১৬. A+ লাভের সিক্রেট ফরমুলা
আমি বিশ্বাস করি প্রতিটি সফলতার পেছনেই আছে কিছু ফর্মুলা। সেটাকে সচেতন বা অবচেতনভাবে ব্যবহার করেই মানুষ সাফল্য লাভ করে। আপনি হয়তো দেখবেন কিছু ছাত্র আছেন, যারা কখনোই খুব বেশি পড়ালেখা করেন না, কিন্তু পরীক্ষায় অনেক বেশি নম্বর পান। অন্যদিকে কেউ কেউ প্রচুর পড়েও B বা C গ্রেড নম্বর পান। এর কারণ কী? এ অধ্যায়ে আপনাকে আমি জানাব কী কী নিয়ম অনুসরণ করে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পাওয়া যায়।
ফরমুলা-১
লেগে থাকুন
যে সব ছাত্র A+ পান তারা বছরের সব সময়ই পড়ালেখার উপর থাকেন। এমনকী নভেম্বর মাসে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে ডিসেম্বরেই তাঁরা নতুন বই কিনে পড়া শুরু করে দেন। প্রতিদিন যদি গড়ে ৫ ঘণ্টা পড়া হয় তা হলে একজন ভাল ছাত্র ৩ মাসের টার্মে পড়ছেন ৪৫০ ঘণ্টা। এদিকে খুবই প্রতিভাবান একজন ছাত্র যদি পরীক্ষার ১৫ দিন আগে পড়া শুরু করেন এবং দিনে ১০ ঘণ্টা করে পড়লেও মোট সময় পাচ্ছেন ১৫০ ঘণ্টা। এদিকে প্রথমজন দ্বিতীয়জনের চেয়ে যেসব সুবিধা বেশি পাচ্ছেন তা দেখুন–
১. তিনগুণ বেশি সময় পাচ্ছেন।
২. প্রতিটি টপিক বেশ কয়েকবার রিভিশন দেবার সুযোগ পাচ্ছেন।
৩. নোট বানাতে ও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারছেন।
৪. চাপমুক্ত অবস্থায় পড়ার ফলে পড়ার কোয়ালিটিও হচ্ছে অনেক ভাল।
অন্যদিকে, দ্বিতীয়জন দিনরাত পড়ে যা পাচ্ছেন তা হলো–
১. প্রচুর মানসিক চাপ ও হতাশা।
২. যা পড়ছেন তা দ্রুত ভুলে যাচ্ছেন।
৩. পরীক্ষা দেবার পরও সে বিষয়ের উপর কোন দখল থাকছে না। এটা অনেকটা সেই খরগোশ আর কচ্ছপের দৌড়ের গল্পের মত। এটা এমন যে, দু’জনকে দু’ঘণ্টায় ১০ মাইল দৌড়তে বলা হলো। তাদের একজন যদি ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিটের সময় দৌড়ানো শুরু করেন, তা হলে তিনি কার্ল লুইস হলেও লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবেন না।
তবে, এ লেগে থাকাটা খুবই কঠিন বিষয়। এজন্য আপনাকে কিছু টিপস জানিয়ে দিচ্ছি।
১. টিচারের আগে পড়া শেষ করুন
পৃথিবীর ৮০ ভাগ ছাত্রই ক্লাসে পড়া বুঝতে পারেন না। এটাই স্বাভাবিক। একটা নতুন জিনিস বুঝতে সময় লাগে। তাই আপনার কাজ হলো আগামী দিন কী পড়ানো হবে তা আগেই জেনে নিন অথবা সিলেবাস বের করে পড়ে ফেলুন। সবচেয়ে ভাল হয় Mind Map তৈরি করলে। এ বইয়ের নিয়মগুলো অনুসরণ করে একবার পড়ে তারপর ক্লাসে আসুন। তা হলে দেখবেন, সবচেয়ে কঠিন বিষয়গুলো আপনি কত সহজে বুঝতে পারছেন। যেখানে আপনার বন্ধুরা ক্লাস শেষে ৩০% পড়া বুঝতে পারছেন, মনে রাখতে পারছেন মাত্র ১০%, সেখানে আপনার বোঝা আর মনে রাখার হার হবে ১০০% ।
২. ক্লাসে মনোযোগী হোন আর প্রশ্ন করুন
আপনি হয়তো জানতে চাইছেন, যদি আগেই আমার পড়া হয়ে যায়, তা হলে ক্লাস করার কী দরকার! ও আচ্ছা। ঠিক আছে । বলছি। এর উত্তর হলো, একজন শিক্ষকের কাজ আপনাকে পড়ানো নয়। তার কাজ হলো, যে পড়া আপনি বোঝেন না, তা বোঝানো আর পড়ায় সাহায্য করা। আপনি যদি আগেই পড়ে আসেন, তা হলে যে টপিকগুলো বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, তা টিচারকে জিজ্ঞেস করুন। আর যখনই কোন কিছু বুঝতে সমস্যা হবে, প্রশ্ন করুন। আপনার বন্ধুরা আপনার আঁতলামি দেখে হাসাহাসি করলেও পাত্তা দেবেন না। কারণ, তারাই পরে আপনার কাছে পড়া বুঝতে আসবে।
৩. দ্রুত রিভিশন দিন
ক্লাস থেকে বাসায় আসার সময় রাস্তায় বা গাড়িতে যেটুকু সময় পান পড়াটাকে রিভিশন দিন। যদি তা না পারেন তা হলে বাসায় এসে ড্রেস চেঞ্জের আগেই একবার পড়ে ফেলুন। তারপর দিনের পড়া শেষে রাতে ঘুমাবার আগে আরেকবার দেখুন। ব্যস। এটাই আপনার ৮০ ভাগ পড়া মনে রাখার কাজ করবে।
৪. ভুলগুলোকে হাইলাইট করুন
আপনার ক্লাস টেস্ট বা হোমওয়র্ক বা পরীক্ষায় যখনই কোন ভুল করছেন সেটা একটা খাতায় তারিখ, সময় দিয়ে তুলে রাখুন। এ খাতার নাম দিন ভুল খাতা। প্রতিটি সাবজেক্টের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক পৃষ্ঠা বরাদ্দ করুন। পরীক্ষার আগে ভুল খাতা অবশ্যই দেখে নিন। খেয়াল রাখবেন যেন এ ভুল আর না করেন।
ফরমুলা-২
ভুল থেকে দ্রুত শিক্ষা নিন
ঠেকে শেখাই সবচেয়ে বড় শেখা। তাই যখনই কোন ভুল করছেন লক্ষ্য রাখুন যেন তা রিপিট না হয়। ভুল করলে লজ্জার কিছু নেই। কারণ, একজন ভাল ছাত্র অবশ্যই খারাপ ছাত্রের চেয়ে অনেক বেশি ভুল করবেন। তবে ভাল ছাত্র সে ভুল করবেন মূল পরীক্ষার আগে। যেমন-হোমওয়র্কের খাতায়, ক্লাস টেস্ট বা বাসায় প্র্যাকটিসের সময়। এ ভুলের থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি মূল পরীক্ষায় আর ভুল করেন না। এদিকে খারাপ ছাত্ররা তাঁদের ভুলগুলো সংশোধনের কোন সুযোগ পান না। তাই, তাদের সব ভুল থাকে পরীক্ষার খাতায়। Mistakes are the Best teachers. আপনি দেখবেন এ বইয়ে পড়বার নানা পদ্ধতি দেয়া আছে। আপনার নিজেরও স্বাধীনতা আছে নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করার। এর মাঝে যে পদ্ধতিতে ভুল বেশি হচ্ছে তা বর্জন করুন। অন্যভাবে পড়ন। কিন্তু, প্লীজ, হাল ছাড়বেন না।
ফরমুলা-৩
ভুলের কারণ বের করুন
অনেক ছাত্রই ছোট ছোট ক্লাস টেস্ট দিতে তেমন উৎসাহ পান না। অন্যেরটা দেখে লেখা যায় তাই অত সিরিয়াসলি পড়েন না। কিন্তু আপনি এমন ভুল করবেন না। প্রতিটা ক্লাস টেস্ট বা সারের বাসায় পরীক্ষায় আপনার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুন। এগুলোকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিন। আর প্রতি পরীক্ষার শেষে PostMortem করুন। দেখুন, কী কী ভুল করছেন। কোন্ কোন্ টপিক ভাল পড়া হয়নি ইত্যাদি। এবং তা সংশোধন করুন।
একটা প্রশ্নের উত্তর ভুল হবার পেছনে চারটি মূল কারণ আছে
A. পড়া হয়নি
সবচেয়ে কমন কারণ। কোন প্রশ্নের উত্তর না জানলে ভুল তো হবেই।
B. মনে নেই
আপনি পড়েছিলেন কিন্তু পরীক্ষার হলে মনে করতে পারেননি।
C. পড়া প্রয়োগ করতে পারেননি
আপনার কোন অংকের সূত্র জানা আছে, কিন্তু কীভাবে প্রয়োগ করলে উত্তর মিলবে তা জানেন না। অথবা, লেখার পদ্ধতি জানা না থাকায় জানা প্রশ্ন ভুল করে এসেছেন। D. অসাবধানতা এ ভুল প্রায় সবারই হয়ে থাকে। পরীক্ষায় ভুল করে A-এর জায়গায় B দাগিয়ে এসেছেন। ৪টা প্রশ্নের জায়গায় ৩টা লিখে এসেছেন।
এজন্য, প্রতিটি পরীক্ষার পরই আপনার ভুলগুলোকে চিহ্নিত করুন। ভুলগুলোকে A, B, C, D এভাবে ভাগ করুন। দেখুন, কোন্ ধরনের ভুল আপনার বেশি হচ্ছে। নিজেকে মূল্যায়ন করুন। ধরুন, মিলি আর রকিব দু’জনেই ইংরেজীতে ১০০তে ৫০ পেয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে, আপনার মনে হতে পারে এরা দুজনেই সমমানের ছাত্র। কিন্তু ভুলগুলো চিহ্নিত করে দেখলেন, মিলির বেশিরভাগ ভুল A ক্যাটাগরীর। আর রকিবের D ক্যাটাগরীর । তা হলে, বুঝতেই পারছেন, রকিব অবশ্যই মিলির চেয়ে বেশি পড়ালেখা করেছে। কারণ, তার ভুলগুলো অসাবধানতাবশত, অথচ মিলির ভুলগুলো না পড়ার জন্য।
এভাবে আপনি নিজের ভুলগুলোকে চিহ্নিত করুন ও যথাযথ ব্যবস্থা নিন।
A. গ্রুপ
আপনার সমস্যার সমাধান হলো একটাই। পড়ন। অনেকবার পড়ুন।
B. গ্রুপ
আপনার ভুল হচ্ছে মনে না থাকার জন্য। তাই মনে রাখার কৌশলগুলো প্রয়োগ করে পড়ুন। Mind Map বানান।
C. গ্রুপ
আপনার সমস্যা পড়া প্রয়োগ করতে না পারা। এজন্য আপনাকে পুরানো প্রশ্নপত্রে বা সারের বাসায় বা নিজে প্রশ্ন তৈরি করে পরীক্ষা দিতে হবে। প্রতিটা পরীক্ষার পর ভুলগুলোকে শুদ্ধ করে নিন।
D. গ্রুপ
যেহেতু অসাবধানতাই আপনার মূল সমস্যা তাই আপনাকে যা করতে হবে তা হলো–
১. প্রশ্নপত্র কমপক্ষে তিনবার পড়ুন
পরীক্ষার প্রশ্ন হাতে নিয়েই লিখতে বসবেন না। পুরো প্রশ্ন একবার ধীরে ধীরে পড়ন। জানা-অজানা সব প্রশ্নই পুরোটা পড়ন। এবার দ্বিতীয়বার পড়ন এবং যে প্রশ্নগুলো সহজে লিখতে পারবেন সেগুলো দাগান। এবার তৃতীয়বার পড়ন। যে কয়টা প্রশ্নের উত্তর আপনাকে লিখতে হবে সে অনুযায়ী প্রশ্ন নির্বাচন করুন। ধরুন, ১৬টা প্রশ্নের মধ্যে ১২টা আপনাকে লিখতে হবে। আপনার ভালভাবে জানা প্রশ্নের সংখ্যা ৯টা। তৃতীয়বার পড়ার সময় বাকি ৩টি প্রশ্ন নির্বাচন করুন।
২. প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর লিখবার আগে একটু ভেবে নিন
জানা প্রশ্ন বা অংকের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায়, অর্ধেকে এসে ভুলে গেছেন। তাই প্রশ্ন লেখার আগে একটু ভেবে নিন। সবসময় চার্ট বা পয়েন্ট করে উত্তর লেখার চেষ্টা করুন। প্রতিটি প্রশ্নের শুরুতে আপনি কী বর্ণনা করবেন আর শেষে কী বর্ণনা করেছেন তা লিখুন আলাদা প্যারায়। এ দু’টো লাইন আপনাকে দু’টো মূল্যবান নম্বর এনে দেবে। তাই প্রশ্ন লেখার আগে ৩০ সেকেন্ড ভেবে নিন। কয় পৃষ্ঠার উত্তর হবে, কোথায় ছবি আঁকবেন বা চার্ট করবেন। এ কাজটা অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে দেখবেন, যে কোন কঠিন প্রশ্ন আপনি অনেক সুন্দরভাবে গুছিয়ে লিখে আসতে পারছেন। ৩. রিভিশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিন রচনামূলক বা অবজেক্টিভ প্রশ্ন যাই হোক, রিভিশনের জন্য পর্যাপ্ত সময় রাখুন। আপনাকে পরীক্ষার হলে যাবার আগেই সময় হিসেব করে নিতে হবে। ধরুন, আপনার পরীক্ষার সময় ৩ ঘণ্টা। এ সময়ে আপনাকে ১০-টা প্রশ্ন অ্যানসার করতে হবে। এর মাবে প্রশ্ন পড়া, খাতায় দাগ টানা, Attendance শীটে সাইন করার জন্য ১০ মিনিট, রিভিশনের জন্য ২০ মিনিট আলাদা রাখতে হবে। বাকি ১৫০ মিনিটে আপনার ১০-টা প্রশ্ন লিখতে হবে অর্থাৎ, প্রতি প্রশ্নে সর্বোচ্চ ১৫ মিনিট সময় পাচ্ছেন। ১৫ মিনিটে প্রশ্ন শেষ না হলে পরের প্রশ্নে চলে যান। কারণ, একটা ভাল উত্তরের চেয়ে দুটো মাঝামাঝি উত্তর বেশি নম্বর এনে দেয় রিভিশনের সময় বাকি থাকা প্রশ্নের উত্তর লিখবেন এবং বাসায় প্র্যাকটিস করবেন ১৫ মিনিটে উত্তর লেখার। অবজেক্টিভ প্রশ্নের ক্ষেত্রে যেগুলো পারেন সেগুলো দাগাবেন, বাকিগুলো প্রশ্নপত্রে মার্ক করে রাখুন। রিভিশনের সময় সেগুলো দাগাবেন। আর খেয়াল রাখবেন সবসময় সোজা প্রশ্নের উত্তর আগে লিখবেন কারণ, আগে কঠিন প্রশ্ন লিখতে সময় নষ্ট করে কম নম্বর তুলে, হয়তো সোজা প্রশ্ন, যাতে পুরো নম্বর পেতেন, সেগুলো ভুল করে আসতে পারেন। তাই সহজ প্রশ্নের উত্তর আগে লিখুন ।
৪. লিপ রিডিং করুন
পরীক্ষার হলে লেখার সময় ঠোঁট নেড়ে লেখার অভ্যাস করুন এতে আপনার লেখার গতি অনেক বেড়ে যাবে। আর ভুলের মাত্রাও কমবে।
৫. সুন্দর হাতের লেখা
একজন পরীক্ষক যখন খাতা দেখেন তখন তিনি আপনাকে দেখতে পাচ্ছেন না। তাকে মুগ্ধ করার জন্য আপনার প্রয়োজন সুন্দর হাতে লেখা। সুন্দর হাতের লেখা সব সময় আলাদা আবেদন তৈরি করে । একজন পরীক্ষককে একসাথে অনেকগুলো খাতা দেখতে হয়। বাস্ত বতা হলো, তারা সব খাতা সম্পূর্ণ পড়েন না। আপনি হয়তো অনেক পড়ে, অনেক প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা দিয়েছেন। কিন্তু বাজে হাতের লেখা দেখে পরীক্ষক আপনাকে একটা এভারেজ নম্বর দিয়ে খাতা দেখে ফেললেন। ফলে, আপনার পরিশ্রম বৃথা হয়ে গেল। তাই হাতের লেখা সুন্দর হওয়া একান্ত প্রয়োজনীয়। তা হলে চলুন শিখে নিই কীভাবে হাতের লেখা সুন্দর করবেন।
ছোটবেলায় আমার ছবি আঁকার হাতেখড়ি হয়েছিল চারুকলা থেকে পাস করা আনোয়ার সারের কাছে। আমার কাকের ঠ্যাং, বকের ঠ্যাং মার্কা হাতের লেখা দেখে সবাই খুব মজা পেত। আমার ছোট্টবেলার বন্ধু কামরুল আমার এহেন হাতের লেখা দেখে একদিন বলেছিল, এইটা কী লিখছস, ক? হি হি। এইটা ক’ হইলে আমার নাম জামরুল।
আনোয়ার সার ছবি আঁকা শেখানোর সাথে সাথে আমার হাতের লেখা ভাল করতেও উৎসাহ দিতেন। সারের হাতের লেখা এত সুন্দর ছিল যে, ছুঁয়ে দেখতে ইচ্ছে করত। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন স্ট্রেট লাইন আঁকার। তিনি বলেছিলেন, যদি তুমি সরলরেখা আঁকতে পার, তা হলে যে কোন ছবি আঁকতে পারবে আর যে কোন হাতের লেখা কপি করতে পারবে। এ কথা বলে তিনি ড্রইং খাতায় আড়াআড়িভাবে সরলরেখা আঁকা শুরু করলেন। পুরো পৃষ্ঠা ভরে যাওয়ার পর শুরু করলেন লম্বালম্বিভাবে সরলরেখা আঁকা। এরপর আমাকে বললেন, ‘যখনই সময় পাবে, বাসার পুরানো খবরের কাগজ, খাতা, বই যা কিছুই হাতের কাছে পাবে, তাতে স্ট্রেটলাইন আঁকবে।’
আমি খুবই সুবোধ ও শান্তশিষ্ট বালক ছিলাম। সারের প্রথম আদেশ সরলরেখা আঁকা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম। কিন্তু দ্বিতীয় আদেশ, মানে, পুরানো কাগজে আঁকা আমার মোটেই ভাল লাগত না। তাই আমার ভাই বোনদের বই-খাতা, বাসার নতুন ম্যাগাজিন, পত্রিকা সব এমনভাবে দাগাতাম যে কিছুই পাঠোদ্ধার করার উপায় থাকত না। ফলে, অচিরেই আমার সরলরেখা আঁকার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলো।
কিন্তু এর ফলাফল ছিল অসাধারণ। বগুড়া রোটারী ক্লাবের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় আমি ‘ক’ শাখায় দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়ে গেলাম। আর ক্লাসে আমার হাতের লেখাই হয়ে গেল সবচেয়ে সুন্দর। এজন্য সারের অবদান অসামান্য। কারণ, তার লেখা অক্ষরগুলোর উপর কলম ঘুরিয়ে আমি সুন্দর করে লেখা শিখেছি। হাতের লেখা সুন্দর করতে হলে একটু সময় দিতে হবে। আমি অনেক ধরনের হাতের লেখা কপি করতে পারি। সুন্দর হাতের লেখা দেখেই আপনাকে সুন্দর করে লেখা শিখতে হবে। এর জন্য প্রথমেই কলম বাছাই করুন। যে কলম ব্যবহারে আপনি স্বচ্ছন্দ বোধ করেন, সে ধরনের কলম দিয়ে লিখুন। বাসায় বলপয়েন্ট কলম দিয়ে লিখলেও, পরীক্ষার খাতায় কালির কলম বা জেল পেন ব্যবহার করা ভাল। কারণ, এতে লেখা অনেক বেশি ঝকঝকে হয়। নীল আপনার পছন্দের রং হলেও অনেক পরীক্ষক নীল কালিতে লেখা পছন্দ করেন না। তাই কালো কালির কলমেই লিখুন।
এবার আপনার কোন বন্ধু যার হাতের লেখা খুব সুন্দর, তাঁর খাতা চেয়ে নিন। এর কয়েক পাতা ফটোকপি করে ফেরত দিন। যদি আপনার পরিচিত কোন সুন্দর হাতের লেখা না পান তা হলে বিয়ের কার্ড বা দাওয়াত কার্ড নিয়ে বসুন। একেবারে নিরুপায় হলে নিন শিশুদের বর্ণমালা শেখার বই। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি বাংলা আর ইংরেজীতে নির্দিষ্ট কিছু অক্ষর লেখার স্টাইল বদলে ফেললেই হাতের লেখা সুন্দর হয়ে যায়। বাংলার ক্ষেত্রে অ,, ক, চ, স, ন, ড এ সাতটি অক্ষর লেখার ধরন বদলে ফেললে হাতের লেখা বদলে যায়। মনে রাখবেন, ‘অ’ যেভাবে লিখবেন, ত’ সেভাবে লিখবেন ‘ক’ এর মত করে ‘ব, র’ লিখবেন। প্রথমে পুরানো খাতায় সরলরেখা আঁকা অভ্যাস করুন। অবশ্যই স্কেল ছাড়া। মোটামুটি সোজা আঁকতে পারলেই চলবে। এবার সুন্দর হাতের লেখার উপর হাত ঘুরিয়ে সাদা খাতায় এই সাতটা অক্ষর লিখুন। এবার কমপক্ষে তিন পৃষ্ঠা ভরে একইভাবে লেখা অভ্যাস করুন। এরপর যখনই ক্লাসে বা বাসায় লিখতে বসবেন, এ অক্ষরগুলো আসলেই আপনার অনুশীলন করা অক্ষরের মত করে লেখার চেষ্টা করুন। প্রথমদিকে আপনার কিছুটা কষ্ট হবে। দেখবেন আপনার পুরানো অক্ষরগুলো ঢুকে যাচ্ছে। কিন্তু কিছুটা সচেতন হলেই মোটামুটি সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যেই আপনার হাতের লেখা সুন্দর হয়ে যাবে। ইংরেজী লেখার ক্ষেত্রে এ অক্ষরগুলো হচ্ছে
Aa, Bb, C, Ee, f, I, L, M, R, S, T.
লাইন সোজা রাখবার জন্য বাসায় বা ক্লাসে রুলটানা খাতায় লিখুন। লেখার মাঝে কাটাকাটি যথাসম্ভব কম করবেন। যদি কাটতে হয় অক্ষরের মাঝ বরাবর একটা মাত্র দাগ দিয়ে কাটবেন।
পরীক্ষার খাতায় লেখা শুরু করবার আগে অবশ্যই মার্জিন দেবেন। খাতার উপরে ও বাম দিকে পেন্সিল দিয়ে কমপক্ষে দেড় ইঞ্চি মার্জিন দেবেন। অনেক পরীক্ষকই খাতা ভাঁজ করা পছন্দ করেন না। মার্জিন দেয়া থাকলে পরীক্ষক ভাবতে বাধ্য হবেন যে, আপনি যথাযথ প্রস্তুতি নিয়েছেন। যে প্রশ্নের উত্তর লিখবেন, তা বড় হাতের অক্ষরে লিখে রঙীন কলম বা সাইনপেন দিয়ে আন্ডারলাইন করবেন। এজন্য বাংলা মাধ্যমের পরীক্ষায় প্রশ্নোত্তর নং-আর ইংরেজীতে ‘Answer to the question no’: লিখে তার নীচে দাগ টানুন। এ অংশ অবশ্যই মার্জিনের ভেতরে থাকবে। এর নীচে আরও ১ ইঞ্চি জায়গা খালি রেখে উত্তর লেখা শুরু করুন। যে কোন নতুন প্রশ্ন পৃষ্ঠার প্রথম থেকে শুরু করুন। আগের প্রশ্ন যদি পৃষ্ঠার শুরুতেই শেষ হয়ে যায়, তা হলেও সে পৃষ্ঠা ছেড়ে পরের প্রশ্ন পরবর্তী পৃষ্ঠায় শুরু করুন। পৃষ্ঠা উল্টানোর প্রয়োজন হলে P.T.0. লিখুন। প্রত্যেক প্রশ্ন লেখার সময় খেয়াল রাখবেন, যেন লেখার শেষে কিছু ফাঁকা জায়গা থাকে। কারণ, পরীক্ষার সময় তাড়াহুড়ো করে লেখায় অনেক জরুরী তথ্য বাদ পড়ে যায়। পরীক্ষার খাতায় ছবি আঁকলে তার ডান দিকে স্কেল দিয়ে লম্বা দাগ টানুন। এরপর ছবির বিভিন্ন অংশ চিহ্নিত করে তা সেই লাইন পর্যন্ত দাগ টানুন। লাইনের ডান দিকে তাদের নাম লিখুন। ছবির নীচে অবশ্যই ক্যাপশন দেবেন। এটা না লিখলে আপনি যত সুন্দরই আঁকুন কোন নম্বর পাবেন না। এরপর সময় থাকলে পুরো ছবিটা ক্যাপশন সহ একটা বক্সের ভেতর ঢুকিয়ে ফেলুন। অংক করার সময় পৃষ্ঠার কিছু অংশে বক্স করে তার ভেতর রাফ (যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ) করুন। রাফ শেষ হলে বক্সে ক্রস চিহ্ন দিন।
একটা প্রশ্নের বিভিন্ন অংশের উত্তর একসাথে লিখুন। যদি কোন অংশ না পারেন তা হলে পর্যাপ্ত জায়গা রেখে পরবর্তী প্রশ্নে যান। খেয়াল রাখবেন যেন কোন পৃষ্ঠা একদম খালি না থাকে। ধরুন, কোন প্রশ্নের উত্তর লেখার জন্য তিন পৃষ্ঠা ফাঁকা রেখেছিলেন। কিন্তু দু’পৃষ্ঠাতেই আপনার লেখা শেষ । এক্ষেত্রে পরবর্তী পৃষ্ঠায় বড় করে P.T.O. লিখে দিন।
অবশেষে, আমার বন্ধু বাবুর কাছ থেকে শোনা একটা ঘটনা দিয়ে শেষ করছি। বাবুর বাসা ছিল রাজশাহীতে। ক্লাসের ফার্স্টবয় ছিল তার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু । সে ছেলেটা S.S.C তে রাজশাহী বোর্ডে 1st stand করেছিল । H.S.C.পরীক্ষার শেষ দিন ছিল অংক পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষে তার মুখ অন্ধকার। এতদিন যারা ঈর্ষায় জ্বলত, তারা এবার ভাল একটা উপলক্ষ পেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত। নিশ্চয়ই শালার অংক ভুল হইছে। সবাই চাপা আনন্দ নিয়ে, গভীর আগ্রহে তাকে জিজ্ঞেস করছে, ‘কোনটা পারিস নাই? কোনটা ছাড়লি?’ কিন্তু সে কিছুই বলতে চাইছে না। শুধু বলল, ‘পরীক্ষা খুব খারাপ হইছে।’ সবাই উল্লসিত হয়ে চলে যাবার পর বাবু জানতে চাইল, ‘সত্যি করে বল তো কী হইছে?’
সে কান্নাভেজা কণ্ঠে বলল, ‘ঘণ্টা দেবার সাথে সাথেই সার খাতা টাইনা নিছে। শেষ পৃষ্ঠায় মার্জিন দিতে পারি নাই।’
.
১৭. সময় নিয়ন্ত্রণ
যিনি সময়কে নিয়ন্ত্রণ করেন তিনি তাঁর ভাগ্যকে নিয়ন্ত্রণ করেন
একটা মজার ব্যাপার হলো আপনি ভিক্ষুক হোন বা হোন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আল্লাহ দু’জনকেই দিনে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছেন। কাউকেই কমবেশি দেননি। এই প্রতিদিনের ২৪ ঘণ্টা যারা কাজে লাগিয়েছেন তারাই আজ পৃথিবীতে স্মরণীয়, বরণীয়। আর যারা আলস্যে গা ভাসিয়ে দিয়েছেন তারা হারিয়ে গেছেন সবার স্মৃতি থেকে। তাই আপনাকে সারভাইভ করতে হলে জানতেই হবে সময়ের নিয়ন্ত্রণ।
কিছুদিন আগে বিল গেটস বাংলাদেশে এসেছিলেন। তাঁর সেক্রেটারী পত্রিকা অফিসে একটি টাইমটেবিল পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি তাঁর ৮ ঘণ্টার সফরে কোন্ সময় কী করবেন তা মিনিট হিসেবে সে কাগজে লেখা ছিল। যেমন-দুঃস্থ শিশুদের সাথে কথা বলবেন ‘১৫ মিনিট, মিটিং করবেন ৩০ মিনিট ইত্যাদি। এরপর তিনি যখন আসলেন দেখা গেল প্রতিটি কাজ তিনি একেবারে সেকেন্ড হিসেব করে করেছেন। বাংলাদেশের যানজট, যোগাযোগের অব্যবস্থা কোনকিছুই তার সময়ের হেরফের করাতে পারেনি। আপনার হয়তো মনে হতে পারে তার জীবনযাপন যান্ত্রিক। কিন্তু খেয়াল রাখবেন, বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশের ৮০ ভাগ কম্পিউটার তার কোম্পানীর তৈরি। তার সৎপথে উপার্জিত টাকা দিয়ে তিনি বাংলাদেশের ৫০ বছরের বাজেট একাই করতে পারেন। সময়ের সর্বোৎকৃষ্ট ব্যবহারের কারণেই তিনি প্রতি ঘণ্টায় ১০ মিলিয়ন ডলার বা ৭০ কোটি টাকা আয় করেন। তাই জেনে রাখুন, আপনি যত বড়ই প্রতিভা হোন না কেন, সময় নিয়ন্ত্রণ না করতে পারলে আপনি নিশ্চিতভাবে ব্যর্থ হবেন।
আপনি হয়তো বিখ্যাত সেতার বাদক পণ্ডিত রবিশঙ্করের নাম। শুনে থাকবেন। সেতারের তিন তারে ৩০ হাজারের মত মূল সুর তোলা সম্ভব। এর প্রতিটি সুরের আলাদা আলাদা নাম আছে। এর যে কোন একটা সুর আপনি তাঁকে বাজাতে বলবেন, তিনি তা বাজিয়ে শোনাবেন। তা কম্পিউটারের সাথে মিলিয়ে দেখবেন যে, সুরটা সঠিক হয়েছে। এও কি সম্ভব! আপনি বলতেই পারেন তিনি একজন জিনিয়াস। কিন্তু এর জন্য তাঁকে কতটা সময় দিতে হয়েছে জানেন? মাত্র ১৬ বছর। সত্যি! ১৬ বছরের প্রতিদিন ৮ ঘণ্টা ওস্তাদের কাছে শিখেছেন। আর ১০ ঘণ্টা নিজে বাজিয়েছেন। ১৬ বছরের প্রতিটা দিন তিনি বাজিয়েছেন। ১৬×৩৬৫X১৮=১০৫১২০ ঘণ্টা তিনি সেতার বাজিয়েছেন। তাই সারা পৃথিবী রবিশংকরকে সম্মান করে ।
তা হলে এবার একটু আমরা নিজেদের দিকে তাকাই। খাওয়া ও ঘুমানো ছাড়াই একজন বাংলাদেশী গড়ে ৬ ঘণ্টা অপচয় করেন প্রতিদিন। এ সময় আমরা বিভিন্ন আড্ডা, চুপচাপ বসে থাকা বা ঘুরতে বেড়াতে ব্যয় করি। তা হলে, যদি আমরা ৮০ বছর বাঁচি তা হলে, ৮০ বছরে=৩৬৫x৬=২১৯০x৮০=১৭৫২০০ ঘণ্টা অর্থাৎ, প্রায় ২০ বছর আমরা অলসতা করে কাটিয়ে দিই। একটু ভেবে দেখুন, জীবনের এ বিশটা বছর যদি আপনি সেতার বাজাতেন তা হলে পৃথিবীতে আপনিই হতে পারতেন শ্রেষ্ঠ সেতারবাদক। এখন আপনার ইচ্ছা আপনি কী করবেন। আপনি যা হতে চাইবেন তাই হতে পারবেন। আর এজন্য শিখতে হবে সময়ের নিয়ন্ত্রণ ।
আমাদের প্রত্যেকেরই কাজের সুনির্দিষ্ট শ্রেণীবিভাগ আছে। কিন্তু আপনাকে জানতে হবে কোন্ কাজগুলো আপনাকে লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে।
আমরা অর্থাৎ ছাত্ররা কাজের সময়কে মোটামুটি এভাবে ভাগ করি।
[P দিয়ে Priority বা প্রাধান্য বোঝানো হয়েছে]
আর্জেন্ট | নন-আর্জেন্ট | |
P1 | P2 | |
নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত কাজ | (ক) পরীক্ষার পড়া (খ) বাড়ির কাজ (গ) প্র্যাকটিক্যাল করা | (ক) ক্লাসের আগে পড়া (খ) Mind Map বানানো (গ) পরীক্ষার পূর্বপ্রস্তুতি (ঘ) নিয়মিত ব্যায়াম |
P3 | P4 | |
লক্ষ্যহীন কাজ | (ক) যে কোন বাধাবিঘ্ন (খ) ফোনে কথা বলা (গ) নির্দিষ্ট টিভি প্রোগ্রাম দেখা (ঘ) নির্দিষ্ট সময়ে ইন্টারনেটে চ্যাটিং | (ক) TU.C. দেখা (খ) গল্পের বই পড়া (গ) গান শোনা (ঘ) দিবাস্বপ্ন দেখা (ঙ) আড্ডা দেওয়া, বেড়ানো (চ) অসময়ে অতিরিক্ত ঘুম |
এখন দেখুন, নির্দিষ্ট লক্ষ্যযুক্ত কাজগুলো আমাদের সফল হতে সাহায্য করে। অন্যদিকে, লক্ষ্যহীন কাজ আমাদের বিনোদনে সাহায্য করে। এখন যদি P3 আর P4 গ্রুপের কাজ আপনি বেশি করেন তা হলে আপনার লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না। যদিও আপনার মনে হবে আপনি অনেক পরিশ্রম করেছেন, কিন্তু লাভ হয়নি।
আবার P1 কাজগুলো আপনাকে তাৎক্ষণিক ভাবে করতে হয় দেখে আপনার পড়ালেখার মান যথাযথ হয় না। ফলে, অনেক পড়েও আপনার রেজাল্ট আহামরি কিছু হয় না।
এবার দেখুন, অধিকাংশ ছাত্র তাদের সময়কে কীভাবে ব্যয় করেন:
P3-50% সময়
P1-30% সময়
P4-15% সময়
P2-05% সময়
কিন্তু আপনাকে জীবনে সফল হতে হলে সময় বণ্টন করতে হবে এভাবে,
P2-60% সময়
P1-20% সময়
P3-15% সময়
P4-05% সময়
অর্থাৎ, বছরের ক্লাস শুরুর দিন থেকেই আপনাকে পড়া আরম্ভ করতে হবে। আর সারা বছরের পড়া শুরুতেই প্ল্যান করে ফেলতে হবে, কবে কী পড়বেন। এজন্য একটি বাৎসরিক প্ল্যানার কিনতে পারেন। অনেক ডায়রীতেও এখন প্ল্যানার দেওয়া থাকে। যদি তা না থাকে, তা হলে নরমাল সাদা খাতায় প্ল্যান লিখতে পারেন। এতে নির্দিষ্ট কতগুলো ধাপ আছে। তা হলে, আসুন শিখে নিই কীভাবে বছরের প্ল্যান তৈরি করবেন। অবশ্যই হাতের কাছে ক্যালেন্ডার রাখুন।
ধাপ-১: প্রধান ঘটনাগুলোকে মার্ক করুন
আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে বিভিন্ন সাময়িক পরীক্ষার সময়সূচি চিহ্নিত করা। এছাড়া ঈদের দিন, বার্থডে আর যে দিনগুলোতে আপনি ব্যস্ত থাকবেন, সেগুলো দাগিয়ে ফেলুন বা লিখে ফেলুন।
ধাপ-২: সিলেবাস নির্দিষ্ট করুন ও লিখে ফেলুন
প্রতিটি বই খুলুন। এতে কতগুলো চ্যাপ্টার আছে তা লিখুন । ধরুন, বাংলায় ১৫টি গল্প, ১৫টি কবিতা আছে। অংকে আছে ১২টি চ্যাপ্টার। এভাবে সব সাবজেক্টের চ্যাপ্টার লিখে ফেলে একটি ছক তৈরি করুন। লিখুন, প্রতি সাময়িক পরীক্ষায় আপনাকে প্রত্যেক সাবজেক্টের কয়টা করে চ্যাপ্টার পড়তে হবে ।
ধাপ-৩: পুরো বছরের প্ল্যান করুন ধরুন
আপনার প্রথম সাময়িক পরীক্ষা তিনমাস পর । এ তিন মাসে আপনাকে বাংলা ৩ চ্যাপ্টার, বিজ্ঞান ৪টি, অংকে ৪টি চ্যাপ্টার পড়তে হবে। তা হলে, প্রতিমাসে আপনার বাংলা ১টি চ্যাপ্টার, বিজ্ঞান ২টি, অংক ২ টি করে চ্যাপ্টার পড়তে হবে । এভাবে বছরের প্রতিমাসের পাশে লিখুন কোন সাবজেক্টের কয়টা চ্যাপ্টার পড়তে হবে। শুধু সংখ্যা বা চ্যাপ্টারের নম্বর উল্লেখ করুন। এবার এ মাসের ক্যালেন্ডার নিয়ে বসুন। এখন এ মাসের প্রতিদিন যে যে সাবজেক্ট পড়বেন তা প্রতিদিনের নীচে লিখে ফেলুন। এজন্য প্রতি সাবজেক্টকে একটি নম্বর আকারে রাখুন। ধরুন বাংলা-১, ইংরেজী-২, অংক-৩, সমাজ-৪ ইত্যাদি।
প্রতিদিনের নীচে লিখুন নম্বরগুলো। যেমন–
February 07
Sun | Mon | Tue | Wed | Thurs | Fri | Sat |
1 (১) (২) | 2 | 3 (৩) (৪) | ||||
4 (২) (৪) | 5 (৫) (৬) | 6 (১) (৪) | 7 (৩) (৫) | 8 (৬) (১) | 9 | 10 (২) (৩) |
11 (৩) (৪) | 12 (৩) (৬) | 13 (২) (৩) | 14 (১) (৪) | 15 (২) (৩) | 16 | 17 (১) (৪) |
18 (২) (৪) | 19 (৩) (৬) | 20 (৫) (৩) | 21 (১) (২) | 22 (৫) (৬) | 23 | 24 (৩) (৪) |
25 (৩) (৫) | 26 (৪) (৬) | 27 (১) (২) | 28 (৩) (৪) |
১-বাংলা। ২-ইংরেজী। ৩-অংক। ৪- বিজ্ঞান। ৫-ধর্ম। ৬-সমাজ।
ধাপ-৪: সাপ্তাহিক প্ল্যান করুন
এবার ডায়রী বা খাতার দুটো পাশাপাশি খালি পাতা নিন। আজকের দিন থেকে বাম ও ডান পৃষ্ঠায় চারটি করে ভাগ করুন। আজকের দিন থেকে শুরু করুন। সপ্তাহে একদিন রাখুন মূল্যায়ন বা ছুটির দিন হিসেবে। এবার নীচের মত ডিটেলসে লিখুন এ সপ্তাহে কী পড়বেন।
February 07 | February 07 |
3. Sat বাংলা-১টি গল্প -১টি Mind Map. অংক-১০টা | 7. Wed অংক-১০টা ধর্ম-৩টি প্রশ্ন |
4. Sun ইংরেজী-২টি প্রশ্ন বিজ্ঞান-২টি Mind Map ২টি অংক | 8. Thurs বাংলা-১টি রচনা সমাজ-১টি Mind Map |
5. Mon ধর্ম ১টি চ্যাপ্টার সমাজ-৩টি প্রশ্ন ১টি Mind Map | 9. Fri রিভিশন টিভি, গান, গল্পের বই |
6. Tue বাংলা-১টি কবিতা বিজ্ঞান-১টি Mind Map ৩টি প্রশ্ন | 10. Sat ইংরেজী-১টি Passage ১টি Essay. অংক-১০টি |
ধাপ-৫: দৈনিক রুটিন করুন
প্রতি সপ্তাহের শুরুতে আগামী দিন কী কী পড়তে হবে তা দেখে নিন। এবার ঘুমানোর আগে পরবর্তী দিনের রুটিন তৈরি করুন। এ রুটিনে P1-P4 পর্যন্ত সব ধরনের কাজ তাদের নামসহ উল্লেখ করুন। একটি ছোট প্যাডে দিনের নাম, তারিখ লিখে সময় দিয়ে প্রতিটি কাজ উল্লেখ করুন। কাজগুলো নম্বর দিয়ে বা পয়েন্ট আকারে লিখবেন। একটা কাজ শেষ হওয়া মাত্র তাতে টিক চিহ্ন দিন আর বাকি থাকলে ক্রস চিহ্ন দিন। যদি P1 বা P2 কাজ বাকি থাকে তা হলে তা পরবর্তী দিনের P3 বা P4 কাজের জায়গায় যোগ করুন। এতে আপনার মাঝে দায়বদ্ধতা সৃষ্টি হবে। কারণ, কোন জরুরী কাজ বা পড়া ফেলে রাখলে পরের দিন আপনার প্রিয় নাটক দেখা বাদ দিতে হবে। ফলে, ফাঁকি দেবার মাত্রা কমে আসবে। প্রতিদিনের রুটিন যে কাগজে লিখবেন তার দু’টি কপি রাখবেন। একটা থাকবে বাসায়। আরেকটা আপনার শার্টের পকেটে বা হ্যান্ডব্যাগে। প্রতি ঘণ্টায় অন্তত একবার রুটিনে চোখ বুলান। তা হলে এখন একটা ডেইলি রুটিনের উদাহরণ দেখুন।
Sunday 4.2.07 Time
Work to be done 5.00 am-6.00 am P3-Prayer, Meditation,
Exercise, Breakfast.
6.00 am-7.00 am 7.00 am-3.00 pm 3.00 pm4.30 pm 4.30 pm5.30 pm 5.30 pm-6.30 pm 6.30 pm-9.30 pm 9.30 pm-11.00 pm 11.00 pm-12.00 am
P1-Home work. P1+P2-School time. P4-Sleep. P2-Mind Map. P3-TV, Playing P2-Mind Map, Notes. P4-Dinner, TV P1+P2-Revision+Practical.
.
১৮. মুহূর্তে সজীব হয়ে উঠুন
একটা সময় ছিল যখন আমি কখনোই সময়মত পড়া শুরু করতে পারতাম না। ধরুন, সাতটায় পড়তে বসেছি, ৯টায় টিভিতে সিন্দবাদ হবে। আমার মাথায় সিন্দবাদের ভূত চেপে বসে আছে। এদিকে পড়তে ভীষণ বোরিং লাগছে। চোখ ঢুলুঢুলু, গলায় জোর নেই। একই লাইন, একই পৃষ্ঠা বারবার পড়ছি। কিন্তু, মাথায় কিছু ঢুকছে না। যেই না ৯টা বাজল, এগুলো সব মুহূর্তেই দূর হয়ে গেল। এখন আর ঝিম ধরা ভাব নেই। আপনার কি কখনও এমন হয়েছে?
আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের এই অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। আমাদের শরীর আর মন পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। এর যে কোন একটাকে পরিবর্তন করলে অন্যটারও পরিবর্তন ঘটে। যেহেতু, মন খুবই জটিল জিনিস তাই আমাদের লক্ষ্য হবে শরীরকে পরিবর্তনের মাধ্যমে মনকে নিয়ন্ত্রণ করা। পাশ্চাত্যের মেডিটেশন আর প্রাচ্যের ধ্যান যুগ-যুগ ধরে এ নীতির উপর চলে আসছে। আপনি একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, কোন আনন্দের সংবাদ পেলে আপনার মাঝে কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন ঘটে। ঠিক একইভাবে, বোরিং অবস্থাতেও আপনার অবস্থার নির্দিষ্ট পরিবর্তন ঘটে। যেহেতু, আনন্দ বা দুঃখের সংবাদকে আপনি পরিবর্তন করতে পারবেন না, তাই পরিবর্তন করুন আপনার প্রতিক্রিয়াকে। জীবনে অনেক অপ্রত্যাশিত বাজে খবর নিয়মিত আসতেই থাকে। যেমন-কোন নিকটাত্মীয়ের মৃত্যু, প্রেমে ব্যর্থতা, বন্ধুত্ব ভেঙে যাওয়া ইত্যাদি। এ সময়গুলোতে পড়ালেখা করাটা ‘অসম্ভব মনে হয়। কিন্তু আপনাকে আপনার ইমোশনকে নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। না হলে জীবনে সফল হওয়া যাবে না।
এখন জেনে নিন কোন্ কোন্ শারীরিক অবস্থা আপনার মানসিক অবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করে
১. আপনার Posture বা শারীরিক ভঙ্গি (আপনার কাধ কি নীচের দিকে নামানো না সমান্তরাল)
২. আপনার Facial Expression বা মুখভঙ্গি (হাসিমুখ না। দুঃখীমুখ)
৩. আপনার শ্বাসের, প্রকৃতি (গভীর না অগভীর। ধীর না দ্রুত)
৪. আপনার মুখের ও শরীরের মাংসপেশী (টানটান না শিথিল)
৫. আপনার কণ্ঠস্বর (জোরাল না উচ্ছ্বাসহীন, নির্জীব)
এবার আসুন দেখে নিন এগুলো কীভাবে আপনাকে প্রভাবিত করে।
অনুশীলনী-১
কল্পনা করুন আপনি এখন বড় একটা দুঃসংবাদ পেয়েছেন। আপনার এখন আর কিছুই করার নেই। এ দুঃখটাকে অনুভব করুন। সত্যিকার দুঃখ পেলে আপনার শারীরিক যে পরিবর্তন ঘটে তা ঘটতে দিন। দুঃখ পেলে যেভাবে বসেন সেভাবে বসুন, আপনার মুখভঙ্গি, শ্বাস নেবার প্রকৃতি সব সে অবস্থানে নিয়ে যান। দুমিনিট পর পরবর্তী প্যারা পড়ুন।
এখন লক্ষ করুন। দুঃখ পেলে আপনার কাঁধ নীচে নেমে আসে। মুখ আর শরীরের পেশীগুলো শিথিল হয়ে আসে। চোখের পাতা নীচে নেমে আসে। শ্বাস-প্রশ্বাস হয় দ্রুত আর অগভীর।
অনুশীলনী-২
এবার কল্পনা করুন আপনি খুবই আনন্দের কোন সংবাদ পেয়েছেন। এখন, খুশির খবর পেলে আপনি যেমনভাবে উচ্ছ্বসিত হয়ে ওঠেন তেমন অবস্থায় চলে যান। খুশিতে আপনি দাঁড়িয়ে পড়ন বা বসে থাকুন। যেভাবে আপনি আপনার আনন্দ প্রকাশ করেন তা করুন। দু’মিনিট পর পরবর্তী প্যারা পড়ন।
এখন লক্ষ করুন। আপনার কাঁধ দুটো উপরে উঠে প্রায় সমান্তরাল হয়ে গেছে। আপনার শিরদাঁড়া সোজা হয়ে গেছে। আপনার চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি উন্মুক্ত। আপনার শ্বাস-প্রশ্বাস গভীর আর ধীর। আপনার মুখ আর শরীরের পেশী টান-টান।
এখন এই অবস্থার কোন পরিবর্তন না করে কোন দুঃখের কথা চিন্তা করুন। No cheating, please. দেখুন, এটা অসম্ভব। যখনই আপনি দুঃখের কথা চিন্তা করতে যাবেন তখনই আপনার শারীরিক অবস্থা অনুশীলনী-১-এর মত হতে হবে। আমি যে ৫টি নির্দেশকের কথা উল্লেখ করেছি, তার একটাও যদি পরিবর্তন না করেন, তা হলে দুঃখের বিষয় আপনি চিন্তা করতে পারবেন না।
কাজেই, যখনই আপনি দুঃখের বিষয় ভাবতে বসবেন বা আপনার পড়ার মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হয়ে যাবে, তখনই এ ৫টি বিষয় খেয়াল রাখুন। এ পাঁচটি বিষয় একটি কাগজে লিখে সব সময় সাথে রাখুন। দিনের যে কোন সময় যখনই আপনি ক্লান্ত বা দুঃখবোধ করবেন এটি দেখে নিজের অবস্থা বদলে ফেলুন। এ ক্ষমতা আপনারই হাতে। সৃষ্টিকর্তা আপনাকেই এ ক্ষমতা দিয়েছেন। তাই, নিজেকে কন্ট্রোল করুন।
অনুশীলনী-৩
এবার আপনার প্রিয় শিক্ষককে কল্পনা করুন। দেখুন, আপনি চিন্তা করবার সময় ছবি আর কথার মাধ্যমে চিন্তা করছেন। অর্থাৎ, আপনি সারের ছবি কল্পনা করছেন আর মনে মনে কথা বলছেন নিজের সাথে। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষ প্রতিদিন গড়ে ৬০ হাজার বার নিজের সাথে কথা বলে থাকেন। আশ্চর্যের বিষয়। হলো এর ৮০ ভাগই হলো নেতিবাচক কথা। আমাদের ব্রেন অনেকটা কম্পিউটারের মত আর আপনার মন এর কমান্ড করে থাকে। তাই যদি আপনি তাকে শুধু নেতিবাচক কথা শোনাতে থাকেন তা হলে সে আপনার কথাকেই সত্য ধরে নিয়ে কাজ করবে। সব সময় নিজেকে ভালবাসুন, শ্রদ্ধা করুন। বিশ্বাস করুন, পৃথিবীতে আপনি অনন্য। সারা পৃথিবীর প্রাণীকুলের মধ্যে আপনার মত আর কেউ নেই। আপনার এ অনন্যতাকে ভালবাসুন। যখন কোন কাজে যথাযথ ফলাফল লাভে ব্যর্থ হবেন তখন মনে মনে বলুন, এ থেকে আমি কী শিখলাম?
যা শিখলাম তা আমি ভবিষ্যতে কীভাবে কাজে লাগাব? দেখবেন, খুব দ্রুত আপনি একজন পজিটিভ ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠছেন।
এখন, পড়তে বসবার আগে নিজেকে Powerful অবস্থায় নিয়ে আসুন। তার জন্য দরকার একটি Anchor. আপনি নিজেই তা তৈরি করতে পারেন বা অনুসরণ করতে পারেন আমার Anchor. তা হলে, নীচের ধাপগুলো অনুসরণ করুন
১. কল্পনা করুন
আপনার জীবনের সবচেয়ে আনন্দঘন মুহূর্তকে কল্পনা করুন।
২. অনুভব করুন
সে সময়ের স্মৃতিতে ঢুকে যান। তখন আপনার যে অনুভূতি ছিল তা অনুভব করুন। কল্পনার দৃশ্যকে সজীব করুন । রং আর শব্দ বাড়িয়ে দিন।
৩. শারীরিক অবস্থার পরিবর্তন করুন
আপনার শরীরকে সেই সময়ের অবস্থানে নিয়ে যান। প্রয়োজনে দাঁড়িয়ে পড়ুন। সমস্ত সত্তা দিয়ে উপলব্ধি করুন শরীরের মাঝে সেই উদ্যমকে।
৪. Anchor ব্যবহার করুন
এখন আপনার পছন্দমত কোন শব্দ বা ধ্বনি মুখে উচ্চারণ করুন আর নির্দিষ্ট শারীরিক ভঙ্গিমা করুন। আমার Anchor হলো জোরে ‘Oh Yeah’ উচ্চারণ করা আর সেই সাথে দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে কনুই বরাবর ভাজ করে পেছনে টেনে নেয়া। যেমন, ফুটবলাররা গোল দেয়ার পর করে থাকেন। মনে রাখুন, একটি শব্দ আর একটি নির্দিষ্ট শারীরিক ভঙ্গিমা অনুশীলন করতে হবে।
৫. কয়েকবার Anchor-এর পুনরাবৃত্তি করুন।
৬. এবার যখনই পড়তে বসবেন বা কাজ করবেন তার আগে Anchor করে নিন।
Anchor
এর লাভ
পৃথিবীখ্যাত খেলোয়াড়, নাট্যকার, লেখক, বিজ্ঞানী, ব্যবসায়ী প্রায় সবাই Anchor ব্যবহার করেন। এটি তাদের কাজের মান ও উদ্যমকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। একটা প্রমাণ দিই। আপনি মুখে কোন শব্দ না করে, এবং শারীরিক কোন পরিবর্তন না করে, এখনই আপনার সামনের টেবিল বা দেয়ালে বা চেয়ারে জোরে ঘুষি মারুন। এবার, সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে Anchor করুন এবং শব্দটা উচ্চারণ করার সাথে সাথে টেবিলে ঘুষি মারুন। দেখুন আপনার শক্তি আগের বারের তুলনায় অনেক বেশি হয়ে গেছে, তাই না? অনেকেরই বিচিত্র ও মজার_Anchor আছে । যেমন-বিখ্যাত বাস্কেটবল প্লেয়ার মাইকেল জর্ডানের Anchor হলো জিভ বের করে নাড়ানো। আপনার Anchor তৈরি হলে চলে আসুন সর্বশেষ অধ্যায়ে।
.
১৯. The Final Countdown
আপনি এতক্ষণ যা পড়লেন তার সারসংক্ষেপ এ অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। তাই চলুন দেখে নিন মূল আইডিয়াগুলো। আপনি এখন বছরের মাঝামাঝি বা শুরু যে অবস্থাতেই থাকুন নীচের স্টেপগুলো ফলো করুন
১. একটি নির্দিষ্ট উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা তৈরি করুন।
২. এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য একটা স্টাডি শিডিউল তৈরি করুন। প্রথমে বছরের, তারপর মাসের, সপ্তাহের ও দৈনিক রুটিন তৈরি করুন। নিজের মূল্যায়ন করুন।
৩. প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টা পড়ন। প্রতি স্টাডি সেশনে ২ ঘণ্টা পড়ন। এ দু’ঘণ্টার সেশনকে চারটি ভাগে ভাগ করে নিন । প্রতিভাগের মাঝে ৫ মিনিট বিরতি নিন। পরবর্তী সেশন শুরু করবার আগে আধঘণ্টা বিশ্রাম নিন।
৪. প্রতিদিন স্টাডি সেশন শুরুর আগে ১০ মিনিট গত দিনের পড়া রিভিশন দিন। স্টাডি সেশনের শেষ ১০ মিনিট আজকের পড়া রিভিশন দিন।
৫. দিনে কমপক্ষে একটি Mind Map তৈরি করুন।
৬. আপনার পড়ার ঘরে High power-এর বাল্ব লাগান। কারণ, প্রচুর আলো আপনার পড়ার মনোযোগ বৃদ্ধি করবে।
৭. আপনার ঘরে মুক্ত বাতাস প্রবেশ করতে দিন। আর ঘরের তাপমাত্রা কম রাখুন। পড়া লেখার জন্য আদর্শ তাপমাত্রা ১৯ সেলসিয়াস। আমাদের দেশে যদিও এটা পাওয়া কঠিন, তবুও চেষ্টা করুন হালকা জামাকাপড় পরতে।
৮. পড়ার ঘরে টিভি, রেডিও, গল্পের বই রাখবেন না। পড়া শুরুর আগে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখুন বা সাইলেন্ট করে রাখুন।
৯. অবসরে গান বা মিউজিক শুনুন। কারণ, মিউজিক আপনার ব্রেনের মনোযোগ ও ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
১০. যে কোন পড়াই প্রথমে নিজে পড়ন, ঠিকমত বুঝুন, তারপর বন্ধুদের সাথে আলোচনা করুন। দেখুন তারা কীভাবে পড়েন। আপনার চেয়ে ভাল ছাত্রের সাথে মিশুন। যদি আপনিই ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র হোন, তা হলে সিনিয়র ছাত্রদের কাছে টিপস নিন। যে কোন স্যারকে প্রশ্ন করুন। স্যাররা প্রশ্ন শুনতে ও জবাব দিতে আগ্রহ বোধ করেন।
এবার জেনে নিন, পরীক্ষা দেবার কিছু টিপস
পরীক্ষার আগের রাতে দ্রুত ঘুমিয়ে পড়ন। কখনোই Diazepum বা ঘুমের ওষুধ খাবেন না। কারণ, তা অনেক সময় সাময়িক স্মৃতিকে মুছে ফেলে । ঘুম না এলে মেডিটেশন করুন। পরীক্ষার দিন সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠুন। আর যা করতে হবে তা হলো
১. দ্রুত পরীক্ষার হলে পৌঁছন
কমপক্ষে ১ ঘণ্টা আগে পরীক্ষার হলে পৌঁছন। আপনার সীট কোন্ রুমে, কত নম্বর বেঞ্চে, সব দেখে নিন। এতে আপনার মানসিক চাপ অনেকটা কমে যাবে।
২. পরীক্ষা নিয়ে টেনশন করবেন না এবং পড়বেন না
আপনি যদি এতদিন ঠিকমত পড়ে থাকেন তা হলে পরীক্ষার দিন আর পড়বেন না। কারণ, আগের রাতেই ঘুমের মাঝে আপনার ব্রেন প্রশ্নোত্তরগুলোকে সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে। এখন, নতুন তথ্য শিখতে গেলে নানান ঝামেলা হবে। যদি বিকেলে পরীক্ষা হয় তা হলে রিভিশন দিয়ে যেতে পারেন। Mind Map গুলোতে চোখ বুলিয়ে পরীক্ষার হলে যান। প্রয়োজনীয় সংখ্যক কলম, পেন্সিল, মার্কার, রাবার সব আগের রাতেই গুছিয়ে রাখুন। দরকার হলে স্টাপলারও নিয়ে যান। খাবার স্যালাইন বা টেস্টি স্যালাইন বা গ্লুকোজ বানিয়ে নিয়ে যান। তিন ঘণ্টার পরীক্ষা হলে ১.৫ ঘণ্টার পর ৫ মিনিট বিশ্রাম নিন। স্যালাইন খান। নিজের লেখাগুলো চেক করুন। এ ৫ মিনিট বিশ্রাম আপনার শেষ ১.৫ ঘণ্টার পরীক্ষা অনেক সহজ করে দেবে।
৩. নিজের সাথে কথা বলুন
নিজেকে বলুন, আমি পারি, আমি পারব । আমার পরীক্ষা সবচেয়ে ভাল হবে ইনশাল্লাহ। অনেক ভাল ছাত্রকেই কেমন পড়েছে জিজ্ঞেস করলে তারা উত্তর দেন, কিছুই পড়িনি। এ ধরনের কথা তাদের জন্য ক্ষতিকর । আমাদের ব্রেন অনেকটা কম্পিউটারের মত। সে চলে মনের কমান্ডে, তাই কম্পিউটারে বন্ধ হবার নির্দেশ দিয়ে আপনি যদি কাজ করতে চান তা অসম্ভব । আপনার নেতিবাচক কথা আপনার ব্রেনের চিন্তা করার পথ বন্ধ। করে দিতে পারে। ফলে, দেখবেন, আপনার মুখস্থ পড়া পরীক্ষার হলে মনে আসছে না। তাই, সবসময় বলুন, আমি ভাল পড়ালেখা করেছি। আমি ভাল পরীক্ষা দেব ।
৪. Anchor করুন
পরীক্ষা শুরুর কিছু আগে Anchor করুন। আপনার সবচেয়ে কনফিডেন্ট অবস্থায় চলে আসুন। হাসিমুখে, শিরদাঁড়া সোজা করে, কাঁধ উঁচু করে চোখ দুটো পুরোপুরি খুলে পরীক্ষায় বসুন।
৫. সহজ প্রশ্ন আগে, কঠিন প্রশ্ন পরে
প্রথমেই সময় ঠিক করে নিন। ১০ টায় পরীক্ষা শুরু হলে ১১ টায় কয়টা প্রশ্নোত্তর শেষ হবে তার আইডিয়া রাখুন। প্রতিটি প্রশ্নের জন, সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করুন। এ কাজগুলো বাসায় করে আসবেন। প্রশ্ন হাতে পেলে তিনবার পড়ন। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন সেগুলোতে দাগ দিন। যে প্রশ্ন লেখা শেষ হবে তাতে ক্রস চিহ্ন দিন। কখনোই কঠিন প্রশ্ন আগে দেবেন না । কারণ, এতে বেশি সময় ব্যয় হবে। ফলে, দেখা যাবে সহজ প্রশ্ন ঠিকমত লিখতে সময় পাচ্ছেন না। কোন প্রশ্নই ছেড়ে আসবেন না। অন্তত দু’এক লাইন হলেও লিখে আসুন। কারণ, এটাই হয়তো আপনার পাশ, ফেল বা A, A+ পাওয়ার পার্থক্য গড়ে দেবে।
৬. বেশি কথা লিখবেন না
প্রতি বিষয়ের প্রতি প্রশ্নেরই উত্তর দেবার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে । প্রত্যেক প্রশ্নেরই উত্তরে প্রশ্নে যা জানতে চাওয়া হচ্ছে সে কথাটি উল্লেখ করুন। এরপর উত্তর লিখুন। বেশি তথ্য না দিয়ে তথ্যগুলোকে গুছিয়ে উপস্থাপন করুন। প্রধান পয়েন্টগুলোকে হাইলাইট করুন। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলোকে বক্স আকারে লিখুন। ছবি আঁকলে ছবির চারদিকে বক্স এঁকে বিভিন্ন অংশকে চিহ্নিত করুন। নীচে অবশ্যই ছবির ক্যাপশন দেবেন। প্রশ্ন যাই হোক, এর একটি উপসংহার লিখুন। কারণ, এর জন্য একটি নম্বর নির্দিষ্ট থাকে।
৭. অবশ্যই রিভিশন দেবেন
পরীক্ষার সময়ানুযায়ী রিভিশন দিতে হবে। যদি কোন প্রশ্নের উত্তর লিখতে মাঝপথে থেমে যান, তা হলে পরবর্তী প্রশ্নে চলে যান। সেই প্রশ্নটিতে গোল দাগ দিয়ে রাখুন। আপনার লেখা শেষ হলে রিভিশনের সময় সেই প্রশ্নে চলে যান। তারপর যা জানেন লিখুন। অবজেক্টিভ প্রশ্নের ক্ষেত্রে চেক করুন কোন প্রশ্ন বাদ পড়ল কিনা।
.
পরিশিষ্ট
এত-এত জ্ঞানগর্ভ আলোচনা আর উপদেশ শুনে নিশ্চয়ই মাথা ভার হয়ে গেছে। তা হলে চলুন, এবার এ অধমের গল্প শুনুন। আমি ছোটবেলায় ক্লাসে সব সময় ফার্স্ট হতাম । তারপর ধীরে ধীরে রেজাল্ট খারাপ হতে থাকে। ক্লাস সেভেনে আমার রোল হয়। ২৪। তখন মূলত পবিত্র কোরআন আর কোয়ান্টাম মেথড পড়ে আমি নতুন উদ্যমে পড়া শুরু করি ।
এ সময় আমার খুব শখ ছিল গান গাওয়ার। কিন্তু সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত ভাঙা কণ্ঠস্বরে গান গাওয়া আরম্ভ করায় আমার এলাকা কাকপক্ষীশূন্য হয়ে পড়ে। তখন একটা পত্রিকায় পড়েছিলাম, এক লোক বিখ্যাত একজন ভায়োলিনবাদককে বললেন, ২০ দিনে তার মত ভায়োলিন বাজানো শিখিয়ে দিতে। তিনি বলেছিলেন, এমন বাজানো শিখতে আমার সময় লেগেছে ২০ বছর। তাই আপনাকে ২০ দিনে শেখানো সম্ভব না। তাই আমি ভাবলাম চেষ্টা করেই দেখা যাক। আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গাওয়ার চেষ্টা করি। এর মাঝে দু’বার গান গাওয়ার সময় সবার সামনেই গান থামিয়ে দিতে বলা হয়। এতবড় অপমানও গায়ে মাখিনি। কারণ, মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীকেও একবার বক্তৃতা দেবার মাঝখানে নেমে যেতে বলা হয়েছিল। তাই বলে আমি নিজেকে তার সাথে তুলনা করছি বলে ভাববেন না। আমি শুধু লেগে থাকার কথা বলছিলাম। আমি দিনরাত পড়াশুনা ছাড়া শুধু গান গাইতাম। প্রায় ১৩ বছর পর এখন আমি মোটামুটি ভাল গান গাইতে পারি। আমার বন্ধুবান্ধবের মাঝে আমার ভক্তও আছে, যাদের আমি এখন নিয়মিত গান শোনাই।
আমার ইচ্ছে ছিল বিশাল একজন লেখক হবার । কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো আমার গল্প, কবিতা এতটাই নিম্নমানের ছিল যে, স্কুলের ম্যাগাজিনেও তাদের জায়গা হত না। কিন্তু আমি হাল ছাড়িনি। আরেকটু বড় হয়ে আমি বিভিন্ন পত্রিকা, ম্যাগাজিনে লেখা পাঠাতে থাকি। কিন্তু কেউ কোন লেখা ছাপেন না । অবশেষে হঠাৎ একদিন যায় যায় দিনের সম্পাদক শফিক রেহমান আমাকে একটি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানালেন। এটা ছিল একটা টার্নিং পয়েন্ট। তিনি বলেছিলেন, “চিঠি লেখা অভ্যাস করো আর মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখো। যত বেশি প্রতিক্রিয়া হবে বুঝতে পারবে যে তোমার লেখা ধারাল হচ্ছে। তার উপদেশমত আমি আমার বন্ধুবান্ধব নির্বিশেষে সবাইকে চিঠি লেখা আরম্ভ করলাম। খুব দ্রুতই আমার নামে নানান রটনা ছড়িয়ে পড়ল। আমার মাথা খারাপ। শুধু হাবিজাবি চিঠি লিখি। কিন্তু আমি চিঠি লেখা বন্ধ করিনি। ৫ বছর পর আমার বিশ্বাস হলো যে, এখন আমার লেখা একটু পড়বার মত হয়েছে। এবার লেখা পাঠানো শুরু করলাম এবং আশ্চর্য ব্যাপার! যাই পাঠাচ্ছি কবিতা, গল্প, যেখানেই পাঠাচ্ছি সবাই ছেপে দিচ্ছেন। নিজের লেখা দেশের প্রধানতম পত্রিকায় দেখতে খুবই ভাল লাগে। এভাবেই, এখন আপনারা আমার লেখা বই পড়ছেন।
তাই আপনাদের বলছি, বিশ্বাস করুন, আপনি যা চান তাই করতে পারবেন। আর তার জন্য দরকার তীব্র আকাঙ্ক্ষা, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য, পরিকল্পনা এবং তার বাস্তবায়ন। আপনি যে ক্ষেত্রে সফল হতে চান সেই ক্ষেত্রের কোন সফল ব্যক্তিকে অনুসরণ করুন। তিনি কীভাবে কাজ করেন তা শিখুন। একদিন আপনি তাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারবেন ।
আমাদের আগের জেনারেশন আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপহার ‘স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তাঁরা স্বপ্ন দেখেছিলেন তাঁদের সন্তানেরা একটা সুন্দর দেশে সুখে শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু আমরা এখনও অন্ধকার যুগে পড়ে আছি। আমাদের দায়িত্ব আমাদের পরবর্তী জেনারেশনের কাছে একটি দুর্নীতিমুক্ত সুন্দর দেশ রেখে যাওয়া ।
ইসলাম খুব নির্দিষ্টভাবে সব কিছুর মর্যাদা বিধান করেছে। প্রথম প্রাধান্য আল্লাহর, দ্বিতীয় মায়ের আর তৃতীয় মাতৃভূমির । আপনি ঠিকমত পড়ালেখা করলে এ তিনটি মর্যাদার প্রতিষ্ঠা হয়ে যায়। আমাদের দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে আমাদেরই। আর এজন্য দরকার শিক্ষা। আপনি যে পেশাতেই যান নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করুন, তারপর দেশের জন্য কাজ করুন। আপনার সাফল্য আপনার ও দেশের উভয়ের জন্যই সম্মান বয়ে নিয়ে আসবে। বেঁচে থাকাটা তখন মনে হবে অনেক বেশি অর্থবহ। তা হলে বিদায়, বন্ধু। আপনার অগ্রযাত্রায় আমি প্রার্থনা করছি, যেন সাফল্যের গন্তব্যে পৌঁছতে পারেন নির্বিঘ্নে ও নির্দ্বিধায়। খোদা হাফেজ।
.
Bibliography
Adam Khoo-’I am gifted, so are you.’
Adam Khoo with Stuart Tan- ‘Master your mind & design your destiny.’
Bandler-’Structure of Magic II,’ ‘Time for a change,’ ‘Using your brain for a change.’
Tony Buzan-’How to make the most of your mind.’ ‘The Mind Map.’
Covey-’The seven habits of highly effective people.’
Dilts-Application of neurolinguistic programming. ‘(NLP)’ Changing beliefs with NLP.
Jensen-’Brain based Learning & Teaching.’ ‘Super learning.’
Mukerjea-’Super Brains’
O’Conner-’Training with NLP
Ostrander-’Super learning 2000, Super Memory, the Revolution.’ ‘Cosmic Memory.’
Robbins–’Unlimited Power, Awaken the giant within.’
Rose C.-’Accelerated Learning.’ Shone S.-’Creative Visualization.’
দীপঙ্কর ,সোহেল,আর,জামিল এর টেকনিক টা খুব সুন্দর অনেক উপকৃত হলাম ভাই আল্লাহ আপনাদের এই কাজের সুন বৃদ্ধি করুন .।।। আমিন সুম্মা আমিন
Khuda hafies
বইটা পড়ে অনেক বার হাসলাম খুশিতে। নিজের মধ্যে একটা আত্মবিশ্বাস আসলো। মনে হচ্ছে আমি পারবো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আল্লাহ আপনার ভালো করুক। আল্লাহ হাফেজ।