১৮. মুনির মারা গেল

১৮

মুনির মারা গেল শ্রাবণ মাসের কুড়ি তারিখে।

দিন-তারিখ মিসির আলির মনে থাকে না। এই তারিখটা মনে আছে, কারণ এর দু’ দিন পরই ছিল ২২শে শ্রাবণ। রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুদিন।

মৃত্যুর আগে-আগে মুনির বেশ সহজ ও স্বাভাবিক আচরণ করছিল। রসিকতা করছিল। তবে মিসির আলি বুঝতে পারছিলেন যে, সে যে-কোনো কারণেই হোক প্রচণ্ড ভয় পাচ্ছে।

মিসির আলি তার হাত ধরে বসে ছিলেন। মুনির এক সময় বলল, ‘বোধহয় মারা যাচ্ছি, তাই না?’

মিসির আলি জবাব দিলেন না। মুনির বলল, ‘আপনি একবার বলেছিলেন, মানুষই ঈশ্বর, তাহলে মৃত্যুকে আমরা জয় করতে পারি না কেন?’

‘হয়তো পারি।’

‘হ্যাঁ, হয়তো পারি।’

‘তোমার কি মরতে ভয় লাগছে?’

‘লাগছে।’

‘তোমার তো ভয় লাগা উচিত নয়। তুমি তো অসংখ্য জীবনের কথা বল। এই জীবন গেলে কী হবে, তোমার তো আরো অযুত নিযুত লক্ষ কোটি জীবন আছে।

‘এখন মনে হচ্ছে, সবই আমার কল্পনা। স্যার, আপনি আমার মাথায় হাত রাখুন।’

মিসির আলি পরম মমতায় তাঁর হাত রাখলেন মুনিরের মাথায়। তাঁর চোখ ভিজে উঠছে। তিনি তাকিয়ে আছেন জানালার দিকে। জানালার ওপাশে আলো-আঁধারের কী এক অপূর্ব রহস্যময় জগৎ!

মিসির আলি বিড়বিড় করে বললেন-

You promise heavens free from strife,
Pure truth and perfect change of will;
But sweet, sweet is this human life,
So sweet, I fain would breathe it still;
Your chilly stars I can forgo,
This warm kind world is all I know.

***

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *