চতুর্থ অনুবাক
প্রথম সূক্ত : ঔষধয়ঃ
[ঋষি : অথর্বা। দেবতা : ভৈষজ্য, আয়ুষ্য, ঔষধ্য। ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী, উষ্ণিক, জগতী, পংক্তি, শক্করী ]
মন্ত্রঃ যা বভবো যা শুক্রা রোহিণীরুত পৃশ্লয়। অসিক্লীঃ কৃষ্ণা ওষধীঃ সর্বা অচ্ছাবদামসি ॥১॥ ত্রায়ন্তামিমং পুরুষং যক্ষ্মাদ দেবেষিতাদধি। যাসাং দ্যৌষ্পিতা পৃথিবী মাতা সমুদ্রো মূলং বীরুধাং বভূব ॥২॥ আপো অগ্রং দিব্যা ওষধয়ঃ। তাস্তে যক্ষ্মমেনস্যমঙ্গাদঙ্গাদনীনশন ॥৩৷৷ প্রস্তুণতী স্তম্বিনীরেকশৃঙ্গাঃ প্রতন্বতীরোষধীরা বদামি। অংশুমতীঃ কাভিনীৰ্যা বিশাখা হুয়ামি তে বীরুধে বৈশ্বাদেবীরুগ্রাঃ পুরুষজীবনীঃ ॥৪॥ যদ বঃ সহঃ সহমান বীর্যং যচ্চ বো বল। তেনেমমম্মাদ যক্ষ্মাৎ পুরুষং মুঞ্চতৌষধীরথো কৃণোমি ভেষজম্ ॥৫৷ জীবলাং নঘারিং জীবন্তীমোষধীমহম। অরুন্ধতীমুন্নয়ন্তীং পুষ্পং মধুমতীমিহ হুবেইম্মা অরিষ্টতাতয়ে ॥৬॥ ইহা যন্তু প্রচেতসো মেদিনীচসো মম। যথেমং পারয়ামসি পুরুষং দুরিতাদধি ॥৭॥ অগ্নের্ঘামো অপাং গর্ভে যা বোহন্তি পুনর্ণবাঃ। ধ্রুবাঃ সহস্রনাম্নীর্ভেষজীঃ সন্তাভূতাঃ ॥৮৷৷ অবকো উদকাত্মান ওষধয়ঃ। বৃষন্তু দুরিতং তীক্ষ্মশৃঙ্গ্যঃ ॥৯॥ উন্মুঞ্চন্তীর্বিবরুণা উগ্রা যা বিষদুষণীঃ। • অথথা বলাসনাশনীঃ কৃত্যাদূষণীশ্চ যাস্তা ইহা যন্তোষধীঃ ॥১০৷ অপক্রীতাঃ সহীয়সীবীরুঘো যা অভিষ্ট্রতাঃ। ত্রায়ন্তামস্মিন্ গ্রামে গামশ্বং পুরুষং পশুম ॥১১। মধুমলং মধুমদগ্রমসাং মধুমন্মধ্যং বীরুধাং বভূব। মধুম পর্ণং মধুমৎ পুষ্পমাসাং মধধাঃ সম্ভক্তা অমৃতস্য ভক্ষো ঘৃতমন্নং দুতাং গোপুরোগবম্ ॥১২৷৷ যাবতীঃ কিয়তীশ্চেমাঃ পৃথিব্যামধ্যোষধীঃ। তামা সহপর্ণো মৃত্যোর্মুঞ্চংহসঃ ॥১৩৷৷ বৈয়াম্রো মণিবীরুধাং ত্ৰায়মাণোহভিশস্তিপাঃ। অমীবাঃ সর্বা রক্ষাংস্যপ হধি দূরমম্মৎ ॥১৪৷৷ সিংহস্যেব স্তনথোঃ সং বিজহেগেরিব বিজন্ত আভূতভ্যঃ। গবাং যক্ষ্মঃ পুরুষাণাং বীরুদ্ভিরতিনুত্তো নাব্যা এতু স্রোত্যাঃ ॥১৫৷৷ মুমুচানা ওষধয়োহগ্নেবৈশ্বানরাদধি। ভূমিং সন্তন্বতীরিত যাসাং রাজা বনস্পতিঃ ॥১৬৷৷ যা বোহ্যাঙ্গিরসীঃ পর্বতেষু সমেষু চ। তা নঃ পয়স্বতীঃ শিবা ওষধীঃ সন্তু শং হৃদে ॥১৭৷ যাশ্চাহং বেদ বীরুধো যাশ্চ পশ্যামি চক্ষুষা। অজ্ঞতা জানীমশ্চ যা যাসু বিঘ্ন চ সস্তৃতম্ ॥১৮ সর্বাঃ সমগ্রা ওষধীর্বোধন্তু বচসো মম। যথেমং পারয়ামসি পুরুষং দুরিতাদধি ॥১৯৷ অশ্বথো দর্ভো বীরুধাং সোমো রাজামৃতং হবিঃ। ব্রীহিৰ্যশ্চ ভেষজৌ দিবপুত্রাবমর্তেী ॥২০৷ উজ্জিহীধ্বে স্তনয়ত্যভিক্রন্দত্যেষধীঃ। যদা বঃ পৃশ্নিমাতরঃ পর্জন্যো রেতসাবতি ॥২১৷৷ তস্যামৃতস্যেমং বলং পুরুষং পায়য়ামসি। অথথা কৃপোমি ভেষজং যথাসচ্ছতহায়নঃ ॥২২। বরাহে বেদ বীরুধং নকুলো বেদ ভেষজী। সর্পা গন্ধর্বা যা বিদুস্তা অস্মা অবসে হুবে ॥২৩৷ যাঃ সুপর্ণা আঙ্গিরসীর্দিব্যা যা রঘটো বিদুঃ। বয়াংসি হংসা বিদুর্যাশ্চ সর্বে পতত্ৰিণঃ। মৃগা যা বিদুরোষধীস্তা অম্মা অবসে হুবে ॥২৪৷৷ যাবতীনামোষধীনাং গাবঃ প্রশ্নন্ত্যস্ন্যা যাবতীনামজাবয়ঃ। তাবতীস্তুভ্যমোষধীঃ শৰ্ম যচ্ছাভূতাঃ ॥২৫৷৷ যাবতীষু মনুষ্যা ভেষজং ভিষজো বিদুঃ। তাবতীর্বিশ্বভেষজীরা ভরামি স্বামভি ॥ ২৬৷৷ পুষ্পবতীঃ প্রসূমতীঃ ফলিনীরফলা উত। সংমাতর ইব দুহ্রামম্মা অরিষ্টতাতয়ে ॥২৭৷৷ উৎ ত্বাহার্ষং পঞ্চশলাদখো দশশলাদুত। অথো যমস্য পড়ীশাদ বিশ্বম্মাদ দেবকিন্বিষাৎ ॥২৮৷
বঙ্গানুবাদ –বিভিন্ন বর্ণ ও বিভিন্ন আকারশালিনী ঔষধির সম্মুখে সমুপস্থিত হয়ে আমরা ব্যাধি বিনাশ করণের প্রার্থনা জ্ঞাপন করছি। আকাশ যার পিতা, পৃথিবী যার মাতা এবং সমুদ্র যার মূল সেই ঔষধিসমূহ আমাদের যক্ষ্মা ব্যাধি হতে রক্ষা করুক। হে রোগী! তোমার যক্ষ্মা ব্যাধিকে জল ও দিব্য ঔষধিসমূহ প্রতি অঙ্গ হতে আকর্ষণ (টেনে বাহির) করে নিক। হে রোগী! বহু শাখাশালিনী, বিস্তারশালিনী, স্তম্বশালিনী, কূপশালিনী, জীবনদায়িনী, দৈবাত্মক ঔষধিসমূহকে তোমার নিমিত্ত গ্রহণ (সংগ্রহ) করছি।..কল্যাণের নিমিত্ত জীবনদায়িনী, ক্রোধরহিত, রোপনশালিনী পুষ্পমতী জীবন্তীকে আমি আহ্বান করছি। চৈতন্যতাযুক্ত মন্ত্ররূপ ঔষধিসমূহ এই পুরুষের রোগকে নষ্ট করার নিমিত্ত এইস্থানে আগত হোক।…জলোদর ইত্যাদি রোগের বিনাশক, বিষ-প্রশমক, রোগের উপর প্রবল, কাস ইত্যাদি ব্যাধিকে নাশ করণশালিনী এবং কৃত্যাসমূহকে খণ্ডনশালিনী ঔষধিসমূহ এই স্থানে আগত হোক।…স্বয়ং নীতা, ব্যাধিসমূহকে দমনে সমর্থ, মন্ত্রের দ্বারা অভিমন্ত্রিত ঔষধিসমূহ এই গ্রামস্থ গাভী, অশ্ব ইত্যাদি পশু এবং মনুষ্যগণের রক্ষক হোক।…যে ঔষধিসমূহ চক্ষের সম্মুখে অবস্থিত, যাদের মধ্যে রোগ-নাশক তত্ব বিদ্যমান রয়েছে, যারা অজ্ঞাত রয়েছে, সেই সকল ঔষধি সমূহকে আমরা জ্ঞাত আছি। ঔষধিসমূহের দর্প পীপল, রাজা সোম এবং হবি হলো অমৃত। ধান্য এবং যব-রূপ ঔষধিসমূহ অন্তরিক্ষ হতে বৃষ্টি হওয়ার কারণে অন্তরিক্ষের সন্তন-স্বরূপ এবং অমৃতত্বের দ্বারা যুক্ত।…ঔষধিসমূহের অমৃত রূপ বল, এই পুরুষকে ভোজন করানো হচ্ছে; আমি এই ঔষধি-সেবনকারীকে শতবর্ষ আয়ুসম্পন্ন করছি।…অহিংসিত গাভীবর্গ যে ঔষধিকে ভক্ষণ করে থাকে, যে ঔষধিগুলিকে মেষ, ছাগ ইত্যাদি ভক্ষণ করে, তাদের সকলের সাথে এই ঔষধিসমূহ তোমাকেও (রোগীকেও) সুখ প্রদান করুক।…হে রোগী! আমি তোমাকে পঞ্চ শলাকা, দশ শলাকাশালী কাষ্ঠের পাদবন্ধন হতে এবং যমের পাদবন্ধন হতে মুক্ত করার নিমিত্ত মন্ত্রশক্তির দ্বারা প্রাপ্ত করে নিয়েছি।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –যক্ষ্মাদিসর্বব্যাধিভৈষজ্যে কর্মণি যা বভ্রবঃ ইত্যর্থসূক্তেন দশরক্ষশকলানাং লাক্ষাহিরণ্যেনবেষ্টিতং মনিং কৃত্বা সম্পত্য অভিমন্ত্র পুনঃ সূক্তং জপিত্বা বর্ধতি। তদ উক্তং কৌশিকেন।…পিলশঃ উদুম্বরঃ জম্মুঃ কাম্পিল্য বঙ্ঃ শিরীষঃ সুক্ত্যঃ বরণঃ বিঃ জঙ্গিডঃ কুটকঃ গৃহ্য গলাবলঃ বেতসঃ শিম্বলঃ সিপুনঃ স্যন্দনঃ অরণিকা অশ্ময়োক্তঃ তুঃ পূতদারুরিতি শান্তা বৃক্ষাঃ। এতেষাং কমানামপি দশানাং শকলৈনির্মিতঃ শাকলো মণিঃ। তথা সৌভ্রামণিযাগে অনেন সুক্তেন ওষধীভিঃ সন্ধীয়মানাং সুরাং অনুমন্ত্রয়েত। তদ্ উক্তং বৈতানে। (বৈ. ৫৩)। (৮কা. ৪অ. ১সূ.)।
টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি যক্ষ্মা, জলোদর ইত্যাদি রোগের চিকিৎসা কর্মে বিনিযুক্ত হয়ে থাকে। এই কর্মে এই মন্ত্রে দশবৃক্ষখণ্ডের লাক্ষাহিরণ্যের দ্বারা বেষ্টিত মণি অভিমন্ত্রিত ও জপ পূর্বক বন্ধন করণীয়। পলাশ, উদুম্বর, জম্বু ইত্যাদি উল্লেখিত বৃক্ষের খণ্ডে মণি নির্মাণ করণীয়। এই সূক্তের দ্বারা ঔষধিরূপ সন্ধীয়মান সুরা অনুমণীয়। (৮কা. ৪অ. ১সূ)।
.
দ্বিতীয় সূক্ত; শত্ৰুপরাজয়ঃ
[ঋষি : ভৃগ্বঙ্গিরা। দেবতা : ইন্দ্র, বনস্পতি ও পরসেনাহনন। ছন্দ : অনুষ্টুপ, বৃহতী, পংক্তি, জগতী, ত্রিষ্টুপ]
মন্ত্রঃ ইন্দ্রো মন্থতু মন্থিতা শক্রঃ নূরঃ পুরন্দরঃ। যথা হনাম সেনা অমিত্রাণাং সহস্ৰশঃ ॥১৷৷ অথর্ববেদ-সংহিতা পূতিরঞ্জুরুপানী পূতিং সেনাং কৃপোত্বমুম্। ধূমমগ্নিং পরাদৃশ্যামিত্রা হৃৎস্য দধতাং ভয়ম ॥২॥ অমূনশ্বথ নিঃ শৃণীহি খাদামুন খদিরাজির। তাজদ্ভঙ্গ ইব ভজন্তাং হনো বধকো বধৈঃ ॥৩৷৷ পুরুষানমূন পরুষাহুঃ কৃণোতু হনো বধকো বধৈঃ। ক্ষিপ্রং শর ইব ভজ্যাং বৃহজ্জালেন সন্দিতাঃ ॥৪॥ অন্তরিক্ষং জালমাসীজ্জালদন্ডা দিশো মহীঃ। তেনাভিধায় দসমূনাং শক্রঃ সেনামপাবপৎ ॥৫৷৷ বৃহদ্ধি জালং বৃহতঃ শস্য বাজিনীবতঃ। তেন শত্রুনভি সর্বান্ জ যথা ন মুচ্যাতৈ কতমশ্চনৈম ॥৬৷৷ বৃহৎ তে জালং বৃহত ইন্দ্র শূর সহস্রার্ঘস্য শতবীর্যস্য। তেন শতং সহস্ৰমযুতং ন্যবুদং জঘান শক্রো দস্যুনামভিধায় সেনয়া ॥৭৷৷ অয়ং লোকো জালমাসীচ্ছস্য মহতো মহা। তেনাহমিন্দ্রজালেনামুংস্তমসাভি দমি সর্বান ॥৮॥ সেদিরুগ্রা বৃদ্ধিরার্তিশ্চানপচনা। শ্ৰমস্তন্দ্রীশ্চ মোহশ্চ তৈরমূভি দমি সর্বান্ ॥৯॥ মৃত্যবেহুমূন প্র যচ্ছামি মৃত্যুপাশৈরমী সিতাঃ। মৃত্যোর্যে অঘলা দূতাস্তেভ্য এনা প্রতি নয়ামি বদ্ধা ॥১০। নয়তামূন্ মৃত্যুদূতা যমদূতা অপোম্ভত। পরঃসহস্রা হ্যাং তৃণেনো মর্তং ভবস্য ॥১১৷৷ সাধ্যা একং জালদন্ডমুদ্যত্য যন্ত্যোজসা। রুদ্রা একং বসব একমাদিত্যৈরেক উদ্যতঃ ॥১২। বিশ্বে দেবা উপরিষ্টাদুজন্তো যন্ত্রোজসা। মধ্যেন ঘন্তো যন্তু সেনামঙ্গিরসো মহীম্ ॥১৩ বনস্পতী বানম্পত্যানোষধীরুত বীরুধঃ। দ্বিপাচ্চতুষ্পদিষ্ণামি যথা সেনামমূং হন ॥১৪৷৷ গন্ধর্বারসঃ সপা দেবা পুণ্যজনা পিতৃ। দৃষ্টানদৃষ্টানিষ্ণামি যথা সেনামমূং হন ॥১৫৷৷ ইম উপ্তা মৃত্যুপাশা যানাক্রম্য ন মুচ্যসে। অনুষ্যা হন্তু সেনায়া ইদং কূটং সহস্ৰশঃ ॥১৬৷৷ ঘর্মঃ সমিদ্ধো অগ্নিনায়ং হোমঃ সহস্ৰহঃ। ভবশ্চ পৃশ্নিবাহুশ্চ শর্ব সেনামমৃং হতম্ ॥১৭৷৷ মৃত্যোরাষমা পদ্যাং ক্ষুধং সেদিং বধং ভয়। ইন্দ্রাশ্চাক্ষুজালাভ্যাং শর্ব সেনামমূং হতম্ ॥১৮ পরাজিতাঃ প্র এসতামিত্রা নুত্তা ধাবত ব্ৰহ্মণা। বৃহস্পতিপ্রণুত্তানাং মামীষাং মোচি কশ্চন ॥১৯৷ অব পদ্যন্তামেমায়ুধানি মা শক প্রতিধামিমুম্।। অথৈং বহু বিভ্যতামিষবো ঘন্তু মর্মণি ॥ ২০ সং ক্রোশতামেনান্ দ্যাবাপৃথিবী সমন্তরিক্ষং সহ দেবতাভিঃ। মা জ্ঞাতারং মা প্রতিষ্ঠাং বিদন্ত মিথো বিঘ্ননা উপ যন্তু মৃত্যুম্ ॥২১। দিশশ্চতস্রোহশ্বতর্যো দেবরথস্য পুরোশাঃ শফা অন্তরিক্ষমুদ্ধিঃ দ্যাবাপৃথিবী পক্ষসী ঋতবোহভীশবোহন্তর্দেশঃ কিঙ্করা বা পরিরথ্যম্ ॥২২ সংবৎসরো রথঃ পরিবৎসররা রথোপস্থা বিরাডীষাগ্নী রথমুখ। ইন্দ্রঃ সব্যষ্ঠাশ্চমাঃ সারথিঃ ॥২৩ ৷৷ ইতো জয়েতো বি জয় সং জয় জয় স্বাহা। ইমে জয়ন্তু পরামী জয়ন্তাং স্বাহৈভ্যো দুরাহামীভ্যঃ। নীললোহিতেনামূনভ্যবতনোমি ॥২৪৷৷
বঙ্গানুবাদ –ইন্দ্র দেবতা পরাক্রমী, সামর্থশালী এবং শত্রু-সেনাগণকে মথিত করণশালী। তিনি অগ্নিকে মন্থন করুন যাতে আমরা শত্রুগণকে হননে সমর্থ হই। অগ্নিতে পতনশালিনী জীর্ণ বন্ধন-রশি শত্রুসেনাগণকে জীর্ণ করুক। অগ্নির ধূমকে দর্শনমাত্রই শত্রুবর্গ ভয়ভীত হয়ে যাক। হে পীপল! হে খদির! এইসকল গমনশীল শত্রুগণকে ভক্ষণ করো।…বধক কাষ্ঠ হিংসাত্মক উপায়সমূহের দ্বারা এই শত্রুগণকে হিংসা করুক; পরুষ বস্তু এদের বাধা প্রদান করুক। যেমন বৃহৎ জালের দ্বারা বাণ ভঙ্গ হয়ে যায়, তেমনই এই শত্রু ভঙ্গ হোক।…মহান্ ইন্দ্রদেবের জাল অত্যন্ত বিশাল। হে ইন্দ্রদেব! সেই জালের দ্বারা শত্রুবর্গকে পরাজুখ করো। এদের মধ্যে কেউই যেন অবশিষ্ট না থাকে।…নিন্দা, তন্দ্রা, মোহ, আর্তি, নির্ঋতি, বৃদ্ধি ইত্যাদির দ্বারা সেই শত্রুসমূহকে আচ্ছাদিত করছি। এই শত্রু মৃত্যুর পাশের দ্বারা বন্ধন প্রাপ্ত হয়েছে; আমি তাকে মৃত্যুরই অধীন করে দিচ্ছি। এই শত্রুগণকে বন্ধন পূর্বক মৃত্যুদূতবর্গের নিকট গমন করছি। হে মৃত্যুদূতগণ! এই শত্রুগণকে নিয়ে গমন করো। হে যমদূতগণ! এদের সহস্র পরাক্রমীকে নিপাতিত করো। রুদ্রের আয়ুধ এদের শেষ করে দিক। জালদণ্ড গ্রহণ করে সাধ্য দেবতা শত্রুগণকে নিয়ে যাচ্ছেন। একটি জালদণ্ডকে রুদ্র, একটিকে বসু এবং একটিকে আদিত্য গ্রহণ করেছেন।…বনস্পতিসমুদায় তাঁদের দ্বারা নির্মিত হওনশালিনী ঔষধিসকল, লতাসমূহ এবং দ্বিপদ ও চতুষ্পদগণকে মন্ত্রশক্তির দ্বারা প্রেরিত করছেন। এইগুলি সবই সেই শত্রুসেনাকে সংহার করুক। হে শত্রু! এই মৃত্যুপাশের বন্ধনকে তোমরা লঙ্ঘন করতে করতে সমর্থ হবে না। এই কূট (জাল) ঐ শত্রুসেনাকে নানাভাবে সংহার করে ফেলুক।…এই হবি অগ্নির দ্বারা তপ্ত হয়ে আছে, এই হোম রিপু-নাশক শক্তির সাথে যুক্ত। হে ভব, শর্ব দেবতাগণ! আপনারা শত্রু সেনাকে সংহার করুন।…অম্বর, ধরা, অন্তরিক্ষ ও দেবগণ এই শত্রুদলকে অভিশাপিত করুন। এরা যেন কোনওভাবে প্রতিষ্ঠা প্রাপ্ত না হয়। এরা যেন। কোনও অথর্ববিদের আশ্রয় প্রাপ্ত না হতে পারে। এরা পরস্পর বিদ্বেষপরায়ণ হয়ে বিনষ্ট হয়ে যাক। অগ্নির রথকে আকর্ষণকারিণী হলো চারটি দিক; পুরোডাশ হলো পশুর পাদ-খুর; আকাশ-পৃথিবী, পক্ষদ্বয় এবং ঋতুসমূহ এবং লাগাম স্বরূপ। সম্বৎসর তার রথ, পরিবৎসর রথের গদি (সিংহাসন), বিরাট এর ঈষা, অগ্নিমুখ ও চন্দ্রমা এর সারথি। ইন্দ্র একে চালিতকারী এবং এতে উপবেশনকারী। হে রাজন্! এদিক হতে বিজয়, ঐদিক হতে বিজয়, সকল দিক হতে জয়ই জয়। আমাদের যজমান বিজয় লাভ করুন, শত্ৰু পরাভূত হোক; এই মিত্রবর্গের বিজয়ের নিমিত্ত এই আহুতি স্বাহুত হচ্ছে। নীল ও লাল বর্ণের সূত্রের (বা রজ্জ্বর) দ্বারা শত্রুগণকে বেষ্টন করছি, তাদের নিমিত্ত আহুতি দুরাহুতি হোক।
সূক্তস্য বিনিয়োগঃ –ইন্দ্রো মন্থতু ইতি অর্থসূক্তস্য শত্রুক্ষয়শভয়নাশনশজয়স্বকীয় বলবর্ধনকর্মসু বিনিয়োগ। তানি কর্মাণি সেনাকর্মাণি নাম ভবন্তি। তত্র সেনাগ্নিসিদ্ধ্যর্থং পূতিরক্ষ্ম (২) ইত্যধর্চেন অগ্নিপাতদেশে জীর্ণাং রঞ্জুং অবধায় অশ্বত্থাবধকয়োর্নাম পিপ্পলকরিমালকয়োঃ কাষ্ঠমোঃ ইন্দ্রো মন্থতু ইতি ঋচা অগ্নিং মন্থতি। ধূমং দৃষ্টা অগ্নিপদরহিতেনার্ধৰ্চেন অনুমন্ত্রয়তে ॥ (৮কা. ৪অ. ২সূ.)। টীকা –উপযুক্ত সূক্তটি অর্থসূক্ত। এই সূক্তের দ্বারা সূত্রানুসারে শত্রুক্ষয়, শত্রুভীতি ইত্যাদির বিনাশ ও আপন বলবর্ধন কর্মে বিনিয়োগ কর্তব্য। এই কর্মগুলি সেনাকর্ম নামে অভিহিত। এছাড়া এই সূক্তের বিভিন্ন মন্ত্রাংশে এরসমিধ, পলাশসমিধ, তিনিসমিধ, খদিরসমিধ, শরসমিধ সংগ্রহ, এবং সপত্নক্ষয় ইত্যাদি কর্ম সাধিত হয়। কৌশিক সূত্রে (২/৭) এগুলির যথাযথ বিনিয়োগ পাওয়া যায় ॥ (৮কা. ৪অ. ২সূ.)।