২১. বাইবেলের দ্বিতীয় বর্ণনা

বাইবেলের দ্বিতীয় বর্ণনা

প্রথম বর্ণনার পরেপরেই বাইবেলের আদিপুস্তকে বিশ্বসৃষ্টি সম্পর্কে দ্বিতীয় আরেকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। এই দ্বিতীয় বর্ণনায় কোনো মন্তব্য নেই; এমনকি এই বর্ণনাকে প্রথম বর্ণনার সাথে এমনভাবে মিলিয়ে দেয়া হয়েছে যে, মাঝখানে কোনো ফাঁকও নেই। পাঠকদের মনে এই বর্ণনাপাঠে তেমন কোনো প্রশ্ন কিংবা সন্দেহ দেখা দেয় না। স্মরণ রাখা দরকার, এই দ্বিতীয় বর্ণনা শুধু সংক্ষিপ্ত নয়–এটি রচিত হয়েছিল প্রথম বর্ণনা রচনার প্রায় তিন শতাব্দী আগে। এই বর্ণনায় পৃথিবী ও আকাশসৃষ্টির কথা যতটা না বলা হয়েছে, তারচেয়ে অনেক বেশি স্থান জুড়ে রয়েছে মানুষসৃষ্টি এবং পৃথিবীতে স্বর্গোদ্যান তৈরির কাহিনী। সংক্ষিপ্ত দ্বিতীয় বর্ণনাটি হলো :

“সৃষ্টিকালে যেদিন সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবী ও আকাশমণ্ডল নির্মাণ করিলেন, তখনকার আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর বৃত্তান্ত মতে তখন পৃথিবীতে ক্ষেত্রের কোনো উদ্ভিজ হইত না, আর ক্ষেত্রের কোনো ওষধি উৎপন্ন হইত না, কেননা সদাপ্রভু ঈশ্বর পৃথিবীতে বৃষ্টি বর্ষাণ নাই, আর ভূমিতে কৃষিকর্ম করিতে মনুষ্য ছিল না। আর পৃথিবী হইতে কুজঝটিকা উঠিয়া সমস্ত ভূতলকে জলসিক্ত করিল। আর সদাপ্রভু ঈশ্বর মৃত্তিকার ধূলিতে আদমকে (অর্থাৎ মানুষকে) নির্মাণ করিলেন, এবং তাহার নাসিকায় ফুঁ দিয়া প্রাণবায়ু প্রবেশ করাইলেন। তাহাতে মনুষ্য সজীব হইল।” (পবিত্র বাইবেল, আদিপুস্তক, ২: ৪-৭)।

প্রচলিত বাইবেলের এই হল সৃষ্টিতত্ত্ব-সম্পর্কিত জেহোভিস্ট বর্ণনা। এরইসাথে পরবর্তী পর্যায়ে সংযোজিত হয়েছে পুরোহিতদের রচিত প্রথম বর্ণনা। প্রশ্ন উঠতে পারে, আদিতে এই দ্বিতীয় বর্ণনা কি এরকমই সংক্ষিপ্ত ছিল? সময়ের সাথে সাথে জেহোভিস্ট বর্ণনাকে যে বাইবেল থেকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হয়নি, সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলা মুশকিল।

আমরা এও জানি না, এখন সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে দ্বিতীয় বর্ণনা হিসেবে যতটুকু রচনা পাচ্ছি, তা আদি বাইবেলের হুবহু বক্তব্য কিনা। বাইবেলের এই দ্বিতীয় বর্ণনায় অর্থাৎ জেহোভিস্ট বর্ণনায় আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি সম্পর্কে তেমন কিছু বলা হয়নি। তবে, একটি বিষয় স্পষ্ট যে, বিধাতা যখন মানুষ সৃষ্টি করেছেন পৃথিবীতে তখন গাছপালা বলতে কিছুই ছিল না। অথচ, তখনও কিন্তু পৃথিবীর পানি মাটির উপরিভাগকে সিক্ত করেছিল। এই দ্বিতীয় বর্ণনার ৪নং বাণীতে আরো রয়েছে যে, মানুষসৃষ্টির সময় বিধাতা একটি বাগানও সৃষ্টি করে নিয়েছিলেন। অর্থাৎ, বৃক্ষজগৎ মানব-সৃষ্টির সাথে সাথে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিল। এ বক্তব্য কিন্তু বিজ্ঞানের নিরিখে একদম ভুল। পৃথিবীতে গাছপালা জন্মের পর বহুসময় অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত মানুষের আবির্ভাব এখানে ঘটেনি। অবশ্য, গাছপালার জন্ম এবং মানুষের আবির্ভাব এতদুভয়ের মধ্যে কত কোটি বছরের ব্যবধান, তা আমরা জানি না।

যাহোক, বাইবেলের জেহোভিস্ট রচনার ব্যাপারে সমালোচনা শুধু এইটুকুই। বেশি সমালোচনার অবকাশ এক্ষেত্রে ঘটছে না এই কারণে যে, এই বর্ণনায় পুরোহিতদের বর্ণনার মত মানুষের সাথে সাথে পৃথিবী ও বিশ্বসৃষ্টিকে এক সময়ের ঘটনা বলে গুলিয়ে ফেলা হয়নি। তাছাড়া, পুরোহিতদের বর্ণনার মত বিধাতার সৃষ্টির কাজকে একমাত্র সপ্তাহের মধ্যে সীমাবদ্ধ না করার দরুন এই দ্বিতীয় বর্ণনার ব্যাপারে বাইবেলকে এই অধ্যায়ে তেমন তীব্র কোনো বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *