথম অংশে ভগবানের এই শত্রুনাশী সত্যই পরিস্ফুট হয়েছে। দ্বিতীয় অংশে সেই শনিসূদন দেবতার কাছে আত্মসমর্পণ করবার জন্য আত্ম-উদ্বোধনা আছে। আমরা যেন পাপতাপ থেকে উদ্ধার পাবার জন্য সেই পরমদেবতার কাছে আত্মসমর্পণ করি, তার চরণে যেন আমাদের কামনা-বাসনা নিবেদন করতে পারি। তিনিই মানুষের একমাত্র বন্ধু, তার কৃপাতেই মানুষ ভীষণ রিপুদের আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করতে পারে। তার গুণগানে আমরা যেন আত্মনিয়োগ করতে সমর্থ হই। এই আত্ম উদ্বোধনের পরেই আছে প্রার্থনা। –সেই মহান্ দেবতা কৃপা করে আমাদের হৃদয়ের অর্ঘ্য গ্রহণ করুন এবং আমাদের রিপুদের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমাদের হৃদয়কে তার প্রতি আকর্ষণ করুন– যেন আমরা সব কিছু পরিত্যাগ করে তারই চরণে আশ্রয় গ্রহণ করতে পারি। তার কৃপায় যেন আমরা মহৎ থেকে মহত্তর, উচ্চ থেকে উচ্চতর জীবন লাভ করতে পারি]। [এই ৪র্থ, ৫ম, ও ৬ষ্ঠ মন্ত্রের একটি গেয়গান আছে]।
৭/৮/৯– চিরজয়ী অপ্রতিহতশক্তি বলাধিপতি দেবতাকে পরমধন লাভের জন্য আমরা আরাধনা করছি; তিনি আমাদের রিপুগণকে বিনাশ করুন। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। ভাব এই যে, ভগবান্ কৃপাপূর্বক প্রার্থনাকারী আমাদের রিপুগণকে বিনাশ করুন )। রিপুনাশে পাষাণকঠোর হে দেব! আদিভূত আপনার যে জ্ঞানজ্যোতিঃ তা পরমানন্দলাভের জন্য আমাদের প্রদান করুন; সর্বশক্তিমান হে দেব! আপনার ধনদানকে সকলে প্রার্থনা করে; আমাদের পরমধন প্রদান করুন; শত্রুনাশক দেবতা হ নিশ্চিতই সকলের নিয়ন্তা হন; চিরনবীন সেই দেবতাকে আমরা যেন ভজনা করি। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে, আমরা যেন ভগবৎপরায়ণ হই; ভগবান্ আমাদের পরমধন প্রদান করুন)। সর্বলোকের স্বামী পাপনাশক হে দেব! সৎকর্ম সাধনের দ্বারা আমি যেন আপনার সাথে মিলিত হতে পারি; অদ্বিতীয় পরমশক্তিসম্পন্ন যে দেবতা জ্ঞানদানে সাধককে প্রাপ্ত হন, সেই দেবতা আমাদের পরমসুখদায়ক সখীভূত হয়ে আমাদের প্রাপ্ত হোন। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে, আমরা যেন ভগবানকে লাভ করতে পারি; তিনি কৃপাপূর্বক আমাদের প্রাপ্ত হোন)। [৭ম মন্ত্রটি পূর্ব (অর্থাৎ ষষ্ঠ) মন্ত্রেরই অনুরূপ। এই মন্ত্রে পরমধনলাভের জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে। মন্ত্রের শেষাংশে রিপুজয়ের প্রার্থনা দুবার উক্ত হয়েছে। এই পুনরুক্তি সাধক-অন্তরের ব্যাকুলতার পরিচায়ক মাত্র। ৮ম মন্ত্রটির মধ্যে প্রার্থনা, উদ্বোধন এবং নিত্যসত্য-প্রখ্যাপক–এই তিনেরই সমাবেশ ঘটেছে। ভগবানই বিশ্বের নিয়ন্তা, তার আদেশে চন্দ্র-সূর্য জ্যোতিঃ বিকীরণ করে। বায়ু মানুষের প্রাণ রক্ষা করে। তিনি অজ, নিত্য, শাশ্বত; তার আদি নেই, অন্ত নেই। তিনিই অনন্ত; তিনি চিরনবীন, তিনি চিরপুরাতন। সেই পরমদেবতার কাছেই পরমধন ও মোক্ষলাভের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। প্রথমতঃ সাধক নিজের হৃদয়কে ভগবৎপরায়ণ হবার জন্য উদ্বোধিত করছেন। এই আত্ম উদ্বোধনের পর প্রার্থনা। ভগবান্ কৃপা করে আমাদের রিপুনাশ করুন, আমাদের তার অমৃতের অধিকারী করুন। এটাই প্রার্থনার সারমর্ম। ৯ম মন্ত্রে ভগবানের সাথে মিলিত হবার জন্য ব্যাকুল প্রার্থনা পরিদৃষ্ট হয়। আমরা সৎকর্ম সাধনের দ্বারা ভগবানের চরণে পৌঁছাতে পারি। মানুষ তার কাছ থেকে এসেছে। আবার তার চরণেই বিলয় প্রাপ্ত হবে। যতদিন পর্যন্ত সে নিজের চারদিকের মোহমায়ার বেড়াজাল ছিন্ন করতে না পারে, সেই পর্যন্ত সে নিজেকে ভ্রান্তপথে চালনা করে ভগবান্ থেকে দূরে চলে যায়। মাহের উপর মোহ আসে, মায়ার বন্ধন দৃঢ়তর হয়। অজ্ঞানতার বশে সে এই পান্থনিবাসকেই নিজের চিরস্থায়ী আবাসরূপে কল্পনা করে নিজের মুক্তি সূদূর পরাহত করে তোলে। কিন্তু ভগবানের কৃপায় যখন তার হৃদয়ে চৈতন্য সঞ্চার হয়, যখন সে নিজের ভ্ৰম ক্রমশঃ বুঝতে আরম্ভ করে, তখন সেই চিরস্থায়ী আবাস-গৃহে (ঈশ্বর সন্নিধানে).যাবার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। তাই ভগবানকে ডাকে, ওগো দয়াময়! আর কতদিন এই প্রবাসে রাখবে? এবার নিজের আলয়ে ফিরিয়ে নাও, তোমার কোলে তুলে স্থান দাও। আর কতদিনে তোমার কোলছাড়া হয়ে এই বিপদসঙ্কুল পরবাস থেকে তোমার সেহনীড়ে ফিরে যাব? তা কত দিনে?–প্রতীক্ষা। দীর্ঘ প্রতীক্ষায় মানুষের চিত্ত অস্থির চঞ্চল হয়ে ওঠে। কিন্তু সেই ভব-কাণ্ডারীর কৃপালাভ না হলে তো মানুষ নিজের ইচ্ছায় তাঁর চরণে পৌঁছাতে পারে না। তাই প্রতীক্ষা! তাই এ ব্যাকুল প্রার্থনা]। [এই ৭ম, ৮ম ও ৯ম সামের একটিমাত্র গেয়গান আছে]।
১০। হে ভগবন! আমাদের হৃদয়ে আগমন করুন; হে জ্ঞানদেব! আগমন করুন; হে পরমৈশ্বর্যশালী দেবতা! আগমন করুন; হে দেবভাবসমূহ! আমাদের হৃদয়কে প্রাপ্ত হোন। (মন্ত্রটি প্রার্থনামূলক। প্রার্থনার ভাব এই যে, ভগবান্ কৃপাপূর্বক আমাদের প্রাপ্ত হোন)। [পূর্ব (অর্থাৎ ৯ম) মন্ত্রের মতো এই মন্ত্রের সাধকের আন্তরিক ব্যাকুলতা তীব্রভাবে প্রকাশিত হয়েছে। সাধক-গায়ক বিভিন্ন নামে ভগবানকে ডাকছেন। ইন্দ্র, অগ্নি, পূষণ, সর্বদেবাঃ–সকলেই এক দেবতাকে লক্ষ্য করে। এই ক্ষেত্রে ভাষ্যকারও স্বীকার করেছেন যে, এই সব বিভিন্ন নামধারী দেবতা সেই একই ইন্দ্রকে উদ্দেশ করে উচ্চারিত হয়েছে। আমাদের মতে, এই ইন্দ্র আবার সেই একমেবাদ্বিতীয় ঈশ্বরেরই প্রতীক। এখানে মা-হারা শিশুর মাকে অন্বেষণের ব্যাকুলতা সাধকের ঈশ্বরাদ্বানের সাথে একীভূত হয়ে গেছে]। [এই মন্ত্রটির একটি গেয়গান আছে]।