১৪. কর্ণেলিয়াস ফাজ

১৪. কর্ণেলিয়াস ফাজ

হ্যারি, রন এবং হারমিওন সব সময়ই জানত যে বিরাট এবং দানবীয় জীবের প্রতি হ্যাগ্রিডের একটি দুঃখজনক পছন্দ রয়েছে। হোগার্টস-এ তাদের প্রথম বর্ষের সময় সে তার ছোট্ট কাঠের বাড়িটাতে ড্রাগন পালনের চেষ্ট করেছে। এবং তার সেই দৈত্যাকার তিন–মাথাওয়ালা কুকুর, যার নাম ও রেখেছিল ফ্লাফি, ওটার কথা ওরা অনেকদিন ভুলবে না। এবং বাল্যকালে হ্যাগ্রিড যদি শোনে কোথাও একটি দানব লুকনো রয়েছে তবে ওটাকে এক নজর দেখার জন্যে হ্যাগ্রিড সব কিছুই করতে পারে। সে হয়তো ভেবেছিল এতো দিন ধরে দানটাকে বন্দী করে রাখা হয়েছে, এটা একটা লজ্জার ব্যাপার, এবং ওটার একটা সুযোগ পাওয়া উচিৎ খোলা যায়গায় হাত পা–গুলো ছড়ানোর জন্য; হ্যারি কল্পনা করতে পারে তের বছরের হ্যাগ্রিড ওটার গলায় কলার পরাচ্ছে। এবং সে এটাও নিশ্চিত যে হ্যাগ্রিডের কখনও কাউকে হত্যা করার উদ্দেশ্য ছিল না।

এখন হ্যারির মাঝে মাঝে আফসোস হয় রিডল-এর ডায়রি নিয়ে কাজ করার উপায় আবিস্কার করার জন্যে। বার বার রন এবং হারমিওন ওকে বলতে বলে কি সে দেখেছে, এক সময় সে মানসিক ভাবেই অসুস্থ হয়ে গেল এক ঘটনা বার বার বলতে বলতে এবং এরপর একই কথা বার বার আলোচনা করতে করতে।

রিডল হয়তো ভুল লোকটাকে ধরেছিল, বলল হারমিওন। হয়তো অন্য কোন দানব মানুষের উপর হামলা চালাচ্ছিল…

ঐ স্থানে কয়টা দানব রাখা যেতে পারে, তুমি কি মনে করো? রনের নির্বোধ প্রশ্ন। আমরা সবাই জানি হ্যাগ্রিডকে বহিস্কার করা হয়েছিল, বলল হ্যারি দুঃখের সঙ্গে। এবং হ্যাগ্রিডকে বের করে দেয়ার পর নিশ্চয়ই হামলা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। না হলে রিডল পদক পেত না।

রন অন্য এক ধারায় প্রশ্ন করল।

রিডলকে মনে হয় পার্সির মতোই–কিন্তু ওকে হ্যাগ্রিডের ওপর নজর রাখতে কে বলেছিল?

কিন্তু, দানবটা একজনকে হত্যা করেছিল রন, বলল হারমিওন।

এবং ওরা যদি হোগার্টর্স বন্ধ করে দেয় তবে, রিড়কে কোন এক মাগল এতিমখানায় যেতে হতো, বলল হ্যারি। ওখানে থাকার চেষ্টা করার জন্যে আমি ওকে দোষ দিতে পারি না…

 রন ওর ঠোঁট কামড়াল। তারপর দ্বিধাগ্রস্ত রন প্রশ্ন করল, হ্যাগ্রিডের সঙ্গে তোমার নকটার্ন অ্যালিতে দেখা হয়েছিল, তাই না, হ্যারি?

সে একটা মাংস–খেকো শ্লাগের প্রতিরোধক কিনছিল, চটজলদি জবাব দিল হ্যারি।

ওরা তিনজন নিরব হয়ে গেল। দীর্ঘক্ষণ চুপ করে থাকার পর হারমিওন একটু দ্বিধাভরে সবচেয়ে জটিল প্রশ্নটা করল: তোমরা কি মনে করো আমাদের গিয়ে হ্যাগ্রিডকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা উচিৎ?

 ওটা একটা আনন্দময় সাক্ষাৎ হবে, বলল রন। হালো, হ্যাগ্রিড, আমাদের বলো, সম্প্রতি তুমি কি কোন লোমওয়ালা এবং উন্মত্ত কিছু এখানে ছেড়ে রেখেছে?

সবশেষে তারা ঠিক করল যে আরেকটা হামলা না হওয়া পর্যন্ত হ্যাগ্রিডকে তারা কিছুই বলবে না। এবং দিনের পর দিন চলে যাচ্ছে তবুও অশরিরী কন্ঠের কোন ফিসফিস শোনা যায়নি, ওরা আশা করল এরপর আর হ্যাগ্রিডকে জিজ্ঞাসা করবার দরকার হবে না, কেন তাকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল। প্রায় চার মাস হয়ে গেল জাস্টিন এবং প্রায়–মাথাহীন নিককে ভয়ে অসাড় করা হয়েছে, এবং প্রায় সকলেই ভাবতে শুরু করল, হামলাকারি যেই হোক না কেন, চিরদিনের জন্য থেমে গেছে। পিভস তার ওহ,পটার, তুমি পঁচা, গান গেয়ে গেয়ে হাঁপিয়ে উঠেছে, একদিন হার্বলজি ক্লাসে আর্নি ম্যাকমিলান অত্যন্ত বিনয়ের সাথে এক বালতি লাফানো ব্যাঙের ছাতা এগিয়ে দিতে অনুরোধ করল এবং মার্চ মাসে তিন নম্বর গ্রীন হাউজে কয়েকটি মেনড্রেক কর্কশ স্বরে পার্টি দিল। এতে প্রফেসর স্প্রাউট খুবই খুশি হলেন।

