১০. সৌপ্তিকপর্ব

সৌপ্তিকপর্ব

॥ সৌপ্তিকপর্বাধ্যায়॥

১। অশ্বত্থামার সংকল্প

কৃপাচার্য অশ্বত্থামা ও কৃতবর্মা কিছুদূর গিয়ে এক ঘোর বনে উপস্থিত হলেন। অল্প কাল বিশ্রাম করে এবং অশ্বদের জল খাইয়ে তারা পুনর্বার যাত্রা করলেন এবং একটি বিশাল বটবৃক্ষের নিকটে এসে রথ থেকে নেমে সন্ধ্যাবন্দনা করলেন। ক্রমে রাত্রি গভীর হল , কৃপ ও কৃতবর্মা ভূতলে শুয়ে নিদ্রিত হলেন। অশ্বত্থামার নিদ্রা হল না, তিনি ক্রোধে অধীর হয়ে সর্পের ন্যায় নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলেন। তিনি দেখলেন, সেই বটবৃক্ষে বহু সহস্র কাক নিঃশঙ্ক হয়ে নিদ্রা যাচ্ছে, এমন সময় এক ঘোরদর্শন কৃষ্ণপিঙ্গলবর্ণ বৃহৎ পেচক এসে বিস্তর কাক বিনষ্ট করলে, তাদের ছিন্ন দেহে ও অবয়বে বৃক্ষের তলদেশ আচ্ছন্ন হয়ে গেল।

অশ্বত্থামা ভাবলেন, এই পেচক যথাকালে আমাকে শক্ৰসংহারের উপযুক্ত উপদেশ দিয়েছে। আমি বলবান বিজয়ী পাণ্ডবদের সম্মুখযুদ্ধে বধ করতে পারব না। যে কার্য গর্হিত বলে গণ্য হয়, ক্ষত্ৰধর্মাবলম্বী মানুষের পক্ষে তাও করণীয়। এই-প্রকার শ্লোক শোনা যায়-পরিশ্রান্ত, ভগ্ন, ভোজনে রত, পলায়মান, আশ্রয়প্রবিষ্ট, অর্ধরাত্রে নিদ্রিত, নায়কহীন, বিচ্ছিন্ন বা দ্বিধাযুক্ত শত্রুকে প্রহার করা বিধেয়। অশ্বত্থামা স্থির করলেন, তিনি সেই রাত্রিতেই পাণ্ডব ও পাঞ্চালগণকে সুপ্ত অবস্থায় হত্যা করবেন।

দুই সঙ্গীকে জাগরিত করিয়ে অশ্বত্থামা তার সংকল্প জানালেন। কৃপ ও কৃতবর্মা লজ্জিত হয়ে উত্তর দিতে পারলেন না। ক্ষণকাল পরে কৃপ বললেন, কেবল দৈব বা কেবল পুরুষকারে কার্য সিদ্ধ হয় না, দুই-এর যোগেই সিদ্ধিলাভ হয়। কর্মদক্ষ লোক যদি চেষ্টা করেও কৃতকার্য না হয় তবে তার নিন্দা হয় না; কিন্তু অলস লোকে যদি কর্ম না করেও ফললাভ করে তবে সে নিন্দা ও বিদ্বেষের পাত্র হয়। লোভী অদূরদর্শী দুর্যোধন হিতৈষী মিত্রদের উপদেশ শোনেননি, তিনি অসাধু লোকদের মন্ত্রণায় পাণ্ডবগণের সঙ্গে শত্রুতা করেছেন। আমরা সেই দুঃশীল পাপীর অনুসরণ করে এই দারুণ দুর্দশায় পড়েছি। আমার বুদ্ধি বিকল হয়েছে, কিসে ভাল হবে তা বুঝতে পারছি না। চল, আমরা ধৃতরাষ্ট্র গান্ধারী ও মহামতি বিদুরের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করি, তারা যা বলবেন তাই আমাদের কর্তব্য হবে।

অশ্বত্থামা বললেন, নিপুণ বৈদ্য যেমন রোগ নিরূপণ করে ঔষধ প্রস্তুত করেন, সাধারণ লোকেও সেইরূপে কার্যসিদ্ধির উপায় নির্ধারণ করে, আবার অন্য লোকে তার নিন্দাও করে। যৌবনে, মধ্যবয়সে ও বার্ধক্যে মানুষের বিভিন্ন বুদ্ধি হয়, মহাবিপদে বা মহাসমৃদ্ধিতেও মানুষের বুদ্ধি বিকৃত হয়। আমি শ্রেষ্ঠ ব্রাহ্মণকূলে জন্মগ্রহণ করে মন্দভাগ্যবশত ক্ষত্রধর্ম আশ্রয় করেছি; সেই ধর্ম অনুসারে আমি মহাত্মা পিতৃদেবের এবং রাজা দুর্যোধনের পথে যাব। বিজয়লাভে আনন্দিত শ্রান্ত পাঞ্চালগণ আজ যখন বর্ম খুলে ফেলে নিশ্চিন্ত হয়ে নিদ্রামগ্ন থাকবে তখন আমি তাদের বিনষ্ট করব। পাঞ্চালগণের দেহে রণভূমি আচ্ছন্ন করে আমি পিতার নিকট ঋণমুক্ত হব। আজ রাত্রিতেই আমি নিদ্রিত পাঞ্চাল ও পাণ্ডবপুত্রগণকে খড়গাঘাতে বধ করব, পাঞ্চালসৈন্য সংহার করে কৃতকৃতা ও সুখী হব।

কৃপ বললেন, তুমি প্রতিশোধের যে সংকল্প করেছ তা থেকে স্বয়ং ইন্দ্রও তোমাকে নিবৃত্ত করতে পারবেন না। বৎস, তুমি বহুক্ষণ জেগে আছ, আজ রাত্রিতে বিশ্রাম কর; কাল প্রভাতে আমরা বর্মধারণ করে রথারোহণে তোমার সঙ্গে যাব, তুমি। যুদ্ধে বিক্রম প্রকাশ করে অনুচর সহ পাঞ্চালগণকে বিনষ্ট ক’রো।

অশ্বত্থামা ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, আতুর, ক্রোধাবিষ্ট, অর্থচিন্তাকুল ও কার্যোদ্ধারকামীর নিদ্রা কোথায়? আমি ধৃষ্টদ্যুম্নকে বধ না করে জীবনধারণ করতে পারছি না। ভগ্নোরু রাজা দুর্যোধনের যে বিলাপ আমি শুনেছি তাতে কার হৃদয় দগ্ধ না হয়? মাতুল, প্রভাতকালে বাসুদেব ও অর্জুন শত্রুদের রক্ষা করবেন, তখন তারা ইন্দ্রেরও অজেয় হবে। আমার ক্রোধ দমন করতে পারছি না, আমি যা ভাল মনে করেছি তাই। করব, এই রাত্রিতেই সুপ্ত শত্রুদের বধ করব, তার পর বিগতজ্বর হয়ে নিদ্রা যাব।

কৃপাচার্য বললেন, সুহৃঙ্গণ যখন পাপকর্ম করতে নিষেধ করেন তখন ভাগ্যবানই নিবৃত্ত হয়, ভাগ্যহীন হয় না। বৎস, তুমি নিজের কল্যাণের জন্যই নিজেকে সংযত কর, আমার কথা শোন, তা হলে পরে অনুতাপ করতে হবে না। সুপ্ত নিরস্ত্র অশ্বরথহীন লোককে হত্যা করলে কেউ প্রশংসা করে না। পাঞ্চালরা আজ রাত্রিতে মৃতের ন্যায় অচেতন হয়ে নিদ্রা যাবে; সেই অবকাশে যে কুটিল লোক তাদের বধ করবে সে অগাধ নরকে নিমগ্ন হবে। তুমি অস্ত্রজ্ঞগণের মধ্যে শ্রেষ্ঠ বলে খ্যাত, অত্যল্প পাপকর্মও তুমি কর নি; অতএব তুমি কাল প্রভাতে শত্রুগণকে যুদ্ধে জয় করো। শুক্ল বস্তুতে যেমন রক্তবর্ণ, সেইরূপ তোমার পক্ষে গর্হিত কর্ম অসম্ভাবিত মনে করি।

অশ্বত্থামা বললেন, মাতুল, আপনার কথা সত্য, কিন্তু পাণ্ডবরা পূর্বেই ধর্মের সেতু শত খণ্ডে ভগ্ন করেছে। আমি আজ রাত্রিতেই পিতৃহন্তা পাঞ্চালগণকে সুপ্ত অবস্থায় বধ করব, তার ফলে যদি আমাকে কীটপতঙ্গ হয়ে জন্মাতে হয় তাও শ্রেয়। আমার পিতা যখন অস্ত্র ত্যাগ করেছিলেন তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন তাকে বধ করেছিল; আমিও সেইরূপ পাপকর্ম করব, বর্মহীন, ধৃষ্টদ্যুম্নকে পশুর ন্যায় বধ করব, যাতে সেই পাপী অস্ত্রাঘাতে নিহত বীরের স্বর্গ না পায়। অশ্বত্থামা এই বলে বিপক্ষ-শিবিরের অভিমুখে যাত্রা করলেন, কৃপ ও কৃতবর্মাও নিজ নিজ রথে চড়ে অনুগমন করলেন।

২। মহাদেবের আবির্ভাব

শিবিরের দ্বারদেশে এসে অশ্বত্থামা দেখলেন, সেখানে এক মহাকায় চন্দ্র-সূর্যের ন্যায় দীপ্তিমান লোমহর্ষকর পুরুষ দাঁড়িয়ে রয়েছেন। তার পরিধান রুধিরাক্ত ব্যাঘ্রচর্ম, উত্তরীয় কৃষ্ণসারমৃগচর্ম, গলদেশে সর্পের উপবীত, হস্তে নানাবিধ অস্ত্র উদ্যত হয়ে আছে। তাঁর দংষ্ট্রাকরাল মুখ, নাসিকা, কর্ণ ও সহস্র নেত্র থেকে অগ্নিশিখা নির্গত হচ্ছে, তার কিরণে শত সহস্র শঙ্খচক্রগদাধর বিষ্ণু আবির্ভূত হচ্ছেন।

অশ্বত্থামা নিঃশঙ্ক হয়ে সেই ভয়ংকর পুরুষের প্রতি বিবিধ দিব্যাস্ত্র নিক্ষেপ করলেন, কিন্তু সেই পুরুষ সমস্ত অস্ত্রই গ্রাস করে ফেললেন। অস্ত্র নিঃশেষ হলে অশ্বত্থামা দেখলেন, অসংখ্য বিষ্ণুর আবির্ভাবে আকাশ আচ্ছন্ন হয়ে গেছে। তখন নিরস্ত্র অশ্বত্থামা কৃপাচার্যের বাক্য স্মরণ করে অনুতপ্ত হলেন এবং রথ থেকে নেমে প্রণত হয়ে শূলপাণি মহাদেবের উদ্দেশে স্তব করে বললেন, হে দেব, যদি আজ এই ঘোর বিপদ থেকে উত্তীর্ণ হতে পারি তবে আপনাকে আমার এই পঞ্চভূতময় শরীর উপহার দেব।

তখন একটি কাঞ্চনময় দেবী আবির্ভূত হল এবং তাতে অগ্নি জ্বলে উঠল। নানারূপধারী বিকটাকার প্রমথগণ উপস্থিত হল। তাদের কেউ ভেরী শঙ্খ মৃদঙ্গ প্রভৃতি বাজাতে লাগল, কেউ নৃত্যগীতে রত হল কেউ লাফাতে লাগল। সেই অস্ত্রধারী ভূতেরা অশ্বত্থামার তেজের পরীক্ষা এবং সুপ্ত যোদ্ধাদের হত্যা দর্শনের জন্য সর্ব দিকে বিচরণ করতে লাগল।

অশ্বত্থামা কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, ভগবান, আমি অঙ্গিরার কুলে জাত, আমার শরীর দিয়ে অগ্নিতে হোম করছি, আপনি এই বলি গ্রহণ করুন। এই বলে অশ্বত্থামা বেদীতে উঠে জ্বলন্ত অগ্নিতে প্রবেশ করলেন। তিনি ঊর্ধ্ববাহু ও নিশ্চেষ্ট হয়ে আছেন। দেখে মহাদেব প্রত্যক্ষ হয়ে সহাস্যে বললেন, কৃষ্ণ অপেক্ষা আমার প্রিয় কেউ নেই, কারণ তিনি সর্বপ্রকারে আমার আরাধনা করেছেন। তার সম্মান এবং তোমার পরীক্ষার জন্য আমি পাঞ্চালগণকে রক্ষা করছি এবং তোমাকে নানাপ্রকার মায়া দেখিয়েছি। কিন্তু পাঞ্চালগণ কালকবলিত হয়েছে, আজ তাদের জীবনান্ত হবে। এই বলে মহাদেব অশ্বত্থামার দেহে আবিষ্ট হলেন এবং তাকে একটি নির্মল উত্তম খড়্গ দিলেন। অশ্বত্থামার তেজ বর্ধিত হল তিনি সমধিক বলশালী হয়ে শিবিরের অভিমুখে গেলেন, প্রমথগণ অদৃশ্য হয়ে তাঁর সঙ্গে চলল।
 

৩। ধৃষ্টদ্যুম্ন দ্রৌপদীপুত্র প্রভৃতির হত্যা

কৃপ ও কৃতবর্মাকে শিবিরের দ্বারদেশে দেখে অশ্বত্থামা প্রীত হয়ে মৃদুস্বরে বললেন, আমি শিবিরে প্রবেশ করে কৃতান্তের ন্যায় বিচরণ করব, আপনারা দেখবেন যেন কেউ জীবিত অবস্থায় আপনাদের নিকট মুক্তি না পায়। এই বলে অশ্বত্থামা অদ্বার দিয়ে পাণ্ডবশিবিরে প্রবেশ করলেন।

ধীরে ধীরে ভিতরে এসে অশ্বত্থামা দেখলেন, ধৃষ্টদ্যুম্ন উত্তম আস্তরণযুক্ত সুবাসিত শয্যায় নিদ্রিত রয়েছেন। অশ্বত্থামা তাকে পদাঘাতে জাগরিত করে কেশ ধরে ভুতলে নিষ্পিষ্ট করতে লাগলেন। ভয়ে এবং নিদ্রার আবেশে ধৃষ্টদ্যুম্ন নিশ্চেষ্ট হয়ে রইলেন। অশ্বত্থামা তার বুকে আর গলায় পা দিয়ে চাপতে লাগলেন। তখন ধৃষ্টদ্যুম্ন অশ্বত্থামাকে নখাঘাত করে অস্পষ্টস্বরে বললেন, আচার্যপুত্র, বিলম্ব করবেন না, আমাকে অস্ত্রাঘাতে বধ করুন, তা হলে আমি পুণ্যলোকে যেতে পারব। অশ্বত্থামা বললেন, কুলাঙ্গার দুর্মতি, গুরুহত্যাকারী পুণ্যলোকে যায় না, তুমি অস্ত্রাঘাতে মরবার যোগ্য নও। এই বলে অশ্বত্থামা মর্মস্থানে গোড়ালির চাপ দিয়ে ধৃষ্টদ্যুম্নকে হত্যা করলেন।

আর্তনাদ শুনে স্ত্রী ও রক্ষিগণ জাগরিত হয়ে সেখানে এল, কিন্তু অশ্বত্থামাকে ভূত মনে করে ভয়ে কথা বলতে পারলে না। অশ্বত্থামা রথে উঠে পাণ্ডবদের শিবিরে গেলেন। ধৃষ্টদ্যুম্নের নারীদের ক্রন্দন শুনে বহু যোদ্ধা সত্বর এসে অশ্বত্থামাকে বেষ্টন করলেন, কিন্তু সকলেই রুদ্রাস্ত্রে নিহত হলেন। তার পর অশ্বত্থামা উত্তমৌজা ও যুধামন্যুকে বধ করে শিবিরস্থ নিদ্রামগ্ন শ্রান্ত ও নিরস্ত্র সকল যোদ্ধাকেই হত্যা করলেন। দ্রৌপদীর পাঁচ পুত্র কোলাহল শুনে জাগরিত হলেন এবং শিখণ্ডীর সঙ্গে এসে অশ্বত্থামার প্রতি বাণবর্ষণ করতে লাগলেন। অশ্বত্থামা খড়গের আঘাতে দ্রৌপদীর পুত্রগণকে একে একে বধ করলেন, শিখণ্ডীকেও দ্বিখণ্ডিত করলেন।

শিবিরের রক্ষিগণ দেখলে, রক্তবদনা রক্তবসনা রক্তমাল্যধারিণী পাশহস্তা কালরাত্রিরূপা কালী তার সহচরীদের সঙ্গে অবির্ভূত হয়েছেন, তিনি গান করছেন এবং মানুষ হস্তী ও অশ্বসকলকে বেঁধে নিয়ে যাচ্ছেন। এই রক্ষীরা পূর্বে প্রতি রাত্রিতে কালীকে এবং হত্যায় রত অশ্বত্থামাকে স্বপ্নে দেখত; এখন তারা স্বপ্ন স্মরণ করে বলতে লাগল, এই সেই!

অর্ধরাত্রের মধ্যেই অশ্বত্থামা পাণ্ডবশিবিরস্থ সমস্ত সৈন্য হস্তী ও অশ্ব বধ করলেন। যারা পালাচ্ছিল তারাও দ্বারদেশে কৃপাচার্য ও কৃতবর্মা কর্তৃক নিহত হল। এই হত্যাকাণ্ড শেষ হলে অশ্বত্থামা বললেন, আমরা কৃতকার্য হয়েছি, এখন শীঘ্র রাজা দুর্যোধনের কাছে চলুন, তিনি যদি জীবিত থাকেন তবে তাকে প্রিয়সংবাদ দেব।

৪। দুর্যোধনের মৃত্যু

অশ্বত্থামা প্রভৃতি দুর্যোধনের কাছে এসে দেখলেন, তখনও তিনি জীবিত আছেন, অচেতন হয়ে রুধির বমন করছেন, এবং অতি কষ্টে মাংশাসী শ্বাপদগণকে তাড়াচ্ছেন। অশ্বত্থামা করুণ বিলাপ করে বললেন, পুরুষশ্রেষ্ঠ দুর্যোধন, তোমার জন্য শোক করি না, তোমার পিতামাতার জন্যই শোক করছি, তারা এখন ভিক্ষুকের ন্যায় বিচরণ করবেন। গান্ধারীপুত্র, তুমি ধন্য, শত্রুর সম্মুখীন হয়ে ধর্মানুসারে যুদ্ধ করে তুমি নিহত হয়েছ। কৃপাচার্য কৃতবর্মা আর আমাকে ধিক, আমরা তোমাকে অগ্রবর্তী করে স্বর্গে যেতে পারছি না। মহারাজ, তোমার প্রসাদে আমার পিতার ও কৃপের গৃহে প্রচুর ধনরত্ন আছে, আমরা বহু যজ্ঞ করেছি, প্রচুর দক্ষিণাও দিয়েছি। তুমি চ’লে যাচ্ছ, পাপী আমরা কিপ্রকারে জীবনধারণ করব? তুমি স্বর্গে গিয়ে দ্রোণাচার্যকে জানিও যে আজ আমি ধৃষ্টদ্যুম্নকে বধ করেছি। তুমি আমাদের হয়ে বাহ্রীকরাজ, জয়দ্ৰথ, সোমদত্ত, ভূরিশবা, ভগদত্ত প্রভৃতিকে আলিঙ্গন করে কুশল জিজ্ঞাসা করো। দুর্যোধন, সুখসংবাদ শোন-শত্রুপক্ষে কেবল পঞ্চপাণ্ডব, কৃষ্ণ ও সাত্যকি এই সাত জন অবশিষ্ট আছেন; আমাদের পক্ষে কৃপাচার্য, কৃতবর্মা আর আমি আছি। দ্রৌপদীর পঞ্চপুত্র, ধৃষ্টদ্যুম্নের পুত্রগণ, এবং সমস্ত পাঞ্চাল ও মৎসাদেশীয় যোদ্ধা নিহত হয়েছে, হস্তী অশ্ব প্রভৃতির সহিত পাণ্ডব-শিবিরও ধ্বংস হয়েছে।

প্রিয়সংবাদ শুনে দুর্যোধন চৈতন্যলাভ করে বললেন, আচার্যপুত্র, তুমি কৃপাচার্য ও কৃতবর্মার সঙ্গে মিলিত হয়ে যা করেছ, ভীষ্ম-দ্রোণ-কর্ণও তা পারেন নি। আজ আমি নিজেকে ইন্দ্রের সমান মনে করছি। তোমাদের মঙ্গল হ’ক, স্বর্গে আমাদের মিলন হবে। এই বলে কুরুরাজ দুর্যোধন প্রাণত্যাগ করে পুণ্যময় স্বর্গলোকে প্রস্থান করলেন, তার দেহ ভূতলে প’ড়ে রইল।

॥ ঐষীকপর্বাধ্যায়॥

৫। দ্রৌপদীর প্রায়োপবেশন

রাত্রি গত হলে ধৃষ্টদ্যুম্নের সারথি যুধিষ্ঠিরের কাছে গিয়ে অশ্বত্থামার নৃশংস কর্মের বৃত্তান্ত জানালে। পুত্রশোকে আকুল হয়ে যুধিষ্ঠির ভূপতিত হলেন, তাঁর ভ্রাতারা এবং সাত্যকি তাকে ধরে ওঠালেন। যুধিষ্ঠির বিলাপ করে বললেন, লোকে পরাজিত হ’তে হ’তেও জয়লাভ করে, কিন্তু আমরা জয়ী হয়েও পরাজিত হয়েছি। যে। রাজপুত্রেরা ভীষ্ম দ্রোণ ও কর্ণের হাতে মুক্তি পেয়েছিলেন তাঁরা আজ অসাবধানতার জন্য নিহত হলেন! ধনী বণিকেরা যেমন সমুদ্র উত্তীর্ণ হয়ে সতর্কতার অভাবে ক্ষুদ্র নদীতে নিমগ্ন হয়, ইন্দ্রতুল্য রাজপুত্র ও পৌত্রগণ সেইরূপ অশ্বত্থামার হাতে নিহত হলেন। এঁরা স্বর্গে গেছেন, দ্রৌপদীর জন্যই শোক করছি, সেই সাধ্বী কি করে এই মহাদুঃখ সইবেন? নকুল, তুমি মন্দভাগ্যা দ্রৌপদীকে মাতৃগণের সহিত এখানে নিয়ে এস। তার পর যুধিষ্ঠির সুহৃদগণের সঙ্গে শিবিরে গিয়ে দেখলেন, তাঁদের পুত্র পৌত্র ও সখারা ছিন্নদেহে রক্তাক্ত হয়ে পড়ে আছেন। তিনি শোকে আকুল হয়ে অচেতনপ্রায় হলেন, সুহৃদ্গণ তাকে সান্ত্বনা দিতে লাগলেন।

নকুল উপপ্লব্য নগর থেকে দ্রৌপদীকে নিয়ে এলেন। দ্রৌপদী বাতাহত কদলীতরুর ন্যায় কাঁপতে কাঁপতে ভূমিতে পড়ে গেলেন, ভীমসেন তাকে ধরে উঠিয়ে সান্ত্বনা দিলেন। দ্রৌপদী সরোদনে যুধিষ্ঠিরকে বললেন, রাজা, তুমি ক্ষত্রধর্ম অনুসারে পুত্রদের যমকে দান করেছ, এখন রাজ্য ভোগ কর। ভাগ্যক্রমে তুমি সমগ্র পৃথিবী লাভ করেছ, এখন আর মত্তমাতঙ্গগামী বীর অভিমন্যুকে তোমার স্মরণ হবে না। আজ যদি তুমি পাপী দ্রোণপুত্রকে যুদ্ধে বধ না কর তবে আমি এখানেই প্রয়োপবেশনে প্রাণত্যাগ করব। পাণ্ডবগণ, তোমরা আমার এই প্রতিজ্ঞা জেনে রাখ। এই বলে দ্রৌপদী প্রায়োপবেশন আরম্ভ করলেন।

যুধিষ্ঠির বললেন, কল্যাণী, তোমার পুত্র ও ভ্রাতারা ক্ষত্রধর্মানুসারে নিহত হয়েছেন, তাদের জন্য শোক করো না। দ্রোণপুত্র দুর্গম বনে চ’লে গেছেন, যুদ্ধে তার নিপাত তুমি কি করে দেখতে পাবে? দ্রৌপদী বললেন, রাজা, শুনেছি অশ্বত্থামার মস্তকে একটি সহজাত মণি আছে। তুমি সেই পাপীকে বধ করে তার মণি মস্তকে ধারণ করে নিয়ে এস, তবেই আমি জীবনত্যাগে বিরত হব। তার। পর দ্রৌপদী ভীমসেনকে বললেন, তুমি ক্ষত্রিয়ধর্ম স্মরণ করে আমাকে ত্রাণ কর। তুমি জতুগৃহ থেকে ভ্রাতাদের উদ্ধার করেছিলে, হিড়িম্ব রাক্ষসকে বধ করেছিলে, কীচকের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করেছিলে, এখন দ্রোণপুত্রকে বধ করে সুখী হও।।

মহাবল ভীমসেন তখনই ধনুর্বাণ নিয়ে রথারোহণে যাত্রা করলেন, নকুল তাঁর সারথি হলেন।

৬। ব্রহ্মশির অস্ত্র

ভীম চ’লে গেলে কৃষ্ণ যুধিষ্ঠিরকে বললেন, ভরতশ্রেষ্ঠ, ভীমসেন আপনার সর্বাপেক্ষা প্রিয় ভ্রাতা, ইনি বিপদের অভিমুখে যাচ্ছেন, আপনি ওঁর সঙ্গে গেলেন না কেন? দ্রোণাচার্য তাঁর পুত্রকে যে ব্রহ্মশির অস্ত্র দান করেছেন তা পৃথিবী দগ্ধ করতে পারে। অর্জুনকেও দ্রোণ এই অস্ত্র (১) শিখিয়েছেন। তিনি পুত্রের চপল স্বভাব জানতেন সেজন্য অস্ত্রদানকালে বলেছিলেন, বৎস, তুমি যুদ্ধে অত্যন্ত বিপন্ন হলেও এই অস্ত্র প্রয়োগ করো না, বিশেষত মানুষের উপর। তারপর তিনি বলেছিলেন, তুমি কখনও সৎপথে থাকবে না। আপনারা বনবাসে চ’লে গেলে অশ্বত্থামা দ্বারকায় এসে আমাকে বলেন, কৃষ্ণ, আমার ব্রহ্মশির অস্ত্র নিয়ে তোমার সুদর্শন চক্র আমাকে দাও। আমি উত্তর দিলাম, তোমার অস্ত্র আমি চাই না, তুমি আমার এই চক্র ধনু শক্তি বা গদা যা ইচ্ছা হয় নিতে পার। অশ্বত্থামা সুদর্শন চক্র দিতে গেলেন, কিন্তু দু হাতে ধরেও তুলতে পারলেন না। তখন আমি তাকে বললাম, মূঢ় ব্রাহ্মণ, তুমি যা চেয়েছ তা অর্জুন প্রদ্যুম্ন বলরাম প্রভৃতিও কখনও চাননি। তুমি কেন আমার চক্র চাও? অশ্বত্থামা বললেন, কৃষ্ণ এই চক্র পেলে সসম্মানে তোমার সঙ্গেই যুদ্ধ করতাম এবং সকলের অজেয় হতাম। কিন্তু দেখছি তুমি ভিন্ন আর কেউ এই চক্র ধারণ করতে পারে না। এই বলে অশ্বত্থামা চ’লে গেলেন। তিনি ক্রোধী দুরাত্মা চপল ও ক্রুর, তার ব্রহ্মশির অস্ত্রও আছে; অতএব তার হাত থেকে ভীমকে রক্ষা করতে হবে।

তারপর কৃষ্ণ তাঁর গরুড়ধ্বজ রথে যুধিষ্ঠির ও অর্জুনকে তুলে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং ক্ষণকালমধ্যে ভীমকে দেখতে পেয়ে তার পশ্চাতে গিয়ে গঙ্গাতীরে উপস্থিত হলেন। সেখানে তারা দেখলেন, ক্রকর্মা অশ্বত্থামা কুশের কৌপীন পরে ঘৃতাক্তদেহে ধূলি মেখে ব্যাস ও অন্যান্য ঋষিগণের মধ্যে বসে আছেন। ভীম ধুনর্বাণ নিয়ে অশ্বত্থামার প্রতি ধাবিত হলেন। কৃষ্ণার্জুন ও যুধিষ্ঠিরকে দেখে অশ্বত্থামা ভয় পেলেন; তিনি ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগের ইচ্ছায় একটি ঈষীকা (কাশ তৃণ) নিক্ষেপ করে বললেন, পাণ্ডবরা বিনষ্ট হ’ক। তখন সেই ঈষীকায় কালান্তক যমের ন্যায় অগ্নি উদ্ভূত হল। কৃষ্ণ বললেন, অর্জুন অর্জুন, দ্রোণপ্রদত্ত দিব্যাস্ত্র এখনই নিক্ষেপ করে অশ্বত্থামার অস্ত্র নিবারণ কর।

অর্জুন বললেন, অশ্বত্থামার, আমাদের, এবং আর সকলের মঙ্গল হ’ক, অস্ত্র দ্বারা অস্ত্র নিবারিত হ’ক। এই বলে তিনি দেবতা ও গুরুজনের উদ্দেশে নমস্কার করে ব্রহ্মশির অস্ত্র নিক্ষেপ করলেন। তার অস্ত্রও প্রলয়াগ্নির ন্যায় জ্বলে উঠল। তখন সর্বভূতহিতৈষী নারদ ও ব্যাসদেব দুই অগ্নিরাশির মধ্যে দাঁড়িয়ে বললেন, বীরদ্বয়, পূর্বে কোনও মহারথ এই অস্ত্র মানুষের উপর প্রয়োগ করেননি; তোমরা এই মহাবিপজ্জনক কর্ম কেন করলে?

অর্জুন কৃতাঞ্জলি হয়ে বললেন, অশ্বত্থামার অস্ত্র নিবারণের জন্যই আমি অস্ত্র প্রয়োগ করেছি; যাতে সকলের মঙ্গল হয় আপনারা তা করুন। এই বলে অর্জুন তার অস্ত্র প্রতিসংহার করলেন। তিনি পূর্বে ব্রহ্মচর্য ও বিবিধ ব্রত পালন করেছিলেন সেজন্যই ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রত্যাহার করতে পারলেন, কিন্তু অশ্বত্থামা তা পারলেন না। অশ্বত্থামা বিষণ্ণহয়ে ব্যাসদেবকে বললেন, ভগবান, আমি ভীমসেনের ভয়ে এবং পাণ্ডবদের বধের নিমিত্ত এই অস্ত্র নিক্ষেপ করেছি, আমি ক্রোধের বশে পাপকার্য করেছি; কিন্তু এই অস্ত্র প্রতিসংহারের শক্তি আমার নেই। ব্যাসদেব বললেন, বৎস, অর্জুন তোমাকে মারবার জন্য ব্রহ্মশির অস্ত্র প্রয়োগ করেননি, তোমার অস্ত্র নিবারণের জন্যই করেছিলেন। পাণ্ডবগণ ও তাদের রাজ্য সর্বদাই তোমার রক্ষণীয়, আত্মরক্ষা করাও তোমার কর্তব্য। তোমার মস্তকের মণি পাণ্ডবদের দান কর, তা হলে তারা তোমার প্রাণ দান করবেন।

অশ্বত্থামা বললেন, ভগবান, পাণ্ডব আর কৌরবদের যত রত্ন আছে সে সমস্তের চেয়ে আমার মণির মূল্য অধিক, ধারণ করলে সকল ভয় নিবারিত হয়। আপনার আজ্ঞা আমার অবশ্য পালনীয়, কিন্তু ব্রহ্মশির অস্ত্রের প্রত্যাহার আমার অসাধ্য, অতএব তা পাণ্ডবনারীদের গর্ভে নিক্ষেপ করব। ব্যাসদেব বললেন, তাই কর।

কৃষ্ণ বললেন, এক ব্রতপরায়ণ ব্রাহ্মণ অর্জুনের পুত্রবধূ উত্তরাকে বলেছিলেন, কুরুবংশ ক্ষয় পেলে পরীক্ষিৎ নামে তোমার একটি পুত্র হবে। সেই সাধু ব্রাহ্মণের বাক্য সফল হবে। অশ্বত্থামা ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, কেশব, তুমি পক্ষপাত করে যা বলছ তা সত্য হবে না, আমার বাক্যের অন্যথা হবে না। কৃষ্ণ বললেন, তোমার মহাস্ত্র অব্যর্থ হবে, উত্তরার গর্ভস্থ শিশুও মরবে, কিন্তু সে আবার জীবিত হয়ে দীর্ঘায়ু পাবে। অশ্বত্থামা, তুমি কাপুরুষ, বহু পাপ করেছ, বালকবধে উদ্যত হয়েছ; অতএব পাপকর্মের ফলভোগ কর। তুমি তিন সহস্র বৎসর জনহীন দেশে অসহায় ব্যাধিগ্রস্ত ও পূষশোণিতগন্ধী হয়ে বিচরণ করবে। নরাধম, তোমার অস্ত্রাগ্নিতে উত্তরার পুত্র দগ্ধ হলে আমি তাকে জীবিত করব, সে কৃপাচার্যের নিকট অস্ত্রশিক্ষা করে। ষাট বৎসর কুরুরাজ্য পালন করবে।

অশ্বত্থামা ব্যাসদেবকে বললেন, ভগবান, পুরুষোত্তম কৃষ্ণের বাক্য সত্য হ’ক, আমি আপনার কাছেই থাকব। তারপর অশ্বত্থামা পাণ্ডবগণকে মণি দিয়ে বনগমন করলেন। কৃষ্ণ ও যুধিষ্ঠিরাদি ফিরে এলে ভীমসেন দ্রৌপদীকে বললেন, এই তোমার মণি নাও, তোমার পুত্রহস্তা পরাজিত হয়েছে, এখন শোক ত্যাগ কর। কৃষ্ণ যখন সন্ধিকামনায় হস্তিনাপুরে যাচ্ছিলেন তখন তুমি এই তীব্র বাক্য বলেছিলে-গোবিন্দ, আমার পতি নেই পুত্র নেই ভ্রাতা নেই, তুমিও নেই। সেই কথা এখন স্মরণ কর। আমি পাপী দুর্যোধনকে বধ করেছি, দুঃশাসনের রক্তপান করেছি; অশ্বত্থামাকেও জয় করেছি, কেবল ব্রাহ্মণ আর গুরুপুত্র বলে ছেড়ে দিয়েছি। তার যশ মণি এবং অস্ত্র নষ্ট হয়েছে, কেবল শরীর অবশিষ্ট আছে।

তারপর দ্রৌপদীর অনুরোধে যুধিষ্ঠির সেই মণি মস্তকে ধারণ করে চন্দ্রভূষিত পর্বতের ন্যায় শোভান্বিত হলেন। পুত্রশোকার্তা দ্রৌপদীও গাত্রোত্থান করলেন।

** (১) বনপর্ব ১০-পরিচ্ছেদে আছে, অর্জুন মহাদেবের কাছে এই অস্ত্র পেয়েছিলেন।

৭। মহাদেবের মাহাত্ম্য

যুধিষ্টির কৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, নীচস্বভাব পাপী অশ্বত্থামা কি করে আমাদের মহাবল পুত্রগণ ও ধৃষ্টদ্যুম্নাদিকে বিনষ্ট করতে সমর্থ হলেন? কৃষ্ণ বললেন, মহাদেবের শরণাপন্ন হয়েই তিনি একাকী বহু জনকে বধ করতে পেরেছেন। তার পর কৃষ্ণ এই আখ্যান বললেন।-

পুরাকালে ব্রহ্মা মহাদেবকে প্রাণিসৃষ্টির জন্য অনুরোধ করেছিলেন। মহাদেব সম্মত হলেন এবং জলে মগ্ন হয়ে তপস্যা করতে লাগলেন। দীর্ঘকাল প্রতীক্ষার পর ব্রহ্মা

দক্ষ প্রভৃতি প্রজাপতিগণকে সৃষ্টি করলেন। প্রাণীরা ক্ষুধিত হয়ে প্রজাপতিকেই খেতে গেল। তখন ব্রহ্মা প্রজাগণের খাদ্যের জন্য ওষধি ও অন্যান্য উদ্ভিদ, এবং প্রবল প্রাণীর ভক্ষ্য রূপে দুর্বলপ্রাণী নির্দেশ করলেন। তার পর মহাদেব জল থেকে উঠলেন, এবং বহুপ্রকার জীব সৃষ্ট হয়েছে দেখে ক্রুদ্ধ হয়ে ব্রহ্মাকে বললেন, অপর পুরুষ প্রজা উৎপাদন করেছে, আমি লিঙ্গ নিয়ে কি করব? এই বলে তিনি ভূমিতে লিঙ্গ ফেলে দিয়ে মুঞ্জবান পর্বতের পাদদেশে তপস্যা করতে গেলেন।

দেবযুগ অতীত হলে দেবতারা যজ্ঞ করবার ইচ্ছা করলেন। তারা যথার্থ-রূপে রুদ্রকে জানতেন না সেজন্য যজ্ঞের হবি ভাগ করবার সময় রুদ্রের ভাগ রাখলেন না। রুদ্র রুষ্ট হয়ে পাঁচ হাত দীর্ঘ ধনু নিয়ে দেবগণের যজ্ঞে উপস্থিত হলেন। তখন চন্দ্রসূর্য অদৃশ্য হল , আকাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন হল দেবতারা ভয়ে অভিভূত হলেন। রুদ্রের শাঘাতে বিদ্ধ হয় অগ্নির সহিত যজ্ঞ মৃগরূপ ধারণ করে আকাশে গেল, রুদ্র তার অনুসরণ করতে লাগলেন। যজ্ঞ নষ্ট হলে দেবতারা রুদ্রের শরণাপন্ন হলেন এবং তাকে প্রসন্ন করে তার জন্য হবির ভাগ নির্দেশ করে দিলেন। রুদ্রের ক্রোধে সমস্ত জগৎ অসুস্থ হয়েছিল, তিনি প্রসন্ন হলে আবার সুস্থ হল।

আখ্যান শেষ করে কৃষ্ণ বললেন, মহারাজ, অশ্বত্থামা যা করেছেন তা নিজের শক্তিতে করেননি, মহাদেবের প্রসাদেই করতে পেরেছেন।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *