প্রথম অধ্যায়
(শস্যগণনা, হালগণনা, শস্য রোপণ ও কর্তনের সময় নিরূপণ, আলিবন্ধন প্রণালী, বন্যা গণনা, বৃষ্টি গণনা, বৎসর গণনা, ধান্যাদি গণনা, মড়ক গণনা)
১.
শ্রাবণের পুরো ভাদ্রের বারো।
এর মধ্যে যত পারো।।
ব্যাখ্যা– :
সমস্ত শ্রাবণ আর ভাদ্রের দ্বাদশ।
ধান্যাদি রোপিবে এই কয়েক দিবস।।
২.
ষোলো চাষে মূলা।
তার অর্ধেক তুলা।।
তার অর্ধেক ধান।
বিনা চাষে পান।।
ব্যাখ্যা– :
চষিবে মূলার ক্ষেত্র ষোল দিন ধরি।
তুলার অষ্টাহ মাত্র ধান্যের দিন চারি।।
পানের জমিতে নাহি ধরিবে হাল।
যথাকালে ফলাফল পাবে চিরকাল।।
৩.
শুভক্ষণ দেখে ক’রে যাত্রা।
পথে যেন না হয় অশুভ বার্তা।।
আগে গিয়া কর দিক্ নিরূপণ।
পূৰ্ব্বদিক্ হ’তে হল চালন।।
যা কিছু আশা পূরবে সকল।
নাহি সংশয় হবে সফল।।
ব্যাখ্যা– :
যে দিন প্রথমে হাল চালনে যাইবে।
শুভক্ষণ দেখি গৃহ হ’তে বাহিরিবে।।
পথিমধ্যে অশুভ সংবাদ যদি পাও।
তখন গৃহেতে পুনঃ ফিরিয়া আসিবে।।
আবার তেমনি শুভক্ষণ দেখি যেও।
দিক নিরূপণ করি হাল চালাইও।।
পূর্বদিক হতে হাল চালনা করিবে।
এইরূপে কর কার্য সুফল ফলিবে।।
৪.
থোর তিরিশে।
বোড়ামুখো তেরো জেনো।।
ফুলোবিশে।
বুঝেসুঝে কাটো ধান্য।।
ব্যাখ্যা– :
কাটিবে থোড় জন্মিলে ত্রিশ দিন পরে।
ফুলিলে কুড়িটি দিন রেখ মনে করে।।
শির নত হ’লে তের দিন পরে কাটো।
অন্যথায় হবে হানি যত তায় খাট।।
৫.
পূর্ণিমা অমায় যে ধরে হাল।
তার দুঃখ হয় চিরকাল।।
তার বলদের হয় বাত।
ঘরে তার না থাকে ভাত।।
খনা বল আমার বাণী।
যে চষে তার হবে হানি।।
ব্যাখ্যা– :
পূর্ণিমা ও অমাবস্যায় না ধরিবে হাল।
যদি ধরো তবে দুঃখ রবে চিরকাল।।
অধিকন্তু বাতে পঙ্গু হইবে বলদ।
বৃথায় এ কার্য না হবে ফলদ।।
৬.
আষাঢ়ে কাড়ান নামকে।
শ্রাবণে কাড়ান ধানকে।।
ভাদ্দরে কাড়ান শীষকে।
আশ্বিনে কাড়ান কিস্ কে।।
ব্যাখ্যা– :
আবাদের যোগ্য কথা কাড়ান বলি তায়।
বৃষ্টিপাতে ভূমিতে কাড়ান আনায়।।
আষাঢ়ে কাড়ানে ধান্য জন্মে না সর্বত্র।
কিঞ্চিৎ আবাদ তাহে হয়ে থাকে মাত্র।।
শ্রাবণের কাড়ানে প্রচুর জন্মে ধান।
শীঘ্র মাত্র জন্ম হ’লে ভাদ্রতে কাড়ান।।
আশ্বিনে কাড়ান একেবারেই নিষ্ফল।
কোন কার্য তাহে যাতে নাহি দেয় ফল।।
৭.
থেকে বলদ না বয় হাল।
তার দুঃখ সৰ্বকাল।।
ব্যাখ্যা– :
মায়া করে যে বলদে না খাটাইতে চায়।
যাহার বলদ সদা ব’সে বসে খায়।।
চিরকাল দুঃক তার নিত্য অন্নাভাব।
যেহেতু জমিতে তার কর্ষণ অভাব।।
৮.
বাড়ীর কাছে ধান গা।
যার মার আছে ছা।।
চিনি বা না চিনি।
খুঁজে দেখে গরু কিনিস্।।
ব্যাখ্যা– :
বাটির নিকট তব থাকিবে যে জমি।
তাহাতেই চাষকর্ম করিবেক তুমি।।
ফসল যা পাবে চুরি দেখিবারে পাবে।
দূরে হ’লে কেবা তথা চৌকি দিয়া রবে।।
খুঁজি দেখি ঘাতে-ঘোতে গরু যদি কিনো।
হইবে নিশ্চয় লাভ চিন বা না চিন।।
৯.
কোল পাতলা ডাগর গুচ্ছি।
লক্ষ্মী বলেন ঐখানে আছি।।
ব্যাখ্যা– :
মোটা মোটা গুছি দেয় রাশি রাশি।
ফাঁক ফাঁক রাখ যত ফল বেশী বেশী।।
১০.
আঁধার পরে চাঁদের কলা।
কতক কালো কতক ধলা।।
উত্তর ভঁচো দক্ষিণ কাত।
ধারায় ধারায় ধান্যের ধাত।।
চাল ধান দুই সস্তা।
মিষ্টি হবে লোকের কথা।।
ব্যাখ্যা– :
কৃষ্ণপক্ষ অবসানে যে চন্দ্র উদিবে।
প্রথম প্রথম যাহা দেখিবারে পাবে।।
কিয়দংশ অন্ধকারাচ্ছন্ন কিছু আর।
নিম্ন দক্ষিণে আর হবে সে বৎসরে।।
সে বৎসর ধান্যের না রবে দিকপাশ।
মিষ্টভাষী হবে নর পাবে শস্য পাস।।
১১.
ডেকে ডেকে খনা গান।
রোদে ধান ছায়ায় পান।।
ব্যাখ্যা– :
রৌদ্রপীঠ জমিতে জন্মায় যত ধান।
ছায়াময় স্থানে তত জন্মিবে পান।।
১২.
এক অঘ্রাণে ধান।
তিন শ্রাবণে পান।।
ব্যাখ্যা– :
এক অগ্রহায়নে ধান্য ঠিক হয়।
তিন শ্রাবণের কমে পান নয়।।
১৩.
কার্তিকের জল উননা।
ধান জন্মে দুনো।।
ব্যাখ্যা– :
কার্তিক মাসেতে যত জল অল্প হবে।
ধান গাছে ধান তত অধিক ফলিবে।।
১৪.
অঘ্রাণে পৌটী।
পৌষে ছেউটী।।
মাঘে নাড়া।
ফাগুনে ফাঁড়া।।
ব্যাখ্যা– :
কাটিলে অগ্রহায়ণে ধান মিলে ষোল আনা।
পৌষে এসে ছ-আনা দাঁড়াবে আছে জানা।।
মাঘে নাড়া মাত্র অবশিষ্ট থাকিবেক।
ফাল্গুনে নিশ্চয় সব নষ্ট হইবেক।। ।
১৫.
শীষ দেখে বিশ দিন।
কাটতে মাড়তে দশ দিন।।
ব্যাখ্যা– :
যেদিন ধানের শীষ উদগত হইবে।
বিশ দিন পরে তার কর্তন করিবে।।
মাড়িবার জন্য আর দশদিন দাও।
তারপর গোলা পূর্ণ করে তুলে নাও।।
১৬.
শনি রাজা মঙ্গল পাত্র।
চষো খোড়ো কেবল মাত্র।।
ব্যাখ্যা– :
শনি রাজা যে বর্ষে মঙ্গল মন্ত্রী আর।
সে বর্ষে না দেখি আশা ধান জন্মিবার।।
১৭.
বাপ বেটাই চাই
তদভাবে সোদর ভাই।। ।
ব্যাখ্যা– :
পরের সাহায্যে যে কৃষক চাষ করে।
তাহার লাভের আশা বৃথাই সংসারে।।
আপনার ভাবি পর কভু কি খাটিবে।
বাপ বেটা হলে তারা যেরূপ করিবে।।
অপরের চেয়ে যদি ভাই ভাই মিলে।
তাহাতে বরং কিছু সুফলও ফলে।।
১৮.
বাঁধো আগ আলি।
রোপ তবে শালী।।
যদি ফল ফলে।
গালি পেড়ো খনা বলে।।
ব্যাখ্যা– :
বাধিলে উত্তমরূপে আলি সারি সারি।
শালী ধান্য তাহে যদি দাও যত্ন করি।।
যথাকালে ফল তার প্রচুর পাইবে।
মিথ্যা যদি হয় খনা গালি তবে খাবে।।
১৯.
আষাঢ়ের পঞ্চদিনে।
রোপন করে যে ধানে।।
সুখে থাকে কৃষিবল।
সকল আশা হয় সফল।।
ব্যাখ্যা– :
আষাঢ়ের পাঁচদিন মধ্যে রোও ধান।
সে চাষার কষ্ট কোথা খুশী সদা প্রাণ।।
সকল আশা সকল হয় তো তাহার।
অফুরন্ত ধান চাল গোলায় যাহার।।
২০.
আউশ ধান্যের চাষ।
লাগে তিন মাস।।
ব্যাখ্যা– :
রোপনের তিন মাস মধ্যে আ’শ।
জন্মে শেষ হয় তার যত কিছু চাষ।।
২১.
ভাদ্রের চারি আশ্বিনের চারি।
কলাই রোবে যত পারি।।
ব্যাখ্যা– :
ভাদ্রের শেষ চারি দিবস তথা আর।
আশ্বিনের প্রথম চারি সঙ্গে তার।।
এই অষ্টদিন মধ্যে বুনিবে কলাই।
প্রশস্ত সময় এই শুন সবে ভাই।।
২২.
সরিষা বুনে কলাই মুগ।
বুনে বেড়াও চাপড়ে বুক।।
ব্যাখ্যা– :
এক ক্ষেত্রে সর্ষপ কলাই বুনিয়া দিতে পারি।
অথবা সর্ষপ মুগ যাহা ইচ্ছা করি।।
উভয় ফসল একসঙ্গে পাওয়া যাবে।
মনের আনন্দে চাষা বুক বাজাইবে।।
২৩.
আশ্বিনের উনিশ কার্তিকের উনিশ।
বাদ দিয়ে মটর কলাই বুনিস।।
ব্যাখ্যা– :
আশ্বিন মাসের শেষ উনিশটি দিবস।
চৈত্রের প্রথম আট— এই ষোড়শ।।
রোপণ করিবে তিল মিটিবেক আশ।
অন্যথায় হায় হায় করো বারো মাস।।
২৪.
ফাল্গুনের আট চৈত্রের আট।
সেই তিল দায়ে কাট।।
ব্যাখ্যা– :
ফাল্গুন মাসের শেষ আটটি দিবস।
চৈত্রের প্রথম আট —- এই ষোড়শ।।
রোপণ করিবে তিল মিটিবেক আশ।
অন্যথায় হায় হায় করে বারো মাস।।
২৫.
খনা বলে, চাষার পো।
শরতের শেষে সরিষা রো।।
ব্যাখ্যা– :
শরতের শেষভাগে সর্ষপ বপন।
মনে যেন থাকে ভাই খনার বচন।।
অপর ঋতুতে যদি বপন করিবে।
ফসল উচিত মত তাতে নাহি পাবে।।
২৬.
সাত হাতে তিন বিঘতে।
কলা লাগাবে মায়ে পুতে।।
লাগিয়ে কলা না কাট পাত।
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।।
ব্যাখ্যা– :
সাত হাত অন্তরেতে এক এক।
এক চারা রোপে দেখ।।
তিন বিঘত পরিমিত গর্ত হবে।
তবে তো কলার গাছ তার ফল দিযে।।
২৭.
থাকে যদি টাকা করবে গো
চৈত্র মাসে ভুট্টা রো।।
ব্যাখ্যা– :
চৈত্র মাসে ভুট্টা যেই করিবে রোপন।
তার অন্নাভাব নাহি হয় কদাচন।।
টাকা করিতে সাধ যদি থাকে চিতে।
রোপণ করহ গিয়া চৈত্র মাসেতে।।
২৮.
দিনে রোদ রাত জল।
দিন দিন বাড়ে ধানের বল।।
ব্যাখ্যা– :
দিনে রৌদ্র রাত্রে বৃষ্টি হয়।
করিবে ধানের গাছ খুব তজোময়।।
২৯.
আউশের ভূঁই বেলে।
পাটের ভুঁই আঁটালো।।
ব্যাখ্যা– :
আউশ ধানের জমি বেলে ভাল।
পাটের জমি ভাল শুধু হইলে আঁটালো।।
৩০.
মানুষ মরে যাতে।
গাছলা সারে তাতে।।
পচা সরায় পাছলা সারে।
গোঁধলা দিয়ে মানুষ মরে।।
ব্যাখ্যা– :
পচা গোবরের গন্ধে পীড়া হয়।
বিলক্ষণ তেজ কিন্তু গাছ তার পায়।।
ফলবান হয় বৃক্ষ পচলার সারে।
কিন্তু আশ্চর্য নর তাহাতেই মরে।।
৩১.
বৈশাখের প্রথম জলে।
আশুধান দ্বিগুণ ফলে।।
খনায় বলে শুন ভাই।
তুলায় তুলা অধিক পাই।।
ব্যাখ্যা– :
প্রথমে বৈশাখে যদি বৃষ্টি ভাল হয়।
প্রচুর আউস ধান জন্মিবে নিশ্চয়।।
কার্তিকেতে বৃষ্টি হইলে তুলা ভাল হবে।
খনার উক্তি কভু আর না ভাবিবে।।
৩২.
কোদালে মান তিলে হাল।
কাতেনকাকার মাসেকাল।।
ছায়ের লাউ, উঠানে ঝাল।
কর বাপু চাষার ছাওয়াল।।
ব্যাখ্যা– :
মান গাছ করিতে যদ্যপি সাধ থাকে।
কোদাল পাড়িয়া পাট কর সে জমিতে।।
জন্মিবে তিল হল-চালনা না হলে।
অতএব তার পাট করহ লাঙ্গলে।।
শ্বেত তিল আশ্বিন কার্তিকে বুনিবেক।
মাঘ ফাল্গুনে কৃষ্ণ তিল ছড়াবে।।
বাঁশবনে লাউ উঠানেতে ঝাল।
জনমে উত্তম ফল জেনো চিরকাল।।
৩৩.
সরষে ঘন, পাতলা রাই।
নেঙ্গে নেঙ্গে কাপাস যাই।।
কাপাস বলে, কোষ্ঠা ভানু।
জ্ঞাতিপানি না যেন পাই।।
ব্যাখ্যা– :
সর্ষপ বুনিতে হবে খুব ঘন ঘন।
রাই কিন্তু ফাঁক ফাঁক বুনা চাই জেনো।।
কার্পাস এমন ভাবে বপন করিবে।
দাঁড়াইয়া যেন তাহা তুলিতে পারিবে।।
ডিঙ্গাতে পারে যেন আবশ্যক মতে।
পাট ও কার্পাস নাহি বুনো এক ক্ষেতে।।
কারণ কোষ্টার জল লাগিলে কাপাস।
আর না রবে তো আশ।।
৩৪.
বুধ রাজা, শুক্র তার মন্ত্রী যদি হয়।
শস্য হবে ক্ষেত্রে পূরা নাহিক সংশয়।।
ব্যাখ্যা– :
যে বৎসর বুধ রাজা, শুক্র মন্ত্রী হবে।
সে বৎসর বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হবে।।
৩৫.
খাটে খাটায় লাভের গতি।
তার অর্ধেক কাঁধে ছাতি।।
ঘরে বসে পুছে বাত।
তার ঘরে হা ভাত হা ভাত।।
৩৬.
মাছের জলে লাউ বাড়ে।
ধেনো জমিতে ঝাল বাড়ে।।
ব্যাখ্যা– :
লাউগাছে মাছ ধোয়া জল উপকারী।
ঝাল গাছে ধান পচা উপকারী।।
৩৭.
যে বার গুটিকাপাত সাগর-তীরেতে।
সৰ্ব্বদা মঙ্গল হয় কহে জ্যোতিষেতে।।
নানা শস্যে পরিপূর্ণ বসুন্ধরা হয়।
খনা কহে মিহিরকে নাহিক সংশয়।।
ব্যাখ্যা– :
হইলে গুটিকাপাত সমুদ্রের তীরে।
একত শস্য হয় যে ধরায় নাহি ধরে।।
অতএব এইরূপে হবে যে বৎসর।
শষ্যপূর্ণ বসুন্ধরা রবে নিরন্তর।।
৩৮.
বাঁশ বনে বুনলে আলু।
আলু হয় গাছ বেড়ালু।।
ব্যাখ্যা– :
বাঁশবন ধারে যদি আলু পোঁতা যায়।
আলু খুব বাড়ে তার গাছ তেজ পায়।।
বড় আলু খেতে চাও পোঁত বাঁশ বনে।
রাখহ বিশ্বাস ভাই খনার বচনে।।
৩৯.
চাল ভরা কুমড়া পাতা
লক্ষ্মী বলেন আমি তথা।।
ব্যাখ্যা– :
লাউ কুমড়ার গাছ বাড়ীতে যাহার।
অভাব তরকারীর না রবে তাহার।।
অধিকন্তু বেচিলে দু’পয়সা পায়।
সচ্ছল সংসার তার সুখে দিন যায়।।
৪০.
পান পেতে শ্রাবণে।
খেয়ে না ফুরোয় রাবণে।।
ব্যাখ্যা– :
রোপিলে শ্রাবণে পান এত পান ধরে।
রাক্ষসেরা খেলে নাহি ফুরাইতে পারে।।
৪১.
উঠান ভরা লাউ শশা।
বলে লক্ষ্মীর দশা।।
ব্যাখ্যা– :
সকল গৃহে লাউ শশা দেওয়া ভাল।
এমন গৃহস্থ-পোষা দ্রব্য কোথা বল।।
উপযুক্ত স্থান যদি নাহি পাও ফাঁকে।
অন্ততঃ উঠানে স্থান দিবেক তাহাকে।।
৪২.
ছায়ার ওলে চুলকায় মুখ।
কিন্তু তাতে নাহিক দুখ।।
ব্যাখ্যা– :
জন্মিলে ছায়ার ওল মুখে তা লাগিবে।
কিন্তু বড় হবে খুব বেচে বেশী পাবে।।
৪৩.
পটোল বুনলে ফাল্গুনে।
ফল বাড়ে দ্বিগুণে।।
ব্যাখ্যা– :
ফাল্গুনে করহ যদি পটোল রোপণ।
দ্বিগুণ পাইরে ফল মিথ্যা না বচন।। ।
৪৪.
নদী ধরে পুঁতলে কচু।
কচু হয় তিন হাত উঁচু।।
ব্যাখ্যা– :
নদীর ধারেতে যদি কচু পোঁত গিয়া।
ত্বরায় সে কচু তথা উঠিবে বাড়িয়া।।
৪৫.
ফাল্গুনে না রুলে ওল।
শেষে হয় গন্ডগোল।।
ব্যাখ্যা– :
ফাল্গুন মাসেতে ওল রোপন সময়।
সে সময় যদি তা রোপণ না হয়।।
অন্ডাকৃতি হবে তাহা বন্য ওল প্রায়।
হাটেতে ভয়েতে কেহ না করিবে ক্রয়।।
৪৬.
কচু বনে ছড়ালে ছাই।
খনা বলে তার সংখ্যা নাই।।
ব্যাখ্যা– :
কচুবনে ছাই যদি নিত্য দিতে পারে।
ত্বরায় বাড়ে সে কচু অতি তেজ ভরে।।
৪৭.
মুলার ভূঁই তুলা।
ইক্ষুর ভুই ধূলা।।
ব্যাখ্যা– :
নরম তুলার ন্যায় করিবে সে ভূমি।
ভূমিতে মূলার বীজ বসাইবে তুমি।।
ইক্ষু যাতে দিবে ধূলা সম করিবেক।
তবে ত প্রচুর মূল্য ইক্ষু মিলিবেক।।
৪৮.
শোন্ রে মালী বলি তোরে।
কলম রো শ্রাবণের ধার।।
ব্যাখ্যা– :
কলমের চারা শ্রাবণেতে পুঁতিবেক।
তবেই তো সেই চারা তেজ করিবেক।।
৪৯.
ভাদ্দর আশ্বিনে রুয়ে ঝাল
সে চাষা ঘুমায়ে কাটায় কাল
পরেতে কার্ত্তিক অঘ্রাণ মাসে
বড় গাছ ক্ষেতে পুঁতে আসে
সে গাছ মরিবে ধরিয়া ওলা
না হবে ঝালের গোলা।।
ব্যাখ্যা– :
আলস্যে ভাদ্র আশ্বিনে না করি রোপণ।
মরিচ কার্তিক অঘ্রাণে পোঁতে যেই জন।।
ওলা ধরি তাহার মরিচ ঘাছ খায়।
আলস্যের ফলে সে ফল তার পায়।।
৫০.
বৈশাখ জ্যৈষ্ঠেতে হলুদ রোও।
দাবাখেলা ফেলিয়ে থোও।।
আষাঢ় শ্রাবণে নিড়ায়ে মাটি।
ভাদ্দরে নিড়ায়ে করহ খাঁটি।।
অন্যথায় এ পুঁতলে হলদি।
পৃথিবী বলেন তাতে কি ফল দি।।
ব্যাখ্যা– :
বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে হরিদ্রা রোপিলে।
আষাঢ় শ্রাবণ ভাদ্রে নিড়াইয়া দিলে।।
প্রচুর হরিদ্রা যথাসময়ে পাইবে।
অন্যথায় সুফল কিছুতে নাহি হবে।।
৫১.
ফাগুনে আগুন চৈতে মাটি।
বাঁশ হলে আমি শীঘ্র উঠি।।
ব্যাখ্যা– :
শুষ্ক বাঁশপাতা যত পড়িবে তলায়।
ফাল্গুনে আগুন লাগাইবে তায়।।
পরিস্কার হবে তল জল নাহি রবে।
চৈত্র মাসেতে গোড়ায় মাটি দিবে।।
হইবে বাঁশের গোড়া শক্ত অতিশয়।
চতুর্দিকে কোঁড়কে বেড়িবে সমূদয়।।
৫২.
শুন বাপু চাষার বেটা।
বাঁশঝাড়ে দাও ধানের চিটা।।
দিলে চিটা বাঁশের গোড়ে।
দুইকড়া ভুই বেড়বে ঝাড়ে।।
ব্যাখ্যা– :
ধান্যের আগড়া দিলে বাঁশের গোড়াতে।
বাড়িবে বাঁশের ঝাড় নাহি ভুল তাতে।।
কারণ তাহাতেই তার সার জন্মায়।
সার বিনে গাছপালা বাঁচয়ে কোথায়।।
৫৩.
বলে খনা শুন শুন।
শরতের শেষে মূলা বুন।।
তামাক গুড়িয়ে মাটি।
বীজ পুঁতো গুটি গুটি।।
ঘন ঘন পুঁতো না।
পৌষের অধিক রেখ না।।
ব্যাখ্যা– :
শরতের শেষে মূলা করিবে বপন।
ধুলা মাটি করে তথা তামাক রোপণ।।
ঘন ঘন কদাচ না বসাবে তামাক।
পৌষের মধ্যেই জমি করিবেক ফাঁক।।
৫৪.
শুনরে বাপু চাষার বেটা।
মাটির মধ্যে বেলে বেটা।।
তাতে যদি বুনিস পটোল।
তাতেই তোর আশা সফল।।
ব্যাখ্যা– :
বেলে মাটিতে পটোল করিবে রোপণ।
জন্মিবে প্রচুর ফল আশা করিবে পূরণ।।
৫৫.
বলে গেছে বরাহের পো।
দশটি মাসে বেগুন রো।।
চৈত্রে বৈশাখ দিবে বাদ।
ইথে নাহি কোন বিষাদ।।
ধরলে পোকা দিবে ছাই।
এর চেয়ে আর উপায় নাই।।
মাটি শুকাইলে ঢালবে জল।
সকল মাসেই পাবে ফল।।
ব্যাখ্যা– :
চৈত্র ও বৈশাখ ছাড়া সকল মাসেতে।
পারিবে কৃষক ক্ষেত্রে বেগুন পুঁতিতে।।
পোকা যদি ধরে ছাই দাও ছড়াইয়ে।
সুখী হও বারো মাস বেগুন খাইয়ে।।
৫৬.
অঘ্রাণে যদি না হয় বৃষ্টি।
না হয় কাঁঠালের সৃষ্টি।।
ব্যাখ্যা– :
অগ্রহায়ণ মাসেতে না হইলে জল।
কাঁঠালের গাছে নাহি ধরিবেক ফল।।
৫৭.
এক পুরুষে রোপে তাল।
পর পুরুষে করে পাল।।
তারপর যে সে খাবে।
তিন পুরুষের ফল পাবে।।
ব্যাখ্যা– :
তিন পুরুষের কম নাহি পাবে তাল।
তাল গাছে পেতে ফল কাটে তিন কাল।।
৫৮.
খাত বিশে করি ফাঁক।
আম কাঁঠাল পুঁতে রাখ।।
গাছ গাছাড়ি ঘন সবে না।
ফলও তাত ফলবে না।।
ব্যাখ্যা– :
বিশ বিশ হস্ত দূরে পুঁতিবেক যদি।
কাঁঠালের ফল তবে দিবেন বিধি।। গাছে ডালে ঠাসাঠাসি হয়ে যদি থাকে।
ফলহীন গাছ শুধু সর্বলোকে দেখে।।
৫৯.
বার বছরে ফলে তাল।
যদি না লাগে গরুর লাল।।
ব্যাখ্যা– :
পত্র যদি গরুতে ভক্ষণ নাহি করে।
ফল দিবে তালগাছ দ্বাদশ বৎসরে।।
৬০.
নলেকান্তর গজেক বাই।
কলা রুয়ে খেয়ে ভাই।।
রুয়ে কলা না কেটো পাত।
তাতেই কাপড় তাতেই ভাত।।
ব্যাখ্যা– :
আট হাত অন্তর অন্তর কলা পুঁতে।
পাতা তার কদাচন না যাবে কাটিতে।।
ভুরি পরিমাণে কলা জন্মিবে তাহ’লে।
অন্নের অভাব নাহি হবে কোনকালে।।
৬১.
ফাগুনে এটে।
পোঁত কেটে।।
বেড়ে যাবে ঝাড়কে ঝাড়।
কলা বইতে ভাঙ্গবে ঘাড়।।
ব্যাখ্যা– :
ফাল্গুনে কলার এঁটে কেটে পুঁতে দিলে।
অচিরে কলার ঝাড় বাড়ে তাহা হলে।।
জন্মিবে প্রচুর কলা তাহলে নিশ্চয়।
খনার বচন ইহা মিথ্যা কভু নয়।।
৬২.
ডাক ছেড়ে বলে রাবণ।
কলা লাগাবে আষাঢ় শ্রাবণ।।
তিন শত ষাট ঝাড় কলা রুয়ে।
থাক গৃহস্থ ঘরে শুয়ে।।
রুয়ে কলা না কাট পাত।
তাতেই হবে কাপড় ভাত।।
ব্যাখ্যা– :
আষাঢ় শ্রাবণে কলা রোপণ উচিত।
কিন্তু পাতা কাটা তার নহে তো বিহিত।।
তিন শত ষাট ঝাড় করিয়া রোপণ।
নিশ্চিন্ত হইয়া ঘরে কর হে শয়ন।।
ভাতের ভাবনা আর কখননা রবে।
ঘরে বসে অন্ন-বস্ত্র সেই জন পাবে।।
৬৩.
ডাক দিয়ে বলে রাবণ।
রুযে কলা আষাঢ় শ্রাবণ।।
কলা তলায় যাবিনে।
ফল তার যাবিনে।।
লেগে যাবে ভঁয়ে।
কলা পড়বে শুয়ে।।
ব্যাখ্যা– :
মতান্তরে এই কথা কেহ বলে।
আষাঢ় শ্রাবণ মাসে কদলী পুঁতিলে।।
পোকায় বিনাশে গাছ, ফল নাহি হয়।
অতএব এ দু’মাসে ত্যজিবে নিশ্চয়।।
৬৪.
সিংহ মীন বর্জ্যে।
কলা খাবে আজ্যে।।
ব্যাখ্যা– :
ভাদ্র ও চৈত্র ব্যতীত সকল মাসেতে।
পারহ কদলী রোপণ করিতে।।
৬৫.
যদি রোয়ে ফাল্গুনে কলা।
তবে হবে মাস সফলা।।
ব্যাখ্যা– :
ফাল্গুনে রোপিলে কলা মাস মাস ফলে।
ফাল্গুনের মত ফল নহে অন্যকালে।।
৬৬.
ভাদ্র মাসে রুয়ে কলা।
সবংশে মলো রাবণ শালা।।
ব্যাখ্যা– :
ভাদ্র মাসে কলাগাছ করিয়া রোপণ।
সবংশেতে তার ফলে মরিল রাবণ।।
এই হেতু ভাদ্রেতে কদলী পোঁতা মানা।
পেতে শুধু সেই যার নাহি আছে জানা।।
৬৭.
আগে পুঁতে কলা।
বাগ বাগিচা ফলা।।
শোনরে বলি চাষার পো।
কলা নারিকেল ক্রম রো।।
নারিকেল বার সুপারি আট।
এর ঘন তখনি কাট।।
ব্যাখ্যা– :
যে স্থানে বাগান করিতে সাধ যাবে।
অগ্রে কদলী গাছ তাহাতে বসাবে।।
পরে নারিকেল বৃক্ষ ক্রমেতে গুবাক।
বসাইয়া দিযে যথারীতি ফাঁক ফাঁক।।
নারিকেল বার বার হাত অন্তরেতে।
গুবাক বসাবে প্রতি আট আট হাতে।।
৬৮.
গো নারিকেল নেড়ে রো।
আমটুচুরে কাঁঠাল ভো।।
ব্যাখ্যা– :
নারিকেল সুপারিচারা যদি নাড়ি।
সতেজ হইয়া গাছ উঠে শীঘ্র নাড়ি।।
আম্র যদি নাড়ি ফল ছোট ছোট হবে।
কাঁঠাল নাড়িলে তাহা ভোয়া হয়ে যাবে।।
৬৯.
গোরে গোবরে বাঁশে মাটি।
অফলা নারিকেল শিকড় কাটি।।
ওলে কুটি, মানে ছাই।
এইরূপে কৃষি করগে ভাই।।
ব্যাখ্যা– :
গুবাক বৃক্ষের মূলে দিবেক গোময়।
বাঁশেতে মাটি দিতে হয় মনে যেন রয়।।
যেই নারিকেল গাছে নাহি ধরে ফল।
কাটিয়া দিবেক তার শিকড় কেবল।।
ওলের গোড়ায় খড় কুটি পল দিযে।
মান গাছে ছাই দিলে তবে তাহা হবে।।
৭০.
নারিকেল গাছে নুনমাটি।
শীঘ্র শীঘ্র বাঁধে গুটি।।
ব্যাখ্যা– :
শীঘ্র শীঘ্র ফলভোগ করিবারে চাও।
নারিকেল মূলে তবে নুনমাটি দাও।।
৭১.
দাতার নারিকেল বখিলের বাঁশ।
কমে না বাড়ে বার মাস।।
ব্যাখ্যা– :
মধ্যে মধ্যে যত নারিকেল পেড়ে খাবে।
ততবেশী নারিকেল ফলিতে থাকিবে।
বাঁশঝাড়ে যত বাঁশ না কাটিবে।
ততই তাহার ঝাড় বাড়িয়া উঠিবে।।
৭২.
খনা বলে শুনে যাও।
নারিকেল মূলে চিটা দাও।।
গাছ হয় তাজা মোটা।
শীঘ্র শীঘ্র ধ’রে গোটা।।
ব্যাখ্যা– :
ধান্যের আগড়া দিলে নারিকেল মূলে
শীঘ্র গাছ হয় মোটা শীঘ্র ফল ফলে।।
৭৩.
শোন রে বাপু চাষার পো।
সুপারির বাগে মান্দার রো।।
মান্দার পাতা পড়লে গোড়ে।
ঝট পটু তার ফল বাড়ে।।
ব্যাখ্যা– :
করিলে গুবাক বাগে মান্দার রোপণ।
পড়িয়া মান্দার পাতা সারের বর্ধন।।
সতেজ সুপারি গাছ হয় তাহা হ’লে।
সতেজ হইলে গাছ শীঘ্র শীঘ্র ফলে।।
৭৪.
হাতে হাতে ছোঁয় না।
মরা ঝাটি রয় না।।
খনা বলে যখন চায়।
তখন কেন না লয়।।
ব্যাখ্যা– :
এইরূপে বসাতে হবে নারিকেল গাছ।
একে অপরের যেন নাহি লাগে আঁচ।।
একটি গাছের পাতা না ঠেকে অপরে।
পুঁতিতে হইবে গাছ এমনটি করে।।
উপরের শুষ্কপত্র বৃক্ষমূল আর।
ফল যদি চাও সদা রাখ পরিস্কার।।
৭৫.
পূর্ণ আষাঢ়ে দক্ষিণা বয়।
সেই বৎসর বন্যা হয়।।
ব্যাখ্যা– :
সম্পূর্ণ মাস যাবৎ প্রথম হইতে।
দক্ষিণা বাতাস যদি বহে আষাঢ়েতে।।
সুনিশ্চিত সে বৎসর বন্যা তবে হবে।
খনার বচন ইহা কে নয় করিবে।।
৭৬.
আমে ধান।
তেঁতুলে বান।।
ব্যাখ্যা– :
যে বৎসর আম্র বহু পরিমাণে হয়।
ধান্য সে বৎসর খুব জন্মিবে নিশ্চয়।।
তেঁতুল অধিক আর হবে যে বৎসরে।
হবে বন্যা সে বৎসর রাখো মনে করে।।
৭৭.
বামুন বাদল বান।
দক্ষিণা পেলে যান।।
ব্যাখ্যা– :
দক্ষিণা পেলে যেমন ব্রাহ্মণ না থাকে।
অমনি আপন পথ আপনি সে দেখে।।
দক্ষিণা পেলে অর্থাৎ দক্ষিণ হাওয়ায়।
বান ও বাদল সেইরূপ চলে যায়।।
৭৮.
চৈতে কুয়া ভাদ্রে বান।
নরের মুন্ড গড়াগড়ি যান।।
ব্যাখ্যা– :
চৈত্র মাসে কুঙ্কুটিকা বন্যা ভাদ্রে আর।
ধ্রুব সে বৎসর সংখ্যা বাড়িবে মড়ার।।
৭৯.
পৌষে গরমি বৈশাখে জাড়া।
প্রথম আষাঢ়ে ভরবে গাড়া।।
ব্যাখ্যা– :
পৌষমাসে যে বৎসর শীত কমে যাবে।
বৈশাখে কিঞ্চিৎ শীত অনুভব হবে।।
প্রথম আষাঢ়ে বর্ষা হবে অতিশয়।
শ্রাবণেতে অনাবৃষ্টি জানিবে নিশ্চয়।।
৮০.
খনা বলে শুনহ স্বামী।
শ্রাবণ ভাদর নাইকো পানি।।
দিনে জল রাতে তারা।
এই দেখবে দুঃখের ধারা।।
ব্যাখ্যা– :
প্রথম বর্ষায় দিনে বৃষ্টি হবে।
অথচ রাত্রিতে শূন্যে তারা দেখা যাবে।।
সে বৎসর অনাবৃষ্টি হইবে নিশ্চয়।
খনার বচন ইহা মিথ্যা কভু নয়।।
৮১.
পূবেতে উঠিলে কাড়।
ডাঙ্গা ডোবা একাকার।।
ব্যাখ্যা– :
পূর্বদিকে রামধনু যদি দেখ বর্ষাকালে।
ভাঙ্গা ডোবা একাকার হয়ে যাবে জলে।।
৮২.
চাঁদের সভার মধ্যে তারা।
বর্ষে পানি মুষলধারা।।
ব্যাখ্যা– :
চন্দ্রমন্ডলে মধ্যে তারা যদি দেখ।
বর্ষিবে মুষলধারে বৃষ্টি জেনে রাখ।।
৮৩.
চৈত্রেতে থর থর।
বৈশাখে ঝড় পাথর।।
জ্যৈষ্ঠেতে তারা ফুটে।
তবে জানহ বর্ষা বটে।।
ব্যাখ্যা– :
চৈত্রমাসে যে বৎসর শীত বোধ হবে।
বৈশাখেতে শিলাবৃষ্টি ঝড় দেখা দিবে।।
জ্যৈষ্ঠমাসে পরিস্কার আকাশ মন্ডল।
সে বৎসর বর্ষায় বেশ হইবেক জল।।
৮৪.
কি কর শ্বশুর লেখাজোখা।
মেঘেই বুঝবে জলের রেখা।
কোদালে কুড়লে মেঘের গা।
মধ্যে মধ্যে দিচ্ছে বা।।
বলো চাষার বাধতে আল।
আজ না হয় হবে কাল।।
ব্যাখ্যা– :
শ্বশুরকে সম্বোধন করি খনা ক’ন।
লেখাজোখা করিয়া কিবা করিবে গণন।।
হবে কি না হবে জল লক্ষণে বুঝিব।
মেঘ দেখিলেই তা বুঝিতে পারিব।।
কোদালে কুড়ুলে মেঘ যদি দেখা যায়।
তার মধ্যে মধ্যে বায়ু প্রবাহিত তায়।।
সত্বর হইবে জল নিশ্চয় জানিবে।
ক্ষেত্রে গিয়া চাষী আলি বন্ধন করিবে।।
সেদিন না হলে বৃষ্টি হবে পরদিনে।
হইবে বৃষ্টি ঠিক মনে রেখ জেনে।।
ধূসর বর্ণের খন্ড খন্ড মেঘ যত।
কোদালে কুড়লে বলি হবে তাহা জ্ঞাত।।
৮৫.
দূর সভা নিকট জল।
নিকট সভা রসাতল।।
ব্যাখ্যা– :
ধরামন্ডল সভা দূরবর্তী রবে।
তবেই সত্বর বর্ষণ হইবে।।
নিকটে যদ্যপি তবে অনাবৃষ্টি হয়।
রসাতল কারে আর বলো তবে কয়।।
৮৬.
পশ্চিমে ধনু নিত্য খরা।
পূবের ধনু বর্ষে ধারা।।
ব্যাখ্যা– :
পশ্চিমে উদিল রামধনু অনাবৃষ্টি।
পূর্বদিক হলে হবে জলের বৃষ্টি।।
৮৭.
বেঙ ডাকে ঘন ঘন।
শীঘ্র বৃষ্টি হবে জেনো।।
ব্যাখ্যা– :
ঘন ঘন ভেকের গর্জন যদি হয়।
ত্বরায় হইবে বৃষ্টি একথা নিশ্চয়।।
৮৮.
ভাদুরে মেঘ বিপরীত বয়।
সে দিন বৃষ্টি কে ঘোচায়।।
ব্যাখ্যা– :
ভাদ্রমাসে মেঘোদয় হইবে যখন।
বহে যদি বিপরীত পবন তখন।।
অত্যন্ত জলবর্ষণ হইবেক তবে।
খনা বলে কার সাধ্য অন্যথা করিবে।।
৯০.
পৌষে কুয়া বৈশাখে ফল।
য’দিন কুয়া ত’দিন জল।।
শনির সাত মঙ্গলের তিন।
আর সব দিন দিন।।
ব্যাখ্যা– :
পৌষ মাসে যে ক’দিন কুয়াশা হইবে।
বৈশাখেতে ঠিক ততদিন বৃষ্টি হবে।।
শনিবারে যদি বৃষ্টি আরম্ভ হয়।
এক সপ্তাহকাল স্থায়ী তাহা হয়।।
মঙ্গলে আরম্ভ হলে তিন দিন থাকে।
অন্য বার হ’লে সেই দিন মাত্র থাকে।।
৯১.
কর্কট ছরকট সিংহে শুকা।
কন্যা কানে কান।।
বিনা বায় বর্ষে তুলা।
কোথায় রাখবি ধান।।
ব্যাখ্যা– :
শ্রাবণে অত্যন্ত বৃষ্টি ভাদ্রমাসে শুকা।
আশ্বিনেতে জল কানে কানে দেখা।।
কার্তিকে না হবে ঝড় মন্দ মন্দ জল।
ভুরি পরিমাণে তবে মিলিবে ফসল।।
৯২.
যদি বর্ষে অঘ্রাণে।
রাজা যান মাগনে।।
যদি বর্ষে পৌষে।
কড়ি হয় তুষে।।
যদি বর্ষে মাঘের শেষ।
ধন্য রাজার পুণ্য দেশ।।
যদি বর্ষে ফাগুনে।
চিনা কাউ দ্বিগুণে।।
ব্যাখ্যা– :
অগ্রহায়ণেতে যদি বর্ষে বারিধার।
কীটে শস্য নষ্ট তবে করিবে বিস্তর।।
রাজস্ব আদায় নাহি হইবে রাজার।
সুতরাং তাঁর ঘরে হবে হাহাকার।।
পৌষেতে বর্ষিলে তুষ বেচে পাই কড়ি।
হৈমন্তিক ধান ঝরে যায় গড়াগড়ি।।
মাঘেতে বর্ষণ হ’লে রবিশস্য হবে।
ফাল্গুনে কাউন চীনা ধান্য জনমিবে।।
৯৩.
জ্যৈষ্ঠে শুকো আষাঢ়ে ধারা।
শস্যের ভার না সহে ধরা।।
ব্যাখ্যা– :
জ্যৈষ্ঠমাসে শুকো ও আষাঢ়ে জল হলে।
প্রচুর হইবে শস্য জানিও সকলে।।
৯৪.
মাঘ মাসে বর্ষে দেবা।
রাজা ছাড়ে প্রজার সেবা।।
ব্যাখ্যা– :
মাঘ মাসে জল যদি হইবে বর্ষণ।
সুখী ত হইবে যত প্রজাদের মন।।
কারণ প্রচুর শস্য জন্মিবে তাহলে।
সমস্ত বৎসর বেড়াইবে হেসে খেলে।।
৯৫.
জ্যৈষ্ঠ মাসে আষাঢ় ভরে।
কাটিয়া মাড়িয়া ঘর করে।।
ব্যাখ্যা– :
জ্যৈষ্ঠ মাসে শুককো হলে আষাঢ়ের জলে।
ভূমি পরিপূর্ণ হয় খুব শস্য ফলে।।
৯৬.
যদি বর্ষে মকরে।
ধান হবে ঠেকরে।।
ব্যাখ্যা– :
মাঘ মাসে যদি দেখ বৃষ্টিপাত হয়।
যথাকালে ধান্য তার জন্মিবে নিশ্চয়।।
৯৭.
যদি হয় চৈতে বৃষ্টি।
তবে হয় ধানের সৃষ্টি।।
ব্যাখ্যা– :
চৈত্র মাসে যদি দেখ বৃষ্টিপাত হয়।
যথাকালে ধান্য তার জন্মিবে নিশ্চয়।।
৯৮.
কার্তিকে পূর্ণিমা ক’রে আশা।
খনা বলে ডেকে শুনরে চাষা।।
নিৰ্ম্মল মেঘে যদি বাত রবে।।
রবিখন্দের ভার ধরণী না সবে।।
ব্যাখ্যা– :
কার্তিকের পৌর্ণমাসী রজনী সময়।
মেঘশূন্য পরিস্কৃত যদি নভ হয়।।
ভুরি পরিমাণে রবিশস্য জনমিবে।
মেঘে বৃষ্টি হলে জেনো কিছু নাহি হবে।।
সুতরাং মাঠে যাওয়া নিস্ফল চাষার।
শুধু হাতে গৃহেতে ফিরতে হয় তার।।
৯৯.
আষাঢ়ী নবমী শুকল পখা।
কি কর শ্বশুর লেখাজোখা।।
যদি বর্ষে মুষলধারে।
মাঝ সমুদ্রে বগা চরে।।
যদি সমুদ্রে ছিটে ফোঁটা।
পৰ্ব্বতে হয় মীনের ঘটা।।
বর্ষিলে পর ঝিমি ঝিমি।
শস্যের ভার না সহে মেদিনী।।
ব্যাখ্যা– :
আষাঢ়ের শুক্লপক্ষে নবমী তিথিতে।
বর্ষম মুষলধারে হয় যে বর্ষেতে।।
অনাবৃষ্টি হইবে জানিবে সত্বর।
ছিটে-ফোঁটা আষাঢ়ে মাছ হয় বিস্তর।।
মন্দ মন্দ বর্ষণেতে শস্য বেশ হয়।
কথা জেনো খনা যাহা কয়।।
১০০.
হেসে চাকি বসে পাটে।
শস্য সেবারে না হয় মোটে।।
ব্যাখ্যা– :
অস্তকালে হেসে সূর্য পাটেতে বসিবে।
আষাঢ়ে যদ্যপি হেন ঘটনা ঘটিবে।।
কিছু শস্য তবে না হবে সে বৎসরে।
মন দিয়া এ বচন শুন নারী নর।।