অজানা উত্তর
এ যুগে একটা ঘটনা বারবার চোখে পড়ে। কিছু জিজ্ঞাসু লোক বিজ্ঞতর প্রবীণ তাত্ত্বিক বা আচার্যের কাছে যাচ্ছেন, আত্মা বা ব্রহ্ম অথবা এ দুই বিষয়ে প্রশ্ন নিয়ে। কর্মকাণ্ডে কিছু প্রশ্নের আলোচনা ছিল যজ্ঞের প্রণালী নিয়ে, কখনও-বা অভীষ্ট ফল নিয়ে। জিজ্ঞাসা ছিল দেবতাদের সম্বন্ধে, কিন্তু তখন আত্মা বা ব্ৰহ্ম ধর্মজগতে কোনও গুরুত্বপূর্ণ সত্তা বলে স্বীকৃত ছিল না। মরণোত্তর অবস্থা সম্বন্ধে ধারণা ছিল অস্পষ্ট, জন্মান্তরবাদ তখনও দেখা দেয়নি। এই সব নতুন তত্ত্বের উদ্ভব ও বিকাশের যুগে তাই জিজ্ঞাসাগুলি অন্য চেহারায় উপস্থিত হয়ে সমাধান দাবি করল। এ সমাধানের দায় জ্ঞানজ্যেষ্ঠ ধর্মতত্ত্ববিদদের। কাজেই মানুষ তাঁদের কাছে আসতে লাগল। মঠ বা আশ্রমের গ্রন্থাগার, পাঠকক্ষ বা সাধারণ্যে অনুষ্ঠিত আলোচনা ও ভাষ্যের ওপরে প্রতিষ্ঠিত আস্য বা লিখিত কোনও বাস্তব দর্শনের বিকাশের অনুকূল এমন কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সহকারিত্ব তখন সহজলভ্য ছিল না।[১]
গ্রন্থাগার বা পাঠাগার ছিল না, কিন্তু ধীরে ধীরে বিকল্প এক প্রণালীতে দার্শনিক তত্ত্বগুলি অস্পষ্ট ভাবে এবং মাঝে মাঝে পরস্পরবিরোধী উপাদান নিয়েও সংহত হচ্ছিল। এই প্ৰণালীতে একটি ঐতিহ্য গড়ে উঠেছিল, তার নাম ‘ব্রহ্মোদ্য’— ব্রহ্মবিষয়ে আলোচনা ও বিতর্ক সভা, কখনও পরিকল্পিত ভাবে আয়োজিত, কখনও-বা তাৎক্ষণিক প্রেরণায় অনুষ্ঠিত। ব্রহ্ম ও আত্মা যেহেতু এ যুগের নতুন তত্ত্ব, এবং এ দুটির সমানার্থতা যেহেতু তখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিপাদ্য এবং পূর্ববর্তী ধর্মসাহিত্য— সংহিতা-ব্রাহ্মণ-আরণ্যক— যেহেতু এগুলি নিয়ে আলোচনা করেনি তাই এ চর্চার ঐকান্তিকতা আরও বেশি চোখে পড়ে। চিন্তাশীল সকল মানুষই হয়তো তখন কমবেশি ব্রহ্মবিষয়ে অবহিত, কেউ কেউ বিচলিতও। তাদের কারও কারও কাছে এ দুটি তত্ত্বের স্বরূপ ও এদের সম্পর্কের নিষ্পত্তি জীবনের পক্ষে আত্যন্তিক জিজ্ঞাসার রূপ পরিগ্রহ করেছিল। খুব বেশি আনুষ্ঠানিক ব্রহ্মোদ্যের সন্ধান পাওয়া যায় না, তবে অনেকগুলি উপাখ্যানে স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে কিছু অনুসন্ধিৎসু মানুষের বিজ্ঞতর ব্রহ্মজ্ঞানীর কাছে আলোচনা করতে যাওয়ার কথা শুনি। আবার ছান্দোগ্যোপনিষদে অন্য ধরনের একটি কাহিনিতে দেখি ক্ষত্রিয় রাজা জনকের কৌতূহল হল, বেদজ্ঞ ব্রাহ্মণদের মধ্যে সবচেয়ে অগ্রসর কে তা নির্ণয় করার। এক হাজার গাভির দুটি দুটি শিংয়ে দশ দশ পাদ সোনা বেঁধে রেখে তিনি ঘোষণা করলেন ব্রহ্মজ্ঞানীদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ তিনিই স্বর্ণশৃঙ্গ গাভিগুলি পাবেন। সমবেত ব্রাহ্মণদের বললেনও, আপনাদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞানী তিনিই এগুলি পাবেন। এটি প্রচলিত পদ্ধতিতে একটি ব্রহ্মোদ্যের প্রস্তুতি: ব্রাহ্মণরা পরস্পরের সঙ্গে তর্কবিতর্ক করবেন, শ্রেষ্ঠত্ব নিষ্পন্ন হলে দান দেওয়া হবে। ঘটনাটা ঘটল একটু অন্য ভাবে, কারণ যাজ্ঞবল্ক্য তাঁর শিষ্যদের বললেন, গাভিগুলিকে তাঁর আশ্রমে নিয়ে যেতে। এতে সমবেত ব্রাহ্মণরা আপত্তি করলেন, ব্রহ্মজ্ঞানে শ্রেষ্ঠ যে ‘ব্রহ্মিষ্ঠ’ তাঁকে আমরা প্রণাম করি। আমরা তো সব গোকাম (গাভির কামনাতেই সমবেত)।[২] তখন সমবেত ব্রাহ্মণরা একে একে যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করতে লাগলেন এবং যথাসম্ভব উত্তরও পেলেন। ফলে যাজ্ঞবল্ক্যই যে ব্রহ্মিষ্ঠ তা এই প্রলম্বিত ব্রহ্মোদ্যে প্রমাণিত হল। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যজ্ঞে যেমন দক্ষিণা ছিল, ব্রহ্মোদ্যেও প্রায়ই দক্ষিণা মিলত। কর্মকাণ্ডে যজ্ঞক্রিয়ার পারিশ্রমিক হল দক্ষিণা আর ব্রহ্মোদ্যে জ্ঞানের পুরস্কার দক্ষিণা।
প্রতিদ্বন্দ্বী অন্য ব্রহ্মজ্ঞানী বা ব্রহ্মজিজ্ঞাসুরাই একে একে যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করলেন, যাজ্ঞবল্ক্য উত্তরও দিলেন, কিন্তু উত্তরগুলিকে সব সময়ে প্রশ্নের নিরসনের পক্ষে যথার্থ বা যথেষ্ট মনে হয় না।
প্রথমে অশ্বল প্রশ্ন করলেন, ‘সব কিছুই যেহেতু মৃত্যু দ্বারা আবৃত, তখন যজমান কোন্ উপায়ে মৃত্যুকে অতিক্রম করবেন?— যদিদং সর্বং মৃত্যুনাভিপন্নং কেন যজমানো মৃত্যোরাপ্তিমতিমুচ্যেত।’ (ছা. উ. ৩:১:৩)
যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘যজমানের বাক্ই হোতা। এই বাক্ অগ্নিদেবতা এবং অগ্নিই হোতা, এই অগ্নিই মুক্তি ও অতিমুক্তির উপায়— হোত্রত্বিজাঽগ্নিনা বাচা বাগ্বৈ যজ্ঞস্য হোতা তদ্ যেয়ং বাক্ সোহয়মগ্নিঃ স হোতা স মুক্তিঃ সাহতিমুক্তিঃ।।’ (৩:১:৩)
অগ্নির দ্বারা কী ভাবে মৃত্যুকে অতিক্রম করা যায় তার কোনও ইঙ্গিত দেওয়া নেই। যজমান, হোতা, বাক্, অগ্নি সবই যজ্ঞে বহু পূর্ব থেকেই ছিল, কিন্তু মৃত্যুও ছিল, তাকে অতিক্রম করার পথ জানা ছিল না বলেই অশ্বলের প্রশ্ন। যাজ্ঞবন্ধ্যের উত্তর মৃত্যুর মতো প্রকাণ্ড সমস্যার সমাধানের যথার্থ সমাধান নয়।
অশ্বল তাই প্রশ্ন করেন, ‘এই অন্তরিক্ষ যখন নিরবলম্বন মনে হচ্ছে, তখন যজমান কী আশ্রয় করে স্বর্গলোক লাভ করবেন?— যদিদমন্তরিক্ষমনারন্বণমিব কেনাক্রমণেন যজমানঃ স্বৰ্গং লোকমাত্ৰমত।।’ (ছা. উ. ৩:১:৬)
উত্তরে যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, ‘ঋত্বিক-রূপ ব্রহ্মা ও মনরূপ চন্দ্রদেবের দ্বারা। ওই চন্দ্ৰই মুক্তি, ওই মুক্তিই অতিমুক্তি।’ এর পরের ক’টি ঋকে স্তুতি করবেন হোতা, অধ্বর্যু ক’রকম আহুতি দেবেন, ব্রহ্মা ক’জন দেবতার দ্বারা যজ্ঞকে রক্ষা করবেন, উদ্গাতা কত রকম স্তোত্র গান করবেন, অশ্বল এই সব প্রশ্ন করেন এবং যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দেন। সঙ্গে সঙ্গে এইগুলির দ্বারা যথাক্রমে পৃথিবীর সব প্রাণী, দেবলোক, অনন্তলোক, পৃথিবীলোক, অন্তরিক্ষলোক ও দ্যুলোক জয় করা যায় তা-ও বলবেন। দেখা যায়, মৃত্যু অতিক্রম করা যে-প্রশ্নটি তখনকার এবং চিরকালই— সব মানুষকে চিন্তাকুল করে রেখেছে তার কোনও পর্যাপ্ত উত্তর এতে নেই। স্তুতি, আহুতি এবং যজ্ঞরক্ষায় দেবতাদের নিয়োগ, এ সব তো পূর্ব হতেই চলিত ছিল, তাতে মৃত্যুকে অতিক্রম করার কোনও সম্ভাবনা ছিল না বলেই অশ্বলের প্রশ্ন। এর পরে জরৎকারব আতভাগ প্রশ্ন করেন, ‘এই সমস্তই যখন মৃত্যুর অন্ন তখন কোন্ সেই দেবতা, মৃত্যু যাঁর অন্ন?’ উত্তর, ‘অগ্নিই মৃত্যু, অগ্নি জলের অন্ন, যিনি এমন জানেন তিনি পুনমৃত্যু জয় করেন।[৩]
এর আগে আর্তভাগ যজ্ঞের আটটি ‘গ্রহ’ (আহুতি গ্রহণ) সম্বন্ধে প্রশ্ন করলে যাজ্ঞবল্ক্য যথাক্রমে প্রাণ, বাক্, জিহ্বা, চক্ষু, শোত্র, মন, হস্ত ও ত্বককে ওই গ্রহের সমার্থক বললেন। চোখে পড়ে, যেহেতু যজ্ঞই তখনও প্রধান ও প্রচলিত ধর্মাচরণ তাই যজ্ঞীয় উপাদানগুলিকে মানুষের বাহ্য ও অন্তরিন্দ্রিয়ের সঙ্গে একাত্ম করে দেখিয়ে যজ্ঞের গ্রহণযোগ্যতা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চলছে। তার পর আতভাগ মৃত্যু সম্বন্ধে প্রশ্নটি করেন এবং উত্তরে একটি খুব লক্ষ্যণীয় কথা হল, পুনমৃত্যু; যে-সমাজে পুনর্জন্মের কল্পনাটি গৃহীত হয়েছে সেখানে মৃত্যুকে উত্তরণ করার প্রসঙ্গে পুনমৃত্যু জয় করাটাকে একটা পরমার্থ বলা হচ্ছে। মৃত্যুযন্ত্রণা মানুষ দেখেছে, বারেবারে সে-যন্ত্রণার সম্মুখীন হওয়া ভয়াবহ দুর্ভাগ্য, এবং পুনমৃত্যুর পরেই তো পুনর্জন্ম, কাজেই পরিত্রাণ নেই ধারাবাহিক জন্মমৃত্যুর পুনরাবর্তন থেকে। এই পরিপ্রেক্ষিতে পুনমৃত্যু উত্তরণ করার প্রলোভন খুবই বড় প্রলোভন।
এর পর ভুজ্যু লাহ্যায়নি যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করেন, ‘পারিক্ষিতরা কোথায় গিয়েছেন?— ক পারিক্ষিতা অভবন্নিতি।’ (৩:৩:১) পারিক্ষিতরা রাজচক্রবর্তী ও অশ্বমেধ-যজ্ঞকারী ছিলেন। উত্তরে যাজ্ঞবল্ক্য বলেন, ‘অশ্বমেধবাজীরা যেখানে যান তাঁরা সেখানে গেছেন।’’সে কোথায়’, প্রশ্ন করলে যাজ্ঞবল্ক্য অনেক ঘুরপথে গান্ধর্ব বায়ুলোকের উল্লেখ করেন। লক্ষ্য করি, যাজ্ঞবল্ক্য যে-উত্তর দিলেন সে তাঁর নিজস্ব মত মাত্র। তার কোনও প্রমাণ নেই, এবং তা আত্মজ্ঞান বা ব্রহ্মজ্ঞানের সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নয়। এর পরে চাক্রায়ণ প্রশ্ন করেন:
—যিনি সাক্ষাৎ অপরোক্ষ ব্রহ্ম, যিনি সর্বান্তর আত্মা তাঁর বিষয়ে আমাকে বিশেষ করে বলুন।
—সর্বান্তর ইনিই আপনার আত্মা।
—যাজ্ঞবল্ক্য, কোন্ আত্মা সর্বান্তর?
—যিনি প্রাণের দ্বারা প্রাণক্রিয়া, অপানের দ্বারা অপানক্রিয়া, ব্যানের দ্বারা ব্যানক্রিয়া, উদানের দ্বারা উদানক্রিয়া করেন, সর্বান্তর তিনিই আপনার আত্মা।
—এ তো বিপরীত নির্দেশ।
—দৃষ্টির দ্রষ্টাকে, শ্রবণের শ্রোতাকে, মনোবৃত্তির মননকারীকে, বুদ্ধির বোদ্ধাকে কেউ জানতে পারে না; সর্বান্তর ইনিই আপনার আত্মা, ইনি ছাড়া আর সব কিছুই ধ্বংসশীল। (ছা. উ. ৩:৪:১-২)
এখানেও আত্মার স্বরূপ-সত্তা সম্পর্কে প্রশ্নের বাস্তব উত্তর হল, দেহের মধ্যে থেকে যিনি দেহমনের সকল ক্রিয়ার যথার্থ কর্তা তিনিই আত্মা। এখানেও ওই দেহব্যতিরিক্ত আত্মা নামের এক সত্তাকে প্রতিষ্ঠা করার বিশেষ চেষ্টা। এবং বেশ চোখে পড়ে যে এ তত্ত্বকে নানা ভাবে বিশদরূপে ব্যাখ্যা করতে হচ্ছে, কারণ সমাজমানসে এর পূর্বে আত্মার অর্থ ছিল দেহ, তাই এখন নতুন যে আত্মাকে উপস্থাপিত করা হচ্ছে সে দেহব্যতিরিক্ত বলে সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে, তাই বিভিন্ন দৈহিক ও মানস ক্রিয়ার থেকে স্বতন্ত্র বলে উল্লেখ করে বোঝানো হচ্ছে যে, এ এক অন্য আত্মা। এর ভিন্নত্ব, পৃথকত্ব ভাল ভাবে প্রতিষ্ঠিত না হলে একে ব্রহ্মের সঙ্গে অভিন্ন বলা যাবে কেমন করে?
কহোল এবার প্রশ্ন করলেন, ওই একই প্রশ্ন :
—কোটি সর্বান্তর আত্মা?
—ক্ষুধা, পিপাসা, শোকমোহ, জরামৃত্যুর অতীত যিনি, যিনি পুত্র, বিত্ত ও লোককামনা থেকে মুক্ত হয়ে ভিক্ষাচার্যা গ্রহণ করেছেন তিনিই আত্মবিদ্যা লাভ করেন, সেই বলে বলীয়ান হয়ে মননশীল হন। মনন ও মননহীনতার পার্থক্য সম্যক ভাবে জেনে তিনি ব্রাহ্মণ হবেন।
—সে ব্রাহ্মণের আচরণ কেমন হবে?
—তাঁর আচার যেমনই হোক তিনি ব্রাহ্মণই, এর বাইরে সব কিছু বিনাশশীল। (ছা. উ. ৩:৫:১)। এখানে দু-তিনটি বিষয় প্রণিধানযোগ্য, প্রথমত সব রকম কামনাকে জয় করা ব্রহ্মবিদ্যার একটি প্রাক্শর্ত, তার পরে মননকে আশ্রয় করে ভিক্ষাটন করাও চাই। স্বভাবতই মনে পড়ে, এ যুগে জৈন, বৌদ্ধ, আজীবিক এবং আরও বহু চিন্তাশীল ব্যক্তির প্রস্থান যারা অবলম্বন করেছিল তারা সকলে আগে থেকেই এক ধরনের বিশ্বাসে এই ধরনের জীবনই যাপন করছিল। কাজেই এখানে ‘ব্রাহ্মণ’ কথাটির ওপরে একটা বাড়তি জোর দেওয়া হয়েছে। ওই প্রস্থানের লোকেরা নিজেদের ব্রাহ্মণ বলত না, এখন শুনছি তার আচরণ যেমনই হোক না কেন সে-ই খাঁটি ব্রাহ্মণ। উপনয়ন, ব্রহ্মচর্য, গার্হস্থ্য নিয়ে যে-ব্রাহ্মণের সংজ্ঞা ছিল তার ওপরে নতুন এক সংজ্ঞা দেওয়া হচ্ছে ব্রাহ্মণ্যের: সর্বকামনাত্যাগী মননশীল, ভিক্ষাজীবী। অর্থাৎ, যে-সমাজব্যবস্থায় থেকে নিজের গ্রাসাচ্ছাদনের জন্যে উৎপাদনকর্ম থেকে বিরত হয়, মননের গাম্ভীর্য রক্ষা করতে যে-পরান্নজীবী প্রব্রজ্যাশীল। এ প্রব্রজ্যা চতুরাশ্রমের ব্রহ্মচর্য নয়, গার্হস্থ্যও নয়, এ হল ওই বেদবিরোধী প্রস্থানগুলির তুল্য একটি জীবনযাত্রার আকল্প, যার দ্বারা ব্রাহ্মণ্য সংস্থার মধ্যেও নতুন ব্রহ্মবাদী, আত্মবাদীরও স্থান হয়। এই ভাবে নির্মিত হচ্ছে, বানপ্রস্থ ও যতি আশ্রম। এবং একে গুরুত্ব দেওয়ার জন্যে বলা হচ্ছে সেই বিখ্যাত কথাটি ‘অত্যোহন্যদাত’— এর বাইরে সব কিছুই দুঃখের, কারণ তা ধ্বংসশীল।
এর পরে গার্গী প্রশ্ন করলেন। এর মানে এই ব্রহ্মোদ্যে জনকের দেওয়া স্বর্ণশৃঙ্গ গাভিগুলির প্রার্থিনী হয়ে তর্কে জয় করবার আশায় এই একটি ব্রহ্মবাদিনী নারীই উপস্থিত ছিলেন। তিনি বললেন:
—এ সমস্তই যখন জলে ওতপ্রোত, তখন জলের আধার কী?
—বায়ু
—তার?
—অন্তরিক্ষলোকসমূহ।
—তাদের?
—গন্ধর্বলোক, সেটি আদিত্যলোকে, সেটি চন্দ্রলোকে, সেটি নক্ষত্রলোকে, সেটি দেবলোকে, সেটি ইন্দ্রলোকে, সেটি প্রজাপতিলোকে, সেটি ব্রহ্মলোকে।
— সেটি?
যাজ্ঞবন্ধ্যের অসহিষ্ণু উত্তর ‘যে দেবতা প্রশ্নের অতীত আপনি তাঁর সম্বন্ধে প্রশ্ন করছেন।’
আরও অনেকে যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করেছিলেন কিন্তু একমাত্র গার্গীকেই যাজ্ঞবল্ক্য ধমকে বলেছিলেন, ‘তোমার মাথা খসে পড়বে যদি আর বেশি প্রশ্ন কর’।[৪] সে কি গার্গী নারী বলে? যাজ্ঞবল্ক্যকে কোণঠাসা করেছিলেন বলে? না যে-দেবতা প্রশ্নের অতীত তাঁর বিষয়ে প্রশ্ন করেছিলেন বলে? কিন্তু গার্গীর শেষ প্রশ্নের উত্তর তো ব্রহ্মে গিয়ে ঠেকে এবং এটা তো ব্রহ্মিষ্ঠ নির্ণয়ের আয়োজন। তবে যাজ্ঞবন্ধ্যের এই তিরস্কারের অর্থ কি এই যে, গার্গীকে তিনি ব্রহ্মবিষয়ে জ্ঞানের অধিকারিণী মনে করেননি? অথচ তাঁর স্ত্রী মৈত্রেয়ীও নারী, তাঁকে যাজ্ঞবল্ক্য ব্রহ্মজ্ঞান দিয়েছিলেন। যে-কারণেই হোক, অন্য কোনও জিজ্ঞাসুকেই যাজ্ঞবল্ক্য এ ভাবে ভর্ৎসনা করেননি, অথচ গার্গী ক্রমান্বয়ে আধারের আধার জানতে চাইছিলেন, প্রশ্নগুলি অর্বাচীনের মতোও ছিল না, অসংগতও ছিল না। এ কথা নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, সমাজের বহু তত্ত্বজিজ্ঞাসুর প্রশ্নই গার্গী করেছিলেন।
পরের প্রশ্নকর্তা উদ্দালক আরুণি। বললেন, ‘মদ্রে পতঞ্চল কাপ্যের বাড়িতে ভূতগ্রস্ত[৫] তাঁর স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন: কোন্ সূত্রে ইহজীবন, পরজীবন ও সর্বভূত সংগ্রথিত আছে?’ তিনি জানেন না বললেন। ‘যে অন্তর্যামী অভ্যন্তরে থেকে ইহজীবন, পরজীবন ও সর্বভূতকে নিয়মিত করেন?’ ‘না’ আরুণি পতঞ্চল কাপ্য ও শিষ্যদের বললেন, ‘যে এসব জানে সে
ব্রহ্ম, ভূত, আত্মা এবং সবকিছুকেই জানে। যাজ্ঞবল্ক্য, সেই অন্তর্যামীকে না জেনে এই ব্রহ্মগবীগুলি যদি নিয়ে যান তো আপনার মাথা খসে পড়বে।’ যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, তিনি সবই জানেন। আরুণি বললেন, ‘জানি, জানি, সকলেই বলতে পারে, আপনি যেমন জানেন প্রকাশ করে বলুন।’ যাজ্ঞবল্ক্য একে একে বললেন:
‘যে দেবতা পৃথিবী, জল, অগ্নি, বায়ু, দ্যুলোক, আদিত্য, দিক, চন্দ্রতারকা, আকাশ, তমঃ, তেজ, সর্বভূত, প্রাণ, বাক্, চক্ষু, শ্রোত্র, মন, বিজ্ঞান, রেতঃ-তে থাকেন অথচ এরা যাঁকে জানে না তিনিই অন্তর্যামী। অমৃত ও আপনার আত্মা। তিনি অদৃষ্ট হয়েও দ্রষ্টা, অশ্রুত শ্রোতা, মননের অবিষয় হয়েও মন্তা, অবিজ্ঞাত বিজ্ঞাতা, তিনি ভিন্ন দ্রষ্টা ইত্যাদি নেই। অন্তর্যামী ও অমৃত ইনিই আপনার আত্মা; এর বাইরে সবকিছুই বিধ্বংসী।’
এতে উদ্দালক আরুণি নীরব হলেন।
এর পরে গার্গী আবার প্রশ্ন করলেন। তার আগে সমবেত ব্রাহ্মণদের বললেন, আমি এঁকে দুটি প্রশ্ন করব, সে-দুটি প্রশ্নের উত্তর যদি ইনি দিতে পারেন তা হলে ইনি আপনাদের কাছে অপ্রতিরোধ্য হবেন। অর্থাৎ ব্রহ্মিষ্ঠ বলে প্রমাণিত হবেন। প্রথম প্রশ্ন হল: ‘যা দ্যুলোকের ঊর্ধ্বে, পৃথিবীর নীচে, যা এ দুয়ের মধ্যবর্তী, যা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ এই যে সব কথা পণ্ডিতেরা বলে থাকেন তা কার মধ্যে ওতপ্রোত?’
উত্তর: ‘আকাশ’।
দ্বিতীয় প্রশ্ন: ‘আকাশ কীসে ওতপ্রোত?’
উত্তর: ‘ব্রাহ্মজ্ঞরা এঁকে অক্ষর’ (= যার ক্ষরণ অর্থাৎ বিনাশ নেই) বলেন। তিনি স্থূল, অণু, হ্রস্ব, দীর্ঘ, লোহিত, স্নেহ, ছায়া, তমঃ, বায়ু, আকাশ, সঙ্গ, রস, গন্ধ নন, তাঁর চক্ষু, শ্রোত্র, বাক্, মন, তেজ, প্রাণ, মুখ, পরিমাণ, অবকাশ, বাহ্য কিছুই নেই। তিনি কাউকে ভক্ষণ করেন না, তাঁকে কেউ ভক্ষণ করে না। এই অক্ষরের শাসনে দ্যুলোক ভূলোক বিধৃত, তাঁরই শাসনে নিমেষ, মুহূর্ত, দিবারাত্র, পক্ষ, মাস, ঋতু ও সংবৎসর সকলই বিধৃত; শ্বেত পর্বতগুলি থেকে নির্গত পূর্ব-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত নদীগুলি নিজের নিজের পথে যাচ্ছে। এঁর শাসনে পণ্ডিতেরা দাতাদের প্রশংসা করেন, দেবতারা যজমানের অধীনে থাকেন ও পিতৃগণ তাঁদের উদ্দেশে প্রদত্ত দাবীহোমের ওপরে ভরসা করেন। এই অক্ষরকে না জেনে কেউ যদি বহু হাজার যজ্ঞ করে তবুও সে বিনষ্ট হয়। যে এই অক্ষরকে না জেনে ইহলোক ছেড়ে যায় সে বড়ো দুর্ভাগা। যিনি এঁকে জেনে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি ব্রাহ্মণ।’
গার্গী অন্যান্য ব্রাহ্মণদের যাজ্ঞবল্ক্যকে নমস্কার করে চলে যেতে বললেন। (ছা. উ. ৩:৮:১-১২)
তার পর শাকল্যের প্রশ্ন :
—দেবতাদের সংখ্যা কত?
—তিনশো তিন হাজার তিন।
—দেবতারা ঠিক ক-জন?
—তেত্রিশ
—যাজ্ঞবল্ক্য, ঠিক ক-জন?
—ছয়।
—ভালো, দেবতারা আসলে ক-জন?
—‘তিন’ ‘দুই’ ‘দেড়’ ‘এক’।
—সেই তিন হাজার তিনশো তিন জন কারা?
—যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘দেবতারা তেত্রিশ-অষ্টাবসু, একাদশ রুদ্র, দ্বাদশ আদিত্য, ইন্দ্র আর প্রজাপতি।’ (ছা. উ. ৩:৯:১-২)
লক্ষণীয়, এটা প্রশ্নের যথার্থ উত্তর নয়। শাকল্যের আরও কিছু প্রশ্নের পর যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘শাকল্য, এই ব্রাহ্মণরা কি আপনাকে অঙ্গারদহনের যন্ত্রে পরিণত করেছেন?’ (অর্থাৎ দহনের তাপ ভোগ করার জন্যই কি আপনি এঁদের মুখপাত্র?) এতে ক্রুদ্ধ শাকল্য বললেন, ‘কেমন আপনার ব্রহ্মজ্ঞান যে কুরু পঞ্চাল দেশের এই ব্রাহ্মণদের সম্বন্ধে আপনি অবজ্ঞা প্রকাশ করেন?’ যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘আমি দেবতা ও দিগুলিকে জানি।’ আরও কিছু আলোচনার পর যাজ্ঞবল্ক্য শাকল্যকে প্রশ্ন করে বললেন, ‘আপনি যদি এ প্রশ্নের উত্তর না দিতে পারেন তো আপনার মাথা খসে পড়বে।’ শাকল্য উত্তরটা জানতেন না, সত্যিই তাঁর মাথা খসে পড়ল, ফলে অন্যরা আর কোনও প্রশ্ন করলেন না। তিনি ব্রাহ্মণদের প্রশ্ন করলে কেউ আর উত্তরও দিলেন না। তখন তিনি নিজেই কিছু তত্ত্বকথা বলে আলোচনা শেষ করলেন। (ছা. উ. ৩:৯:১৯-২৭)
এখানে একটি সুদীর্ঘ ব্রহ্মোদ্যের বিবরণ পেলাম, যার শুরুতে এমন বেশ-কিছু প্রশ্ন আছে যা তৎকালীন সমাজের চিন্তাশীল মানুষের মনে উদিত হত। বহিঃপ্রকৃতি, মানুষের বহিরিন্দ্রিয়, অন্তরিন্দ্রিয়, বিশ্বজাগতিক সত্তা, কাল ও কল্পিত কিছু কিছু লোক বা পৃথিবী, যা এতাবৎকাল শাস্ত্রে উল্লিখিত হয়ে মানুষের পরিচিত ছিল, সেগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক অর্থাৎ আধার ও আধেয়ত্ব নিয়ে মানুষের কিছু স্বাভাবিক প্রশ্ন এতে স্থান পেয়েছে। সহজেই লক্ষ করা যায় যে, সব উত্তরই উত্তর নয়, অনেক উত্তরকে বক্তা স্বেচ্ছায় আপাতদুর্বোধ্য করে রেখে পরে তার অন্য সমাধান দিচ্ছেন (যেমন দেবতাদের সংখ্যা)। অন্যত্র আধার-আধেয়ত্ব নিয়েও কল্পিত, অপ্রমাণ্য উত্তরও দেওয়া হচ্ছে, পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে কল্পিত ভুবন নির্মাণ করে, যার প্রত্যক্ষ বা বুদ্ধিগ্রাহ্য কোনও প্রমাণ নেই। এ ছাড়াও যা চোখে পড়ে তা হল, প্রেতগ্রস্ত ব্যক্তির উক্তি বিশ্বাস করে বা শ্রদ্ধাসহকারে গ্রহণ করে তা নিয়েও আলোচনা। অর্থাৎ যুক্তির জগতে অনায়াসে অতিপ্রাকৃতের অনুপ্রবেশ ঘটছে, এতে ওই বড় বড় ব্রহ্মজ্ঞরা কেউ বিচলিতও হচ্ছেন না। অর্থাৎ সমস্ত আলোচনাটা যুক্তির স্তরেও ঘটছে না, ব্যঙ্গবিদ্রুপও আছে, অপমানবোধ এবং শাপও আছে। একজন মাত্র নারী, ব্রহ্মবাদিনী গার্গীকে যাজ্ঞবল্ক্য অপমান করলেও কেউ কোনও প্রতিবাদ করেনি। এবং সমবেত ব্রহ্মবিদরা শেষ পর্যন্ত যাতে প্রশ্ন করা থেকে ক্ষান্ত হলেন তা কোনও জ্ঞানের উক্তি বা সদ্যুক্তি নয়, একটি অতিপ্রাকৃত ঘটনা: শাকল্য যাজ্ঞবন্ধ্যের একটি প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি বলে তাঁর মাথা খসে পড়ল। ওই প্রসঙ্গে লেখা আছে, ‘চোরেরা অন্য বস্তু মনে করে তাঁর অস্থিগুলি অপহরণ করল।[৬] এখানে অন্তর্নিহিত একটি অপমানও রয়েছে; মৃতব্যক্তির অন্ত্যেষ্টি হল না, অস্থিচয়ন হল না, চোরেরা অস্থি চুরি করে নিয়ে গেল। অর্থাৎ তৎকালীন বিশ্বাস অনুসারে শাকল্যের পারলৌকিক সদ্গতিও হল না। শেষ পর্যন্ত ব্রহ্মকে অক্ষর (= অবিনাশী)— দেহ-মন, মহাবিশ্ব, কাল ও সকল দেবতার ঊর্ধ্বে একটি সর্বোত্তম সত্তা— বলে প্রতিষ্ঠিত করা হল।
ঘোষণা বা আয়োজন করে অনুষ্ঠিত না হলেও ব্রহ্মোদ্য হতে পারত। সেখানে ব্রহ্ম-বিষয়ে আলোচনা বা বিতর্ক হত, কখনও-বা দুজনের মধ্যে। এবং, অন্যান্য ব্রহ্মবিদের মতও তার মধ্যে উপস্থাপিত হত। এই রকম একটি আলোচনার কথা বৃহদারণ্যক উপনিষদে পাই। বিদেহরাজ জনক রাজসভায় বসে আছেন, সেখানে যাজ্ঞবল্ক্য আসতে রাজা জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী মনে করে— পশুর জন্যে না সূক্ষ্ম (আত্মা)-বিষয়ে?’
—দুটোরই জন্যে।
—আপনার কোনও আচার্য আপনাকে যা বলেছেন, তা আমাকে বলুন।
—জিত্বা শৈলিনি আমাকে বলেছেন, ‘বাক্ই ব্ৰহ্ম’।
—মাতৃমান পিতৃমান আচার্যবান মানুষের যেমন বলা উচিত শৈলিনি আপনাকে তেমনই বলেছেন, কিন্তু সেই ব্রহ্মের শরীর ও আশ্রয় কী তা কি বলেছেন?
—না।
—এ হল ব্রহ্মের একপাদ (= এক চতুর্থাংশ)।
—আপনি আমাকে বলুন।
তখন যাজ্ঞবল্ক্য বাক্, প্রজ্ঞা, চতুর্বেদ, ইতিহাসপুরাণ, বিদ্যা, রহস্যবিদ্যা, শ্লোক, সূত্র, ব্যাখ্য, যাগ, হোম, অন্নজল দানের ফল ইহপরজন্ম ও সমস্ত প্রাণীকেই যে বাক্ দ্বারা জানা যায়, সে-কথা বললেন। তখন রাজা জনক হাতির মতো বড়ো ষাঁড়-বলদসমেত এক হাজার গাভি যাজ্ঞবল্ক্যকে দান করলেন। যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, আমার পিতা বলতেন, ‘শিষ্য কৃতার্থ না হলে দান গ্রহণ কোরো না।’
তখন যাজ্ঞবল্ক্য আবার জানতে চাইলেন কোনও আচার্য জনককে কী বলেছেন। জনক বললেন, উদঙ্ক শৌল্বায়ন তাঁকে বলেছেন, ‘প্রাণই ব্ৰহ্ম’।
উত্তরে যাজ্ঞবল্ক্য আগের মতোই বললেন, ভাল, ‘আচার্যের যা বলা উচিত ইনি তা-ই বলেছেন, কিন্তু প্রাণব্রহ্মের শরীর ও আশ্রয় সম্বন্ধে কিছু বলেছেন কি?
—না, আপনি বলুন।
—প্রাণই শরীর, আকাশ প্রতিষ্ঠা, এঁকে প্রিয় বলে উপাসনা করা উচিত।
—যাজ্ঞবল্ক্য, প্রিয়তা কাকে বলে?
—সম্রাট, প্রাণরক্ষার জন্যে যজ্ঞে অনধিকারীও যজ্ঞ করে। যার দান গ্রহণ করা উচিত নয়, তার দানও লোকে প্রাণরক্ষার জন্যে গ্রহণ করে। লোকে এমন দিকেও যায় যেখানে প্রাণহানির আশঙ্কা আছে। এমন জেনে যে এই ব্রহ্মকে উপাসনা করে প্রাণ তাঁকে ত্যাগ করে না, সকল প্রাণী তাঁর বশীভূত হয়, তিনি দেবতা হয়ে দেবলোকে যান।
রাজা আবার ওই রকম পুরস্কার দিলেন।
পরের বার প্রশ্নের উত্তরে জনক বললেন, বর্ক বায়ু তাঁকে বলেছেন, ‘চক্ষুই ব্ৰহ্ম’।
যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘চক্ষু ইন্দ্রিয়টিই সত্য, কারণ যে স্বচক্ষে দেখেছে তার অভিজ্ঞতা মানুষ স্বীকার করে… তিনি দেবলোক লাভ করেন।
জনকও পূর্বের মতো পুরস্কার দিলেন।
পরের আচার্যের নাম গর্দভীবিপীত ভরদ্বাজ, তিনি বলেছিলেন, ‘শ্ৰোত্ৰই ব্ৰহ্ম’।
যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘শ্রবণেন্দ্রিয় শরীর, তার প্রতিষ্ঠা আকাশে, একে অনন্ত বলে উপাসনা করা উচিত।’
‘অনন্ত কী’–এ প্রশ্নের উত্তরে যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘দিকসমূহই অনন্ত। যে এমন জানে সে দেবলোক পায়।’
আবার সেই পুরস্কার।
পরবর্তী আচার্য সত্যকাম জাবাল, তাঁর শিক্ষা: মনই ব্রহ্ম। একে আনন্দ বলে উপাসনা করা উচিত। যিনি করেন তিনি দেবলোক লাভ করেন। শেষ আচার্য বিদগ্ধ শাকল্য। তিনি বলেছিলেন, ‘হৃদয়ই ব্রহ্ম। হৃদয়ই স্থিতি, এখানেই সমস্ত প্রাণী আশ্রিত।’ প্রতিবারই আলাপের পরে যাজ্ঞবল্ক্য পূর্বের মতো পুরস্কার পেলেন। যাজ্ঞবল্ক্য বলেছিলেন, তাঁর পিতার শিক্ষা হল, শিষ্য চরিতার্থ না হলে তার দান গ্রহণ করা উচিত নয়; কিন্তু প্রত্যেক বারই তিনি ওই দান গ্রহণ করেছিলেন।
এখানে লক্ষ্য করি, জনক ও যাজ্ঞবল্ক্যের আলোচনায় পরোক্ষ থেকে অনুপ্রবেশ করছেন ছ-জন ব্ৰহ্মবিৎ পণ্ডিত, কাজেই এঁদের দুজনের সংলাপে বস্তুত আট জনের উপস্থিতি আছে, যদিও সিদ্ধান্ত ছ-টিই: বাক্, প্রাণ, চক্ষু, শ্রোত্র, মন এবং হৃদয়— এগুলি ব্রহ্মস্বরূপ। এর মধ্যে বাক্, চক্ষু, শ্রোত্র হল ইন্দ্রিয় (বা ইন্দ্রিয়কর্ম, যেমন বাক্); প্রাণ, মন ও হৃদয় শরীরের অভ্যন্তরে অদৃশ্য ক্রিয়াশীল তত্ত্ব। এগুলিকে ব্রহ্মস্বরূপ বলে প্রতিপন্ন করলেও ব্রহ্ম সম্বন্ধে জ্ঞান বিশেষ-কিছু এগোয় না।
প্রাণের প্রসঙ্গে বাস্তববুদ্ধির একটা সুন্দর নির্দেশ দেখি প্রাণরক্ষার জন্য সমাজে মানুষের গর্হিত আচরণও করার মধ্যে, এতে প্রাণের আপেক্ষিক গুরুত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পড়বার সময়ে অবশ্য প্রত্যেকটি তত্ত্বই তখনকার মতো সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। শুরুতে শুনি, যাজ্ঞবল্ক্য জনকের প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, তিনি ব্রহ্মের আলোচনা ও পশু দুটোই কামনা করে রাজার কাছে উপস্থিত হয়েছেন। কার্যত তিনি প্রচুর মহার্ঘ দক্ষিণা নিয়ে গেলেন ব্রহ্মসংক্রান্ত আলোচনার বিনিময়ে। যে তত্ত্বগুলি তিনি প্রতিষ্ঠা করলেন তা উপনিষদে অন্যত্রও বিশেষ তাৎপর্য পেয়েছে; ব্যাখ্যার ভঙ্গি পৃথক হলেও বিষয়বস্তু অপরিচিত নয়। এ ব্রহ্মোদ্য কতকটা পরোক্ষ ভাবে অনুষ্ঠিত হল: অনুপস্থিত আচার্যদের মত পাওয়া গেল জনকের মুখে, তার সমালোচনা ও সম্পূরণ ঘটল যাজ্ঞবন্ধ্যের দ্বারা। এখানে পাওয়া যাচ্ছে সমাজের মানুষের নানা প্রশ্ন ও সংশয়: শুধু ব্রহ্মের স্বরূপ সম্বন্ধে নয়— বহির্বিশ্ব, মানবদেহ ও মন, কাল ও মরণোত্তর অবস্থা, স্বর্গ ছাড়াও নানা ‘লোক’ সম্বন্ধে, এবং এগুলির পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে প্রশ্ন, সংশয় ও আলোচনা যজ্ঞকে পুরোপুরি বর্জন করেনি, বরং ব্রহ্মবিদরা সেগুলির প্রতীকী অর্থ করছেন অধ্যত্মতত্ত্ব দিয়ে।
আর এক বার রাজা জনক স্বয়ং যাজ্ঞবন্ধ্যের কাছে গিয়ে নমস্কার করে উপদেশ প্ৰাৰ্থনা করলেন।
যাজ্ঞবল্ক্য বললেন, ‘আপনি বেদ ও উপনিষদ জানেন, কিন্তু এই দেহ থেকে মুক্ত হয়ে কোথায় যাবেন তা জানেন কি?’
‘না, আপনি বলুন।’
‘দক্ষিণ চক্ষুতে অবস্থিত পুরুষের ‘ইন্ধ’, পরোক্ষে ‘ইন্দ্র’ কারণ দেবতারা পরোক্ষপ্রিয় প্রত্যক্ষবিরোধী।’[৭] ‘বাম চক্ষে এঁর স্ত্রী বিরাজ থাকেন, দু-নেত্রের মধ্যবর্তী স্থলে এঁদের মিলনক্ষেত্র…।’ এটা মনে করা কঠিন যে, মানুষের মনে এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল যে দক্ষিণ ও বাম চক্ষুতে কাঁরা অবস্থান করেন। এ আলোচনার শেষ হয় দিকসকল ও প্রাণ দিয়ে, এবং যাঁকে ‘নেতি নেতি’ বলা হয়েছে, তিনিই এই আত্মা। এঁকে কেউ গ্রহণ করতে পারে না, ইনি অক্ষয়, অসঙ্গ, অবদ্ধ; ইনি কখনও বিনষ্ট হন না। ‘জনক, আপনি অভয় লাভ করুন’। জনকও যাজ্ঞবল্ক্যকে অভয় দান করলেন এবং সঙ্গে বিদেহ রাজ্য এবং নিজেকেও জনকের কাছে সমর্পণ করলেন। এখানে লক্ষ্য করি যে, বাম ও দক্ষিণ নেত্রের অধিষ্ঠাতা পুরুষ ও তাঁর পত্নী দিয়ে আলোচনা শুরু। জনক এই প্রসঙ্গই তোলেননি। মানবদেহ ও বিশ্বজগতের কিছু তত্ত্ব ব্যাখ্যা করার পর আত্মার স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হচ্ছে ‘নেতি নেতি’ বলে, অর্থাৎ আত্মা কী কী নয় তা জেনে পারিশেষ্যাৎ অর্থাৎ নেতি নেতি সংজ্ঞার পরে যা বাকি থাকে তাকেই আত্মা বলে অভিহিত করা হল। তার লক্ষণ কিছু কিছু উল্লেখ করে বলা হল, এবং এতেই জনক অভয় লাভ করলেন; অভয়ের বিনিময়ে যাজ্ঞবল্ক্য বিদেহ রাজ্য লাভ করলেন, কিন্তু ‘মরণের পর মানুষ কোথায় যায়’ যে-প্রশ্ন দিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল তার কোনও উত্তর পাওয়া গেল না; অথচ এটি তখনকার এবং সর্বকালের মানুষের মনে একটি তীক্ষ্ণ জিজ্ঞাসা। এমন কথাও বলা হয়নি যে, মৃত্যুর পরে মানুষ ব্রহ্মে বিলীন হয় বা ব্রহ্ম লাভ করে। বলা হল, ব্রহ্মকে জানলে মানুষ অভয় লাভ করে; কোন ভয় থেকে অভয়? মৃত্যুভয়? তা-ও বলা হয়নি। এ সব অনুত্তরিত রয়েই গেল।
আরও এক বার যাজ্ঞবল্ক্য জনকের কাছে মনে মনে এই সংকল্প করে গেলেন যে কোনও কথাই জনককে বলবেন না। কিন্তু মনে পড়ল একবার অগ্নিহোত্র সম্বন্ধে আলোচনার পরে যখন যাজ্ঞবল্ক্য তাঁকে বর দিতে চান তখন তিনি তাঁকে যথেচ্ছ ভাবে প্রশ্ন করার (কামপ্রশ্নতা বর দিয়েছিলেন।
এবার জনক তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ‘কোন্ জ্যোতিতে মানুষ আলোক পায়?’
—সূর্যের জ্যোতিতেই মানুষ বাইরে যায়, কাজ করে এবং ফিরে আসে। —তাই বটে। কিন্তু সূর্য যখন অস্ত যায়?
—চন্দ্ৰ।
—চন্দ্ৰ অস্ত গেলে?
—অগ্নি।
—অগ্নি নির্বাপিত হলে?
—বাক্।
—আর সূর্য চন্দ্র যখন অস্ত গেছে, অগ্নি নির্বাপিত, বাক্ সংরুদ্ধ, তখন কোন জ্যোতি থাকে মানুষের?
—আত্মাই তার জ্যোতি হয়, আত্মার জ্যোতির দ্বারাই সে বসে, কাজ করে ফিরে আসে।[৮] এখানে যে-প্রশ্নগুলি উত্থাপিত হয়েছে সেগুলি তখনকার মানুষের মনে স্বভাবতই উদিত হতে পারে, এবং সর্বশেষ যে-উত্তরটি, সেটির আধ্যাত্মিক যথার্থতা যতটুকু আছে, নৈতিক বা চারিত্রিক তাৎপর্যও ততটাই। বাইরের সব রকম আলো এবং নিজের বাক্শক্তি যখন মানুষকে ছেড়ে যায়, তখন মানুষ আপন অন্তরের শক্তিতেই শক্তিমান। যে যুগে মানুষ স্তিমিত প্রদীপের আলোতে কাজ করত সে যুগে প্রকৃতির আলোর অন্তর্ধান তো নানা প্রশ্নের উদ্রেক করতেই পারে। এখানে পরম্পরাক্রমে উত্তরগুলি দেওয়া হয়েছে এবং মানুষ আত্মদীপ হওয়ার প্রেরণা পাছে শেষ উত্তরটিতে।
মৃত্যুর পরে মানুষের কী গতি হয়— এ নিয়ে মানুষ তো একান্ত ভাবে বিচলিত ছিল, তাই ওই বিষয়ে আরও একটি কাহিনির অবতারণা করা হয়েছে বৃহদারণ্যকে। রাজা প্রবাহণ জৈবলির সভায় উপস্থিত আরুণির পুত্র শ্বেতকেতু। জৈবলি ব্রহ্মবিদ, ব্রহ্মচর্যের অন্তে শ্বেতকেতু এসেছেন ও বলছেন, তিনি পিতার কাছে শিক্ষা পেয়েছেন। তখন জৈবলি জিজ্ঞাসা করলেন, মৃত্যুর পরে মানুষ বিভিন্ন পথে যায়, তা জান?
—না।
—কেমন করে তারা আবার ফিরে আসে, জান?
—না।
—পরলোকে এত আত্মার সমাগম তবু তা কেন পূর্ণ হয় না?
—না।
—পিতৃযান ও দেবযানের পার্থক্য এবং কোন কর্মে সেগুলি পাওয়া যায় জান?
—না।
রাজা তাকে সেখানে বাস করতে আমন্ত্রণ জানালেও ক্রুদ্ধ কুমার বাড়ি গেল ও পিতাকে অনুযোগ জানাল অসম্পূর্ণ শিক্ষা দেওয়ার জন্যে, কারণ সে জৈবলির পাঁচটি প্রশ্নের কোনওটিরই উত্তর দিতে পারেনি। এ কাহিনিটি ছান্দোগ্য উপনিষদেও (৫:৩-১০) বিবৃত আছে, মোটের ওপরে একই ভাষায়। সমাধানও প্রায় একই ভাষায়: শ্বেতকেতুর পিতা গৌতমকে জৈবলি বলেন, ‘পূর্বে এ বিদ্যা কখনও ব্রাহ্মণে বাস করেনি, তবু আমি আপনাকে বলব, কারণ আপনি স্মরণ করিয়ে দিলেন যে আমি আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব এমন অঙ্গীকার করেছি।’ এবারে তিনি পিতৃযান ও দেবযান ব্যাখ্যার প্রসঙ্গে বিস্তৃততর তত্ত্বপূর্ণ উপদেশ দিলেন। এর কোনও অংশই প্রমাণসহ নয়, এতে বহু সমীকরণ আছে যজ্ঞীয় অনুষ্ঠান ও উপাদানের সঙ্গে বহির্বিশ্বের তত্ত্বের, যা সবটাই হয় আপ্তবাক্য বলে গ্রহণ করতে হবে অথবা অপ্রমাণিত, অপ্রামাণ্য বলে বর্জন করতে হবে।
এমন বহু আখ্যানে দেখতে পাচ্ছি, প্রশ্নগুলি স্বভাবতই মানুষের মনে উঠতে পারে এবং সে দিক থেকে তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে— এবং অনেকগুলি এখনকার পরিপ্রেক্ষিতেও— প্রাসঙ্গিক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উত্তরগুলি প্রশ্ন থেকে সরে গিয়ে অন্য অন্য তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা করছে। এ যুগে জ্ঞানকাণ্ডের পক্ষে আনুষঙ্গিক তত্ত্ব হিসাবে সে-উত্তরগুলির হয়তো প্রাসঙ্গিকতা বা তাৎপর্য আছে, কিন্তু প্রশ্নের উত্তর হিসেবে একেবারেই অচল। এর একটা কারণ হল, প্রশ্নগুলির উত্তর ব্রহ্মবিদদের জানা ছিল না। জানা থাকা সম্ভবও ছিল না, কারণ তেমন বহু প্রশ্নের উত্তর মানুষ এখনও খুঁজে পায়নি। তা হলে তখন যে সব প্রশ্ন আছে, সে সব প্রশ্নের যা যথার্থ উত্তর নয় তেমন উত্তর এগুলির সঙ্গে উত্তররূপে জুড়ে দেওয়া হল কেন? সম্ভবত, জিজ্ঞাসু যখন প্রশ্ন করেছে তখন কোনও না কোনও উত্তর তার প্রাপ্য, এমন কথাই মনে করতেন ব্রহ্মবিদরা। এবং, যথার্থ উত্তর যখন জানা নেই, তখন সে চেষ্টা না করে এই নতুন চিন্তাধারার আবহে যে সব তত্ত্ব নতুন করে তাৎপর্য পাচ্ছে, যেমন আত্মা, ব্রহ্ম, পরলোক, পুনর্জন্ম, পিতৃযান, দেবযান, যজ্ঞের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা, ইত্যাদি প্রসঙ্গ হিসেবে ধরে নিচ্ছেন প্রশ্নগুলিকে। কেননা, কোনও জিজ্ঞাসু সরাসরি ওই সব বিষয়ে প্রশ্ন করছেন না, অথচ ওই বিষয়গুলি নতুন জ্ঞানকাণ্ডের গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব, বিশেষত যজ্ঞের উপাদান ও প্রণালীর রূপক ব্যাখ্যা। বহু নিষ্ফল যজ্ঞানুষ্ঠানের পরে বহু মানুষ যখন যজ্ঞের উপযোগিতা নিয়ে ভেতরে ভেতরে ভীষণ সন্দিহান, যজ্ঞবিমুখ বহু সম্প্রদায় যখন সমাজে রয়েছে ও সংখ্যায় এবং সম্মানে বাড়ছে তখন যজ্ঞের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা ছাড়া তাকে সমর্থন করা তো অসম্ভব হয়ে উঠেছে।
***
১. ‘Ceci n’a rien de bien suprenant si l’ on songe que les grande monasteries aver leur salle d’étude et de réunion etc offraient des conditions plus favorables all development rapide d’une pratique philosophiúque fondée sur la discussion publique d’une part, le commentaire oral ou écrit d’auter part.’- Michel Hulins. p. 40
২. নমো বয়ং ব্রহ্মিষ্ঠায় কুর্মো গোকামা এব বয়ম্ স্ম। (ছা. উ. ৩:১:২)
৩. যদিদং সর্বং মৃত্যোরন্নং কা স্বিৎ সা দেবতা যস্যা মৃত্যুরত্রন্নমিত্যগ্নির্বৈ মৃত্যুঃ সোহপান্নমপ পুনমৃত্যুং জয়তি।। (ছা. উ. ৩:২:১০)
৪. গার্গি মাহতিপ্রাক্ষীৰ্মা তে ব্যপপ্তদনতিপ্রশ্ন্যাং বৈ দেবতামতিপৃচ্ছসি, গার্গি, মাহতিপ্রাক্ষীরিতি ততো হ গার্গী বাচক্নব্যুপররাম।। (ছা. উ. ৩:৮:১)
৫. গন্ধর্বগৃহীত এই উপনিষদের ৩:৩] অংশে ইনি পতঞ্চলের দুহিতা, কাহিনি সেখানেও একই।
৬. পরিমোষিণ্যোহস্থীন্যপজহুরন্যন্মন্যমানাঃ। (ছা. উ. ৩:৯:২৬)
৭. ইন্ধো হ বৈ নামৈষ যোঽয়ং দক্ষিণেঽক্ষন পুরুষস্তং বা এতমিন্ধং সন্তমিন্দ্র ইত্যাচক্ষতে পরোক্ষেণৈব পরোক্ষপ্রিয়া ইব হি দেবাঃ প্ৰত্যক্ষদ্বিষঃ।। (বৃ. উ. ৪:২:২)
৮. অস্তমিত আদিত্যে যাজ্ঞবল্ক্য চন্দ্রমস্যত্তমিতে শান্ত্যেগ্নৌ শান্তায়াং বাচি কিং জ্যোতিরেবায়ং পুরুষ ইত্যাত্মৈবাস্য জ্যোতির্ভবতীত্যাত্মনৈবায়ং জ্যোতিষাতে পল্যয়তে কর্ম কুরুতে বিপল্যেতীতি। (বৃ. উ. ৪:৩:৬)