লক্ষ্ণৌয়ের বাদসা
দরিয়াই ঘোড়া কিছুদিন সহরে থেকে, শেষে খেতে না পেয়ে দরিয়ায় পালিয়ে গেলেন। লক্ষ্ণৌয়ের বাসা দরিয়াই ঘোড়ার জায়গায় বসলেন—সহরে হুজুক উঠলো, লক্ষ্ণৌয়ের বা মুচিখোলায় এসে বাস করচেন, বিলাতে যাবেন; বাদসার বাইয়ানা পোষাক, পায়ে আলতা।” কেউ বল্লে, “রোগা ছিপছিপে, দিব্বি দেখতে ঠিক যেন একটা অপ্সরা।” কেউ বল্লে, “আরে না, বাদসাটা একটা কূপোর মত মোটা, ঘাড়ে গদ্দানে, গুণের মধ্যে বেশ গাইতে পারে!” কেউ বল্লে, “আঃ।–ও সব বাজে কথা, যে দিন বাদসা পার হন, সে দিন সেই ইষ্টিমারে আমিও পার হয়েছিলেম, বাদশাহ শ্যামবর্ণ, একহারা, নাকে চসমা ঠিক আমাদের মৌলবী সাহেবের মত।” লক্ষ্ণৌয়ে বাদসা কয়েদ থেকে খালাস হয়ে মুচিখোলায় আসায় দিনকতক সহর বড় গুলজার হয়ে উঠলো। চোর বদমাইসেরাও বিলক্ষণ দশ টাকা উপায় করে নিলে; দোকানদারদেরও অনেক ভাঙ্গা পুরোণো জিনিষ বেধড়ক দামে বিক্রী হয়ে গেল; দুই এক খ্যামটাওয়ালী বেগম হয়ে গেলেন! বাদসা মুচিখোলার অৰ্দ্ধেকটা জুড়ে বসলেন। সাপুড়েরা যেমন প্রথম বড় বড় কেউটে সাপ ধরে হাঁড়ির ভেতর পূরে রাখে, ক্রমে তেজ-মরা হয়ে গেলে খেলাতে বার করে, গবর্ণমেণ্টও সেই রকম প্রথমে বাদসাকে কিছু দিন কেল্লায় পূরে রাখলেন, শেষে বিষ-দাত ভেঙ্গে তেজের হ্রাস করে, খেলতে ছেড়ে দিলেন। বাদসা ডম্বরু তালে খেলতে লাগলেন; সহরের রুদ্দর, ভদ্দর, সেখ, খাঁ, দাঁ প্রভৃতি ধড়িবাজ পাইকো মাল সেজে কাঁদুনী গাইতে লাগলেন–বানর ও ছাগলও জুটে গেল।
লক্ষ্ণৌয়ের বাসা জমি নিলেন, দুই এক বড়মানুষ ক্ষ্যাপলা জাল ফেল্লেন—অনেক প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু শেষে জলখানা পর্যন্ত উঠলো না–কেউ বল্লে, “কেঁদো মাছ।” কেউ বল্লে, হয় “রাণা’ নয় ‘খোঁটা’!