1 of 2

২১. বিচার ব্যবস্থা

অধ্যায় : ২১ বিচার ব্যবস্থা

ধারা-৫৪৭।

বিচারক নিয়োগের শর্তাবলী (ক) বিচারক নিয়োগের শর্তাবলী দুই ভাগে বিভক্ত- (১) অপরিহার্য শর্তাবলী;

(২) পরিপূরক শর্তাবলী।

(খ) অপরিহার্য শর্তাবলী ও বিচারককে অবশ্যই মুসলিম, বালেগ, বুদ্ধিজ্ঞান সম্পন্ন, চক্ষুষ্মন, শ্রবণশক্তি সম্পন্ন, বাকশক্তি সম্পন্ন এবং কাযাফ-এর দণ্ড হইতে মুক্ত হইতে হইবে।

(গ) পরিপূরক শর্তাবলীঃ বিচারককে মুজতাহিদ, ন্যায়পরায়ণ এবং সামাজিক প্রথা ও রসম-রেওয়াজ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল হইতে হইবে।

বিশ্লেষণ

কাযাফ-এর দণ্ড হইতে মুক্ত থাকার শর্ত ব্যতীত অন্যান্য সকল অপরিহার্য শর্তের ব্যাপারে সকল মাযহাবের ফকীহগণ একমত। অতএব কাফের, নাবালেগ, পাগল, অন্ধ, মূক ও বধির ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ করা বৈধ নহে। হানাফী মাযহাবমতে কাযাফ-এর দণ্ড ভোগকারীকেও বিচারক নিয়োগ করা বৈধ নহে। অবশ্য অন্যান্য মাযহাবমতে কাযাফ-এর দণ্ড ভোগকারী তওবা করিয়া সংশোধন হইলে তাহাকে বিচারক নিয়োগ করা যাইতে পারে।

যাহার মধ্যে অপরিহার্য শর্তাবলীসহ পরিপূরক বা সহায়ক শর্তাবলীও বিদ্যমান পাওয়া যাইবে সে বিচারকের পদে নিয়োগলাভে অগ্রাধিকার পাইবে এবং সর্বদিক হইতে যোগ্য প্রার্থী বিবেচিত হইবে। মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বালী মাযহাবমতে বিচারককে অবশ্যই ন্যায়পরায়ণ (আদিল) হইতে হইবে। ইহা একটি অপরিহার্য শর্ত। অতএব যে ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ নহে সে বিচারক হওয়ার অযোগ্য। কিন্তু হানাফী মাযহাবমতে ন্যায়পরায়ণ হওয়া বিচারকের অপরিহার্য

২১২

শর্ত না হইলেও, অবশ্যই সহায়ক বা পরিপূরক শর্ত। তাই যে ব্যক্তি ন্যায়পরায়ণ নহে তাহাকে বিচারক নিয়োগ করা বৈধ এবং তাহার প্রদত্ত রায় কার্যকর হইলেও তাহাকে বিচারক নিয়োগ না করাই শ্রেয় এবং ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাহার নিয়োগ অবৈধ।

অনুরূপভাবে মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে এবং কোন কোন হানাফী ফকীহর মতে বিচারককে অবশ্যই ইজতিহাদ করার যোগ্যতা সম্পন্ন আলেম হইতে হইবে। অতএব উপরোক্ত মাযহাবের ইমামগণের মতে ইজতিহাদ করার যোগ্য নহে এইরূপ ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ করা বৈধ নহে। কিন্তু হানাফী মাযহাবের গৃহীত মতানুসারে ইজতিহাদ করার যোগ্যতা সম্পন্ন হওয়া বিচারকের অপরিহার্য শর্ত না হইলেও পরিপূরক শর্ত। ইজতিহাদ করার যোগ্যতা সম্পন্ন ব্যক্তির উপস্থিতিতে তাহাকে বিচারক নিয়োগ না করাই শ্রেয়। অতএব বিচারক মুজতাহিদ পর্যায়ের আলেম না হইলেও তাহাকে ফিক্‌হের গ্রন্থাবলীতে বিধৃত আইন-কানূন বুঝিবার মত এবং তদনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের যোগ্য অবশ্যই হইতে হইবে।

বিচারক হওয়ার জন্য আরও কিছু পরিপূরক শর্ত রহিয়াছে। যেমন আইনের সহিত সম্পর্কিত প্রচলিত প্রথা, ঐতিহ্য ও রসম-রেওয়াজ সম্পর্কেও তাহাকে অবহিত থাকিতে হইবে। তাহার ভিতর ও বাহির লোভ-লালসা হইতে মুক্ত হওয়া বাঞ্ছনীয়। মানুষের মধ্যে ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নামই বিচার। অতএব বিচারক উপরোক্ত গুণাবলীতে ভূষিত হইলে তাহার ফয়সালাও ন্যায়-ইনসাফ ভিত্তিক হওয়ার আশা করা যায়।২.

ধারা-৫৪৮

বিচারকের বেতন-ভাতা (ক) বিচারক তাহার পর্যাপ্ত বেতন-ভাতা এবং তাহার পরিবারের ভরণপোষণ বায়তুলমাল হইতে লাভ করিবেন।

(খ) বিচারকার্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মচারী নিয়োগ করা হইলে তাহাদের বেতন-ভাতাও বায়তুলমাল হইতে প্রদান করা হইবে।

বিশ্লেষণ

মহানবী (স) বলিয়াছেন, আমরা কোন ব্যক্তিকে সরকারী কর্মে নিয়োগ করিলে তাহার বাসস্থান না থাকিলে আমরা উহার ব্যবস্থা করিয়া দিব, তাহার

২১৩

খাদেম না থাকিলে আমরা উহার ব্যবস্থা করিয়া দিব, তাহার স্ত্রী না থাকিলে আমরা তাহার বিবাহের ব্যবস্থা করিয়া দিব। মহানবী (স) তাহার জীবদ্দশায় ইসলামী রাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় যাহাদেরকে কর্মচারী নিয়োগ করিয়াছেন তাহাদের বেতন-ভাতা প্রদান করিয়াছেন। তাহার পরে চারি খলীফার যুগেও এই প্রথা বহাল ছিল, এমনকি খলীফাগণও প্রয়োজনবােধে বেতন-ভাতা গ্রহণ করিয়াছেন।

ফকীহগণ বলিয়াছেন, বিচারক যদি স্বচ্ছল হন এবং বাইতুল মাল হইতে বেতন-ভাতা গ্রহণ না করিলে চলে তবে তাহার উহা গ্রহণ না করাই উত্তম। অবশ্য তাহার জন্য এবং তাহার কর্মচারীদের জন্য যে কোন অবস্থায় বেতন-ভাতা গ্রহণ বৈধ। ছুটির দিনের বেতন গ্রহণ করাও বৈধ। বেতন গ্রহণ করিলেও তাহার কাজ বেতনের বিনিময় হিসাবে গণ্য হইবে না, বরং আল্লাহর সন্তোষ লাভের আশায়ই তিনি কাজ করিতেছেন বলিয়া গণ্য হইবে। বিচারক তাহার পরিবার-পরিজনের ভরণপোষণও বায়তুল মাল হইতে পাইবেন, এমনকি তাহার এখানে আসিয়া কেহ মারা গেলে তাহার কাফন-দাফনের খরচও তিনি বায়তুল মাল হইতে পাইবেন।

ধারা-৫৪৯

বিচারকের প্রতিনিধি নিয়োগ বিচারকার্য পরিচালনার জন্য সরকারের অনুমোদন ব্যতীত বিচারক তাহার প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে পারিবেন না।

বিশ্লেষণ

বিচারক মূলত সরকারের একজন প্রতিনিধি। অতএব সরকার যে কাজের জন্য তাহাকে প্রতিনিধি নিয়োগ করিয়াছে সেই কাজ পরিচালনার জন্য তিনি তাহার প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে পারেন না।

ধারা-৫৫০ যালেম ও বিদ্রোহীর অধীনে বিচারকের পদ গ্রহণ (ক) যালেম শাসকের অধীনে বিচারকের পদ গ্রহণ করা বৈধ, যতক্ষণ ইনসাফ সহকারে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব।

২১৪

(খ) যে এলাকায় সরকার বিদ্রোহীদের নিকট ক্ষমতা হারায় সেই এলাকায়ও বিচারকের পদ গ্রহণ করা বৈধ।

ব্যাখ্যা বিদ্রোহী : মুসলমানদের সংখ্যাগরিষ্ঠের সমর্থনে নিয়োজিত সরকারকে যাহারা অন্যায়ভাবে উৎখাত করিয়া শাসনক্ষমতা দখল করিতে তৎপর হয় তাহাদেরকে বিদ্রোহী বলে।

বিশ্লেষণ

যালেম শাসকের অধীনে আইনানুগভাবে বিচারকার্য পরিচালনা ও রায় প্রদান সম্ভব হইলে তাহার অধীনে বিচারকের পদ গ্রহণ করা যাইবে। যথার্থ রায় প্রদান করা সম্ভবপর না হইলে বা যালেম শাসক বিচারকার্যে হস্তক্ষেপ করিলে বা কোন কোন বিধান যথাযথভাবে কার্যকর করিতে বাধা প্রদান করিলে বিচারকের পদ গ্রহণ করা উচিৎ নহে। তবে শাসক মুসলমান না হইলেও তাহার অধীনে বিচারকের পদ গ্রহণ করা যাইতে পারে।

বিদ্রোহীরা যদি কোন জনপদ দখল করিয়া নেয় তবে তথায় তাহাদের অধীনে বিচারকের পদ গ্রহণ করাও বৈধ। অতঃপর বৈধ শাসক উক্ত জনপদ বিদ্রোহীমুক্ত করার পর যদি দেখা যায় যে, বিদ্রোহী কর্তৃক নিয়োজিত বিচারকের রায় আইনানুগ হইয়াছে তবে তাহা বহাল থাকিবে। বিদ্রোহী কর্তৃক কোন জনপদ অধিকৃত হইলে শাসক কর্তৃক নিয়োগকৃত তথাকার বিচারক সরাসরি বরখাস্ত হইবেন না, বরং এলাকা বিদ্রোহমুক্ত হওয়ার পর তিনি আপনা আপনি স্বপদে বহাল হইবেন।

ধারা-৫৫১ নিয়োগকর্তার পক্ষে বা বিপক্ষে বিচারকের রায়

(ক) বিচারক কোন মোকদ্দমায় সরকার অথবা রাষ্ট্রপ্রধানের পক্ষে অথবা বিপক্ষে রায় প্রদান করিলে তাহা কার্যকর হইবে।

(খ) সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধান বাদী বা বিবাদী হইলে আদালতের সাধারণ

২১৫

নিয়মানুযায়ী বাদী ও বিবাদী একই সমতলে বসিবেন।

বিশ্লেষণ

নাগরিকের বিরুদ্ধে সরকারের, রাষ্ট্রপ্রধানের, সরকার প্রধানের বা পদস্থ কোন সরকারী কর্মকর্তার অথবা তাহাদের বিরুদ্ধে নাগরিকের মোকদ্দমায় বিচারক আইনানুগভাবে যে রায় প্রদান করিবেন তাহা কার্যকর হইবে। খলীফা হযরত উমার ও সাহাবী উবাই ইবন কাব (রা)-র বাদী ও বিবাদী হইয়া আদালতে উপস্থিত হওয়ার ঘটনা এবং তাহাদের উভয়ের বিচারকের সামনে একই সমতলে উপবেশনের ঘটনা ইতিপূর্বে উল্লেখ করা হইয়াছে। আব্বাসী খলীফা হারুনুর রশীদের বিরুদ্ধে এক ইহুদী নাগরিক কাযী আবু ইউসুফ (র)-এর আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করিলে তিনি উহার শুনানীশেষে রায় প্রদান করেন। ইহা একটি অত্যন্ত প্রসিদ্ধ ঘটনা। আলী (রা) তাঁহার খিলাফতকালে শুরায়হ (র)-কে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করেন এবং এক ইহুদী নাগরিকের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করেন। আলী (র) যথার্থ সাক্ষ্য উপস্থিত করিতে না পারায় শুরায়হ (র) মোকদ্দমাটি খারিজ করিয়া দেন।৬

ধারা--৫৫২

বিচারকের স্বীয় মোকদ্দমা

বিচারক তাহার নিজের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট, তাহার নিকট হউক অথবা দূরে হউক, কোন মোকদ্দমা বিচার করিতে পারিবেন নাঃ

তবে শর্ত থাকে যে, তিনি যে কোন সাধারণ নাগরিকের মত তাহার দাবি প্রতিষ্ঠা অথবা অভিযোগের প্রতিকারের জন্য বাদী হইয়া আদালতে মোকদ্দমা করিতে পারিবেন বা বিবাদী হইলে বাদীর বিরুদ্ধে মোকদ্দমা চালাইতে পারিবেন;

আরও শর্ত থাকে যে, বিষয়টি সরকারী স্বার্থ বা বিচারকের কর্তব্যের সহিত সংশ্লিষ্ট হইলে মোকদ্দমা দায়ের করিতে সরকারের অনুমতি লাগিবে।

২১৬

,

বিশ্লেষণ

বিচারের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ দিক হইল নিরপেক্ষতা বজায় রাখিয়া যথাসাধ্য সঠিক রায় প্রদান করা। তাই ইসলামী আইনে বিচারককে তাহার মোকদ্দমা সরকারের অনুমতি লইয়া ভিন্ন আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে।৭

ধারা--৫৫৩

ফাসিক ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ (ক), ফাসিক ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ বৈধ হইলেও এবং তৎকর্তৃক প্রদত্ত রায় কার্যকর হইলেও তাহাকে বিচারক নিয়োগ না করাই শ্রেয়।

(খ) কোন ব্যক্তি বিচারক নিয়োজিত হওয়ার পর ফাসিক হইয়া গেলে এবং ফাসিক হওয়ার সংগে সংগে বরখাস্ত হওয়ার শর্ত না থাকিলে, সরকার তাহাকে করখাস্ত না করা পর্যন্ত সে স্বপদে বহাল থাকিবে এবং তাহার প্রদত্ত রায় কার্যকর হইবে।

ব্যাখ্যা ফাসিকঃ শরীআতের অবশ্য পালনীয় বিধান লংঘনকারীকে “ফাসিক” বলে। যেমন ঘুষ গ্রহণ, শবপান, যেনায় লিপ্ত হওয়া, ফরয নামায ত্যাগ করা ইত্যাদি ৮ি

বিশ্লেষণ

ফাসিক ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ বৈধ এবং তাহার রায় কার্যকর হইবে যতক্ষণ না সে ইসলামী শরীআতের নির্ধারিত সীমা লংঘন করে। অবশ্য তাহাকে বিচারক নিয়োগ না করাই শ্রেয়। ইমাম শাফিঈ, মালেক ও আহমাদ ইবন হাম্বল (র)-এর মতে ফাসিক ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ বৈধ নহে এবং তাহার প্রদত্ত রায় কার্যকর হইবে না। কারণ তাঁহাদের মতে ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে। আর যাহার সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নহে সে বিচারক হওয়ারও যোগ্য নহে।

হানাফী মাযহাবমতে ফাসিক ব্যক্তির সাক্ষ্য যেহেতু গ্রহণযোগ্য, তাই

২১৭

তাহাকে বিচারক নিয়োগও বৈধ। তবে তাহাকে বিচারক নিয়োগ না করাই উচি ৎ। কারণ বিচারকের পদ একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও মর্যাদাপূর্ণ আমানতদারের পদ, মানুষের জান-মালের আমানত তাহার উপর ন্যস্ত। অতএব বিশ্বস্ত ও দীনদার লোকই এই পদের যোগ্য। কোন ব্যক্তি বিচারক নিয়োজিত হওয়ার পর ফাসেকী কার্যে লিপ্ত হইলে সে বরখাস্তযোগ্য হইবে এবং তাহাকে অপসারণ করা সরকারের কর্তব্য। অবশ্য সরকার তাহাকে যতক্ষণ অপসারণ না করিবে ততক্ষণ সে স্বপদে বহাল থাকিবে এবং এই অবস্থায় তাহার প্রদত্ত রায় কার্যকর হইবে। তবে নিয়োগপত্রে ফাসেকী কার্যে লিপ্ত হইলে বরখাস্ত হওয়ার শর্ত থাকিলে উক্ত কর্মে লিপ্ত হওয়ার পর সে আপনা আপনি বরখাস্ত হইয়া যাইবে।৯

ধারা--৫৫৪

স্ত্রীলোককে বিচারক নিয়োগ হদ-এর আওতা বহির্ভূত সকল ক্ষেত্রে স্ত্রীলোেককে বিচারক নিয়োগ করা বৈধ।

বিশ্লেষণ

হানাফী মাযহাবমতে দেওয়ানী বিষয়ে স্ত্রীলোককে বিচারক নিয়োগ করা যাইতে পারে। কিন্তু হদ্দের আওতায় স্ত্রীলোককে বিচারক নিয়োগ করা যাইবে না। ইমাম ইব্‌ন জারীর তাবারী (র) বলেন, “সাধারণভাবে সর্বক্ষেত্রে স্ত্রীলোককে বিচারক নিয়োগ করা বৈধ। স্ত্রীলোকের আইনত মুফতী হওয়ায় যেমন কোন বাধা নেই, তদ্রূপ তাহার বিচারক হওয়ার ব্যাপারেও কোন বাধা নাই।” তবে মালিকী, শাফিঈ ও হাম্বলী মাযহাবমতে স্ত্রীলোককে বিচারক নিয়োগ বৈধ নহে।১০

ধারা –৫৫৫

বিচারক নিয়োগ বাধ্যতামূলক বিবদমান বিষয়ের মীমাংসা করিবার জন্য ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক নিয়োগ করা সরকারের জন্য বাধ্যতামূলক।

২১৮

বিশ্লেষণ

জনসাধারণের মধ্যকার বিবাদ-বিসম্বাদের মীমাংসার জন্য বিচারক নিয়োগ করা সরকারের একটি ফরয কর্তব্য। আইনকে বলবৎ ও কার্যকর রাখার লক্ষ্য হইল দুষ্টের দমন ও শিষ্টের পালন। বিচার বিভাগই আইনের সঠিক প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন নির্দেশ করিয়া থাকে। তাই জুলুমের অবসান করিয়া ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য বিচারক নিয়োগ করা সরকারের কর্তব্য। মহান আল্লাহ হযরত দাউদ (আ)-কে সম্বােধন করিয়া বলেনঃ

ياذا انا جنك خليفة في الأرض فاحكم بين الناس بالحق .

“হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করিয়াছি, অতএব তুমি জনগণের মধ্যে সুবিচার কর”- (সূরা সাদঃ ২৬)।

মহানবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (স)-কে সম্বােধন করিয়া মহান আল্লাহ বলেনঃ

فاحم بينهم بما أنزل الله .

“অতএব আল্লাহ যাহা নাযিল করিয়াছেন তদনুসারে তুমি তাহাদের বিচার, নিষ্পত্তি করিও” –(সূরা মাইদাঃ ৪৮)।

إنا أنزلنا اليك الكتب بالحق لتحم بين

الناس بما أراك الله .

“আমি তোমার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করিয়াছি যাহাতে তুমি আল্লাহ তোমাকে যাহা অবগত করাইয়াছেন তদনুসারে জনগণের মধ্যে বিচার নিষ্পত্তি করিতে পার” -(সূরা নিসাঃ ১০৫)।

অতএব বিচারকের পদের দায়িত্ব হইল জনগণের মধ্যে ন্যায়ানুগভাবে আল্লাহর বিধান মোতাবেক বিচার নিষ্পত্তি করা। বিচারক নিয়োগের উদ্দেশ্য যেহেতু একটি ফরয প্রতিষ্ঠা করা এবং সেইজন্য বিচারক নিয়োগও নিসন্দেহে

২১৯

একটি ফরয কর্তব্য। তাহা ছাড়া মহানবী (স) দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাহার সাহাবীগণকে বিচারক নিয়োগ করিয়া প্রেরণ করিয়াছেন। তিনি মুআয ইবন জাবাল (রা)-কে ইয়ামনের এবং আত্তাব ইবন উসাইদ (রা)-কে মক্কার বিচারক নিয়োগ করিয়াছিলেন। ইহার দ্বারা প্রমাণিত হইল যে, বিচারক নিয়োগ সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের একটি অন্যতম ফরয কর্তব্য।

ধারা--৫৫৬

বিচারকের পদ গ্রহণ যোগ্য ব্যক্তিকে বিচারক নিয়োগ করা হইলে তাহার সেই পদ গ্রহণ করা কর্তব্য।

বিশ্লেষণ

যে ব্যক্তি বিচারকার্য পরিচালনায় দক্ষ তাহাকে বিচারকের পদ প্রদান করা হইলে তাহা গ্রহণ করা তাহার কর্তব্য। কারণ তাহার অস্বীকৃতির কারণে উক্ত পদে অযোগ্য ব্যক্তি সমাসীন হইলে বিচারকার্য বিঘ্নিত হইতে এবং ইহার ফলে ইনসাফ প্রতিষ্ঠায় ব্যত্যয় ঘটিতে পারে। মহানবী (স) বিচারকার্য পরিচালনা করিয়াছেন এবং তাহার সাহাবীগণও বিচারকের পদ গ্রহণ করিয়াছেন। আল্লাহ তাআলা যোগ্য ও সৎ বিচারকের সহায় হন। মহানবী (স) বলেনঃ

اذ اجتهد الحاكم فأصاب فله أجران و اذا اجتهد فاخط فله أجر.

“বিচারক ইজতিহাদ করিয়া সত্যে উপনীত হইলে তাহার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব এবং সে ইজতিহাদ করিতে গিয়া ভুল করিলে তাহার জন্য এক গুণ সওয়াব”। অপর বর্ণনায় আছে, “তাহার জন্য দশ গুণ সওয়াব”।১২

اذا جلس الحاكم للحكم بعث الله له ملگن پس دانه و يوفقانه فان عدل أقاما وان جار رجا

.:, 

২২০

“বিচারক যখন বিচার নিষ্পত্তির জন্য বসেন তখন আল্লাহ তাআলা তাহার নিকট দুইজন ফেরেশতাকে পাঠাইয়া দেন। তাহারা তাহাকে সৎপথ দেখান এবং যথার্থ বিষয় নির্দেশ করেন। তিনি ন্যায়বিচার করিলে তাহারা তাহার সহিত অবস্থান করেন এবং অন্যায় করিলে তাহার প্রতিবাদ করেন এবং তাহাকে ত্যাগ

করেন।”১৩

আবদুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বলেনঃ

لأن أجلس قاضيا بين اثنين أحب الى من عبادة

سبعين سنة.

“বিবদমান পক্ষদ্বয়ের মধ্যে বিচারক হইয়া বসা আমার নিকট সত্তর বৎসরের ইবাদতের চেয়ে প্রিয়।”১৪

কিন্তু অযোগ্য ব্যক্তির বিচারকের পদ গ্রহণ করা উচিৎ নহে। মহানবী (স) বলেনঃ

القضاة ثلاث واحد في الجنة و إثنان في النار فأما الذي في الجنة فرجل عرف الحق فقضى

به ورجل عرف الحق و جار في الحكم هو في الار و رجل قضى للناس على جهل فهو في

. JT “বিচারক তিন রকমের, একজন জান্নাতে এবং দুইজন দোযখে যাইবে। যে ব্যক্তি সত্যকে উপলব্ধি করিয়া তদনুযায়ী রায় প্রদান করিয়াছে সে জান্নাতে যাইবে। যে ব্যক্তি সত্যকে উপলব্ধি করা সত্ত্বেও তাহা উপেক্ষা করিয়া অন্যায় রায় প্রদান করিয়াছে সে দোযখে যাইবে। যে ব্যক্তি অজ্ঞতা প্রসূত রায় প্রদান করিয়াছে সেও

দোযখী। ১৫

ধারা--৫৫৭

বিচারকের আচরণ বিচারক–(ক) মোকদ্দমার বিবরণ শান্ত মেজাযে ও গভীর মনোনিবেশ সহকারে শ্রবণ করিবেন;

(খ) বাদী ও বিবাদীকে ডানে-বামে না বসাইয়া সম্মুখে বসাইবেন; (গ) বাদী ও বিবাদী কোন পক্ষের সহিত পক্ষপাতমূলক আচরণ করিবেন, যাহাতে অপর পক্ষের সন্দেহ হইতে পারে;

(ঘ) সাক্ষীগণের সহিত এমন আচরণ করিবেন না যাহাতে তাহারা ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া যথার্থ সাক্ষ্য প্রদানে অক্ষম হইয়া পড়িতে পারে;

(ঙ) বাদী-বিবাদী কোন পক্ষকে ভীত-সন্ত্রস্ত করিবেন না;

(চ) আদালতে প্রবেশ করিয়া আসন গ্রহণের পূর্বে বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষকে সালাম দিবেন;

(ছ) উত্তম পোশাকে সজ্জিত হইয়া আদালতে উপস্থিত হইবেন; . (জ) প্রবৃত্তির বশবর্তী হইয়া, কোন পক্ষ কর্তৃক প্রভাবিত অথবা ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া অথবা অন্যের আকাঙক্ষা মোতাবেক মোকদ্দমার রায় প্রদান করিবেন না;

(ঝ) মোকদ্দমার রায় ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত তাহা একান্তভাবে গোপন রাখিবেন;

() আদালতে বিচারকার্যের সহিত সংশ্লিষ্ট কার্য ব্যতীত অন্য কোন কার্য করিবেন না;

(ট) কর্কষভাষী, নিষ্ঠুর বা উৎপীড়ক হইবেন না; (ঠ) ক্রোধান্বিত অবস্থায়, ক্ষুধার্ত অবস্থায়, ঘুমের আবেশ জড়িত অবস্থায়, তীব্র শীত বা প্রচণ্ড গরম অনুভূত হওয়া অবস্থায় অথবা ব্যক্তিগত কারণে অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় বিচারকার্য পরিচালনা করিবেন না;

(ড) যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তমনে ও বিনিষ্ট চিত্তে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব ততক্ষণ বিচারকার্য করিবেন এবং বিরক্তি বা শ্রান্তিবােধ হইলে বিচারকার্য মুলতবী করিবেন;

(ঢ) রায় প্রদানের জন্য নির্ধারিত দিবসে নফল রোযা রাখিবেন না; (ণ) স্বীয় আত্মীয়-স্বজন পরস্পরের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করিলে

২২২

তাড়াহুড়া না করিয়া তাহাদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনের চেষ্টা করিবেন;

(ত) যে আদালতে বিচারকার্য অনুষ্ঠিত হইয়াছে সেই আদালতে রায় প্রদান করিবেন;

(থ) ব্যবসা-বাণিজ্যে লিপ্ত হইতে পারিবেন না;

(দ) স্ব-আত্মীয়, প্রতিবেশী ও অন্তরঙ্গ বন্ধু ব্যতীত অপর কাহারও নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিবেন না;

(ধ) স্ব-আত্মীয় ব্যতীত অপর কাহারও নিকট হইতে উপহার বা উপঢৌকন গ্রহণ করিবেন না;

(ন) জানাযায় শরীক হইতে এবং রুগ্নকে দেখিতে যাইতে পারিবেন, কিন্তু তথায় বেশীক্ষণ অবস্থান করিবেন না; রুগ্ন ব্যক্তি বাদী বা বিবাদী হইলে তাহাকে দেখিতে যাইবেন না;

(প) বাদী অথবা বিবাদীর আহার্যের দাওয়াত গ্রহণ করিবেন না। (ফ) একনিষ্ঠভাবে শরীআতের অনুসরণ করিবেন;

(ব) জ্ঞান-গরিমা, ব্যক্তিত্ব, যোগ্যতা ও সততার প্রতীক হইবেন যাহাতে লোকেরা তাহার প্রতি আস্থাশীল হইতে পারে;

(ভ) জনগণের সহিত নিজেও সদ্ব্যবহার করিবেন এবং নিজ কর্মচারীগণকেও সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিবেন।

বিশ্লেষণ

একজন বিচারককে যেসব বিষয়ের অনুসরণ করিতে বা যাহা মানিয়া চলিতে হয় তাহার সংখ্যা অনেক। হযরত উমার ফারূক (রা) হযরত আবু মূসা আল-আশআরী (রা)-কে যে দীর্ঘ পত্র লিখেন সেই পত্রখানিই উহাদের ভিত্তি। পত্রখানি হুবহু বাদাইউস সানাই গ্রন্থের ৭ম খণ্ডের ৯ নং পৃষ্ঠায় উল্লেখিত আছে। এখানে তাহার অনুবাদ প্রদত্ত হইল।

হযরত উমার (রা)-র পত্র

আল্লাহর প্রশংসা ও রাসূলুল্লাহ (স)-এর প্রতি সালাত ও সালামের পর। বিচারকার্য একটি অতীব গুরুত্বপূর্ণ ফরজ এবং মহানবী (স)-এর বর্জন অযোগ্য সুন্নাত। আপনার সম্মুখে মীমাংসার জন্য কোন বিষয় পেশ করা হইলে প্রথমে

২২৩

তাহা উত্তমরূপে হৃদয়ংগম করার চেষ্টা করিবেন। যে দাবি কার্যকর করা যাইবে না তাহার সম্পর্কে কথা বলিয়া কি লাভ (অর্থাৎ বাদীর দাবি যথার্থ হইলেও বিচারক যদি তাহা যথার্থরূপে অনুধাবন করিয়া ফয়সালা না করেন তাহা হইলে বাদীর দাবি কোন উপকারে আসিবে না)। লোকদিগকে (বাদী ও বিবাদীকে) সমান দৃষ্টিতে দেখিবেন, নিজের মজলিসে সমান গুরুত্ব দিবেন এবং তাহাদের প্রতি ন্যায়বিচার করিবেন, যাহাতে কোন প্রভাবশালী ও শক্তিধর ব্যক্তি তাহার প্রতিপক্ষের প্রতি জোর-জুলুম করার বাসনাও করিতে সাহস না পায় এবং কোন দুর্বল ব্যক্তি আপনার নিকট ন্যায়বিচার প্রাপ্তির ব্যাপারে নিরাশ না হয়। অপর বর্ণনায় আছে, দুর্বল ব্যক্তি যেন আপনার জুলুমের ভয় না করে। যে ব্যক্তি দাবি পেশ করিবে তাহা প্রমাণের দায়িত্ব তাহার এবং যে ব্যক্তি দাবি প্রত্যাখ্যান করিবে তাহার দায়িত্ব শপথ করা। মুসলমানদের মধ্যে আপোস-মীমাংসা ও সন্ধি স্থাপন করা বৈধ, কিন্তু যে সন্ধির দ্বারা হারামকে হালালে বা হালালকে হারামে পরিণত করা হয় তাহা বৈধ নহে। আপনি গতকাল যে ফয়সালা করিয়াছেন (তাহার ভুল ধরা পড়িলে) তাহা নিজের যথার্থ বুদ্ধিমত্তার দ্বারা পরিবর্তন করিয়া সঠিক রায় প্রদান করিতে বিলম্ব করিবেন না। কারণ সত্য সুপ্রতিষ্ঠিত ও চিরন্তন, কেহ উহা বিলোপ করিতে পারিবে না। সত্যের দিকে প্রত্যাবর্তন করা বাতিলের উপর অনড় থাকার তুলনায় শ্রেয়। যে বিষয়ে আপনি সন্দিহান এবং কুরআন ও হাদীসেও উহার উল্লেখ নাই সেই বিষয় সম্পর্কে চিন্তা করুন, আবারও চিন্তা করুন। উহার সাদৃশ্য ও নজির (Precedents)-এর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করুন, অতপর প্রজ্ঞার ব্যবহার করুন এবং এই ক্ষেত্রে যেইরূপ সিদ্ধান্ত আল্লাহর নিকট অধিক পছন্দনীয় ও সত্যের সহিত অধিক সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হইবে তাহা গ্রহণ করুন। বিবাদীকে (যদি সে বাদীর দাবি প্রত্যাখ্যানের সপক্ষে প্রমাণ পেশ করিতে চাহে তবে কিছু সময় অবকাশ দিন। সে প্রমাণ পেশ করিতে পারিলে তাহার অধিকার সে পাইবে (অর্থাৎ তাহার অনুকূলে রায় প্রদান করুন), অন্যথায় তাহার বিরুদ্ধে রায় প্রদান অপরিহার্য। অপর বর্ণনায় আছে যে, সে প্রমাণ পেশ করিতে অপারগ হইলে তাহার বিরুদ্ধে রায় প্রদান বৈধ। ইহার পর আর কোন ওজর-আপত্তি চলিবে না এবং বিষয়টি সম্পূর্ণ স্পষ্ট হইয়া যাইবে। সকল মুসলমান সাক্ষী হওয়ার যোগ্য, কিন্তু যেই ব্যক্তি যেনার মিথ্যা অপবাদ (কাফ)

২২৪”

আরোপের দরুন শাস্তি ভোগ করিয়াছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক বিদ্যমান থাকার কারণে যাহার সাক্ষ্যে পক্ষপাতিত্বের আশংকা আছে এবং যেই ব্যক্তি ইতিপূর্বে মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছে তাহারা ব্যতীত। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা আপনাকে একটি ভেদ বা ভেদসমূহের তত্ত্বাবধায়ক বানাইয়াছেন (ভেদ বলিতে এখানে সাক্ষীগণকে বুঝানো হইয়াছে) এবং সাক্ষীর দ্বারা অপবাদমুক্ত করিয়াছেন। আপনি আদালতে ক্রোধ, অস্থিরতা, সংকীর্ণতা এবং মোকদ্দমার পক্ষদ্বয়ের সহিত রুষ্ট ব্যবহার পরিহার করিবেন। কারণ ইহা ন্যায়-ইনসাফ প্রতিষ্ঠার স্থান এবং ন্যায়-ইনসাফ করার কারণে আল্লাহ তাআলার নিকট সওয়াব ও প্রতিদান প্রাপ্য হয় এবং আমলনামায় উত্তম পুঁজি সঞ্চিত হয়, যদি বিচারক আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিষ্ঠার সহিত ন্যায়বিচার কায়েম করেন। আর যেই বিচারক তোক দেখানোর জন্য কৃত্রিমতার আশ্রয় গ্রহণ করিবে, অথচ আল্লাহ প্রকৃত সত্য সম্পর্কে জ্ঞাত, তাহাকে আল্লাহ তাআলা অপমাণিত করিবেন। কারণ একনিষ্ঠভাবে আল্লাহ তাআলার জন্য ইবাদত করা না হইলে তিনি তাহা কবুল করেন না। অতএব আল্লাহ তাআলার রহমতের ভাণ্ডার হইতে প্রতিদানস্বরূপ অচিরেই যাহা কিছু পাওয়া যাইবে সেই সম্পর্কে আপনি কি ধারণা করেন? ওয়াসসালাম।১৬।

বিচারক মোকদ্দমার বিবরণ গভীর মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করিবেন এবং তাহা হৃদয়ংগম করার যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন, যাহাতে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হইতে পারেন। যেমন উমার ফারূক (রা) তাহার পত্রে বলিয়াছেন, “আপনার নিকট কোন বিবাদ মীমাংসার জন্য পেশ করা হইলে তাহা উত্তমরূপে হৃদয়গম করার চেষ্টা করুন।” একথা সত্য যে, বিচারক যদি বিবদমান পক্ষদ্বয়ের বক্তব্য অনুধাবন করিতে না পারেন তাহা হইলে তাহার পক্ষে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া সম্ভব নহে। আর সত্য তো কোন এক পক্ষের বক্তব্যের মধ্যেই নিহিত আছে।

বিচারক বাদী ও বিবাদীর সহিত সমতাপূর্ণ আচরণ করিবেন। তিনি উভয় পক্ষকে তাহার সম্মুখে উপবেশন করাইবেন। এক পক্ষকে ডান পার্শ্বে এবং অপর পক্ষকে বাম পার্শ্বে বসাইবেন না। কারণ শরীআতে ডান ও বাম পার্শ্বের মর্যাদায় তফাৎ আছে। উমার ফারূক (রা) তাঁহার খিলাফতকালে তিনি ও উবাই ইবন

২২৫

কাব (রা) বাদী ও বিবাদী হিসাবে যায়দ (রা)-র আদালতে উপস্থিত হইলে যায়দ (রা) উমার (রা)-কে বসিবার জন্য একখানা কেদারা পাতিয়া দেন। উমার (রা) সংগে সংগে প্রতিবাদ করিয়া যায়েদ (রা)-কে বলিলেন, ইহা আপনার প্রথম অন্যায়। অতঃপর তিনি বিচারকের সম্মুখে বসিয়া পড়িলেন।

বিচারক সাক্ষীগণের সহিত এমন ব্যবহার করিবেন না যাহাতে তাহারা ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া পড়িতে পারে। এই অবস্থায় তাহারা যথার্থরূপে সাক্ষ্য প্রদান করিতে অপারগ হইয়া পড়িবে। ফলে আদালতের সামনে সত্য অনুদঘাটিত থাকিয়া যাইবে। অনুরূপভাবে তিনি বাদী বা বিবাদী কোন পক্ষের সহিত এমন আচরণ করিবেন না যাহার ফলে তাহার সততা ও নিরপেক্ষতা সম্পর্কে প্রশ্ন উঠিতে পারে।

তিনি উত্তম পোশাকে সজ্জিত হইয়া আদালতে উপস্থিত হইবেন এবং আসন গ্রহণের পূর্বে বাদী ও বিবাদী উভয় পক্ষকে সালাম করিবেন। কারণ সালাম দেওয়া ইসলামের শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত। তবে তিনি এক পক্ষকে এড়াইয়া অপর পক্ষকে সালাম করিবেন না। কাযী শুরায়হ (র) মোকদ্দমার পক্ষদ্বয়কে সালাম করিতেন।

বিচারক স্বীয় প্রবৃত্তির বশবর্তী হইয়া বা কোন পক্ষ কর্তৃক প্রভাবিত হইয়া বা ভীত-সন্ত্রস্ত হইয়া মোকদ্দমার রায় প্রদান করিবেন না। তাহাকে সত্যাশ্রয়ী, নির্ভীক ও নিরপেক্ষ হইতে হইবে। অনুরূপভাবে তিনি হইবেন বিনয়ী, ভদ্র ও মিষ্টভাষী। কর্কষভাষী, পাষাণ হৃদয় ও নিষ্ঠুর হওয়া তাহার জন্য শোভনীয়

নহে।

বিচারক আদালতে এমন কোন কর্ম করিবেন না যাহা বিচারকার্যের সহিত সংশ্লিষ্ট নহে। যেমন ব্যক্তিগত পত্র লেখা, বন্ধু-বান্ধবকে সাক্ষাত প্রদান ইত্যাদি। তিনি মোকদ্দমার রায় ঘোষণার পূর্ব পর্যন্ত তাহা গোপন রাখার যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন। কারণ রায়ের বিষয় ফাস হইয়া গেলে তাহাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা চলিতে পারে। অনুরূপভাবে তিনি শান্তশিষ্ট মেজাজে মোকদ্দমা পরিচালনা করিবেন এবং রায় প্রদান করিবেন। তাহার মধ্যে ক্রোধ জাগ্রত হইলে, তাহার ক্ষুধা বা ঘুম পাইলে, কোন কারণে অস্থির বা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হইলে অথবা অসহ্য গরম বা ঠাণ্ডা অনুভব করিলে এই অবস্থায় তিনি মোকদ্দমা পরিচালনা করিবেন

২২৬

। যতক্ষণ পর্যন্ত শান্তমনে ও একাগ্রতা সহকারে মোকদ্দমা পরিচালনা করা সম্ভব ততক্ষণই তিনি বিচারকার্য পরিচালনা করিবেন, বিরক্তি বা শ্রান্তিবােধ হওয়ার সংগে সংগে বিচারকার্য মুলতবী করিয়া দিবেন।

রায় প্রদানের দিন তিনি নফল রোযা রাখিবেন না বা এমনভাবে কোন নফল ইবাদতে লিপ্ত হইবেন না যাহার ফলে বিচারকার্য পরিচালনায় তাহার দৈহিক বা মানসিক অস্বস্তি বা ক্লান্তিবােধ হইতে পারে।

বিচারকের আত্মীয়-স্বজন পরস্পরের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা দায়ের করিলে তিনি তাড়াহুড়া না করিয়া বরং তাহাদের মধ্যে সমঝোতা স্থাপনের যথাসাধ্য চেষ্টা করিবেন। যদি সমঝোতায় উপনীত হওয়া সম্ভব না হয় তবে মোকদ্দমা পরিচালনা করিবেন এবং যথাসাধ্য নিরপেক্ষতা বজায় রাখিবেন। তাতারখানিয়া গ্রন্থের বরাতে আলামগীরীতে অনাত্মীয়দের বেলায়ও বিচারককে প্রথমে সমঝোতা স্থাপনের চেষ্টা করার কথা বলা হইয়াছে। কারণ মহান আল্লাহ বলেন :

والصلح خير –

“সমঝোতা স্থাপনই উত্তম” (সূরা নিসা : ১২৮)।

বিচারক ব্যক্তিগতভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করিতে পারিবেন না। তবে তিনি নিজের জন্য প্রয়োজনীয় ক্রয়-বিক্রয় করিতে পারিবেন। অবশ্য আলামগীরীতে তাতারখানিয়া গ্রন্থের বরাতে বলা হইয়াছে যে, এমনকি নিজের জন্যও বিচারকের ক্রয়-বিক্রয়ে লিপ্ত না হওয়াই উত্তম।

বিচারক নিজ আত্মীয় অথবা অন্তরঙ্গ বন্ধু ও প্রতিবেশী ব্যতীত অপর কাহারও নিকট হইতে অর্থকড়ি বা অন্য কিছু ধার গ্রহণ করিতে পারিবেন না। অনুরূপভাবে তিনি স্ব-আত্মীয় ব্যতীত অপর কোন ব্যক্তির নিকট হইতে উপহার ও উপঢৌকন (হায়া) গ্রহণ করিতে পারিবেন না, যদি গ্রহণ করেন তবে তাহা বায়তুল মালে জমা করিবেন। বিবদমান পক্ষদ্বয়ের কাহারও নিকট হইতে উপঢৌকন গ্রহণ করিলে তাহা ঘুষ হিসাবে গণ্য হইবে। মহানবী (স) বলেনঃ

ول۔

هدايا المال

“সরকারী কর্মচারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকন আত্মসাৎকৃত মাল হিসাবে গণ্য।”

هدايا العمال سخت

২২৭

“সরকারী কর্মচারীদেরকে প্রদত্ত উপঢৌকন অবৈধ মাল হিসাবে গণ্য।”

من استئملناه على عمل فرزقناه رزقا فما

أخذه بعد ذلك فهو تول۔

“আমরা কোন ব্যক্তিকে সরকারী কার্যে নিয়োগ করিয়া তাহার জন্য বেতন নির্ধারণ করিয়া দেওয়ার পর সে উহার অতিরিক্ত যাহা গ্রহণ করে তাহা আত্মসাৎকৃত মাল হিসাবে গণ্য”।

مابا العامل نبعثه فيجئ فيقول هذالم

وهذا أهدى الى الأجلس في بيت أمه فينظر

أهدى اليه أم لا.

