৭
‘আপনাদের দেখিয়ে বঙ্গালি মনে হতেছে।’
ডাক্তার বৈদ্য ঠিক আমার পাশের চেয়ারটায় বসলেন।
ফেলুদা বলল, ‘ঠিকই বলেছেন।… আপনার কথা আমরা আগেই হেলমুটের কাছে শুনেছি।’
‘হেলমুট ইজ এ নাইস বয়।’
ভদ্রলোক ইংরিজি বাংলা হিন্দি তিনরকম ভাষা মিশিয়ে কথা বলে গেলেন।
‘তবে হেলমুটকে আমি বলেছি যে এদেশের একটা সংস্কারের কথা ও যেন না ভোলে। এরা বিশ্বাস করে যে যার যত বেশি ছবি তোলা হবে, তার তত বেশি আয়ু কমে যাবে। কারণ, এই যে আমি, এই আমার খানিকটা যদি অন্য কোনও বস্তুতেও থেকে থাকে, তার মানে আমার ভাইটাল ফোর্সের খানিকটাও নিশ্চয়ই সেই অন্য বস্তুর মধ্যে রয়েছে। এবং সেই পরিমাণে আমার নিজের ভাইটাল ফোর্সও নিশ্চয়ই কমে যাচ্ছে।’
‘আপনিও কি এতে বিশ্বাস করেন?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
‘করলেই বা কী?’ ডক্টর বৈদ্য হেসে বললেন। ‘হেলমুট কি আর আমার ছবি তুলতে বাদ রেখেছে? তবে কোনও জিনিস পরীক্ষা করে দেখার আগে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের প্রশ্নটা ওঠে না। এখনও অনেক জিনিস শিখতে বাকি আছে, অনেক কিছু জানতে হবে, অনেক পরীক্ষা করতে হবে।’
ফেলুদা বলল, ‘কিন্তু আপনি তো সে সব না করেই অনেক দূর অগ্রসর হয়েছেন বলে মনে হয়। শুনলাম আপনি ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন, মৃত ব্যক্তির আত্মার সঙ্গে কথাবার্তা বলতে পারেন।’
‘সব সময় না।’ বৈদ্য একটু মুচকি হাসলেন। ‘পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর অনেকটা নির্ভর করে। কিছু জিনিস খুব সহজে বলে দেওয়া যায়। যেমন—’ বৈদ্য নিশিকান্তবাবুর দিকে আঙুল দেখালেন ‘—ওই ভদ্রলোকটি কোনও কারণে অত্যন্ত দুশ্চিন্তায় ভুগছেন।’
নিশিকান্তবাবু জিভ দিয়ে ঠোঁট চাটলেন।
ফেলুদা বলল, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন। ওকে একজন অজ্ঞাত ব্যক্তি মৃত্যুভয় দেখাচ্ছেন। সেটা কে বলতে পারেন?’
ডক্টর বৈদ্য কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করলেন। তারপর চোখ খুলে জানালা দিয়ে বাইরের পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এজেন্ট।’
‘এজেন্ট?’ ফেলুদা প্রশ্ন করল।
‘হ্যাঁ, এজেন্ট। মানুষ অন্যায় করলে তার শাস্তি হবেই। অনেক সময় ভগবান নিজেই শাস্তি দেন, আবার অনেক সময় তাঁর এজেন্টরা এই কাজটা করে।’
নিশিকান্তবাবু হঠাৎ কাঁপা গলায় বলে উঠলেন, ‘দ্যাট ইজ অল। আমি আর শুনতে চাই না।’
বৈদ্য হেসে বললেন, ‘আমি জোর করে কাউকে কিছু শোনাই না। ইনি জিজ্ঞেস করলেন, তাই বললাম। স্বেচ্ছায় লব্ধ জ্ঞান ছাড়া অন্য কোনও জ্ঞানের কোনও মূল্য নেই। তবে একটা কথা বলতে চাই—বাঁচতে হলে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।’
‘কাইন্ডলি এক্সপ্লেন’, বললেন নিশিকান্তবাবু।
‘এর চেয়ে বেশি কিছু বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
চা এসে গিয়েছিল। হেলমুট নিজেই চা ঢেলে সবাইকে জিজ্ঞেস করে দুধ-চিনি মিশিয়ে আমাদের হাতে হাতে পেয়ালা তুলে দিল।
চায়ে চুমুক দিয়ে ফেলুদা বলল, ‘আপনাদের সঙ্গে তো মিস্টার শেলভাঙ্কারের আলাপ হয়েছিল।’
বৈদ্য মাথা নেড়ে বলল, ‘বড় দুঃখের ব্যাপার। আমি ওকে সতর্ক করে দিয়েছিলাম যে, ওর সময়টা ভাল যাচ্ছে না। অবিশ্যি অকস্মাৎ মৃত্যুর ব্যাপারে তো কারুর কোনও হাত নেই। দোরোম পোরোবিংচিতেত বলেইছে—
হ্রেম দোরমোং দোরজি সিংচিয়াম্
ওম্ পিরিয়ান হোতোরিবিরিচিয়াং!’
কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ বসে চা খেলাম। হেলমুট এই ফাঁকে তার টেবিলটা গোছগাছ করে নিল। নিশিকান্তবাবু চায়ের পেয়ালা হাতে করে বসে আছেন—বুঝতে পারছি তাঁর চা ঠাণ্ডা হয়ে আসছে—কিন্তু খাবার কথাটা তাঁর যেন মনেই আসছে না। এর মধ্যে নিশ্চিন্ত দেখলাম ফেলুদাকে। কিম্বা তার মনে উদ্বেগ থাকলেও সেটা সে একেবারেই বাইরে প্রকাশ করছে না, দিব্যি একটার পর একটা বিস্কুট খেয়ে চলেছে।
বাইরে রোদ পড়ে আসছে। হেলমুট সুইচ টিপল, কিন্তু বাতি জ্বলল না। কী ব্যাপার? নিশিকান্তবাবু বললেন, ‘পাওয়ার গেছে। এটা প্রায়ই ঘটে।’
‘বেয়ারাকে মোমবাতি দিতে বলি’ বলে হেলমুট ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
এবার ফেলুদা ডক্টর বৈদ্যকে আরেকটা প্রশ্ন করল।
‘মিস্টার শেলভাঙ্কারের মৃত্যু কি সত্যিই আকস্মিকভাবে হয়েছিল বলে আপনার বিশ্বাস?’
ডক্টর বৈদ্য হাতের পেয়ালা সামনের বেতের টেবিলের উপর রেখে হাত দুটোকে পেটের উপর জড়ো করে বললেন, ‘এ কথার উত্তর তো শুধু একজনই দিতে পারে।’
‘কে?’ ফেলুদা জিজ্ঞেস করল।
‘যে মৃত—একমাত্র সে-ই সর্বজ্ঞ। তারই কাছে অজানা কিছু নেই। আমাদের জীবিতকালে অজস্র অবান্তর জিনিস আমাদের জ্ঞান ও অনুভূতির পথে বাধার সৃষ্টি করে। ওই যে জানালা খোলা রয়েছে—সে জানালা দিয়ে আমরা দূরের পাহাড় দেখতে পাচ্ছি, আকাশ দেখতে পাচ্ছি, পাহাড়ের গায়ে গাছপালা বাড়িঘর সব দেখতে পাচ্ছি, আকাশে মেঘ দেখতে পাচ্ছি। এ সব হল অবান্তর জিনিস—নির্ভেজাল জ্ঞানের পথে এ সব দৃশ্যবস্তু বাধাস্বরূপ। অথচ জানালা যদি বন্ধ করে দিই তা হলে কী দেখব? ঘরে যদি আলো না থাকে, তা হলে বাইরের আলোর পথ বন্ধ করে দিলে কী থাকে? অন্ধকার। জীবন হল আলো, আর জীবন হল ওই জানালা দিয়ে দেখা দৃশ্য, যা আমাদের প্রকৃত জ্ঞানের পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায়। আর মৃত্যু হল বন্ধ জানালার ফলে যে অন্ধকার, সেই অন্ধকার। এই অন্ধকারের ফলে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি খুলে যায়। মৃত্যুই হল অন্ধকারের চরম অবস্থা।’
এত বড় বক্তৃতা একটানা শুনে একটু বুঝতে কষ্ট হচ্ছিল, কিন্তু ভরসা ছিল যে ফেলুদা নিশ্চয়ই সব বুঝতে পারছে। ও বলল, ‘তা হলে আপনার মতে মিস্টার শেলভাঙ্কারই একমাত্র জানেন তাঁর মৃত্যু কীভাবে হয়েছিল?’
‘মৃত্যুর মুহূর্তটিতে হয়তো জানত না—কিন্তু এখন নিশ্চয়ই জানে।’
কেন বলতে পারি না—আমার একটু গা ছমছম করতে শুরু করেছিল। হয়তো অন্ধকার বেড়ে আসছে বলেই; আর মৃত্যু-টিত্যু নিয়ে এত কথাবার্তা, আর ডক্টর বৈদ্যর চশমার কাচে বেগুনি মেঘে ভরা আকাশের ছায়া, আর তাঁর অস্বাভাবিক রকম কাঁপা কাঁপা গলার স্বর, এমনকী তাঁর ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা হাসিটাও কেমন যেন থমথমে মনে হচ্ছিল।
বেয়ারা ঘরে এসে চায়ের জিনিসপত্র তুলে নিয়ে তার জায়গায় টেবিলের উপর একটা জ্বালানো মোমবাতি রেখে চলে গেল। ফেলুদা সবাইকে চারমিনার অফার করল, আর সবাই রিফিউজ করল। তখন ও একাই একটা সিগারেট ধরিয়ে পর পর দুটো রিং ছেড়ে বলল—‘মিস্টার শেলভাঙ্কারের মতামতটা জানতে পারলে মন্দ হত না।’
ফেলুদা অবিশ্যি প্ল্যানচেট-ট্যানচেট নিয়ে বই পড়েছে। ও বলে যে-জিনিসে বিশ্বাস নেই—সেই নিয়ে বইও পড়া উচিত না—এ কথাটা আমি মানি না। কারণ, যে বইটা লিখেছে, তার মতামতটা জানা মানে মানুষের চিন্তাধারার একটা বিশেষ দিক সম্বন্ধে জানা। ক্রাইম নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করবে, তাদের মানুষ সম্বন্ধে জানতেই হবে, আর মানুষ বলতে সব রকম মানুষই বোঝায়, কাউকেই বাদ দেওয়া চলে না।
ডক্টর বৈদ্য কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে ছিলেন, হঠাৎ চোখ খুলে হাত দুটো উপরে তুলে বললেন, ‘দরজা এবং জানালা দুটো বন্ধ করো।’
কথাটা বললেন, হুকুম করার ভঙ্গিতেই, আর সে হুকুম পালন করলেন নিশিকান্তবাবু। মনে হল তিনি যেন হিপ্নোটাইজড্ হয়ে প্রায় যন্ত্রের মানুষের মতো কাজটা করলেন।
জানালা বন্ধ করার সঙ্গে সঙ্গে মোমবাতির আবছা হলদে আলো ছাড়া ঘরে আর কোনও আলোই রইল না।
আমরা সবাই বেতের টেবিলটাকে ঘিরে বসেছিলাম। আমার ডান পাশে বৈদ্য, বাঁ পাশে ফেলুদা। ফেলুদার অন্য পাশে নিশিকান্তবাবু। আর তার পাশে একটা মোড়ায় হেলমুট। ডক্টর বৈদ্য এবার বললেন, ‘তোমাদের হাতগুলো উপুড় করে টেবিলের উপর রাখো। প্রত্যেকের হাত তার দু’ পাশের লোকের হাতের সঙ্গে ঠেকে থাকা চাই।’
ডক্টর বৈদ্য এতক্ষণ আমাদের ‘আপ’ আর ‘আপনি’ বলে বলছিলেন, এবার দেখলাম ‘তুম’ আর ‘তুমি’ আরম্ভ করলেন।
আমরা একে একে সবাই পরস্পরের সঙ্গে হাত ঠেকিয়ে টেবিলে রাখলাম। সব শেষে ডক্টর বৈদ্য আমার আর হেলমুটের হাতের মাঝখানে তাঁর নিজের হাত দুটো গুঁজে দিলেন। পাঁচ দশে পঞ্চাশটা উপুড় করা হাতের আঙুল এখন ফুলের পাপড়ির মতো মোমবাতিটাকে গোল করে ঘিরে বেতের টেবিলের উপর রাখা হয়েছে।
‘তোমরা সবাই একদৃষ্টে মোমবাতির শিখার দিকে চেয়ে শেলভাঙ্কারের মৃত্যুর কথা চিন্তা করো।’
ঘরে বাতাস ঢোকার কোনও রাস্তা নেই, তাই মোমবাতির শিখা একেবারে স্থিরভাবে জ্বলছে। অল্প অল্প করে মোম গলে বাতির গা বেয়ে গড়িয়ে বেতের বুনুনির ওপর জমা হচ্ছে। একটা ফড়িং জাতীয় পোকা ঘরের ভিতরে ছিল, সেটা বাতির শিখার চারিদিকে পাক খেতে আরম্ভ করল।
কতক্ষণ যে এইভাবে বাতির দিকে চেয়েছিলাম জানি না। সত্যি বলতে কী, দু’-একবার যে আড়চোখে ডক্টর বৈদ্যর দিকে চেয়ে দেখিনি তা নয়—কিন্তু সেটা তিনি নিশ্চয়ই বুঝতে পারেননি, কারণ তাঁর চোখ বন্ধ।
হঠাৎ—যেন অনেক দূর থেকে গলার স্বর আসছে—এইভাবে চিঁ চিঁ করে ডক্টর বৈদ্যর মুখ থেকে কথা বেরোল—‘হোয়াট ডু ইউ ওয়ান্ট টু নো?’
ফেলুদা বলল, ‘শেলভাঙ্কার কি অ্যাক্সিডেন্টে মরেছিল?’
আবার সেই চিঁচিঁ গলায় উত্তর এল—‘নো।’
‘তা হলে কীভাবে মরেছিলেন তিনি?’
কিছুক্ষণ সব চুপ। এখন আমরা সবাই মোমবাতি ছেড়ে ডক্টর বৈদ্যর মুখের দিকে চেয়ে আছি। তাঁর চোখ বন্ধ, মাথা পিছন দিকে হেলানো। হেলমুট দেখলাম তার নীল নিষ্পলক চোখে ডক্টর বৈদ্যকে দেখছে। নিশিকান্তবাবুর কুতকুতে চোখও তাঁরই দিকে।
ঘরে হঠাৎ এক ঝলক নীল আলো। বাইরে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে।
এবার আরও পরিষ্কার গলায় উত্তর এল—
‘মার্ডার।’
‘মার্ডার!’ এটা নিশিকান্তর গলা—শুকিয়ে খস্খসে হয়ে গেছে। কথাটা একটানা বলতে পারলেন না তিনি। বললেন, ‘মা-হা-হারা-ডার!’
‘কে খুন করেছিল বলা সম্ভব কি?’ আবার ফেলুদাই প্রশ্ন করল।
আমার বুকের ভিতরে অসম্ভব ঢিপঢিপানি আরম্ভ হয়েছে। নিশিকান্তবাবুর মতো আমারও গলা শুকিয়ে এসেছে। নেহাত কথা বলতে হচ্ছে না বলে, না হলে আমিও ধরা পড়ে যেতাম।
আবার কিছুক্ষণের জন্য সব চুপ। ফেলুদা দেখলাম একদৃষ্টে ডক্টর বৈদ্যর হাতের দিকে দেখছে। ভদ্রলোক কয়েকবার খুব জোরে জোরে—যেন বেশ কষ্ট করে—নিশ্বাস নিলেন। তারপর উত্তর এল—‘বীরেন্দ্র।’
বীরেন্দ্র? সে আবার কে?
ফেলুদাও নিশ্চয়ই এটা জানতে চাইত, কিন্তু ডক্টর বৈদ্য হঠাৎ তাঁর হাত দুটো টেবিলের উপর থেকে তুলে নিয়ে চোখ খুলে বললেন, ‘এ গ্লাস অফ ওয়াটার প্লিজ।’
হেলমুট মোড়া থেকে উঠে গিয়ে তার টেবিলের উপর রাখা ফ্লাস্ক থেকে গেলাসে জল ঢেলে বৈদ্যকে দিল। ভদ্রলোকের জল খাওয়া শেষ হলে পর ফেলুদা বলল, ‘বীরেন্দ্র যে কে, সেটা বোধ হয় জানার কোনও সম্ভাবনা নেই?’
উত্তর এল হেলমুটের কাছ থেকে।
‘বীরেন্দ্র মিস্টার শেলভাঙ্কারের ছেলের নাম। আমাকে বীরেন্দ্রর কথা বলেছেন তিনি। একবার নয়—অনেকবার।’
জানালা খুলে দিতে গিয়ে দেখি, বাইরে ইলেকট্রিকের আলো দেখা যাচ্ছে। হেলমুটও বোধহয় দেখেছিল, কারণ ও সুইচ টিপে দিল, আর ঘরের বাতি জ্বলে উঠল। ঘড়িতে দেখি পৌনে সাতটা। আমরা সকলেই উঠে পড়লাম।
ডক্টর বৈদ্য নিশিকান্তবাবুর কাঁধে হাত রেখে বললেন, ‘আপনাকে খুব নার্ভাস লোক বলে মনে হচ্ছে।’
নিশিকান্তবাবু একটু হেঁ হেঁ করলেন।
‘যাক্ গে’ ডক্টর বৈদ্য বললেন, ‘মনে হয় আপনার ফাঁড়া কেটে গেছে।’
‘ওঃ!’ আহ্লাদে হাঁফ ছেড়ে নিশিকান্তবাবু তাঁর সব ক’টা দাঁত বার করে দিলেন।
ফেলুদা বলল, ‘আপনি ক’ দিন আছেন?’
ডক্টর বৈদ্য বললেন, ‘কাল দিনটা ভাল থাকলে পেমিয়াংচি যাবার ইচ্ছে আছে। ওখানকার মনাস্টেরিতে অনেক পুঁথিপত্র আছে শুনেছি।’
‘আপনি কি তিব্বত নিয়ে পড়াশুনা করছেন?’
‘প্রাচীন সভ্যতা বলতে তো ওই একটিই বাকি আছে। মিশর, ইরাক, মেসোপটেমিয়া—এ সব তো বহুকাল আগেই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। ভারতবর্ষে কী আছে বলুন—সবই পাঁচমেশালি। যা ছিল তিব্বতেই ছিল—একেবারে খাঁটি অবস্থায়—এই সেদিনও পর্যন্ত। এখন তো আর তিব্বতে যাবার কোনও মানে হয় না। সৌভাগ্যক্রমে এই সিকিমের মঠগুলোতে সেই পুরনো সভ্যতার কিছুটা আভাস পাওয়া যায়।’
আমরা বাইরে বেরিয়ে এলাম। রাত্রে নির্ঘাত বৃষ্টি হবে। আকাশ কালো, আর মাঝে মাঝে বিদ্যুতের ঝিলিক।
ডক্টর বৈদ্য বললেন, ‘আপনারাও এসে পড়ুন না পেমিয়াংচি।’
ফেলুদা বলল, ‘ঠিক কালই যেতে পারব বলে মনে হয় না। আপনি তো কয়েক দিন থাকবেন ওখানে?’
‘অন্তত দিন চারেক থাকার ইচ্ছে আছে।’
‘তা হলে হয়তো দেখা হতে পারে, কারণ পেমিয়াংচির কথা অনেকেই বলছে।’
‘গেলে কিছু নুন সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।’ ডক্টর বৈদ্য হেসে বললেন।
‘নুন?’
‘জোঁক ছাড়াতে হলে নুন ছাড়া গতি নেই!’