১৬.
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
কনফারেন্স রুমে নিজের এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসে আছে জেফরি গ্রিমস। রুমে থাকা অন্যান্য ব্যক্তিদের দিকে তাকাল সে। সবাই চিন্তিত। টানা তৃতীয়বারের মতো তার কোম্পানী লোকসান গুনতে যাচ্ছে।
অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্য জগতের এক উজ্জ্বল নাম জেফরি গ্রিমস। উচ্চমাত্রার ঝুঁকি নিয়ে ব্যবসায়ে বাজিমাত করার জন্য সে বহুল পরিচিত। কিন্তু বর্তমান অর্থনীতির সাথে পাল্লা দিয়ে কোম্পানীকে লাভের মুখ দেখাতে ব্যর্থ হচ্ছে। বিনিয়োগকারীরাও এখন আর তার কোম্পানীতে টাকা দিতে ভরসা পাচ্ছে না।
দুই বছর আগেও অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতি বেশ স্বাস্থ্যবান ছিল। বাতাসে টাকা উড়ত। প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার যোগ হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ান অর্থনীতিতে। কিন্তু গ্রিমস তখন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে পিছিয়ে পড়ল। খনি আর পেট্রোলিয়াম সেক্টরে টাকা বিনিয়োগ করে লাল বাতি জ্বলে গেল তার ব্যবসায়।
কোম্পানী এখন বিভিন্ন ঋণে জর্জরিত। অস্ট্রেলিয়ার বিজনেস কিং জেফরি গ্রিমস এখন টিকে থাকার জন্য ধুকছে।
নিজের ব্যাকব্রাশ করা চুলে আঙুল চালাল গ্রিমস। আচ্ছা, আমরা কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিস অন্য কোম্পানীর কাছে বিক্রি করতে পারি না? অন্তত যেটুকু ক্ষতি হয়েছে সেটুকু হয়তো পুষিয়ে যেত।
প্রধান ফাইন্যানশিয়াল অফিসার কার্টিস পার্কার মাথা নাড়ল। ব্যালান্স শিটে কোনো কিছুর ট্রান্সফারের হদিস পেলে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ আমাদের উপর হামলে পড়বে। তারা জানতে চাইবে জিনিসগুলো কোথায় গেল। অনেক ঝামেলা হবে তখন। এবারের লোকসানটা আমাদেরকে সহ্য করে নিতে হবে। আশা করা যায়, পরেরবার আমরা লাভের মুখ দেখব।’
গ্রিমস ভ্রু কুঁচকাল। তাহলে ধুঁকতে থাকা কোনো প্রজেক্টের গতি কমিয়ে কিংবা বাড়িয়ে দিলে কেমন হয়? কিংবা অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির দোহাই দিয়ে কোনো লুকোচুরি না করেও তো অন্য কোম্পানীর কাছে আমাদের অপ্রয়োজনীয় জিনিসগুলো বিক্রি করে দিতে পারি? যদিও জিনিগুলোর প্রকৃত মূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে বিক্রি করে দিতে হবে। তারপরও বর্তমান পরিস্থিতির স্বার্থে…’
হাসল পার্কার। না, আমরা সেটা পারি না। আমরা ওয়াল স্ট্রিট ব্যাংক নই। ওসব খেলা আমাদের মানায় না। সবাই আশা করে আমরা আমাদের কাজে সৎ থাকব।’
গ্রিমস টবিলে কলম ঠুকল। বেশ। স্টকে কী পরিমাণ ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে? অবস্থা যত জঘন্যই হোক আমি জানতে চাই।’
‘১৫%, তবে আগামী ১ সপ্তাহের মাঝে লোকসান পুষিয়ে যাবে। আমি কিছু ক্রেতাদের সাথে যোগাযোগ করেছি। তারা আমাদের সাথে আকর্ষণীয় রেটে ব্যবসা করতে রাজি হয়েছে। এতে আমাদের দু’পক্ষেরই লাভ হবে।’ স্প্রেডশিটের উপর নজর বুলাল পার্কার। কিন্তু সমস্যা হবে ঋণশোধ করতে গিয়ে। সবার ঋণ একসাথে শোধ করার মতো অবস্থায় নেই আমরা। ধীরে ধীরে টাকা আসবে। কিন্তু পাওনাদাররা কেউ-ই সিরিয়ালে পিছে থাকতে চাইবে না। সবাই চাইবে নিজের পাওনাটা সবার আগে বুঝে নিতে।’
এক সুন্দরী তরুণী কনফারেন্স রুমে মাথা ঢুকিয়ে গ্রিমসের দিকে তাকাল।
বল, ডেব?’ প্রশ্ন করল গ্রিমস।
আপনার প্রাইভেট লাইনে ফোন এসেছে। কলার জানালেন, বিষয়টা জরুরী… আপনি কি কলটা আশা করছিলেন?
গ্রিমসের চেহারা উজ্জ্বল হয়ে উঠল। হ্যাঁ, হ্যাঁ। রুমের উপরে চোখ বুলাল সে। জেন্টেলম্যান, আমি একটু আসছি, ওকে?’ কেউ তাকে কোনো সাড়া দিল না। রুম থেকে বেরিয়ে ডেবের পিছু পিছু এগোল গ্রিমস। ডেব মেয়েটা বেশ লম্বা। ওর হাঁটার গতি দেখে মনে হলো লম্বা লম্বা পা ফেলে যেন হাঁটছে না, জগিং করছে!
‘লাইন নাম্বার দুই। গ্রিমসকে নিজের অফিস রুমে ঢুকতে দেখে বলল ডেব। গ্রিমস মাথা নেড়ে অফিস রুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিল। এক্সিকিউটিভ চেয়ারে বসে ফোনটা কানে ধরল সে।
‘হ্যালো। গ্রিমস বলল।
যে ফোন করেছে তার কণ্ঠস্বর একদম সমতল, পুরুষ নাকি নারী বোঝ যাচ্ছে না, কোনো একটা সফটওয়্যারের মাধ্যমে নিজের কণ্ঠকে আড়াল করে রেখেছে। গ্রিমস যতবার এই রহস্যময় কলারের সাথে কথা বলেছে সবসময় একই অবস্থা।
‘আমাদের দ্বন্দের তীব্রতার বৃদ্ধির প্রথম পদক্ষেপ নেয়া হয়ে গেছে। দিন শেষে অস্ট্রেলিয়ান আর সলোমন পত্রিকাগুলোতে এইড কর্মীদের নিখোঁজ হওয়ার ব্যাপারে আর্টিকেল প্রকাশিত হবে। সাথে থাকবে মিলিশিয়াদের দাবী দাওয়াগুলো।
‘যাক, অবশেষে কিছু ভাল খবর পাওয়া গেল। পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পর সবকিছুর সমাধান করবেন কীভাবে? ভেবে রেখেছেন?
‘দূর্ভাগ্যবশতঃ কর্মীরা সেটা করতে পারবে না। তবে এখানে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি ঠিক করার ব্যাপারে আমরা চিন্তিত নই। সেটা সরকার বুঝবে। কিন্তু আমরা খুব ভাল করেই জানি এই সরকারের কিছু করার ক্ষমতা নেই।’
তাতে কাজ হবে?
‘সেটা সময়ই বলে দেবে।
‘আমার ধারণা, এই কৌশল কাজ না করলে সেক্ষেত্রে আপনি বিকল্প কোনো পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
‘অবশ্যই রেখেছি। কিন্তু সেটার ব্যাপারে জানতে চাইবেন না।’
“ঠিক আছে, চাইব না। যা করতে হয় করুন।
করব। তবে আপনি টাকা দিতে ভুলবেন না যেন। আমি অপেক্ষায় আছি।’
‘ধরে নিন, পেয়ে গেছেন।
ওপাশ থেকে ফোন রেখে দিল। নিজের হাতে থাকা ফোনের দিকে তাকিয়ে রইল গ্রিমস। এরকম চুক্তি এরআগে সে কখনও করেনি। অস্বস্তি হচ্ছে আবার উৎফুল্লও লাগছে ওর। ১ বছর আগে কলার তাকে ফোন করে একটা প্রস্তাব দেয়: কিছু অনৈতিক কাজে সহায়তা করলে সলোমন আইল্যান্ডের পরবর্তী সকল ইজারার দায়িত্ব গ্রিমসের কোম্পানীকে দেয়া হবে। তেল, গ্যাস, খনিজ পদার্থ যা খুশি উত্তোলন করার সুবিধা পাবে।
গ্রিমস প্রথমে ভেবেছিল কেউ ফাঁকা বুলি ছাড়ছে। কিন্তু ওপাশের বক্তা যখন সোনার খনি বন্ধ করে দেয়ার শপথ করল তখন একটু নড়েচড়ে বসেছিল গ্রিমস। লোকটি তার কথা রেখেছিল। বর্ষা মৌসুমে বন্যার পানিতে খনিতে পানি ঢুকে পড়ায় সত্যি সত্যি বন্ধ হয়ে গেল সোনার খনি। কারণ এরকম বিপর্যয় এড়ানোর জন্য খনিতে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল সেগুলো ঠিকভাবে কাজ করেনি কিংবা করতে দেয়া হয়নি।
এঘটনার পরপরই সরকার দ্বীপে বিদেশি অপারেটরদের যাবতীয় প্রজেক্ট বন্ধ করে দেয়। যার ফলে বন্ধ হয়ে যায় সোনার খনির সম্ভাবনাময় দরজা।
এসবের পর কলারের প্রতি আস্থা আসে গ্রিমসের। সে তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে এপর্যন্ত মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়েছে। সলোমন আইল্যান্ড কোম্পানীকে বিদেশি প্রতিষ্ঠান হিসেবে নয়, স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপস্থাপন করার জন্য ডলারগুলো খরচ করেছে গ্রিমস।
প্ল্যানটা একদম ডাল-ভাত। বিদ্রোহী দলকে অর্থ সহায়তা দিয়ে দ্বীপে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করে বর্তমান সরকারকে উৎখাতের পর নতুন সরকার স্থাপন করা। তারপর সেই সরকারের কাছ প্রচুর ব্যবসায়িক সুযোগ সুবিধা নিয়ে দ্বীপে চুটিয়ে ব্যবসা করা।
পরিকল্পনাটা যদি ঠিকভাবে কাজ করে তাহলে শত শত মিলিয়ন ডলার মূল্যের তেল আসতে যাচ্ছে গ্রিমসের হাতে। ডলারের বন্যা বয়ে যাবে।
তবে সব বড় বড় প্রজেক্টের মতো এই প্রজেক্টেও “পাঠা বলি দিতে হচ্ছে। যেখানে শত শত মিলিয়ন ডলারের ব্যাপারে সেখানে কয়েকজন এইড কর্মী আর দ্বীপের স্থানীয় লোকদের মৃত্যু কিছুই নয়। জীবনে বড় কিছু হতে গেলে “নরম” হলে চলে না। যেখানে টাকার অংক যত বড় সেখানে নোংরামি তত বেশি।
দ্বীপে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে ওখানকার অবস্থা যা-ই হোক তাতে গ্রিমসের কিছু আসে যায় না। সে স্রেফ তার ব্যবসায়িক স্বার্থের দিকে নজর রাখছে। হাজার হোক, সে একজন ব্যবসায়ী।
নিজের অফিস রুমের চারদিকে নজর বুলাল গ্রিমস। বিভিন্ন বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব ও সেলিব্রেটিদের সাথে ভোলা ছবি শোভা পাচ্ছে দেয়ালে। ব্যবসায়ী সংগঠন থেকে বিভিন্ন পুরষ্কার ও ক্রেস্টও আছে। একদম শূন্য থেকে যাত্রা শুরু করে এই অবস্থানে এসেছে গ্রিমস। এত সম্পদ এত ঐশ্বর্য কখনও সৎ পথে উপার্জন করা সম্ভব নয়। বিপুল সম্পদের মালিক হতে হলে অবশ্যই বাকা পথ অবলম্বন করতে হয়। সিডনি হারবারের দিকে তাকিয়ে সন্তুষ্টির হাসি হাসল গ্রিমস। রাস্তার সাধারণ লোক আর তার মধ্যে পার্থক্য এতটুকুই… দৃষ্টিভঙ্গি আর সাহস। যেখানে সুযোগ উঁকি দিয়েছে সেখানে ঝাঁপিয়ে পড়তে গ্রিমস কখনও দ্বিধা করেনি। অথচ সাধারণ লোকরা ঝুঁকির কথা ভেবে ইতস্তত করে সময় নষ্ট করে।
কজিতে পরা দামী প্লাটিনাম ঘড়িতে সময় দেখল গ্রিমস। মানুষ-জন মরছে তাতে সে কোনো অনুশোচনাবোধ করল না। প্রতিদিন পৃথিবীতে কতজনই তো মারা যাচ্ছে। দিন শেষে লাভটাই আসল।
এটাই ব্যবসা।
.
১৭.
গোয়াডালক্যানেল, সলোমন আইল্যান্ড
স্যাটেলাইট ফোনটা চালু করে মেসেজ চেক করল স্যাম। সেলমা মেসেজ পাঠিয়েছে। অস্ট্রেলিয়ান রিসার্চ শিপ ডারউইন আজ দুপুরের মধ্যে হনিয়ারা পোর্টে ভিড়বে। স্যাম সময় চেক করে ক্যালিফোর্নিয়ায় মেসেজ পাঠিয়ে সেলমাকে জানাল শিপটা যখন আসবে তখন উপস্থিত থাকবে ওরা।
গতকাল সন্ধ্যায় পুলিশ হোটেল এসেছিল। স্যাম ও রেমিকে আরও কিছু জিজ্ঞাসাবাদের পর আশ্বাস দিয়ে গেছে, অপরাধীদেরকে ধরা হবে। যদিও স্যামের বর্তমান চিন্তা জুড়ে সমুদ্রের নিচে থাকা ধ্বংসাবশেষ ঘুরপাক খাচ্ছে। কতখানি সফল হতে পারবে কে জানে।
কী দেখছ?’ রেমি প্রশ্ন করল। পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল স্যামকে।
‘কিছু না, নিজের দুশ্চিন্তা স্ত্রীকে জানিয়ে উদ্বেগ বাড়াল না স্যাম। রিসার্চ শিপ খুব শীঘ্রি চলে আসবে।
আচ্ছা। ভাল খবর।
স্যাম স্ত্রীর দিকে ফিরল। ঘাড়ের কী অবস্থা?
যদি বল ডাইভ দিতে পারব না কিনা… উত্তর হবে- পারব।’
ওর গাল পরীক্ষা করল স্যাম। রেমির গালে এখনও আঘাতের চিহ্ন আছে। স্যাম হাসল। সকালের নাস্তা খাওয়ার জন্য তৈরি তুমি?
‘আমার হাসি-খুশি বরের সাথে?
হু। আচ্ছা, লিও’র কী অবস্থা?
‘ডাইভ নিয়ে ব্যস্ত। মুখে যত যা-ই বলুক। আমার মনে হয়, সে ভাইভিং ঠিকই উপভোগ করছে।’
‘আমারও তা-ই ধারণা। কিন্তু তুমি যে এটা বুঝতে পেরেছে সেটা যেন লিও টের না পায়।
ঠিক আছে।’
রেমিকে নিয়ে হোটেলের রেস্টুরেন্টের দিকে এগোল স্যাম। বরাবরের মতো সেই একই টেবিলে লিও বসে আছে। কফি খাচ্ছে। কিন্তু ওর মুখের ভাবভঙ্গি দেখে মনে হলো ইঁদুরের বিষ মেশানো আছে কফিতে। ফারগো দম্পতিকে এগোতে দেখে হাসল লিও। ওর হাসিতে কোনো রস নেই।
‘গুড মর্নিং, বন্ধু! লিও’র পিঠে চাপড় মারল স্যাম। তোমাকে বেশ ফ্রেশ দেখাচ্ছে।
মদ গিলেছ বোধহয়, ভুল-ভাল দেখছ। যেটা খেয়েছ ওটা আমিও খেতে চাই।’ ব্যঙ্গ করল লিও।
‘আমার মনে হয় এই আইল্যান্ডের সৌন্দর্য তোমার উপর প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। উজ্জ্বল দেখাচ্ছে তোমাকে।’ লিও মুখোমুখি চেয়ারে বসতে বসতে বলল রেমি।
‘আচ্ছা! তুমিও খেয়েছ? তাহলে আমিও দুইবার খাব!’ লিও গজগজ করল। লিও রেগে গেলেও রেমি নিজের হাসি লুকোতে পারল না।
ভাল খবর এনেছি আমরা।’ বলল স্যাম।
‘তাই?’ লিও চোখের এক ভ্রূ উঁচিয়ে জিজ্ঞাসা করল।
‘ডারউইন আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এখানে এসে ভিড়বে। তারপর আমরা পুরোদমে অনুসন্ধানে নামব। কীরকম স্কুবা ডাইভিং শিখলে সেটার কারিশমা দেখানোর সুযোগ পাবে তুমি।
‘আমি বাজি ধরে বলতে পারি, লিও পানিতে মাছের মতো সাঁতার কাটতে পারবে। রেমি চাপা মারল।
মাছ না ছাই! আমি পুলে নেমে একটু-আধটু সাঁতার কাটতে পারি, এই পর্যন্তই।
‘আরেকটা সুখবর আছে। সেলমা সকালে ফোন করেছিল। বলল, চারজন সাবেক নৌ-বাহিনির ডাইভারকে পাঠাচ্ছে ও। তারা আগামীকাল এখানে এসে পৌঁছুবে।’ বলল স্যাম।
তিনজন একমত হলো শিপটা যখন পোর্টে ভিড়বে তখন ওখানে হাজির থাকবে ওরা। তবে লিও’র এখনও আর একটা ডাইভ দেয়া বাকি আছে। এই ডাইভটা শেষ করতে পারলে ও সার্টিফিকেট পাবে। কথা শেষ করে লিও পার্কিং লটের দিকে হাটা ধরল। ওর দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ল রেমি।
‘তোমার বন্ধু কি সবসময়-ই এরকম আজব টাইপ আচরণ করে?’ রেমি জিজ্ঞাস করল।
‘আমি ওকে যতদিন ধরে চিনি এরকমটাই দেখে আসছি। মজার বিষয় হলো ওর জীবনটা কিন্তু বোরিং নয়। যথেষ্ট ইন্টারেস্টিং। কিন্তু তারপরও সে এরকম মুখ হাঁড়ি করে থাকে কেন, কে জানে।
কপাল ভাল আমি ওরকম হুতুমমার্কা মানুষকে বিয়ে করিনি।’
‘তোমাকে বিয়ে করার পর কেউ মুখে হাসি না এনে থাকতে পারতো?
দাঁত বের করে হাসল রেমি। খুব কথা শিখেছে, না?
***
হনিয়ারা পোর্ট তেল আর গ্যাসের ট্যাঙ্কে বোঝাই। বাতাসে পেট্রোলিয়ামের দূর্গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। নাক কুঁচকিয়ে স্যামের দিকে ঝুঁকল রেমি।
‘খুব সুন্দর জায়গা, তাই না?
‘আশা করা যায় এখানকার কেউ ম্যাচ কিংবা লাইটার জ্বালাবে না। জ্বালালেই আমরা সোজা পরপারে পৌঁছে যাব।
৫ মিনিট পর লিও হাজির হলো।
ডাইভিং কেমন হলো তোমার?’ জিজ্ঞাস করল স্যাম। লিও’র চুল এখনও ভেজা।
‘জান নিয়ে এখানে আসতে পেরেছি তো? এবার বুঝে নাও কেমন হয়েছে।’
স্যামের স্যাটেলাইট ফোনে আওয়াজ হলো। ব্যাকপ্যাক থেকে বের করল স্যাম। অপরিচিত নাম্বার।
‘হ্যালো?’ বলল ও।
‘শুভ দুপুর! স্যাম ফারগো বলছেন?’ কলারের অস্ট্রেলিয়ান উচ্চারণ এতটাই প্রকট যে ইংরেজি বোঝাই কঠিন। তার উপর বক্তার ওখানে প্রচুর বাতাস আর মোটরের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
‘জি, বলছি।
‘আমি ক্যাপ্টেন ডেসমন্ড ফ্রান্সিস। সবাই আমাকে ডেস বলে ডাকে। আপনি যদি তৈরি থাকেন তাহলে দেখা করব আপনার সাথে।
“হ্যাঁ, আমরা হনিয়ারা পোর্টে আছি।’
চমৎকার। ১০ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাব আমরা। ছোট একটা নৌকা পাঠিয়ে দেব ওটাতে চড়ে বসবেন।
তা বসব। কিন্তু আপনার জাহাজ চিনব কীভাবে?
হাসল ডেস। আমাদের জাহাজকে চেনা খুবই সহজ। টকটকে লাল হাল আর হিংস্র দেখতে জাহাজটা।’
“ঠিক আছে। আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি।’
ক্যাপ্টেন ডেস ঠিকই বলেছেন। ডারউইন-এর যে চেহারা তাতে এই জাহাজকে চেনা খুব কঠিন কিছুই নয়। নিওন লাল রঙে রঞ্জিত জাহাজ। সামনের অংশে হাঙর মাছের মুখ আঁকা। মুখটা হাঁ করে রয়েছে। হলুদ রঙের দাঁতও আঁকা রয়েছে এতে। তবে দাঁতগুলো অতিমাত্রায় বড় জাহাজটা দেখে হাসল রেমি। স্যামকে কনুই দিয়ে গুতো দিল।
‘এটা কী জাহাজ ডেকে এনেছ?
‘দোষ দিতে হলে সেলমাকে দাও।
জাহাজের ডেক থেকে ক্রেন দিয়ে একটা ২০ ফুটি ছোট নৌকা নামিয়ে দেয়া হলো। নৌকাটা ফাইবারগ্লাসে তৈরি। পানি ঠেলে চটপট পোর্টে এসে ফিরল ওটা।
নৌকার পাইলটের বয়স ২০ এর একটু বেশি হবে। এলোমেলো চুল মাথায়। চুলগুলো বেশ বড়। একটা ধাতব মই দিয়ে উঁচু পোর্টের সাথে নৌকার সংযোগ স্থাপন করল সে। পোর্টে উঠে এলো। মুখে হাসি।
‘শুভ দুপুর। উঠবেন?’
‘হ্যাঁ। স্যাম জবাব দিল।
নৌকায় ওঠার পর নিজের পরিচয় দিল তরুণ।
‘আমার নাম কেন্ট। কেন্ট ওয়ারেন। আমি মূলত ডারউইন-এর ডাইভ মাস্টার। জাহাজে ওঠার পর সবার সাথে হাত মেলাব। আপাতত যাওয়া যাক। দ্রুতগতিতে পানি কেটে এগোতে শুরু করল ওরা।
ডারউইনের কাছে গিয়ে ওরা দেখল রিসার্চ শিপ হিসেবে এটা একদম প্রথম শ্রেণির জাহাজ। রুক্ষ সমুদ্রের সাথে লড়াই করে যাত্রা করার জন্য একে নির্মাণ করা হয়েছে। পানি থেকে বো অনেক উঁচুতে। পাইলট হাউজে অ্যান্টিনার ব্যবস্থা আছে। ব্রিজ থেকে লাল শার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি ওদেরক দিকে হাত নাড়ল।
জাহাজে ওঠার পর লাল শার্ট পরা লোকটির দিকে এগোল ওরা। ইনি ক্যাপ্টেন ডেস। ক্যাপ্টেন নিজের পরিচয় দেয়ার পর বাকি ক্রুদের সাথেও পরিচয় করিয়ে দিল। তার মেট এলটন সিমস ডেকের নিচের অংশ ঘুরিয়ে দেখাল সবাইকে।
‘এগুলো অতিথিদের কেবিন। সাইটে অনুসন্ধান চলাকালীন সময়ে আপনারা জাহাজে দিন কাটাবেন নিশ্চয়ই।’ বলল সিমস। এর ইংরেজি উচ্চারণেও অস্ট্রেলিয়ান টান প্রকট। বোঝা মুশকিল।
ব্রিজের দিকে এগোল ওরা। চওড়া কনসোলের সামনে ক্যাপ্টেন ডেস দাঁড়িয়ে রয়েছে। জিপিএস ও চার্টে চোখ রেখেছে সে। লিও ও ফারগো দম্পতিকে আসতে দেখে সিমসকে দায়িত্ব দিয়ে সরল ডেস।
‘আসতে কোনো সমস্যা হয়নি তো?’ রেমি জানতে চাইল।
মাঝে একটু সমস্যা হয়েছিল। কোরাল সমুদ্রের ওখানে ২০ থেকে ৩০ ফুটি জাহাজ অনায়াসে পার করা গেলেও এতবড় জাহাজ নিয়ে আসা একটু ঝক্কির ব্যাপারে। যা-ই হোক, অক্ষত অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছি এতেই শুকরিয়া।’ বলল ডেস।
‘আমরা তো সাইটে ডাইভ দিয়ে ধ্বংসাবশেষের ম্যাপ তৈরি করব। এই দ্বীপে পর্যাপ্ত গিয়ার নেই। আশা করি, আপনাদের জাহাজে যথেষ্ট পরিমাণ গিয়ার আছে?
ডেস মাথা নাড়ল। “আছে। কম্প্রেসর, রিব্রেদারর্স, ওয়েট স্যুট, ড্রাই স্যুট, একটা সাবমারসিবল, রোবটিক ক্যামেরা… সব।
‘বেশ। আগামীকাল আমাদের সাথে আরও কয়েকজন ডাইভার যোগ দেবে।’ বলল স্যাম। তাহলে আমরা নিজে দলবদ্ধভাবে আরও বেশি কাজ করার সুযোগ পাব।’
‘যত গুড় তত মিঠা। আচ্ছা, জাহাজটা আপনাদের কতদিন লাগবে?
বলা মুশকিল। কমপক্ষে ২ সপ্তাহ তো লাগবেই। কাজের গতির উপর নির্ভর করছে।’
‘তাহলে আমি আমার ক্রু আর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদেরকে বিষয়টা জানিয়ে দেই। যথেষ্ট রসদ আছে আমাদের কাছে। দ্বীপ থেকে কিছু ফল আর সবজি আনলেই হয়ে যাবে। তাছাড়া সমদে মাছের অভাব নেই। আপনাদের যতদিন প্রয়োজন হয় আমরা এখানে থাকতে পারব।’
ব্রিজের দুইপাশে থাকা বিভিন্ন সরঞ্জাম ও গিয়ার দেখাল ক্যাপ্টেন। দুই বছর আগে পুরো সেট জাহাজে স্থাপন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় জিনিস অথচ জাহাজে নেই, এরকম হওয়ার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।’ কথাগুলো বলার সময় বেশ গর্ব প্রকাশ পেল ক্যাপ্টেনের কণ্ঠে।
‘আসলেই দারুণ।’ রেমি সায় দিল।
সাইটে পৌঁছে বৃত্তাকারে ঘুরতে শুরু করল ডারউইন। কমপ্লেক্সের বাইরের কিনারায় অ্যাঙ্কর ফেলতে বলল ক্যাপ্টেন। কাছাকাছি ফেলতে হবে যাতে ডাইভ করতে সুবিধা হয় আবার একটু দূরত্বও রাখতে হবে যাতে অঙ্করের কারণে কোনো ক্ষতি না হয় নিচের ভবনগুলোর। চারজন ডাইভার অনুসন্ধানে নামার জন্য তৈরি হতে শুরু করল।
ডাইভাররা পানিতে নামার পর ব্রিজে থাকা মনিটরে চোখ রাখল সবাই। মনিটরে সবকিছু দেখা যাচ্ছে। ডাইভারদের মাথায় থাকা হেলমেটে ক্যামেরা বানো রয়েছে, রঙিন ছবি আসছে সেখান থেকে সরাসরি দেখার পাশাপাশি হার্ডডিস্কে জমা হচ্ছে ফুটেজগুলো। প্রয়োজনে পরবর্তীতে পর্যবেক্ষণ করা। যাবে। স্যাম ও রেমি যখন নেমেছিল তখনকার চেয়ে এখন পানি বেশ পরিষ্কার। হালকা আলোতে পুরো কমপ্লেক্সটাকে ভূতুড়ে লাগছে এবার।
‘ওই তো ওখানে। সবচেয়ে বড় হচ্ছে ওটা। আর ওটার চারপাশে বাকিগুলো ছড়িয়ে আছে।’ বলল লিও।
বুঝলাম। হয়তো মূল ভবনের সাথে আশেপাশেরগুলো মন্দির, সভাসদ আর চাকরদের বাসস্থান।’ রেমি বলল।
‘৪০ টা হবে? নাকি আরও বেশি?’ প্রশ্ন করল ডেস।
‘তা তো হবেই। এরআগে আমরা এতগুলো দেখতে পাইনি। পানি পরিষ্কার ছিল না। ১০০ জন থাকার ব্যবস্থা ছিল হয়তো। তবে সংখ্যাটা নির্ভর করছে প্রতি ভবনে কতজনের জায়গা ছিল তার উপর। স্যাম বলল।
‘অদ্ভুত ব্যাপার। যুদ্ধের সময়ও এটা আবিষ্কৃত হয়নি। বলল সিমস।
‘সবার মনোযোগ অন্যদিকে ছিল তখন। প্রযুক্তিও এত উন্নত ছিল না। পানির নিচে কিছু খুঁজে বের করাটা বিরাট চ্যালেঞ্জিং ছিল।’ বলল রেমি। মনিটরের দিকে তাকাল ও। গত ৭০ বছরে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি।’
কর্মপরিকল্পনা ঠিক করেছেন আপনারা?’ ক্যাপ্টেন জানতে চাইল।
সামনে এগিয়ে এলো লিও। আমি করেছি।’ সাইটের ম্যাপ বানানোর বিষয়ে বিস্তারিত জানাল সে। স্যাম ও রেমি কয়েকবার একে অপরের দিকে তাকাল। লিও যতই মুখ হাঁড়ি করে থাকুক কাজের বেলায় সে খুবই দক্ষ। নিজের কাজটা সে খুব ভাল বোঝে। লিও’র কথাবার্তা শুনে অস্ট্রেলিয়ান ক্যাপ্টেন সন্তুষ্ট, সেটা বলাই বাহুল্য।
হঠাৎ মনিটরে দুটো হাঙর দেখা গেল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ান ডাইভাররা সেদিকে কোনো ভ্রূক্ষেপ করল না।
‘দেখেছেন?’ মনিটরে আঙুল দিয়ে নির্দেশ করে দেখাল ডেস! হাঙররা সাধারণত ডাইভারদেরকে ঘাটায় না। একটু বুদবুদ কিংবা শব্দ করলে দশবারে নয়বারই হাঙররা পালিয়ে থাকে।
বাকি একবারে কী ঘটে? লিও জানতে চাইল।
‘তখন পাওয়ারহেডের সাহায্য নিতে হয়।’ বলল ক্যাপ্টেন। পানিতে ডাইভ দিতে নামলে টিমের একজনের কাছে ওটা থাকবেই। স্পেয়ারগানের মতো দেখতে জিনিসটা।
‘জেনে খুশি হলাম। বলল লিও।
‘কিন্তু ওগুলো ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না বললেই চলে।
কুমীরের ক্ষেত্রে কীরকম কাজ করবে?’ রেমি জানতে চাইল।
হাঙরের মতোই। পাওয়ারহেড কিন্তু গুলি করে না। ওটা টার্গেটকে দাহ্য গ্যাস দিয়ে বিস্ফোরিত করে। তাই ছোট্ট একটা রাউন্ড দিয়েও বিরাট প্রাণীকে কাবু করা যায়। বিষয়টা খুলে বলল ক্যাপ্টেন ডেস।
‘জিনিসটা সেদিন ব্যবহার করতে পারলে ভাল হতো।’ স্যাম আফসোস করল। ক্যাপ্টেনকে জানাল সেই ২০ ফুটি কুমীরের হামলার কথা।
তাই নাকি? ২০ ফুট? উত্তরে ওরকম পাওয়া যায় শুনেছি। কিন্তু এখানে? তো ভিকটিমের কী অবস্থা হয়েছিল?
‘এক পা হারিয়েছে।
‘আহা রে। ঠিক আছে, ডাইভারদেরকে এ-ব্যাপারে সর্তক করে দিচ্ছি। তবে অস্ট্রেলিয়ান পানিতে কাজ করার সুবাদে আমরা প্রায় সবকিছু দেখে ফেলেছি। দুনিয়ার অন্য যেকোন দেশের তুলনায় অস্ট্রেলিয়ার পানিতে মারাত্মক প্রাণী বেশি বাস করে। প্রাণীর কথা বাদ দিলাম। পাইন গাছের ফলও আপনার জীবন নিয়ে নিতে পারে। একেকটা পাইনের ওজন ১০ কেজি! ৩০ মিটার উঁচু থেকে যদি আপনার মাথায় এসে সেটা পড়ে তাহলে কী হতে পারে ভাবুন! হাসল ডেস। সামান্য গাছেই এই অবস্থা। তাহলে কী অবস্থা পানিতে?’
মাথা নাড়ল স্যাম। আমরা অস্ট্রেলিয়ায় কয়েকবার গিয়েছিলাম। দেশটা দারুণ। আমাদের ভাল লেগেছে। ঘড়ি দেখল ও। আচ্ছা, আমরা শহরে ফিরব কীভাবে?
‘আমাদের এখানে একটা হালকা নৌকা আছে। স্কিফ বলা হয় ওটাকে। সিমস আপনাদেরকে ওতে করে নামিয়ে দিয়ে আসবে।
লিও’র দিকে তাকাল স্যাম। তুমি এখানেই থাকবে?
‘থাকি, সেটাই ভাল। এখনই তো থাকার সময়।
শেষবারের মতো মনিটরের দিকে তাকাল স্যাম। ডুবে যাওয়া ভূতুড়ে শহরের অবয়ব দেখা যাচ্ছে ওতে।
তা তো অবশ্যই। ঠিক জায়গামতো রয়েছ তুমি। একদম স্পটলাইটে।
.
১৮.
পরদিন সকালে আমেরিকান ডাইভারদেরকে রিসিভ করতে এয়ারপোর্টে গেল স্যাম ও রেমি। ব্রিসবেন থেকে হনিয়ারা পর্যন্ত চার্টারড প্লেনের ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে ৩০ ঘণ্টা সময় লেগেছে ডাইভারদের। ফারগো দম্পতি ভাবল ডাইভাররা অনেক ক্লান্ত থাকবে। কিন্তু ওদের ধারণা ভুল। ডাইভারদের সবাই বেশ চটপটে। কেউ-ই ক্লান্ত নয়। দলের সবচেয়ে লম্বা ব্যক্তি এগিয়ে এলো ফারগো দম্পতির দিকে। কোনো আড়ষ্টতা ছাড়াই হাত বাড়িয়ে দিল।
‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারগো? আপনাদের সাথে দেখা হয়ে ভাল লাগল। আমি গ্রেগ টরেস আর ও হচ্ছে রব আলডারম্যান। পাশের ব্যক্তিকে দেখিয়ে বলল সে। রব মাথা নাড়ল।
‘ধন্যবাদ। আমি স্যাম আর ও রেমি। গ্রেগ-এর সাথে হাত মেলাতে মেলাতে বলল স্যাম।
‘আর ওরা হচ্ছে স্টিভ গ্রোনিগ ও টম বেচলি। বাকি দু’জনের সাথে গ্রেগ পরিচয় করিয়ে দিল। এরা দু’জন বয়সে বেশ তরুণ। তবে এদের ৪ জনের কারও বয়সই ৩০-এর বেশি হবে না। এরা সবাই নেভি-এর সাবেক সদস্য। দেহের গড়ন দেখেই স্যাম বুঝতে পারল হাঙর পানিতে যেরকমটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে এরাও পানিতে ঠিক সেরকমটাই বোধ করবে।
কাস্টম ও ইমিগ্রেশন স্টাফরা ওদেরকে ডাইভ গিয়ার ও ড্যাফেল ব্যাগগুলো পরীক্ষা করার পর পাসপোর্টে সিল মারল। ডাইভারদেরকে দেখে মাথা নাড়ল এক স্টাফ।
‘সাবধানে থাকবেন। শহরের বাইরে না যাওয়াই ভাল, হ্যাঁ? এইড কর্মীদের সাথে কী হয়েছে সেটা জানেন বোধহয়। শহরের বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।’ বলল স্টাফ।
কী হয়েছে তাদের?’ রেমি জানতে চাইল। গতকাল ওরা জানতে পেরেছে। দু’জন অস্ট্রেলিয়ান নিখোঁজ। কিন্তু বিস্তারিত কিছু এখনও পর্যন্ত জানে না।
ইন্টারনেটে সব আছে। বিদ্রোহীরা ধরেছে ওদের। স্টাফ আবার মাথা নাড়ল। খুব খারাপ ঘটনা। বিদ্রোহীরা ওদেরকে খুন করার হুমকি দিয়েছে, খুন করেই ফেলবে।’
‘এইড কর্মীদেরকে খুন করবে? তারা তো এখানে দ্বীপবাসীদের সাহায্য করার জন্য এসেছে।
‘গর্দভ বিদ্রোহীরা সেটা বোঝে না। দ্বীপের যেকোন খারাপ ঘটনার কারণে বিদেশিদেরকে দায়ী ভাবে ওরা। ওদের ভাষ্য, বিদেশিরা দ্বীপ ছেড়ে চলে যাক। যদি না যায় তাহলে কপালে দুঃখ আছে।’
‘তাই তারা নিরস্ত্র সমাজকর্মীদেরকে অপহরণ করছে? দ্বীপের অনুন্নত বিভিন্ন দিক নিয়ে কাজ করছিল এইড কর্মীরা। আর সেই কর্মীদেরকে ওরা খুন করবে? অবিশ্বাস নিয়ে বলল রেমি।
‘ওরা তো সেরকমটাই জানিয়েছে। পাগল সব। গর্দভও।
স্যাম ডাইভারদের দিকে তাকাল। আপনারা একদম ঝড়ের মধ্যে এসে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে। এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনাগুলো এতদিন ছিল না।’
‘সমস্যা নেই। আমরা আমাদের খেয়াল রাখতে পারব।’ একদম সহজ গলায় বলল গ্রেগ। স্যাম তার কথায় বিশ্বাস রাখল।
আপনারা সবসময় শিপেই থাকবেন। আশা করা যায়, স্থানীয় কোনো সমস্যা আমদের অনুসন্ধান কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না।
গ্রেগ কিছু বলল না। স্রেফ কাঁধ ঝাঁকাল।
স্যাম ও রেমি অন্য একটা এজেন্সি থেকে টয়োটা ভাড়া করে এনেছে। সবাই তাতে মালপত্র লোড করে চড়ে বসল। পথে কয়েকটা চেকপোস্ট পার হলো ওরা। গাড়ি সার্চ করার পর পুলিশরাও ওদেরকে সতর্ক করে দিল যাতে শহরের বাইরে না যায়।
রেমির দিকে তাকাল স্যাম। সবাই খুব বিচলিত, তাই না?
‘তা তো হবেই। কপাল ভাল। সেদিন এইড কর্মীদের মতো হাল হয়নি আমাদের।’
পোর্টে পৌঁছে স্কিফের জন্য অপেক্ষা করল ওরা। ব্যাগ থেকে রেমি একটা রেডিও বের করে শিপের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করল।
‘শুভ সকাল, আপনাদের দু’জনকে’ বলল ক্যাপ্টেন ডেস। স্কিফে চড়ার জন্য তৈরি?
তৈরি। তবে আমরা এখানে ৬ জন আছি। আর আমাদের সাথে যে পরিমাণ গিয়ার আছে সেটা আপনার স্কিফকে ডুবিয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট।
‘জায়গা হয়ে যাবে।’
মূল রিসার্চ শিপে ওঠার পর নতুন অতিথিদেরকে গেস্ট রুম দেখাল সিমস। স্যাম ও রেমি যোগ দিল ক্যাপ্টেন ডেস ও লিও’র সাথে! ব্রিজে রয়েছে ওরা।
একটা ছবি পর্যবেক্ষণ করছে লিও।
‘আমাদের অনুপস্থিতিতে কিছু কাজ করেছ বলে আশা করছি।’ স্যাম বলল।
মাথা নাড়ল ডেস। দু’বার ডাইভ দেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা একটা সুন্দর ম্যাপ বানিয়ে ফেলেছি। লিও ছবিগুলো দেখছেন। যাতে আমরা গোছানোভাবে প্রত্যেকটা বিল্ডিঙে কাজ করতে পারি।’
ছবিতে লিও টোকা দিল। যতটুকু দেখলাম, তাতে বুঝেছি, এটাই সবচেয়ে বড় ধ্বংসাবশেষ। এখান থেকেই আমরা শুরু করব। এর আকার অনায়াসে অন্যগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ। বিষয়টা গুরুত্বর বিষয়ের দিকে ইঙ্গিত করছে।’
একটু কাছে এলো রেমি। ঠিক।’
স্যাম মাথা নাড়ল। আমরা এখন যেটার ছবি দেখছি, এর অবস্থান একদম পূর্ব অংশে।
‘এটার আকৃতি অন্যগুলোর তুলনায় ভাল। পরেরবার ডাইভ দিয়ে আমরা খুব ভাল করে পর্যবেক্ষণ করব।’ বলল লিও।
ডাইভ মাস্টার কেন্ট ঢুকল ভেতরে। শুভ সকাল, সবাইকে। এইমাত্র নতুন অতিথিদের সাথে দেখা করলাম। খুব সিরিয়াস নোক ওনারা।’
পানির নিচ থেকে তোলা ছবিগুলোকে একটু দূরে ঠেলে দিয়ে লিও উঠে দাঁড়াল। আমি আজ রাতের ভেতরে এই বড় ইমারতের উপরের দিকটা যতদূর সম্ভব পরিষ্কার করে নিতে চাই। পানিতে বেশি লোক নামলে কাজটা দ্রুত করা যাবে।’
‘একদম ঠিক বলেছেন। আমি পানির নিচে কতক্ষণ থাকতে হবে সেটার একটা হিসেব করে দেখছি। তারপর একটা রুটিন বানানো যাবে।’ বলল কেন্ট ওয়ারেন।
‘সারফেস থেকে সাপ্লাই দেয়ার মতো কয়টা এয়ার রিগ আছে আমাদের?
মাত্র দুটো। আমরা সাধারণত গভীর পানিতে থাকি তাই ওগুলো খুব একটা ব্যবহার করা হয় না। কিন্তু এবার দরকার পড়বে।
‘আচ্ছা। তবে আমরা কিন্তু ইমারতগুলোর কোনো ক্ষতি করতে চাই না। পরিষ্কারের কাজটা খুব সাবধানে করতে হবে। আর সবকিছু রেকর্ড করতে হবে। যাতে পরে দেখা যায়। লিও মনে করিয়ে দিল।
অবশ্যই করা হবে।
আধাঘণ্টা পর, ডেকের কম্প্রেশর আওয়াজ করছে। ওয়ারেনের ক্রুরা নেমেছে পানিতে। কম্প্রেশরের সাহায্যে তাদেরকে বাতাস সরবরাহ করা হচ্ছে। আমেরিকা থেকে দু’জন ডাইভারও যোগ দিয়েছে তাদের সাথে। অবশ্য স্কুবা গিয়ার নিয়ে নেমেছে তারা। ধীরে ধীরে ধ্বংবাশেষের দিকে এগোচ্ছে সবাই। লিও, স্যাম, রেমি ও ক্যাপ্টেন ডেস মনিটরে ওদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করছে।
সব ডাইভারদের সাথে লাইট সংযুক্ত করা থাকায় ধ্বংসাবশেষ দেখতে তেমন কোনো অসুবিধে হচ্ছে না। তার উপর হাই রেজুলেশন ক্যামেরায় ধারণ করা হচ্ছে সব। দৃশ্যগুলো একদম ঝকঝকে।
সামনে এগিয়ে থাকা এক ডাইভার ভাল্ব ঘুরিয়ে হাই প্রেশার বাতাস প্রয়োগ করতে শুরু করল ইমারতের গায়ে। বিভিন্ন সামুদ্রিক জঞ্জাল পরিষ্কার হতে শুরু করল।
লিও অনেক গবেষণা করে ইমারত পরিষ্কার করার এই বুদ্ধি বের করেছে। এতে ভবনগুলোর কোনো ক্ষতি হবে না আমার কাজের কাজও হবে। ওর সাথে ক্যাপ্টেন ডেস আরও একটু বুদ্ধি যোগ করে কম্প্রেশর জুড়ে দিয়েছে। কম্প্রেশরের সাহায্যে হাই প্রেশারের বাতাস সরবরাহ করা হচ্ছে শিপ থেকে।
পানির নিচে বর্তমান দৃষ্টিসীমা মাত্র ১ ফুট। ইমারতের গা থেকে জঞ্জাল পানিতে মিশে দৃষ্টিসীমা কমিয়ে দিয়েছে। সব ডাইভার একত্রে কাজ করে কয়েক মিনিটের মধ্যে বিশাল লাইমস্টোন ব্লক পরিষ্কার করল।
আরও দু’ঘণ্টা পর যথেষ্ট পরিমাণ দেয়াল পরিষ্কার করার পর যেটা বের হলো সেটা কম করে হলেও ১০০ ফুট দীর্ঘ।
‘এ তো বিশাল। বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে, এরকম ভবন এই দ্বীপের বাসিন্দারা বানিয়েছিল। ফিসফিস করে বলল লিও। দ্বীপের বর্তমান অবস্থা দেখে মনেই হয় না এরকম কিছু বানানোর সামর্থ্য ছিল এদের।
মনিটর থেকে চোখ সরিয়ে রেমি ডেসের দিকে তাকাল। আপনি কি ডাইভারদের সাথে যোগাযোগ করতে পারবেন?
‘হ্যাঁ, পারব।’
‘তাহলে তাদেরকে বলুন, তারা যতটুকু পরিষ্কার করেছে সেটার সবচেয়ে দূরবর্তী ডান অংশে যেন ক্যামেরা জুম করে।
মাইক্রোফোনে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিল ডেস। ক্যামেরা ডান দিকের ব্লকে জুম করার পর হাসল স্যাম ও রেমি। লিও মাথা নাড়ল। “চিহ্ন আঁকা মনে হচ্ছে। আর আমি যদি ভুল না করি তাহলে ওটা সমুদ্র দেবতার খুঁটি। রেমি বলল। আর ওদিকে দেখুন। একসারি লোকের ছবি আঁকা। বিভিন্ন বাক্স নিয়ে এগোচ্ছে তারা।
রেমির দিকে লিও বাঁকা চোখে তাকাল। ডেস তার কণ্ঠ পরিষ্কার করে বলল, ‘তাতে কী বুঝায়?
হাসল রেমি।
যদিও আমি চিহ্নগুলো পড়তে জানি না। তবে মনে হচ্ছে, এখানে একদল যোদ্ধা মন্দিরে কিছু একটা নিয়ে যাচ্ছে।
‘কিছু একটা?’ লিও বলল।
রেমি ফিসফিস করে বলল, ‘গুপ্তধন। দেবতাদের জন্য।
.
১৯.
সন্ধ্যার শেষ নাগাদ সবচেয়ে বড় ইমারতের উপরের দিকের বেশিরভাগ অংশ পরিষ্কার করা হয়ে গেল। প্ল্যান হয়েছে, রাত দশটা পর্যন্ত পানির নিচে ফ্লাডলাইট জ্বালিয়ে কাজ করা হবে। ক্লান্তি এড়াতে বদলি ডাইভার পাঠানো হবে শিপ থেকে। স্কিফে চড়ে পোর্টের দিকে রওনা হলো স্যাম ও রেমি। ওদের এখানে কোনো কাজ নেই, তাই চলে যাচ্ছে।
পোর্টে পৌঁছুনোর পরও ডারউইনের দিকে তাকিয়ে আছে স্যাম।
কী ভাবছ?’ রেমি জানতে চাইল।
‘চোখের সামনে থেকে পুরো সভ্যতা যদি কোনো চিহ্ন না রেখেই বিলীন। হয়ে যায় তাহলে কেমন লাগবে বলো তো?”
‘আমি নিশ্চিত। বড় কোনো ভূমিকম্পের ফলেই এই হাল হয়েছে। কেউ তখন খুব বেশি কিছু অনুভব করার কিংবা ভাবার সময় পায়নি।
হয়তো তোমার কথাই ঠিক। কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি কেন বেঁচে যাওয়া লোকজন এই জায়গাটাকে অভিশপ্ত বলে ঘোষণা করেছে। অভিশাপ ছাড়া আর কী বলে তুমি এত বড় দুর্যোগের ব্যাখ্যা দেবে বলো?
হুম, তা ঠিক। আচ্ছা, ওখানকার চিহ্নগুলো দেখে কী বুঝলে?
সবমিলিয়ে গুপ্তধনের ব্যাপারে নির্দেশ করছে চিহ্নগুলো। আসল বিষয়টা আমরা খুব শীঘ্রি জানতে পারব।’
দ্বিধাগ্রস্ত দৃষ্টিতে স্যামের দিকে তাকাল রেমি। অনেক বড় এরিয়া পর্যবেক্ষণ করতে হবে। কয়েক বছর লেগে যাবে পুরোটা পরিষ্কার করে বিস্তারিত অনুসন্ধান করতে। কোনো গুপ্তধন উদ্ধার করা হয়তো এখন আর সম্ভব নয়।
‘মিসেস ফারগো, সলোমন উপভোগ করছি ঠিকই কিন্তু এখানে কয়েক বছর থাকার কোনো খায়েশ নেই আমার। এমনকী আপনার তো সুন্দরী সাথে থাকলেও নয়, বুঝেছেন?
হুম। সবকিছু তো লিও মোটামুটি বুঝে নিয়েছে। আমরা তাহলে পুরো বিষয়টাকে এখন ওর হাতে ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে পারি?
পোর্ট থেকে রওনা হয়েছে ১০ মিনিটও হয়নি পুলিশের রোডব্লক উদয় হলো। গাড়ি থামাল স্যাম। ৬ জন পুলিশ অফিস দাঁড়িয়ে রয়েছে। ৪ জন ওদের দুজনের কাছে এসে পাসপোর্ট দেখতে চাইল। বাকি দুজন তল্লাশি করতে শুরু করল গাড়ির ভেতরে।
‘ব্যাকপ্যাকে কী আছে? স্যামের ব্যাগ দেখিয়ে প্রশ্ন করল সিনিয়র অফিসার।
‘তেমন কিছু না। একটা ফোন, ক্যান্টিন, বাড়তি শার্ট… এইতো।
‘দেখি।’
‘বাইরে ড্রাইভে বেরোনো ঠিক হয়নি আপনাদের। সার্চ শেষ করে বলল অফিসার। সাবধানে থাকবেন। এমনকী হনিয়ারাও নিরাপদ নয়। যেখানে সেখানে যা খুশি ঘটে যেতে পারে।
‘সকালে তো সবকিছু বেশ ছিল।
অফিসার চোখ সরু করল। হুম, কিন্তু এইড কর্মীদের খুনিদেরকে এখনও ধরা সম্ভব হয়নি। জনগণ অস্বস্তিতে রয়েছে। আপনাদের জায়গায় আমি হলে সোজা হোটেলে চলে যেতাম। আর বেরোতাম না।’
‘তাহলে কর্মীরা মারা গেছে? বিস্মিত হয়ে রেমি জানতে চাইল।
সায় দিয়ে মাথা নাড়ল অফিসার। সন্ধ্যায় প্রচারিত হয়েছে খবরটা। কর্মীরা সবাই নিরস্ত্র ছিল। এখানকার দুস্থ লোকজনদের সেবা করত।’
‘এখন দুস্থ পরিবারগুলোর কী হবে?
অফিসার ত্যাগ করে ভ্রু কুঁচকাল! এইড কর্মীদের মধ্যে কেউ যদি এখনও এখানে থেকে সেবা করতে চায় সেক্ষেত্রে আমরা হয়তো নিরাপত্তা দেয়ার চেষ্টা করব। তবে মনে হয় না, কেউ এখানে এরপরও থাকতে চাইবে। দুস্থদের কী হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। যা-ই হোক, আপনারা দেখে-শুনে গাড়ি চালাবেন। আমাদের মতো এরকম অফিসিয়াল গাড়ি না দেখলে সেই রোডব্লকে থামবেন না। কোথাও থামার আগে নিশ্চিত হয়ে নেবেন।
রাস্তায় আরেকটা রোডব্লক পেরিয়ে হোটেলে এসে পৌঁছুল ফারগো দম্পতি। তবে পথে খেয়াল করে দেখেছে দ্বীপের বাসিন্দারা ওদের গাড়ির দিকে অসন্তুষ্ট হয়ে তাকিয়ে ছিল। যদিও কেউ কিছু বলেনি তারপরও বোঝা যাচ্ছে বিদেশিদেরকে এখানকার লোকজন আর পছন্দ করছে না। পার্কিং লটে থাকা সিকিউরিটি গার্ডের মুখ পেঁচার মতো দেখাচ্ছে। ওরা দু’জন আশংকা করছিল হোটেলের সামনে হয়তো দ্বীপবাসীদের জটলা দেখতে পাবে। কিন্তু না, নেই। হয়তো হোটেলটা থানার একদম কাছে, তাই কেউ জটলা করার সাহস করেনি।
লবিতে ঢুকতেই ফ্রন্ট ডেস্ক ক্লার্ক ওদেরকে ইশারা করল। ওরা এগিয়ে গেলে মাপা হাসি দিল মেয়েটা। জানাল, ওদের বস দেখা করতে চেয়েছে। অপেক্ষা করতে হবে।
একটু পর বস হাজির হলো। তার পরনে পরিপাটি সুট।
‘শুভ সন্ধ্যা, মিস্টার অ্যান্ড মিসেস ফারগো। আমি জ্যাকব ট্রেঞ্চ। এখানকার ম্যানেজার। আশা করি, আপনারা আমাদের হোটেলটা উপভোগ করছেন।
রেমি মাথা নাড়ল। হ্যাঁ, সবকিছু সন্তোষজনক।’
‘ভাল, ভাল। নার্ভাসভঙ্গিতে নিজের জুতোর দিকে তাকাল জ্যাকব। ‘আপনাদের সাথে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাই দেখা করলাম। সেইসাথে এখন যেটা বলব তার জন্য অগ্রীম ক্ষমা চাইছি। আমরা আমাদের অতিথিদের পরামর্শ দিচ্ছি, তারা যেন হোটেলের বাইরে না যায়। শহরের অবস্থা খুব একটা ভাল না… তাই বাইরে যাওয়া নিরাপদ নয়।
তাই নাকি? বলল স্যাম। তা এখানে কী কোনো বাড়তি নিরাপত্তা আছে?
‘এক্সট্রা সিকিউরিটি আসছে। আমাকে ভুল বুঝবেন না। বিপদের আশা করছি না আমরা। জাস্ট সতর্কতা অবলম্বন করছি। বর্তমান অস্থিতিশীল পরিবেশে সুযোগ নিয়ে যে-কেউ অনেক কিছু করে ফেলতে পারে…’ জ্যাকবের ইংরেজিতে অস্ট্রেলিয়ান টান স্পষ্ট বুঝতে কষ্ট হলেও তার দুশ্চিন্তাটা ঠিকই বোধগম্য হলো।
‘আপনি কি ভাবেন, সত্যি বিপদ হতে পারে? জানতে চাইল রেমি।
‘ভাগ্য পরীক্ষা না করতে যাওয়াটাই ভাল। আমার রেস্টুরেন্টে আসুন। এক বোতল শ্যাম্পেন খাওয়া আপনাদেরকে।
স্যামের দিকে তাকাল রেমি। উনি তো আমাকে ফ্রি শ্যাম্পেনের লোভ দেখাচ্ছেন, স্যাম।
স্যাম হাসল। মন্দ কী। এখন বলো, শ্যাম্পেনে দাওয়াতে যাবে কিনা?”
মাথা নাড়ল ট্রেঞ্চ। কয়টায় ডিনার খেতে আসছেন আমাকে বলুন। আমি সবকিছু রেডি করে রাখব।’
‘ধরুন… সাতটার দিকে।
“ঠিক আছে। আপনাদের সাথে কি কোনো গেস্ট থাকবে?
না।
কথা শেষ করে রুমের দিকে এগোল ফারগো দম্পতি। রেমির কানে ফিসফিস করল স্যাম। লবিতে একলোক পত্রিকা পড়ছিল, খেয়াল করেছ? খাকি প্যান্ট পরা। স্থানীয়।’
না। সর্তকবাণী শোনায় ব্যস্ত ছিলাম। অন্য কোনোদিকে খেয়াল করতে পারিনি।’
‘লোকটাকে দেখে মনে হলো, আমাদের ব্যাপারে বেশ আগ্রহী।
হু।
স্যাম দাঁত বের করে হাসল। অবশ্য তুমি যখন হেঁটে যাও তখন অনেক পুরুষই তোমার দিকে তাকিয়ে থাকে। এটা নতুন কিছু নয়।’
নিজের কোঁচকানো কারগো প্যান্ট আর টি-শার্টের দিকে তাকাল রেমি। ‘এই পোশাকে আমাকে খুব সুন্দরী লাগছে, তাই না?
‘আমার কাছে তো হেব্বি লাগছে।’
‘অ্যাই শোনো, মিষ্টি কথায় আমাকে তুমি বোকা বানাতে পারবে না, বুঝেছ, মিস্টার স্যাম ফারগো?
আমি অবশ্য ‘ফ্রি শ্যাম্পেন খাইয়ে বোকা বানানোর কথা ভাবছিলাম।
***
সন্ধ্যা ৭ টার একটু আগে রুম থেকে লবিতে নামল ওরা। কিন্তু সেই লোকটাকে কোথাও দেখতে পেল না। জ্যাকবের রেস্টুরেন্টের দিকে এগোল স্যাম ও রেমি।
রেস্টুরেন্টের স্টাফ বুকিং লিস্টে ওদের দুজনের নাম খুঁজে পেয়ে অমায়িক হাসি দিল। ওদের জন্য নির্ধারিত টেবিলের দিকে নিয়ে গেল সে। পুরো রেস্টুরেন্ট ভর্তি লোকজন। যেতে যেতে স্যামের হাত আঁকড়ে ধরল রেমি। অরউন ম্যানচেস্টার একটা টেবিলে বসে আছে। তার টেবিলে এক তাক কাগজপত্র আর একটা বিয়ার রাখা। রেমিকে দেখতে পেয়ে হাত নাড়ল অরউন।
‘দেখো দেখি কাণ্ড! আমাকে ফলো করছেন নাকি আপনারা? হাসতে হাসতে বলল অরউন ম্যানচেস্টার।
‘পৃথিবীটা অনেক ছোট, তাই না?’ রেমি বলল।
হয়তো অতটা ছোটও নয়। আজ রাতে অল্প কয়েকটা রেস্টুরেন্ট খোলা আছে। তা আপনাদের যদি কোনো বিশেষ পরিকল্পনা না থাকে তাহলে আমার সাথে বসুন। আশা করি, আমি আপনাদের রোমান্টিক ক্যান্ডেললাইট ডিনারে উটকো সমস্যার সৃষ্টি করছি না।
হেসে মাথা নাড়ল রেমি। না, না, তেমন কিছুই নয়। স্যাম তুমি কী বলে? ‘বসি।’ রেমির জন্য একটা চেয়ার বের করল ও।
‘আজকে রাতে আপনারা শহরের বাইরে না গেলেই ভাল হয়। ওরা দু’জন বসার পর বলল ম্যানচেস্টার। বাইরের পরিবেশ ভাল।’
‘হ্যাঁ, আমাদের ম্যানেজেরাও তা-ই বলল। দু’জন বিদেশিকে খুন হয়েছে বলে এতটা বাজে অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কারণ কী?’ জানতে চাইল রেমি।
‘দেখুন, গোয়াডালক্যানেলের অধিকাংশ লোকজন গরীব। তবে জনসংখ্যার কিছু অংশ সচ্ছল। এখানে মাঝেমধ্যে এরকম পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে একটা সংগঠন আছে যারা ঘোর বিদেশি বিদ্বেষী। বিদ্রোহীরা নিজেদের কাজ হাসিল করার জন্য এবার বিদেশিদেরকে টার্গেট করেছে। আর গরীব লোকজন সুযোগ পেলে নিজেদের খারাপ অবস্থার জন্য অন্যকে দোষারপ করে। এটাই গরীবদের স্বভাব। ম্যানচেস্টার মাথা নেড়ে জানাল।
‘এই বিষয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বেশ পরিষ্কার বলে মনে হচ্ছে। বলল স্যাম।
বিয়ারের বোতলের দিকে তাকাতেই অরউনের মনে পড়ল অর্ডার দিতে হবে। ওয়েটারকে ডেকে আরও দুটো বিয়ার অর্ডার দিল সে। রেমি নিজের জন্য একটা সোডা অর্ডার করল।
অর্ডারকৃত ড্রিঙ্কসের সাথে শ্যাম্পন দেখতে পেয়ে অবাক হলো ওরা।
‘আপনাদের স্বাভাবিক কাজকর্মে বাগড়া দেয়ার কথা বলে আমি নিজেও স্বস্তি পাচ্ছি না। কিন্তু এখানকার পরিস্থিতি স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত কিছু করার নেই। রেমির দিকে তাকাল অরউন, দৃষ্টিটা এবার আগের চেয়ে নরম। ‘আমি চাই না এত সুন্দর একটা উঁটি কোনো বিপদের মুখে পড়ক।’
আমরাও সেরকমটাই শুনে আসছি। কিন্তু এখন তো অনেক দেরি হয়ে গেছে। অনেক দূর থেকে বন্ধুকে সাহায্য করতে এসেছি আমরা। প্রজেক্টটা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের জন্যও। বলল স্যাম।
কিন্তু ম্যানচেস্টার স্যামের কথায় পাত্তাই দিল না। এখান থেকে সিডনি যেতে মাত্র কয়েক ঘণ্টা লাগে। ওখানকার রেস্টুরেন্টে নাকি এই মৌসুমে খুব সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়।
‘আসলে ঘটনাস্থলে বিপদের আঁচ টের পেয়ে লেজ গুটিয়ে পালানোটা আমাদের স্টাইল নয়। রেমি বলল।
‘অবশ্যই সেরকম নন আপনারা। কিন্তু আমি স্রেফ একজন বন্ধু হিসেবে পরামর্শ দিচ্ছি। আসলে পরিস্থিতি খারাপ হলে মানুষের অন্ধকার দিকটা বেরিয়ে আসে। কোনোভাবে দ্বীপের অবস্থা অবনতি হলে যারা ঘাপটি মেরে আছে তারা বেরিয়ে আসবে। খারাপ পরিস্থিতে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেবে তখন। তাই বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে এখানে না থেকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে এসব দেখাই মঙ্গল।
‘আপনার যুক্তি আমরা মেনে নিলাম। নিজের গ্লাস উঁচু করল রেমি। ভাল সময়ের আশায়…’
‘খাসা বলেছেন!’ ম্যানচেস্টার হাসল। কিন্তু বরবারের মতো এবারও তার হাসি চোখ ছুঁলো না।
.
২০.
সকালের নাস্তা খেতে যাওয়ার আগে রেডিওতে খবর শুনে নিল স্যাম ও রেমি। নাস্তা সেরে সৈকতের দিকে যাবে ওরা। এখানকার পর্যটকদেরকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন জায়গায় রোডব্লক ও চেকপোস্ট থাকার কারণে তাদের গন্তব্যে পৌঁছুতে দেরি হবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে থাকা এক ডজন পুলিশ অফিসারকে আবার কাজে যোগ দিতে বাধ্য করেছেন। জানিয়েছেন, তিনি সন্ত্রাসীদের সাথে কোনো পরিস্থিতিতেই সমঝোতা করবেন না।
হোটেলের লবিতে বিদেশি লোকজনে গিজগিজ করছে। দ্বীপ ছেড়ে চলে যাচ্ছে সবাই। ভিড় ঠেলে রেস্টুরেন্টের দিকে গেল ওরা।
‘এত জলদি সবাই চলে যাচ্ছে, রেমি খাবারের অর্ডার দিয়ে তারপর বলল।
‘আমি পর্যটকদেরকে দোষ দেব না। আমরা এখানে বিশেষ কারণে থাকছি। তাছাড়া শুধু হাওয়া খাওয়ার জন্য কে এই গৃহযুদ্ধের মধ্যে থাকতে চাইবে?’
‘আমাদের বিগত ছুটির দিনগুলো ভাল ছিল।’
“আরে, গোলাগুলি আর ট্রাকের ধাক্কা খাওয়া বাদ দিলে এই ছুটিটাও কিন্তু ভাল।
‘ও, তাই? কুমীরের কথা ইতিমধ্যে ভুলে গেছ?”
‘আসলে কুমীর তো আমাদেরকে আক্রমণ করেনি। তাই ওটাকে ধরিনি।’
পার্কিং লটে সবসময় একজন গার্ড থাকে। কিন্তু আজকে তিনজন দেখা যাচ্ছে। সবার হাতে লাঠি। হম্বিতম্বি ভাব ধরার চেষ্টা করছে গার্ডরা। চারপাশ মোটামুটি শান্ত। রাস্তায় অল্পকিছু গাড়ি চলছে।
‘শহরে যাওয়ার সময় হাসপাতালে নামব।’ বলল রেমি। ডা. ভ্যানার সাথে কথা বলতে হবে। গতকাল রাতে আমি তার প্রেজেন্টশন পড়েছি। বেশ ভাল। আমাদের দানের লিস্টে তাকেও যোগ করা যেতে পারে।’
‘যা ভাল বোঝো করো। ডা. ভ্যানা তাহলে রাতারাতি খবরের শিরোনাম হয়ে যাবে।’
‘তিনি যা করছেন আমি সেটাকে সমর্থন করি। নিঃস্বার্থভাবে কাজ করছেন। অথচ চাইলে অন্য কোথাও চলে গিয়ে ডাক্তারি করে এরচেয়ে অনেক বেশি উপার্জন করতে পারতেন।
‘ঠিক বলেছ। আমি যতটুকু বুঝেছি, তিনি পরিবর্তন আনতে চান। অর্থ উপার্জন তার কাছে মুখ্য নয়।’
‘আর সেজন্যই আমাদের উচিত তার ক্লিনিককে সহযোগিতা করা।
‘আমার কোনো আপত্তি নেই।
নাস্তা শেষ করে হাসপাতালের দিকে রওনা হলো ফারগো দম্পতি। রাস্তার পাশে একদল দ্বীপবাসী দাঁড়িয়ে রয়েছে। কয়েকজনের হাতে ম্যাচেটি। তাদের পাশ দিয়ে চলা গাড়িগুলোর দিকে হিংস্রদৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। স্যাম বুঝতে পারল রেমি ঘাবড়ে যাচ্ছে তাই গাড়ির গতি বাড়িয়ে দিল। রেমি, সরাসরি সৈকতের ওদিকে গেলেই ভাল হতো না? ডাক্তারের সাথে তো আমরা পরেও দেখা করতে পারতাম!’ বলল স্যাম।
‘এসেই পড়েছি। সন্ধ্যায় দেখা করার চেয়ে সকালে দিনের আলোতে দেখা করাটা আমার কাছে বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়।’
হাসপাতালের পার্কিং লটে অল্পকিছু গাড়ি রয়েছে। তারমধ্যে একটা এসইউভি ডার ভ্যানার। ওদেরকে ঢুকতে দেখে নার্ভাসভঙ্গিতে এক গার্ড মাথা নাড়ল।
পাতালের ভেতরে ঢুকল ওরা। রিসিপশন কাউন্টারের পেছনে ল্যাব কোট পরিহিত একজন লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে। বেশ লম্বা দেখতে, স্থানীয়।
‘আপনাদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারি?’ সে জানতে চাইল।
‘আমরা ডাক্তার ভ্যানার সাথে দেখা করতে চাই,’ বলল রেমি।
‘আমি ডা. বেরি। কী সমস্যা?
না, তেমন কিছু নয়, স্যাম জানাল। ওনার সাথে অন্য ব্যাপারে কথা বলতে এসেছি। সামাজিক বিষয়ে আরকী।
‘ও আচ্ছা। উনি অফিসে আছেন। এক সেকেও।
ডা, বেরি ডেকে পাঠাল ডা. ভ্যানাকে। একটু পর ভ্যানা হাজির, হাতে একটা ফোল্ডার। স্যাম ও রেমিকে দেখে হাসল ভ্যানা।
‘আপনাদেরকে দেখে সারপ্রাইজড় হয়েছি। কী ব্যাপার? সবঠিক আছে তো?’ ভ্যানা জানতে চাইল।
‘হ্যাঁ, সবঠিক আছে। আমরা দেখতে এলাম, বেনজি কেমন আছে। আর আপনার প্রজেক্টের ব্যাপারেও একটু কথা বলার ছিল।
এইমাত্র তাকে দেখে এলাম। ঘুমুচ্ছে। গতরাতে খুব ভুগেছে, বেচারা। জ্বর এসেছিল। অ্যান্টিবায়োটিক দিচ্ছি যেন ইনফেকশন না হয়।’
‘আচ্ছা। আপনার প্রেজেন্টেশন দেখেছি। দারুণ হয়েছে। আমরা দুজনে মিলে ঠিক করেছি আপনার কাজে আমরা সাহায্য করব। আপনার প্রজেক্টের যাবতীয় অর্থ সহযোগিতা দেব আমরা।
ভ্যানার চোখ বড় বড় হয়ে গেল। সত্যি? দারুণ খবর! ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাদের…’।
হাসল স্যাম। প্রজেক্টটা ভাল। এই দ্বীপের জন্য কাজে আসবে বলে আশা করছি। এখানারকার যা অবস্থা…’
ভ্যানা’র মুখ কালো হয়ে গেল। হ্যাঁ। বর্তমান ঘটনাগুলো আমার দাতাদের জন্য নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গোলমালের বিন্দুমাত্র গন্ধ মেলে ওষুধের বড় কোম্পানীগুলো পিঠ টান দেবে। এখানে আসলে আমার কিছু করার নেই। আমি শুধু ভাল”-এর আশা করতে পারি।’
‘আপনার কি সত্যিই মনে হয় তারা সরে যাবে?’ রেমি জানতে চাইল।
‘নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। যদি দাঙ্গা বাধে, দ্বীপের লোকজন যদি নিজেরাই দিজেদের ঘর-বাড়ি পোড়ায় তাহলে কেউই এই দ্বীপের জন্য অর্থ সাহায্য দিতে চাইবে না।’
‘গুটি কয়েক লোকের বাজে কাজের জন্য পুরো দ্বীপের বাসিন্দাদেরকে বঞ্চিত করার বিষয়টা তারা বুঝবে না?
“ আসলে আমরা হলাম ছোট আলুর মতো। কোনো দাম নেই আমাদের। অধিকাংশ কোম্পানী আমাদেরকে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখে না। এরআগেও দেখেছি, ওরা কিছু দিলে সেটা খুব অল্প পরিমাণে দেয় এবং অনেক দেরিতে দেয়। ভ্যানা মাথা নাড়ল। তার উপর এখন দ্বীপের যে পরিবেশ-পরিস্থিতি।
হুম। যাক, আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।’ বলল রেমি।
‘বিগত কয়েক মাসে এরচেয়ে ভাল খবর আর পাইনি।’ একটু ইতস্তত করল ভ্যানা। আপনাদের প্রজেক্টের কী খবর?
‘চলছে। স্যাম ছোট্ট করে জবাব দিল।
‘ডুবে যাওয়া ভবনের কথা বলেছিলেন। ওগুলোর কোনো পরিচয় পেলেন?
‘এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। স্যাম আবার সংক্ষিপ্ত জবাব দিল। সাবধানে খেলছে।
ভ্যানা ইতস্তত করছে এখনও। আচ্ছা, আপনাদের কাজে আমার কোনো সাহায্য প্রয়োজন হলে জানাবেন।
***
হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে স্যামের কানে ফিসফিস করল রেমি। ওনার সাথে খুব মেপে কথা বললে দেখলাম। হু?
‘অতীত অভিজ্ঞতা থেকে আমরা শিখেছি এসব বিষয় যত কম লোক জানে তত ভাল। আর সবচেয়ে বড় কথা, প্রজেক্টটা লিও’র। আমরা সেটা নিয়ে বিশদ আলোচনা করার অধিকার রাখি না।
‘জানি। কিন্তু আসল কথা না বলে তোমাকে নাচতে দেখে মজা পেয়েছি।
‘আমি সবসময় নিজেকে খুব ভাল নৃত্যশিল্পী বলে মনে করি।’
রাস্তায় উচ্ছৃঙ্খল দ্বীপবাসীরা জড়ো হয়েছে। কিছু একটা হতে পারে। স্যামের সাথে মশকরা করা বন্ধ করল রেমি। স্যাম, তাড়াতাড়ি এখান থেকে চলো। অবস্থা ভাল নয়।
ড্রাইভিং সিটে বসল স্যাম। “সিটবেল্ট ভাল করে বাঁধো। সামনে যা-ই আসুক আমি কিন্তু গাড়ি থামাব না।