“সরকারী কর্মচারীর কি হইল! আমরা তাহাকে কোন দায়িত্বে নিয়োগ করিয়া) প্রেরণ করি, অতঃপর সে ফিরিয়া আসিয়া বলে, এই মাল আপনাদের . (সরকারের) এবং ইহা আমাকে উপঢৌকন দেওয়া হইয়াছে। সে তাহার মাতার বাড়িতে বসিয়া থাকে না কেন, অতঃপর দেখুক তাহাকে উপঢৌকন দেওয়া হয় কি না?”

বিচারক রুগ্ন ব্যক্তিকে দেখিতে এবং জানাযায় অংশগ্রহণ করতে পারিবেন। কারণ মহানবী (স) বলিয়াছেন যে, রুগ্নের সহিত সাক্ষাত করা এবং জানাযায় অংশগ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য। কিন্তু তিনি সেখানে বেশিক্ষণ অবস্থান করিবেন না। তবে রুগ্ন ব্যক্তি বাদী অথবা বিবাদী হইলে বিচারক তাহাকে দেখিতে যাইবেন না।

তিনি বাদী অথবা বিবাদীর ভোজের দাওয়াত গ্রহণ করিবেন না। তবে কোন ভোজসভায় বাদী ও বিবাদী উভয়ে অংশগ্রহণ করিলে তিনি সেখানে উপস্থিত হইতে পারিবেন। কারণ মহানবী (স) পানাহারের দাওয়াত প্রদান করিলে তাহাতে অংশগ্রহণ করিতে বলিয়াছেন। বিচারক একনিষ্ঠভাবে শরীআতের বিধান মানিয়া চলার চেষ্টা করিবেন, যাহাতে জনগণ তাহার প্রতি আস্থাশীল হইতে পারে। আইন প্রয়োগকারীকে আইন ভংগ করিতে দেখিলে তাহার প্রতি

২২৮

,

জনগণের শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস থাকে না।

বিচারককে জ্ঞান-গরিমার দিক হইতেও প্রজ্ঞাবান হইতে হইবে। এজন্য তাহাকে বিশেষ করিয়া আইন সংক্রান্ত বিষয়ে সর্বদা তথ্য সংগ্রহে ও তাহা হৃদয়ংগ করিতে যত্নবান থাকিতে হইবে। প্রজ্ঞাবান ব্যক্তির প্রতি স্বভাবতই মানুষ শ্রদ্ধাশীল হইয়া থাকে। তাহা ছাড়া শরীআত ভিত্তিক বিচারের অন্যতম উৎস হইতেছে প্রজ্ঞা (কিয়াস)।

বিচারক নিজেও সদালাপী হইবেন এবং মানুষের সহিত ভদ্রতাপূর্ণ আচরণ করিবেন। তিনি তাহার কর্মচারীবৃন্দকেও সভ্য, ভদ্র ও নম্র হওয়ার এবং আগন্তকদের সহিত মার্জিত ব্যবহার করার নির্দেশ দিবেন।১৭

ধারা-৫৫৮

বিচারকার্য পরিচালনার মূলনীতি বিচারক কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস-এর আওতাধীনে বিচারকার্য করিবেন।

ব্যাখ্যা (১) “সুন্নাহ” বলিতে প্রধানত মহানবী (স)-এর হাদীসকে বুঝাইবে।

(২) ইজমা” বলিতে যে কোন যুগের মুজতাহিদগণের কোন ফিকহী বিষয়ে ঐক্যমত বুঝাইবে।

(৩) “কিয়াস” বলিতে কুরআন, সুন্নাহ ও ইজমা-এর আলোকে গবেষণা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত বুঝাইবে।

বিশ্লেষণ

বিচারকের রায় সত্যভিত্তিক এবং যথার্থ হইতে হইবে। অন্যথায় তাহার রায় বাতিল গণ্য হইবে। অতএব যথার্থ সিদ্ধান্তে পৌছার জন্য বিচারকের সর্বপ্রথম কর্তব্য আল্লাহর বিধান অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করা। এইজন্য তাহাকে অবশ্যই কুরআনের বিধান সম্বলিত আয়াতসমূহ সম্পর্কে ব্যাপক ও গভীর জ্ঞানের

২২৯

অধিকারী হইতে হইবে। কুরআনের কোন্ আয়াতের বিধান বহাল আছে, কোন্ আয়াতের বিধান মানসূখ (রহিত) হইয়াছে, একই শব্দের একাধিক অর্থ থাকিলে তাহার মধ্যে কোন একটিকে অগ্রাধিকার প্রদান এবং এইসব বিষয়ে তাফসীরকার ও ফকীহগণের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বিচারককে অবহিত থাকিতে হইবে। কোন কোন মণীষীর মতে সামগ্রিকভাবে কুরআনের উপর বিচারকের গভীর জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আল-কুরআনের পরে বা প্রয়োজনবােধে আল-কুরআনের সাথে রাসূলুল্লাহ (স)-এর সুন্নাহ মোতাবেক ফয়সালা করিতে হইবে। এইজন্য বিধান সম্বলিত হাদীস সংক্রান্ত বিষয়ে বিচারকের জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। কারণ কোন বিষয়ে কুরআন মজীদে সমাধান না পাওয়া গেলে সেই অবস্থায় সুন্নাহ-তে উহার সমাধান অনুসন্ধান করিতে হইবে। আল-কুরআন ও সুন্নাহতে কোন সমাধান না পাওয়া গেলে বিচারককে মহানবী (স)-এর সাহাবীগণের ইজমা-র শরণাপন্ন হইতে হইবে। কারণ সাহাবীগণের ইজমার অনুসরণ বাধ্যতামূলক। একই বিষয়ে সাহাবীগণের বিভিন্ন মত থাকিলে বিচারক তাহার প্রজ্ঞার ব্যবহার করিয়া উহার মধ্যে কোন একটি মতকে অগ্রাধিকার প্রদান করিবেন। কিন্তু সকলের মত ত্যাগ করিয়া বিচারক তাহার নিজস্ব মত অনুযায়ী রায় প্রদান করিলে তাহা বাতিল গণ্য হইবে। অবশ্য খাসসাফ এই মত ব্যক্ত করিয়াছেন যে, এই অবস্থায় বিচারকের স্বীয় ইজতিহাদের ভিত্তিতে রায় প্রদান বৈধ। কারণ তাহাদের মতবিরোধ প্রমাণ করে যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ইজতিহাদ করার অবকাশ রহিয়াছে।

কোন বিষয়ে সাহাবীগণের কোন মত বিদ্যমান না থাকিলে এবং সেই বিষয়ে তাবিঈগণের ইজমা প্রসূত সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলে বিচারক তদনুযায়ী ফয়সালা করিবেন। কোন বিষয়ে তাবিঈগণের মধ্যে মতভেদ থাকিলে বিচারক তাহাদের মতসমূহ পর্যালোচনা করিয়া উহার যে কোন একটি মত গ্রহণপূর্বক ফয়সালা প্রদান করিবেন। কোন বিষয়ে তাবিঈগণের কোন অভিমত না থাকিলে এবং বিচারক ইজতিহাদ করার যোগ্যতা সম্পন্ন হইলে একান্তই যথার্থ সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য যথাসাধ্য ইজতিহাদ করিয়া রায় প্রদান করিবেন। তিনি যদি ইজতিহাদ করার যোগ্য না হইয়া থাকেন তবে মুজতাহিদ আলেমগণের সহিত পরামর্শ করিয়া সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন এবং এই ব্যাপারে তাহাদের সহিত পরামর্শ করিতে মোটেই লজ্জাবােধ করিবেন না। কোন বিষয়ে ইমাম আবু

২৩০

হানীফা, আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর ঐক্যমত বিদ্যমান থাকিলে বিচারকের তাহাদের মতের বিরোধিতা করা উচিৎ নহে। কোন বিষয়ে পরবর্তী কালের আলেমগণের (মুতাআখখিরীন) ঐক্যমত পাওয়া গেলে বিচারক তদনুযায়ী ফয়সালা করিবেন। তাহাদের মধ্যে মতভেদ থাকিলে বা তাহাদের কোন মত না পাওয়া গেলে বিচারক ইজতিহাদ করিয়া সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হইবেন, যদি তাহার ইজতিহাদ করার যোগ্যতা থাকে। অন্যথায় ফকীহগণের সহিত আলোচনা করিয়া সঠিক সিদ্ধান্তে পৌছার চেষ্টা করিবেন।

এখানে আরও উল্লেখ্য যে, বিচারকের রায় প্রদানের পর যদি দেখা যায় যে, তাহা সরাসরি কুরআন ও সুন্নাহর বিপরীত তবে উক্ত রায় বাতিল গণ্য হইবে। কিন্তু তাহার রায় কুরআন ও সুন্নাহ-এর বিপরীত না হইলেও এবং একটি রায় প্রদানের পর ভিন্নরূপ রায় প্রদান যথার্থ অনুভূত হইলে তাহার পূর্বোক্ত রায়ই বহাল থাকিবে। ১৮

ধারা--৫৫৯ বিচারকের নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায়দান। বিচারক তাহার বিচারাধীন এলাকায় স্বচক্ষে কোন ঘটনা সংঘটিত হইতে দেখিলেও তিনি নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে উক্ত ঘটনার মীমাংসা করিতে পারিবেন নাঃ

তবে শর্ত থাকে যে, তিনি মোকদ্দমাটি অন্য আদালতে স্থানান্তরিত করিয়া উহার সাক্ষী হইতে পারিবেন।

বিশ্লেষণ

পূর্বকালের ফকীহগণের অভিমত : বিচারক তাহার বিচারাধীন এলাকায় সশরীরে ও স্বচক্ষে কোন ঘটনা ঘটিতে দেখিলে তিনি নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায় প্রদান করিতে পারিবেন, যদি তাহা হদ্দের আওতায় আল্লাহর অধিকারের সহিত সম্পৃক্ত না হয়। এই বিষয়ে হানাফী ফকীহগণ একমত। তবে তিনি বিচারক নিয়োজিত হওয়ার পূর্বে উক্ত ঘটনা প্রত্যক্ষ করিলে নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায় প্রদান করিতে পারিবেন কি না সেই বিষয়ে মতভেদ আছে। ইমাম আবূ হানীফা (র)-এর মতে উক্ত বিষয়ে তাহার রায় দেওয়ার অধিকার নাই।

২৩১

কিন্তু ইমাম আবু ইউসুফ ও মুহাম্মাদ (র)-এর মতে এবং ইমাম শাফিঈর প্রসিদ্ধ মত অনুযায়ী এই ক্ষেত্রেও তাহার প্রদত্ত রায় কার্যকর হইবে। ইমাম শাফিঈর অপ্রসিদ্ধ মত এবং ইমাম মালিক ও আহমাদ (র)-এর মতানুযায়ী সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত বিচারকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায় প্রদান কখনও বৈধ নহে। কারণ বিচারক সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মোকদ্দমার রায় প্রদান করিতে বাধ্য। তাহাকে যদি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায় প্রদানের অবকাশ দেওয়া হয় তাহা হইলে সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় প্রদান বাধ্যতামূলক হওয়ার বিষয়টি অর্থহীন হইয়া যায়।

হানাফী ফকীহগণের যুক্তি এই যে, বিচারক যদি সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে মোকদ্দমার নিষ্পত্তি করিতে পারেন তাহা হইলে তিনি যে ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়াছেন তাহার নিষ্পত্তি উত্তমরূপেই নিজ পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে করিতে পারিবেন। কারণ সাক্ষ্য মাকসূদ বিষযাত (End in itself) নহে, বরং প্রকৃত ঘটনা অবহিত হওয়ার উপায়মাত্র। অতএব বিচারক কোন ঘটনা স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করিয়া যে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছেন তাহা সাক্ষ্যের তুলনায় অধিকতর শক্তিশালী। কারণ সাক্ষ্যের মাধ্যমে বিচারক ঘটনা সম্পর্কে প্রবল ধারণা (ইলমুয যান) লাভ করেন মাত্র, আর সরাসরি প্রত্যক্ষ করার মাধ্যমে নিশ্চিত জ্ঞান (ইলমুল ইয়াকীন) লাভ করেন। অতএব প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সাক্ষ্যের তুলনায় শক্তিশালী হওয়ার কারণে তদনুযায়ী রায় প্রদান অপেক্ষাকৃত উত্তম প্রমাণিত হয়।

হদ্দের ক্ষেত্রে তাহার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায় প্রদান নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ এই যে, হদ্দের আওতাধীন মোকদ্দমায় সর্বদা লক্ষ্য রাখিতে হইবে যাহাতে হদ্দের কঠোর শাস্তি পরিহার করা যায়। মহানবী (স)-ও বলিয়াছেন যে, কোনরূপ সন্দেহ সৃষ্টি হইলেই হদ্দ প্রতিরোধ কর। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে সাক্ষ্য গোপন করার জন্য উৎসাহ প্রদান করা হইয়াছে। কিন্তু বিচারক নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায়দান করিলে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়ার এবং হদ্দ এড়াইবার সুযোগ থাকে না, অনন্তর সাক্ষ্য গোপন করারও অবকাশ থাকে

। তবে হদ্দের আওতাভুক্ত বিষয় আল্লাহর অধিকারের সহিত সম্পৃক্ত না হইয়া মানুষের অধিকারের সহিত সম্পৃক্ত হইলে অথবা হদ্দ বহির্ভূত বিষয় হইলে, সেই ক্ষেত্রেও বিচারক নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায় প্রদান করিতে পারিবেন। যেমন এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে হত্যা করিয়াছে এবং বিচারক তাহা স্বচক্ষে দেখিয়াছেন, অথবা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তির নিকট হইতে বিচারকের

২৩২।

উপস্থিতিতে নির্দিষ্ট অংকের ঋণ গ্রহণ করিয়াছে।

হদ্দের আওতাভুক্ত বিষয় একই সংগে আল্লাহ ও বান্দার অধিকারের সহিত সম্পৃক্ত হইলে বান্দার অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট অংশে বিচারক নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে রায়দান করিতে পারিবেন। যেমন কোন ব্যক্তি অপর ব্যক্তির মাল চুরি করিল এবং বিচারক তাহা প্রত্যক্ষ করিয়াছেন। এই ক্ষেত্রে বিচারক নিজ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে চোরকে মালিকের মাল ফেরত প্রদানের নির্দেশ বা ভিন্নতর শাস্তি প্রদান করিতে পারিবেন, কিন্তু সাক্ষ্য-প্রমাণ ব্যতীত হস্ত কর্তনের শাস্তি দিতে পারিবেন না।

উত্তরকালের ফকীহগণের অভিমত। কিন্তু হানাফী মাযহাবের পরবর্তী কালের (মুতাআখখিরীন) ফকীহগণ মালিকী ও হাম্বলী মাযহাবের মত অনুসরণ করিয়া বলিয়াছেন যে, বর্তমান কালে বিচারক স্বীয় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কোন ধরনের মোকদ্দমারই রায় প্রদান করিতে পারিবেন না। তাহাকে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই রায় প্রদান করিতে হইবে। কারণ বর্তমান কালে বিচারকদের নৈতিক মূল্যমানের যথেষ্ট অধঃপতন হইয়াছে। হানাফী মাযহাবের এখন ইহাই গৃহীত

মত। ১৯

ইমাম বুখারী (র)-এর বক্তব্য হইতেও এই শেষোক্ত অভিমতের সমর্থন পাওয়া দায়। তাঁহার গ্রন্থের একটি অনুচ্ছেদের শিরোনাম নিম্নরূপ : “যাহারা মনে করেন, বিচারক তাহার জ্ঞানের ভিত্তিতে লোকদের বিষয়ে রায় প্রদান করিতে পারেন যদি তিনি তাহার প্রতি কুধারণা ও অপবাদের আশংকা করেন।”২০

আধুনিক কালের ধর্মনিরপেক্ষ আইনেও হানাফী, মালিকী ও হাম্বলী ফকীহগণের এই শেষোক্ত মত গ্রহণযোগ্য হইয়াছে।

ধারা--৫৬০

বিবাদীর অনুপস্থিতিতে বিচারকার্য (ক) বিবাদীর অনুপস্থিতিতে মোকদ্দমার রায় প্রদান সাধারণত বৈধ নহে, তবে তাহার নিয়োগকৃত প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বৈধ হইবে।

(খ) যেই ক্ষেত্রে বিবাদী অবগতই নহে যে, তাহার বিরুদ্ধে মোকমা দায়ের করা হইয়াছে সেই ক্ষেত্রে তাহাকে অবহিত না করা পর্যন্ত মোকদ্দমার কার্যক্রম পরিচালনা ও রায়দান বৈধ নহে।

২৩৩

(গ) বিবাদী আত্মগোপন করিলে এবং তাহাকে রাষ্ট্রীয় শক্তির সহায়তায় খুঁজিয়া বাহির করা সম্ভব না হইলে এবং মোকদ্দমার বিবরণ ও সাক্ষ্য-প্রমাণে সে দোষী সাব্যস্ত হইলে তাহার অনুপস্থিতিতে রায় প্রদান বৈধঃ।

তবে শর্ত থাকে যে, মোকদ্দমাটি হদ্দের আওতাভুক্ত হইলে এবং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট হইলে বিবাদীর অনুপস্থিতিতে রায়দান বৈধ নহে।

বিশ্লেষণ

বাদী ও বিবাদীর উপস্থিতিতে মোকদ্দমার কার্যক্রম পরিচালিত হইবে এবং রায় প্রদান করা হইবে, ইহাই বিচার ব্যবস্থার সাধারণ নিয়ম। সংগত কারণ ব্যতীত এই নিয়মের বরখেলাপ করা যায় না। অতএব হানাফী ফকীহগণের মতে, বিবাদীর অনুপস্থিতিতে শুধু সাক্ষ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করিয়া রায় প্রদান করা বৈধ নহে, তবে বিবাদীর নিয়োগকৃত প্রতিনিধি আদালতে উপস্থিত থাকিলে বৈধ হইবে। মহানবী (স) বলেনঃ

ائما أنا بشر و انكم تختصمون الى ولعل بعضكم أن يكون الحن بحجته من بعض فأقضي بنحو مما أسمع.

“আমি অবশ্যই একজন মানুষ। আর তোমরা তোমাদের বিবদমান বিষয় আমার নিকট পেশ করিয়া থাক। হয়ত তোমাদের কেহ অপর কাহারও তুলনায় নিজের যুক্তিপ্রমাণ উপস্থাপনে অত্যন্ত বাকপটু। অতএব আমি যাহা শুনি তদনুযায়ী রায় প্রদান করি।”২১

মহানবী (স) আলী (র)-কে ইয়ামানে প্রেরণকালে বলেনঃ

تقض لأحد الخصمين حتی تسمع كلام الاخر –

“উভয় পক্ষের বক্তব্য না শোনা পর্যন্ত তুমি বিবদমান পক্ষদ্বয়ের কাহারও অনুকূলে রায় প্রদান করিও না।”২২

২৩৪

হাদীসটির বিকল্প পাঠ নিম্নরূপঃ

يا على اذا جلس إليك الخصمان فلا تقض بينهما حتى تسمع من الاخر كماسمعت من الأول فاك

.

اذا فعلت ذلك تبين لك القضاء .

“হে আলী! তোমার সম্মুখে বিবদমান পক্ষদ্বয় যখন বসিবে তখন তুমি যেভাবে এক পক্ষের বক্তব্য শ্রবণ করিয়াছ তদ্রূপ অপর পক্ষের বক্তব্য না শোনা পর্যন্ত রায় প্রদান করিবে না। তুমি এই নীতি অনুসরণ করিলে সঠিক রায় কি হইবে তাহা তোমার নিকট স্পষ্ট হইয়া যাইবে।”২৩

কোন সংগত কারণে বাদী বা বিবাদী সশরীরে আদালতে উপস্থিত হইতে না পারিলে সে তাহার প্রতিনিধি নিয়োগ করিতে পারিবে। যেমন সে এত অসুস্থ যে, আদালতে উপস্থিত হওয়া তাহার পক্ষে সম্ভব নহে, অথবা সে কোন প্রয়োজনে বিদেশে গিয়াছে অথবা দেশের মধ্যে এত দূরত্বে কোন কার্যব্যপদেশে ব্যস্ত আছে যে, তথা হইতে নির্দিষ্ট তারিখে আদালতে উপস্থিত হওয়া তাহার পক্ষে সম্ভব নহে, অথবা একই সময়ে বিভিন্ন আদালতে তাহার একাধিক মোকদ্দমা থাকিতে পারে।

কোন ব্যক্তির বিরুদ্ধে আদালতে মোকদ্দমা রুজু হইলে এই বিষয়ে তাহাকে অবহিত করা আদালতের কর্তব্য। তাহাকে অবহিত না করিয়া বা তাহার অজ্ঞাতে মোকদ্দমা পরিচালনা করা বৈধ নহে। উপরোক্ত হাদীস হইতে প্রমাণিত যে, বিবাদীর আদালতে তাহার বক্তব্য পেশ করার অধিকার রহিয়াছে এবং তাহার বক্তব্য শ্রবণ না করিয়া রায় প্রদান করা যাইবে না।

অবশ্য প্রয়োজনবােধে আদালত কোন কোন অবস্থায় বিবাদী বা তাহার প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতেও বিচারকার্য পরিচালনা ও রায় প্রদান করিতে পারিবে। যেমন সাক্ষ্য-প্রমাণে বিবাদী দোষী সাব্যস্ত হইয়াছে এবং মোকদ্দমার রায় তাহার বিরুদ্ধে যাইতেছে লক্ষ্য করিয়া সে গাঢাকা দিয়াছে। সরকারী সহায়তায়ও তাহাকে খুঁজিয়া বাহির করা সম্ভব হইতেছে না। এই অবস্থায় বিচারক বিবাদীর অনুপস্থিতিতে মোকদ্দমার রায় প্রদান করিতে পারিবেন। মালিকী, শাফিঈ ও

২৩৫

হাম্বলী মাযহাবের মতও তাই।

ইন হাযম (র) বলেন, উমার (রা) নিখোঁজ স্বামীর স্ত্রীর ব্যাপারে তাহার চার বৎসর চার মাস দশ দিন অপেক্ষা করার পর রায় প্রদান করিয়াছেন। উসমান (রা)-ও বিবাদীর অনুপস্থিতিতে রায় প্রদান করিয়াছেন এবং সাহাবীগণের কেহ তাহাদের বিরোধিতা করেন নাই। বিচারক বিবাদীর অনুপস্থিত থাকার কারণে মোকদ্দমার নিম্পতি না করিলে অপরের অধিকার ক্ষুন্ন বা বিলুপ্ত হইতে পারে। অথচ তাহাকে অধিকার বহাল করার জন্যই নিয়োগ করা হইয়াছে। ২৫

কিন্তু মোকদ্দমা যদি হদ্দের আওতাভুক্ত হয় এবং আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট হয় তবে বিবাদীর অনুপস্থিতিতে রায় প্রদান করা যাইবে না। যেমন কোন ব্যক্তি যেনা করিয়াছে অথবা মদ পান করিয়াছে, অতঃপর সে আত্মগোপন করিয়াছে। এই ক্ষেত্রে বিবাদীর অনুপস্থিতিতে মোকদ্দমার রায় প্রদান স্থগিত থাকিবে। ২৫

ধারা--৫৬১

বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিচারকের রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চতর আদালতে আপিল করা যাইবে।

বিশ্লেষণ

বিচারকের রায় যদি কুরআনের সুস্পষ্ট নস, অথবা মুতাওয়াতির হাদীস অথবা ইজমা ভিত্তিক হইয়া থাকে এবং উচ্চতর আদালতের পর্যালোচনায় যদি দেখা যায় যে, তাহা উপরোক্ত উৎসের সহিত সংগতিপূর্ণ তবে পূর্বোক্ত রায় বহাল থাকিবে এবং তাহা বাতিল করা বৈধ হইবে না। কারণ রায় এই ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ নির্ভুল। কিন্তু ইহার বিপরীত হইলে উচ্চতর আদালত অবশ্যই উক্ত রায় বাতিল করিয়া সঠিক রায় প্রদান করিবে। কারণ পূর্বোক্ত রায় চূড়ান্তভাবেই বাতিল।

বিচারকের রায় যদি ইজতিহাদী বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট হয় এবং একই বিষয়ে একাধিক মত বিদ্যমান থাকে এবং সেই ক্ষেত্রে যে কোন মত অনুসরণ করার ব্যাপারে সর্বসম্মতিক্রমে (ইজমা) বিচারকের স্বাধীনতা থাকিয়া থাকে,

২৩৬

,

তবে লক্ষ্য করিতে হইবে যে, ইজতিহাদের বিষয়টি কি মাস্কূম বিহি (রায়ে যে বিষয়টি বিবাদীর জন্য বাধ্যকর হয়) না স্বয়ং রায়। ইজতিহাদের বিষয় “মাহম বিহি” হইলে বিচারকের রায় বাতিল করা যাইবে না। কারণ এই ক্ষেত্রে বিচারক একাধিক মতের যে কোন একটি মত অনুসরণ করার বেলায় সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং তাহার এই স্বাধীনতা ইজমার দ্বারা স্বীকৃত। এই অবস্থায় দ্বিতীয় আদালতে ভিন্নমত অনুসরণপূর্বক পূর্বোক্ত আদালতের রায় বাতিল করিলে আবার তৃতীয় আদালত ভিন্নমত অনুসরণপূর্বক সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র রায় প্রদান করিবে। এইভাবে মোকদ্দমাবাজির একটি অব্যাহত ধারা চলিতে থাকিবে এবং দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পরিসমাপ্তি হওয়ার পরিবর্তে বরং উহার বিস্তারই ঘটিবে। অতএব তৃতীয় আদালতে আপিল করা হইলে বিচারক দ্বিতীয় আদালতের রায় বাতিল করিয়া প্রথম আদালতের রায় বহাল করিবেন। অন্যথায় ইজমার দ্বারা স্বীকৃত। (বিচারকের) অধিকার ক্ষুন্ন করা হইবে।

কিন্তু স্বয়ং রায় সম্পর্কে যদি ইজতিহাদ করার সুযোগ থাকে, যেমন সুস্থ ব্যক্তির উপর তাহার মাল স্বাধীনভাবে ভোগ-ব্যবহারের উপর বিধিনিষেধ (হাজ) আরোপের রায় প্রদান করা, অথবা বিবদমান কোন পক্ষের অনুপস্থিতিতে তাহার বিরুদ্ধে রায় প্রদান করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে আপিল আদালত পূর্বোক্ত আদালতের রায় বাতিল করিয়া সম্পূর্ণ ভিন্নতর রায় প্রদান করিতে পারিবে। কারণ এই ক্ষেত্রে বিচারকের ইজতিহাদ করার অধিকার ইজমার দ্বারা স্বীকৃত নহে। এইজন্য যে, বিষয়টিকে একদল সঠিক বলিয়াছেন এবং অপর দল বাতিল বলিয়াছেন।

কোন বিষয়ে ইজতিহাদ করার সুযোগ আছে কি না এই সম্পর্কে মতভেদ হইলে করণীয় কি? এই ক্ষেত্রে আপিল আদালত যদি বিষয়টিতে ইজতিহাদ করার সুযোগ আছে বলিয়া মনে করে তবে পূর্বোক্ত রায় বহাল রাখিবে, আর যদি সুযোগ নাই বলিয়া মনে করে তবে পূর্বোক্ত রায় বাতিল করিয়া পুনরায় রায় প্রদান

করিবে। ২৬

ধারা--৫৬২

রায়দানে বিচারক ভুল করিলে (ক) বিচারক রায় প্রদান করিবার পর পুনর্বিবেচনামূলে যদি আবিষ্কৃত হয়

২৩৭

যে, তিনি ভুল করিয়াছেন, তাহা হইলে এবং উহার দ্বারা কোন আর্থিক দায় সৃষ্টি হইলে তাহা তাহার উপর বর্তাইবে না।

(খ) রায় যদি মানুষের অধিকারের গণ্ডিভুক্ত হয় এবং তাহা– (১) মাল সম্পর্কে হইয়া থাকে এবং সেই মাল যাহাকে দেওয়া হইয়াছে তাহার নিকট অবিকল বিদ্যমান থাকে তবে বিচারক পুনর্বিবেচনামূলে মাল তাহার নিকট হইতে প্রকৃত প্রাপককে ফেরতদানের ব্যবস্থা করিবেন, মাল ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হইলে উহার ক্ষতিপূরণ প্রদান করাইবেন;

(২) কোন শরঈ বিষয়ের সহিত সম্পর্কিত হইয়া থাকে, যেমন তালাক, তবে বিচারক তাহার রায় বাতিল ঘোষণা করিবেন।

(গ) রায় যদি আল্লাহর অধিকারের গণ্ডিভুক্ত হয় এবং উহার দ্বারা কোন আর্থিক দায় সৃষ্টি হয় তবে তাহা বায়তুল মাল হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

বিচারকের প্রদত্ত রায় ভুল হইতে পারে। তাহা তাহার ইজতিহাদে ভুল করার কারণেও হইতে পারে এবং সাক্ষীগণের ভুল বা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদানের কারণেও হইতে পারে। মহানবী (স) বলেনঃ

اذا اجتهد الحاكم فأصاب فله أجران و اذا اجتهد فاخط فله أجر۔

“বিচারক ইজতিহাদ করিয়া সত্যে উপনীত হইতে পারিলে তাহার জন্য দ্বিগুণ সওয়াব এবং সে ইজতিহাদ করিতে গিয়া ভুল করিলে তাহার জন্য এক

গুণ সওয়াব।”২৭

অতএব ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকিলে বিচারক তাহা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করিবেন। ভুলের জন্য আর্থিক দায় সৃষ্টি হইলে তাহা বিচারকের উপর আরোপিত হইবে না। কারণ বিচারকের রায় প্রদানের কার্যক্রম তাহার নিজের স্বার্থে নহে, বরং জনস্বার্থেই পরিচালিত হইয়া থাকে।

বিচারকের রায় যদি মাল সম্পর্কিত বিষয়ের সহিত সংশ্লিষ্ট হয়, যেমন তিনি রায়ে ভুল করিয়া বিবাদীর মাল বাদীকে দিয়াছেন, এই ক্ষেত্রে উক্ত মাল যদি

২৩৮

বাদীর নিকট অবিকল অবস্থায় বিদ্যমান থাকে তবে তিনি তাহা বিবাদীকে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। আর মাল অবিকল বিদ্যমান না থাকিলে তিনি বাদীর দ্বারা ক্ষতিপূরণ প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন। মহানবী (স) বলেন :

اقضي بنحو ما أسمع فمن قضيت له من

حق أخيه شيئا فلا يأخذه قائما أقطع له قطع

“আমি যাহা শুনি (পক্ষদ্বয় ও সাক্ষীগণের নিকট) তদনুযায়ী রায় প্রদান করি। অতএব আমি যদি কোন পক্ষকে তাহার ভাইয়ের (অপর পক্ষের) কোন স্বত্ব প্রদানের রায় দিয়া থাকি তবে সে যেন তাহা গ্রহণ না করে। কেননা আমি তাহাকে দোযখের একটি টুকরা প্রদান করিয়াছি।”২৮

বিচারকের রায় যদি মাল বহির্ভূত কোন শরঈ বিষয় সম্পর্কে হইয়া থাকে অর্থাৎ সাক্ষীগণ ভুল বা মিথ্যা সাক্ষ্য প্রদান করিল যে, অমুক ব্যক্তি তাহার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করিয়াছে এবং বিচারক তদনুযায়ী স্বামী-স্ত্রীকে পৃথক করিয়া দিলেন, তখন ভুল ধরা পড়ার সংগে সংগে বিচারক তাহার পূর্বোক্ত রায় বাতিল ঘোষণা করিবেন। কারণ বিষয়টি সম্পূর্ণতই শরঈ এবং তাহার সংশোধনেরও সুযোগ আছে।

বিচারকের রায় যদি হদ্দের আওতাভুক্ত এবং তাহা আল্লাহর অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট হইয়া থাকে এবং উহার দ্বারা আর্থিক দায় সৃষ্টি হয় তবে উক্ত দায় বায়তুল মাল হইতে পরিশোধযোগ্য হইবে। যেমন বিচারক ভুল করিয়া কোন ব্যক্তির হস্ত কর্তনের রায় দিলেন এবং তাহা কার্যকর করা হইল। পরে রায়ের ভুল প্রতিভাত হইল। এই ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি হাতের জন্য নির্ধারিত দিয়াতের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ (দামান) লাভ করিবে এবং তাহা বায়তুল মাল হইতে পরিশোধ করিতে হইবে। ২৯

ধারা--৫৬৩ বিচারকের অন্যায়ভাবে রায় প্রদানের স্বীকারোক্তি বিচারক অন্যায়ভাবে রায় প্রদান করায় কোন আর্থিক দায় সৃষ্টি হইলে

২৩৯

এবং পরে উহার স্বীকারোক্তি করিলে উদ্ভূত দায় ব্যক্তিগতভাবে তাহাকেই বহন করিতে হইবে এবং তিনি তাহার পদ হইতে বরখাস্ত হইবেন, উপরন্তু তাযীরের আওতায় শাস্তি ভোগ করিবেন।

বিশ্লেষণ

বিচারক ঘটনার যথার্থতা উপলব্ধি করিতে সক্ষম হইয়াও অন্যায়ভাবে রায় প্রদান করিয়া একটি মহা অপরাধ করিয়াছেন। অতএব তাহার এই রায়ের দ্বারা কোন আর্থিক দায় উদ্ভূত হইলে এবং তিনি তাহার অন্যায়ের স্বীকারোক্তি করিলে উক্ত দায় তাহার ব্যক্তিগত মাল হইতে পরিশোধ বাধ্যকর হইবে। উপরন্তু তিনি তাহার পদ হইতে অপসারিত হইবেন এবং তাযীরের আওতায় শাস্তি ভোগ করিবেন। যেমন তিনি কোন ব্যক্তিকে অন্যায়ভাবে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করিয়াছেন এবং তাহা কার্যকর করা হইয়াছে। অতঃপর তিনি স্বীকারোক্তি করিলেন যে, তিনি অন্যায়ভাবে রায় প্রদান করিয়াছেন। এই অবস্থায় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত পক্ষকে নিজ মাল দ্বারা দিয়াত প্রদান করিতে বাধ্য থাকিবেন।৩০

ধারা--৫৬৪

মিথ্যা সাক্ষ্য ভিত্তিক রায় বিচারক মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে কোন চুক্তি বহাল অথবা রদ করার রায় প্রদান করিলে তাহা বাহ্যত কার্যকর হইলেও অভ্যন্তরীণভাবে অকার্যকরই গণ্য হইবে।

বিশ্লেষণ

যেমন কোন ব্যক্তি একটি স্ত্রীলোককে বিবাহ করিয়াছে বলিয়া দাবি করিল এবং স্ত্রীলোকটি তাহা প্রত্যাখ্যান করিতেছে। এই অবস্থায় পুরুষ লোকটি আদালতে দুইজন মিথ্যা সাক্ষী পেশ করিল এবং বিচারক অজ্ঞতা বশত তাহার দাবির অনুকূলে রায় প্রদান করিলেন। অথচ লোকটি জানে যে, উক্ত স্ত্রীলোকের সহিত কখনও তাহার বিবাহ হয় নাই। এই অবস্থায় বিচারকের রায়ের ভিত্তিতে

২৪০

বাহ্যিকভাবে নারী তাহার স্ত্রী হইলেও প্রকৃতপক্ষে সে তাহার স্ত্রী নহে এবং তাহার সহিত সংগম করা তাহার জন্য বৈধ নহে। এই বিষয়ে ইমাম আবু হানীফা ও ইমাম আবু ইউসূফ (র)-এর মত অনুযায়ী উক্ত নারী বাহ্যিকভাবেও এবং অবাহ্যিকভাবেও (1,3; 192) তাহার স্ত্রী হিসাবে গণ্য হইবে। ইমাম আবু ইউসুফ (দ্বিতীয় মত) ও ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে বাহ্যত রায় কার্যকর হইলেও মূলত অকার্যকরই থাকিবে। পরবর্তী কালের আলেমগণের মতে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত রায়ের দ্বারা উক্ত স্ত্রীলোক প্রকৃতপক্ষেই তাহার স্ত্রী হিসাবে গণ্য হইবে।

মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে চুক্তি রদের ( 3) ক্ষেত্রেও ইমামদের অনুরূপ মতভেদ বিদ্যমান। যেমন কোন নারী দাবি করিতেছে যে, তাহার স্বামী তাহাকে তিন তালাক দিয়াছে এবং ইহার অনুকূলে দুইজন মিথ্যা সাক্ষীও উপস্থিত করিয়াছে। কিন্তু স্বামী তাহা অস্বীকার করিতেছে। বিচারক অজ্ঞতাবশত মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বিবাহ রদ-এর রায় প্রদান করিলেন। ইদ্দাতশেষে উক্ত নারী অপর পুরুষের সহিত বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হইলে ইমাম আবু হানীফা ও আবু ইউসুফ (র)-এর (প্রথম) মত অনুযায়ী বাহ্যিক ও অবাহ্যিকভাবে (পূর্বের) বিবাহ রদ হইয়া যাইবে এবং স্ত্রীলোকটির শেষোক্ত বিবাহ বৈধ হইবে। ইমাম মুহাম্মাদ ও আবু ইউসুফ (র)-এর (দ্বিতীয় মত অনুযায়ী বিচারকের রায় বাহ্যত কার্যকর হইলেও অবাহ্যত অকার্যকর গণ্য হইবে।৩১

ধারা--৫৬৫

বিচারকের সহিত জুরিবোের্ড বিচারক তাহার বিচারকার্য সুষ্ঠু ও যথার্থভাবে পরিচালনার জন্য তাহার সহিত একদল ফকীহ রাখিতে পারিবেন।

বিশ্লেষণ

বিচারকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা এবং সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য বিচারক ফকীহগণের একটি দলকে তাহার সহিত আদালতে বসিবার জন্য নিয়োগ করিতে পারিবেন। ইহা সুন্নাত এবং খােলাফায়ে রাশিদীনও এই নীতি অনুসরণ করিয়াছেন। মহান আল্লাহর বাণীঃ

২৪১

و شاورهم في الأمر .

“কাজেকর্মে তুমি তাহাদের সহিত পরামর্শ কর”- (সূরা আল ইমরান :

১৫৯)।

وامرهم شوری بینهم –

“তাহারা পারস্পরিক পরামর্শের মাধ্যমে নিজেদের কর্ম সম্পাদন করে” (সূরা শূরাঃ ৩৮)।

والذين جاهدوا فينا لنهدينهم سبلنا۔

“যাহারা আমার পথে চেষ্টা-সাধনা করে আমি অবশ্যই তাহাদিগকে আমার পথে পরিচালিত করিব” – (সূরা আনকাবুতঃ ৬৯)।

عن أبي هريرة قال ما رأيت أحدا بعد رسول الله صلی الله عليه و سلم أكثر مشاورة لأصحابه

. . আবু হুরায়রা (রা) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (স) তাহার সাহাবীগণের সহিত যত অধিক পরামর্শ করিতেন অপর কাহাকেও তাহার তুলনায় অধিক পরামর্শ করিতে দেখি নাই।”৩২

আরও বর্ণিত আছে যে, মহানবী (স) আবূ বাক্ ও উমার (রা)-কে প্রায়ই বলিতেনঃ পরামর্শ দাও। কারণ যেসব বিষয়ে আমার উপর ওহী নাযিল হয় নাই সেসব বিষয়ে আমি তোমাদের মতই।”৩৩।

অনন্তর যথার্থ সত্যে উপনীত হওয়ার জন্য চেষ্টা-সাধনা করা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার সমতুল্য, যেমন পূর্বোক্ত আয়াত (২৯৪ ৬৯) হইতে প্রমাণিত। ফকীহ অর্থাৎ জুরীগণ (jury) আদালতে উপস্থিত থাকিয়া মোকদ্দমার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করিবেন এবং বিচারককে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার জন্য সহায়তা করিবেন। বিচারক প্রকাশ্য আদালতে তাহাদের সহিত পরামর্শ না করিয়া একান্তে আলোচনা করিবেন, যাহাতে মোকদ্দমার সম্ভাব্য রায় সম্পর্কে

৪২

:

লোকেরা পূর্বেই অবহিত হইতে না পারে। প্রকাশ্য আদালতে আলোচনা অনুষ্ঠিত হইলে এবং কোন পর্যায়ে বিতর্কের সৃষ্টি হইলে তাহাতে আদালতের ভাবগম্ভীর পরিবেশ ও প্রভাব ক্ষুন্ন হইতে পারে এবং বিচারকের জ্ঞান ও বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কে শ্রোতাগণের মনে সংশয়ের সৃষ্টি হইতে পারে। অতএব হয় উপস্থিত লোকদের আদালত হইতে সরাইয়া দিতে হইবে অথবা ভিন্ন কোন স্থানে পরামর্শ অনুষ্ঠিত হইবে।

জুরিগণের সহিত পরামর্শ করিয়া ঐক্যমতে পৌছিতে পারিলে তো সর্বোত্তম। একাধিক অভিমতের বেলায় তিনি সর্বাধিক উপকারী মত অথবা সর্বাধিক অভিজ্ঞ ফকীহর মত অনুসারে রায় প্রদান করিবেন। মতভেদের ক্ষেত্রে তিনি স্বীয় মতানুয়ায়ীও রায় প্রদান করিতে পারিবেন। তবে এই গ্রহণ ও বর্জনের প্রক্রিয়া অবশ্যই রায় প্রদানের পূর্বে সম্পন্ন হইতে হইবে। জুরীদের দ্বারা তিনি বাধাগ্রস্ত হইলে বা বিচারকার্যে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হইলে তিনি তাহাদের নিয়োগ নাও করিতে পারেন। ৩৪

ধারা--৫৬৬

বিচারক ঘুষ গ্রহণ করিলে বিচারক ঘুষ গ্রহণ করিলে স্বীয় পদ হইতে সরাসরি বরখাস্ত হইবেন না, অবে তাহাকে বরখাস্ত করা সরকারের অবশ্য কর্তব্য।

বিশ্লেষণ

বিচারক ঘুষ গ্রহণ করিলে বা অনুরূপ কোন দুষ্কর্মে লিপ্ত হইলে হানাফী মাযহাবমতে তিনি সরাসরি বরখাস্ত হইবেন না। তবে সরকার অবশ্যই তাহাকে বরখাস্ত করিবে এবং তাহার অপরাধের জন্য প্রয়োজন মনে করিলে শাস্তির ব্যবস্থাও করিবে। অবশ্য ইমাম শাফিঈর মতে বিচারক অনুরূপ কোন দুষ্কর্মে লিপ্ত হইলে সরাসরি বরখাস্ত হইয়া যাইবে। হানাফী মাযহাবের কিছু সংখ্যক ফকীহর মতও তাই।৩৫

ধারা--৫৬৭

বিচারকের দায়িত্বের অবসান নিম্নোক্ত কারণে বিচারকের দায়িত্বের অবসান ঘটিবে– (ক) নিয়োগকর্তা

২৪৩

তাহাকে সংগত ও পর্যাপ্ত কারণে অব্যাহতি দিলে;

(খ) তিনি উৎকোচ গ্রহণ করিয়াছেন ইহা প্রমাণিত হইলে;

(গ) তাহার চাকুরির মেয়াদ, যেখানে তাহার নিয়োগ মেয়াদভিত্তিক, শেষ হইয়া গেলে

(ঘ) তিনি স্বপদে ইস্তফা দিলে এবং নিয়োগকর্তা কর্তৃক তাহা গৃহীত

হইলে;

(ঙ) তিনি পাগল হইয়া গেলে (চ) তিনি মৃত্যুবরণ করিলে; (ছ) তিনি কোন কারণে দায়িত্ব পালনে অপরাগ হইয়া গেলে; (জ) তিনি ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করিলে।

বিশ্লেষণ

যেসব কারণে প্রতিনিধির (ওয়াকীল) প্রতিনিধিত্বের অবসান ঘটে ঠিক একই কারণে বিচারকের দায়িত্বেরও অবসান ঘটে। শুধু একটি বিষয়ে পার্থক্য আছে। তাহা এই যে, নিয়োগকর্তার মৃত্যুর সংগে সংগে প্রতিনিধির প্রতিনিধিত্বের অবসান ঘটে, কিন্তু বিচারকের ক্ষেত্রে নিয়োগকর্তার মৃত্যুতে তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটে না। নিয়োগকর্তা বিচারককে অব্যাহতি দিলে তাহা যথারীতি তাহাকে অবহিত করিতে হইবে। তাহাকে অবহিত না করা পর্যন্ত বা তিনি যথারীতি অবহিত না হওয়া পর্যন্ত তাহার আদালতী কার্যক্রম বৈধ গণ্য হইবে।

বিচারকের চাকুরির মেয়াদকাল শেষ হইয়া গেলেও তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে, তবে নিয়োগকর্তা মেয়াদ বর্ধিত করিলে স্বতন্ত্র কথা। বিচারক স্বপদে ইস্তফা দিলেও তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে, যদি নিয়োগকর্তা কর্তৃক তাহার পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। পদত্যাগপত্র গৃহীত না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে দায়িত্ব পালন করিয়া যাইতে হইবে এবং এই সময়ে প্রদত্ত তাহার রায় কার্যকর হইবে।

বিচারক বদ্ধ পাগল হইয়া গেলেও তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে। কারণ পাগল হইয়া যাওয়ার কারণে তাহার পক্ষে অর্পিত দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নাহ। অনুরূপভাবে অন্য কোন কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হইয়া পড়িলে

২৪৪

• 

সেই ক্ষেত্রেও তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে, যেমন কোন দুর্ঘটনায় তিনি অন্ধ বা বাকশক্তিহীন হইয়া পড়িলে। বিচারকের মৃত্যুতে স্বভাবতই তাহার দায়িত্বের অবসান ঘটিবে। ৩৬

ধারা--৫৬৮ মাল সম্পর্কিত মোকদ্দমায় আটকাদেশ (ক) বাদী তাহার ঋণের পাওনার জন্য বিবাদীকে আটকের আবেদন না করিলে বিচারক আটকাদেশ প্রদান করিবেন না, বাদীর পাওনা সাক্ষ্য-প্রমাণেই সাব্যস্ত হউক অথবা স্বীকারোক্তির দ্বারা।

(খ) ঋণ পরিশোধে বিবাদীর সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও তাহা ফেরতদানে টালবাহানা করিলে বিচারক তাহাকে আটকাদেশ প্রদান করিবেন, কিন্তু অসমর্থ হইলে আটকাদেশ প্রদান করিবেন না, এমনকি আটক করার পর অস্বচ্ছল প্রমাণিত হইলে তাহাকে কয়েদমুক্ত করিয়া দিবেন।

(গ) বাদী বিবাদীকে ঋণ পরিশোধে স্বচ্ছল এবং বিবাদী নিজেকে অস্বচ্ছল বলিয়া দাবি করিলে– (১) ঋণ মালের বিনিময় হইতে উদ্ভূত হইয়া থাকিলে বিচারক তাকে আটকাদেশ প্রদান করিবেন;

(২) ঋণ মালের বিনিময় হইতে উদ্ভূত না হইয়া থাকিলে বিচারক আটকাদেশ প্রদান করিবেন না।

(৩) মোহর, খােরপোষ, খােলার বিনিময় ইত্যাদি হইতে ঋণ উদ্ভূত হইলে বিচারক আটকাদেশ প্রদান করিতে পারেন।

(ঘ) বিচারক ঋণগ্রহীতা বিবাদীর জামিনদারকে, এমনকি জামিনদারের জামিনদারকেও আটক করিতে পারিবেন।

(ঙ) ঋণগৃহীতা বিবাদী-ভাই, চাচা, মামা, স্বামী, স্ত্রী, নারী, পুরুষ, মুসলিম, অমুসলিম, সুস্থ, অসুস্থ, পঙ্গু যাহাই হউক তাহাকে আটক করা যাইবে, কিন্তু পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে আটক করা যাইবে না।

(চ) বিবাদীকে কয়েদখানায় আটক রাখিতে হইবে এবং কয়েদী নারী হইলে তাহাকে স্বতন্ত্র কয়েদখানায় অথবা কয়েদখানায় নারীদের জন্য নির্দিষ্ট গৃহে আটক রাখিতে হইবে।

(ছ) বিবাদীকে কয়েদখানার এমন সংকীর্ণ কক্ষে আটক রাখা যাইবে না

২৪৫

যেখানে ঠিকমত বসবাস সম্ভব নহে এবং বিচারক তাহার পানাহারসহ প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করিবেন।

(জ) ঋণদাতা বাদীর সংখ্যা একাধিক হইলে এবং বিবাদী তাহাদের সকলের ঋণ পরিশোধ না করা পর্যন্ত আটক অবস্থায় থাকিবে, এমনকি ঋণদাতাগণের পাওনার পরিমাণে অধিক ব্যবধান থাকিলেও।

(ঝ) কয়েদীকে দৈহিক নির্যাতন করা যাইবে না, হাতে-পায়ে বেড়ি পরানো যাইবে না, বিবস্ত্র করা যাইবে না, রৌদ্রে বা শীতে দাঁড় করাইয়া রাখা যাইবে না।

(ঞ) বিচারক কয়েদীর নাম-ঠিকানা, বাদীর নাম-ঠিকানা, ঋণের পরিমাণ ইত্যাদি যাবতীয় প্রয়োজনীয় বিবরণ কয়েদখানার রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করাইবেন।

(ট) কয়েদীকে কত দিন আটক রাখিতে হইবে তাহা বিচারক তাহার সুবিবেচনায় নির্ধারণ করিবেন।

(ঠ) কয়েদীর সহিত তাহার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের সাক্ষাতে বাধা দেওয়া যাইবে না, এমনকি তাহার সহবাসের প্রয়োজন হইলে কর্তৃপক্ষ তাহার স্ত্রীর সহিত নির্জনে মিলনের ব্যবস্থা করিয়া দিবেন।

(ড) আটকের পরও বিবাদী ঋণ পরিশোধ করিতে অস্বীকার করিলে বিচারক পর্যায়ক্রমে তাহার নগদ অর্থ দ্বারা, অতঃপর অস্থাবর মাল দ্বারা,

অতঃপর স্থাবর মাল দ্বারা ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করিবেন।

বিশ্লেষণ

আর্থিক পাওনা বা অন্য যে কোন কারণে বিচারকের সুবিবেচনা অনুযায়ী কোন ব্যক্তিকে আটক করা শরীআত কর্তৃক অনুমোদিত। মহানবী (স) বলেনঃ

مط الغني ظلم.

“স্বচ্ছল ব্যক্তির (ঋণ পরিশোধে) টালবাহানা জুলুম।”৩৭

অতঃএব জুলুমের অবসান করা বিচারকের কর্তব্য। তাই তিনি জুলুম ও অন্যায়কারীকে প্রয়োজন মনে করিলে কয়েদ করিতে পারেন। ঋণদাতা বাদী ঋণগ্রহীতা বিবাদীকে আটকের আবেদন করিলে এবং বিচারকের সামনে তাহার

২৪৬

পাওনা প্রমাণিত হইলে তিনি খাতককে আটক করিবেন। সাক্ষ্য-প্রমাণে ঋণগ্রহীতা দরিদ্র অথবা দেউলিয়া প্রমাণিত হইলে বিচারক তাহাকে আটকের আদেশ প্রদান করিবেন না। এই বিষয়ে সব মাযহাবের ফকীহগণ একমত। কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ

و إن كان و سرة فنظرة اللى ميسرة ط و آن تصدقوا خيركم ان كنتم تعلمون ۔

“খাতক যদি অভাবগ্রস্ত হয় তবে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাহাকে অবকাশ দেওয়া বিধেয়। আর যদি তোমরা দান করিয়া দাও তবে তাহা তোমাদের জন্য কল্যাণকর, যদি তোমরা অনুধাবন করিতে।”৩৮

কারণ ঐ অবস্থায় খাতককে আটক করায় কোন লাভ নাই, বরং তাহা যুলুমের শামিল। বিচারক তাহাকে কাজকর্ম করিয়া ঋণ পরিশোধের জন্য ছাড়িয়া দিবেন।

খাতক স্বচ্ছল না অস্বচ্ছল এই বিষয়ে সন্দেহ থাকিলে অধিকাংশ ফকীহর মতে বিচারক তাহাকে আটক করিবেন এবং সাক্ষ্য-প্রমাণে দরিদ্র সাব্যস্ত হইলে ছাড়িয়া দিবেন, অন্যথায় বন্দী করিয়া রাখিবেন। ঋণ মালের বিনিময় হইতে উদ্ভূত হইলে, যেমন বিক্রেতা ক্রেতার নিকট বাকিতে পণ্য বিক্রয় করিয়াছে, বিচারক বিবাদীকে আটক করিবেন এবং উক্ত মাল তাহার নিকট অবিকল অবস্থায় বিদ্যমান থাকিলে তাহা বিক্রেতাকে ফেরত প্রদানের ব্যবস্থা করিবেন।

ঋণ মালের বিনিময় হইতে উদ্ভূত না হইয়া অন্যভাবে উদ্ভূত হইলে বিচারক বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে বিবাদীকে আটক করিতে পারিবেন। মোহর, খােরপোষ, খােলার বিনিময়, গসবকৃত মালের ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি হইতে ঋণের উদ্ভব হইলে এবং তাহা পূরণে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও বিবাদী তাহা আদায় না করিলে বা টালবাহানা করিলে বিচারক তাহাকে আটক করিতে পারিবেন। ঋণ পরিশোধ না করার ক্ষেত্রে বিচারক বিবাদীর জামিনদারকেও আটক করিতে পারিবেন, এমনকি জামিনদারের জামিনদারকেও আটক করিতে পারিবেন।

ঋণগ্রহীতা ভাই-বন্ধু যে-ই হউক বিচারক তাহাকে আটক করিতে পারিবেন, তবে পিতা-মাতা, পুত্র-কন্যা, দাদা-দাদী ও নানা-নানীকে আটক

২৪৭

করা যাইবে না। মুসলিম ব্যক্তি অমুসলিম ব্যক্তির নিকট হইতে অথবা অমুসলিম ব্যক্তি মুসলিম ব্যক্তির নিকট হইতে ঋণ গ্রহণ করিলে এবং তাহা অনাদাস্ত্রে অভিযোগের ক্ষেত্রে তাহাদেরকে আটক করা যাইবে।

বিবাদীকে কয়েদখানায় আটক রাখিতে হইবে এবং নারী ও পুরুষ কয়েদীদের পৃথক স্থানে রাখিতে হইবে। তাহাদেরকে সংকীর্ণ স্থানে আটক রাখিয়া দৈহিক মানসিকভাবে কষ্ট দেওয়া যাইবে না। এমনকি কোন কয়েদী স্ত্রীর সহি সংগমের ইচ্ছা প্রকাশ করিলে কর্তৃপক্ষ তাহার ব্যবস্থা করিয়া দিবেন। তার সহিত আত্মীয়-স্বজনের দেখা-সাক্ষাতে বাধা দেওয়া যাইবে না।

পাওনাদারের সংখ্যা একাধিক হইলে এবং কোন পাণ্ডদার বিবাদীকে কয়েদমুক্ত করিয়া দেওয়ার আবেদন করিলেও অন্যান্য পাওনাদারের সম্মতি ব্যতীত তাহা করা যাইবে না, তাহাদের পাওনার পরিমাণ ক্ষুদ্র বৃহৎ যাহই হউক না কেন।

আটকাবস্থায় বিবাদীর উপর কোনরূপ দৈহিক নির্যাতন করা যাইবে না, বেড়ি পরানো, যাইবে না এবং পানাহারে কষ্ট দেওয়াও যাইবে না। তবে কয়েদীর পলায়ন করার আশংকা থাকিলে তাহাকে অধিকতর নিরাপত্তামূলক প্রকোষ্ঠে রাখা যাইতে পারে।

আটকের পরও বিবাদী সামর্থ্যবান হওয়া সত্ত্বেও ঋণ পরিশোধে সম্মত ৰা হইলে বিচারক প্রথমে তাহার নগদ অর্থের দ্বারা, তাহাতে সংকুলান না হই সংসারের দৈনন্দিনের ব্যবহার্য জিনিসপত্র বিক্রয় করিয়া, তাহাতেও সংকু

হইলে অস্থাবর মাল বিক্রয় করিয়া, অতঃপর স্থাবর মাল বিক্রয় করিয়া পরিশোধের ব্যবস্থা করিবেন।

বিবাদীকে কত কাল আটক রাখা যাইবে সেই সম্পর্কে বিচ্ছি মত রহিয়া। ইমাম মুহাম্মাদ (র)-এর মতে দুই হইতে তিন মাস। র মাস সম্পৰ্কীয় তাঁহার একটি মতও বিবৃত হইয়াছে। হাসান বসরী (র) ইমাম আবু হানীফা বৱ) হইতে ছয় মাস বর্ণনা করিয়াছেন। ইমাম তাহাবী (র) এক মাস বর্ণনা করিয়াছেন এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ফকীহ তাহার এই মত গ্রহণ করিয়াছেন। অপরা ফকীহ বলিয়াছেন যে, মেয়াদ নির্ধারিত না করিয়া বিষয়টি বিচারকের বিবেচনার উপর ছাড়িয়া দেওয়াই সঠিক হইবে।৩৯

২৪৮

ধারা--৫৬৯

দিয়াত ও আরশ বাবদ প্রাপ্য (ক) বিবাদী দিয়াত ও আরশ বাবদ আদায়যোগ্য অর্থ পরিশোধে অস্বীকৃত হইলে বিচারক তাহাকে আটক করিবেন এবং ইহার পরও সে দিয়াত ও আরশ পরিশোধে সম্মত না হইলে বিচারক তাহার মাল হইতে উহা পরিশোধের ব্যবস্থা করিবেন।

(খ) কাসামাহ’-এর আওতায় বিবাদীগণ শপথ করিতে সম্মত না হইলে বিচারক তাহাদেরকে আটক করিবেন।

বিশ্লেষণ

দিয়াত ও আরশ সাধারণত মানবজীবন ও মানবদেহের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়। বিবাদী বাদীকে দিয়াত ও আরশ বাবদ নির্ধারিত মাল প্রদান করিতে বাধ্য। সে উহা পরিশোধে টালবাহানা করিলে অথবা অস্বীকৃত হইলে বিচারক তাহাকে বন্দী করিয়া রাখিবেন। ইহার পরও সে তাহা পরিশোেধ করিতে সম্মত না হইলে বিচারক তাহার মাল দ্বারা উক্ত দেয় পরিশোধের ব্যবস্থা করিবেন।

কোন এলাকায় কোন ব্যক্তি নিহত হইলে এবং অপরাধীকে খুঁজিয়া বাহির করা সম্ভব না হইলে ঐ এলাকার বাছাই করা পঞ্চাশ জন নাগরিককে বিচারকের সামনে শপথ করিয়া বলিতে হয় যে, তাহারা ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করে নাই এবং কে বা কাহারা হত্যা করিয়াছে তাহাও তাহারা অবগত নহে। এই ধরনের শপথকে পরিভাষায় “কাসামাহ” বলে। কোন ব্যক্তি এই ধরনের শপথ করিতে রাজী না হইলে বিচারক তাহাকে আটক করিতে পারিবেন।৪ ০

ধারা--৫৭০ সন্ত্রাসী ও বখাটেদিগকে আটক

বিচারক সন্ত্রাসী ও বখাটেদিগকে আটক রাখিবেন যাবত না তাহারা তওবা করিয়া সংশোধন হয় অথবা তাহাদের আচরণে সংশোধনের প্রমাণ পাওয়া যায়।

1ণালদ্ধ ইসলামী আইন

২৪৯

বিশ্লেষণ

যেসব অপরাধী জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এবং সুযোগ পাইলেই তাহাদের মাল অপহরণ করে বা জীবননাশের চেষ্টা করে তাহাদিগকে দাআর, ) বলে। আধুনিক পরিভাষায় ইহাদিগকে মাস্তান, চাঁদাবাজ অথবা ছিনতাইকারী হিসাবে চিহ্নিত করা যায়। অনুরূপভাবে যাহারা সমাজের শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট করে তাহাদেরকে “ফাসাদী” (L.) বলে। বখাটে স্বভাবের লোকও এই শ্রেণীভুক্ত যাহারা সুযোগ পাইলেই মানুষকে, বিশেষত নারীদেরকে উত্যক্ত করে।

তথ্য নির্দেশিকা

১. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ৩; আলামগীরী, ৩থ, বাব ১; ফিকুহুল ইসলামী, ৬৩, পৃ. ৪৮১। ২. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ৩; আলামগীরী, ৩খ, বার ১; ফিকহুল ইসলামী, ৬২, পৃ. ৪৮১-৮৪। ৩. আলমগীরী, ৩, বাব ৯; বাদাই, খ, পৃ. ১৩-১৪। ৪. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ১৪। ৫. আলমগীরী, কিতাবুশ শাহাদাত, ৩থবাব ১। ৬. আলামগীরী, কিতাব আদাবিল কাদী, ৩খ, বাব ৬। ৭. আলমগীরী, কিতাব আদাবিল কাদী, বাব ৬, ৩.। ৮ মুজামু লুগাতিল ফুকাহা, পৃ. ৩৩৮ :

الفاسق من يرتكب الكبائر أو يصر على الشفائر .

“যে ব্যক্তি কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয় অথবা বারবার সগীরা গুনাহে লিপ্ত হয় তাহাকে ফাসিক বলে”। ১. হিদায়া, কিতাব আদাবিল কাদী, ৩, ১১৬; আলামগীরী, কিতাবুল কাদা, ১ম বাব, ৩খ;

বাদাইউস সানাই, কিতাব আদাবিল কাদী, ৭খ; ফিকহুল ইসলামী, আল-কাদী ওয়া আদাবুহু,

৬খ, পৃ. ৪৮২। ১০. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৮২; বাদাইউস সানাই, ৭৩, পৃ. ৩। ১১. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ২; ফিকহুল ইসলামী, ৬২, পৃ. ৪৮১। ১২. বুখারী ও মুসলিম উমার ও আবু হুরায়রা (রা)-র সূত্রে এবং মুসতাদরাক হাকেম ও দারু

কুতনীতে উকবা ইবন আমের, আবু হুরায়রা ও ইবন উমার (রা)-র সূত্রে বর্ণিত। ১৩. বায়হাকীর বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৮০। ১৪. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৮১।

২৫০

১৫. আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবন মাজা, তিরমিযী ও হাকেম-এর বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ.

৪৮৩। ১৬. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ৯। ১৭. সম্পূর্ণ আলোচনাটি নিম্নোক্ত গ্রন্থাবলী হইতে সংগৃহীত হইয়াছে : (ক) আলামগীরী, কিতাবু

আদাবিল কাদী, ৩য় খণ্ড, ৮ম বাব; (খ) বাদাইউস সানাই, কিতাবু আদাবিল কাদী, ৭, ১-১৪; (গ) হিদায়া, কিতাবু আদাবিল কাদী, ৩থ; (ঘ) ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহ, আল-কাদা ওয়া আদাবুহ, আল-মাবহাছুস সাদিস, আদাবুল কুদাত, ৬২, পৃ. ৪৯৮-৫০৬ (হাদীসসমূহের

বরাতও তথায় দ্র.)। ১৮. ফাতাওয়া আলামগীরী, কিতাবুল আদাব আল-কাদী, ৩য় বাব, ৩৩.; বাদাইউস সানাই, কিতাবু

আদাবিল কাদী, ৭৩, পৃ. ৪-৫। ১৯. রব্দুল মুহতার, মাকতাবা নুমানিয়া, দেওবন্ধ সংস্করণ, ৪খ, পৃ. ৩৪৫ঃ

والمعتمد عند المتاخرين و هو المفتی به عدم جواز قضاء

القاضي بعلمه مطلقا في زماننا لفساد قضات الزمان .

(ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ২৯২ হইতে উদ্ধৃত)। ২০. সহীহ বুখারী, কিতাবুল আহকাম, ২খ, পৃ. ১০৬০ (আধুনিক প্রকাশনীর ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ৩৫৩)

باب من رای القاضي أن يحكم بعلمه في أمر الناس اذا لم يخف

الفنون والثقمة.

সম্পূর্ণ আলোচনাটি নিম্নোক্ত গ্রন্থদ্বয় হইতে গৃহীত হইয়াছে : (১) বাদাইউস সানাই, এখ, কিতাব

আদাবিল কাদী; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৯০-৯২। ২১. সিহাহ সিত্তা ও মুসনাদে আহমাদে উম্মু সালামা (রা)-র সূত্রে বর্ণিত এবং তাবারানীতে ইন

উমার (রা)-র সূত্রে বর্ণিত। ২২. আবু দাউদ ও তিরমিযীর বরাতে ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৯৭। ২৩. নায়লুল আওতার, ৮, ৩৭৫ ও সুবুলুস সালাম, ৪খ, ১২০-এর বরাতে ফিকহুল

ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৯৭। ২৪. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৯৮। ২৫. বাদাউইস সানাই, ৬খ, পৃ. ৯; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৪৯৭-৮। ২৬. বাদাইউস সানাই, ৭, পৃ. ১৪-১৫। ২৭. বরাত ইতিপূর্বে প্রদত্ত হইয়াছে। ২৮. বরাত ৫৬০ নং ধারার নিম্নে বিশ্লেষণের অধীনে প্রদান করা হইয়াছে। তথায় উধৃত হাদীসের

প্রথমাংশের সহিত এই শেষাংশ মিলাইয়া পড়িলে বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হইবে। ২৯. বাদাইউস সানাই, ৭খ, পৃ. ১৬; আলামগীরী, ৩খ, বার ১৪। ৩০. আলমগীরী, কিতাবুল কাদী, ১৪ নং বাব, ৩খ.। ৩১. আলমগীরী, আদাবুল কাদী, বাব ১৭,৩খ.।

বধিবদ্ধ ইসলামী আইন

২১

৩২. ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, কিতাবুল আদাবিল কাদী। ৩৩. ঐ। ৩৪. বাদাইউস সানাই, ৭, পৃ. ১১; ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, ৬খ, পৃ. ৪৪৯। ৩৫. বাদাইউস সানাই, ৭, পৃ. ১৭। ৩৬. বাদাইউস সানাই, কিতাবুল ওয়াকালা, ৬খ, পৃ. ৩৫। ৩৭. বুখারী, কিতাবুল হাওয়ালা, কিতাবুল ইসতিকরাদ; মুসলিম কিতাবুল মুসাকাত, আবু দাউদ,

কিতাবুল বুয়ু, বাব ১০, নং ৩৩৪৫; তিরমিযী, বু; নাসাঈ, বুয়ু; ইবন মাজা, সাদাকাত, বাব

৮; দারিমী, বুয়ু; মুওয়াত্তা ইমাম মালিক, বুয়ু; মুসনাদে আহমাদ, ২৩, পৃ. ৭১। ৩৮. সূরা বাকারা, ২৮০ নং আয়াত। ৩৯. আলমগীরী, কিতাব আদাবিল কাদী, বাব ২৪, ৩খ; ফিকহুল ইসলামী, ৬খ, পৃ. ৫০৭-৫০৯। ৪০. আলমগীরী, কিতাব আদাবিল কাদী, বাব ২৪, ৩২.।

সাক্ষ্য আইন

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *