০৯. রমিজার বাবা রমিজাকে নিতে আসে

এর মাঝে রমিজার বাবা রমিজাকে নিতে আসে। সলীম চলে যাবার খবরটা ওরা খুব দেরিতেই পেয়েছে। তাই এতদিন আসেনি। রমিজার দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাবে। বলে খুশি হয় বুড়ি। ওর যদি কিছু অঘটন ঘটে যায় তাহলে তাদের কাছে মুখ দেখাবে কেমন করে। কি জবাব দেবে ওদের প্রশ্নের। তার চাইতে রমিজার যাওয়া ভাল। কিন্তু পরক্ষণে বুকটা আবার দমে যায়। এ শূন্য ঘরে কি করে দিন কাটবে ওর? দরজার আড়ালে দাঁড়িয়ে রমিজার বাবার সঙ্গে কথা বলে।

–জামাই যখন নেই মেয়েটাকে আমি নিয়ে যাই কি বলেন আপনি?

–খুব ভাল হবে। আমিও ওকে নিয়ে খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

–হ্যাঁ, এত বড় বাড়িতে আপনারা দুজন মেয়ে মানুষ মাত্র। এতদিন যে কেমন করে ছিলেন ভাবতেও অবাক লাগে। আল্লার অশেষ দয়া বলে কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি। যাক যা হবার হয়েছে। এখন ভালোয় ভালোয় মেয়েটাকে নিয়ে যেতে পারলে বাঁচি।

রমিজার বাবার কথায় বুড়ির মন খারাপ হয়ে যায়। কোন উত্তর দিতে পারে না। সব কথাই সত্যি। ইচ্ছে করলে রমিজা নিজেও লোক জোগাড় করে চলে যেতে পারত। যায়নি। বুড়ির কি ক্ষমতা আছে রমিজাকে রক্ষা করার? তাই অভিযোগের জবাব নেই। আপত্তি করে রমিজা নিজে।

–আমি চলে গেলে আম্মা একলা কি করে থাকবে বাবা?

–বুড়ি তাড়াতাড়ি বলে, আমার কথা তোর ভাবতে হবে না। আমি ঠিক থাকতে পারব দেখিস। আমি বুড়ো মানুষ কোন মতে দিন ঠিকই চলে যাবে! তোকে নিয়ে আমার যত ভয়।

–কিন্তু তোর এখানে থাকা ঠিক হবে না রমিজা। কলীম থাকলে তবু একটা কথা ছিল। কেউ নেই যখন বেশি সাহস করা ভাল না।

–আশপাশের ঘরে তো লোক আছে বাবা?

–পাড়াপড়শি দিয়ে কি হয়? আপনজন থাকতে হয়।

–কিন্তু বাবা কপালে যা আছে তাই হবে সে যেখানেই থাকি না কেন? তুমি চেষ্টা করলেই কি কপালের লিখন ঠেকাতে পারবে?

–তাই বলে জেনেশুনে তো তোকে আর মরতে দিতে পারি না? রমিজার বাবার কণ্ঠে রাগ এবং বিরক্তিও। মেয়ের বাচালতায় রুষ্ট।

–সব সময় বড়দের সঙ্গে কথা বলা তোর একটা অভ্যোস হয়ে গেছে রমিজা। আদব কায়দা শিখতে চেষ্টা কর। তোর চেয়ে আমি কম বুঝি না। আমাকে বেশি বোঝাতে হবে না। কি ভাল কি মন্দ সেটা আমি ভালই জানি।

রমিজার বাবা রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তার মেজাজটা সব সময় একটু চড়া।

–আপনি ওর কথায় কিছু মনে করবেন না বেয়াই সাহেব। ও ঠিকই যাবে। আপনি এখন আরাম করুন। আমিও চাই না যে ও এখানে থাকুক।

বুড়ি জোরের সঙ্গে কথা বলে। রমিজার কোন যুক্তিই আর খাটে না। ও বাপের জন্যে ভাত আনতে রান্নাঘরে যায়। বুড়ি ঘুমন্ত নাতির পাশে গিয়ে বসে।

রাতে দুজনের কারোই ঘুম আসে না। কিছু দেখা যায় না তবু আঁধারেই চেয়ে থাকে। বুড়িকে ছেড়ে যাবে না বলে জেদ করতে থাকে রমিজা। কান্নাকাটিও করে। বুড়ি কিছু বলতে পারে না। মনটা এখন উদোম মাঠের মত। রমিজাকে ছাড়া এই শূন্য বাড়িটা ওর কাছে কবরের চেয়েও বেশি। কিন্তু উপায় নেই। কলীমের মৃত্যুর মত এ কষ্টও চেপে রাখতে হবে। শুধু নিজের দিকটা ভাবলে তো চলবে না। বাপের মন মেয়ের চিন্তায় অস্থির হয়ে গেছে। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি না করাই ভাল।

–আমি গেলে আপনার বুকটা ফেটে যাবে আম্মা? তাছাড়া ঐ দুষ্টুটাকে ছেড়ে আপনিইবা থাকবেন কি করে? আমার মন চায় না যেতে।

–আচ্ছা এখন ঘুমো। সকালে দেখব।

–বাবাকে আপনি জোর দিয়ে বললেই হবে। বাবা যে কি একটুও কিছু বুঝতে চায়। স্বার্থপরের মত আমি চলে গেলেই হল আর কি? বাবা সব সময়ই এমন। নিজে যেটা বুঝবে সেটা করবেই করবে। আর কারও কথা শুনতেই চায় না। জানেন আম্মা ছোটবেলায় দেখেছি এই নিয়ে বাবার সঙ্গে প্রায়ই লোকজনের ঝগড়া হত।

–আচ্ছা এখন ঘুমতো। ছেলেটা আবার উঠে যাবে।

রমিজা চুপ করে যায়। বুড়ি পাশ ফিরে শোয়। ঘুম কি আর আসে? সলীম যেদিন যায় সেদিনও এমনি করে জেগেছিল রাত্রে। কলীম মারা যাবার পর সাত দিনতো চোখের পাতা এক হয়নি। এখন রমিজাও যাবে। ওকে যেতেই হবে। ও যত কথাই বলুক ওর বাবা ওকে ছাড়বে না। জোর করে হলেও নিয়ে যাবে। বুড়ির জন্য ওদের কিসের টান? বুড়ি মরলেইবা ওদের কি আসে যায়? বুড়ির চোখের কোণে জল আসে। ভয়ানক নিঃসঙ্গ মনে হয় নিজেকে। হাত বাড়িয়ে রইসকে কাছে টানে। ও এখনও আছে। ওর কোথাও যাবার জায়গা নেই। কোথাও যাবার ক্ষমতাও নেই। রইস বুড়ির নিঃসঙ্গতা ঘোচাতে পারে না। তবুও বুড়ি রইসকে বুকে জড়িয়ে নেয়।

রাত কত হবে কে জানে। পুবদিকের ঘর থেকে মেয়ে-কণ্ঠের চিৎকার আসে। কান-খাড়া করে থাকে দুজনে। শোনে দুড়দাড় শব্দ। মেয়েটির চিত্ত্বার থেমে গেছে। কেউ যেন ওর মুখে হাত চাপা দিয়েছে। ও গোঙাচ্ছে। বেশিক্ষণ সে শব্দ উঠোনে থাকে না। দ্রুত মিলিয়ে যায়। গোঙানির শব্দ এসে রমিজার বুকের ভেতর হাতুড়ি পেটায়। ভয়ে ভয়ে বুড়িকে ডাকে।

–আম্মা শুনছেন?

–হ্যাঁ।

–ফুলি না?

–সে রকমই তো মনে হয়। ফুলিই হবে।

–কি হবে আম্মা?

–কি আর হবে। চুপ করে শুয়ে থাক। আল্লাকে ডাক। এক সময় শব্দ মিলিয়ে যায়। ওরা চলে যাবার অনেক পরও ভয়ে কেউ সাড়া দেয়। ঝিঝিটের ডাক জোরদার হয়ে ওঠে। বুড়ি বিছানায় উঠে বসে। পাশের ঘরে রমিজার বাপ কাশে। তাও খুব আস্তে। গলা চেপে চেপে। বুড়ির ইচ্ছে করে দরজা খুলে বের হতে।

–আম্মা উঠলেন কেন?

–বাইরে যাব।

–না। রমিজা চাপা আর্তনাদ করে ওঠে। কে জানে দুএকজন আবার ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছে কি না?

বুড়ি থিতিয়ে যায়। তাই তো? যদি এ ঘরে আসে?

–আম্মা ঘুমান। বাবা বোধহয় জেগে আছে।

রমিজা ফিসফিস করে বলে।

বুড়ি বসেই থাকে। অক্ষমতার যন্ত্রণায় ফুলে ওঠে শরীর। এতবড় একটা ঘটনা ঘটল অথচ কেউ প্রতিবাদ করেনি। লাঠি নিয়ে বের হয়নি। দলবদ্ধ হয়ে আক্রমণও না। নির্বিবাদে কাজ সেরে চলে যায় ওরা। টেনেহিচড়ে নিয়ে যায় ফুলিকে। ও কারও কাছে কোন সাহায্য পেল না। ওর জন্যে কেউ ছুটে এলো না। আচ্ছা এমন কোন যুবক কি ছিল না যে ফুলিকে ভালবাসে? ফুলিকে যে ওদের হাত থেকে ছিনিয়ে আনতে পারতো? ফুলির জন্যে মরে যেতেও পিছপা হতো না? বুড়ির মাথা ভার হয়ে ওঠে। নিথর রাত নীরব, নিশ্রুপ। ওর চোখের কোণে জল চিকচিক্ করে। ছেঁড়া কাঁথার মধ্যে মুখ ঘঁষে। মনে মনে বলে, আল্লা আমাদের জন্যে মানুষ দাও। শক্তিশালী, সাহসী মানুষ দাও। মানুষ দাও। মানুষ দাও। ভয়হীন, যোদ্ধা, লাঠি হাতে ঝাঁপিয়ে পড়া মানুষ দাও। হলদী গাঁয়ের মাটি খুঁড়ে চারদিক তোলপাড় করে ছুটে আসুক হাজার হাজার মানুষ। বুড়ির যে। কি হয়। বুড়ি বারবার একটা কথা মনে মনে আওড়াতে থাকে। যতভাবে, যত মিনতিতে চাওয়া যায় আল্লার কাছে সেইভাবে প্রার্থনা করে। এমন তন্ময় হয়ে আকুল হৃদয়ে বুড়ি কোন দিন আর কোন প্রার্থনায় নিমগ্ন হয়নি। বাকী রাতটুকু ওর আর ঘুম আসে না। ভোর হয়ে আসছে। অনেক রাত জেগে রমিজা এখন ঘুমোচ্ছে। বুড়ি দরজা খুলে বাইরে আসে। বুক ভরে শ্বাস নেয়। মনে হয় আজই চলে যাবে রমিজা। সন্ধ্যারাতে ওর কান্নাকাটিতে যে দুর্বলতাটুকু মনে জমা হয়েছিল মধ্যরাতে ফুলির চিৎকার সে দুর্বলতার রেশটুকু কাটিয়ে দিয়ে যায়। ঘাটে মুখ ধুতে গিয়ে বুড়ির চোখের বিরামহীন নোনা জল পুকুরের পানির সঙ্গে মিলেমিশে এক হয়ে যায়।

রমিজার বাবা ঘুম থেকে উঠেই মেয়েকে তাগাদা দেয়।

তাড়াতাড়ি গোছগাছ কর। বেলা ওঠার আগেই রওনা দেব। দুপুর নাগাদ বড়বাজার পৌছতে পারলে সন্ধ্যার আগে বাড়ি পৌছে যাব। জানিস তো রাত্রিবেলা মধু মাঝি নৌকা বাইতে চায় না।

–কিন্তু বাবা আমি গেলে ….

–আবার কথা। শুনলাম তো কালরাতের ঘটনা। কানে তো আর তুলা দিয়ে রাখিনি। আজ রাতে যে এ ঘরে আসবে না কে জানে। আমাদের এলাকা এখনো মুক্তিবাহিনীর দখলে। মিলিটারি ঢুকতেই পারেনি। তাছাড়া অত ভেতরে ওরা যেতেও সাহস পাচ্ছে না। যা তাড়াতাড়ি কর।

রমিজা বাবার সামনে থেকে সরে পড়ে। মনে মনে বলে বাবা চিরকাল এমনি একটু শুকনো কথা বলে। মনে মনে যত ভালইবাসুক, একটুও আদর করে কথা বলতে জানে না। বুড়ি ঘর থেকে সব কথাই শোনে। খোয়াড়ে দুটো হাঁসের ডিম পেয়েছে। তাই ভেজে পান্তা সাজিয়ে দেয় বেয়াইকে। মাটির সানকির ওপর বুড়ির হাত নিথর হয়ে যায়।

রমিজা বুড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়, আম্মা?

–দেরি করার কাজ নেই রমিজা। তাড়াতাড়ি রওনা হওয়া ভাল। বেলা হলে ছেলেটার কষ্ট হবে।

–আম্মা?

–আর কথা বাড়াস না। তোর বাবা ঠিকই বলেছে। আজ রাতে যে এ ঘরে হামলা হবে না কে জানে?

–আপনি একলা কি করে থাকবেন? আপনিও আমার সঙ্গে চলেন?

–আমার জন্য ভাবনা নেই। আল্লা আছে। তারপর বুড়ি ফিসফিসিয়ে বলে, বাড়ি খালি করে সবার যাওয়া ঠিক না। সলীম যদি ফিরে আসে?

বুড়ির কথায় রমিজার কান্না পায়। বাবার ভয়ে শব্দ করে কাঁদতে পারে না। চোখ মুছতে মুছতে চলে যায়। ফুলির ঘটনায় ওর মনও দুর্বল হয়ে গেছে। জোরাজুরি করে থাকবার সাহসটুকু নিজের মনেও খুব একটা নেই।

খালের ধার পর্যন্ত ওদের সঙ্গে সঙ্গে আসে বুড়ি। নাতিটা বুকের মধ্যে হাত পা ছুড়ছে। ওকে নিবিড় করে চেপে ধরতেই বুক ভেঙে আসে। তবুও নিজেকে দুর্বল হতে দেয় না। রইস বুড়ির পিছু পিছু হটছে। তখনো সূর্য ওঠেনি। নরম আলো চারদিকে। রমিজা বারবার আঁচলে চোখ মোছে। ওর বুকে ভীষণ কষ্ট। অনেকদিন সলীমের খবর নেই। বুড়িকে একলা ফেলে নিজে স্বার্থপরের মত চলে যাচ্ছে বলে মনটা খচখচ্‌ করে। তবুও রমিজাকে যেতে হচ্ছে। ও স্যাণ্ডেল খুলে হাতে নিয়ে কাদা পাড়িয়ে নৌকায়। ওঠে। ছেলেটা কোলে। ও বারবার বুড়ির দিকে হাত বাড়ায়। ওর কাছে আসতে চায়। বুড়ি পুতুলের মত দাঁড়িয়ে থাকে। নড়তেও পারে না। নৌকো ছেড়ে দেয়। স্বচ্ছ পানিতে তরতর করে নৌকো এগোয়। রমিজার বাবা কি বলে যেন বিদায় নিয়েছে। সেকথা মনে থাকে না। কেবল মাথা নাড়ে। বুড়ি দেখে খালের বয়ে যাওয়া। জোয়ারের সময় এখন। পানি আসছে। দেখে বিক্ষিপ্ত কচুরিপানা বেগুনী ফুল বুকে নিয়ে ভাসে। খালের ওপারে মাঠ। কেবল মাঠ, মাঠের পর মাঠ। খালের বাঁকে নৌকো হারিয়ে যায়। আর দেখা যায় না। বুড়ির মন খা-খা করে। মনে হয় যে মনের ভেতর কেবল মাঠের পর মাঠ। জনমানব নেই। ঐ কচুরিপানার মত বুকের মধ্যে রইসকে নিয়ে বুড়ি ভাসছে। কোথায় যাবে জানে না। এই ভাসাটাই সত্য কেবল। গায়ে গা লাগিয়ে বাতাস বয়ে যায়। কালো ভোমরা একটা বারবার বুড়ির মুখের কাছে উড়ে আসে। রইস মা-র হাত ধরে টানাটানি করে। বাড়ির পথ দেখিয়ে দেয়। যাবার জন্যে ইশারা করে। ও কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে। বাড়ি ছেড়ে ও কোথাও যেতে চায় না। কোথাও গেলে ফেরার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। বুড়ি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। ভীষণ কষ্টে বুক ফেটে যেতে চায়। কত কষ্টের ধন ও। বুড়ি ভাবে, কষ্ট করে পেয়েছে বলেই বুঝি কষ্টটা বুড়ির নাড়িতে গেঁথে গেছে। ওকে নিয়ে সুখ নেই। সূর্য ফুটিফুটি করছে। বাঁশ বনের মাথার ওপর দিয়ে লাল হয়েছে আকাশটা। রইসের হাত ধরে ফিরে আসে। ফুলিদের ঘরের সামনে লোক জড়ো হয়েছে। ফুলির মা গুনগুনিয়ে কাঁদে। ফুলির বাপ মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। সকলের মুখ শুকনো। কি করবে কেউ তা ভেবে উঠতে পারে না। বুড়ি ওদের কাছে এসে দাঁড়ায়। রমজান আলী বলে, বউকে পাঠিয়ে দিলে বুঝি।

–হ্যাঁ।

–খুব ভাল করে

–আমার কি হবে গো রইসের মা?

ফুলির বাবা হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। সেই সঙ্গে অনেকে চোখ মোছে। বুড়ির রাগ হয়। কারো বুকে কোন সাহস নেই। আছে কেবল চোখের জল। কি জঘন্য! সকলে জড়ো হয়ে কাঁদতে বসেছে। ফুলির বাপের সঙ্গে কথা না বলে নিজের ঘরে ফিরে আসে। একবার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে যে সবাই এমন শুকনো মুখ নিয়ে বসে থাকলে সারা গাঁ উজাড় হয়ে যাবে। কিন্তু কাকে বলবে? কেউ কি আছে গায়ে? সব মেরুদণ্ড ভাঙা। কুঁজো হওয়া অথর্ব বুড়ো। বুড়ি একদলা থুতু ফেলে। কারো কাছে দুদণ্ড বসে মন খুলে কথা বলারও উপায় নেই। ভয়ে চিমসে থাকে।

গত সন্ধ্যায় রমিজা ঘরে ঘরে গিয়ে বিদায় নিয়েছে। সবাইকে বলেছে বুড়ির দেখাশোনা করতে। আগে যারা খোজ নেবার দরকার মনে করত না এখন তারা একবার করে আসে। রমজান আলীর ছেলে কাদের আর হাফিজ বাইরের ঘরে ঘুমোয়। ছেলে দুটিকে সারাক্ষণ আগলে রাখে রমজান আলী। পালিয়ে পালিয়ে বেড়ায় ওরা। কেবল কৈশোর পার হয়েছে ওদের। অনেক কিছুই বোঝে না। বুড়িকে ওরা ভীষণ ভালবাসে। ফুলিকে ধরে নিয়ে যাবার পর একদিন রাতের অন্ধকারে বুড়ির সামনে গর্জে উঠেছিল দুভাই, এভাবে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াতে আমাদের বড় ঘেন্না হয় চাচি। ইচ্ছে করে একদিন পালিয়ে গিয়ে মুক্তি বাহিনীতে যোগ দেই।

হাফিজ বলে, বাবা সব সময় ভয় পায় কখন মিলিটারি ধরে নিয়ে আমাদের মেরে ফেলে। আমার মনে হয় মরতেই যদি হয় তাহলে ওদের সঙ্গে লড়েই মরি। তবু তো বাবার মনে গর্ব থাকবে যে তার ছেলে যুদ্ধ করে মরেছে। আপনি কি বলেন চাচি?

ওদের কথা শুনে অভিভূত হয়ে যায় বুড়ি। আবেগে চোখ ছলছল করে।

–তোরা ঠিকই বলেছিস বাবা। তোরা এতো কথা ভাবলি কখন?

কাদের আর হাফিজ হাসে।

–তোমরা সবাই ভাব আমরা ছোট। স্কুল পেরিয়েছি কেবল।

–ওরে নারে না। তোরা আমার বুকের মানিক। তোরাই তো পারবি। বুড়ো হাবড়াদের দিয়ে কি কিছু হবে?

সে রাতে কাদের আর হাফিজ ঘুমোতে গেলে অনেকদিন পর বুড়ি বুক ভরে শ্বাস নেয়। এক ঘুমে রাত পার হয়ে যায়। বারবার ঘুম ভাঙে না।

মাঝে মাঝে বুড়ি বাঁশবনে গিয়ে দাঁড়ায়। পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। যদি সলীম ফিরে আসে ঐ পথে। দূরের বিন্দুটা যদি কাছে আসতে আসতে সলীম হয়ে যায়। দিন গড়ায়। বুড়ির আকাঙ্ক্ষা আর সত্য হয় না। পুকুর ঘাটে গিয়ে বসে। দেখে নারকেল গাছের ছায়া আস্তে আস্তে কেমন ছোট হয়ে যায়। হাঁসের দল গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়ায় পাড়ে। শ্যাওলা সবুজ জল নীতার কথা মনে করিয়ে দেয়। নীতা আর আসেনি। বেঁচে আছে কি না তাও জানে না। ওকে একবার কাছে পেলে হতো। নিঃশব্দ মুহূর্তগুলো আর সহ্য হয় না। নীতা এখনো হয়তো কণ্ঠে ভালোবাসার গান নিয়ে একখান থেকে আর একখানে ছুটে বেড়াচ্ছে। অখিল বাউল ওকে নতুন জীবন দিয়েছে। বুড়ির দিনগুলো বালিহাঁসের পাখার মত ধূসর। রাতের ভাষা আরো নিঃশব্দ। বুড়ির চেতনার আকাশ ছায়াপথ যেন।

মাসখানেক পর কাদের আর হাফিজ এসে বুড়ির দরজায় টোকা দেয়। তখনো ভোর হয়নি। আঁধার দ্রুত সরে যাচ্ছে। বুড়ির বুক ধড়ফড়িয়ে ওঠে। কি আবার হলো? চকিতে মনে হয় গুলির শব্দ, আগুন, রক্ত, মৃত্যু ইত্যকার বিবিধ ভাবনা। অনেকক্ষণ বুড়ি নড়তে পারে না। মনে হয় কলীমের মা ডাকের তীব্র চিৎকার। সঙ্গে সঙ্গে একরাশ গুলির শব্দ। বুড়ির কান ঝাকিয়ে দেয়। বাইরে ওরা অস্থির হয়ে ওঠে। দেরি করার সময় নেই। এদিক ওদিক হলে বাতাসও শত্রুতা করতে পারে। কাদের আর হাফিজের। কিছু হলো না তো? বুড়ি স্থির হয়ে থাকে। বাইরে ওদের অস্থির কণ্ঠ উচ্চ হয়।

–চাচি, ও চাচি?

সেই ডাকে বুড়ির রক্ত নাড়া দিয়ে ওঠে।

–কিরে এতো রাতে কি?

–আমরা যাচ্ছি।

–কোথায়?

–মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে। আমরা যুদ্ধ, করব। আপনাকে বলেছিলাম না? কাউকে কিছু বলিনি। শুধু আপনাকে বলে যাচ্ছি। আপনি বাবাকে বুঝিয়ে বলবেন।

বুড়ির মনে হয় অবিকল সলীমের কণ্ঠ। এমনি করে সলীম একদিন চলে গিয়েছে। বুড়ির ঠোঁট কাঁপে থর থর করে।

–আমাদের দোয়া করেন চাচী যেন বুক ফুলিয়ে আবার ফিরে আসতে পারি।

ওরা পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে। বুড়ি অভিভূত হয়ে যায়। ওরা যে সত্যি এতটা সাহসী হয়ে উঠতে পারবে কাছে বসে ভাবতেই পারেনি তা। ওদের গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। দেবদূতের আলোর মতো ওরা এখন উজ্জ্বল। জিজ্ঞাসা উঁকি দেয়, ফেরেশতা কি এমনি হয়? এমনি জ্যোতির্ময়? আরো মনে হয় ওদের শরীর থেকে কেমন একটা গন্ধ আসছে। অপার্থিব গন্ধ। সেই মোহিনী গন্ধ বুড়িকে পাগল করে দেয়। ছেলে দুটোর হাত উঠিয়ে নাকের কাছে নিয়ে শুকে দেখে। না কোন বিশেষ জায়গা থেকে নয়। চারদিক থেকে একটা অদ্ভুত গন্ধ ভেসে আসছে।

–কি চাচি? কাদের আর হাফিজ অবাক হয়।

–কিছু না। দোয়া করি–দোয়া করি। বুড়ির ঠোঁট কাঁপে। আর কিছু বলতে পারে না।

–যাই চাচি। বুকে বল রাখবেন। আপনার কিছু ভয় নাই। সময় সুযোগ মতো আমরা আসব আপনার কাছে। কোন দরকার হলে বাবাকে বলবেন। এ আঁধারের গায়ে মিলেমিশে ছেলে দুটো চলে যায়। বুড়ির মনে হলো ওর চারপাশে এখন আর কোন আঁধার নেই। দুহাতে আলো ছড়াতে ছড়াতে ওরা ফেরেশতার মতো চলে গেলো। ওরা এখন স্বর্গের সন্ধানে ব্যস্ত। বুড়িকে নতুন করে বেঁচে থাকার সাহস দিয়ে গেলো। মনে হয় এখন আর ওর তেমন ভয় করছে না। সমস্ত ভয় ধানের কুঁড়োর। মতো ঝেড়ে ফেলে দিল। ওরা চলে যাবার পর নিশ্চিন্তে ঘুম এলো ওর। বিছানায় শুয়ে শুনলো দূরে গুলির শব্দ। এখন নিবিড় ভাবনায় মগ্ন হয়ে বুড়ি প্রার্থনা করে, আল্লা আরো মানুষ দাও। সাহসী বেপরোয়া মানুষ দাও। বানে-ডোবা হলদী গাঁয়ের মতো মানুষের বানে ভাসিয়ে দাও আমাদের।

বুড়ি আবার নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। কাদের হাফিজের সঙ্গে কথা বলে তবু কিছুটা সময় কাটতো। এখন কথার জন্যে ব্যাকুল হয়ে ওঠে। অসহ্য নীরবতাকে চিরে দুটুকরো করে ফেলতে ইচ্ছে করে। মনে পড়ে রমিজার মাছ-কাটা বঁটির কথা। খুব ধারালো ছিল বঁটিটা। পোচ দিলেই কচ্ করে কেটে যেতো। কিন্তু নীরবতাকে কি কাটা যায়? নীরবতা কেনো মাছের মতো একটা জীবন্ত কিছু নয়? কুটুম পাখি আর ডাকে না।

অথবা ডাকলেও বুড়ির মাথায় তা তেমন করে ঢোকে না। হঠাৎ করে দুএকটা শালিক। কিচকিচ্ করে ওঠে রান্নাঘরের চালের ওপর। ওর মনে হয় অলৌকিক কণ্ঠস্বরের মতো। কে যেন অলিখিত ভাষায় ভীষণ কিছু পাঠ করে যাচ্ছে। বুড়ি তা বুঝতে পারছে না। অথচ ঐ শব্দটুকুর জন্যে যেন কতো কালের প্রতীক্ষা বুড়ির। দূরে যখন কোথাও বোমা ফাটে, যখন পুল ভেঙে যায় তখন বুড়ির নিশ্বাস দ্রুত হয়। ঐ শব্দগুলো মনে হয় নিজের অস্তিত্বের চাইতে বেশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের চেয়েও মূল্যবান।

তিন-চারদিন পর দক্ষিণ দিকের ঘরের ছেলেটি এসে বুড়ির পায়ে হাত দিয়ে সালাম করে।

–খালা দোয়া কর মুক্তিবাহিনীতে যাচ্ছি।

বুড়ি দোয়া করে। হাসিমুখে বিদায় দেয়। মনে মনে আশ্বস্ত হয়। এক দুই করে অনেক ছেলে চলে গেছে। আল্লা বুড়ির কথা শুনছে। আল্লা বুড়িকে মানুষ দিচ্ছে। স্রোতের মতো ওরা আসছে। চারপাশের ছেলেগুলোর ভেতর এতো তেজ ছিল তা একবারও টের পেলো না কেনো? তাহলে বুড়ির উপলব্ধিতে কোথাও কি কোন ফাঁক ছিল? দৃপ্ত ভঙ্গিতে চলে যাওয়া ছেলেটির গমন পথের দিকে তাকিয়ে থাকে। ও পিছু তাকায় না। কোনদিকে খেয়াল করে না। সামনে লক্ষ্য করে এগিয়ে যাচ্ছে। পুরো হলদী গাঁ এখন ঐ ছেলেগুলোর শক্তির ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের কাছে। নিজেকে খুব তুচ্ছ মনে হয় বুড়ির। বুড়ি কোন কাজেই আসে না। ওদের মতো অমন করে ছুটে বেরিয়ে পড়তে পারে না। ওর শক্তি নেই, সে বয়সও নেই। অথচ বুড়ি কাজ চায়। হলদী গাঁ-র জন্যে কিছু করতে চায়? হলদী গা-যে বুড়ির প্রাণের চাইতেও প্রিয়।

মনে হয় নীতাও একটা কিছু করছে। অন্তত গানে গানে মন্ত্র ছড়াচ্ছে। ওর গানের গলা এখন বোমা হয়ে অসংখ্য লোকের বুকের পুল দুম করে ফাটিয়ে দিচ্ছে। নীতা কাজ পেয়ে মহান হয়েছে। আর বুড়ি? পরক্ষণে চোখ পড়ে রইসের দিকে। সতেরো বছর বয়স ওর। দেহটা বেশ সুঠাম। ওর বেড়ে ওঠাতে কোন ফাঁক নেই। কোন ঘাটতিও নেই। কিন্তু ওর মুখ দিয়ে লালা পড়ছে। ও বাম হাত দিয়ে একটা মাছি তাড়াবার চেষ্টা করছে। বারান্দায় পা ঝুলিয়ে বসে পা দোলাচ্ছে। চারদিকে বোকার মতো তাকাচ্ছে, কখনো হাততালি দিয়ে হাসছে।

বুড়ি উঠোনে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। কি হবে এই ছেলে দিয়ে? ও ভাইয়ের মৃত্যুকে উপলব্ধি করতে পারেনি। দেশ জুড়ে যে এত বড় ঘটনা ঘটে যাচ্ছে তার সঙ্গে ওর কোন যোগ নেই। পৃথিবীর সব ঘটনা থেকে বিচ্ছিন্ন। বুড়ির ভীষণ কান্না পেলো। ও তো পারতো ভাইয়ের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে। ও তো পারতো জনযুদ্ধের অংশীদার হতে। মুক্তিবাহিনীর একজন হয়ে বেপরোয়া যোদ্ধা মানুষ হতে। বুড়ির চকিতে মনে হলো এ ছেলের বেঁচে থেকে কি লাভ? এ ছেলে না থাকলেই ভাল। প্রতি মুহূর্তে এতোবড় একটি ছেলের অসহায় পঙ্গুত্ব বুড়িকে যন্ত্রণার নরকে দগ্ধ করে। পর মুহূর্তে মন ছটফটিয়ে ওঠে। দৌড়ে আসে বারান্দায়। রইসের মাথা বুকে জড়িয়ে ধরে। চোখের পানিতে ভিজিয়ে দেয় মাথা, নাক, গাল। রইস বিরক্ত হয়। বুড়িকে হাত দিয়ে সরিয়ে দেয়। ঠেলে ফেলতে চায়। বুড়ি তবুও যখন ছাড়ে না তখন ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে নিচে নেমে যায়। যেন মায়ের এ ধরনের আচরণ সহ্য করতে রাজি নয়। ও কাচারীঘরের দিকে হাঁটতে থাকে। অকারণে হাঁসগুলো তাড়ায়। বাঘার পিঠে দুঘা বসিয়ে দেয়। বুড়ি ওর ওপর রাগ করতে পারে না। ওর ওপর রাগ করলে সেটা নিজের ওপর এসে পড়ে। কষ্ট হয়। কলীমের মৃত্যু কাটা হয়ে বিধে থাকে হৃৎপিণ্ডে। কয়েকজন দানব আকারের মানুষের ছায়া বুড়িকে গ্রাস করে। ক্ষণিকের জন্যে ওর নড়ে ওঠার ক্ষমতা রোধ হয়ে যায়।

কদিন পর কাদের আর হাফিজের বাবা রমজান আলীকে ধরে নিয়ে গেলো মিলিটারি। দুতিন দিন চাপা ছিল খবরটা। কিন্তু বেশিদিন রাখা গেলো না। কিভাবে যেন জানতে পারে ওরা। তাই মারমুখী হয়ে ছুটে এসেছে। ওরা মারপিট করলো বাড়ির লোকদের। বুড়ির ভাগ্য ভাল যে ওর ঘরে আসেনি। কলীমকে মেরে যাবার পর ওরা আর ঘরে ঢোকেনি। ও ঘরে বসে শুনেছে পুরুষদের আর্তচিৎকার, মেয়েদের কান্না, ছোটদের হৈচৈ। বুড়ি শুধু বসে বসে আল্লার কাছে তার নিজস্ব প্রার্থনা করেছে। মানুষ। দাও। মানুষ দাও। ওরা চলে যাবার পর সমস্ত বাড়িটা নিঝুম হয়ে গেলে বুড়ির চকিতে মনে হয়, কে এ কাজটা করলো? ও কি একবারও বুঝতে পারেনি যে বিশ্বাসঘাতকতা ও নিজের সঙ্গেই করলো? করলো নিজের পায়ের তলার মাটির সঙ্গে। এ মাটির রঙ যে চেনে না সে মাটিতে পা রাখার অধিকার তার নেই। বুড়ির ইচ্ছে করে সে বিশ্বাসঘাতকের টুটি চেপে ধরতে। মনসুরের কথা মনে হতেই রক্ত ছলকে ওঠে। সলীমের কথা ও-ই বলেছিল। দুদিন আগে জলপাই গাছের নিচে দাঁড়িয়ে মনসুর ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, রমজান আলীর ছেলে দুটাকে আর দেখছি না যে?

–ওদের নানাবাড়ি গেছে।

–তাই নাকি?

–হ্যাঁ, ওদের নানার খুব অসুখ।

–ওদের মা গেলো না?

–ওদের মার তো শরীর খারাপ। ভরা মাস যে।

–অ।

মনসুর হেসেছিল?

–তোমার এতো খোঁজে দরকার কি বাপু?

–না, এমনি।

মনসুর আর দাঁড়ায়নি। হনহন করে মেঠো পথে নেমে গিয়েছিল। ওর কালো ছাতি অনেক দূরে মিলিয়ে যাবার পরও বুড়ির মনে হয়নি যে মনসুর কথাটা আদৌ বিশ্বাস করেনি। উল্টো আরো সাতকাহন গেয়ে লাগিয়েছিল। এখন বুড়ি নিজের উত্তেজনা চেপে রাখতে পারে না। মনসুর তুই একটা বেজন্মা। তোর মা-বাপের জন্মেরও ঠিক নাই। তুই যাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছিস ওরা তোর কে? তুই ভুলে গেলি তোর চৌদ্দ পুরুষের ভিটেমাটির কথা? তোর সঙ্গে একই জলহাওয়ায় বেড়ে ওঠা মানুষগুলোর কথা! এ মাটি এখনো তোকে ছুড়ে ফেলে দেয় না কেন মনসুর!

বুড়ি আরো শক্ত কথা বলতে চায়। কিন্তু যুৎসই কিছু মুখে আসে না। শুধু ক্রোধ বাড়ে–ঘৃণা বাড়ে। বুড়ির মুখে কথা আসে না। শুধু ক্রোধ বাড়ে আর ঘৃণা বাড়ে। শুধু ক্রোধ আর ঘৃণা। শেষে আর একবার মুখ খোলে, মনসুর তোর আর আমার ভাষা এক, মাটি এক এ লজ্জায় আমি বাঁচি না যে! ও সুপোরি বাগানের নিরিবিলি ছায়ায় আসে। কলীমের কবরের কাছে এসে দাঁড়ায়। জায়গাটা বড় শ্যামল শীতল। বুড়ির ভীষণ প্রিয়। এখানে এলে ও নিজের দুঃখের কথা ভুলতে পারে। তখন ওর সাহস বাড়ে। বুকের দিগন্ত প্রসারিত হয়ে যায়। মহাসমুদ্রের মত অনবরত গর্জনে উন্মাতাল হয়ে ওঠে বুড়ির হৃৎপিণ্ড।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *