১১-১৫. নোট তৈরির অত্যাধুনিক নিয়ম

১১. Mind Mapping by Tony Buzan.
নোট তৈরির অত্যাধুনিক নিয়ম

স্বাগতম। আপনাকে জানাচ্ছি অনেক অনেক শুভেচ্ছা এতদূর পড়ার জন্য। বিশ্বব্যাপী রিসার্চের মাধ্যমে জানা গেছে যে, ৮০ ভাগ লোকই আত্ম-উন্নয়নমূলক বই কিনে দু’চ্যাপ্টারের বেশি পড়েন না। আপনি এতদূর চলে আসায় বোঝাই যাচ্ছে সাফল্যের জন্য আপনার আকাক্ষা সীমাহীন। আপনি সেই ২০ ভাগ লোক, যারা সাফল্যের প্রশ্নে দৃঢ়সংকল্প। এদের মাঝে পড়েন বলে নিজেকেই বলুন, সাব্বাস! এই তো, কেমন একটা আনন্দ হচ্ছে না?

তা হলে চলুন, এবার পরিচিত হওয়া যাক নোট তৈরির সর্বাধুনিক অত্যাধুনিক কৌশলের সাথে । এজন্য আপনার পূর্বের চ্যাপ্টারগুলোর অনুশীলন কাজে লাগবে। Power Reading এর মাধ্যমে Key word ও Key Idea বের করে এখন। আপনাকে নোট বানাতে হবে অনন্য কায়দায়।

নোট তৈরি: A+ পাওয়ার উপায়

আমার পরিচিত হাজারখানেক ভাল ছাত্রের ভাল রেজাল্টের রহস্য হলো নোট। আর এ নোট তৈরি করতে হবে নিজেকেই। কোন স্যারের নোট ফটোকপি করে মুখস্থ করলেই ভাল ছাত্র হওয়া যায় না। এখন অধিকাংশ বিষয়ের প্রশ্নেই আপনার মতামত জানতে চাওয়া হয়। এ জন্যে, আপনার নিজস্ব মতামত জানানোর সুযোগ হেলায় হারিয়ে মুখস্থ লিখে

আসা আপনার প্রতিভার প্রতি চরম অপমান। আপনি নিজে যে। নোট বানাবেন সেটা হবে অনন্য। পৃথিবীর আর কেউ সম্পূর্ণ আপনার মত নোট বানাতে পারবে না। কিছু পার্থক্য থাকবেই। আর এ নোট তৈরি করতে কিছুটা সময় লাগলেও পরবর্তীতে এটা আপনার সময়কে বাঁচাবে বহুগুণ। আর, আপনার মনে রাখার ক্ষমতাও বেড়ে যাবে। তা হলে, নোট আপনাকে তিনভাবে সাহায্য করে–

১। সময় বাঁচায়

২। মনে রাখার ক্ষমতা বাড়ায়

৩। বোঝার ক্ষমতা বাড়ায়

এখন আমাদের দেশে যদি কাউকে নোট দেখাতে বলা হয়, ৯৯ ভাগ ছাত্রই যে নোট দেখাবে সেটা হলো ঐতিহাসিক বা চিরাচরিত পদ্ধতির নোট। কিন্তু, উন্নতবিশ্বে এখন স্কুল লেভেল থেকে পোস্ট গ্রাজুয়েশন পর্যন্ত, সবখানেই Mind Mapping®কে উৎসাহিত করা হচ্ছে। চিরাচরিত পদ্ধতির নোট সাধারণত দু’ধরনের।

উদাহরণ-১

এ পদ্ধতিতে পাঠ্যবইয়ের কিছু লাইন (Key Idea) সরাসরি তুলে আনা হয়। যেমন-

পদার্থের তিনটি রূপ

পদার্থের তিনটি অবস্থা। তা হলো-কঠিন, তরল ও বায়বীয়।

কঠিন পদার্থ

কঠিন পদার্থের অণুগুলো খুব কাছাকাছি থাকে। তারা সারিবদ্ধ ভাবে সজ্জিত। এ অণুগুলোর মধ্যেকার আকর্ষণ শক্তি তাদেরকে এক সাথে ধরে রাখে। এ অণুগুলো শুধুমাত্র তাদের অবস্থান থেকে কম্পিত হতে পারে।

তরল পদার্থ

তরল পদার্থের অণুগুলো দূরে দূরে থাকে। তাদের মধ্যে সাজানো অবস্থা নেই। তাদের আন্তঃআণবিক বল দুর্বল। তাই, তাদের নির্দিষ্ট আকার নেই। তাদের অণুগুলো পরস্পরের উপর চলাচল করে।

গ্যাসীয় পদার্থ

গ্যাসীয় পদার্থের অণুগুলো অনেক দূরে দূরে থাকে। তারা খুব দ্রুত চলাচল করে।

উদাহরণ-২

এ ধরনের নোট লেখা হয় পয়েন্ট করে। অধিকাংশ ভাল ছাত্রের নোটই হয় এরকম

পদার্থের তিনটি রূপ

১। কঠিন পদার্থ

(ক) এর অণুগুলো কাছাকাছি ও সারিবদ্ধ অবস্থায় থাকে।

(খ) আণবিক বল অণুগুলোকে একত্রে ধরে রাখে।

(গ) অণুগুলো নিজের অবস্থানে থেকেই কম্পিত হয় ।

২। তরল পদার্থ

(ক) অণুগুলো দূরে দূরে থাকে ও তাদের কোন সাজানো অবস্থা নেই।

(খ) আণবিক বল দুর্বল বিধায় নির্দিষ্ট আকার নেই।

(গ) অণুগুলো নিজেদের মাঝে চলাচল করতে পারে ।

৩। বায়বীয় পদার্থ

(ক) অণুগুলো অনেক দূরে দূরে থাকে।

(খ) অণুগুলো খুব দ্রুতগতিতে চলাচল করে।

এ পদ্ধতির নোট পরীক্ষার খাতায় খুবই কার্যকরী, কিন্তু পড়া মনে, রাখার ব্যাপারে এর তেমন কোন ভূমিকা নেই। একটু তাকিয়ে দেখুন, দেশে জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা ৩০ হাজার হলেও গোল্ডেন জিপিএ ৫ পাচ্ছে মাত্র ২-৩ হাজার। আর এ ছাত্রগুলোই দেশের প্রধান প্রধান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। তা হলে, যারা এ সব নোট করেও ভাল নম্বর পাচ্ছেন না তার কারণ কী? আমি আগেই বলেছি নোট করার তিনটি উদ্দেশ্যের কথা। এ নোট তাদের একটিও পূরণ করছে না।

১। সময় বাঁচানো

এ নোটগুলো বোরিং। আপনি নিজে বানালেও দ্বিতীয়বার নোট পড়তে ইচ্ছে করে না। আর এটা আপনার সময়ও খুব একটা বাঁচায় না। আপনাকে, Key Word এর যে Idea দিয়েছিলাম এটা তা ফলো করে না। ফলে, সেই ৮০ ভাগ Non-Key word আপনাকে মুখস্থ করতে হচ্ছে।

২। মনে রাখা

আপনাকে আগের চ্যাপ্টারে মনে রাখার যে ৭টি পদ্ধতি বলা হয়েছিল তা এ নোটে নেই।

৩। বোঝার ক্ষমতা

এ নোট আপনার পড়া বোঝার ক্ষমতা বাড়ায় না, বরং কমায়। কারণ অনেক Key Word এসব নোটে বাদ পড়ে যায় যা হয়তো প্রয়োজনীয়। এ ছাড়া লক্ষণীয় যে–

১. চিরাচরিত এই সব নোটে কোন ছবি থাকে না।

২. এগুলো কালো বা নীল এ দুটো কালি দিয়ে তৈরি করা হয়।

৩. কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্যকে Highlight করা হয় না।

৪. এ নোট দেখে একজনের পক্ষে কোন স্পষ্ট ধারণা করা সম্ভব নয়।

৫. এতে কল্পনারও কোন ব্যবহার নেই।

বেশিরভাগ ছাত্রই মনে রাখার যে সমস্যায় ভোগেন তার মূল কারণ এ প্রাচীন নোট পদ্ধতি। এতে সেই বাম ব্রেনের কাজই চলতে থাকে। ডান ব্রেন পড়ে থাকে অকেজো। এখন তা হলে জেনে নিন, Mind Mapping কীভাবে আপনাকে সাহায্য করে।

Super memory-র
৭টি পদ্ধতি।
+
Key word
+
ডান ও বাম ব্রেন।
-> Mind Mapping.  

এটা আবিষ্কার করেছেন Tony Buzan.

এর সুবিধা।

১. সময় বাঁচায়

এর মাধ্যমে ১০ পৃষ্ঠার তথ্য এক পৃষ্ঠায় নিয়ে আসা যায়। এমনকী ছোটখাটো একটা চ্যাপ্টারের সম্পূর্ণ তথ্যও এক পৃষ্ঠায় নিয়ে আসা সম্ভব। এতে আপনি শুধু key word ব্যবহার করছেন, ফলে কোন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বাদ পড়ছে না। এর প্রধান সুবিধা হলো, Mind Map আপনাকে আপনার বন্ধুদের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে রাখবে। ধরুন, আপনার বন্ধু যেখানে ৫০ পৃষ্ঠার একটা চ্যাপ্টার রিভিশন দিচ্ছেন, সেখানে আপনি পড়ছেন মাত্র ৫ পৃষ্ঠা আর মনে রাখতে পারছেন পুরোটাই। তাই, আপনার বন্ধু বা শত্রু যাই হোক, তিনি যা পড়বেন ৩ ঘণ্টায়, আপনি তা পড়বেন মাত্র ১৫ মিনিটে।

২. এটা মনে রাখার সাতটি পদ্ধতির সমন্বয়

Super memory-র সাতটি পদ্ধতির সমন্বয় হলো Mind Map. এতে আছে ছোট বড় নানান কিসিমের ছবি। এমনকী পুরো Mind Map-টাই বিচিত্র একটা ছবির মতন। এতে খুবই নির্দিষ্টভাবে তথ্যগুলোকে সুবিন্যস্ত করা হয়, যাতে তাদের মধ্যেকার সম্পর্ক সহজেই বোঝা যায়। বোরিং শব্দ বাদ দিয়ে শুধুমাত্র Key word-গুলোকে নানা রংয়ের মাধ্যমে সাজানো হয়। ফলে, আপনার মন তাকে সহজেই মনে রাখতে পারে। এটা আপনার কল্পনা, সৃষ্টিশীলতা আর ছন্দের মাঝে সমন্বয় সাধন করে এবং পুরো বিষয়ের একটা সুনির্দিষ্ট ধারণা প্রদান করে, যা আপনার পড়া বুঝতে আর মনে রাখতে দারুণ কার্যকরী। Mind Map তৈরির সময় আপনার ব্রেনের উভয় অংশ একসাথে কাজ করে। তাই, আপনি যদি জিনিয়াস হতে চান, তা হলে প্রচুর Mind Map তৈরি করুন। এখন চলুন শিখে নিই Mind Map তৈরির নিয়মগুলো। প্রথমে একটা ডিমাই বা A 4 সাইজের কাগজ নিন। আপনি নিজেকে নিয়েই প্রথম Mind Map তৈরি করুন। যদি আপনার নাম হয় রনি, তা হলে আপনার Mind Map-এর নামও হবে রনি। এ Mind Map-টি উদাহরণ হিসেবে আগের পৃষ্ঠায় দেওয়া হয়েছে।

ধাপ:১

পৃষ্ঠাটা থাকবে আড়াআড়িভাবে এবং বিষয়ের নাম থাকবে কেন্দ্রে।

নিয়ম

১. কেন্দ্রের বিষয়কে যেমন খুশি রং দিতে পারেন।

২. এর কোন বর্ডার বা বক্স দেবেন না।

৩. যদি এমন কোন বিষয় থাকে যার ছবি আঁকা সম্ভব নয়, তা হলে শব্দটাকেই নানা রং দিতে পারেন।

৪. বিষয়ের আয়তন আপনার বুড়ো আঙুলের উপরের ভাগের সমান বা ছোট হবে, বেশি বড় যেন না হয়।

ধাপ: ২

প্রধান শাখা যোগ করুন।

এই ধাপে Sub-heading যোগ করুন।

নিয়ম

১. অবশ্যই বড় হাতের অক্ষরে লিখতে হবে। যদি বাংলায় লেখেন তা হলে একটু বড় আকারের শব্দ লিখুন।

২. প্রতিটি প্রধান শাখা কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থাকবে যেভাবে ফ্যানের ব্লেড বা পাখাগুলো কেন্দ্রের সাথে যুক্ত থাকে।

৩. শাখাগুলো পরস্পরের সাথে কখনোই সমান্তরাল হবে না। একটি প্রধান শাখার সবগুলো তথ্য লেখার পর দ্বিতীয় শাখা শুরু করবেন।

ধাপ: ৩

প্রতিটি প্রধান শাখার সাথে Main point বা Key word যোগ করুন ।

নিয়ম

১. শুধু Key word বা ছবি ব্যবহার করতে হবে।

২. বিভিন্ন ধরনের চিহ্ন ব্যবহার করতে পারেন ।

আপনি নিজের উদ্ভাবিত চিহ্ন ব্যবহার করতে পারেন। আমি কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

Not available

available without

wlo Because For

Cause

৩. প্রতিটি Key Word বা ছবি একটি মাত্র লাইনে থাকবে।

Keyword

৪. সর্বোচ্চ একটি শব্দ এক সরলরেখায় থাকবে।

৫. সব শাখা একটি নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে বের হবে।

৬. প্রতিটি শাখা যে কেন্দ্র থেকে বের হবে তারা একই রংয়ের হবে ।

৭. একটি শাখা থেকে পরবর্তী শাখায় যেতে রং বদলাতে হবে।

৮. Mind Map-এ তথ্যপ্রবাহ হবে ঘড়ির কাঁটার দিকে ।

আপনাদের অবশ্যই মনে রাখতে যে, Mind Map কোন সারাংশ নয়। এতে প্রধান তথ্যগুলো Key Word-এর মাধ্যমে সাজানো থাকে। প্রতিটি তথ্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন-এই Mind Map-এ Generous, কথাটার বর্ণনায় টাকা দান বা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করার কথা বলা হয়েছে।

বি: দ্র: Mind Map তৈরি করা হয়েছে কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে। কাজেই তা এমনভাবে বানাতে হবে যেন ডানদিকের শাখা বাম থেকে ডানে ও বামদিকের শাখা ডান থেকে বামে পড়া যায়।

ধাপ-৪: তথ্যপ্রবাহ

এ ধাপে আপনি আপনার কল্পনাকে লাগামছাড়া করে দিন। যে কোন তথ্যকে ছবিতে আঁকার চেষ্টা করুন তা যতই সুন্দর বা বীভৎস হোক না কেন। এটা আপনার মনে গেঁথে যাবে ।

এতক্ষণ যাবৎ যদি আপনি স্টেপগুলো বুঝে আপনার Mind Map তৈরি করতে পারেন, তা হলে এবার আমি আপনাদের জানাচ্ছি এর কার্যকারিতা সম্পর্কে। Mind Map আপনার ক্ষমতাকে কতখানি সমৃদ্ধ করবে তা আপনি এখনই বুঝতে পারবেন। নীচের আর্টিকেলটা পড়ন এবং মনে রাখার চেষ্টা করুন।

পদার্থের তিনটি রূপ

পদার্থের মূল রূপ তিনটি। যথা-কঠিন, তরল ও বায়বীয়।

কঠিন পদার্থ

কঠিন পদার্থের অণুগুলো সারিবদ্ধ অবস্থায় সজ্জিত থাকে। তারা থাকে খুব কাছাকাছি। তাদের মধ্যেকার দূরত্ব এত কম থাকে যে, চাপ দিয়ে ছোট করা যায় না। তাদের এই নির্দিষ্ট স্থানে থাকার মূল কারণ হলো শক্তিশালী আন্তঃআণবিক বল। যার ফলে, তাদের শুধু নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড়িয়ে কম্পন সম্ভব।

এই আন্তঃআণবিক বল তৈরি হয় আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বলের মাধ্যমে। আকর্ষণ শক্তি অণুগুলোকে মুক্ত হতে বাধা দেয়। আর বিকর্ষণ শক্তি বাধা দেয় অণুগুলোকে একীভূত হয়ে যেতে । যার ফলে কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।

যখন এতে তাপ দেওয়া হয়, অণুগুলোর শক্তি বেড়ে যায় । ফলে, তাদের কম্পন বেড়ে যায়। ফলে, অণুগুলোর মধ্যেকার দূরত্ব এবং পদার্থের আয়তন বেড়ে যায়।

তরল পদার্থ

তরল পদার্থের অণুগুলো কঠিন পদার্থের তুলনায় দূরে দূরে থাকে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও এদের চাপ দিয়ে ছোট করা যায় না । এদের মধ্যেকার আন্তঃআণবিক বল কঠিন পদার্থের মত শক্তিশালী নয়। তরল পদার্থের অণুগুলো পরস্পরের উপর চলাচল করতে পারে। তাই, তরল পদার্থের কোন নির্দিষ্ট আকার নেই এবং তাদের যে পাত্রেই রাখা হোক না কেন তারা সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। যখন এতে তাপ দেওয়া হয় তখন অণুগুলো অনেক দ্রুত কম্পিত হয় এবং এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে। ফলে, তরল পদার্থ আয়তনে বৃদ্ধি পায়।

বায়বীয় পদার্থ

বায়বীয় পদার্থের অণুগুলো আরও দূরে দূরে থাকে। ফলে, তাদের মধ্যে অনেক ফাঁকা জায়গা থাকে। বায়বীয় পদার্থকে চাপ দিয়ে ছোট করা যায়। এর অণুগুলো অনেক দ্রুত ছুটোছুটি করে এবং পরস্পরের সাথে ও পাত্রের গায়ে ধাক্কা খায়। এই ধাক্কা খাওয়ার সময় তাদের আন্তঃআণবিক বল কাজ করে। এ আন্তঃআণবিক বলের মান কম বলে তাদের নির্দিষ্ট কোন আকার ও আয়তন নেই।

এবার বইটা বন্ধ করুন। একটা খাতা নিন। সেখানে লিখে ফেলুন কঠিন, তরল ও বায়বীয় পদার্থ সম্পর্কে আপনার কতগুলো তথ্য মনে আছে। প্লীজ, লিখুন। লেখা শেষ হলে এবার মেলান।

আপনি একটু লক্ষ করলেই দেখতে পাবেন, কঠিন পদার্থ সম্পর্কে আপনি লিখতে পেরেছেন সবচেয়ে বেশি। তরল ও বায়বীয় পদার্থে কিছু তথ্য বাদ পড়েছে। এবার দেখুন, Mind Map-এর ক্ষমতা। আমি শুধু কঠিন পদার্থের Mind Map বানিয়ে দিচ্ছি। বাকিগুলো আপনি তৈরি করুন। প্রথমেই Key word বের করুন।

কঠিন পদার্থ

কঠিন পদার্থের অণুগুলো সারিবদ্ধ অবস্থায় সজ্জিত থাকে। তারা থাকে খুব কাছাকাছি। তাদের মধ্যেকার দূরত্ব এত কম থাকে যে, চাপ দিয়ে তাদের ছোট করা যায় না। তাদের এ নির্দিষ্ট স্থানে থাকার মূল কারণ হলো শক্তিশালী আন্তঃআণবিক বল। যার ফলে, তাদের শুধু নির্দিষ্ট স্থানে দাঁড়িয়ে কম্পন সম্ভব ।

এ আন্তঃআণবিক বল তৈরি হয় আকর্ষণ ও বিকর্ষণ বলের মাধ্যমে। আকর্ষণ শক্তি অণুগুলোকে মুক্ত হতে বাধা দেয়। আর, বিকর্ষণ শক্তি বাধা দেয় অণুগুলোকে একীভূত হয়ে যেতে। যার ফলে, কঠিন পদার্থের নির্দিষ্ট আকার ও আয়তন আছে।

যখন, এতে তাপ দেওয়া হয়, অণুগুলোর শক্তি বেড়ে যায়। ফলে, তাদের কম্পন বেড়ে যায়। ফলে, অণুগুলোর মধ্যেকার দূরত্ব ও পদার্থের আয়তন বেড়ে যায় ।

(১) ধাপ-১: সাদা কাগজের মাঝামাঝি বিষয়টাকে লিখুন।

(২) ধাপ-২: প্রধান শাখা যুক্ত করুন। আগেই তিনটি শাখা লিখে ফেলবেন না। একটি শাখার সম্পূর্ণ তথ্য শেষ করে পরবর্তী শাখায় যাবেন।

(৩) ধাপ-৩, ৪: প্রধান Key Word যোগ করুন এবং চিহ্ন ও ছবি যোগ করুন ।

Mind Map টা সম্পূর্ণ হবার পর আবার খাতা নিন। এবার লিখুন। দেখুন, কতগুলো তথ্য আপনি মনে রাখতে পারছেন। আপনি যখন রিভিশন দেবেন, তখন আপনার নিজের তৈরি এ

নোট আপনাকেই আনন্দ দেবে আর এটা মনে থাকবে অনেক, অনেক দিন। আপনার পাঠ্যবই থেকে এখনই একটা Mind Map বানিয়ে ফেলুন। মোট তিনটা Mind Map যদি আপনি এখনই তৈরি করেন তা হলে এটা তৈরির Idea আপনার মাঝে চলে আসবে। আপনার বইয়ের চ্যাপ্টারগুলোর ১০ পৃষ্ঠার তথ্য একটা Mind. Map-এ হয়ে যাবে। এটা বানানোতে আপনার আছে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা। তবে নিয়মগুলো মাথায় রাখবেন। কারণ, তা আপনার ব্রেনের বিভিন্ন অংশকে কাজে লাগানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। তা হলে, বন্ধু, চলুন Next অধ্যায়ে ।

.

১২. মেমোরী প্যাটার্ন

পৃথিবীর আর সব চক্রের মত আমাদের মেমোরীরও আছে নির্দিষ্ট চক্র। আপনি হয়তো দেখবেন, এমন কিছু সময় আছে, যখন পড়া শুরু করলে খুব দ্রুত পড়া হয় এবং বেশ ভাল মনে থাকে। আবার, এমন কিছু সময় আছে, যখন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বই নিয়ে বসে থাকলেও কিছু পড়া হয় না। কিন্তু, আমাদের ক্ষমতা আছে এর সঠিক ব্যবহারের। আর, সেটা জানতে হলে চলুন আগে জেনে নেয়া যাক, আমাদের মেমোরীতে কী কী তথ্য, কীভাবে জমা হয়।

তা হলে, খাতা কলম নিয়ে বসুন। নীচে কতগুলো এলোমেলো ইংরেজী শব্দ আছে। আপনি মাত্র একবার চোখ বুলিয়ে খাতায় লিখে ফেলবেন। সিরিয়ালি না লিখলেও চলবে। দেখুন, ৩৩টা শব্দের মাঝে আপনি কতগুলো মনে রাখতে পেরেছেন। তবে, মনে রাখুন, একবারের বেশি শব্দগুলো দেখবেন না।

Right May To

From is Far.

Five Why For.

Him The is.

Cute of Left.

The is The.

Sore Been Maize

is The Ring.

The Santa Claus Baby.

Row Cam goal.

The The Roller.

এখন, খাতায় নম্বর দিয়ে লিখে ফেলুন। আবার দেখবেন না । এবার যে শব্দগুলো লিখেছেন সেগুলো ভালভাবে লক্ষ করুন। কেন আর কীভাবে আপনি এ শব্দগুলো মনে রেখেছেন

১. একেবারে প্রথম দিকের কিছু শব্দ আপনি মনে রেখেছেন।

২. একেবারে শেষদিকের কিছু শব্দ আপনি লিখতে পেরেছেন।

৩. যে শব্দগুলো একাধিকবার আছে সেগুলো মনে আছে।

৪. অন্যধারার শব্দ, যেমন-Santa Claus মনে আছে।

৫. একই ধরনের সম্পর্কযুক্ত শব্দ যেমন-Right, Left আপনার মনে আছে।

বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষণা করেই এ তথ্য বের করেছেন। তারা

দু’ঘণ্টার পড়াকে পর্যালোচনা করে দেখেছেন পড়ার শুরু আর শেষের দিকের অংশ বেশি মনে থাকে। এটাকে গ্রাফ হিসেবে দেখালে,

মেমোরী প্যাটার্ন ১

এ গ্রাফ থেকে দেখা যায়, পড়া শুরুর কিছুক্ষণ পরেই মনোযোগ বিক্ষিপ্ত হতে শুরু করে এবং মাঝামাঝি সময়ে যা পড়া হয় তার প্রায় পুরোটাই আমরা ভুলে যাই। এবং যদি দু’ঘণ্টার বেশি পড়া হয় একটানা, তা হলে শেষের দিকে ভাল মনে রাখার যে Peak সেটাও থাকে না। ফলে, বুঝতেই পারছেন, একটানা অনেকক্ষণ পড়লে আপনার কোন লাভ হচ্ছে না। আর, অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য পড়া শুরু করলে, সামান্য পড়েই আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন। তা হলে কীভাবে পড়বেন আর কতক্ষণ পড়বেন?

বিজ্ঞানীরা একটা আদর্শ স্টাডি সেশনকে দু’ঘণ্টা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। এ দু’ঘণ্টার পড়াকে চারটি ভাগে ভাগ করতে হবে। প্রতিটি ভাগ হবে ২৫ কিংবা ৩০ মিনিটের। প্রতিটি ভাগের পর ৫ মিনিট বিশ্রাম থাকবে। এ সময় আপনি পানি খেতে বা বিশ্রাম নিতে পারেন। এভাবে পড়লে আপনার মনে রাখার গ্রাফ হবে–

মেমোরী প্যাটার্ন ২

এতে দেখা যায়, টানা দু’ঘণ্টা পড়লে যেখানে আপনার মনে রাখার Peak/সর্বোচ্চ লেভেল থাকত ২টি, সেখানে এ পদ্ধতিতে থাকছে ৮টি। এর অর্থ আপনি এভাবে পড়লে আগের চেয়ে ৪ গুণ বেশি তথ্য মনে রাখতে পারবেন। মনে রাখবেন, প্রতি দু’ঘণ্টা স্টাডি সেশনের পর কমপক্ষে ৩০ মিনিট বিরতি নিয়ে আবার পড়তে বসবেন।

অনেক ছাত্র দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে, পরীক্ষার কিছুদিন আগেই পড়া শুরু করা উচিত। আগে শুরু করে কোন লাভ নেই। কারণ, আগের পড়া কিছুই মনে থাকে না। ফলে, এসব ছাত্রের প্রধান সমস্যা দাঁড়ায় পরীক্ষার আগে রিভিশন দিতে গিয়ে। তাঁরা বাজে রেজাল্ট করার পর ভাবেন, এত পড়েও আমাকে দিয়ে কিছুই হলো না। অনেক টেনশনের মধ্যে যে পড়া হয়, সেটা মনেও থাকে খুব অল্প সময়ু। তাই, তারা পরীক্ষার হল থেকে বের হয়েই দেখতে পান, অধিকাংশ পড়াই ভুলে গেছেন । কারণ, ব্রেন স্বল্প সময়ের জন্য অনেক তথ্য মনে রাখতে পারে, আপনি সেগুলোই পরীক্ষায় উগরে দিয়ে আসেন। ফলে, আপনার পরীক্ষা পাস হলেও কিছুই শেখা হয় না। এসব ছাত্ররা বিপাকে পড়েন, Professional life-এ গিয়ে। কারণ, সেখানে পরীক্ষার নম্বরের চেয়ে জ্ঞান আর আত্মবিশ্বাসের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয় ।

এজন্য আপনাকে বছরের শুরুতেই পড়া আরম্ভ করতে হবে । আর রিভিশন দিতে হবে নিয়ম মেনে। এজন্য আপনাকে জানাচ্ছি কখন ও কীভাবে রিভিশন দেবেন আর কীভাবে তা আপনার কাজে লাগবে

আপনি যা পড়েন তার ৮০ ভাগ ভুলে যান প্রথম ২৪ ঘণ্টায়

আপনি যা পড়েন তা যদি ২৪ ঘণ্টার ভেতর রিভিশন না দেন তা হলে যা পড়ছেন তার ৮০ ভাগ ভুলে যাবেন। এভাবে, এক বা দু’সপ্তাহ পর ভুলে যাবেন সবটুকুই। ফলে, পরীক্ষা আসলে দেখবেন কিছুই মনে নেই। তাই, পরীক্ষার আগে আবার সব নতুন করে পড়তে হবে। ফলাফল হলো প্রচুর পরিশ্রম আর নিম্নমানের রেজাল্ট।

এ কারণেই অনেকে তাড়াতাড়ি সিলেবাস শেষ করতে চান না।

কারণ, জানা কথা, যা পড়েছেন তা পরীক্ষার আগে আবার নতুন করে পড়তে হবে। এ সমস্যা থেকে মুক্তির একটাই কার্যকর উপায় আছে। আর, তা হলো সঠিক সময়ে রিভিশন। আপনি যদি Key Word ও Mind Map ব্যবহার করে পড়েন তা হলে প্রথমবার পড়তে যে সময় লাগবে, দ্বিতীয়বারে লাগবে প্রথমবারের ১০ ভাগের এক ভাগ। সাধারণত, একঘণ্টার পড়া রিভিশন দিতে সময় লাগে ১০ মিনিট। এ রিভিশন যথাসময়ে দিতে হবে । আমাদের ব্রেনে স্বল্পস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী মেমোরীর জন্য আলাদা জায়গা আছে। স্বল্পস্থায়ী মেমোরীকে বারবার মনে করলে তা দীর্ঘস্থায়ী মেমোরীতে জায়গা করে নেয়। এ দীর্ঘস্থায়ী মেমোরীতে তথ্য জমা করতে প্রয়োজন চারটি রিভিশন।

প্রথম রিভিশন

আপনার দু’ঘণ্টা বিশ মিনিটের (বিশ্রামের সময়সহ) পড়ার সেশনের ১ ঘণ্টা ৫০ মিনিট পড়ার জন্য আর শেষ ১০ মিনিট রাখুন রিভিশনের জন্য। এ রিভিশন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দু’ঘণ্টায় যা পড়লেন তার তথ্যগুলোকে গোছানোর জন্য এ রিভিশন কার্যকরী। এ রিভিশন না দিলে আপনার এত কষ্টের পড়া মনে থাকবে না।

দ্বিতীয় রিভিশন

দ্বিতীয় রিভিশন দেবেন আপনার প্রথম রিভিশনের ২৪ ঘণ্টার ভেতর। ধরুন, আজ সন্ধ্যায় দু’ঘণ্টার স্টাডি সেশনে যা পড়লেন পরবর্তী দিন পড়া শুরু করার আগে ১০ মিনিট আজকের পড়া রিভিশন দিয়ে নিন। এ দু’টো রিভিশন দিলে আপনার ন্যূনতম ৫০ ভাগ পড়া মনে থাকবে।

তৃতীয় রিভিশন

এ রিভিশন দেবেন ঠিক একসপ্তাহ পর ।

চতুর্থ রিভিশন

চতুর্থ বা শেষ রিভিশন দেবেন পরীক্ষার আগের দিন ।

আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, মেলা ঝামেলার ব্যাপার। এত রিভিশন দেয়ার সময় কই? তা হলে, নীচের চার্টটা দেখুন। যদি ২ ঘণ্টার পড়ার রিভিশন ১০-১৫ মিনিট হয় তা হলে আপনার সময় খরচ হবে

 ৪টি রিভিশন১টি রিভিশন
সময়২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট৩ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
মনে রাখার সম্ভাব্যতা৪ গুণ 

কারণ, যদি একবার পড়ে কোন রিভিশন না দেন, তা হলে আপনার দু’ঘণ্টার পড়া রিভিশন দিতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট। আর, যদি Mind Map বানাতে পারেন, তা হলে আপনার টেনশন অর্ধেক কমে যাবে আর রিভিশনও হবে আনন্দময়। এতে আপনার মনে রাখার ক্ষমতা এত বেড়ে যাবে যে, আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন। এখন, তা হলে চলুন জেনে নিই আপনার মনে রাখা তথ্যগুলোকে কীভাবে কাজে লাগাবেন।

.

১৩. মেমোরীকে কাজে লাগানো

এতগুলো চ্যাপ্টার অনুশীলন করে আপনার কনফিডেন্স নিশ্চয়ই আগের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু অনেক কিছু জানা থাকলেও পরীক্ষা দেবার পদ্ধতি না জানলে সব বৃথা। আমাদের মূল সমস্যা হলো একটা বই থেকে আমাদের ঠিক কোন তথ্যগুলো শিখতে হবে আর কীভাবে শিখতে হবে তা আমাদের কেউ বলে দেয় না। ক্লাসে টিচাররা মুখস্থ পড়া বলে যান। প্রাইভেট পড়ানো হয় শুধু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নগুলো। কিন্তু, কীভাবে শিখব, কেন শিখব আর তা কী কাজে লাগবে তা আমরা বুঝতে পারি না। কিন্তু উন্নত বিশ্বে এবং উন্নয়নশীল বিশ্বে সবখানেই নির্দিষ্ট করে দেয়া আছে একজন ছাত্রের জ্ঞান লাভের জন্য কীভাবে পড়তে হবে। আপনাদের তা হলে আমি জানিয়ে দিচ্ছি ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড অভ টেক্সট বুক এর বিধি। ছাত্রদের পড়ার বিষয় যাই হোক না কেন, নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুসরণ করে পাঠ্যবই লিখতে হবে। এ বিধি অনুযায়ী, একজন ছাত্র তার শিক্ষাজীবনে পাঠ্যবই থেকে যা শিখবে তা হলো।–

১. তথ্যের মিল ও অমিল।

২. তথ্যের বিশ্লেষণ।

৩. কোন ঘটনার কারণ অনুসন্ধান ও বৈশিষ্ট্য।

৪. নির্দিষ্ট তথ্য বের করা এবং সাজানো।

৫. সিদ্ধান্ত নেয়া।

৬. সমস্যার সমাধান।

৭. তথ্যের বিস্তৃত বর্ণনা।

৮. তথ্যের নির্ভুলতা নির্ণয়।

৯. বিভিন্ন তথ্যের মাঝে সম্পর্ক নির্ণয় ও মতামত প্রদান।

১০. বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সমাধানে পৌঁছানো।

খুবই অগোছালো মনে হচ্ছে কি? আপনি তা হলে একটা সাদা কাগজে এ দশটি লাইন লিখে আপনার টেবিলের সামনের দেয়ালে বা টেবিলেই স্কচটেপ দিয়ে লাগিয়ে ফেলুন। এবার আপনার যে কোন পাঠ্যবই বের করুন। একটা চ্যাপ্টার খুলুন। এবার দেখুন এটা থেকে আপনাকে কীভাবে পড়তে হবে? পদার্থবিদ্যা দিয়েই উদাহরণ দিই। প্রথমে বিভিন্ন সংজ্ঞা দেয়া আছে। গতি, বল, বেগ ইত্যাদি। এখন চার্টের দিকে তাকান। আপনাকে জানতে হবে এ বিষয়গুলোর মিল আর অমিল। জানতে হবে সম্পর্ক। কীভাবে গতিসূত্রকে বলবিদ্যায় লাগাবেন। আপনাকে জানতে হবে তাদের বৈশিষ্ট্য। এদের সূত্র বের করা। সে সূত্রানুযায়ী কিছু সমস্যার সমাধান। কোন সূত্রের বর্ণনা বা প্রমাণ। আপনার সূত্রের নির্ভুলতা নির্ণয় । এবং আপনার মতামত।

আপনি যদি একটা কবিতা পড়েন তা হলেও এ নিয়ম খাটবে । ধরুন, ‘সোনার তরী’ কবিতায় কবি নৌকার সাথে সময়ের কী তুলনা করেছেন। তাদের মিল ও অমিল, সম্পর্ক নির্ণয়। ঘটনার কারণ। নির্দিষ্ট তথ্য বের করা। যেমন-সোনার ধান বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন। সমস্যার সমাধান। বিশ্লেষণের মাধ্যমে সিদ্ধান্তে আসা। আপনার মতামত।

তাই যে কোন চ্যাপ্টার পড়ার আগে আপনাকে এ ১০টি বিষয় মাথায় রাখতে হবে। পড়ার শুরুতেই চ্যাপ্টারের নাম দেখে শেষের প্রশ্নগুলো একটা খাতায় লিখে ফেলুন। যদি প্রশ্ন না থাকে তা হলে নোট বই বা পুরানো বর্ষের পরীক্ষার প্রশ্ন যোগাড় করে সেগুলো লিখে ফেলুন। এতে কি লাভ হবে জানেন? আপনার পড়া অনেক সহজ আর আকর্ষণীয় হয়ে যাবে। কারণ, প্রশ্ন জানা থাকায় আপনি বুঝে ফেলতে পারবেন কোন তথ্যগুলো আপনাকে মনে রাখতে হবে। তাই, অপ্রয়োজনীয় তথ্য বাদ দিতে পারবেন।

সুতরাং, কোন চ্যাপ্টার পড়ার সময় আপনাকে তিনটি কাজ করতে হবে।–

১. প্রশ্ন সংগ্রহ করে খাতায় লিখে ফেলুন।

২. উত্তরগুলো লিখে অভ্যাস করুন।

৩. বিগত বছরের প্রশ্ন অনুযায়ী বাসায় পরীক্ষা দিন। দরকার হলে সবগুলো প্রশ্ন মুখস্থ করে পরীক্ষা দিন।

অনেক সময় আপনি পরীক্ষা দিতে গিয়ে দেখতে পান প্রশ্ন খুবই কঠিন। প্রশ্নের ধরন আপনি বুঝে উঠতে পারছেন না। এদিকে সময় বয়ে যাচ্ছে। ফলে, প্রশ্নটা না লিখেই আপনি বেরিয়ে আসলেন। আর তখনই মনে হলো, আরে! এ প্রশ্নটা তো আমি পারতাম! কিন্তু, প্রশ্নের ধরন সামান্য বদলে যাওয়ায় আপনি লিখতে পারেননি।

আমাদের স্কুলে একবার এমন হয়েছিল। প্রিটেস্ট পরীক্ষায় অংক বই হতে কোন প্রশ্ন করা হয়নি। অংকের নিয়ম অনুসরণ করেই প্রশ্ন করা হয়েছিল। কিন্তু আমাদের বইয়ের, অংক না থাকায় ৭০ জন ছাত্রের মাঝে মাত্র তিনজন পাস করেছিল। এর মূল কারণ হলো আমরা কোন কিছুই বুঝে পড়ি না। তাই প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে করলেই জানা উত্তরও আমরা ভুল করে আসি। এ সমস্যা সমাধানের দু’টো পথ আছে।

এক: বুঝে পড়া

পড়া শুরুর আগেই আপনার পরীক্ষা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করুন। কারণ, আপনি যতই ভাল পড়ালেখা করুন না কেন পরীক্ষা দিয়েই আপনার মেধা যাচাই করা হবে। তাই পড়া শুরুর আগেই পরীক্ষার জন্য যথাযথ প্রস্তুতি নিন। সেজন্য নীচের তথ্যগুলো সগ্রহ করুন

(১) প্রতিটি পরীক্ষার জন্য কত সময় পাওয়া যাবে।

(২) কত নম্বরের পরীক্ষা হবে আর তাতে পাশ/গ্রেড নম্বর কত।

(৩) পরীক্ষা কোন্ ধরনের (মাসিক, সাপ্তাহিক, বার্ষিক, জাতীয়)।

(৪) কয়টি প্রশ্ন আসবে।

(৫) কয়টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।

(৬) কয়টি প্রশ্নের উত্তর লেখা বাধ্যতামূলক। যেমন-অনেক সময় প্রশ্নে লেখা থাকে ১ ও ২ নং প্রশ্ন সহ মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দাও। এখানে ১ ও ২ নং প্রশ্ন অর্থাৎ দুটি প্রশ্নের উত্তর লেখা বাধ্যতামূলক।

(৭) প্রতিটি প্রশ্নের নম্বর কত ।

(৮) প্রশ্নপত্র কোন ধরনের (লিখিত/মৌখিক/বহুনির্বাচনী)।

(৯) প্রশ্নে কোন তথ্য দেওয়া থাকবে কিনা।

(১০) প্রতিটি প্রশ্নে কতক্ষণ সময় পাওয়া যাবে ।

(১১) প্রশ্ন ও উত্তর সংবলিত বই আপনার কাছে আছে কিনা।

(১২) কারা খাতা দেখবেন। (১৩) কবে, কখন ও কোথায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ।

(১৪) প্রশ্ন পড়ে তা থেকে প্রশ্নের ফোকাস নির্ধারণ করা। এজন্য যা করতে হবে তা হলো:

(ক) কোন জায়গা থেকে বেশি প্রশ্ন এসেছে তা বের করা।

(খ) মূল বিষয়গুলোকে চিহ্নিত করা ।

(গ) প্রশ্নের গুরুত্বানুযায়ী Rank নির্ধারণ করা।

*** খুব গুরুত্বপূর্ণ (তিনবার বা তার বেশি এসেছে)

* একবার এসেছে।

N/A কখনও আসেনি

(ঘ) গুরুত্বানুযায়ী প্রশ্নগুলোকে পড়তে হবে ও মনে রাখতে হবে।

(ঙ) *** গুরুত্বের প্রশ্নগুলো অবশ্যই লিখে অভ্যাস করতে হবে। N/Aগুলো একবার পড়লেই চলবে ।

দুই: সিস্টেম করে পড়া

সিস্টেম করে পড়ার মানে হলো তিনটি ধাপ অনুসরণ করে পড়া:

ধাপঃ এক

একটা প্রশ্ন কতরকম ভাবে আসতে পারে তা চিহ্নিত করা

পড়া শুরুর আগেই অনুশীলনী, বিগত বছরের প্রশ্ন, বোর্ডের প্রশ্ন, ক্লাস টেস্ট ইত্যাদি সব ধরনের সোর্স থেকে প্রশ্ন সংগ্রহ করুন। দেখুন, একই প্রশ্নকে কতরকমভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। আমি একটা সহজ উদাহরণ দিচ্ছি। বাংলা সাবজেক্টের ভাষা অধ্যায় হতে নিম্নের প্রশ্নগুলো হতে পারে–

১. ভাষা বলতে কী বোঝ? সাধু ও চলিত ভাষার পার্থক্য লিখ।

২. ভাষা কাকে বলে? সাধু ও চলিত ভাষার বৈশিষ্ট্য লিখ ।

৩. সাধু থেকে চলিত ও চলিত থেকে সাধু ভাষায় পরিবর্তনের নিয়মগুলো লিখ।

৪. হইতেছে আর হচ্ছে কোন ভাষারীতি প্রকাশ করে? তাদের মাঝে পরিবর্তনের নিয়মগুলো লিখ।

আপাতদৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও চার নম্বর প্রশ্নটা হয়তো আপনাকে কনফিউযড করে দিতে পারে। তাই ভিন্নধারার প্রশ্ন সম্পর্কে আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখুন। তা হলে, পরীক্ষার হলে দ্রুত ও সহজে আপনি প্রশ্ন বুঝতে পারবেন।

ধাপ: দুই

কী ধরনের উত্তর চাওয়া হচ্ছে তা চিহ্নিত করুন

প্রশ্ন নানা ধরনের হতে পারে। কোন কোন প্রশ্নে খুবই নির্দিষ্ট ও সংক্ষিপ্ত উত্তর আশা করা হয়। আবার কতগুলো প্রশ্ন দাবি করে বিস্তৃত ব্যাখ্যা। এ ছাড়া অনেক প্রশ্নে যাচাই করা হয় আপনার বুদ্ধিমত্তা। প্রশ্নোত্তর লেখার সময় সব সময় দুটো জিনিসের দিকে লক্ষ রাখবেন।

১. প্রশ্নের নম্বর

২. লেখার সময়

ধরুন, ৫ নম্বরের একটি প্রশ্ন এসেছে, কিন্তু আপনি এ প্রশ্নের উত্তর লিখতে পারবেন অনেক বেশি। কিন্তু সময়ে কুলাবে না। তাই শুধু মেইন পয়েন্টগুলো টাচ করে যাবেন। ধরুন, আপনাকে লিখতে দেয়া হলো পলাশীর যুদ্ধ, নম্বর ৫, সময় ১০ মিনিট। কিন্তু, আপনি যতটুকু জানেন তা লিখতে ২৫ মিনিট লাগবে । তাই, পয়েন্ট করে মূল বিষয়গুলো লিখুন। যেমন-কত সালে, কোন্ স্থানে, কার সাথে, কোন প্রেক্ষাপটে এ যুদ্ধ হয়েছিল । যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ফলাফল এবং এর প্রভাব। এরকম কয়েকটা পয়েন্টে ভাগ করে লিখলে অনিবার্যভাবেই আপনি অনেক বেশি নম্বর পাবেন। আর সময়ও বাঁচাতে পারবেন। আবার যদি কম জানা প্রশ্নের নম্বর বেশি হয় তা হলেও যা জানেন তাকেই পয়েন্ট বানিয়ে সে পয়েন্টগুলোর দু’তিন লাইন করে ব্যাখ্যা লিখে আসুন। এরপর খাতার নম্বর দেখে নিজেই অবাক হয়ে যাবেন।

ধাপ: তিন

বিভিন্ন ধরনের প্রশ্নে পূর্ণ নম্বর পাবার উপায় বের করতে হবে

এক লিটার পানি যদি আপনি কাউকে ছুঁড়ে মারেন সে তেমন কোন আঘাত পাবে না। একই ব্যাপার ঘটবে, যদি একটি এক লিটারের খালি প্লাস্টিকের বোতল আপনি কাউকে ছুঁড়ে মারেন। কিন্তু, যদি বোতলটা আপনি পানি ভর্তি করে ছুঁড়ে মারেন তা হলে এটাই হয়ে উঠবে একটা ভাল অস্ত্র। একই বই থেকেই ভাল ছাত্র, খারাপ ছাত্র সবাই পড়ে। কিন্তু ভাল পরীক্ষা দিতে হলে আপনার বোতল আর পানি আলাদাভাবে কোন আঘাত করতে পারবে না । অর্থাৎ, উত্তরকে সাজিয়ে পরিবেশন করতে হবে। অধিকাংশ বিষয়ের প্রশ্নোত্তর লেখার তিনটি ধাপ আছে।

১. যে প্রশ্ন করা হয়েছে তার উত্তর লেখা।

২. সেই উত্তরের স্বপক্ষে কিছু উদাহরণ, ছবি বা চার্ট উপস্থাপন।

৩. বইয়ের বাইরের কিছু উদাহরণ বা কোটেশন উপস্থাপন করা।

আপনাকে আগেই বলেছি উত্তর লেখার আগে একটু ভেবে নিন। কীভাবে লিখলে প্রশ্নটা পড়তে ভাল ও যথাযথ হবে তা বুঝতে চেষ্টা করুন। যেমন, পার্থক্য লেখার সময় তিনটি কলামে লিখুন। প্রথম কলামে পার্থক্যের কারণ আর বাকি দু’টোতে পার্থক্য, লিখুন। অংক করার সময় অবশ্যই অংকটার মূল অংশ খাতায় তুলতে হবে। পড়ালেখার সময় ছাড়াও আপনাকে অবসর সময়ে আগ্রহের বিষয়ের ম্যাগাজিন, পেপার পড়তে হবে। এখন অনেক পেপারেই অনেক বিষয়ের পড়া দেয়া থাকে। সেখান থেকে কোন প্রয়োজনীয় তথ্য পেলে খাতায় তুলে রাখুন।

H.S.C-তে পড়ার সময় পদার্থবিদ্যার ‘আলোর কোয়ান্টাম তত্ত্ব’ বুঝতেই পারছিলাম না। বই থেকে মুখস্থ লিখে এভারেজ নম্বর পেলেও মনের ভেতর খচখচ করত। এমনকী সাররাও ঠিকমত বোঝাতে পারেননি। এ সময় একটা দৈনিক পত্রিকার বিজ্ঞান সাময়িকীতে এ বিষয়ের উপর ছবিসহ চমৎকার একটা প্রবন্ধ পড়লাম। এরপর তা নোট করে পরবর্তী পরীক্ষায় লিখলাম। মজার ব্যাপার হলো, আমিই একমাত্র ফুল মার্কস পেলাম। আর সারও আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলেন, এটা কোথায় পেয়েছ? তাঁকে পেপারটা যোগাড় করে দিয়েছিলাম। তিনি পরবর্তী লেকচারেই সেই পেপার থেকে পড়ালেন।

তাই এখন আপনাকে ভাল ফলাফল করতে হলে বইয়ের বাইরের কিছু জ্ঞান রাখতে হবে। এখন যেহেতু ইন্টারনেট খুবই সহজলভ্য, তাই যে কোন টপিকের নাম লিখে সার্চ দিলেই কোটি কোটি রিসার্চ পেপার পড়তে পারবেন। তার মাঝে সবচেয়ে বেশি পড়া হয়েছে যেগুলো, তার দু’একটা পড়লেই আপনি অনেক তথ্য পাবেন। এগুলোকে জায়গামত কাজে লাগাতে পারলে বুঝতেই পারছেন, নম্বর আপনার দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

.

১৪. লক্ষ্য

আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী H.S.C. পরীক্ষার পর ঠিক করেন কী করবেন। আরও, মজার ব্যাপার হলো তাদের লক্ষ্য হলো সব জায়গায় পরীক্ষা দিয়ে সবচেয়ে ভাল যেটাতে চান্স পাবেন সেটাতে পড়া। এদেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী নিজেরা ডিসিশান নেন না। বাসায় বাবা-মার যে সাবজেক্ট পছন্দ তাতে পড়তে হবে । তাই, দেখা যায়, অংকে প্রচুর মেধাবী হয়ে অনেকে পারিবারিক চাপে ভিন্ন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করেন। তাই, তাঁর মেধা কোন কাজে লাগে না। পড়ার কোন উৎসাহ থাকে না। আবার মাঝে মাঝে হুজুগ ওঠে একটা নির্দিষ্ট সাবজেক্টে পড়ার । যেমন কম্পিউটার সহজলভ্য হবার পর সবাই কম্পিউটার সাইন্সে পড়া শুরু করল। নতুন নতুন প্রাইভেট ভার্সিটি চালু হলো যেখানে শুধু কম্পিউটার সাইন্স পড়ানো হয়। ফলে, কিছুদিন পরই চাকরীর বাজারে দেখা গেল সংকট। আমাদের অর্ধেক কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ ছাত্ররা বর্তমানে প্রাইভেট পড়িয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। এখন যেমন আবার হুজুগ উঠেছে MBA, BBA পড়ার। তাই, সবাই ছুটছে MBA পড়তে।

এই যখন যা আসে তা পড়ব, তাতে ক্যারিয়ার করব, এ মানসিকতার ফলে অনেক ভাল ছাত্রও কাজ করছেন নিম্নশ্রেণীর । তার মাঝে যাদের পৈত্রিক সম্পত্তি আছে তারা চলে যাচ্ছেন বিদেশে। ফলে, দেশে যে মাত্র ২০ ভাগ শিক্ষিত মানুষ আছেন, তারা ভুগছেন আর্থসামাজিক নিরাপত্তাহীনতায়। আর এ সবের পেছনে মূল কারণ হলো লক্ষ্যহীনতা।

১৯৫২ সালে আমেরিকার ইয়েল ইউনিভার্সিটির সমাপনী ব্যাচের ছাত্রদের কাছে জানতে চাওয়া হয়, তাদের লক্ষ্য সম্বন্ধে। তাদের প্রত্যেকের লক্ষ্য লিখে রাখা হয়। এতে দেখা যায়, ৯৭ ভাগ ছাত্রই নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য লেখেননি। বাকি ৩ ভাগ ছাত্র আগামী ২৫ বছরে কে কত আয় করবেন, কেমন জীবন-যাপন করবেন তা স্পষ্ট করে লিখে রেখেছিলেন।

১৯৭৭ সালে ইয়েল কর্তৃপক্ষ তাঁদের সেই শিক্ষার্থীদের ঠিকানা বের করে সমীক্ষা চালান এবং দেখতে পান সেই ৩ ভাগ ছাত্রের আয় বাকি ৯৭ ভাগের সম্মিলিত আয়ের চেয়েও তিনগুণ বেশি।

এ পার্থক্যের কারণ কী? সেই তিন ভাগ শিক্ষার্থী কি অসম্ভব মেধাবী ছিলেন? মোটেই না। তবে, তারা জানতেন তারা কী চান।

টাইগার উডস, বর্তমানে পৃথিবীর ১ নম্বর গলফার। তিনি মাত্র ২৪ বছর বয়সে পৃথিবীর সর্বাধিক টুর্নামেন্ট জেতার লক্ষ্য ভেঙেছেন। তিনি কত বছর বয়সে গলফার হতে চেয়েছেন জানেন? মাত্র ৮ বছর বয়সে। এ সময় তিনি ঠিক করেন, তিনিই হবেন বিশ্বের সেরা গলফার । আর ঠিক তাই হয়েছেন।

স্টিভেন স্পিলবার্গ, মাত্র ১২ বছর বয়সে ঠিক করেছিলেন, তিনি পৃথিবীর সেরা চলচ্চিত্র নির্মাতা হবেন। বর্তমানে তাই হয়েছেন। বিল ক্লিনটন স্কুলে থাকতেই ঠিক করেন, তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। মজার ব্যাপার হলো, ক্লাসে তার বন্ধুরা তাঁকে সম্বোধন করত প্রেসিডেন্ট বলে। যার সাথেই তাঁর দেখা হত, তিনি তাদের খোঁজখবর নিতেন এবং জানিয়ে দিতেন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। যে কোন রাজনৈতিক সেমিনারে তিনি ছোটবেলা থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। ফলে, তিনি সবচেয়ে কম বয়সে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।

তা হলে আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, লক্ষ্য ঠিক করলেই যদি তা হওয়া যায় তা হলে সবাই তা করে না কেন? এর সুনির্দিষ্ট কারণ হলো

(১) আত্মবিশ্বাসের অভাব

বেশিরভাগ মানুষই লক্ষ্য ঠিক করতে ভয় পান। তারা বিশ্বাস করেন যা হবার তা হবেই। আমার এতে কিছুই করার নেই, সবই আল্লাহর দান।

(২) হতাশা

অনেক ছাত্রই বিশ্বাস করেন লক্ষ্য ঠিক করে লাভ নেই। কারণ, আমি জানি আমি পারব না। আগেও চেষ্টা করেছিলাম। তাদের বাজে ফলাফলের কারণ হলো তারা সঠিক পরিকল্পনা ও পদ্ধতিতে পড়েননি। কিন্তু এ কথা তারা মানতে চান না।

(৩) তারা হেরে যেতে ভয় পান

অনেকেই এমন ভাবেন যে, যদি আমি লক্ষ্য ঠিক করি A+ পাব, কিন্তু পেলাম B, তা হলে কী হবে? সবাই হাসাহাসি করবে। তাই, তারা কোন লক্ষ্য ঠিক করেন না।

তা হলে বুঝতেই পারছেন, এখন আপনাকেই ডিসিশান নিতে হবে যে আপনি কি আর দশটা সাধারণ মানুষের মত বেঁচে থাকতে চান, নাকি জীবনে কিছু করে যেতে চান। আমি আপনাকে লক্ষ্য ঠিক করতে সামান্য Help করতে পারি। কিন্তু, নিজের লক্ষ্য। ঠিক করতে হবে আপনাকেই।

Think Big

যখনই লক্ষ্য ঠিক করুন না কেন, তাকে করুন আকাশছোঁয়া। ম্যাড়মেড়ে সহজ লক্ষ্য দেবেন না। যদি আপনার লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে হয়, তা হলেই সেটা হবে সঠিক লক্ষ্য। কারণ, তখন আপনার ব্রেন একে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে। এটাকে সম্ভব করার জন্য আপনি আপনার সর্বশক্তি প্রয়োগ করবেন। এবার তা হলে আপনাকে একটা গল্প বলি

ধরুন, আপনার একটি ফলের দোকান আছে। এ দোকানের কর্মচারী আপনিসহ মাত্র দু’জন। প্রতিমাসে আপনার লাভ থাকে ১০ হাজার টাকা। কর্মচারীকে বেতন দেন ৩ হাজার টাকা আর বাকি টাকা থাকে আপনার। এখন যদি আমি আপনাকে লক্ষ্য দিই মাসে ১৫ হাজার টাকা লাভ করতে হবে, আপনি কি তা পারবেন?

আমার বিশ্বাস আপনি পারবেন। আপনি নিজেও এ কথা জানেন। এজন্য আপনাকে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হবে । দোকানে বিক্রির সময় বাড়াতে হবে। তা হলেই সম্ভব । এবার যদি আমি আপনাকে লক্ষ্য দিই মাসে ৩০ লাখ টাকা লাভ করতে হবে, তা হলে? এবার, আপনি বলছেন, ধুর! পাগল নাকি? ফলের দোকান দিয়ে ৩০ লাখ টাকা মাসে? কিন্তু আমি বিশ্বাস করি আপনি তা পারবেন। আর এজন্য আপনাকে আপনার চিন্তা ও কাজের ধারা বদলাতে হবে। প্রথমেআপনার দোকানে আরেকজন লোক নিয়োগ দিন। এবার, ফলবাজারের বিভিন্ন দোকানে আপনি নিজে যোগাযোগ গড়ে তুলুন। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিন যে, আপনার দোকানেই সবচে টাটকা ফল পাওয়া যায়। পোস্টার ছাপিয়ে বিভিন্ন জায়গায় তা লাগিয়ে দিন। মাসখানেকের মধ্যেই আপনার বিক্রি প্রায় তিনগুণ বেড়ে যাবে। এবার আরেকটা দোকান খুলুন। টিভিতে বিজ্ঞাপন দিন। বিভিন্ন অফিস, হাসপাতাল, অভিজাত আবাসিক এলাকায় সরবরাহের দায়িত্ব নিন। এতে আপনি মাসে ২-৩ লাখ টাকা লাভ করতে পারবেন। এখন দেশের মূল শহরগুলোতে আলাদা আলাদা দোকান করুন। দেশের সব জায়গায় আপনার ফল পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। আপনার ফলের কোয়ালিটির ব্যাপারে কোন আপোষ করবেন না । ঠিক এর পরের মাসেই মাসে ৩০ লাখ টাকা লাভ আপনি ছাড়িয়ে যাবেন। এখন কি বিশ্বাস করছেন, এটা সম্ভব? অতএব, বুঝতেই পারছেন, বিশাল লক্ষ্য ঠিক করলে আপনার মাথাতেই নতুন আইডিয়া আসবে। আপনি বুঝতে পারবেন, একটা দোকানে বসে থেকে মাসে ৩০ লাখ। টাকা আয় সম্ভব না। আপনার কর্মপদ্ধতি বদলাতে হবে । এতক্ষণ যে গাঁজাখুরি গল্প শুনছিলেন তার মত একটা সত্যি ঘটনা শুনুন।

সিম উয়ং হু (Sim Wong Hoo) সিঙ্গাপুরের একজন সাধারণ মানের ছাত্র ছিলেন। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখতে ভালবাসতেন। মাত্র ১৫ বছর বয়সে ঠিক করেন; পৃথিবীব্যাপী একটা নতুন প্রযুক্তি বিক্রি করবেন। ১৭ বছর বয়সে তিনি ঠিক করেন, তৎকালীন যে কম্পিউটার ছিল সেটা শুধু কাজই করবে না, সেই সাথে গান শোনাবে, ছবি দেখাবে এমনকী এতে গেমসও খেলা যাবে। কিন্তু তিনি ছিলেন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর দশজন ছেলের মত তিনিও পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে পাস করে, মাসে ১৫০০ ডলারের চাকরীতে ঢুকতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাঁর স্বপ্নকে বিশ্বাস করতেন। মাত্র ৬০০০ ডলার মূলধন নিয়ে তিনি ১৯৮১ সালে তাঁর প্রতিষ্ঠান Creative Technology শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যে তিনি আবিষ্কার করেন cubic CT, যা ছিল পৃথিবীর প্রথম Multimedia কম্পিউটার। আপনি নিশ্চয়ই ভাবছেন, যা বাবা! এত সহজেই সব হয়ে গেল! মোটেই না। তাঁর এ কম্পিউটার একটাও বিক্রি হয়নি। তার কোম্পানী প্রচুর লোকসান দিল। তিনি নিজে ধার-দেনায় ডুবে গেলেন। কিন্তু, তিনি এটাকে ব্যর্থতা না ধরে নিরলসভাবে পরিশ্রম করেন, আর এ কম্পিউটার বিক্রি না হবার কারণ অনুসন্ধান করেন। তিনি বুঝতে পারেন, মানুষ এখনও এত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের কথা ভাবেনি । এতে কী লাভ হবে, তারা তা বুঝতে পারছে না। আর এর উচ্চমূল্যও বিক্রি না হবার অন্যতম কারণ। তিনি একের পর এক চেষ্টা চালিয়ে যান। আর একের পর এক ব্যর্থতার মুখোমুখি হন। কিন্তু তিনি স্বপ্ন দেখা ছাড়েননি। তিনি চেষ্টা চালিয়ে গেছেন এর উন্নতিসাধনের । অবশেষে, তিনি স্বল্পমূল্যের সাউন্ডকার্ড উদ্ভাবনে সক্ষম হন। তিনি এর নাম দেন Sound Blaster. এবং এরপরের ঘটনা তো ইতিহাস। তখন, পৃথিবীর সব দেশে, যেখানেই কম্পিউটার ছিল, সেখানে এই সাউন্ডকার্ড ব্যবহৃত হত এবং বর্তমানে পৃথিবীর ৬০ ভাগ PC-তে Sound Blaster ব্যবহৃত হয়। ১৯৯২ সালে, সিঙ্গাপুরের প্রথম কোম্পানী হিসেবে NASDAQ-এ লিস্টেড হয়। বর্তমানে Creative এর কর্মচারী আছেন ৫০০০ জন এবং এর বার্ষিক লাভ মাত্র ১.৩ বিলিয়ন ডলার!

তাই স্বপ্ন দেখতে ভয় পাবেন না। বিশ্বাস করুন আপনি পারবেন। প্রতিটি ব্যর্থতাকেই শিক্ষা হিসেবে ধরে নিন। আর, নতুনভাবে চিন্তা করা শিখুন। আপনি সফল হবেন। এবার তা হলে জেনে নিন Powerful লক্ষ্য তৈরির ধাপগুলো

(১) আপনার নোটবুকে নির্দিষ্ট করে লিখুন আপনি ঠিক কী চান

আমি ইংরেজীতে ভাল নম্বর পাব, এটা কোন লক্ষ্য নয়। লিখুন, আমি ইংরেজীতে ৮৫ নম্বর পাব। যদি আপনি ৬০% নম্বরের লক্ষ্য ঠিক করেন তা হলে আপনার ব্রেন আপনার অজান্তেই ৪০ ভাগ পড়া বাদ দিয়ে যাবে। ফলে, ৬০ ভাগের জ্ঞান নিয়ে পরীক্ষা দিতে গেলে আপনি ৪০-৫০ নম্বর পাবেন। তাই উচ্চমাত্রার লক্ষ্য নির্দিষ্ট করুন। কারণ, বেন তা হলে এটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নেবে।

(২) আপনার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হলে কী কী লাভ হবে তা লিখুন

অনেকেই জানেন না, পরীক্ষায় ভাল রেজাল্ট করলে কী লাভ হবে । তাই আপনি লিখে ফেলুন বেশি নম্বর পাওয়ায় আপনার জীবন কেমন বদলে যাবে। যেমন, ধরুন, অংকে ১০০ পেলে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটা আপনাকে অবাক চোখে দেখবে। হা-হা। এমন যত লাভ হবে তা লিখে ফেলুন।

(৩) একটা নির্দিষ্ট পরিকল্পনা আর তা বাস্তবায়নের উপায় লিখুন

আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে কী কী ব্যবস্থা নেবেন তা ডিটেলসে লিখুন।

(৪) একটা ডেডলাইন নির্দিষ্ট করুন

আপনাকে অবশ্যই ডেডলাইন নির্দিষ্ট করতে হবে। এ পড়া এ সপ্তাহেই শেষ করতে হবে এমন ডেডলাইন দিন। কত তারিখে আপনি লক্ষ্যে পৌঁছবেন তা নির্দিষ্ট করুন।

(৫) আপনার ইমোশনকে উদ্দীপ্ত করুন

মানুষ যত যুক্তির কথাই বলুক সে চলে সম্পূর্ণ আবেগে। তাই, নিজের আবেগ, ইন্দ্রিয়ানুভূতি সব কিছুকেই নিয়োজিত করুন লক্ষ্য অর্জনে। প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য দিবাস্বপ্ন দেখুন। কল্পনা করুন লক্ষ্য পূরণের আনন্দ। ভাবুন, সবাই আপনাকে Congratulate করছে।

(৬) এখনই এক পৃষ্ঠা হলেও পড়া আরম্ভ করুন

এটা একটা জরুরী বিষয়। এখন সময় যাই হোক, রাত ১টা বা ভোর ৫টা, এখনই একটা পাঠ্যবই খুলে দু’পৃষ্ঠা পড়ে ফেলুন। এই প্রথম স্টেপ আপনাকে সারাজীবন উৎসাহ দেবে। তাই দ্রুত দু’পৃষ্ঠা পড়ে আবার বইয়ে চলে আসুন। এবার আসুন লক্ষ্য ঠিক করি। আপনার জীবনের ৪টি ক্ষেত্রের লক্ষ্য ঠিক করলেই মোটামুটি সবটুকু লক্ষ্য ঠিক হয়ে যায়। আর সেগুলো হলো—

(১) পড়ালেখা ও ক্যারিয়ার

(২) স্বাস্থ্য ও খেলাধুলা

(৩) অর্থ ও লাইফস্টাইল

(৪) পরিবার আর সমাজজীবন।

আমি দু’টো উদাহরণ দিচ্ছি। আপনি নিজে লক্ষ্য তৈরি করুন এবং স্টেপগুলো ঠিকমত লিখুন।

উদাহরণ-১-পড়ালেখার লক্ষ্য

লক্ষ্যফাইনাল পরীক্ষায় আমি অংকে ৯০% নম্বর পাব ।

লাভ ও কারণ:

(১) আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই, তাই অংক ভাল জানা প্রয়োজন।

(২) আমি আমার বন্ধুদের দেখিয়ে দিতে চাই যে, আমিও পারি ।

(৩) বাসার সবাই আমার এ সাফল্যে আনন্দিত হবে।

পরিকল্পনা আর বাস্তবায়ন

(১) প্রতিদিন রাতে ১ ঘণ্টা করে অংক করব ।

(২) গত তিন বছরের প্রশ্নের উপর পরীক্ষা দেব ও তাতে ৯০ নম্বর পাব।

(৩) প্রতি সপ্তাহে একবার রিভিশন দেব ।

বাস্তবায়নের দিন

২৬ নভেম্বর, ‘০৭

স্বাস্থ্য

লক্ষ্য: আমি এ বছর ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় দৌড়ে প্রথম হব।

লাভ ও কারণ

(১) আমি অলরাউন্ডার হতে চাই।

(২) আমি সর্বদা প্রাণশক্তিতে ভরপুর থাকতে চাই।

(৩) আমি প্রমাণ করতে চাই যে আমি পারি।

পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন

(১) প্রতিদিন সকালে ২০ বার বুক ডন দেব ও উঠবস করব।

(২) প্রতি বৃহস্পতিবার বিকেলে দু’ঘণ্টা দৌড়াব।

বাস্তবায়নের দিন

২০ জানুয়ারি, ‘০৮

আপনি আপনার নোট বইয়ে ডিটেলস লিখবেন আর টেবিলের সামনের দেয়ালে বা টেবিলে লিখে লাগিয়ে দিন শুধু লক্ষ্যগুলো। যেমন–

ফাইনাল পরীক্ষা ২০০৭

ইংরেজী ৮৫

বাংলা ৮৫

পদার্থ ৯০

রসায়ন ৯০

সমাজ ৮৫

ধর্ম ৯০

অংক ১০০

ফলাফল A+

এবার আপনার জীবনের একটা পোস্টার বানিয়ে দেয়ালে লাগিয়ে ফেলুন। আমি একটি উদাহরণ দিচ্ছি।

বয়স–১৫-১৬ S.S.C-তে ৮৫% নম্বর–নটরডেম কলেজে ভর্তি -> বয়স ১৭-১৯—H.S.C তে ৮০% নম্বর–ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি -> বয়স ২০-২৫ M.B.B.S ডিগ্রি লাভ–একটি বই লেখা -> বয়স ২৫-৩০–পোস্ট গ্রাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ–মাসে ৫০ হাজার টাকা আয় -> বয়স ৩০-৩৫- মাসে ৩ লক্ষ টাকা আয়- একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান স্থাপন -গাড়ি (মার্সিডিস) – বিয়ে (বুদ্ধিমান ও দায়িত্বশীল স্ত্রী) -> বয়স ৩৫-৪০–একটি হাসপাতাল তৈরি–ধনী ও দরিদ্র উভয়কে সেবা প্রদান।–বাড়ি (৬ বেডরুম, Music Room, বিশাল লাইব্রেরি) -> বয়স ৪০-৪৫–দেশের সর্বত্র ক্যাম্পের চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো–স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের চিকিৎসা সেবা প্রদান -> বয়স ৪৫-৫০–দেশের প্রত্যেক ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবা পৌঁছানো–উন্নতমান নিশ্চিত করা -> বয়স ৫০+ দেশের দারিদ্রমুক্তির জন্য কাজ করা– আত্মজীবনী ও উপন্যাস লেখা [প্রতি বছর একবার  বিদেশে ও প্রতি দু’মাসে একবার দেশের বিভিন্ন জায়গায় বেড়ানো]

বিখ্যাত ক্যারিয়ার প্ল্যানার স্টুয়ার্ট ট্যান বলেছেন, লক্ষ্য ঠিক করে একটা প্রাথমিক প্রস্তুতি নিতে হবে। ধরুন, আপনি একটি গাড়ি কিনতে চান। তাই, প্রাথমিক স্টেপ হলো গাড়ির শো রুমে ঘুরে আসা। যদি তা না পারেন অন্তত একটা খেলনা গাড়ি টেবিলে সাজিয়ে রাখুন। পড়ালেখার ক্ষেত্রে আপনি যে প্রতিষ্ঠানে পড়তে চান, সেখানে সশরীরে উপস্থিত হোন। নিজেকে এর অংশ বলে মনে করুন। মনে করুন আপনি এখানে ক্লাস করছেন। আপনার এই স্টেপ আপনার পড়ালেখার ক্ষেত্রে বিশাল মানসিক আবেদন সৃষ্টি করবে। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজে চান্স পাবার আগে বেশ কয়েকবার সেখানে গিয়েছি। নিজেকে এর অংশ হিসেবে কল্পনা করেছি। পড়তে বসার আগে চোখ বন্ধ করে নিজেকে সেখানে কল্পনা করেছি। আপনি যদি বিদেশে কোন ভার্সিটিতে পড়তে চান, তা হলে সেখানকার ছবি ইন্টারনেট থেকে ডাউনলোড করুন। নিজেকে সেখানে কল্পনা করুন। এর ফলে আপনার আগ্রহ আর উদ্দীপনা অনেক বেড়ে যাবে। পড়া তৈরি করা অনেক আকর্ষণীয় মনে হবে। একবার চেষ্টা করেই দেখুন না।

.

১৫. মোটিভেশন

এ পৃথিবীতে প্রত্যেক কাজ সম্পন্ন হবার পেছনেই মোটিভ থাকে। কখনও ইচ্ছায়, কখনও অনিচ্ছায় নানা ধরনের কাজ আপনি করে থাকেন। কিন্তু আর দশজনের মত আপনিও তা নিয়ে খুব একটা চিন্তা করেন না। পৃথিবীর বিভিন্ন সমাজব্যবস্থায় ভাল কাজ, মন্দ কাজ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধর্মগ্রন্থগুলোতে বলা হয়েছে ভাল কাজ করলে স্বর্গ আর মন্দ কাজে নরক লাভ হবে। আমি বা আপনি যে কোন কাজ করলেই মনের মাঝে একটা বোধ কাজ করে। এটা কী ভাল কাজ, না মন্দ কাজ! আমরা আনন্দ বা ঘৃণা নিয়েও কিছু কাজ করে থাকি। কিন্তু আমরা এগুলো সম্বন্ধে ততটা সচেতন নই। তাই এ চ্যাপ্টারে আমরা শিখব কীভাবে কোন কাজ সচেতনভাবে করা যায়, এসব মোটিভের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে। আপনি একটু ভেবে দেখুন তো, জীবনে ঠিক কতগুলো ভাল কাজ আপনি শুরু করেই ১ দিন বা ১ ঘণ্টা পরেই ছেড়ে দিয়েছেন? আমি নিজের কথাই বলি। আমার আছে অনেকগুলো নেশা। না, ড্রাগসের নেশা নয়। গল্পের বই পড়া, গান শোনা, টিভি দেখা, গেমস খেলা ইত্যাদি। আমি পড়ালেখা বাদে যা কিছুই করতে যাই তা নেশার মত কাজ করে। ধরুন, কোন লেখকের একটা বই পড়ে ভাল লাগল। তারপর, আমি তার লেখা সব বই যেখান থেকে, যেভাবে পারি যোগাড় করে পড়তে থাকি। এভাবে, ধুমধাম কিছুদিন পার হয়ে যায়। পরীক্ষার দু’মাস বাকি। কালকে পড়া শুরু করব। আজকে টিভি দেখে নিই। এভাবে ঘন্টার পর ঘণ্টা পার হয়ে যায়। পড়া শুরু করার কথা ৭টায়। কিন্তু ৬টার সময় ইচ্ছে হলো গান শোনার। কিছুক্ষণ রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনলাম। ধুর: ভাল লাগছে না। Linkin Park শুনি। এভাবে ১০টা বেজে গেল। থাক! কালকে থেকে পড়ব। আমি নিজেও বুঝতাম না প্রতিদিন পড়তে বসলেই কেন এত ঝামেলা শুরু হয়! বইটা খুললেই মন চলে যায় টিভির গানে, কারও চেহারা, কথোপকথনে। ফলে পড়া জমতে থাকে, আর বাড়তে থাকে। পরীক্ষা আসলে চোখে অন্ধকার দেখি। ওরে বাবা! এত পড়া বাকি! এ টার্মটা কোনমতে কাটিয়ে দিই। Next টার্মে ভালভাবে পড়ব। নেক্সট টার্মও শেষ হয়ে যায়। এবার ভাবি, আগামী বছর এমন পড়া দেব! এভাবে, নিজেকে কিছুটা বোঝাতে পারলেও, শিক্ষক আর বাবা-মাদের বোঝানো যায় না। কারণ, নম্বরটা দিন দিন কমতে থাকে ।

এখন তা হলে জেনে নিন এর কারণ কী? মানুষকে ছোটবেলা থেকেই শেখানো হয়, যে কাজে আনন্দ সেটা করতে, আর যেটা ক্ষতিকর, সেটা বর্জন করতে। ছোটবেলায় জিনিসগুলো সহজ থাকে। এত কঠিন পরিস্থিতি, আর পড়া বোঝার সমস্যা থাকে না। কিন্তু ছোটবেলার সে অভ্যাসটা থেকে যায়। তাই টিভি দেখে, বই পড়ে আমরা আনন্দ পাই দেখে তা করতেই থাকি। কিন্তু আমাদের এ বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা তৈরি করতে হবে যে, সারাজীবন টিভি দেখে কাটানো যাবে না। বড় হলেই কাজ করে খেতে হবে। আর তার জন্য পড়ালেখা অত্যাবশ্যক। আমাদের অধিকাংশেরই যেহেতু ধারণাও নেই তারা আগামী বছর কী করবেন, তাই তারা সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে সময় নষ্ট করতে ভয় পান না । ফলাফল, দেশ ভর্তি বেকার। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন। সীমাহীন দুর্নীতি। কিন্তু, আপনি যেহেতু এ বইটা পড়ছেন, তাই আপনি আর দশটা সাধারণ মানুষের মত নন। তা হলে চলুন, করে ফেলুন অনুশীলনীগুলো

অনুশীলনী-১

ক. আপনি যদি ঠিকমত পড়ালেখা না করেন, তা হলে কী কী। ক্ষতি হবে তা লিখুন। যেমন-পরীক্ষায় কম নম্বর পাবেন, বন্ধুরা হাসাহাসি করবে, বাবা-মা কষ্ট পাবেন। আপনি ঠিক যতগুলো পয়েন্ট লিখতে পারবেন লিখুন। এবার লেখা শেষ হলে সেটা তিনবার পড়ন। এবার চোখ বন্ধ করে তিন মিনিট মনে মনে পয়েন্টগুলোকে চিন্তা করুন।

মনে করুন, আপনি খুব কম নম্বর পেয়েছেন, আপনার বন্ধুরা প্রচুর নম্বর পেয়েছে। সবাই আপনাকে করুণা করছে। আপনার বাবা-মা লজ্জায় মাথা নিচু করে বসে আছেন। তিন মিনিট পর আবার খাতা নিয়ে বসুন।

খ. এবার লিখুন, এরকম ভাবে পড়ালেখায় ফাঁকি দিলে ১০ বছর পর আপনার কী অবস্থা হবে? যেমন-আপনি কোন ভাল কলেজ বা ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারেননি। আপনি কোন চাকরি পাচ্ছেন না। ঘরে বাইরে সর্বত্রই আপনাকে অপমান করা হচ্ছে।

এবার, তিন মিনিট চোখ বন্ধ করে নিজেকে সে অবস্থায় কল্পনা করুন। দুঃখটাকে অনুভব করুন।

গ. এবার লিখুন, ঠিকমত পড়ালেখা করলে কী লাভ হবে? লিখুন, A+ পেলে আপনার কী কী লাভ হবে। যেমন-ভীষণ আনন্দ পাচ্ছেন, সবাই বাহবা দিচ্ছে, বাবা-মা খুব খুশি।

এবার, তিন মিনিট কল্পনা করুন।

ঘ. এবার লিখুন, ১০ বছর পর কেমন অবস্থা হবে। আপনি দেশের সেরা কলেজ বা ভার্সিটির ডিগ্রি পাচ্ছেন। খুব বড় কোন চাকরি বা ব্যবসা করছেন। আপনার অনেক সম্মান ও টাকা হয়েছে।

এবার, তিন মিনিট কল্পনা করুন। আনন্দটাকে অনুভব করুন। এখন এই পয়েন্টগুলো লিখে ঘরের দেয়ালে লাগিয়ে রাখুন। প্রতিদিন পড়তে বসার আগে, পড়ালেখা না করলে আর করলে কী হবে তা দেখে নিন। তা হলে, পড়তে বসলে অনেক উৎসাহ পাবেন।

এবার জেনে নিন, সফল হবার সর্বাধুনিক কৌশল। বিদেশে বিভিন্ন কোম্পানী তাদের প্রচারের জন্য এ কৌশল ব্যবহার করে । সম্প্রতি আমাদের দেশের একটি মোবাইল কোম্পানীও এ কৌশল অবলম্বন করে সফলতা পেয়েছে। এতে চারটি ধাপ আছে।

প্রথম ধাপ: নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করুন

সাফল্যের মূল শক্তি হলো আত্মবিশ্বাস। নিজেকে বিশ্বাস করুন। নিজের সাথে ওয়াদা করুন, আপনি সব বিষয়ে A+ পাবেন। এর জন্য আপনার যা কিছু করা প্রয়োজন, তাই করবেন। যদি টিভি দেখা, আড্ডা দেয়া ছাড়তে হয়, তাই করবেন । আপনার লক্ষ্য থাকবে নির্দিষ্ট এবং আপনি তা পূরণ করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

দ্বিতীয় ধাপ: সবাইকে জানিয়ে দিন আপনি কী করবেন

এতে লজ্জার কিছু নেই। ব্যর্থতাকে ভয় পাবেন না। কারণ, আপনি জানেন আপনি ব্যর্থ নন। হয়তো আপনার কৌশলে ভুল ছিল। তাই লক্ষ্য স্থির করে বন্ধুবান্ধব, বাবা-মাকে জানিয়ে দিন। এতে যদি কেউ হাসাহাসি করে, তা হলে তাকে চ্যালেঞ্জ করুন। যত বেশি লোক হাসাহাসি করবে, ততই তা আপনার আত্মবিশ্বাসকে বাড়িয়ে দেবে। আপনার ভেতর একটা অন্ধ আবেগ ও জিদ কাজ করবে, কিছু একটা করে দেখানোর। এ প্রেরণাই আপনাকে সফল হতে সাহায্য করবে।

তৃতীয় ধাপ: কাজের মূল্যায়ন করুন

প্রতি সপ্তাহে একটি দিন নির্দিষ্ট করুন। সেদিন পুরো সপ্তাহের কাজকে বিশ্লেষণ করুন। আপনি কত ঘণ্টা পড়েছেন, কয়টা Mind Map বানিয়েছেন, পড়ার জন্য আপনার প্রিয় নাটক দেখেননি ইত্যাদি। আর যদি ফাঁকি দিয়ে থাকেন তা হলে তার কারণগুলোও লিখুন এবং পরবর্তী সপ্তাহে তা না করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হোন।

চতুর্থ ধাপ: নিজেকে পুরস্কার দিন

প্রতি সপ্তাহে কাজের মূল্যায়ন শেষে নিজেকে পুরস্কার দিন। ধরুন, সপ্তাহে ৩০ ঘণ্টা পড়ার কথা ছিল এবং আপনি তা পড়েছেন। মূল্যায়নের দিন তা হলে একটি গল্পের বই পড়ে ফেলুন বা আড্ডা দিন বা একটা সিনেমা দেখুন। এটাই পুরস্কার।

এ পদ্ধতির সফল ব্যবহারের উদাহরণ সৃষ্টি করেছে বাংলা লিংক। বাংলালিংক-এ চারটি ধাপ কীভাবে ব্যবহার করেছে তা দেখুন ।

প্রথম ধাপ: তারা নিজেদের প্রতি কমিটমেন্ট করেছে ১ বছরে বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পৌঁছে দেবে। যেখানে অন্য কোম্পানীগুলোর সময় লেগেছে ৮-১০ বছর, সেখানে তাদের লক্ষ্য ছিল অনেকটাই আকাশছোঁয়া ও অসাধারণ।

দ্বিতীয় ধাপ: পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে তারা সারাদেশের মানুষকে জানিয়ে দিয়েছে ১ বছরের মাঝেই সমগ্র বাংলাদেশ তাদের নেটওয়ার্কের আওতায় আসবে ।

তৃতীয় ধাপ: প্রতি মাসেই তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছে এ মাসে কয়টা জেলা আর কয়টা থানায় তাদের নেটওয়ার্ক পৌঁছে গেছে।

চতুর্থ ধাপ: তারা তাদের প্রতিজ্ঞা সময়ের আগেই পূর্ণ করে সেলিব্রেট করেছিল।

তাই বাংলা লিংকের এ দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে আপনিও নতুন উদ্যমে পড়া শুরু করুন।

বন্যেরা বনে সুন্দর

আধুনিক নিয়মের সাথে আপনি যদি আপনার স্বকীয়তা জুড়ে দিতে পারেন তা হলে অনন্য ব্যাপার হয়। আমি ভাগ্যবান কারণ আমার চেয়ে অনেক মেধাবী ছাত্রের সাথে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়েছে। তাদের পড়ার স্টাইল আমি কাছ থেকে লক্ষ করেছি। তাদের পড়ার পদ্ধতির কিছু মজার দিক আপনাদের জানিয়ে দিচ্ছি। আপনার পছন্দমত স্টাইল আপনি অনুসরণ করতে পারেন।

প্রথমে জানাচ্ছি আমার কলেজের বন্ধু অনির্বাণের কথা। সে খুবই ব্রিলিয়ান্ট ছাত্র। তবে তার পড়ার থিওরী হলো ঝাড়া মুখস্থ। তার যুক্তি হলো, না বুঝে মুখস্থ করলেও পড়া মনে থাকলে এক সময় তা বোঝা হয়ে যায়। ধরুন, ফিজিক্সের একটা প্রশ্ন তার বুঝতে সমস্যা হচ্ছে, সে প্রথমে লাইন বাই লাইন মুখস্থ করে ফেলল । পরে আরও অনেকের সাথে ডিসকাস করে সে পড়া বুঝে ফেলে। এ পদ্ধতিতে পড়ার সুবিধা হলো অনেক বেশি নম্বর পাওয়া যায়।

আসাদ ব্যুয়েটে পড়ত। সেও আমার কলেজের বন্ধু। তার পড়ার ধরন ছিল সব বিষয়ের সবগুলো টপিক পড়ত, সেগুলো লিখত। তারপর পরীক্ষা দিত। কোন কিছু বাদ দিয়ে গেলে তার টেনশন হয়। তাই, আমাদের খেপানো সত্ত্বেও সে পড়া বাদ দিত না ।

শান্ত আমার মেডিকেলের বন্ধু। তার সমস্যা হলো না পড়ে সে থাকতে পারে না । ১০ দিন ছুটি পেলে দু’দিন খুব কষ্ট করে ছুটি কাটায়। তারপর পড়া শুরু করলেই তার মন ভাল হয়ে যায়। তার পড়ার ধরন আরও অদ্ভুত। সে খাটের মাঝখানে বসে আর তার চারদিকে বই, খাতা, কলম, ডিকশনারী ছড়ানো থাকে। পড়ার সাথে সাথে সে খাতায় লিখতে থাকে। না লিখে পড়লে কোন পড়াই সম্পূর্ণ হয় না। তাই সে পড়ে আর লেখে। সেই সাথে খাতায় দুর্বোধ্য কিছু ছবি আঁকে।

দীপঙ্কর আরেকজন প্রতিভাবান ছাত্র। তার সম্পদ হলো মেমোরী। পড়া শুরুর দু’ঘণ্টা আগে থেকেই সে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়। তার ধারণা, খাবার খেলে সব রক্ত পেটে চলে যায়। এজন্য মাথায় পড়া ঢোকে না। সে খুবই নিয়মিত পড়ে আর অনেক সময় নিয়ে পড়ে। তার বিখ্যাত ডায়লগ হলো, ‘এইটা একবার পড়ছি, ঠিকমত পড়ছি, আর ভুলব না। আমি রিভিশন দেবার যে আন্তর্জাতিক স্ট্যান্ডার্ডের কথা বলেছি সেটা তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমি আর শান্ত বই বের করে তাকে দু’বছর আগের পড়া ধরেছি আর সে একের পর এক নির্ভুল উত্তর দিয়ে গেছে।

সোহেল আমার একজন পরিশ্রমী বন্ধু। সে HSC-তে ১২তম স্ট্যান্ড করেছিল। তার প্রতিটি কাজই হয় খুব গোছানো। যে কোন পড়া পড়তে গেলে সে কমপক্ষে দু’তিনটা বই নিয়ে পড়ে। বইগুলোর প্রয়োজনীয় অংশ নিয়ে সে নোট তৈরি করে। মেডিকেলের এত সাবজেক্টের এত পড়া থাকা সত্ত্বেও প্রতিটি বিষয়ের আলাদা আলাদা নোট সে তৈরি করেছে। পরীক্ষার আগে তাকে বই দেখতে হয় না। তার পরীক্ষার খাতা এত চমৎকার হয় যে, মনে হয় বাসা থেকে নোট করে এনেছে।

আর সব শেষে যার কথা বলছি সে হলো জামিল । একজন সত্যিকারের জিনিয়াস। সে খুবই ভাল ছবি আঁকে। সে একজন দারুণ ফটোগ্রাফার । মাঝে মাঝে পত্রিকায় লেখালেখি করে । তার ইংরেজী হাতের লেখা আর উচ্চারণ ইংল্যান্ডের ক্লাসিক ঘরানার। সে ভাল গিটার বাজায়। এ ছাড়া সে একজন দক্ষ সংগঠক। এরপর যদি ভাবেন, পড়ালেখায় ভাল না, তা হলে বিশাল ভুল করবেন। কারণ, পড়ালেখাতেও সে আমাদের চেয়ে কয়েক ধাপ উপরে। নানা ধরনের কাজের চাপ মাথায় নিয়েও সে পড়তে বসে যায় সময় পেলেই। কোন কিছুতেই তার মনোযোগের সমস্যা হয় না। তার ভাল জানার আরেকটি কারণ হলো প্রতিদিনই ক্লাসে সারকে প্রশ্ন করা। এ জন্য তাকে নানা বিদ্রূপ সইতে হয়েছে। ধরুন, ক্লাস শেষ। দু’টো বাজে। সবাই বের হতে চাইছে। সার জিজ্ঞেস করলেন, “তোমাদের কারও কোন প্রশ্ন আছে?’ জামিল ক্লাসে থাকলে আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন, সে হাত তুলবেই। আর এমন কোন প্রশ্ন করবে, যা বোঝাতে সারের আরও ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে। সবাইকে ক্লাসে বসিয়ে রাখা সে ভীষণ উপভোগ করত। সেই সাথে সারদের কাছে তার ইম্প্রেশনও ভাল হত। আর পড়াও হয়ে যেত। কারণ, আপনি যে প্রশ্ন করবেন, ক্লাসের অন্য সবাই তার উত্তর না শুনলেও আপনি তা মন দিয়ে শুনবেন ।

এখান থেকে আপনি কোন ভাল দিক বেছে নিতে পারেন। এখন তবে চলুন Next অধ্যায়ে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *