১০
ঘরে এসে ঢোকার পর হেলমুট বলল, ‘মে আই ক্লোজ দ্য ডোর?’ তারপর নিজেই গিয়ে ঘরের দরজাটা বন্ধ করে দিল।
আমার বুকের ভিতরে ঢিপ ঢিপ। বিরাট লম্বা লোক—ফেলুদার চেয়েও এক ইঞ্চি বেশি। তার উপর জার্মান। এ ছাড়া শুনেছি হিপিরা নানারকম নেশা করে। আর বিদেশিদের সঙ্গে বন্দুক পিস্তল গোছের জিনিস থাকাটা কিছুই আশ্চর্য নয়। যদি কোনও বদ মতলবে এসে থাকে লোকটা?
ফেলুদা হেলমুটের দিকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিল।
‘কোল্ড ড্রিঙ্ক বা চা-কফি কিছু চলবে?’
‘নো, থ্যাঙ্কস।’
হেলমুট কাঁধ থেকে ক্যামেরা নামিয়ে বিছানার উপর রেখে বগলদাবা করা আগ্ফা কোম্পানির একটা বড় লাল খামের ভিতর হাত ঢুকিয়ে বলল, ‘তোমাদের কয়েকটা ছবি দেখাতে এনেছি। এগুলো কালার নেগেটিভে তোলা। এখানে প্রিন্ট হয় না, তাই দার্জিলিং-এ পাঠিয়েছিলাম। আজই সকালে এনলার্জমেন্টগুলো হয়ে এসেছে।’
হেলমুট একটা ছবি বার করল।
‘এটা নর্থ সিকিম হাইওয়েতে তোলা। অ্যাক্সিডেন্টেটা যেখানে হয়, সেখান থেকে রাস্তাটা পাহাড়ের গা দিয়ে গা দিয়ে একেবারে উল্টোদিকের পাহাড়ে চলে গেছে। সরু ফিতের মতো রাস্তাটাকে অ্যাক্সিডেন্টের জায়গা থেকে দেখা যায়। আমি ছবিটা তুলেছি ওই উল্টোদিকের রাস্তা থেকেই। গ্রাম, নদী আর দশ কিলোমিটার দূরে সিকিমের খানিকটা অংশ মিলিয়ে একটা চমৎকার ভিউ পাওয়া যায় ওখান থেকে। কথা ছিল শেলভাঙ্কার গুম্ফা যাবার পথে আমাকে ওখান থেকে তুলে নিয়ে যাবে। কিন্তু তার গাড়ি আমার কাছ অবধি পৌঁছায়নি। ছবি তুলতে তুলতে একটা শব্দ পেয়ে সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে আমি এই দৃশ্যটা পাই, যেটা আমি আমার টেলি-ফটো লেন্স দিয়ে তুলে রাখি।
আশ্চর্য ছবি। এত দূর থেকে তোলা সত্ত্বেও মোটামুটি সবই বেশ বোঝা যাচ্ছে। একটা জিপ পাহাড়ের গা দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে। তার কিছু উপরে রাস্তায় একটা লোক দাঁড়িয়ে পড়ন্ত জিপটার দিকে দেখছে। এটা বোধহয় ড্রাইভারটা। মুখ চেনার উপায় নেই, কিন্তু সে যে নীল রঙের জামা পরা রয়েছে সেটা বোঝা যাচ্ছে। এ ছাড়া আর কোনও লোক ছবিটাতে নেই।
এবার হেলমুট আরেকটা ছবি বার করল। এটা আগেরটার কয়েক সেকেন্ড পরে তোলা। এটা আরও অদ্ভুত ছবি। এটার তলার দিকে দেখা যাচ্ছে জিপটা পাহাড়ের গায়ে ভাঙা অবস্থায় কাত হয়ে পড়ে আছে। আর ডান পাশে কিছু উপরে একটা ঝোপের পিছনে একটা কালো স্যুটপরা লোকের খানিকটা অংশ মাটিতে শোওয়া অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। ছবির উপর দিকে রাস্তায় ড্রাইভারটা। এবার কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের দিকে পিছন করে মাথা উঁচু করে উপর দিকে দেখছে। ছবির একেবারে উপরের অংশে পাহাড়ের গায়ে এবার আরেকজন নতুন লোককে দেখা যাচ্ছে; তারও মুখ চেনার কোনও উপায় নেই, কিন্তু গায়ের জামার রং লালচে। সে একটা বড় পাথরের পিছনে উপুড় হয়ে রয়েছে।
তৃতীয় ছবিতে লাল পোশাক পরা লোকটাকে আর দেখা যাচ্ছে না; নীল জামা পরা লোকটা দৌড়ানোর ভঙ্গিতে ছবি থেকে প্রায় বেরিয়ে চলে গেছে; গাড়ি আর কালো স্যুটপরা লোকটা যেমন ছিল তেমনই আছে। আর পাহাড়ের গায়ে যে পাথরটা ছিল, সেটা পড়ে আছে রাস্তার উপর, একটা গাছের পাশে।
‘রিমার্কেবল’, ফেলুদা বলে উঠল, ‘অদ্ভুত ছবি। এ রকম ছবি আমি কমই দেখেছি।’
‘এ রকম সুযোগও কমই পাওয়া যায়’, হেলমুট বলল।
‘তুমি ছবিগুলো তোলার পর কী করলে?’
‘গ্যাংটকে ফিরে এলাম। হেঁটেই গিয়েছিলাম—হেঁটেই ফিরলাম। অ্যাক্সিডেন্টের জায়গায় পৌঁছানোর আগেই শেলভাঙ্কারকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি গিয়ে শুধু পাথর আর ভাঙা জিপ দেখেছি। গ্যাংটকে ঢুকতেই অ্যাক্সিডেন্টের খবর পেয়েছি, আর পেয়েই সোজা হাসপাতালে চলে গেছি। আমি যাবার পরেও শেলভাঙ্কার ঘন্টা দু’-এক বেঁচে ছিলেন।’
‘তোমার ছবি তোলার ব্যাপারটা তুমি কাউকে বলোনি?’
‘বলে কী লাভ? যতক্ষণ না সে-ছবি প্রিন্ট হয়ে আসছে, ততক্ষণ তো সেটাকে প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করা যায় না। মুখের কথা কে বিশ্বাস করবে! অথচ আমি সেই মুহূর্ত থেকেই জানি ঘটনাটা কীভাবে ঘটেছিল, জানি যে জিনিসটা অ্যাক্সিডেন্ট নয়, খুন। আরও কাছ থেকে তুললে অবিশ্যি খুনির চেহারাটাও বোঝা যেত। কিন্তু বুঝতেই পারছ সেটা সম্ভব ছিল না।’
ফেলুদা ম্যাগনিফাইং গ্লাস দিয়ে ছবিগুলো দেখতে দেখতে বলল, ‘ওই লাল পোশাক পরা লোকটা কি তা হলে বীরেন্দ্র?’
‘ইম্পসিবল।’ দৃঢ় গলায় বলে উঠল হেলমুট।
আমরা দুজনেই রীতিমতো অবাক হয়ে তার দিকে চাইলাম।
‘মানে?’ ফেলুদা বলল। ‘তুমি অত শিওর হচ্ছ কী করে?’
‘কারণ আমিই হচ্ছি বীরেন্দ্র শেলভাঙ্কার।’
ফেলুদার চোখ ছানাবড়া হতে এই প্রথম দেখলাম।
‘তুমি বীরেন্দ্র মানে? তোমার চুল কটা, তোমার চোখ নীল, তোমার ইংরিজিতে জার্মান টান…’
‘ভেরি সিম্পল।’ হেলমুট চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ল। ‘আমার বাবা দু’ বার বিয়ে করেন। আমি প্রথম স্ত্রীর সন্তান। আমার মা ছিলেন জার্মান। বাবা যখন হাইডেলবার্গে ছাত্র ছিলেন, তখনই আলাপ, আর বিদেশে থাকতেই বাবা বিয়ে করেন। মা-র নাম ছিল হেল্গা। বিয়ের আগের পদবি ছিল উঙ্গার। আমি যখন ভারতবর্ষ ছেড়ে জার্মানি গিয়ে সেট্ল করি, তখন বীরেন্দ্র নামটা ছেড়ে হেলমুট নামটা নিই, আর মা-র পদবিটা নিই।’
আমার মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। সত্যিই তো—জার্মান স্ত্রী হলে ছেলের চেহারা সাহেবদের মতো হওয়া কিছুই আশ্চর্য নয়।
‘বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে কেন?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
‘মা মারা যাবার পাঁচ বছর পর বাবা যখন দ্বিতীয়বার বিয়ে করলেন, তখন মনটা ভেঙে গেল। মাকে আমি ভীষণ ভালবাসতাম। বাবার উপরেও টান ছিল, কিন্তু ঘটনাটার পর মনটা কেমন যেন বিগড়ে গেল। বাবার উপর একটা ঘৃণার ভাব এল মনে। তাই সব ছেড়েছুড়ে চলে গেলাম। বহু কষ্ট করে, বহুবার নিজের জীবন বিপন্ন করে অবশেষে আমি ইউরোপে পৌঁছই। গোড়ায় কয়েক বছর কুলিগিরি থেকে এমন কোনও কাজ নেই যা করিনি। প্রায় সাত-আট বছর এইভাবে কষ্টে কাটে। তারপর ছবি তুলতে শিখি। ভাল ফটোগ্রাফার হিসাবে নামও হয়। অনেক পত্রিকায় আমার তোলা ইউরোপের অনেক দেশের ছবি ছাপা হয়। বছর চারেক আগে ফ্লোরেন্সে ছবি তুলছিলাম, সেখানে হঠাৎ বাবার এক বন্ধুর সামনে পড়ে যাই। তিনি আমাকে চিনে ফেলেন, আর তিনিই বাবাকে আমার সম্বন্ধে লিখে জানান। তারপর বাবা ডিটেকটিভ লাগান আমাকে খুঁজে বার করার জন্য। সেই থেকে দাড়ি রাখতে শুরু করি, আর আমার চোখের মণির রংটাও বদলে ফেলি।’
‘কনট্যাকট লেন্স?’ ফেলুদা বলে উঠল।
হেলমুট একটু হেসে তার দুই চোখের ভিতর আঙুল ঢুকিয়ে দুটো পাতলা লেন্স খুলে বার করে আমাদের দিকে তাকাল। অবাক হয়ে দেখলাম যে তার চোখ আমাদেরই মতো কালো হয়ে গেছে। পরমুহূর্তেই আবার লেন্স দুটো পরে নিয়ে হেলমুট বলে চলল—
‘বছর খানেক আগে এক হিপির দলের সঙ্গে ভিড়ে ভারতবর্ষে আসি। দেশের উপর থেকে টান আমার কোনওদিনও যায়নি। আমার পিছনে তখনও লোক লেগে ছিল। বাবা অনেক পয়সা খরচ করেছেন এই খোঁজার ব্যাপারে। কাটমাণ্ডুতে গিয়ে একটা মনাস্টেরিতে ছিলাম। যখন দেখলাম সেখানেও পিছনে টিকটিকি ঘুরছে, তখন সিকিমে চলে এলাম।’
ফেলুদা বলল, ‘তোমাকে ফিরে পেয়ে তোমার বাবা খুশি হননি?’
‘আমাকে চিনতেই পারেননি! আমি আগের চেয়ে রোগা হয়ে গেছি অনেক। তার উপরে আমার লম্বা চুল, আমার গোঁফ-দাড়ি, আমার চোখের নীল রং—এই সব কারণেই বোধহয় তিনি নিজের ছেলেকে চিনতেই পারলেন না।। আমার কাছে বসে তিনি বীরেন্দ্র সম্বন্ধে আক্ষেপ প্রকাশ করলেন। ভারতবর্ষে ফিরে আসার আগেই বাবার উপর থেকে আমার বিরূপ ভাবটা অনেকটা চলে গিয়েছিল; বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ অনেক জিনিস মেনে নিতে শেখে। কিন্তু যখন দেখলাম তিনি আমাকে চিনলেন না, তখন আর নিজের পরিচয়টা দিলাম না। শেষ পর্যন্ত হয়তো দিতাম, কিন্তু তার আর সুযোগ হল কই?’
‘খুনি কে, এ-সম্বন্ধে তোমার কোনও ধারণা আছে?’
‘ফ্র্যাঙ্কলি বলব?’
‘নিশ্চয়ই।’
‘আমার মতে ডক্টর বৈদ্যকে কোনও মতেই পালাতে দেওয়া উচিত নয়।’
ফেলুদা সম্মতির ভঙ্গিতে মাথা নেড়ে প্রায় ফিসফিস করে বলল, ‘আমি এ-ব্যাপারে তোমার সঙ্গে একমত।’
হেলমুট (নাকি বীরেন্দ্র বলা উচিত?) বলল, ‘ও তো জানে না আমিই বীরেন্দ্র, তাই ফস করে আমার সামনেই কালকে ওই নামটাই করে দিল। আর যে মুহূর্তে নামটা করল, সেই মুহূর্তেই লোকটা সম্বন্ধে আমার ধারণা সম্পূর্ণ পালটে গেল। আমার মতে লোকটা এক নম্বরের ভণ্ড শয়তান। ও-ই খুন করেছে। এবং ও-ই মূর্তিটা নিয়েছে।’
ফেলুদা বলল, ‘সেদিন শেলভাঙ্কার যখন গুম্ফাটা দেখতে যান, উনি কি একাই যান?’
‘সেটা বলতে পারি না। আমি তো অনেক সকালে বেরিয়ে পড়েছিলাম। অবিশ্যি ডক্টর বৈদ্য তাঁকে মাঝপথে থামিয়ে গাড়িতে উঠে থাকতে পারেন। সন্দেহবাতিকটা বাবার একেবারেই ছিল না। এমনিতে অত্যন্ত সরল প্রকৃতির মানুষ ছিলেন তিনি।’
ফেলুদা বিছানা ছেড়ে উঠে গম্ভীরভাবে কিছুক্ষণ পায়চারি করে বলল, ‘আমাদের সঙ্গে পেমিয়াংচি যাবে?’
হেলমুট দৃঢ়স্বরে বলল, ‘বাবাকে যে খুন করেছে, তার হাতে হাতকড়া পরানোর জন্য আমি যে-কোনও জায়গায় যেতে প্রস্তুত আছি।’
‘এখান থেকে কত দূর জানো জায়গাটা?’
‘একশো মাইলের কাছাকাছি বলে শুনেছি। হয়তো সামান্য বেশিও হতে পারে।’
‘তার মানে ছ’-সাত ঘন্টার ধাক্কা।’
‘রাস্তা খারাপ না হলে আরও তাড়াতাড়ি পৌঁছানো যেতে পারে। আমার মতে আজই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেরিয়ে পড়া উচিত।’
ফেলুদা বলল, ‘আমারও তাই মত। আমি একটা জিপের ব্যবস্থা দেখছি। জিনিসপত্র সঙ্গে বেশি না নেওয়াই ভাল।’
‘তুমি জিপ দেখো, আমি ডাকবাংলোর বুকিংটা সেরে রাখছি। বাই দ্য ওয়ে—’ হেলমুট ঘর থেকে বেরোতে গিয়ে থেমে ফেলুদার দিকে ঘুরে বলল, ‘লোকটা যে-পরিমাণে ডেঞ্জারাস বলে মনে হচ্ছে, ওর কাছে বন্দুক-টন্দুক থাকা কিছুই আশ্চর্য নয়। এদিকে আমার কাছে তো ফ্ল্যাশ-গান ছাড়া আর কিছুই নেই! তোমাদের কাছে—’
হেলমুটের কথা শেষ হওয়ার আগেই ফেলুদা তার সুটকেসের ভিতর হাত ঢুকিয়ে রিভলবারটা বার করে হেলমুটকে দেখিয়ে দিল।
‘আর এই যে আমার কার্ড।’
ফেলুদা তার ‘প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর’ লেখা ভিজিটিং কার্ডের একটা হেলমুটের দিকে এগিয়ে দিল।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, সেদিন আর কোনও জিপ ভাড়া পাওয়া গেল না। যে ক’টা ছিল, সবগুলো আমেরিকান টুরিস্টরা নিয়ে সারাদিনের জন্য রুমটেক চলে গেছে। আগামীকাল সকালের জন্য জিপের ব্যবস্থা করে বেশির ভাগ দিনটাই হেঁটে গ্যাংটক শহর দেখে কাটিয়ে দিলাম। দুপুরে বাজারের দিকটায় নিশিকান্তবাবুর সঙ্গে দেখা হল। তাঁকে পেমিয়াংচির কথা বলতে তিনি অবিশ্যি লাফিয়ে উঠলেন।
সন্ধের দিকে ভদ্রলোক একটা অদ্ভুত জিনিস এনে আমাদের দেখালেন। হাতখানেক লম্বা একটা লাঠি, তার ডগায় বাঁধা ছোট্ট একটা কাপড়ের থলি।
‘কী জিনিস বলুন তো এটা’, একগাল হেসে জিজ্ঞেস করলেন নিশিকান্তবাবু। ‘জানেন না তো? এই থলের ভিতর আছে নুন আর তামাকপাতা। পায়ে যদি জোঁক ধরে, এই থলির একটা ঘষাতেই বাবাজি খসে পড়বেন।’
ফেলুদা জিজ্ঞেস করল, ‘নাইলনের মোজা ভেদ করেও জোঁক ঢোকে নাকি?’
‘কিছুই বিশ্বাস নেই মশাই। গেঞ্জি, শার্ট আর ডবল পুলওভার ভেদ করেও বুকের রক্ত খেতে দেখেছি জোঁককে। আর মজা কী জানেন তো? ধরুন, লাইন করে একদল লোক চলেছে জোঁকের জায়গা দিয়ে। এখন, জোঁকের তো চোখ নেই—জোঁক দেখতে পায় না—মাটির ভাইব্রেশনে বুঝতে পারে কোনও প্রাণী আসছে। লাইনের মাথায় যে লোক থাকবে, তাকে জোঁক অ্যাটাক করবে না—কিন্তু তার ভাইব্রেশনে তারা সজাগ হবে। দ্বিতীয় লোকের বেলা তারা মাথা উঁচিয়ে উঠবে, আর থার্ড যিনি রয়েছেন, তাঁর আর নিস্তার নেই—তাঁকে ধরবেই।’
ঠিক হল আমরা প্রত্যেকেই একটা করে জোঁক-ছাড়ানো লাঠি সঙ্গে নিয়ে নেব।
শুতে যাবার আগে ফেলুদা বলল, দু’দিন বাদেই বুদ্ধ-পূর্ণিমা—এখানে উৎসব হবে।’
‘সে উৎসব কি আমরা দেখতে পাব?’ আমি ধরা গলায় জিজ্ঞেস করলাম।
‘জানি না। তবে তার চেয়েও অনেক বড় পুণ্য কাজ হবে যদি আমরা শেলভাঙ্কারের হত্যাকারীকে কব্জা করতে পারি।’
সারারাত আকাশ পরিষ্কার ছিল, আর আমাদের জানালা দিয়ে ত্রয়োদশীর চাঁদের আলোয় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যাচ্ছিল।
পরদিন ভোর পাঁচটায় আমি, ফেলুদা, হেলমুট আর নিশিকান্ত সরকার সামান্য জিনিসপত্র, চারটে কাগজের বাক্সে হোটেলের তৈরি দুপুরের লাঞ্চ আর চারখানা জোঁক-ছাড়ানো লাঠি নিয়ে ‘দুগ্গা’ বলে পেমিয়াংচির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়লাম।