আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে
মানুষের জন্মটা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি মৃত্যু। বড় কঠিন সত্যি। একটা আপ্তবাক্য মনে এল ‘Everybody wants to go to heaven but nobody wants to die’।
ছোটবেলায় নির্ভার জীবনের আনন্দের মাঝে হঠাৎ করেই একদিন জানলাম মৃত্যু বলে একটি পর্ব জীবনে নির্দ্ধারিত আছে। যা তুমি কখনও এড়িয়ে যেতে পারবে না।
শৈশবের এক সাথী (নাম মনে নেই) একদিন খেলতে এল না। আমরা সবাই অবাক। যে প্রতিদিন সবার আগে মাঠে হাজির হয় সে আসেনি! আশ্চর্য! একজন এসে খবর দিল, তার বাবা গত রাতে মারা গেছেন। দল বেঁধে আমরা গেলাম মৃত লোকটিকে দেখতে-হ্যাঁ তখন এটাই প্রাধান্য পেয়েছিল আমাদের কাছে মৃত ব্যক্তিটিকে দেখতে হবে।
বাড়ি পৌঁছুঁতেই শুনতে পেলাম কান্নার শব্দ। বেশ ক’জনের কান্না। জানলাম এরা বন্ধুর আত্মীয়। বন্ধুর মৃত বাবাকে দেখতে ভেতরে ঢুকলাম, উঠানে দেখলাম সাদাকাপড়ে মোড়া মানুষটিকে। আগে দুএকবার দেখেছিলাম তাঁকে। তবে এখন এ মুহূর্তে পুরোটাই কাফনে মোড়া। তার পরের বর্ণনা আর না হয় না দিলাম। সেটি আমার প্রথম মৃত্যু বা লাশ দেখা বাড়িতে বকুনী খেতে হলো কেন গিয়েছিলাম ওখানে। কারণ না বুঝে কেঁদেছিলাম বকাঝকায়। এখনো বুঝি না— কেন আমাকে বকা খেতে হয়েছিল।
আর একটু বড় হয়ে বন্ধু হারালাম। সে না বলে কয়ে জীবনের অপর পারে চলে গেল। কত বয়স তখন আমার সাত/আট হবে হয়তো। হুমায়ুন ছিল আমার খেলার প্রিয় সাথী। আম কাঠালের ছুটিতে এক গ্রীষ্মে গেল কুমিল্লায় নানা বাড়ি। আর ফিরলো না, কী কারণে তার মৃত্যু জানিনি কোনোদিন। কিন্তু তাকে হারানোর ব্যথাটা আজও অনুভব করি। আপনজন হারানোর এটাই ছিল জীবনের প্রথম অভিজ্ঞতা।
এরপর আরো অনেক মৃত্যুর সংবাদ শুনেছি, দেখেছিও। এভাবেই তো মানুষের জীবন এগোয়, কেউ আসে কেউ যায়। তবে কেউ সময়ে যায় কেউবা অসময়ে। সয়ে যায়। সব মৃত্যুই এক সময় সয়ে যায়। কখনো ভুলে যাই আমরা মৃত মানুষটিকে। একটি মৃত্যু সংবাদ আমার খুব মনে পড়ে। আমার দাদী জানের মৃত্যু। তিনি তো মুর্শিদাবাদে থাকতেন। তখন আমি কলেজে। বাকিটা আমি লিখেছি আগে। চিঠিতে খবর এলো। তারপর হাতে চিঠি নিয়ে আব্বার নীরবে অশ্রুবিসর্জন।
কী হয়েছে আব্বা?
অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করি।
তোমার দাদীজান মারা গেছেন।
কাঁদোকাঁদো স্বরে উত্তর দিলেন আব্বা। জীবনে যাঁকে কোনোদিন কাঁদতে দেখিনি তিনি কাঁদছেন।
চিঠিটি ছিল আমার চাচার। মায়ের মৃত্যুসংবাদ দিয়ে আব্বাকে লিখেছেন। ৪৭-এ পাকিস্তানে চলে আসবার পর আব্বা ১৯৫৬-তে একবার মুর্শিদাবাদ গিয়েছিলেন— নিজের ভাগের জমিজমা বিক্রি করে টাকা এনে পাকিস্তানে করবেন কিছু একটা সেই আশায়।
দাদী বলেছিলেন— বেচে আর কী করবি, মালুকে (চাচা) দিয়ে যা। আমাকে ও দেখবে মরা পর্যন্ত। তুই তো আর আসবি না।
বড়ই ইমোশনাল কথা। আব্বা সবার বড়। তিনি এ কথা ফেলতে পারেননি সব চাচার নামে লিখে দিয়ে চলে আসেন। পরে শুনতে পান-এরপর থেকে দাদীর আদর-যত্ন ক্রমে কমে গেছে চাচার সংসারে। এ নিয়ে মন কষাকষিও হয়েছে দু’জনার।
তারপর এই সংবাদ। আব্বার কলজেতে ভীষণ আঘাত করেছে। সময় লেগেছিল বেশ কিছুদিন তা সামলাতে। আব্বার ওই মানসিক যন্ত্রণাকে আমরাও অনুভব করতে পেরেছিলাম।
জন্ম যেমন স্বাভাবিক, মৃত্যুও তো তাই। এই যে বললাম কিছু কিছু মৃত্যু বিশেষভাবে আঘাত দিয়ে যায় মানুষকে। আব্বার ওই কষ্টটা দেখে তাই মনে হয়েছিল আমার। তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হলো সেই আব্বার মৃত্যুতে।
আব্বাকে নিয়ে আমি লিখেছি। মধ্যবিত্ত মানুষটার শখের অভাব ছিল না কখনো। হাসিখুশি, আনন্দময় ব্যস্ত সময় কাটানো ছিল তাঁর স্বভাব। অর্থকষ্ট তাঁর চোখে মুখে কখনো প্রকট হতে দেখিনি। ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার বানাতে যে তাঁর কতটা কষ্ট হয়েছে তা এখন বুঝি আমি।
রিটায়ার করলেন। প্রিপারেটরি লিভে গেছেন। বেশ কিছু টাকা হাতে এলো। আবার একে খান কোম্পানিতে ভাল চাকরিও পেলেন মোটা বেতনে— ঠিক সেই সময়টায় আমি পাশ করে বেরিয়ে সাথে সাথে চাকরিও পেয়ে গেলাম। একেই বলে সোনায় সোহাগা। খুশীর জোয়ার বাড়িতে। তখনই জানলাম ক্যান্সার আক্রান্ত আব্বা। এসবও বলা হয়ে গেছে আমার।
আর ওই যে একটা কাজ আমি নিজ ভাবনায় করেছিলাম-আব্বার যে ক্যানসার হয়েছে সেটা আব্বাসহ অন্য কাউকে জানাইনি— শুধু ডাক্তার এবং আমি আর আব্বার স্কুলের হেডমিস্ট্রেস-এ ছাড়া কেউ জানতো না। ঢাকায় এসে আব্বা যে ডাক্তারকে দেখাতে চাইতেন তাকেই এনে দেখাতাম-আর প্রতিবারই আবার চোখেমুখে নতুন আশার আলো দেখতে পেতাম। সব ডাক্তারকে বলে কয়েই নিয়ে আসতাম। এভাবেই চলতে চলতে এক সময় মৃত্যু ঘনিয়ে এল অতি নিকটে। কথা বন্ধ হয়ে গেল আব্বার। তারপর শুধু অপেক্ষার পালা। কখন সেই ভয়ঙ্কর মুহূর্তটি আসবে আমাদের জীবনে!
এই সময়টা আমার জীবনের একটি কঠিন সময় ছিল। মাত্র ঢুকেছি চাকরিতে। সংসার চালানোর ছিল না কোনোরকম অভিজ্ঞতা। আম্মার ভরসাতেই চলছিল সব। তবে আমারও তো মানসিক অবস্থা ছিল খুবই খারাপ। বাড়ির সবাই আমরা যেন একটা আতঙ্কে থাকতাম-এই বুঝি শেষ। সংসারটা তবুও চলছে এই যা। সহকারি প্রকৌশলীর বেতনে বড় পরিবার চালানো কঠিন ছিল বটে, তবে অসম্ভব ছিল না। কিন্তু আব্বার ক্যানসার চিকিৎসা করতে গিয়ে রীতিমত হোঁচট খেতে শুরু করলাম। এক সময় চোখে অন্ধকারই দেখছিলাম, যখন বিশেষ করে আব্বার pension -এর টাকাটাও শেষ হলো।
এগুলো জীবনের প্রকৃত অভিজ্ঞতা, এমনতর জীবন দেখেছি বলেই হয়তো পরবর্তীতে যখন কিছুটা স্বচ্ছলতা পেলাম তখন রীতিমত নির্ভার লাগতো নিজেকে।
ওই সময় আব্বার সাথে খুব একটা কথা হতো না। সকালে বেরোবার আগে একবার-ফিরে এসে একবার। কখনো ডাকতেন— ‘অমুক ডাক্তার খুব ভালো, একটু দেখো তো।’ এভাবেই চলছিল, আর কী বলবো, আমি তো জানতামই রোগের নিশানা। তারপর জবান বন্ধ অবস্থায় প্রায় মাস খানেক। একদিন মাঝ রাতে দরজায় আওয়াজ। আম্মা দরজায়। কী আম্মা?
তোমার আব্বা নেই।
সেদিন ছিল ছয় সেপ্টেম্বর ১৯৬৯।
ব্যাস, মনে হলো মাথার ওপর থেকে ছাতাটি সরে গেল। লোকটা বিছানায় পড়ে ছিলেন-কিন্তু কোনোদিন মনে হয়নি আমি একা। ওই দিন ওই সময় হঠাৎ করেই হয়ে গেলাম নিঃসঙ্গ। বটবৃক্ষ উধাও, ছায়া দেবে কে তখন? বেশ সময় লেগেছিল সামলে উঠতে।
এর কিছুদিন পর আমাদের পরিবারে নেমে এল আর এক বিপর্যয়। মেজো দুলাভাই-এর হঠাৎ মৃত্যুতে। দুলাভাইরা খুলনায় বাস করতেন, চাকরির কারণে। সেখানে তখন কোনো এক অনুষ্ঠান উপলক্ষে ঢাকা থেকে তাঁর বাবা-মা ও তখন খুলনায়।
হঠাৎ এক ভোরে খবর এল দুলা ভাই নেই। আমরা হতবাক। অসুখ বিসুখ নেই, ভাল মানুষ হঠাৎ কীভাবে চলে গেলেন। আম্মা মেজো মেয়ের বৈধব্য চিন্তায় কাতর হয়ে পড়লেন— আরও বেশি কাতর হওয়ার কারণ, ক’দিন মাত্র আগে তিনি বিধবা হয়েছেন। কষ্টটা বুঝতে তো তাঁর কাছে সহজ ছিল।
অনেক কসরৎ করে একে ওকে ধরে PIA-এর দুটো টিকিট জোগাড় করে আম্মাকে নিয়ে চলে গেলাম খুলনা, যশোর হয়ে। বিকেলের জানাযা আর দাফনে শামিল হতে পেরেছিলাম। এসব কথা হয়ে গেছে।
এই মৃত্যুর ঘটনায় আমার জীবনের ও পট পরিবর্তন হয়ে গেল হঠাৎ করে। অন্য কোনোখানে পরে বিস্তারিত লিখেছি— তবু এটুকু বলে রাখি-সন্ধে বেলা দু’পক্ষের মুরুব্বীরা বসে একটা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন— যে পারিবারিক সম্পর্কটা তাঁরা রাখতে চান নতুন এক বন্ধনে-রবির সাথে শিরীর বিয়েটা তাঁরা অবিলম্বে দিতে চান। শিরী আমার দুলাভাইয়ের সবচেয়ে ছোট বোন। তখন আইএ পড়ে বয়রা কলেজে। হ্যাঁ আমাদের মন দেয়ানেয়া চলছিল বেশ কিছু সময় ধরে। কিন্তু নানান বাধা ও ছিল দুপক্ষের থেকে। সবাই জানতেন ব্যাপারটা।
এই ঘটনা মিলিয়ে দিল সব বাধা! সবাই একবাক্যে হ্যাঁ বলে দিলেন-আমাকে ডেকে বসিয়ে হ্যাঁ ‘না’ জানতে চাইলেন। আমি আর কি বলি।
আপনার মুরুব্বীরা যদি সিদ্ধান্ত নেন আমার আর আপত্তি কি!
আলহামদুলিল্লাহ।
.
জানুয়ারি ৪ ১৯৭০। দুলা ভাইয়ের কুলখানি উপলক্ষে দোয়া পড়ার পরই, আমাদের কলেমা হয়ে গেল।
সময় বয়ে যায়। কারো কথা সে শোনে না এই তো রীতি। দেখতে দেখতে পাঁচটি বছর পেরিয়ে গেল— ছোটবোন মমতাজের বিয়ে হয়ে গেল। আমার এক ছোট বেলার সেই প্রাণের বন্ধু আমিনুল ইসলাম বুলুর সাথে। চট্টগ্রামে টাইগারপাস রেলওয়ে কলোনিতে বহু বছর একত্রে বাস করেছি আমরা। হঠাৎ করে বাসায় প্রস্তাব এল বুলুর পরিবার থেকে-এরাও তখন ঢাকায় থাকে। বুলুর নাম শুনে আম্মা সহজেই রাজী হন। কারণ আম্মা জানতেন বুলুর মত একটি ছেলে খুঁজে বের করা বড়ই কঠিন কাজ। ছোটবেলা থেকে দেখেছেন তো পুরো পরিবারটা। বিয়েটা হয়ে যায় এ বছরই। সাদামাটা ভাবে। অর্থনৈতিক অবস্থাটাই ছিল আমার করুণ।
ইতোমধ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়ে গেছে। স্বাধীন দেশের বাসিন্দা আমরা। বিপাশা এসেছে আমাদের কোলে-মুক্তিযুদ্ধ যখন একদম দোরগোড়ায়— ২৩ মার্চ ১৯৭১। স্বাধীনতার পরপরই আম্মা আর মমতাজ চলে গেলেন মুর্শিদাবাদ দেখতে। আম্মা সেই ১৯৫৪তে গেছেন শেষ বার, আর মমতাজ তো দেখেইনি দেশ। দুজনেই মুর্শিদাবাদে যখন মাস দুয়েক থেকে ফিরলো-আম্মার তখন জন্ডিস। বেশ ভালোভাবেই আক্রান্ত। কিন্তু আমাদের জানা ছিল না কত বিপজ্জনক এই রোগ। আপাত সুস্থ হলেও এই জন্ডিস আম্মা বহন করলেন আমৃত্যু। কিছুদিন বাসায় রেখে চিকিৎসা চললো— তারপর দু’তিনবার হাসপাতাল আর বাসা। শেষবার হোলি ফামিলি হাসপাতালে দশ দিন ছিলেন। ভেবেছিলাম ভাল হয়ে গেছেন-কিন্তু না। পরে বোঝা গেল আম্মার সিরোসিস হয়েছে— যার নাকি কোনো চিকিৎসা নেই। বড়ই ধাক্কা খেলাম এবার। এতিম হয়ে যাবো। গৃহ চিকিৎসক আশার আলো দেখাতে পারলেন না। কী হবে আমাদের এখন। মাথার ছাতা অবশিষ্ট যা ছিল তাও চলে যাবে! বিপাশাকে নিয়ে আম্মার কি সুন্দর সময় কাটতো। ওর মধ্যে আম্মা তাঁর স্বামী হারানোর কষ্টগুলো ভুলে গিয়ে প্রবল আনন্দ পেতেন।
হঠাৎ করে বেশ অবনতি হলো শরীরের। এবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হলো। ইমার্জেন্সিতে নিতেই তারা ভর্তির নির্দেশ দিলেন। কিন্তু কেবিন নেই, শেয়ারিং কেবিনও নেই। তখন ওয়ার্ডই সই। রাতে কে থাকবে আম্মার সাথে-শিরী পারছে না কারণ বিপাশার শরীর ভাল না। দুদিন আগে ওর হাতে একটা অ্যাবসেস অপারেশন হয়েছিল-ও মা ছাড়া একটি মুহূর্তও কারো কাছে থাকবে না তখন। মমতাজ, পুতুল হাসপাতালে রোগীদের সাথে থাকতে ভয় পায়। কি আর করা। একজন আয়া ঠিক করে রাতটা কাটানোর ব্যবস্থা হলো— যাতে পরদিন এসে কেবিনে Shift করে দিলে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পরদিন ভোর হওয়ার আগে হসপিটালের ফোন-আমার বাসায় তখনও ফোন আসেনি। পাশের বাসায়, চেয়ারম্যান, ওয়াসার PS-এর বাসায় ফোন এল
আপনার আম্মার লাশটা নিয়ে যান।
বাড়িতে সহসা নেমে এল মহা বিপর্যয়। কান্নাকাটির রোল পড়ল। ছুটলাম হাসপাতালে গিয়ে দেখি— তাঁকে বেড থেকে বের করে বারান্দায় শুইয়ে রাখা হয়েছে। প্রাণহীন আম্মা, সারা শরীর হলুদ বর্ণ তাঁর, নিশ্চিন্ত নীরবে চোখ বুজে শুয়ে। দয়া করে কেউ একটা চাদর দিয়ে রেখেছে শরীরে।
সেদিন ২২ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪। মোহাম্মদপুরে আব্বার কবরের পাশে তাঁর স্থান পাওয়া গেল। সেটা হলো তাঁর স্থায়ী ঠিকানা। সেপ্টেম্বর ৬৯ গিয়েছিলেন আব্বা, আম্মাও গেছেন সেই সেপ্টেম্বরে। কি আশ্চর্য, আমার জন্মতারিখও সেপ্টেম্বর ৭, নাতাশার সেপ্টেম্বর ১৩ নাতাশার মেয়ের সেপ্টেম্বর ৭।
আসলে মৃত্যুর সালতামামী লিখতে বসিনি। বলতে চেয়েছি একটা মৃত্যু আমাদের জীবনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। ঘটনাক্রম বদলে দেয় ধারা, গতি। আম্মার মৃত্যু যে আমাদের কাছে কতটা বেদনাদায়ক তা হয়তো বোঝাতে পারবো না। সেই সময়টা কি করছিলেন আম্মা-কাকে দেখতে চেয়েছিলেন, আয়াটা মুখে একটু পানি দিতে পেরেছিল কিনা— নার্স ডাক্তার Attend করেছিলেন কিনা। কিছু জানতে পারিনি। এটা একটা অপরাধ বোধ আমার জীবনে— বহন করে চলছি সব সময়। আব্বার চিকিৎসা যতটুকু সম্ভভ সেই সময় করেছি— কিন্তু তাঁর সময় আমরা কাছে ছিলাম। আম্মার চিকিৎসাও সাধ্যমত সবই করেছি। কিন্তু তাঁর শেষ সময়ে আমরা কাছে ছিলাম না। আম্মাকে কী জওয়াব দেব ওই দুনিয়ায়। মাঝে মাঝে এগুলোই ভাবি। আর তখনই চোখদুটো ভরে ওঠে জলে। আম্মার মৃত্যুর পর আমরা অনেকটাই অসহায় হয়ে পড়লাম যেন। বিপাশার বয়স তখন তিন সাড়ে তিন, আম্মার খুবই ন্যাওটা ছিল। আম্মার সময় ওর সাথে কাটতো চমৎকার। সব যেন হাহাকারে পরিণত হলো। মেয়েটাও আম্মাকে খুঁজতো বেশ কিছুদিন। দিন চলছে তার নিয়মে। চাকরিতে দায়িত্ব বেড়েছে, বেতন? কিঞ্চিত বেড়েছে। নাটক, থিয়েটার, সাইট ইন্সপেকশন সবই চলছে, কিন্তু কোথায় যেন ছন্দপতন হলো সংসার জীবনে।
এর মধ্যে ছোট বোন পুতুলের বিয়ের প্রস্তাব এল, ওরই এক বান্ধবীর কাজিনের সঙ্গে। নজরুল ইসলাম মাসুম। লেখাপড়া জানা ভদ্রশান্ত যুবক। পরিবার আমাদের পছন্দ হলো, বরিশালের চাখারের মানুষ ওরা।
বিয়েটা (আকদ) পড়িয়ে বিয়ের তারিখ ঠিক হলো ১৬ আগস্ট ১৯৭৫। কিন্তু জাতীয় জীবনে বিরাট বিপর্যয় ঘটে গেল ১৫ তারিখ। মাঝ রাতে ঘুম ভেঙ্গে সবার হৈ হল্লা, চিৎকার চেঁচামেচিতে।
রেডিও খুলে জানতে পারলাম, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে নিমর্মভাবে সপরিবারে। পরদিন দেশের মানুষ অনেকটা বিস্তারিত জানলো। আজ গোটা পৃথিবীর মানুষ জানে সেদিনের সব কিছু।
অবিমৃষ্যকারী জাতি। স্বাধীনতার স্থপতির রক্তে রাঙ্গালো হাত। তাঁকে পৃথিবী থেকে বিদায় দিয়ে দিল নির্মমভাবে। ভুলে গেল তাঁর অবদান, ভুলে গেল তাঁর দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা। কী কারণে এই হত্যা! ক্ষমতার লোভ, নাকি নেহায়েতই তুচ্ছ ব্যক্তিগত আক্রোশ! যেটাই হোক, তাই বলে হত্যা!
স্তব্ধ হয়ে রইল দেশের মানুষ, থেমে থাকলো জীবনযাত্রা বেশ ক’দিন। মানুষ বুঝতে পারছে না এ নৃশংসতার কারণ।
পারিবারিক ভাবে আমরাও হতবিহ্বল। বোনের বিয়েটা পিছিয়ে দিতে হলো। সেটার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল— দেশ এখন কোনদিকে যাবে। খোন্দকার মোশতাক যিনি বঙ্গবন্ধুর অতি ঘনিষ্ঠ সহযোগী, তিনি কীভাবে এমন ষড়যন্ত্রের হোতা হলেন। এ সত্যিই অকল্পনীয়। লিখতে বসেছিলাম আত্মীয় স্বজনের মৃত্যুর মিছিল নিয়ে, চলে এলেন বঙ্গবন্ধু! আসতেই হবে কারণ তিনি তো ছিলেন বাঙালি জাতির পরম আত্মীয়! তারপর আবার জেল হত্যা! ভাবা যায়, জাতির সেই বিহবল মুহূর্তটি।
পৃথিবী থেমে থাকে না, সে থামতে জানে না। আবার সব চলতে লাগলো। মানিয়ে নিল মানুষ, এমনই হয়। আমার বোনটির বিয়েটাও নিয়মমাফিক সময়ে হলো, তবে ভিন্ন এক তারিখে। আমরা ও এক সময় নব আনন্দে উদ্বেলিত হলাম সংসারে নতুন অতিথির আগমনী সংবাদে। ১৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৭, ধানমন্ডির ১৩-এ সড়কের ডা. ওদুদ এবং ডা. সুফিয়ার নার্সিং হোমে এল আমাদের নাতাশা। পরিকল্পনা করেই দ্বিতীয় সন্তান নিয়েছিলাম আমরা। চিকিৎসকের নির্দ্ধারিত দিনেই এসেছিল।
সেদিন আবার আমার স্টেজে শো ছিল। দেওয়ান গাজীর কিচ্ছার। আমার তাড়াহুড়া, বিকেলে শো, ওদিকে শিরীর ব্যথা ওঠে না। কতক্ষণ আর অপেক্ষায় থাকি। কি কারণে যেন বাসায় এলাম আজাদ পত্রিকা অফিসের সামনে আমার ওয়াসা কোয়ার্টারে। বাসায় আসা মাত্র ফোন— জলদি আসেন-মেয়ে হয়েছে। আবার দৌড়। এসেই মেয়ের মুখ দেখলাম আগে। ফুটফুটে বাচ্চা টগবগ করছে আনন্দে। বিপাশার মুখ দেখেছিলাম ছয় দিন পর। নাতাশার সময় শুধু মাত্র ঘণ্টাখানেক পরে। শো করে এলাম বিকেলে। নাতাশাও একদিন বড় বোনের পথ ধরে মঞ্চেই শুরু করেছিল যাত্রা।
অনেকে বলে তেরো তারিখে হলো! আমি বলি Thirteen is lucky for me ক’দিন পরই পদোন্নতি হলো চাররিতে-Excutive Engineer হলাম ‘নবছর চাকরি অন্তে! এর চেয়ে বড় ভাগ্য আর কি হতে পারে। আমার দু মেয়েই আমাদের ভাগ্য নিয়ে এসেছে। বিপাশা এনেছে দেশের লাল সবুজ পতাকা নিয়ে-ও হ্যাঁ কিছুদিন আগে ও বঙ্গবন্ধুর একটা অসাধারণ পোট্রেট এঁকেছে। আমি তো মুগ্ধ। থাক, নিজের মেয়ের কথা আর কত বলি। আর ছোটটি তো আমার চাকরির দুয়ার প্রশস্ত করে দিল-কিছুদিন পরেই চলে গেলাম ডলার উপার্জনের পথে লিবিয়া— জীবনটাই তো বদলে দিল আমার।
ফিরলাম ১৯৮১ ডিসেম্বরে। দুই বোন স্কুলে গেল। আবার শুরু হলো নতুন জীবন যাত্রা, প্রথমেই সরকারি ছেড়ে প্রাইভেট কোম্পানিতে ঢুকলাম ভাল মাইনেতে। কদিন পর গাড়ি কিনলাম, লিবিয়ায় গিয়েই গাড়ি কিনেছিলাম— সে দিন কী আনন্দই হয়েছিল— নিজের একটা গাড়ি! অবশ্য গাড়িভাগ্য খুবই ভাল— লিখেছি কোথাও— প্রথম দিনই চাকরিতে Exclusive গাড়ি পেয়েছিলাম। লিবিয়াতে অফিসের গাড়ি ছিল Landrover— কাজের প্রয়োজনে আমিই চালাতাম। কোম্পানির গাড়ি।
বেশ কাটছিল দিন। বেড়াতে গেলাম চট্টগ্রাম একবার। তখন পুতুলের স্বামী মাসুম (নজরুল ইসলাম) কী একটা জুট মিলে বেশ ভাল চাকরী করতো চট্টগ্রামে। ওদের বাসাতেই উঠেছিলাম।
ক’দিন বেশ হৈ হল্লা করে কাটলো। তার কিছুদিন পর ওরা ঢাকায় বদলি হয়ে এল। ওদের তখন দু মেয়ে নিয়ে ভরা সংসার, নিভা, শুভা।
আনন্দের শেষ নেই। ভরপুর আনন্দের সংসারে এলো বহু সাধনার ধন, পুত্র ধন নাফিজ। হঠাৎ থেমে গেল সংগীত আনন্দের। মাসুমের জন্ডিস। ওষুধ খায় উল্টো পাল্টা। কারো কথাই শোনে না অতিরিক্ত প্যারাসিটামলের ফলে Liver হলো ক্ষতিগ্রস্ত, সিরোসিস।
জওয়াব দিল আমার চেনা ডাক্তার। ওদের বলিনি তখনো। কী বলবো! তরতাজা মানুষটা চোখের সামনে চলে যাচ্ছে। আমি আর ওর কাছে যাই না। বোনটার দিকে তাকাতে পারি না। সেদিন সকালটার কথা মনে পড়ে আমার, যেদিন ও চলে যাবে। ডাক্তার পরিস্কার বলে দিয়ে গেছে সময় নেই।
হাসপাতালের নীচে চত্ত্বরে আমি সারাক্ষণ বসে, ওদিকে ওর ক্রমাগত রক্তবমি চলছে। সবাই কাঁদছে, নিরূপায় হয়ে। দেখি মাসুমের আব্বা ছোট বাচ্চা নাফিজকে কোলে নিয়ে হাঁটছেন আর ওর কান্না থামাবার চেষ্টা করছেন।
রবি, তুমি নিচে কেন, ওপরে যাও।
উনি কি কাঁদছিলেন?
বুঝতে পারছিলাম না। এ মানুষটার কষ্ট কী হবে সেটাই ভাবছিলাম। হয়তো আর কিছুক্ষণ পরই পুত্রের লাশ কাঁধে নেবেন। পৃথিবীতে যা সব চাইতে ভারী বস্তু।
চলে গেল মাসুম ১৩ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯২ সনে।
শিরী এসে খবর দিল কাঁদতে কাঁদতে,
যাও দেখে এসো।
আমি পারবো না।
যাইনি আমি দেখতে।
সন্ধ্যায় কাফন দাফন শেষে বাসায় এসে কেঁদেছি।
এই তো জীবন। এমনি চলেছে, চলবে।
ওই যে মৃত্যু নিয়ে লিখতে বসেছিলাম, জানি না কেন এই শিরোনামে লিখতে ইচ্ছে হলো।
ছোট্ট বোন পুতুল, সে যে এত কম বয়সে বিধবা হবে চিন্তার বাইরে।
যে ঘাতক জন্ডিস আমার আম্মাকে ছিনিয়ে নিয়েছিল, সে-ই নিয়ে গেল আমাদের মাসুমকে! এ শোকের কোনো জবাব নেই।
প্রত্যেকটি মৃত্যুই কোনো না কোনো প্রভাব ফেলে যায় জীবনের গতিপথে। তবুও জীবন চলে। রবিঠাকুরের কথায় বলতে হয়
…তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে
সময় চলছে, পুতুলও এক সময় স্থিতু হলো। আমার মেয়েরাও বড় হয়ে গেল কখন যেন। বিয়ের সময়ও হলো ওদের। বিপাশার বিয়ে মানে আমাদের বংশের মধ্যে একটা ঘটনা। ২৩ জুলাই ১৯৯৯ বেশ জাঁকজমকেই হলো, তারই পছন্দের ছেলে স্থপতি অভিনেতা তৌকিরের সঙ্গে।
আত্মীয় স্বজন সবাই এল আমার বাড়ি ভরপুর।
নাটোর থেকে বড়বোন রাণি আসলেন আমার বাড়ি দীর্ঘ সময় পর। নাটোরেই থাকতেন। দুলাভাই ততদিনে চলে গেছেন অনন্তলোকে। তাঁদের পাঁচ ছেলে দুই মেয়ে— সবাই তখন প্রতিষ্ঠিত। তারাই দেখাশোনা করতো আপা দুলাভাইকে।
বড় আপার আসাটা আমাদের জন্য ছিল একটা আলাদা আনন্দের ব্যাপার এই জন্যে, যে কোনো একটা ভুল বোঝাবুঝির কারণে দেখা সাক্ষাৎ যোগাযোগ প্রায় বন্ধই ছিল-যা হয় সাধারণত মধ্যবিত্ত পরিবারে আর কি।
শুনেছি বড় দুলাভাই খন্দকার আব্দুর রাজ্জাক প্রায় অসুস্থ থাকতেন। নানা রকম স্বাস্থ্যগত জটিলতা ছিল তাঁর। নাটোরে ছিলেন বলে আর আমার যাওয়া হয়ে ওঠেনি কখনো তাঁকে দেখতে।
হঠাৎ একদিন শুনলাম দুলাভাই ঢাকায় এসেছেন চিকিৎসা করতে। ভর্তি হয়েছেন হোলি ফ্যামিলি হাসপাতালে।
দেখতে যাব যাব করতে করতেই চলে গেল বেলা, সাঙ্গ হল খেলা। সেদিনটি ছিল এপ্রিল ১০, ১৯৮৭ সন। আফসোস, অন্তত একবার দেখা করে সরিটাও বলতে পারলাম না, বলতে পারলাম না, দুলাভাই কোনো ভুল হয়ে থাকলে মাফ করে দিয়েন। আসলে দুনিয়াটাই তো এমনি, আমিই বা এর কোন্ ব্যতিক্রম?
হ্যাঁ বিপাশার বিয়ে কথা হচ্ছিল।
বিপাশার বিয়ের সাতদিন পর আমরা একটা ঘরোয়া আনন্দ উৎবের (খানাপিনা) ব্যবস্থা করলাম। বড় আপাও আমন্ত্রিত— তখন উনি বড় ছেলে খোকনের বাসা মীরপুরে থাকছিলেন। উৎসবের দিন কাক ভোরে এল টেলিফোন। বড় আপা নেই, হার্ট এ্যাটাকে গত হয়েছেন, সেদিন ১ আগস্ট ১৯৯৯। ছুটে গেলাম। শেষ দেখা দেখলাম। পাঁচ ভাই বোনের একজন চলে গেলেন। ভেবে রেখেছিলাম— কত না কথা বলব বড় আপাকে, হলো না। কথা সব না বলাই থেকে গেল। জোটভঙ্গ হলো আমাদের। আহ্ কি শান্তিতে ঘুমিয়ে আছেন বড় আপা। আম্মা-আব্বার কত আদরের বড় রত্নটি, পরম আদরের রাণি। এভাবেই চলবে দুনিয়া, এভাবেই চলছে। আছে দুঃখ আছে মৃত্যু বিরহ দহন লাগে।
বছর না ঘুরতেই গেলেন অন্যজন। মেজো আপা, ইলা। কী সুন্দর গৌরবর্ণের বোনটি আমার, বড় আপাও ছিলেন ফর্সা, কিন্তু মেজো আপার রঙ যেন ফুটে বেরুতো। ঠিক যেন আমার দাদীজান। দুধে আলতায় মেশানো গায়ের রঙ।
বড় মেজো দুজনই ছিলেন আব্বার জান, ছোটবেলা দুজনের সাথেই চলতো আমার খুনসুটি। বড় আপা ন’বছর, মেজো আপা সাত বছরের বড়। আর ওই যে মাঝে একজন ছিলেন লালী— তিনি আমার চেয়ে ৪/পাঁচ বছরের বড় ছিলেন। ছোটজনই সবার আগে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করেছিল ধনুষ্টংকারে।
ছোট্টবেলা থেকে আমি দেখছি আমার দুই আপা ছিলেন হরিহর আত্মা। বুবু ডাকতেন মেজো আপা আর বড় আপা বলতেন ইলা— তুই সম্পর্ক—, আমার সাথে দুজনেরই লাগতো— বিশেষ করে সেই কুপি আর হারিকেন নিয়ে, পরে তাদের দুজনেই আমার সবচেয়ে আপনজন। আম্মার বকা আর চড় থেকে রক্ষাকারী। তাঁদের বিয়ের পর বড়ই একা হয়ে গিয়েছিলাম। রানি চলে গেলে ইলা কি আর অপেক্ষায় থাকে-তিনিও যে অস্থির হয়ে গেলেন বুবুকে ধরবার জন্য।
মেজো আপার একটা নেশা ছিল জব্বর রকমের। পান আর দোক্তা। এ নেশা পেয়েছিলেন আব্বা-আম্মার কাছ থেকে। এত এত সব সুপারী আর দোক্তাসহ পান চিবুচ্ছেন তো চিবুচ্ছেন। তাঁর জীবনটাও ছিল নানান উত্থান পতনের। আগেই বলেছি মেজো দুলাভাই মনিরুজ্জামান ছিলেন ব্রিটিশ কোম্পানি Sinclair Murray-র জেনারেল ম্যানেজার। জোশের চাকরি, ১০টা কাজের লোক বাসায়। দু-তিনটে গাড়ি, ড্রাইভার-বাবুর্চি আর কী রকম শানশওকত। মাত্র চল্লিশ বছর বয়সে প্রসটেট অপারেশনে মৃত্যুমুখে পতিত হলেন ডাক্তারের ভুলে। কেউ জবাবদিহি করেননি— কী করে কী হলো।
আপা তখন তিন ছেলে তিন মেয়ে নিয়ে আকুল পাথারে। কারণ দুলাভাই দু’বছর আগে কি এক ভুলবোঝাবুঝির কারণে ঔ রকম রাজষিক চাকরি ত্যাগ করে খুলনার বিখ্যাত আফিলউদ্দিনের বুদ্ধিতে পাটের ব্যবসায় নামেন এবং দু’বছরের মধ্যে ব্যবসায় ফেল মেরে সর্বস্বান্ত।
বুঝতেই পারেন, আপা কোন জীবন থেকে কোন জীবনে পতিত হয়েছিলেন— ছেলে মেয়েরা কেউ মেট্রিকের গন্ডি পার হয়নি তখনো। কথায় বলে আল্লার দিন আল্লায় চালিয়ে নেন। তাঁরও দিন চলে গেছে। শ্বশুরবাড়ির ব্যাকআপটাই এখানে প্রধান কাজটা করেছে। দেওর মঞ্জুর এবং বিশেষ করে ছোট দেওর মোখলেস এই দুই দেওর আর শ্বশুরশ্বাশুড়ির আশ্রয় তাকে ভীষণভাবে নতুন করে জীবন দান করেছে। ছেলে মেয়েরা জীবনে সংগ্রাম করে নিজেদের পায়ে দাঁড়িয়েছে। এক সময় হঠাৎ করে ধরা পড়লো ক্যানসার, জিহ্বায়। শেষ অবস্থায় ধরা পড়লো।
সংসারের রঙ আবার পাল্টে গেল রাতারাতি। দৌড়াদৌড়ি। চিকিৎসা অষুধ/ইনজেকশন, কেমো, রেডিও থেরাপি, ঢাকা বোম্বে দৌড়াদৌড়ি সবকিছু ব্যর্থ করে ঢাকায় বাংলাদেশ মেডিকেল হাসপাতালে ধানমন্ডিতে ২০০০ সালের ০৬ জুন তারিখে চলে গেলেন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে দিয়ে। ক্যানসার। উহ্ কী কষ্টে মৃত্যু। দেখেছি আব্বাকে তিলে তিলে শেষ হতে। প্রায় অসহায় সমর্পণ মৃত্যুর কোলে। মেজো আপাও সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে বিদায় নিলেন আমাদের অকুলে ভাসিয়ে। হারাধনের তিনটি সন্তান বিদায় নিল ধরাধাম থেকে।