যে মুহূর্তে ওরা একজন আর একজনের পটে যেতে শুরু করবে, আমরা জানব সেই মুহূর্ত থেকে ওরা পুরোপুরি সাবালক হয়ে গেছে, তিনি হ্যারিকে বললেন। তাহলে আমরা হাসপাতালের ওই অসুস্থদের সারিয়ে তুলতে পারব।

***

ইস্টার ছুটির সময় দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের নতুন একটা কিছু ভাবতে বলা হলো। তৃতীয় বর্ষের বিষয় বেছে নেয়ার সময় তাঁদের এসে গেছে, বিষয়টা অন্তত হারমিওন সিরিয়াসলি গ্রহণ করল।

এটা আমাদের পুরো ভবিষ্যতকেই প্রভাবিত করতে পারে, বলল সে হ্যারি আর রনকে, ওরা নতুন বিষয়ের তালিকা কেটে, মাঝে মাঝে টিক চিহ্ন দিচ্ছে।

আমি পোশনস ছেড়ে দিতে চাই, বলল হ্যারি।

আমরা তা পারি না, বলল রন বিষণ্ণভাবে। আমাদেরকে সবগুলো পুরনো বিষয়ই রাখতে হবে, নাহলে তো আমি ডিফেন্স এগেন ডার্ক আর্টস ছেড়ে দিতাম।

কিন্তু ওটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বলল হারমিওন, মনে আঘাত পেয়েছে সে।

লকহার্ট আমাদের যেভাবে পড়ান, সেভাবে নয়, বলল রন। ওঁর কাছ থেকে আমি কিছুই শিখিনি শুধু পিক্সিদের মুক্ত করে দিতে নেই–ছাড়া।

নেভিল লংবটমকে তার পরিবারের সব জাদুকর আর ডাইনীর পক্ষ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে, সবাই তাকে উপদেশ দিয়েছে বিষয় বাছাই করার ব্যাপারে।

বিভ্রান্ত এবং উদ্বিগ্ন হয়ে ও বিষয়ের তালিকা নিয়ে বসল, ওর জিহ্বা বেরিয়ে রয়েছে ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে। জিজ্ঞেস করছে একে ওকে এরিথম্যান্সি আর প্রাচীন টিউটনিক বর্ণমালার ভাষা রূপ এর মধ্যে কোনটা বেশি কঠিন। ডিন থমাস, হ্যারির মতোই যে মাগলদের মধ্যে বড় হয়েছে, বিষয় বাছাইয়ের কাজটা শেষ করেছে চোখ বন্ধ করে তালিকায় জাদুদণ্ড দিয়ে। যে বিষয়ের ওপর ওটা পড়েছে, সে বিষয়ই ও বেছে নিয়েছে। হারমিওন কারো কোনো উপদেশ নেয়নি সব গুলো বিষয়ই নিয়ে নিয়েছে।

আঙ্কল ভারনন এবং আন্ট পেতুনিয়া কি ভাবতেন যদি এদেরকে জাদুবিদ্যায় তার ক্যারিয়ার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হতো, এটা ভেবে হ্যারি নিজের মনেই কঠোরভাবে হাসল। এমন নয় যে কেনো উপদেশ পায়নিঃ পার্সি উইসলি তার অভিজ্ঞতা বন্টন করতে খুবই আগ্রহী ছিল।

নির্ভর করে তুমি কি করতে চাও হ্যারি, বলল সে। ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভাবনা কখনোই খুব আগাম হয় না, সেই কারণে আমি সুপারিশ করবো ডিভাইনেশন অর্থাৎ ভবিষ্যৎ কথন নাও। লোকে বলে মাগল স্টাডি খুবই দূর্বল বিকল্প। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি বিশ্বাস করি অ–জাদুকর সম্প্রদায় সম্পর্কে জাদুকরদের গভীর জ্ঞান থাকা উচিৎ, বিশেষ করে যদি ওরা অ–জদুকরদের মধ্যে কাজ করতে চায়–আমার বাবাকে দেখে তাকে সবসময়ই মাগলদের ব্যাপার নিয়ে মাথা ঘামাতে হচ্ছে। আমার ভাই চার্লি বাইরে বাইরে থাকা টাইপের, সে জন্যে সে ম্যাজিক্যাল জীবদের যন্ত্রাদির বিষয়ে পড়াশোনা করছে। তোমার নিজস্ব ক্ষমতা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নাও, হ্যারি।

***

গ্রিফিল্ডরের পরবর্তী কিডিচ খেলা হাফলপাফদের সঙ্গে। প্রতি রাতে ডিনারের শেষে এ্যাকটিস করার জন্য চাপাচাপি করছে উড। হ্যারির এখন কিডিচ আর হোম ওয়ার্ক ছাড়া অন্য কিছুর জন্য সময়ই নেই। যাই হোক, ট্রেনিং সেশনটা আগের চেয়ে ভাল হচ্ছে, অন্তত শুকনো হচ্ছে। শনিবারের ম্যাচের আগের সন্ধ্যায় সে গেল হোস্টেলে ওর ঝাড়ুটা রাখতে, অনুভব করছে ও গ্রিফিল্ডারের কিডিচ কাপ জেতার সম্ভাবনা এখন যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি।

কিন্তু ওর উৎফুল্লভাব বেশিক্ষণ থাকল না। হোস্টেলের সিঁড়ির মাথায় সে নেভিল লংটমের দেখা পেল, ওকে খুব ক্ষিপ্ত দেখাচ্ছে।

হ্যারি–জানি না কে এটা করেছে। আমি শুধু এমন

হ্যারির দিকে ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে দরজাটা ঠেলে খুলল ও

হ্যারির ট্রাঙ্কের ভেতরের জিনিস সব এদিক ওদিক সছড়ানো ছিটানো। ওর আলখিল্লাটা ছেঁড়া মেঝের ওপর পড়ে র টেনে নামানো হয়েছে এবং ওর ড্রয়ারটা টেনে বার করা হয়েছে বেড সাইড ক্যাবিনেট থেকে, ম্যাট্রেস-এর ওপর ভেতরের জিনিসগুলো ছড়ানো।

হ্যারি বিছানার কাছে গেল, মুখ বিস্ময়ে হা, ঐভেল্স উইথ ট্রলস-এর কয়েকটা ছেঁড়া পাতা মাড়িয়ে যেতে হলো তাকে।

সে এবং নেভিল চাদরগুলো বিছানায় তুলতে তুলতে, রন, ডিন আর সিমাস ঘরে ঢুকল। জোরে কসম খেল ডিন।

কি হয়েছে, হ্যারি?

কোন ধারণা নেই, বলল হ্যারি। কিন্তু রন হ্যারির পোশাকটা পরীক্ষা করছিল। সবগুলো পকেট বাইরের দিকে সের করা।

কেউ একজন কিছু একটা খুঁজছিল, বলল রন। কোন কিছু কি পাওয়া যাচ্ছে না?

হ্যারি একটা একটা করে তুলে ট্রাঙ্কে ছুঁড়ে মারছে। লকহার্টের শেষ বইটা ট্রাঙ্কে ছুঁড়ে দেয়ার পর সে বুঝতে পারল কি খোয়া গেছে।

রিডল-এর ডায়রিটা নেই, নিম্ন কণ্ঠে বলল সে রনকে।

কি?

হ্যারি দরজার দিকে মাথা ঝাঁকালো, রন ওকে অনুসরণ করল। ওরা দ্রুত গ্রিফিল্ডর কমন রুমে চলে এলো, ওটা অর্ধেক খালি, ওখানে ওরা হারমিওন, ও একা বসে প্রাচীন রূনকে মেড ইজি পড়ছিল।

বিস্ময়ে হতবুদ্ধি হয়ে গেল হারমিওন খবরটা শুনে।

কিন্তু, শুধুমাত্র একজন গ্রিফিল্ডরই চুরিটা করতে পারে–আর কেউ তো আমাদের পাসওয়ার্ড জানে না…

ঠিক তাই, বলল হ্যারি।

***

পরদিন ঘুম ভাল চমৎকার সূর্যালোক, আলো এবং তাজা বাতাসে।

কিডিচ খেলার একেবারে আদর্শ পরিবেশ, গ্রিফিল্ডর টেবিলে উৎসাহের সঙ্গে উড বলল টিমের সকলের প্লেটে ডিম তুলে দিতে দিতে। হ্যারি কি হলো বাক অপ, তোমার একটা ভাল নাস্তা দরকার।

হ্যারি তাকিয়ে আছে গ্রিফিল্ডর টেবিলের ভীড়ের দিকে, ভাবছে রিলের ডায়রির নতুন মালিক একেবারে তার চোখের সামনে রয়েছে কি না। হারমিওন ওকে বলছে চুরি সম্পর্কে রিপোর্ট করার জন্যে, কিন্তু কথাটা হ্যারির পছন্দ হয়নি। তাহলে টিচারকে ডায়রি সম্বন্ধে সব কথাই বলে দিতে হবে এবং বলতে হবে কতজন জানত পঞ্চাশ বছর আগে কেন হ্যাগ্রিডকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়েছিল? সে সেই ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত হতে চায় না, যে আবার বিষয়টা প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।

রন এবং হারমিওনের সঙ্গে গ্রেট হল ছেড়ে কিডিচ-এর জিনিসগুলি আনার জন্যে যাওয়ার পথে আরেকটি খুবই গুরুতর উদ্বেগ যোগ হলো হ্যারির তালিকায়। যেই মাত্র সিঁড়ির মাৰ্বল ধাপে পা দিয়েছে অমনি শুনতে পেলো আবার: এইবার হত্যা করো…আমাকে ছিঁড়তে দাও…হেঁড়ো…

সে জোরে চিৎকার করে উঠল এবং রন আর হারমিওন দুজনেই ভয়ে তার কাছ থেকে লাফিয়ে দূরে সরে গেলো।

ওই কণ্ঠস্বরটা! বলল হ্যারি, কাঁধের ওপর দিয়ে তাকিয়ে। আমি এইমাত্র আবার ওটা শুনলাম–তোমরা শোনোনি?

রন মাথা নাড়ল, ওর চোখ ছানাবড়া। হারমিওন অবশ্য, ওর নিজের কপালে চাপড় দিল।

হ্যারি–আমার মনে হয় এইমাত্র আমি কিছু বুঝতে পেরেছি! আমাকে লাইব্রেরীতে যেতে হবে।

এবং দৌড়ে উঠে গেলো সিঁড়ি দিয়ে।

ও কি বুঝল? বলল হ্যারি অন্যমনস্কভাবে, তখন ও চারদিক দেখছে, বলার চেষ্টা করছে কোত্থেকে কণ্ঠস্বরটা আসছে।

সে আমার চেয়ে বেশি দায়িত্ব নায়, বলল রন মাথা ঝাঁকিয়ে। কিন্তু ওকে লাইব্রেরীতে যেতে হবে কেন?

কারণ ওটাইতো হারমিওন করে, বলল রন কাধ আঁকিয়ে। যখনই কোন সন্দেহ, যাও লাইব্রেরীতে।

হ্যারি দাঁড়িয়ে আছে, অস্থির সংকল্প, কণ্ঠস্বরটা আবার শোনার চেষ্টা করছে, কিন্তু এখন পেছনে গ্রেট হল থেকে লোকজন বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। কথা বলছে জোরে জোরে, সামনের দরজা দিয়ে বেরিয়ে কিডিচ পিচের দিকে যাচ্ছে।

তুমি বরং যাও, বলল রন। প্রায় এগারোটা বাজে ভুল–ম্যাচটা।

গ্রিফিল্ডর টাওয়ারে দৌড়ে উঠল হ্যারি, ওর নিশ্বাস দুই হাজারটা নিল এবং খেলার মাঠের ভিড়ের সঙ্গে যোগ দিল, কিন্তু ওর মন পড়ে আছে দূর্গ–প্রাসাদে অশরিরী কণ্ঠস্বরের সঙ্গে, এবং যখন সে ড্রেসিং রুমে রক্তলাল জার্সিটা পড়ছে তখন তার একমাত্র সান্তনা হচ্ছে সকলেই এখন মাঠে খেলা দেখবে বলে।

প্রবল উত্তেজনা আর হাততালির মধ্যে দুই টীম মাঠে প্রবেশ করল। ওয়ার্ম আপের জন্য অলিভার উজ গোল পোস্টগুলোর চারদিকে ওড়ার জন্যে গেলো। মাদাম হু বলগুলো ছাড়লেন। ক্যানারী হলুদ জার্সি পরা হাফপাফ-এর প্লেয়াররা একত্রে গোল হয়ে কৌশল নিয়ে শেষ মুহূর্তের আলোচনা করছে।

হ্যারি ওর ঝড়র ওপর উঠছিল, তখনই প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে দেখা গেল আসছেন বিরাট একটা রক্তলাল মেগাফোন হাতে, কিছুটা দৌড়ে, কিছুটা দ্রুত হেঁটে।

হ্যারির হৃৎপিন্ডটা পাথরের মতো ভারি বোধ হলো।

এই ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে, মেগাফোনে বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল, দর্শক ভর্তি স্টেডিয়ামকে উদ্দেশ্য করে। চারদিক থেকে চিৎকার আর বুউউ ধ্বনি শোনা গেল। অলিভার উডকে মনে হলো বিধ্বস্ত, নামল এবং ও না খুলেই প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের দিকে দৌড়ে গেলো।

কিন্তু প্রফেসর? চিৎকার করল ও, আমাদের খেলতে হবে…কাপ… গ্রিফিল্ডর…

ওকে উপেক্ষা করলেন প্রফেসর, মেগাফোনে বলতে লাগলেন, সব ছাত্রকে তাদের হাউজ কমন রুমে যেতে হবে, যেখানে তাদের আরো তথ্য জানাবেন হেডস অফ হাউজ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, প্লিজ!

তারপর মেগাফোন নামিয়ে তিনি ম্যারিকে ডাকলেন।

পটার, আমার মনে হয় তুমি বরং আমার সাথে এসো…

অবাক হয়ে ভাবছে হ্যারি এবারও কিভাবে তাকেই সন্দেহ করছেন তিনি, হ্যারি দেখল বিক্ষুব্ধ ভীড় থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করছে রন; ওরা রওয়ানা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে রনও দৌড়ে এলো কাছে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল আপত্তি করলেন না, হ্যারি অবাক হলো।

হ্যাঁ, সেই ভাল, তুমিও আমাদের সঙ্গেই এসো, উইসলি।

ওদের চারপাশ দিয়ে ভীড় করে যারা ফিরে যাচ্ছে খেলা বাতিল করায় অসন্তোষ প্রকাশ করছে। রন দের উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছে। হ্যারি এবং রন প্রফেসর ম্যাকগোনাগলকে অনুসরণ করে স্কুলে ফিরল মার্বেল পাথরের সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে, কিন্তু এবার তাদেরকে কারো অফিসে নিয়ে যাওয়া হলো না।

ওরা যাচ্ছে হাসপাতালের দিকে। কিছুটা আঘাত পেতে পারে তোমরা, আশ্চর্য নম্রভাবে বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। আরেকটি হামলা হয়েছে…আরেকটি ডাবল হামলা।

হ্যারির ভেতরটা ভয়াবহ ভাবে লাফিয়ে উঠল ভয়ানকভাবে। প্রফেসর ম্যাকগোনাগল দরজাটা খুললেন, হ্যারি আর রন ভেতরে গেল।

মাদাম পমফ্রে ঝুঁকে আছেন পঞ্চম বর্ষের একজন ছাত্রীর উপর, মেয়েটির চুল কোঁকড়ানো। মেয়েটিকে চিনতে পারল হ্যারি, র‍্যাভেনক্লর ভুল করে এই মেয়েটিকেই স্লিথারিনের কমন রুমের কথা জিজ্ঞাসা করেছিল। এবং ওর পাশের বিছানায়

হারমিওন! আর্তনাদ করে উঠল রন।

হারমিওন শুয়ে আছে একেবারে স্থির, ওর চোখ খোলা এবং কাঁচের মতো স্বচ্ছ।

ওদেরকে লাইব্রেরীর কাছে পাওয়া গিয়েছে, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল। আমার মনে হয় না তোমাদের কেউ এটা সম্পর্কে বলতে পারবে? এটা শুদের পাশে মেঝেতে পাওয়া গিয়েছে…

তার হাতে একটা ছোট্ট গোল আয়না।

হ্যারি আর রন মাথা নাড়ল, দুজনেই তাকিয়ে আছে হারমিওনের দিকে।

আমি গ্রিফিল্ডর টাওয়ার পর্যন্ত তোমাদের সঙ্গে যাবো, বললেন প্রফেসর ম্যাকগোনাগল ভারী কণ্ঠে। যাই হোক আমাকে ছাত্রদের প্রতি কিছু বলতেই হবে।

***

সব ছাত্রকে তাদের হাউজ কমন রুমে সন্ধ্যা ছয়টার মধ্যে ফিরতে হবে। ওই সময়ের পর কেউই হোস্টেল থেকে বাইরে যাবে না। ক্লাসে যাওয়ার সময় তোমাদের সঙ্গে একজন করে শিক্ষক যাবেন। কোন ছাত্ৰই শিক্ষকের সাহচর্য ছাড়া বাথরুম পর্যন্ত ব্যবহার করবে না। পরবর্তী সকল কিডি প্রশিক্ষণ এবং ম্যাচ স্থগিত করা হয়েছে। আর কোন সান্ধ্য কর্মকাণ্ড হবে না।

কমন রুম ভর্তি গ্রিফিল্ডররা প্রফেসর ম্যাকগোনাগলের বক্তব্য শুনল নিরবে। যে পার্চমেন্ট থেকে তিনি পড়ছিলেন সেটা গোল করে গুটিয়ে নিলেন, ধরা গলায় বললেন, আমার হয়তো বলার অপেক্ষা রাখে না যে খুব কম সময়ই আমি এমন বেদনাহত হয়েছি। মনে হচ্ছে এসব হামলার পেছনের অপরাধীকে ধরা না সম্ভব হলে স্কুল বন্ধ করে দেয়া হবে। যারাই এ সম্পর্কে কিছু জানেন আমি তাদেরকে এগিয়ে এসে আমাদের কাছে বলার জন্যে আবেদন জানাচ্ছি। 

ছবির গর্ত দিয়ে আনাড়ির মতো বেরিয়ে গেলেন তিনি। এবং গ্রিফিল্ডাররা সঙ্গে সঙ্গে কথা বলতে শুরু করল।

দুজন গ্রিফিল্ডর হামলার শিকার, একজন গ্রিফিল্ডর ভূতকে না ধরেও বলা যায়, একজন র‍্যাভেন এবং একজন হাফলপাফ, আঙুল গুনে বলল জমজ উইসলিদের বন্ধু লী জর্ডান। কোন শিক্ষক কি খেয়াল করেননি যে স্লিথারিনা সবাই নিরাপদে রয়েছে? এটা কি স্পষ্ট নয় যে এই সব হামলা স্লিথারিনদের দিক থেকেই হচ্ছে? স্লিথারিনের বংশধর, স্লিথারিনের দানব–ওরা সব স্লিথারিকে বের করে দেয় না কেন? গর্জন করে উঠল সে।

পার্সি উইসলি লী জর্ডানের ঠিক পেছনের চেয়ারেই বসে ছিল, কিন্তু এই একবারের জন্য তার মতামত শোনার আগ্রহ দেখা গেল না। ওকে বিবর্ণ এবং হতবাক লাগছিল।

পার্সি সাংঘাতিক আঘাত পেয়েছে, জর্জ বলল হ্যারিকে আস্তে করে। ওই রাভেন মেয়েটা পেনেলোপ ক্লিয়ারওয়াটার–প্রিফেক্ট। আমার মনে হয় না ও ভেবেছে দানবটা একজন প্রিফেক্টকে আক্রমণ করতে সাহস পাবে না।

কিন্তু পুরোপুরি শুনছে না ওর কথা। ওর চোখ থেকে হারমিওনের ছবিটা কিছুতেই সরছে না, হাপাতালের বিছানায় শুয়ে রয়েছে যেন পাথর খোদাই করে বানানো হয়েছে। এবং যদি তাড়াতাড়ি অপরাধীকে ধরা না যায়, তাহলে তার ভাগ্যে সারাজীবনের জন্য ডার্সলিদের সাথে কাটানোই রয়েছে ভাগ্যে। টম রিডল হ্যাগ্রিডকে ধরিয়ে দিয়েছে কারণ ওকে মাগল এতিমখানায় থাকতে হতো যদি স্কুল বন্ধ হতো। হ্যারি এখন বুঝতে পারছে ওর ঠিক কেমন লেগেছিল।

আমরা এখন কি করবো? বলল রন হ্যারির কানে কানে। তুমি কি মনে করো ওর হ্যাগ্রিডকে সন্দেহ করছে?

আমাদেরকে ওর সঙ্গে কথা বলতে হবে, বলল হ্যারি, ও মন ঠিক করে ফেলেছে। আমি বিশ্বাস করতে পারছি না এবারও সেই, কিন্তু শেষবার ও যদি দানবটাকে ছেড়ে দিয়ে থাকে তবে ও জানবে কি ভাবে চেম্বার অফ সিক্রেটস এর ভেতরে যেতে হয়, এবং সেটাই হবে শুরু।

কিন্তু প্রফেসর ম্যাকগোনাগল বলেছেন আমাদেরকে টাওয়ারেই থাকতে হবে, যদি না আমরা ক্লাসে যাই

আমার মনে হয়, বলল হ্যারি, আরো শান্তভাবে, আবার ড্যাড-এর পুরনো আলখাল্লাটা বের করবার সময় এসেছে।

***

হ্যারি তার বাবার কাছ থেকে একটাই মাত্র জিনিস উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছে, আর সেটা হচ্ছে একটা লম্বা, রেশমী অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লা। স্কুল থেকে চুপিসারে বেরিয়ে কেউ যেন জানতে না পারে, হ্যাগ্রিডের সঙ্গে দেখা। করবার ওটাই একমাত্র উপায়। নির্ধারিত সময়ই ওরা শুতে গেল। নেভিল, ডিন এবং সিমাস চেম্বার অফ সিক্রেটস সম্পর্কে আলোচনা শেষ করে ঘুমিয়ে না পড়া পর্যন্ত ওরা অপেক্ষা করল। তারপর উঠল, কাপড় পরল এবং গায়ের ওপর আলখাল্লাটা চড়িয়ে নিল।

অন্ধকার জনশূন্য করিডোর দিয়ে যাওয়াটা উপভোগ্য হয়নি। হ্যারি আগেও রাতে করিডোর দিয়ে অনেকবার ঘুরে বেড়িয়েছে কিন্তু কখনই সূর্যাস্তের পর এত ভিড় দেখেনি। শিক্ষক, প্রিফেক্টস এবং ভূত করিডোর ধরে সবাই টহল দিচ্ছে জোড়ায় জোড়ায়, যে কোন অস্বাভাবিক তৎপরতায়ই ঘুরে দেখছে। ওদের অদশ্য হওয়ার আলখাল্লা ওদের শব্দগুলো ঢেকে রাখতে পারেনি, বিশেষ করে একটা উদ্বেগের মুহূর্ত ছিল যখন রন তার পায়ের আঙুলে ব্যথা পেল, ঠিক ওই যায়গায় যেখানে স্নেইপ দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছিলেন। ইশ্বরকে ধন্যবাদ যে যে মুহূর্তে রন কসম খেল ঠিক সেই মুহূর্তেই স্নেইপও হাঁচি দিল। ওক কাঠের সদর দরজা পর্যন্ত পৌঁছে ওরা আস্তে করে ওটা খুলল।

পরিস্কার তারা ভরা রাত। হ্যাগ্রিডের বাড়ির আলো জুলা জানালা লক্ষ্য করে ওরা দ্রুত হাঁটছে। এবং একেবারে সদর দরজার ঠিক সামনে গিয়ে তরে আলখাল্লাটা খুলল।

দরজায় টোকা দেয়ার ঠিক মুহূর্ত পরই হ্যাগ্রিড দরজা খুলে দিল। একেবারে মুখোমুখি ওদের দিকে একটা ক্ৰসবো তাক করে রয়েছে সে, ফাং, হ্যাগ্রিডের বোরহাউন্ড, ওদের দেখে তারস্বরে চিৎকার জুড়ে দিল।

ওহ, বলল সে, অস্ত্রটা নামিয়ে এবং ওদের দিকে সোজা দৃষ্টিতে তাকিয়ে। তোমরা দুজনে এখানে কি করছ?

ওটা কিসের জন্য? ক্ৰসবো–টা দেখিয়ে প্রশ্ন করল হ্যারি ভেতরে যেতে যেতে।

কিছু না…কিছু না, বিড় বিড় করল হ্যাগ্রিড। আমি আশা করছিলাম…কিছু এসে যায় না…বসো…চা বানাচ্ছি…।

মনে হচ্ছে জানেই না কি করছে ও। প্রায় আগুনটা নিভিয়ে ফেলেছিল, কেটলি থেকে পানি ফেলে দিয়েছিল প্রায় এবং তার বিশাল হাতের ধাক্কায় টিপটটা ভেঙ্গে ফেলল।

তুমি ঠিক আছে তো হ্যাগ্রিড? বলল হ্যারি। তুমি কি হারমিওনের কথা শুনেছ?

ওহ, আমি শুনেছি, ঠিকই, বলল হ্যাগ্রিড, ওর স্বর একটু ভাঙ্গা।

সন্ত্রস্ত সে, বারবার জানালার দিকে তাকাচ্ছে। ওদের দুজনকে বিরাট দুই মগে ফুটন্ত পানি ঢেলে দিল ও (চা–ব্যাগ দিতে ভুলে গেছে), এবং একটা প্লেটে ওদের জন্য দ্রুট কেক দিচ্ছিল সেই সময় দরজায় জোরে জোরে করাঘাত হলো।

হ্রাগ্রিডের হাত থেকে ফ্রুট কেকটা খসে পড়ল। হ্যারি আর রন ভয় পেয়ে দৃষ্টি বিনিময় কলল, ওরা অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লাটা আবার জড়িয়ে নিয়ে এক কোণায় চলে গেল। হ্যাগ্রিড দেখে নিল ওরা ঠিক মতো লুকিয়েছে কি না। ক্রসবো তুলে নিল, আরেকবার দরজাটা খুলে দিল।

গুড ইভিনিং হ্যাগ্রিড।

ডাম্বলডোর এসেছেন। ভেতরে ঢুকলেন, তাকে ভীষণ সিরিয়াস দেখাচ্ছে, তাকে অনুসরণ করে ঢুকল একজন অদ্ভুত দেখতে লোক।

আগন্তুক বেটে, মোটা, উস্কোখুস্কো সাদা চুল, চেহারায় উদ্বেগের ছাপ। অদ্ভূত মিশ্রণের কাপড় পরে রয়েছেন: চিকণ স্ট্রাইপের স্যুট, রক্তলাল টাই, লম্বা কালো আলখাল্লা এবং সূচালো লাল বুট পরনে। বগলের নিচে লেবুর মতো সবুজ বোলার হাট।

উনিই ড্যাড-এর বস্! রন বলল। কর্ণেলিয়াস ফাজ, ম্যাজিক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী।

কনুই দিয়ে গুতো দিয়ে হ্যারি ওকে চুপ করিয়ে দিল।

ফ্যাকাশে হয়ে গেছে হ্যাগ্রিডের চেহারা, ঘাম ছুটে গেছে। একটা চেয়ারে বসে পড়ল হ্যাগ্রিড, তাকালো ডাম্বলডোর থেকে কর্ণেলিয়াস ফাজ-এর দিকে।

খারাপ কাজ, হ্যাগ্রিড, যা বললেন কাটা কাটা ভাবে। খুবই খারাপ কাজ। আসতেই হলো। মাগল–জাতদের ওপর চার চারটি হামলা। অনেকদূর গড়িয়েছে। মন্ত্রণালয়কে হস্তক্ষেপ করতেই হচ্ছে।

আমি কখনো না, বলল হ্যাগ্রিড, ডাম্বলডোরের দিকে অনুনয়ের দৃষ্টিকে তাকিয়ে, আপনি তো জানেন আমি করিনি, প্রফেসর ডাম্বলডোর, স্যার…

আমি বোঝাতে চাই, কর্নেলিয়াস, যে হ্যাগ্রিডের ওপর আমার পূর্ণ আস্থ রয়েছে, বললেন ডাম্বলডোর, ফাজের দিকে কুপাল কুঁচকে।

দেখো, অ্যালবাস, বললেন ফাজ, অস্বস্তিতে। হ্যাগ্রিডের রেকর্ডই ওর বিরুদ্ধে। মন্ত্রণালয়কে তো কিছু একটা করতে হবে–স্কুলের গভর্ণররা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে।

তারপরও কর্ণেলিয়াস, আমি বলছি হ্যাগ্রিডকে নিয়ে গেলে পরিস্থিতির একটুও উন্নতি হবে না, বললেন ডাম্বলডোর। ওর নীল চোখে যেন আগুন জ্বলছে, এরকম আগে কখনো দেখেনি হ্যারি।

আমার অবস্থান থেকে দেখো, বললেন ফাজ, বোলার হ্যাটটা অস্থিরভাবে নাড়ছেন। আমি অনেক চাপের মধ্যে আছি। কিছু কাজ হচ্ছে সেটা অন্তত দেখাতে হবে। যদি দেখা যায় হ্যাগ্রিড দোষী নয়, তাহলে ও ফিরে আসবে, সেটা আর বলাও লাগবে না। কিন্তু এখন আমার ওকে নিয়ে যেতেই হবে। আমার কর্তব্য পালন করা হবে না যদি না

আমাকে নিয়ে যাবেন, বলল হ্যাগ্রিড কাঁপছে সে। কোথায় নিয়ে যাবেন?

অল্প সময়ের জন্যে, বললেন ফাজ, হ্যাগ্রিডের চোখে চোখ রাখতে পারলেন না তিনি। কোন শাস্তি নয়, হ্যাগ্রিড, প্রাক সতর্কতা আর কি। যদি অন্য কেউ ধরা পড়ে, একেবারে ক্ষমা চে আপনাকে ছেড়ে দেয়া হবে…

আজকাবান নয়? বিষণ্ণ কন্ঠে বলল হ্যাগ্রিড।

ফাজ জবাব দেয়ার আগেই দরজায় আবার জোরে টোকা পড়ল।

এবার ডাম্বলডোর দরজা খুললেন। এখন হ্যারি রনের পাঁজরে কনুই দিয়ে গুতো মারল: শোনা না যায় এমন একটা দম ফেলল বল।

মিস্টার লুসিয়াস ম্যালফয় ঢুকছে হ্যাগ্রিডের বাড়িতে, লম্বা একটা ভ্রমণকালীন আলখাল্লা পরনে, মুখে শীতল কিন্তু সন্তুষ্টির হাসি। হ্যাগ্রিডের কুকুর ফ্যাং ঘিউ ঘেউ করে উঠল।

ইতোমধ্যেই এসে গেছে, ফাজ, বলল সে সমর্থনের ভঙ্গিতে, বেশ, বেশ…

তুমি এখানে কি করছ? ক্ষিপ্ত হয়ে বলল হ্যাগ্রিড, আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাও।

মাই ডিয়ার, প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো, আমার মোটেও ইচ্ছা নেই তোমার এই কি বললে–তুমি এটাকে বাড়ি বললে, বাড়ীতে জাসার। বিদ্রুপের ভঙ্গিতে ঘরটা দেখতে দেখতে বললেন লুসিয়াস ম্যালফয়। আমি স্কুলে গিয়েছিলাম, আমাকে ওখান থেকে বলল, হেডমাস্টার সাহেব এখানেই রয়েছেন।

এবং আমার সাথে, ঠিক কি চাচ্ছো লুসিয়াস? জিজ্ঞাসা করলেন ডাম্বলডোর। বললেন ভদ্ৰ ভাবেই কিন্তু ওর নীল চোখের সেই আগুনটা এখনো রয়ে গেছে।

ভয়াবহ ব্যাপার, ডাম্বলডোর, অলসভাবে বললেন মিস্টার লুসিয়াস, পার্চমেন্টের একটা লম্বা রোল বের করলেন পকেট থেকে, গভর্ণররা মনে করেন তোমার পদত্যাগ করা উচিৎ। এই যে সাসপেনশনের আদেশ-এর মধ্যে বারো জনেরই স্বাক্ষর রয়েছে। আমার মনে হচ্ছে তুমি তোমার কর্মক্ষমতা হারাচ্ছ। এখন পর্যন্ত কয়টা হামলা হয়েছে? আরো দুটো আজ বিকেলে, তাই না? এই হারে হতে থাকলে হোগার্টস-এ কোন মাগল–জাত থাকবে না, এবং আমরা সকলেই জানি সেটা স্কুলের জন্য কি সাংঘাতিক ক্ষতির ব্যাপার হবে।

ওহ, দেখো লুসিয়াস, বললেন ফাজ, শঙ্কিত মনে হচ্ছে তাকে, ডাম্বলডোর সাসপেনশনে…না..না এই মুহূর্তে যেটা একেবারেই চাই না…

হেডমাস্টারের নিয়োগ–অথবা সাসপেনশন ব্যাপারটা গভর্ণরদের হাতে, ফাজ, বললেন মিস্টার ম্যালফয় শান্তভাবে। এবং ডাম্বলডোর এই হামলাগুলি ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে…

দেখো, লুসিয়াস, যদি ডাম্বলডোর না থামাতে পারে– বললেন ফাজ, ওর উপরের ঠোঁট ঘামছে, আমি বলতে চাচ্ছি, কে পারবে?

সেটা দেখার অপেক্ষা, বললেন মিস্টার ম্যালফয়, মুখে একটা নোংরা হাসি। কিন্তু যেহেতু আমরা বারো জনই ভোট দিয়েছি…

হ্যাগ্রিড লাফিয়ে উঠে দাঁড়াল, ওর লম্বা বিশৃংখল চুলের কালো মাথাটা সিলিং-এ গিয়ে ঠেকেছে।

এবং কতজনকে তোমার ভয় দেখাতে হয়েছে বা ব্ল্যাকমেল করতে হয়েছে ওদের সম্মত করাতে, ম্যালফয়, এহ? গর্জন করে উঠল সে।

ডিয়ার, ডিয়ার, তুমি জান, তোমার এই মেজাচটাই তোমাকে একদিন বিপদে ফেলবে, হ্যাগ্রিড, বললেন মিস্টার ম্যালফয়। আমি তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি আজকাবান গার্ডদের উদ্দেশে অমনভাবে চিৎকার করো না। ওরা এটা মোটেই পছন্দ করবে না।

তোমরা ডাম্বলডোরকে নিয়ে যেতে পারে! চিৎকার করে উঠল হ্যাগ্রিড, ফ্রাং–ওর কুকরটা ঝুড়িতে বসে আরো ভয় পেয়ে কুঁই কুঁই করে উঠল। ওঁকে নিয়ে যাও, এরপর মাগল–জাতদের আর বাচ্চার কোন সম্ভাবনাই নেই! এরপর খুন হতে থাকবে!

নিজেকে সামলাও, হ্যাগ্রিড, তীক্ষ্ণ কণ্ঠে বললেন ডাম্বলডোর। তাকালেন লুসিয়াস ম্যালফয়ের দিকে।

যদি গভর্ণররা আমাকে সরাতে চান, লুসিয়াস, তাহলে অবশ্যই আমি সরে দাঁড়াবো।

কিন্তু– তোতলাচ্ছেন ফাজ।

না! গর্জন করল হ্যাগ্রিড।

ম্যালফয়ের ঠান্ডা ধূসর চোখের ওপর থেকে ডাম্বলডোর তার নীল উজ্জ্বল চোখ সরাননি।

যাই হোক, বললেন ডাম্বলডোর, অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে এবং ধীরে, যেন কোন শব্দই শুনতে কারো অসুবিধা না হয়, তোমরা দেখবে আমি সত্যিকার অর্থে তখনই স্কুল ছেড়ে যাবে, যখন এখানে আমার অনুগত আর কেউই থাকবে না। এও দেখবে এই সাহায্যটা সব সময়ই হোগার্টস্-এ করা হয়, যখনই কেউ চায়।

মুহূর্তের জন্য হ্যারি ভাবল সে আর রন যেখানে লুকিয়ে রয়েছে সেই দিকেই ডাম্বলডোরের চোখটা ঘুরে গেল।

প্রশংসারযোগ্য সেন্টিমেন্ট, বললেন ম্যালফয় কুর্ণিশ করে। আমরা সকলেই তোমাকে মিস–মানে এককভাবে তোমার সব কিছু করার স্টাইলটাকে মিস করবো, অ্যালবাস, এবং আশা করবো তোমার উত্তরাধিকার খুন বন্ধ করতে সক্ষম হবে।

কেবিনের দরজা পর্যন্ত গেলেন লুসিয়াস ম্যালফয়, খুললেন এবং কুর্নিশ করে ডাম্বলডোরকে বাইরে নিয়ে গেলেন। ফাজ তার বোলার হ্যাট হাতে নিয়ে নাড়ছেন, অপেক্ষা করলেন হ্যাগ্রিডকে তার আগে যাওয়ার জন্যে, কিন্তু হ্যাগ্রিড দাঁড়িয়েই রয়েছে, একটা গভীর শ্বাস নিয়ে সে বলল, কেউ যদি কোন কিছু খুঁজে পেতে চায়, তাকে শুধু মাকড়শাদের অনুসরণ করতে হবে। ওরাই কে ঠিক পথে নিয়ে যাবে! আমার এ পর্যন্তই বলা।

বিস্মিত ফাজ তার দিকে তাকিয়ে রইল।

এই যে, আমি আসছি, বলল হ্যাগ্রিড, ওর ওভারকোটটা গায়ে দিতে দিতে। ফাজের পেছন পেছন যেতে যেতে আবার থামল এবং জোরে বলল, আমি যখন থাকব না, তখন ফ্যাং–কে খাওয়া দেয়ার প্রয়োজন হবে।

দড়াম করে দরজাটা বন্ধ হলো। অদৃশ্য হওয়ার আলখাল্লাটা রন খুলে ফেলল।

আমরা এখন বিপদে আছি, বলল কর্কশ গলায়। ডাবলডোর নেই। আজ রাতে ওরা স্কুলও বন্ধ করে দিতে পারে। উনি না থাকলে প্রতিদিন একটা করে হামলা হবে।

দরজায় গা ঘষা-ঘষি করছে ফ্যাং, ডাক ছাড়ছে।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *