দশ
আমরা বরাহনকদের দেশে এসে পৌঁছলাম। এরা ইতর শ্রেনীর লোক এবং কোনো ধর্ম মানে না। সাগরের পাড়ে ঘাস দিয়ে ছাওয়া নল খাগড়ার তৈরী কুঁড়ে ঘরে এরা বাস করে। এদের প্রচুর কলাগাছ ও পান-সুপারীর গাছ আছে। এদের পুরুষদের গঠন আমাদেরই মতো, শুধু মুখটির আকৃতি কুকুরের মুখের মতো, কিন্তু মেয়েদের বেলা আবার তা নয়। তারা যথেষ্ট সুন্দরী। পুরুষরা উলঙ্গ থাকে, এমন কি লজ্জাস্থানও আবৃত করে না। সময় সময় নলের তৈরী একটি থলে এদের কোমর থেকে ঝুলতে দেখা যায়। মেয়েরা গাছের পাতা দিয়ে দেহের সম্মুখ ভাগ আবৃত রাখে। তাদের মধ্যে ভিন্ন মহল্লায় বাংলা ও সুমাত্রার বহু মুসলমান বাস করে। এখানকার অধিবাসীরা সমুদ্রের তীরে এসে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কেনাবেচা করে এবং হাতির সাহায্যে পানি বয়ে এনে তাদের সরবরাহ করে। কারণ, সমুদ্রোপকূল থেকে পানি অনেক দূরে। সেখানে গিয়ে ব্যবসায়ীদের তারা পানি আনতে দেয় না। কারণ, মেয়েরা সুশ্রী পুরুষদের দেখে তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা করবে বলে তারা আশঙ্কা করে। এদেশে হাতি প্রচুর; কিন্তু সুলতান ছাড়া সে সব কেউ বিক্রি করতে পারে না। তিনি কাপড়ের বিনিময়ে হাতি বিক্রি করেন।
তাদের সুলতান আমার সঙ্গে দেখা করতে এলেন হাতিতে চড়ে। হাতির পিঠে চর্মের জিন। তিনি নিজেও পরেছেন ছাগচর্মে তৈরী নোমওয়ালা পোশাক। মাথায় তিন রঙের রেশমী ফেটি বাঁধা। হাতে নলের একটি বর্শা। তাঁর সঙ্গে বিশজন আত্মীয়। তারাও হাতি চড়ে এসেছে। আমরা সুলতানকে কিছু মরিচ, আদা, দারুচিনি, মালদ্বীপের শুঁটকি মাছ, বাংলাদেশের কাপড় উপহার দিলাম। তারা নিজেরা কাপড় ব্যবহার করে না; কিন্তু ভোজের সময় তারা হাতি কাপড়ে আবৃত করে। এ দ্বীপে যে সব জাহাজ ভিড়ে তার প্রতিটি জাহাজ থেকেই সুলতান একটি বাঁদী, একজন শ্বেতকায় গোলাম, একটি হাতিকে আবৃত করবার উপযোগী যথেষ্ট কাপড় এবং নিজের স্ত্রীর কোমরে ও পায়ের আঙ্গুলে ব্যবহারের জন্য স্বর্ণালঙ্কার আদায় করেন। যদি কেউ তা দিতে অস্বীকার করে তবে তারা জাদু চালনা করে এবং তার ফলে সমুদ্রে এমন ঝড় ওঠে যে, সে ব্যক্তি তাতেই ধ্বংস হয় বা ধ্বংসের কাছাকাছি গিয়ে পৌঁছে।
এদের ছেড়ে পঁচিশদিন পর আমরা জাওয়া (সুমাত্রা) গিয়ে পৌঁছি। জাওয়া থেকেই জাওয়ী নামক ধূপের নামকরণ হয়েছে। অর্ধদিনের পথ দূরে থাকতেই এ দ্বীপটি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়। দ্বীপটি যেমন উর্বর তেমনি শস্য-শ্যামল। দ্বীপের সর্বত্রই নারকেল সুপারী, লবঙ্গ, ভারতীয় মুসব্বর, কাঁঠাল, আম, জাম, মিষ্টি লেবু ও বেত গাছ দেখা যায়। টিনের টুকরা ও চীন দেশীয় অশোধিত সোনার সাহায্যে এখানকার বাসিন্দারা ব্যবসা-বাণিজ্য করে। সুগন্ধযুক্ত যে-সব গাছপালা এখানে জন্মে তার অধিকাংশই বিধর্মীদের অধিকৃত অঞ্চলে। মুসলিম অঞ্চলে এ সব গাছের প্রাচুর্য কম। আমরা পোতাশ্রয়ে পৌঁছলে দ্বীপের লোকেরা ছোট-ছোট নৌকায় নারিকেল, কলা, আম ও মাছ নিয়ে আমাদের কাছে এলো। এ সব জিনিস সওদাগরদের উপহার দেওয়া তাদের একটি রীতি। ব্যবসায়ীরাও সাধ্যমত তাদের এ উপহার প্রকারান্তরে ফিরিয়ে দেয়। নৌসেনাপতির প্রতিনিধিও আমাদের জাহাজে এলেন। আমাদের সঙ্গীয় সওদাগরদের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ের পরে তিনি আমাদের তীরে যাবার অনুমতি দিলেন। কাজেই আমরা তীরবর্তী একটি বন্দরে নেমে গেলাম। সমুদ্রোপকূলে এটি একটি বৃহৎ গ্রাম। সারহা নামক অনেক ঘর এখানে আছে। শহর থেকে এ জায়গাটা চার মাইল দূরে। নৌ-সেনাপতির প্রতিনিধি আমার সম্বন্ধে সুলতানকে চিঠি লেখায় তিনি আমীর দৌলাসাকে কাজী ও অন্যান্য আইনজ্ঞ লোকদের আমার সঙ্গে দেখা করতে হুকুম করলেন। সুলতানের একটি ঘোড়া এবং আরও কয়েকটি ঘোড়া সঙ্গে নিয়ে তারা দেখা করতে এলেন। আমি ও আমার সঙ্গীরা ঘোড়ায় চড়ে সুলতানের রাজধানী সুমাত্রায় রওয়ানা হলাম। কাঠের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা সুমাত্রা একটি বড় ও সুদৃশ্য শহর। জাওয়ার সুলতান আল-মালীক আজ-জহির একজন বিশেষ খ্যাতনামা উদার প্রকৃতির শাসক। তিনি ধর্মশাস্ত্রজ্ঞদের প্রতি বিশেষ অনুরাগী। তিনি সর্বদাই বিধর্মীদের বিরুদ্ধে জেহাদে নিযুক্ত আছেন এবং অভিযান চালনা করেন। তাহলেও তিনি একজন সহৃদয় প্রকৃতির লোক। তিনি পায়ে হেঁটেই শুক্রবার জুম্মার নামাজে যান। তাঁর প্রজারাও সানন্দে ধর্মযুদ্ধে যোগদান করে ও স্বেচ্ছায় অভিযানে অংশগ্রহণ করে। আশেপাশের সমস্ত বিধর্মীর উপর এদের আধিপত্য বেশী। শান্তিরক্ষার জন্য বিধর্মীরা কর দান করে।
প্রাসাদের দিকে এগিয়ে যেতে-যেতে আমরা কাছাকাছি গিয়ে দেখলাম, পথের দু’পাশে মাটিতে কতকগুলো বর্শা পুতে রাখা হয়েছে। এ অবধি এসে ঘোড়া থেকে নামতে হবে তারই নির্দেশ দিচ্ছে বর্শাগুলো। ঘোড়ার পিঠে যারা আসে এর বেশী তারা যেতে পারে না। আমরা তাই এখানে এসে ঘোড়া থেকে নামলাম। দরবার-গৃহে পৌঁছে সুলতানের প্রতিনিধির সঙ্গে আমাদের দেখা হলো। তিনি উঠে আমাদের সঙ্গে মোসাফাহ করলেন। আমরা তার সঙ্গে গিয়ে বসলে তিনি আমাদের আগমন-বার্তা সুলতানকে লিখে সইমোহর করে একজন ভৃত্যের হাতে দিলেন। চিঠির অপর পৃষ্ঠে সুলতানের লিখিত জবাব নিয়ে ভৃত্য ফিরে এলো। অত:পর একজন ভৃত্য নিয়ে সে একটি বাফশা বা কাপড়ের থলে হাতে দিলেন। চিঠির অপর পৃষ্ঠে সুলতানের লিখিত জবাব নিয়ে ভৃত্য। সুলতানের প্রতিনিধি থলেটি নিয়ে আমাকে হাত ধরে ছোট একটি ঘরে নিয়ে হাজির করলেন। তিনি দিনের বেলা বিশ্রামের সময় এ ঘরে কাটান। তাই বাফশা থেকে তিনটি আঙরাখা বের করা হলো। তার একটি খাঁটি রেশমী, আরেকটি রেশম ও সূতার মিশ্রণ, অপরটি রেশম ও লিনেন। অ্যাপ্রন জাতীয় আরও তিনটি পোশাক যাকে এরা বলে অন্তর্বাস, বিভিন্ন ধরনের আরও তিনটি মধ্যবাস (middle clothing), উলের তিনটি আলখেল্লা, তার একটি শাদা এবং তিনটি পাগড়ী। তাদের রীতি অসুসারে পায়জামার পরিবর্তে একটি অ্যাপ্রন ও একটি করে প্রত্যেক রকমের পোশাক পরে নিলাম। আমার সঙ্গীদেরও তাই করতে হলো। আহারের পর আমরা প্রাসাদ ত্যাগ করে ঘোড়ায় চড়ে কাঠের দেওয়ালঘেরা একটি বাগানে গিয়ে হাজির হলাম। বাগানের মধ্যস্থলে কাঠের তৈরী একটি ঘর। সূতী মখমল কাপড়ের ফালি দিয়ে কয়েকটি মেঝে মোড়া হয়েছে। ফালিগুলোর কয়েকটি রঙীন, বাকি কয়েকটি রঙীন নয়। আমরা প্রতিনিধির সঙ্গে সেখানে বসলাম। অতঃপর আমীর দৌলাসা দুজন বাদী ও দু’জন গোলাম নিয়ে এসে বললেন, সুলতান বলেছেন, এ উপহার তার ক্ষমতার উপযোগী, ভারতের সুলতান মোহাম্মদের উপযোগী নয়। এরপর প্রতিনিধি চলে গেলেন, আমীর দৌলাসা রইলেন আমাদের সঙ্গে।
আমীরের সঙ্গে এভাবে আমার আলাপ পরিচয় হলো যেননা, তিনি দিল্লীর সুলতানের কাছে দূত হিসাবে এসেছেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, সুলতানের সঙ্গে দেখা করতে পারি?
তিনি বললেন, সুলতানের সঙ্গে দেখা করবার আগে মুসাফেরকে পথের ক্লান্তি দূর করবার জন্য তিন রাত্রি বিশ্রাম করতে হয়। এই আমাদের দেশের রীতি।
আমরা তিনদিন সেখানে কাটালাম। দৈনিক তিনবার আমাদের খাবার দেওয়া হতো। প্রতি ভোরে ও সন্ধ্যায় দেওয়া হতো ফল ও দুর্লভ ধরনের মিষ্টি। চতুর্থ দিনটি ছিলো শুক্রবার। আমীর এসে বললেন, নামাজের পরে আজ আপনি মসজিদের রাজকীয় চত্বরে সুলতানের দেখা পাবেন।
নামাজ শেষে আমি সুলতানের কাছে যেতে তিনি আমার সঙ্গে মোসাফাহ্ করলেন, আমি তাকে কুর্নিশ করলাম। তাঁর বাঁ পাশে আমাকে বসিয়ে তিনি সুলতান মোহাম্মদ ও আমার সফরের বৃত্তান্ত জিজ্ঞাসা করলেন। আসরের নামাজ অবধি তিনি মসজিদের মধ্যেই কাটালেন। নামাজের পর একটি কামরায় ঢুকে তিনি পোশাক পরিবর্তন করে এলেন। সাধারণতঃ ধর্মশাস্ত্রজ্ঞ ব্যক্তিরা যে ধরনের পোশাক পরেন, শুক্রবার মসজিদে আসতে সুলতান সে রকম পোশাক পরেন। পোশাক পরিবর্তন করে তিনি তার রাজকীয় পোশাক রেশমী ও সূতী আলখেল্লা পরিধান করলেন। মসজিদের বাইরে এসে তিনি প্রবেশদ্বারে দেখলেন হাতি ও ঘোড়া তৈরি রয়েছে। সুলতান যখন হাতিতে সওয়ার হন। তখন তাঁর সঙ্গীরা যান ঘোড়ায়, আর সুলতান মোড়ায় চড়লে বাকি সবাই হাতিতে। এ ক্ষেত্রে তিনি সওয়ার হলেন একটি হাতির পিঠে। কাজেই আমরা ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে। তার সঙ্গে দরবার-গৃহে হাজির হলাম। আমরা নির্দিষ্ট স্থানে (যেখানে বর্শা রয়েছে) গিয়ে ঘোড়া থেকে নামলাম, কিন্তু সুলতান হাতির পিঠেই প্রাসাদের যেখানে দরবার বসেছে সেখানে নিজের আসনের সামনে উপস্থিত হলেন। কয়েকজন পুরুষ গায়ক এসে তাঁর সামনে গান গেয়ে গেলো। তারপর আনা হলো কয়েকটি ঘোড়া। রেশমী কাপড়ে সে সব ঘোড়র পিঠ আচ্ছাদিত, পায়ে সোনার ঘুঙুর, গলায় জরির কাজ করা রেশমী কাপড়। এ ঘোড়াগুলো তার সামনে এসে নৃত্য করতে লাগলো। যদিও এ জিনিস আমি দিল্লীর শাহী-দরবারে দেখেছিলাম, তবু ঘোড়ার নৃত্য দেখে আশ্চর্য হলাম।
সুমাত্রার শাহী-দরবারে পনেরো দিন কাটালাম। এদিকে চীন-যাত্রার মৌসুম তখন এসে গেছে। কারণ, বছরের যে-কোন সময়ে চীনে যাত্রা করা সম্ভব নয়। কাজেই সুলতানের কাছে যাত্রা শুরু করার অনুমতি চাইতে হলো। তিনি আমাদের জন্য একটি জাঙ্ক বা চীন দেশীয় নৌকার সাজসরঞ্জাম ঠিক করে যাত্রার উপযোগী করে দিলেন এবং পথের জন্য খাদ্যদ্রব্য ও অনেক উপহার দিলেন। খোদা যেন তাকে এর প্রতিদান দেন। সুলতানের একজন পারিষদ এসে উপহার দ্রব্য জাঙ্কে পৌঁছে দিয়ে গেলেন। আমরা একাধিক্রমে একুশ রাত তার রাজ্যের উপকূল ঘেঁষে নৌকা চালিয়ে এলাম। একুশ দিন চলার পর বিধর্মীদের দেশ মূল-জাওয়া এসে পৌঁছলাম। এ দেশটির দৈর্ঘ্য দু’মাসের পথ। এখানে প্রচুর সুগন্ধি মসল্লাপাতি, কাকুলি ও কামারি নামক উক্তৃষ্ট মুসাব্বর পাওয়া যায়। কাকুলা ও কামারা এ রাজ্যের দুটি অংশ। এ নামানুসারে মুসাব্বরের নাম কাকুলি ও কামারি হয়েছে। সুমাত্রার সুলতানের রাজ্যে শুধুমাত্র ধূপ, কর্পূর, সামান্য পরিমাণ লবণ, ও ভারতীয় মুসাব্বর পাওয়া যায়; কিন্তু এ সব দ্রব্যের বেশীর ভাগই পাওয়া যায় মূল-জাওয়ায়।
কাকুলা বন্দরে পৌঁছে আমরা দেখলাম, কতকগুলো জাঙ্ক জলদস্যুদের উপর অভিযান চালাবার জন্যে এবং অপর যে জাঙ্কই তাদের প্রতিরোধ করতে আসুক তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধাতে তৈরি হয়ে আছে।
আমরা বন্দরে নেমে গেলাম। সুন্দর পাথরের দেওয়াল দিয়ে ঘেরা কাকুলা একটা চমৎকার শহর। দেওয়ালটি এতো চওড়া যে, তিনটি হাতি উপর দিয়ে পাশাপাশি যেতে পারে। শহরের বাইরে প্রথম যা আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করলো ভারবাহী হাতি ভারতীয় মুসাব্বর বয়ে নিয়ে চলেছে। এখানকার লোকেরা বাড়ীতে মুসাব্বর জ্বালায়। আমাদের। জ্বালানী কাঠের যা দাম এদের জন্য মুসাব্বরের দামও তাই, অনেক সময় তারও কম। অবিশ্যি তাদের নিজেদের ভেতর বেচাকেনার সময়ই দর সস্তা। বাইরের লোকের কাছে এক বোঝা মুসাব্বরের পরিবর্তে এরা এক থান সূতী কাপড় আদায় করে। কারণ, সূতী কাপড় এ দেশে রেশমী কাপড়ের চেয়েও মূল্যবান। এদেশে হাতির প্রাচুর্য খুব বেশী। এখানকার লোকেরা হাতির পিঠে আরোহণ করে এবং মালামাল বহনের জন্যও ব্যবহার করে। প্রত্যেক লোককেই দেখা যায় যে, তার হাতীগুলো বাড়ীর দরজায় বেঁধে রেখেছে। প্রত্যেক দোকানদার অবধি বাড়ী ফিরে যাওয়া বা মালামাল আনয়নের জন্য নিজের কাছে হাতি রাখে। চীনে এ কালে (উত্তর চীনে) হাতি সম্বন্ধে একই ব্যবস্থা।
মূল-জাওয়ার সুলতান একজন বিধর্মী। তাকে দেখলাম প্রাসাদের বাইরে একটি বেদীর পাশে মাটিতে বসে আছেন। তার সঙ্গে ছিলেন রাজকর্মচারিগণ। সৈন্যরা তাঁর সামনে দিয়ে কুচকাওয়াজ করে যাচ্ছিল। সবাই পদাতিক সৈন্য, কারণ একমাত্র সুলতানের নিজস্ব ঘোড়া ছাড়া আর কোনো ঘোড়া নেই। আরোহণ ও যুদ্ধের জন্য হাতি ছাড়া অন্য কোন জানোয়ারও সেখানেই নেই। সুলতানকে আমার কথা বলায় তিনি আমাকে ডেকে পাঠান। আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম, যারা সত্য ধর্ম পালন করে তাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক। তারা আসোলাম’ শব্দটি ছাড়া আর কিছুই বুঝতে পারলো না। সুলতান আমাকে অভ্যর্থনা জানালেন এবং আমার বসবার জন্য একখানা কাপড় এনে বিছিয়ে দিতে বললেন। আমি তখন দোভাষীকে বললাম, সুলতান নিজে মাটিতে বসলে আমি কি করে কাপড়ের উপর বসতে পারি?
দোভাষী বললেন, এটা তার অভ্যেস।….
আপনি মেহমান এবং প্রসিদ্ধ একজন সুলতানের কাছ থেকে এসেছেন বলে ইনি আপনাকে সম্মান দেখাচ্ছেন।
তখন আমি বসলাম। ভারত সুলতানের কথা সংক্ষেপে জিজ্ঞেস করে তিনি বললেন, আপনি একজন মেহমান হিসাবে তিন দিন আমাদের সঙ্গে থাকবেন। পরে আপনি চলে যেতে পারেন।
সুলতান যখন দরবারে বসেছেন তখন তার সামনে একজন লোক ছুরি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ছুরিখানা অনেকটা পুস্তক বাধাইকারীদের যন্ত্রের মতো। নিজের ঘাড়ের উপর সেই ছুরিখানা রেখে সে অবোধ্য ভাষায় লম্বা একটি বক্তৃতা দিলো। তারপর দু’হাতে শক্ত করে সে ছুরি ধরে নিজের গলা কেটে ফেললো। ছুরিখানা এত তীক্ষ্ণ ধার ছিলো এবং সে তা ধরে ছিল এমন শক্তভাবে যে তার মাথাটা কেটে মাটিতে পড়ে গেলো। তার এ কাণ্ড দেখে আমি অবাক হয়ে রইলাম। সুলতান আমাকে বললেন, আপনাদের দেশে এমন কেউ করে কি?
আমি বললাম, এ ধরণের ব্যাপার জীবনে আমি দেখিনি।
তিনি হেসে বললেন, এরা আমাদের গোলাম। আমাদের প্রতি অনুরাগ দেখানোর জন্য এরা এভাবে আত্মাহুতি দেয়।
লাশটাকে সরিয়ে নিয়ে তিনি পোড়াবার হুকুম দিলেন। সুলতানের প্রতিনিধি, রাজকর্মচারী, সৈন্য ও নাগরিক সবাই লাশটির সত্তারের জন্য চলে গেলো। সুলতান মৃত ব্যক্তির স্ত্রী, পুত্রকন্যা ও ভ্রাতাদের জন্য পর্যাপ্ত ভাতার ব্যবস্থা করে দিলেন। এ ঘটনার পর মৃত ব্যক্তির আত্মীয়দের সম্মান অনেক বেড়ে গেলো।
সেদিন দরবারে উপস্থিত একজন লোক আমাকে বলেছিলো, ঐ মৃত ব্যক্তি লম্বা বক্তৃতা দিয়ে ঘোষণা করছিলো, সে সুলতানকে ভালবাসে, সুলতানের ভালবাসার জন্য সে নিজের জান কোরবান করছে। কারণ, তার পিতাও সুলতানের পিতাকে ভালবেসে নিজের জান কোরবান করে গেছেন এবং পিতামহ কোরবান করেছেন সুলতানের পিতামহের ভালবাসায়।
অতঃপর আমি দরবার থেকে চলে এলাম। সুলতান আমাকে তিন দিনের উপযোগী দ্রব্যসম্ভার পাঠিয়ে দিলেন।
সদ্রপথে পুনরায় যাত্রা শুরু করে চৌত্রিশ দিন পর আমরা নিশ্চল এক সমুদ্রে এসে পড়লাম। এ সমুদ্রের পানির রং লালচে ধরণের। লোকে বলে, নিকটস্থ একটি জায়গার মাটির রংয়ের দরুণ পানির রং এমন হয়েছে। সমুদ্রের বুকে হাওয়া বাতাস, ঢেউ বা কোনো রকম সচলতার কোনো চিহ্ন নেই, যদিও এর বিস্তৃতি বিশাল। এ কারণেই প্রতিটি চীন দেশীয় জাঙ্কের সঙ্গে তিনটি করে নৌকা থাকে। আগেই তা উল্লেখ করা হয়েছে। তারা জাঙ্ক টেনে নেয়, দাঁড় বেয়ে এগিয়ে নেয়। তাছাড়াও প্রত্যেক জাঙ্কে মাস্তুলের মতো বড় বিশখানা করে দাঁড় আছে। প্রায় ত্রিশজন করে দাড়ী। দু’লাইনে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে প্রতিটি দাঁড় টানে। দাঁড়গুলোর সঙ্গে কাছির মতো মোটা দু’গাছি দড়ি বাঁধা থাকে। একদল দড়িটি নিজেদের দিকে টেনে ছেড়ে দেয়, তখন আবার অপর দল সেটা নিজেদের দিকে টানে। এ রকম করতে-করতে তারা গানের সুরে সাধারণতঃ লা-লা শব্দ করে। এ সমুদ্রে আমাদের সাইত্রিশ দিন কাটে। আমাদের এ অগ্রগতিতে নাবিকরা বিস্মিত হয়ে গেলো। কারণ, এ সমুদ্র পার হতে সাধারণতঃ চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ দিন পর্যন্ত লাগে। বিশেষ অনুকুল অবস্থার মধ্যেও সবচেয়ে কম চব্বিশ দিন সময়। এ সমুদ্রে কাটে।
অতঃপর আমরা তাবালিসির রাজ্যে এসে পৌঁছলাম। তাবালিসি এখানকার রাজার নাম। এ দেশটি বিশাল। এ দেশের রাজা চীনের রাজার বিরোধী বা প্রতিদ্বন্দ্বী। রাজার অনেকগুলো জাঙ্ক আছে। চীনেরা কতগুলো শর্ত মেনে না-নেওয়া পর্যন্ত তিনি তাদের সঙ্গে এ সব জাঙ্কের সাহায্যে যুদ্ধ করেন। এখানকার বাসিন্দারা পৌত্তলিক। দেখতে তারা সুশ্রী এবং শরীরের গঠন তুর্কীদের মতো। তাদের গাত্রবর্ণ অধিকাংশ ক্ষেত্রে লালচে। এরা যেমন সাহসী, তেমন যুদ্ধে পটু। মেয়েরা অশ্বারোহণ করে এবং তীরন্দাজ হিসেবেও তারা পটিয়সি। যুদ্ধক্ষেত্রেও তারা পুরুষের মতোই সমান দক্ষ। কায়লুকারী শহরের এক বন্দরে আমরা বাস করেছি। তাদের যে সব সুন্দর ও বড় শহর আছে তার। ভেতর এটি একটি। পূর্বে এ শহরে তাদের রাজপুত্র বাস করতেন। বন্দরে এসে আমরা নোঙ্গর কতেই সৈন্যরা এগিয়ে এলো। আমাদের কাপ্তেন রাজপুত্রের জন্য কিছু উপহার। দ্রব্য নিয়ে তাদের কাছে গেলেন। রাজপুত্রের কথা জিজ্ঞেস করায় সৈন্যরা জানালো, রাজা তাকে অন্য একটি জেলার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেছেন এবং এখানকার শাসনভার দিয়েছেন তার কন্যা উরদূজার উপর।
আমরা যেদিন কায়লুকারী পৌঁছি তার পরদিন এ রাজকুমারী তাঁর রীতি অনুযায়ী। জাহাজের কাপ্তেন, কেরানী, সওদাগর, আড়কাঠি, পদাতিকদের সেনাপতি ও তীরন্দাজদের সেনাপতিকে এক ভোজসভায় আমন্ত্রণ করলেন। কানে তাঁর সঙ্গে আমাকে নিয়ে যেতে চাইলেন। আমি তাতে স্বীকৃত হলাম না। কারণ, বিধর্মীদের খাদ্য গ্রহণ আমাদের জন্য ধর্মানুমোদিত নয়। তারা রাজকুমারীর কাছে যেতেই, কেউ অনুপস্থিত আছে কিনা তিনি জানতে চাইলেন। কাপ্তেন বললেন, একজন লোক শুধু আসেনি। তিনি একজন বখশী (তাদের ভাষায় কাজী) এবং তিনি আপনার খাদ্য গ্রহণ করেন না।
একথা শুনে তিনি আমাকে ডাকতে হুকুম করলেন। জাহাজের লোকজনসহ তার রক্ষীরা এসে আমাকে রাজকুমারীর সঙ্গে দেখা করার অনুরোধ জানালো। আমি গিয়ে। দেখলাম তিনি পূর্ণ রাজকীয় শানশওকতের সঙ্গে বসে আছেন। তাঁকে অভিবাদন জানাতে তুকী ভাষায় তিনি জবাব দিলেন এবং আমি কোন দেশ থেকে এসেছি জিজ্ঞেস করলেন। আমি বললাম, ভারত থেকে এসেছি।
তিনি বললেন, মরিচের দেশ?
হ্যাঁ।
অতঃপর তিনি এদেশ-ওদেশের নানা ব্যাপার জিজ্ঞাসা করলেন। আমার জবাব শুনে তিনি বললেন, আমি নিশ্চয়ই একবার ভারত অভিযান করে জয় করবো। সে দেশের ধনসম্পদ ও সৈন্যবল আমাকে আকর্ষণ করে।
আমি বললাম, হ্যাঁ, তাই করুন।
তিনি আমাকে পোশাক, দুটি হাতি বোঝাই চাউল, দুইটি মহিষ, দশটি ভেড়া, চার পাউন্ড সিরাপ, চারটি মর্তমান (বড় বৈয়াম) দিতে হুকুম করলেন। বৈয়ামগুলিতে আদা, মরিচ, লেবু, ও আম অতি ছিলো।
কাপ্তেন বললেন, এ যুবরাজ্ঞীর সেনাদলে এমন সব নারী, পরিচারিকা ও ক্রীতদাসী আছে যারা পুরুষের মতোই যুদ্ধ করতে পারে। তিনি নিজে তার নারী-পুরুষ সৈন্যদের সঙ্গে অভিযানে যান এবং বিশেষ বিশেষ যোদ্ধাদের সঙ্গে একক যুদ্ধ করেন। কাপ্তেন একথাও বললেন, কোন এক যুদ্ধে তাঁর অনেক সৈন্য মারা যায়, তার ফলে তারা পরাজয়। বরণ করতে বাধ্য হয়। কিন্তু তখন তিনি নিজে শত্রু সৈন্য ভেদ করে অগ্রসর হন এবং যে রাজার সঙ্গে যুদ্ধ হচ্ছে তার সম্মুখে গিয়ে তাকে মারাত্মকভাবে বর্শা দ্বারা আঘাত করেন। ফলে সেখানেই তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন এবং তার সৈন্যদল পলায়ন করে। যুবরাজ্ঞী তখন বর্শায় বিদ্ধ করে রাজার মস্তকটি নিয়ে আসেন। অতঃপর রাজার আত্মীয়েরা বহু অর্থের বিনিময়ে সে মস্তকটি ফিরিয়ে নেয়। যখন তিনি ফিরে এলেন তখন তাঁর পিতা তাঁকে এ-ঘরের শাসনভার দেন। আগে এর শাসনভার ন্যস্ত ছিল তাঁর ভাইয়ের উপর। কাপ্তেন আরো বললেন, অনেক যুবরাজ তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব নিয়ে এসেছিলেন; কিন্তু তিনি বলেছেন, একক যুদ্ধে যিনি তাকে পরাজিত করতে পারবেন তিনি তাকে ছাড়া আর কাউকেই বিয়ে করতে রাজী নন। যুদ্ধে পরাজিত হবার ভয়ে কেউ আর এ প্রস্তাব নিয়ে অগ্রসর হয়নি।
অতঃপর তাবালিসির দেশ ছেড়ে অনুকূল বাতাসে দ্রুত পাল খাঁটিয়ে আমরা সতেরো দিন পরে চীন দেশে গিয়ে পৌঁছলাম।
***
টিকা
পরিচ্ছেদ ১০
১। বারানাকর স্থানটি ইনে বতুতা কর্তৃক এর অধিবাসীদের যে বিবরণ দেওয়া হয়েছে সে অনুসারে পূর্বে আন্দামান বা নিকোবর দ্বীপগুলির অন্যতম বলে স্থির করা হয়। ইউল দেখিয়েছেন এটাকে বর্ষার অন্তর্গত আরাকানের প্রধান ভূমিতে অবস্থিত নিগ্রেস দ্বীপের নিকটবর্তী স্থান বলে। কিন্তু ইব্নে বতুতার গ্রন্থে দেখা যাচ্ছে যে এটা কোনো দেশের নাম নয়, বরঞ্চ জাতির নাম (ক্যাথে, ৪র্থ খণ্ড, ৯২; মার্কোপলো ২য় খণ্ড, ৩০৯-১২)।
২। জাওয়া নামটি সাধারণতঃ প্রয়োগ করা হয়েছে মালয়ের ব্যাপারে। জাওয়া (ক্ষুদ্র) হচ্ছে সুমাত্রা, এবং জাওয়া (বৃহত্তর) হচ্ছে খাশ জাওয়া দ্বীপ এখন সে দ্বীপটিকে জাভা বলা হয়। সুমাত্রায় ইসলামের পরিবর্তন হয় ক্রমে ক্রমে দক্ষিণ ভারতের সওদাগর এবং ধর্মপ্রচারকগণ কর্তৃক তেরো শতাব্দীতে। সেই একই শতাব্দীতে শেষ যুগ থেকে দ্বীপটিতে শুরু হয় মুসলিম শাসন- সম্ভবতঃ সুমাত্রা শহর প্রতিষ্ঠার কিছু বছর আগে। আল-মালিক আজ-জহির পদবী গ্রহণ করেন বিস্নি মুসলিম শাসক।
৩। কাঁঠাল গাছ সম্বন্ধে ইউল এবং বার্ণেল, হসন-জসন দ্রষ্টব্য।
৪। জামুন হচ্ছে এক প্রকার ক্ষুদ্রাকৃতি ফল। দেখতে জলপাইর মতো, কিন্তু মিষ্টি। এ সম্বন্ধে ইব্নে বতুতা প্রথম দিকের অধ্যায়ে বর্ণনা করেছেন। এটা জাম্ব অথবা রোজ-আপেলের মতো নয়। উভয়টি সম্বন্ধে হস-জসন দেখুন।
৫। কিছু রকমের সরকারী অফিস সম্বন্ধে ‘গৃহশ্রেণী’ বলে যে শব্দ অনুদিত হয়েছে সে সম্বন্ধে আমার সন্দেহ রয়েছে। সঠিক ব্যাকরণ অনুসারে সারহা’ শব্দটি ‘গৃহশ্রেণী’ সম্পর্কে ব্যবহৃত হতে পারে (যেমন অনুবাদে হয়েছে)। কিন্তু খুব সম্ভব এটা বন্দরের নাম।
৬। মূল-জাওয়া সাধারণতঃ জাভা দ্বীপকে মনে করা হয়েছে-কিন্তু ইউল বিভিন্ন যুক্তি সহকারে এটাকে মালয় উপদ্বীপ বলে সাব্যস্ত করেছেন। এই মত অনুসারে কাকুল বন্দর এবং শহর মালয় উপদ্বীপের পূর্ব সদ্র উপকূলে অবস্থিত বলে ধরতে হয় এবং সেটা কেলান্টানের নিকটবর্তী।
কামারা নিশ্চিত ভাবেই খামের, ক্যাম্বোডিয়ার পুরাতন নাম। এটা সিয়াম উপসাগরের বিপরীত দিকে অবস্থিত। (ক্যাথে, ৪র্থ খণ্ড, ১৫৫)।
৭। এই কিছুটা আক্রমণমূলক বাক্য ছিল অমুসলিমদের সালাম জানাবার পদ্ধতি (cf. ২১৪ পৃঃ)-আচ্ছালাম আলায়কুম (আপনার প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক) কথাটি কেবল মুসলিমদের প্রতি প্রযোজ্য। যদিও ইব্নে বতুতাকে মাঝে-মাঝে এ নিয়ম ভাঙতে দেখা যাছে।
৮। স্থির সমুদ্রকে’ এ স্থানে ইব্নে বতুতা আরব-পার্শিয়ান নাম ‘আল-বাহার আল্-কাহল নামে অভিহিত করেছেন। অন্য সমসাময়িক লেখকগণও বিভিন্ন নামে এর উল্লেখ করেছেন। (যেমন কালো সমুদ্র, অন্ধকার সমুদ্র) এটা সর্ব পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত। সেজন্য এটা মনে হয় আমাদের চীনে সমুদ্র বা কতকগুলি নিকটবর্তী সমুদ্রের সঙ্গে সম্পর্কে রয়েছে। ইব্নে বতুতার বর্ণনায় কথাগুলি থেকে দেখা যায় যে এটা নিয়মিত পথের উপরে ছিল।
৯। রাজা তাওয়ালিসি এবং তার কেলুকারী নগরের পরিচয় নির্ধারণে ইব্নে বতুতার ব্যাখ্যাকারীগণ তাদের সমস্ত বিচক্ষণতার ব্যবহার করেছেন। সেলিবিস, তকিন, ক্যাম্বোডিয়া, কোচিন-চীন, কোয়ানসি প্রদেশ, ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জ, সুলু দ্বীপমালা প্রভৃতি অনেক স্থানের কথা বলা হয়েছে। ইউল অন্যগুলি অপেক্ষা শেষ সিদ্ধান্তটি বেশী সম্ভব বলে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু এ কথাও তার আগে স্বীকার করেছেন “কিঞ্চিৎ সন্দেহে ভরে- তাওয়ালিসির ব্যাপারে আলাসের। সে অংশে আমাদের খোঁজ নিতে হবে যেটা পরলোকগত কাপ্তেন গালিভারের সামুদ্রিক সার্ভের মধ্যে রয়েছে।” বর্ণনার বিস্ময়কর বিষয় যোদ্ধা রাজকুমারীর অস্তিত্ব নয়- সেটা হচ্ছে তার তুর্কী নাম (ইব্নে বতুতা ইতিপূর্বেই তার নাম দিয়েছেন সুলতান উজবেক ধানের চতুর্থা রাণী রূপে।) এবং তুর্কী ভাষা। ডাক্তার ভন মাজিক অনুসরণে ইউল বলছেন যে সেই বীরঙ্গনা নারীর পরাক্রমের কাহিনী হয়তো কেদখানের শক্তিশালিনী কন্যা আইজাকুকের গল্প থেকে গ্রহণ করা হয়েছে। এ কাহিনী হয়তো ইব্নে বতুতা শুনেছেন সমুদ্রচারী নাবিকদের কাছে থেকে। আইজাকুক প্রকৃতপক্ষে তুর্কী নাম। খুব সম্ভব ইব্নে বতুতা এটা একই উচ্চারণমূলক উরদুজা। নামের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন। কেননা বিদেশী নামের ব্যাপারে তার স্মৃতিশক্তি খুব ভালো ছিল না। এ ভাবে কেকারী প্রকৃতপক্ষে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দরের নাম ছিল (পরিচ্ছেদ ৯, টীকা ৩ দ্রষ্টব্য)- এটাকে সম্ভবতঃ ইব্নে বতুতা রাজা “তেয়ালিসির বন্দরের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেছেন। (ক্যোথে, ৪র্থ খণ্ড, ১৫৭-৬০; মার্কোপলো, ২য় খণ্ড, ৪৬৫; জি, ফেরাও, টেস্ট রিলেটিক্স এ লা একস্ট্রীম ওরিয়েন্ট (৪৩১-৩)>।