ছোটাচ্চু শিস দিতে দিতে ঘরে ঢুকছিল। ভেতরে উঁকি দিয়ে দেখে, দাদির সাথে মোটাসোটা নাদুসনুদুস একজন মহিলা গল্প করছে। ছোটাচ্চু সাথে সাথে শিস বন্ধ করে সটকে পড়ার চেষ্টা করল। মোটাসোটা নাদুসনুদুস মহিলাদের সে খুব ভয় পায়। এ-রকম মহিলারা সাধারণত সবকিছু জানে এবং সবকিছু নিয়ে উপদেশ দিতে পছন্দ করে।
ছোটাচ্চু অবশ্যি সটকে পড়তে পারল না, শিস শুনে দাদি তাকে ডাকল, এই শাহরিয়ার, কই যাস? ভিতরে আয়।
ছোটাচ্চু তাই মুখ কাঁচুমাচু করে ভেতরে ঢুকল। ঘরের ফাক দিয়ে নাদুসনুদুস মহিলাটাকে যতটা ভয়ংকর মনে হচ্ছিল, ভেতরে ঢুকে বুঝতে পারল মহিলাটা আরও ভয়ংকর। তার কারণ, মহিলাটি ফরসা, পরনে সিল্কের শাড়ি আর শরীরে নানা রকম গয়না। ঠোঁটে দগদগে লাল লিপস্টিক।
দাদি মহিলাটাকে বললেন, এই যে ডলি, এইটা আমার ছোট ছেলে শাহরিয়ার।
ডলি নামের মহিলাটা ন্যাকুনাকু গলায় বলল, ও মা! এত বড় হয়েছে, শেষবার যখন দেখছি, তখন নাক দিয়ে সর্দি ঝরত—মনে আছে?
কার মনে থাকার কথা ছোটাচ্চু বুঝতে পারল না। তাই ছোটাচ্চু মুখে একটা গাধা টাইপের হাসি ফুটিয়ে দাঁড়িয়ে রইল। দাদি ছোটাচ্চুকে বললেন, এই যে তোর ডলি খালা। ডলিদের পুরো ফ্যামিলি আমাদের খুব কাছের মানুষ।
ছোটাচ্চু মনে মনে বলল, কাছের মানুষ না কচু। মুখে বলল, ও আচ্ছা। হা হ্যাঁ। জি জি।
ডলি নামের ভদ্রমহিলা বলল, তুমি এখন কী করো?
ছোটাচ্চু বলল, এই তো পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে। কিছু একটা করার প্ল্যান করছি। ছোটাচ্চু বুঝতে পারল এ রকম নাদুসনুদুস টাইপের মহিলারা আসলে ডিটেকটিভ এজেন্সির ব্যাপারটা বুঝতেই পারবে না। তাই সে কী শুরু করেছে, সেটা বলার ঝুঁকি নিল না।
দাদি বলল, তোর ডলি খালার মেয়ের বিয়ে, তার খবর দিতে এসেছে।
ছোটাচ্চু মনে মনে বলল, খবর দিতে এসেছে তো খবর দিয়ে চলে যাও কেন? বসে থাকার কী দরকার? মুখে বলল, ও আচ্ছা, তাই নাকি? ভেরি গুড। ভেরি গুড।
ডলি খালা বলল, বিয়ে এখনো ফাইনাল হয় নাই। কথাবার্তা চলছে।
ছোটাচ্চু মনে মনে বলল, ফাইনাল হয় নাই তো সেমিফাইনাল শুরু করে দাও। মুখে বলল, ও আচ্ছা। হুঁ হুঁ। হাউ নাইস!
ডলি খালা বলল, ছেলে আমেরিকা থাকে। বিয়ে করার জন্য দেশে এসেছে। মেয়ে খুঁজছে।
ছোটাচ্চু মনে মনে বলল, মেয়ে আবার খোঁজে কেমন করে? মেয়েরা কি কোরবানির গরু নাকি যে বাজারে বাজারে খুঁজবে? মুখে বলল, আচ্ছা। হাউ নাইস! চমকার!
দাদি বলল, ডলি, বিয়ের কথা পাকাঁপাকি করার আগে ছেলে সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নাও। ছেলে আমেরিকা থাকলেই কিন্তু বিয়ের যোগ্য হয় না।
ডলি খালা বলল, হ্যাঁ, খোঁজ নিচ্ছি।
দাদি বলল, আমি শুনেছি, এক ছেলে আমেরিকা থাকে, লেখাপড়া জানা ইঞ্জিনিয়ার জেনে মেয়ে বিয়ে দিয়েছে। আমেরিকা গিয়ে আবিষ্কার করেছে, ছেলে ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে রাস্তা ঝাড় দেয়।
ছোটাচ্চু বলল, হয়তো ঝাড়ু ইঞ্জিনিয়ারিং।
দাদি ধমক দিল। বলল, ইয়ার্কি করবি না আমার সাথে।
ছোটাচ্চু বলল, আমি মোটেই ইয়ার্কি করছি না।
আজকাল সবকিছুর ইঞ্জিনিয়ারিং বের হয়ে গেছে। ভোটের সময় রীতিমতো ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং হয়, শোনো নাই?
ডলি খালা বলল, ছেলে দেখতে-শুনতে ভালো। ফ্যামিলিও ভালো। ছেলের আত্মীয়স্বজন-পরিচিতদের কাছে খোঁজ নিয়েছি।
আত্মীয়স্বজনেরা তো ঠিক খবর দেবে না। দাদি বলল, অন্যদের কাছে খোঁজ নাও।
ডলি খালা বলল, বুবু, অন্য কার কাছে খোঁজ নেব? আমাদের দেশে তো আর এসবের জন্য প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর নাই।
দাদির তখন হঠাৎ করে ছোটাচ্চুর ডিটেকটিভ এজেন্সির কথা মনে পড়ল। ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, কেন? তুই না ডিটেকটিভ এজেন্সি দিয়েছিস। তুই খোঁজ নিয়ে দিতে পারবি না?
ডলি খালা অবাক হয়ে ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, তাই নাকি? তোমার ডিটেকটিভ এজেন্সি আছে?
ছোটাচ্চুর তখন বলতেই হলো, জি। আমি একটা ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছি। মনে হয়, দেশের প্রথম প্রাইভেট ডিটেকটিভ এজেন্সি।
ডলি খালা চোখ বড় বড় করে বলল, বাহ্! কী চমৎকার! সেই দিনের বাচ্চা ছেলের এখন নিজের প্রাইভেট এজেন্সি? কংগ্রাচুলেশন।
ছোটাচ্চু প্রশংসা শুনে একটু নরম হলো। ডলি খালা মানুষটাকে তার এখন বেশ বুদ্ধিদীপ্ত আর আধুনিক মানুষ মনে হতে লাগল। ঠোঁটের লিপস্টিকটাও তখন আর বেশি দগদগে মনে হল না। ডলি খালা বলল,
তোমরা কী করো? কীভাবে কাজ করো?
ওয়েবসাইটে ক্লায়েন্টরা যোগাযোগ করে। আমাদের টিম তখন কাজে লেগে যায়। ছোটাচ্চু অবশ্যি জানাল না যে তার টিম মানে সে একা এবং জোর করে সেখানে টুনি ঢুকে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
কী রকম ক্লায়েন্ট পাচ্ছ?
বেশ ভালো। নতুন প্রজেক্ট হিসেবে বেশ ভালো। ছোটাচ্চু এবারেও জানাল না যে ডলি খালা যে খোঁজ নিচ্ছে, এটাই তার এজেন্সির সম্পর্কে প্রথম কারও আগ্রহ এবং সে জন্যই সে বলছে বেশ ভালো। ছোটাচ্চু চোখের কোনা দিয়ে আশপাশে তাকাল—ভাগ্যিস আশপাশে ছোট বাচ্চারা নেই, থাকলে এতক্ষণে তার সবকিছু প্রকাশ হয়ে যেত।
ডলি খালা এবার বেশ আগ্রহ নিয়ে বলল, তাহলে তুমি তোমার ডিটেকটিভ এজেন্সি দিয়ে আমার জামাইয়ের খোঁজ নিয়ে দাও না ছেলেটি কেমন।
ছোটাচ্চু তখন মুখে একটা আলগা গাম্ভীর্য নিয়ে এল। সে এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না যে, ডলি খালা তার ডিটেকটিভ এজেন্সিকে সত্যি সত্যি একটা কাজ দিচ্ছে। ছোটাচ্চুর মনে হলো, এটা একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত, তার বুকে দুরু দুরু কাঁপুনি শুরু হলো। ছোটাচ্চু তখন কাঁপা কাঁপা গলায় বলল, অবশ্যই, ডলি খালা। আমার ডিটেকটিভ এজেন্সি আপনার জামাইয়ের খোঁজ নিয়ে দেবে। আপনি নিশ্চিন্ত থাকুন।
ডলি খালা খুশি হয়ে বলে, থ্যাংকু বাবা। বুঝতেই পারছ একটা মাত্র মেয়ে, কার হাতে তুলে দিই সেইটা নিয়ে অশান্তি।
ছোটাচ্চু গম্ভীর গলায় বলল, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। আপনার কেসটা আমরা খুব সিরিয়াসলি নেব। ছোটাচ্চু কথাটা শেষ করেও শেষ করল না—তার ডিটেকটিভ এজেন্সির একটা ফি আছে, সেই ফিয়ের কথাটা কেমন করে তুলবে, ছোটাচ্চু বুঝতে পারছিল না। তাই মুখটা একটু খোলা রেখে ডলি খালার দিকে তাকিয়ে রইল।
ডলি খালা মনে হয় যথেষ্ট বুদ্ধি রাখে, ছোটাচ্চুর ইঙ্গিতটা ধরে ফেলল। বলল, তোমার এজেন্সির কত ফি আমাকে বিল করে দিয়ো। আমি দিয়ে দেব।
ছোটাচ্চু এবারে একেবারে গদগদ হয়ে বলল, আপনারা আমাদের নিজের মানুষ, আপনাদের আমি হেভি ডিসকাউন্ট দেব। কিন্তু বুঝতেই পারছেন এত বড় একটা এস্টাবলিশমেন্ট, এটা চালাতে তো একটা খরচ আছে।
ডলি খালা বলল, তা তো বটেই। তা তো বটেই।
ডলি খালা চলে যাওয়ার পর ছোটাচ্চু বাসার বাচ্চাকাচ্চাদের ডেকে গম্ভীর গলায় বলল, আমি যখন প্রথম আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছিলাম, তোরা ভেবেছিলি, এটা বুঝি একটা খেলা। এখন দেখলি যে এটা খেলা না? এটা সত্যিকারের এজেন্সি।
শান্ত জানতে চাইল, কেন? এটা সত্যিকারের এজেন্সি কেন? আমার এজেন্সিতে কেস আসা শুরু হয়েছে।
সত্যি? বাচ্চাকাচ্চারা উত্তেজিত হয়ে উঠল। একজন জিজ্ঞেস করল, কী কেস ছোটাচ্চু? মার্ডার কেস?
আরেকজন জিজ্ঞেস করল, সিঙ্গেল মার্ডার, নাকি ডাবল মার্ডার?
একজন একটু বড় হয়েছে, সে চকচকে চোখে জিজ্ঞেস করল, নাকি সিরিয়াল কিলার? সবচেয়ে ফাটাফাটি হচ্ছে সিরিয়াল কিলার।
আরেকজন বলল, সিরিয়াল কিলার আর ড্রাগস?
কয়েকজন মাথা নাড়ল, হ্যাঁ। ড্রাগস বিজনেসটাও ফাটাফাটি। ছোটাচ্চু, তোমার কি ড্রাগস বিজনেসের কেস এসেছে?
কী কী ড্রাগস, ছোটাচ্চু? হেরোইন নাকি ইয়াবা?
ছোটাচ্চু একটু ইতস্তত করে বলল, সে রকম কিছু না। প্রথম কেসটা এসেছে একজনের ক্যারেক্টার প্রোফাইল বের করা নিয়ে।
একজন জিজ্ঞেস করল, ক্যারেক্টার প্রোফাইল মানে কী? শান্ত বলল, মানুষটা ভালো না খারাপ, সেটা বের করা।
বাচ্চাগুলো একসাথে ফোস করে হতাশায় দীর্ঘশ্বাস ফেলল। একজন বলল, এইটা আবার কী রকম কেস।
আরেকজন বলল, ফালতু। ফালতু।
আরেকজন বলল, এই কেস নিয়ো না ছোটাচ্চু। মার্ডার কেস ছাড়া কোনো কেস নিয়ো না।
আরেকজন বলল, মার্ডার আর ড্রাগস বিজনেস।
ছোটাচ্চু ঘাড় শক্ত করে বলল, আমি একটা ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলেছি, আমাকে সব রকম কেস নিতে হবে। আমি কি একটা ভালো ক্লায়েন্টকে ফিরিয়ে দেব? সব ডিটেকটিভকে এ রকম কাজ করতে হয়। একজন মানুষ কী রকম সেটা বের করতে হয়।
শান্ত ঠোঁট উল্টে বলল, নিশ্চয়ই কেউ বিয়ে করবে। সেই জন্য খোঁজ নিচ্ছে।
বাচ্চাগুলো তখন একসাথে তাচ্ছিল্যের ভঙ্গি করে হতাশভাবে মাথা নাড়ল। বলল, বিয়ে। হায় খোদা। কী বেইজ্জতি। ছ্যা ছ্যা।
ছোটাচ্চু এবারে গরম হয়ে গেল। বলল, কেন, বিয়ে দেওয়ার আগে মানুষ, ছেলেটা না হলে মেয়েটা সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারে না?
বাচ্চাগুলো একসাথে আবার তাচ্ছিল্যের শব্দ করল। একজন বলল, তার মানে আসলেই তুমি বিয়ের জামাইয়ের খোঁজ নিচ্ছ!
শান্ত, যে সব সময়েই ত্যাঁদড় টাইপের, সে বলল, ছোটাচ্চু, তুমি একটা কাজ করো। তুমি ডিটেকটিভ এজেন্সির বদলে ঘটকালি এজেন্সি খুলে ফেলো। নাম দাও দি আলটিমেট ঘটকালি এজেন্সি।
শান্তর কথা শুনে সবাই হি হি করে হাসতে লাগল আর ছোটাচ্চু যেভাবে রেগে উঠল, সেটা আর বলার মতো নয়।
অন্য সব বাচ্চার সাথে টুনিও দাঁড়িয়ে ছিল। বাচ্চারা যখন ছোটাচ্চুকে নিয়ে হাসাহাসি শুরু করল, তখন টুনি একটুও হাসল না, মুখ গম্ভীর করে
দাঁড়িয়ে রইল। হাসাহাসি শেষ করে যখন সবাই চলে গেল, তখন টুনি ছোটাচ্চুকে বলল, ছোটাচ্চু, তুমি মন খারাপ কোরো না। তোমার কেসটা ভালো কেস।
ছোটাচ্চু গর্জন করে বলল, একশবার ভালো কেস। মার্ডার কেস থেকে কঠিন কেস?
ছোটাচ্চু আরও জোরে গর্জন করে বলল, একশবার মার্ডার কেস থেকে কঠিন কেস।
কীভাবে শুরু করব ঠিক করেছ?
ছোটাচ্চু তখন আগের থেকে আরও জোরে গর্জন করে বলল, সেটা আমার তোকে বলতে হবে কেন?
টুনি বলল, মনে নাই, আমি তোমার অ্যাসিস্ট্যান্ট। এখন পর্যন্ত তোমার যতগুলো কেস করা হয়েছে, সব আমি করে দিয়েছি।
ছোটাচ্চু তখন আরও জোরে গর্জন করার চেষ্টা করে শেষ মুহূর্তে থেমে গেল। তারপর নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, কীভাবে আগাবো সেটা এখনো ঠিক করিনি।
মানুষটার নাম, ঠিকানা, টেলিফোন নম্বর, ছবি আছে? শুধু নাম আর টেলিফোন নম্বর আছে।
টুনি বলল, নাম আর টেলিফোন নম্বর থাকলেই হবে। অন্য সবকিছু বের করে নেওয়া যাবে।
ছোটাচ্চু কোনো কথা না বলে চোখ দিয়ে আগুন বের করতে করতে টুনির দিকে তাকিয়ে রইল।
টুনি সেটাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে বলল, তুমিও চিন্তা করো কীভাবে আগানো যায়, আমিও চিন্তা করি কীভাবে আগানো যায়।
ছোটাচ্চু তখন কোনো কথা বলল না, চোখ থেকে শুধু একটু বেশি আগুন বের হলো।
সকালবেলা স্কুলে যাওয়ার সময় টুনি ছোটাচ্চুর ঘরে একটু উঁকি দিয়ে গেল। সাধারণত ছোটাচ্চু অনেক বেলা পর্যন্ত ঘুমায় কিন্তু টুনি দেখল, আজকে ছোটাচ্চু ঘরে নেই। খোঁজ নিয়ে জানল, ছোটাচ্চু নাকি অনেক ভোরে বের হয়ে গেছে।
টুনি স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখল, ছোটাচ্চু এখনো ফেরেনি। টুনি হাত-মুখ ধুয়ে খেতে খেতে ছোটাচ্চু ফিরে এল। সে মহা উত্তেজিত। টুনি জিজ্ঞেস করল, কী খবর, ছোটাচ্চু?
মেজর ব্রেক থ্র।
কী হয়েছে?
ডলি খালার জামাইয়ের ঠিকানা বের করে ফেলেছি। কাল থেকে ফলো করা শুরু করব। দেখব সারাদিন কী করে, কোথায় যায়।
টুনি বলল, ও আচ্ছা। ঠিকানা বের করা নিয়ে ছোটাচ্চু এত উত্তেজিত কেন বুঝতে পারল না। ডলি খালাকে জিজ্ঞেস করলেই নিশ্চয় বলে দিত।
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, কেমন করে বের করেছি জানতে চাস? বলো।
ভেরি স্মার্ট। ছোটাচ্চু নিজের মাথায় টোকা দিয়ে বলল, এই মাথা থেকে বের হয়েছে। ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া!।
টুনি ধৈর্য ধরে ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে রইল। ছোটাচ্চু তার ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়ার কথা বলতে শুরু করল, আমি মানুষটাকে ফোন করলাম। ফোন করে বললাম, আমি একটা অর্গানাইজেশনের পক্ষ থেকে ফোন করছি একটা জরিপ নেওয়ার জন্য। মানুষটা জিজ্ঞেস করল, কিসের জরিপ। আমি বললাম শ্যাম্পুর। কী শ্যাম্পু ব্যবহার করে, সেটা নিয়ে কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিলে তার টেলিফোনে পঞ্চাশ টাকা গিফট দেওয়া হবে। শুনে মানুষটা একটু অবাক হলো। বলল, সত্যি? আমি বললাম, একশ ভাগ সত্যি। তখন মানুষটা জিজ্ঞেস করল, কী প্রশ্ন? আমি বললাম, আগে নাম-ঠিকানাটা নিতে হবে। তখন জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী। মানুষটা বলল, ইশতিয়াক হাসান রনি। নামটা সঠিক। ডলি খালা বলেছে, তার জামাইয়ের নাম ইশতিয়াক হাসান। তখন জিজ্ঞেস করলাম ঠিকানা কী, ইশতিয়াক হাসান তখন ঠিকানা বলে দিল। ছোটাচ্চু তখন মাথায় টোকা দিয়ে আনন্দে হা হা করে হাসতে লাগল।
টুনি জিজ্ঞেস করল, তারপর শ্যাম্পু নিয়ে প্রশ্ন করো নাই?
করেছি।
কী উত্তর দিল?
বলল, আমি বিদেশে থাকি। তাই এই দেশের শ্যাম্পু কখনো ব্যবহার করি না।
তারপর টেলিফোনে টাকা পাঠিয়েছ?
আমাকে বোকা পেয়েছিস? কাজ শেষ, টাকা পাঠাব কেন?
তোমার টেলিফোন নম্বরটা তো তার কাছে আছে।
ছোটাচ্চু তখন তার মাথায় আরও জোরে জোরে কয়েকটা টোকা দিয়ে বলল, আমাকে বোকা পেয়েছিস? আমি কি নিজের সিম ব্যবহার করেছি ভেবেছিস? করি নাই। দোকান থেকে কয়েকটা আলতু-ফালতু সিম কিনে রেখেছি। সেই সিম ঢুকিয়ে ফোন করেছি।
টুনিকে মনে মনে স্বীকার করতেই হলো যে তার ছোটাচ্চুর বুদ্ধি আগের থেকে একটু বেড়েছে।
পরদিন সকালে আবার ছোটাচ্চু বের হয়ে গেল। বের হওয়ার সময় তার পোশাকটা হলো দেখার মতো, মাথায় বেসবল ক্যাপ, চোখে কালো চশমা, গলায় ঝোলানো বাইনোকুলার, প্যান্টের পকেটে টেপরেকর্ডার, বুকপকেটে কলমের মতো দেখতে ভিডিও ক্যামেরা। দেখে যেকোনো মানুষ বুঝতে পারবে, কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
টুনি স্কুল থেকে ফিরে এসে দেখল ছোটাচ্চু তার ঘরে দরজা বন্ধ করে বসে আছে—টুনি আগে কখনো ছোটাচ্চুকে তার ঘরের দরজা বন্ধ করতে দেখেনি। সে দরজায় কয়েকবার টোকা দেওয়ার পর ছোটাচ্চু দরজা খুলল। টুনি ছোটাচ্চুর চেহারা দেখে রীতিমতো চমকে উঠল। একেবারে বিধ্বস্ত চেহারা। টুনি জিজ্ঞেস করল, তোমার কী হয়েছে, ছোটাচ্চু?
ছোটাচ্চু মেঘস্বরে বলল, কিছু হয় নাই।
তাহলে তোমাকে এ রকম দেখাচ্ছে কেন?
এ রকম দেখাচ্ছে কারণ, আজ সারাদিন আমি রোদের মাঝে পুরো ঢাকা শহর চষে ফেলেছি, কিন্তু ইশতিয়াক হাসানের দেওয়া ঠিকানা খুঁজে পাই নাই। ঢাকা শহরে সানসেট বুলোভার্ড নামে কোনো রাস্তা নাই।
টুনি বলল, সানসেট বুলোভার্ড?
হ্যাঁ।
সানসেট বুলোভার্ড তো হলিউডের একটা রাস্তা।
ছোটাচ্চু কেমন যেন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেল। বলল, হ-হ-হলিউড?
হ্যাঁ।
তার মানে ওই বদমাইশ জামাই আমার সাথে ইয়ার্কি করেছে?
হ্যাঁ।
কত বড় ধুরন্ধর দেখেছিস! তাকে এই দেশে আসতে দেওয়াই ঠিক হয় নাই। ঘাড় ধরে তাকে বের করে দেওয়া দরকার।
ছোটাচ্চু, তুমি ওকে ঠকিয়েছ। টাকা পাঠাবে বলে টাকা পাঠাও নাই। সেও তোমাকে ঠকিয়েছে, একটা ভুল ঠিকানা দিয়েছে। সমান সমান হয়ে কাটাকাটি হয়ে গেছে।
আমি এক্ষুনি ডলি খালাকে ফোন করে বলব, তার জামাই মিথ্যাবাদী। মিথ্যা কথা বলে বেড়ায়। কেস কমপ্লিট।
টুনি মাথা নাড়ল। বলল, উহু ছোটাচ্চু। আসলে উল্টোটা সত্যি। মানুষটার বুদ্ধি আছে। উল্টোপাল্টা জায়গায় সত্যিকারের ঠিকানা দেয় নাই। মানুষটা মজার মানুষ, তাই হলিউডের ঠিকানা দিয়েছে—তুমি বুঝতে পার নাই, এইটা তোমার সমস্যা।
অন্য যেকোনো সময় হলে ছোটাচ্চু মনে হয় এই কথা শুনে চিড়বিড় করে জ্বলে উঠত, কিন্তু এখন তার মুড খারাপ, তাই জ্বলে উঠল না, বরং বিশাল একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, আমার মনে হয় ডিটেকটিভ এজেন্সি খোলাই ঠিক হয় নাই। আমার মনে হয় কন্ট্রাক্টরি করা উচিত ছিল।
টুনি খুব বেশি হাসে না, কিন্তু ছোটাচ্চুর কথা শুনে একটু হাসল। বলল, ছোটাচ্চু, কন্ট্রাক্টরি করলে তুমি আরও বড় সমস্যায় পড়বে। সবাই তোমাকে ঠকিয়ে তোমার বারোটা বাজিয়ে দেবে। ডিটেকটিভের কাজটাই ঠিক আছে।
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, তুই সত্যি করে বলছিস?
হ্যাঁ। ছোটাচ্চু, সত্যি করে বলছি।
তখন ছোটাচ্চুর একটু মন ভালো হলো। বিছানায় পা তুলে বসে বলল, কিন্তু এই ইশতিয়াক হাসানের বাসার ঠিকানাটি যে কেমন করে বের করি।
টুনি বলল, তুমি সেটা নিয়ে চিন্তা কোরো না। আমি সেটা জোগাড় করে রেখেছি।
জোগাড় করে রেখেছিস? ছোটাচ্চু অবাক হয়ে বলল, কীভাবে?
টুনি বলল, কেন? খুবই সোজা। দাদির কাছে ডলি খালার নম্বর আছে। দাদিকে দিয়ে ফোন করিয়ে জেনে নিয়েছি।
ফোন করিয়ে জেনে নিয়েছিস? মনে হলো ছোটাচ্চু কথাটা বুঝতেই পারছে না।
হ্যাঁ, ডলি খালা জানতে চাইল, আরও কিছু লাগবে নাকি। আমি বললাম, একটা ফটো হলে ভালো হয়। তোমার ডলি খালা ইশতিয়াক হাসানের একটা ছবি তোমার ই-মেইলে পাঠিয়ে দিয়েছেন।
সত্যি?
হ্যাঁ।
এত সহজে?
টুনি কথা না বলে একটু কাঁধ ঝাঁকালো। ছোটাচ্চুর বিধ্বস্ত ভাবটা কেটে তখন তার মধ্যে একটু উৎসাহ ফিরে এল। ছোটাচ্চু দাঁড়িয়ে ঘরের এই মাথা থেকে অন্য মাথায় হেঁটে গেল, তারপর বলল, ঠিকানাটা দে দেখি, আমি ইশতিয়াকের বাসাটা দেখে আসি।
টুনি বলল, যদি যেতেই চাও, তাহলে ই-মেইলে ছবিটা দেখে যাও, তা হলে তো তুমি চিনতেই পারবে না।
ঠিক বলেছিস। বলে ছোটাচ্চু তার স্মার্টফোনটা টেপাটেপি শুরু করল।
ছোটাচ্চু সত্যিকারের ঠিকানাটা দিয়ে খুব সহজেই বাসাটা খুঁজে বের করে ফেলল। ধানমণ্ডিতে একটা দোতলা বাসা। বাসার সামনে লেখা, কুকুর হইতে সাবধান। কাজেই ভেতরে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। বাসাটার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সম্ভব না, তাই সে একবার হেঁটে গিয়ে আবার হেঁটে ফিরে এল। তারপর একটু দূরে একটা টংয়ের সামনে গিয়ে পায়েসের মতো এক কাপ ঢা খেল। তারপর আবার বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে গেল—এভাবে কতবার হেঁটে যেতে হবে, কে জানে। কেউ যদি তাকে লক্ষ করে, তাহলে নিশ্চয়ই মনে করবে, তার কোনো একটা বদ মতলব আছে। ছোটাচ্চু আবার যখন বাসার সামনে দিয়ে হেঁটে ফিরে এল, তখন হঠাৎ বাসার গেট খুলে সাদা রঙের একটা গাড়ি বের হয়ে এল, গাড়ির পেছনে একজন মানুষ বসে আছে, দেখেই ছোটাচ্চু চিনতে পারল, মানুষটা ইশতিয়াক হাসান।
ছোটাচ্চু কী করবে বুঝতে পারল না, গাড়ির পেছনে পেছনে সে তো আর দৌড়াতে পারে না। গাড়ি তো এক্ষুনি হুশ করে বের হয়ে যাবে। ছোটাচ্চুর কপাল ভালো ঠিক তখন কোথা থেকে জানি একটা খালি সিএনজি হাজির হলো। ছোটাচ্চু হাত দেখাতেই সেটা থেমে গেল। ছোটাচ্চু কোনো কথা না বলে লাফ দিয়ে সিএনজির ভেতরে উঠে বলল, চলেন।
সিএনজির ড্রাইভার অবাক হয়ে বলল, কোথায়?
সামনে। ওই যে সাদা গাড়িটা, তার পেছনে।
গাড়ির পেছনে কেন যেতে হবে? আপনি কই যাবেন, আপনি জানেন না?
না। জানি না। ওই গাড়িতে যে আছে, সে জানে।
তাহলে আপনি ওই গাড়িতে কেন গেলেন না? গাড়িতে তো জায়গা আছে।
ছোটাচ্চু বিরক্ত হয়ে বলল, কথা কম বলে আপনি স্টার্ট দেন দেখি।
সিএনজির ড্রাইভার আরও বিরক্ত হয়ে বলল, আপনার মতলবটা কী? একটা গাড়ির পেছনে পেছনে কেন যেতে চান? আপনি কি হাইজ্যাকার নাকি?
আমি কেন হাইজ্যাকার হব? ওই গাড়িতে যে মানুষটা আছে, সে কোথায় যায়, আমার জানা দরকার।
কেন?
কারণ, আমি একজন ডিটেকটিভ।
সিএনজির ড্রাইভারের মুখে এবারে বিশাল একটা হাসি ফুটল। সে বলল, আপনি টিকটিকি, সেটা তো আগে বলবেন।
আমি টিকটিকি বলি নাই।
বলেন নাই তো কী হইছে। আমরা আপনাগো টিকটিকি বলি। বলে সিএনজির ড্রাইভার দূরে প্রায় অদৃশ্য হয়ে যাওয়া গাড়িটার পেছনে পেছনে রওনা দিল। যেতে যেতে সে ছোটাচ্চুর সাথে বিশাল একটা গল্প জুড়ে দিল, এই রকম আরেকবার একজন টিকটিকিকে নিয়ে সে কীভাবে বিশাল এক সন্ত্রাসীকে ধাওয়া করেছিল, তার রোহমর্ষক গল্প।
ইশতিয়াকের গাড়ি ধানমণ্ডি থেকে আজিমপুরের একটা বাসা, সেখান থেকে মতিঝিলের একটা অফিস, সেখান থেকে ট্রাফিক জ্যামের ভেতর দিয়ে বনানীর একটা দোকান, সেখান থেকে আরও কঠিন ট্রাফিক জ্যামের ভেতর দিয়ে যখন উত্তরার দিকে রওনা দিল, তখন ছোটাচ্চু হাল ছেড়ে দিল। প্রথমত ইশতিয়াক হাসানের কাজকর্মে কোনো সন্দেহজনক কিছু নেই, দ্বিতীয়ত সিএনজির ড্রাইভার এতক্ষণে কত টাকা ভাড়া হয়েছে, সেটা যখন ছোটাচ্চুকে
জানাল, তখন ছোটাচ্চু বুঝতে পারল, তার নেমে যাওয়ার সময় হয়েছে।
রাত্রিবেলা টুনি যখন ছোটাচ্চুর খোঁজ নিতে গেল, সে দেখল ছোটাচ্চু খুব মনমরা হয়ে বিছানায় পা তুলে বসে আছে। টুনি জিজ্ঞেস করল, কী খবর, ছোটাচ্চু?
ইশতিয়াক হাসানকে ফলো করেছিলাম। কিন্তু—
কিন্তু কী?
কিন্তু কতক্ষণ ফলো করব। কত টাকা সিএনজি ভাড়া হয়েছে। জানিস?
কত?
ছয়শ টাকা চেয়েছিল। অনেক দরদাম করে পাঁচশ টাকা দিয়ে এসেছি।
টুনি চোখ কপালে তুলে বলল, পাঁচশ টাকা?
ছোটাচ্চু মনমরা হয়ে বলল, হ্যাঁ। এত টাকা কোথা থেকে দেব? আমি পিছু পিছু ঘুরে বেড়াচ্ছি, আর সে যদি কিছু না করে, তাহলে আমার কী লাভ? মানুষজন এত বোরিং কেন? তারা কিছু করে না কেন? যত্তসব।
টুনির মাথায় একটা আইডিয়া এসেছিল, কিন্তু ছোটাচ্চুর মেজাজ দেখে সেটা এখন আর বলল না। কাল ছুটির দিন আছে সকালবেলা বললেই হবে।
সকালবেলা ছোটাচ্চুর ঘরে গিয়ে দেখে, ছোটাচ্চুর মেজাজ খুব ভালো। তার কারণ, ছোটাচ্চুর ক্লাসের মেয়ে ফারিহা তার সাথে দেখা করতে এসেছে। ফারিহা মাঝেমধ্যেই আসে, তাই তার সাথে এই বাসার অনেক বাচ্চাকাচ্চারই পরিচয় আছে। টুনিকে দেখে ফারিহা মুখ হাসি হাসি করে বলল, কী খবর ডিটেকটিভ টুনি? তোমাদের আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির কাজ কেমন চলছে?
টুনি কোনো উত্তর না দিয়ে মুখটা একটু হাসি হাসি করে দাঁড়িয়ে রইল, উত্তর দিল ছোটাচ্চু। বলল, বেশি ভালো না। কালকে সিএনজি ভাড়া দিয়েছি পাঁচশ টাকা।
ফারিহা চোখ কপালে তুলে বলল, পাঁচশ টাকা? তোমার টাকাপয়সা বেশি হয়েছে?
ছোটাচ্চু বলল, এখনো হয় নাই। এখন যে কেসটা নিয়ে কাজ করছি, সেটা ঠিক করে করতে পারলে আমাদের প্রথমবার একটা ইনকাম হবে।
ফারিহা বলল, দিনে পাঁচশ টাকা করে সিএনজি ভাড়া দিলে অবশ্যি ইনকাম শেষ পর্যন্ত থাকবে কি না দেখো।
ছোটাচ্চু মুখটা ভোঁতা করে মাথা নাড়ল। ফারিহা জিজ্ঞেস করল, কেসটা কী?
একজন মানুষ আমেরিকা থেকে এসেছে, তার সাথে মেয়ের বিয়ে দেবে। মেয়ের মা জানতে চাইছে ছেলেটা ভালো না বদ।
ফারিহা মুখটা সুচালো করে খানিকক্ষণ বসে রইল, তারপর বলল, এটা তো রীতিমতো জটিল কেস। সেই লোকটার আগে-পিছে কিছু জানো?
না।
তাহলে কীভাবে বের করবে? সেই লোকটাকে যারা চেনে, তাদের কাছে তোমার যেতে হবে। তাদের চেনো?
না।
লোকটা কোথায়, কবে লেখাপড়া করেছে জানো?
না।
কোথায় চাকরি করে জানো? না।
ফারিহা হতাশভাবে মাথা নেড়ে বলল, তাহলে তুমি কেমন করে বের করবে? ওর পেছনে পেছনে সিএনজি দিয়ে ঘুরে বেড়ালে জানতে পারবে? কিছুই জানতে পারবে না। কোনোদিন বের করতে পারবে না।
টুনি বলল, আমার একটা আইডিয়া আছে।
অন্য যেকোনো সময় হলে বড়দের কথার মাঝখানে কথা বলার জন্য ছোটাচ্চু নিশ্চয়ই টুনিকে একটা রামধমক দিত। এখন ফারিহার সামনে সেটা দিল না, শুধু মুখটা কঠিন করে ভুরু কুঁচকে বলল, কী আইডিয়া?
লোকটা যদি খারাপ কিছু করে তাহলে সে খারাপ। তাকে খারাপ একটা কিছু করতে বলে দেখো, সে রাজি হয় কি না। যদি রাজি হয়, তাহলে বুঝতে পারবে যে লোকটা আসলে খারাপ।
ফারিহা হাতে কিল দিয়ে বলল, ওয়ান্ডারফুল। তারপর দুই হাত ওপরের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে বলল, স্টিং অপারেশন।
টুনি স্টিং অপারেশন মানে কী বুঝতে পারল না, কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করল না। ছোটাচ্চু ভুরু কুঁচকে টুনির দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বলল, তুই বলছিস, আমরা ইশতিয়াক হাসানের ওপর স্টিং অপারেশন চালাব?
স্টিং অপারেশন মানে কী পুরোপুরি না বুঝলেও টুনি একটু আন্দাজ করতে পারল, তাই সে মাথা নাড়ল।
ফারিহা বলল, ব্রিলিয়ান্ট আইডিয়া। তোমার এখন সিএনজি করে এই লোকের পেছন পেছন সারা ঢাকা শহর ঘুরে বেড়াতে হবে না। লোকটাকে
শুধু কয়েকটা খারাপ খারাপ অফার দিতে হবে। দিয়ে দেখো সে অফারগুলো নেয় কি না।
ছোটাচ্চু মাথা চুলকিয়ে বলল, খারাপ অফার? আমি দেব?
হ্যাঁ। মনে করো তার কাছে ইয়াবা বিক্রি করার চেষ্টা করলে সে যদি কিনতে রাজি হয়, তার মানে ড্রাগ অ্যাডিক্টেড।
ছোটাচ্চুকে খুব উৎসাহী মনে হলো না, মাথা চুলকিয়ে বলল, আমি তার কাছে ইয়াবা বিক্রি করতে যাব আর ওই লোক যদি ধরে আমাকে পুলিশে দিয়ে দেয়? আমেরিকার ডিম-গোশত খেয়ে তার ইয়া ইয়া মাসল।
ফারিহা বলল, তুমি কি সত্যি সত্যি বিক্রি করবে নাকি? ফোনে অফার দেবে।
ছোটাচ্চু এবারে একটু উৎসাহী হলো। মাথা নেড়ে বলল, হ্যাঁ, সেটা করা যেতে পারে। আউল-ফাউল সিম দিয়ে ফোন করলে ট্র্যাক করতে পারবে না।
ফারিহা সোজা হয়ে বসে বলল, করো ফোন?
এখন?
হ্যাঁ, এখন। দেরি করে লাভ কী?
ছোটাচ্চু একটু ইতস্তত করছিল কিন্তু ফারিহা শুনল না। বাধ্য হয়ে ছোটাচ্চু তার ফোনে আউল-ফাউল সিম ঢুকিয়ে ফোন করার জন্য রেডি হলো। চোখের কোনা দিয়ে একবার টুনির দিকে তাকাল, বোঝাই যাচ্ছে টুনির সামনে ছোটাচ্চু ঠিক কথা বলতে চাইছে না, কিন্তু টুনি নড়ল না। বরং আরেকটু এগিয়ে গিয়ে ফারিহার পাশে গঁাট হয়ে বসে গেল।
ফারিহা বলল, লাউড স্পিকার অন দাও, আমরাও শুনি তোমার মক্কেল কী বলে।
ছোটাচ্চু সেটাও করতে চাচ্ছিল না, কিন্তু টুনি বুঝতে পারল, ফারিহা যেটাই বলে, ছোটাচ্চুকে সেটাই শুনতে হয়। তাই লাউড স্পিকার অন করে ছোটাচ্চু টেলিফোনে ডায়াল করল এবং একটু পরই প্রথমে খুট করে শব্দ হলো, তারপর ভারী একটা গলার স্বর শোনা গেল, হ্যালো।
ছোটাচ্চু বলল, হ্যালো।
অন্য পাশ থেকে এবার বেশ বিরক্ত হয়ে বলল, হ্যালো।
ছোটাচ্চুর কী হলো কে জানে। আবার বলে ফেলল, হ্যালো।
টেলিফোনের অন্য পাশ থেকে মানুষটি এবারে মহাখাপ্পা হয়ে বলল, আপনার সমস্যাটা কী? সারাদিন কি হ্যালো হ্যালো করবেন, নাকি কে ফোন করেছেন, কাকে ফোন করেছেন, কেন ফোন করেছেন, সেগুলো বলবেন?
ছোটাচ্চু এবার নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, বলব, অবশ্যই বলব। বলার জন্যই তো ফোন করেছি।
তাহলে বলে ফেলেন তাড়াতাড়ি।
ছোটাচ্চু বলল, আমি আপনাকে ফোন করেছি একটা অফার দিতে।
কিসের অফার? আমি এই দেশে থাকি না, আমার কেনাকাটা করার কিছু নাই।
এটা কেনাকাটার অফার না। ছোটাচ্চু গলায় মধু ঢেলে বলল, এটা হচ্ছে জীবনকে কানায় কানায় উপভোগ করার অফার।
টেলিফোনের অন্য পাশের মানুষটা এবার মনে হয় একটু রেগে উঠল, বলল, আমার জীবন উপভোগ করার জন্য আপনার কোনো অফারের দরকার নেই।
আহ-হা, এত অস্থির হচ্ছেন কেন। আগে একটু শুনেই নেন অফারটা কী।
বলেন তাড়াতাড়ি।
আমার কাছে ইয়াবার একটা ফ্রেশ চালান এসেছে। মার্কেট প্রাইস প্রতি বড়ি চারশ টাকা। আমি আপনাকে তিনশ টাকায় দেব। পাইকারি রেট। এক নম্বর ইয়াবা।
মানুষটা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, ইয়াবা জিনিসটা কী?
ছোটাচ্চু একটু থতমত খেয়ে গেল, যে মানুষ ইয়াবা চেনে না, তার সাথে এখন কেমন করে কথা বলবে? একটু ইতস্তত করে বলল, ইয়াবা হচ্ছে একধরনের ড্রাগস।
অন্য পাশের মানুষটা হঠাৎ করে ছোটাচ্চুকে থামিয়ে দিয়ে বলল, দাঁড়ান। এক সেকেন্ড দাঁড়ান।
কী হয়েছে?
আপনি কালকে আমাকে ফোন করেছিলেন না? কী একটা জরিপ করে বললেন পঞ্চাশ টাকা পাঠাবেন। শেষ পর্যন্ত পাঠাননি।
ছোটাচ্চু থতমত খেয়ে বলল, না না, আমি না।
অন্য পাশ থেকে মানুষটা এবার গর্জন করে উঠল, বলল, অফকোর্স আপনি। আমি গলার স্বর ভুলিনি। আপনার মতলবটা কী? আমার পেছনে কেন লেগেছেন?
ছোটাচ্চু একেবারে হকচকিয়ে গিয়ে বলল, আপনার পেছনে লাগব কেন?
মানুষটা এবারে রীতিমতো হুংকার দিয়ে বলল, আমার সাথে রংবাজি করেন? আপনি ভেবেছেন আমি ঘাস খেয়ে বড় হয়েছি? আপনাকে ধরে পুলিশে দেওয়া দরকার। ধরে যখন পুলিশ কেচকি দেবে, আপনি তখন সিধে হয়ে যাবেন।
ছোটাচ্চু দুর্বলভাবে বলল, না, মানে ইয়ে–
আমার কাছে ডিসকাউন্ট প্রাইসে ড্রাগস বিক্রি করতে চান? আপনার সাহস তো কম না। সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বলেন, আমি যদি ঠেঙ্গিয়ে আপনার ঠ্যাং ভেঙে লুলা করে না দিই!
ছোটাচ্চু একটু রেগে উঠে বলল, আপনি কী ভাষায় কথা বলছেন?
মানুষটা এবার আপনি থেকে তুমিতে নেমে এল, তোমার সাথে আবার সুন্দর ভাষায় কথা বলতে হবে? তুমি ড্রাগ বিক্রি করবে আর তোমার সাথে আমার মোলায়েম করে কথা বলতে হবে? আমাকে চিন তুমি? আমি যদি তোমার ঘাড় মটকে না দিই, মুণ্ডু ছিড়ে না ফেলি, ভুড়ি না ফাসিয়ে দিই, চোখ উপড়ে না ফেলি—
ছোটাচ্চু এই সময় লাইনটা কেটে দিল। তার চোখ-মুখ ফ্যাকাশে, হাত অল্প অল্প কাঁপছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিতে নিতে বলল, ও মাই গুডনেস! কী ভায়োলেন্ট একজন মানুষ।
ফারিহা বলল, তবে একটা জিনিস নিশ্চিত হওয়া গেল। মানুষটা ড্রাগস খায় না।
তাই বলে এভাবে কথা বলবে?
তোমাকে কেউ ড্রাগস অফার করলে তুমিও এ রকম করতে।
কখনো না। ছোটাচ্চু গলা উঁচিয়ে বলল, নেভার। আমি কখনো এত অভদ্র হব না। আমার সাথে কী খারাপ ব্যবহার করল দেখলে?
মোটেও তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেনি। একজন ড্রাগস ডিলার যে আগেও তাকে জ্বালাতন করেছে, তার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে।
তাই বলে এই ভাষায়?
ফারিহা হাত নেড়ে পুরো বিষয়টা উড়িয়ে দেওয়ার মতো ভান করল। ছোটাচ্চু মুখটা ভোঁতা করে বসে রইল। টুনি তখন বলল, আর ফোন করবে না ছোটাচ্চু?
মাথা খারাপ? শুনলি না মানুষটা কী ভাষায় কথা বলে? তাহলে কেমন করে তুমি রিপোর্ট লিখবে?
ছোটাচ্চু মাথা চুলকাল। বলল, অন্য কাউকে দিয়ে ফোন করাতে হবে।
কাকে দিয়ে ফোন করাবে?
ছোটা খানিকক্ষণ চিন্তা করে হঠাৎ সোজা হয়ে বসে ফারিহার দিকে তাকাল, বলল, তুমি ফোন করবে।
ফারিহা চোখ বড় বড় করে বলল, আমি?
হ্যাঁ।
আমি ফোন করে কী বলব?
ড্রাগস হয়েছে। এখন বাকি আছে টাকাপয়সা। তুমি ফোন করে টাকাপয়সার লোভ দেখাও। দেখি কী বলে।
টাকাপয়সার লোভ? কেমন করে দেখাব?
ছোটাচ্চু ঘাড় ঝাঁকিয়ে বলল, কিছু একটা বলো! তোমার কাছে গোপন খবর আছে যেটা ব্যবহার করলে অনেক টাকা পাবে, সে রকম কিছু একটা।
ফারিহা কিছুক্ষণ ভাবল, হঠাৎ করে তার মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠল। বলল, পেয়েছি।
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, কী পেয়েছ?
কী বলব সেটা। স্টক মার্কেটের কথা বলব।
ছোটাচ্চু মাথা নেড়ে বলল, গুড। বলো তাহলে।
ফারিহা একটু অবাক হয়ে বলল, এখনই বলব?
হ্যাঁ, সমস্যা কী?
এখনই ফোন করলে সন্দেহ করবে না?
করলে করবে। দেরি করে আমার লাভ কী? করো, ফোন করো।
ছোটাচ্চু ফোনটা খুলে নতুন আরেকটা সিম ঢুকিয়ে দিয়ে বলল, নাও, নতুন আরেকটা সিম ঢুকিয়ে দিলাম।
ফারিহা ফোনটা হাতে নিয়ে একটু ইতস্তত করে ইশতিয়াক হাসানকে ফোন করল। দু-তিনটে রিং হওয়ার পরই ইশতিয়াক হাসান ফোন ধরে ভারী গলায় বলল, হ্যালো।
ফারিহা বলল, হ্যালো কামরুল, তোমার সাথে জরুরি কথা আছে।
ইশতিয়াক বলল, আমি তো কামরুল না।
ফারিহা ভান করল সে লজ্জা পেয়ে গেছে, ও আচ্ছা আপনি কামরুল না? আমি ভেবেছিলাম এটা কামরুলের নাম্বার! সরি, আপনাকে ডিস্টার্ব করলাম।
ইশতিয়াক হাসান গলায় রীতিমতো মধু ঢেলে বলল, না, না, আপনি আমাকে একটুও ডিস্টার্ব করেননি। বরং আপনার ফোনটা পেয়ে খুব ভালো লাগছে! ধরে নিন আমি কামরুল। বলে ইশতিয়াক আনন্দে হা হা করে হাসল।
ফারিহা জিজ্ঞেস করল, ধরে নেব আপনি কামরুল?
হ্যাঁ। সমস্যা কী! কামরুলকে যেটা বলতে চাচ্ছিলেন সেটা আমাকে বলতে পারেন।
সেটা বলতে পারি?
হ্যাঁ। অবশ্যই বলতে পারেন।
ফারিহা বলল, যদিও এটা গোপন বিষয়, আপনাকে বলার কথা না, কিন্তু আপনি যেহেতু জানতে চাইছেন বলেই দিই। স্টক মার্কেটে আমার লোক আছে, তার কাছ থেকে খবর পেয়েছি একটা কোম্পানি পাবলিক লিমিটেড হবে, তাই যদি আজ-কাল তার স্টক কেনা যায় এক সপ্তাহে সেটা দশ গুণ হয়ে যাবে। আপনি যদি জানতে চান, তাহলে কোম্পানিটার নাম বলতে পারি।
ইশতিয়াক হাসান বলল, থ্যাংকু। আসলে আমার জেনে কোনো লাভ নাই। জানার প্রয়োজনও নাই। আমার টাকাপয়সা মোটামুটি আছে, দিন চলে যায়। বেশি টাকা দিয়ে কী করব?
ফারিহা বলল, ঠিকই বলেছেন। প্রয়োজনের বেশি টাকা দিয়ে কী হবে? তাহলে রাখি। ভুল করে আপনার সাথে কথা হলো, ভালোই লাগল।
ফারিহা টেলিফোনটা কেটে দিয়ে ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, তোমার মক্কেল টাকা পরীক্ষায় পাস করেছে।
ছোটাচ্চু মুখ শক্ত করে বসে রইল। টুনি বুঝতে পারল কোনো একটা কারণে ছোটাচ্চু রাগ করেছে, কারণটা কী অবশ্যি টুনি সাথে সাথে বুঝে গেল। কারণ ছোটাচ্চু হঠাৎ দাঁত-মুখ খিঁচিয়ে বলল, কত বড় ধান্দাবাজ দেখেছ? আমার সাথে গালাগাল ছাড়া কথা নেই, আর তোমার সাথে কী মিষ্টি মিষ্টি কথা। আহা রে!
ফারিহা হি হি করে হাসল, বলল, এর জন্য তুমি রাগ করছ কেন? সব সময়ই তো ভদ্রমহিলাদের সাথে সুন্দর করে কথা বলার নিয়ম। মেয়েদের একটু সম্মান করা উচিত না?
ছোটাচ্চু বলল, এই লোকের ডলি খালার মেয়ের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে, এখন কেন সে তোমার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে? হ্যা?
ফারিহা হাসি থামিয়ে বলল, কী মুশকিল! একজনের সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে বলে আরেকজনের সাথে কথা বলতে পারবে না? সে তো আমাকে ফোন করে নাই, ফোন করেছি আমি। আমি তো নিজ থেকে ফোন করি নাই, তুমি বলেছ তাই ফোন করেছি। এখন রাগ করছ কেন?
ছোটাচ্চু কী একটা বলতে যাচ্ছিল ঠিক তখন ফারিহার হাতে ধরে থাকা ফোনটা বেজে উঠল। এটা ছোটাচ্চুর বিখ্যাত আউল-ফাউল সিম, এর নম্বর কেউ জানে না। এইমাত্র ইশতিয়াক হাসানকে করা হয়েছে তাই শুধু ইশতিয়াক হাসানই এই নম্বরটা জানে। নিশ্চয়ই ইশতিয়াক হাসান ফোন করেছে। সবাই চোখ বড় বড় করে ফোনটার দিকে তাকিয়ে রইল। ফারিহা ছোটাচ্চুর দিকে তাকিয়ে বলল, কী করব? ফোন ধরব?
ছোটাচ্চু মুখ শক্ত করে বলল, ইচ্ছে হলে ধরো। আরও একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা শোনো। মিষ্টি মিষ্টি কথা বলো।
ফারিহা ফোনটা ধরল, হ্যালো।
হ্যাঁ, এইমাত্র আপনার সাথে কথা বলছিলাম না?
হ্যাঁ। এইমাত্র কথা বলেছি।
টেলিফোনটা রেখে আমার কী মনে হলো জানেন?
কী মনে হলো?
মনে হলো স্টক মার্কেট নিয়ে আপনার সাথে সামনাসামনি একটু কথা বললে কেমন হয়?
সামনাসামনি?
ইশতিয়াক হাসান সত্যি সত্যি মিষ্টি মিষ্টি করে বলল, হ্যাঁ, ধরেন দুইজনে কোথাও বসে একটু কথা বললাম। একটু চা-কফি খেলাম।
চা-কফি?
হ্যাঁ।
ফারিহা কিছুক্ষণ চোখ বড় বড় করে ফোনটার দিকে তাকাল, তারপর ছোটাচ্চুর দিকে তাকাল, তারপর টুনির দিকে তাকাল। ছোটাচ্চু আর টুনিও ফারিহার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে, সে কী বলে শোনার জন্য অপেক্ষা করে আছে।
ফারিহা বলল, হ্যাঁ, সেটা তো খেতেই পারি। কিন্তু ধরেন আপনাকে তো আমি চিনি না, তাই আপনার সম্পর্কে আমার তো একটু জানা দরকার। আপনি কি বিয়ে করেছেন?
না, বিয়ে করিনি।
তাহলে কি বিয়ের কথাবার্তা হচ্ছে?
না না, এখন বিয়ের কোনো কথাবার্তা হচ্ছে না। সে জন্যই তো মন মেজাজ ভালো না। সেই জন্যই তো আপনার সাথে কথাবার্তা বলতে চাই। হে হে হে।
ফারিহার চোখ আরও বড় হয়ে গেল, ছোটাচ্চু হাত দিয়ে ইশতিয়াক হাসানকে খুন করে ফেলার ভঙ্গি করল। হাত দিয়ে ইঙ্গিত করল যেন টেলিফোনটা রেখে দেয়। ফারিহা টেলিফোনটা রাখল না বরং গলার স্বরে অনেক আনন্দের ভাব ফুটিয়ে বলল, তাহলে তো দেখা করাই যায়। চা কফি খাওয়াই যায়। কোথায় দেখা করব বলুন।
আপনি বলুন। আমি তো বিদেশে থাকি, এখানে কোথায় কী আছে ভালো করে চিনি না।
ফারিহা বলল, ঠিক আছে, ধানমণ্ডি এলাকায় নতুন একটা শপিং মল হয়েছে, খুব সুন্দর, সেখানে আসেন বিকেল চারটায়। ঠিকানাটা বলছি, তার আগে আপনাকে বলে দিই আমাকে খুঁজে বের করবেন কীভাবে। আমি লাল শাড়ি পরে আসব, সবুজ ব্লাউজ আর লাল টিপ। চুলে থাকবে বেলিফুল।
ইশতিয়াক হাসান আনন্দে আটখানা হয়ে গেল, বলল, গুড, গুড ভেরি গুড। ফ্যান্টাস্টিক।
ফারিহা বলল, আরও সহজ করে দিই। একটা পাসওয়ার্ড ঠিক করে নিই। আপনি বলবেন, তোমাকে দেখে আমার তেঁতুলের কথা মনে পড়ছে।
তেঁতুল? ইশতিয়াক হাসান, একটু অবাক হয়ে বলল, তেঁতুল কেন বলব?
ফারিহা বলল, পাসওয়ার্ডের তো কোনো মাথামুণ্ডু থাকে না। এটাও সে রকম, একটা কথার কথা। ঠিক আছে?
ঠিক আছে।
ফারিহা বলল, এবার ঠিকানাটা বলে দিই। তারপর ফারিহা ঠিকানাটা বলে দিল, নিচ তলায় কোথায় সে অপেক্ষা করবে সেটাও ইশতিয়াক হাসানকে বলে দিল।
টেলিফোনটা রাখার পর ছোটাচ্চু মেঘস্বরে বলল, এইসবের মানে কী?
কোন সবের? তুমি এই বদমাইশ লোকের সাথে দেখা করতে চাচ্ছ কেন?
ফারিহা বলল, যে মানুষ বিদেশ থেকে এসেছে বিয়ে করার জন্য, বিয়ে ঠিক হয়েছে, তার পরও সেটা গোপন করে অন্য মেয়ের সাথে চা-কফি খেতে চায়, তার চেহারাটা একটু দেখার ইচ্ছে করছে।
ছোটাচ্চু বলল, তুমি লাল শাড়ি পরে চুলে বেলিফুল লাগিয়ে এর সাথে দেখা করতে যাবে-কাজটা ঠিক হচ্ছে?
ফারিহা বলল, জানি না। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে বলল, আমি যাই। শাড়ি-ব্লাউজ ইস্ত্রি করতে হবে। তুমি চাইলে চারটার সময় ধানমণ্ডির মলে আসতে পারো।
আমি? ছোটাচ্চুর মুখ শক্ত হয়ে গেল, আমি কেন যাব? তুমি সেজেগুজে চা-কফি খেতে যাচ্ছ, আমি সেখানে গিয়ে কী করব?
ফারিহা বলল, ঠিক আছে—না যেতে চাইলে নাই। তারপর ঘর থেকে বের হতে হতে বলল, তুমি তোমার রিপোর্টটা ঠিক করে লেখো। মানুষটা ড্রাগস খায় না, টাকাপয়সার লোভ নাই, মনে হয় চেহারা ভালো,
স্মার্ট, খুব সুন্দর করে কথা বলে, কিন্তু–
কিন্তু কী?
কিন্তু এই লোকের সাথে মেয়ে বিয়ে দেওয়া ঠিক নয়।
ফারিহা চলে যাওয়ার পর ছোটাচ্চু খানিকক্ষণ চুপ করে থেকে টুনিকে বলল, টুনি, তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
করো।
আমার এই বন্ধু ফারিহাকে তোর কেমন লাগে?
খুবই ভালো লাগে। ফারিহা আপু হচ্ছে সুপার ডুপার। ফ্যান্টাস্টিক।
ও। ছোটাচ্চু আবার চুপ করে গেল।
টুনি বলল, ছোটাচ্চু।
উ।
তুমি আজকে বিকেলে ধানমণ্ডির মলে আমাকে নিয়ে যাবে?
ছোটাচ্চু কিছুক্ষণ টুনির দিকে তাকিয়ে থাকল, তারপর একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, ঠিক আছে।
চারটে বাজতে এখনো দশ মিনিট বাকি। ছোটাচ্চু টুনিকে নিয়ে একটা ফাস্ট ফুডের দোকানের বাইরে রাখা টেবিলে বসেছে। টুনি একটা আইসক্রিম খাচ্ছে, ছোটাচ্চু খাচ্ছে ব্ল্যাক কফি। কফিটা তেতো, খেতে বিস্বাদ, পোড়া কাঠের মতো গন্ধ, প্রত্যেকবার চুমুক দেওয়ার পর ছোটাচ্চু মুখটা বিকৃত করছে, কিন্তু তার পরও খেয়ে যাচ্ছে। টুনি আইসক্রিমের একটা কোনা কামড় দিয়ে বলল, ফারিহা আপু এখনো আসে নাই।
কোনো একটা কারণে ছোটাচ্চুর মনটা একটু খারাপ, সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দার্শনিকের মতো বলল, বুঝলি টুনি, তোকে আর কী বলব, তুই তো। সবই জানিস। আমি হচ্ছি অকাজের মানুষ। সবাই লেখাপড়া করে হাইফাই চাকরি করে, গলায় টাই লাগিয়ে অফিসে যায়, বড় বড় কাজ করে, তার চেয়ে বড় বড় কথা বলে। ইংরেজি আর বাংলা মিলিয়ে। আমি কিছুই করি না। আমার ফ্রি থাকার জায়গা আছে, ফ্রি খাওয়ার জায়গা আছে, তাই কোনো চিন্তা নাই। আমি তোদের জন্য ছাগল রং করে দিই। প্ল্যানচেট করে তোদের জন্য ভূত নামাই। মায়ের রাজাকার টাইপের খালাতো ভাইকে ভয় দেখাই। ডিটেকটিভ এজেন্সি খুলি—তোর কি মনে হয় কোনো মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে? ছোটাচ্চু টুনির উত্তরের জন্য অপেক্ষা করল না, নিজেই বলল, করবে না। বুদ্ধিসুদ্ধি আছে এ রকম কোনো মেয়ে আমাকে বিয়ে করবে না। করা উচিৎ না। কিন্তু–
ছোটাচ্চু তার বিদঘুটে কালো কফিতে চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, কিন্তু ফারিহার কথা আলাদা। লেখাপড়ায় ভালো, চেহারা ভালো, খুবই স্মার্ট, বুদ্ধিমতী, বাইরে থেকে বোঝা যায় না, কিন্তু আসলে মনটা খুবই নরম। এই রকম একটা মেয়ে আমাকে মনে হয় পছন্দই করে। আমি যদি বলি, মনে হয় আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যাবে। অনেক টাকা বেতনে চাকরি করবে, আমাকে খাওয়াবে, তোদের সাথে হইচই করবে।
ছোটাচ্চু আবার তার কালো বিদঘুটে তিতকুটে কফিতে চুমুক দিয়ে মুখ বিকৃত করে বলল, কিন্তু আমি ফারিহাকে কিছু বলতে পারি না। কেন জানিস?
কেন?
ভয়ে।
টুনি অবাক হয়ে বলল, ভয়ে? ফারিহা আপুকে তোমার ভয় করে?
হ্যাঁ। করে। কারণটা কী জানিস?
কী?
ফারিহার মতো ডেঞ্জারাস মানুষ আমি জন্মেও দেখি নাই। তার মাথার মধ্যে যে কী ভয়ংকর প্ল্যান কাজ করে তুই চিন্তাও করতে পারবি না।
টুনি চোখ বড় বড় করে বলল, ফারিহা আপু ডেঞ্জারাস?
হ্যাঁ। যেমন ধর আজকের ব্যাপারটা। ফারিহা ওই পাঁজি মানুষটাকে এইখানে তার সাথে দেখা করতে বলেছে। ফারিহা বলেছে সে লাল শাড়ি, সবুজ ব্লাউজ, লাল টিপ, চুলে বকুল ফুল লাগিয়ে এখানে আসবে। সে এসেছে? না, আসে নাই। কিন্তু লাল শাড়ি, সবুজ ব্লাউজ, লাল টিপ আর চুলে বকুল ফুল লাগিয়ে কেউ কি এসেছে? হ্যাঁ এসেছে।
এসেছে? টুনি চমকে উঠে বলল, কোথায়?
ওই যে বইয়ের দোকানের সামনে। ফারিহা নিজে না এসে ওই মেয়েটাকে পাঠিয়েছে। মেয়েটাকে আমি চিনি। মেয়েটার নাম রেশমা। সিক্স ডিগ্রি ব্ল্যাকবেল্ট। তায়কোয়ান্দোতে। তায়কোয়ান্দো কী জানিস? কারাতের মতো, কিন্তু হাতের সাথে সাথে তারা সমানভাবে পা চালাতে পারে।
টুনির চোখ বড় বড় হয়ে উঠল। ছোটাচ্চু বলল, এখন বুঝেছিস ঠিক চারটার সময় কী হবে? বেকুব মানুষটা রেশমাকে এসে বলবে, তোমাকে দেখতে তেঁতুলের মতো লাগছে। তারপর কী হবে? ছোটাচ্চু কেমন যেন শিউরে উঠল, তারপর কুচকুচে আলকাতরার মতো কফিটার পুরোটা এক টোকে খেয়ে ফেলে মুখটা বিকৃত করে বসে রইল। খানিকক্ষণ পর ফোঁস করে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, মাস খানেক আগে একজন ছিনতাইকারী রেশমার ব্যাগ ধরে টান দিয়েছিল, রেশমা তাকে ধরে এমন ধােলাই দিয়েছে যে সে এখনো হাসপাতালে। কয়দিন আগে একটা ইভ টিজার রেশমাকে টিটকারি দিয়ে কী একটা বলেছিল, তারপর কী হলো জানিস?
কী?
সেই ইভ টিজারের হাতটা ধরে রেশমা এমন মোচড় দিয়েছে যে তার ডান হাতটা সকেট থেকে খুলে বের হয়ে এসেছে। আরেকদিন স্কুলে যাচ্ছিল কয়েকটা মেয়ে, লোকাল মাস্তানরা সেই মেয়েদের ইভ টিজিং করেছে, তারপর কী হয়েছে জানিস?
কী হয়েছে?
রেশমা মাস্তানদের কী করেছে কে জানে, কিন্তু সবগুলোর ঘাড় পাকাঁপাকিভাবে বাঁকা হয়ে গেছে। এখন সোজা সামনের দিকে মাথা আটকে থাকে, ডানে-বাঁয়ে ঘোরাতে পারে না।
ছোটাচ্চু পুরো দৃশ্যটা কল্পনা করে কেমন যেন শিউরে উঠে বলল, এই মেয়ে খালি হাতে যেকোনো মানুষকে মার্ডার করে ফেলতে পারে। রেশমা সবচেয়ে বেশি ঘেন্না করে ইভ টিজারদের। এখন যখন ইশতিয়াক রেশমাকে বলবে তাকে দেখে তার তেঁতুলের কথা মনে পড়ছে, তখন অবস্থাটা কী হবে কল্পনা করতে পারিস?
টুনি এমনভাবে মাথা নাড়ল যেটা হ্যাঁ বা না দুটোই হতে পারে। ছোটাচ্চু অনেক লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, এখন তুই বল, ফারিহা থেকে ডেঞ্জারাস কোনো মেয়ে বাংলাদেশে আছে? এই রকম ভয়ংকর প্ল্যান আর কেউ করতে পারবে?
টুনি বলল, না।
ছোটাচ্চু হঠাৎ চমকে উঠে বলল, ওই যে ইশতিয়াক হাসান বেকুবটা এগিয়ে যাচ্ছে রেশমার দিকে। কী সর্বনাশ! কী ভয়ংকর! হায় খোদা, তুমি রক্ষা করো।
ছোটাচ্চু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলল। ছোটদের সাহস বেশি হয়, তাই টুনি তাকিয়ে রইল। সে দেখল, ইশতিয়াক হাসান মুখে একটা ভ্যাবলা টাইপের হাসি ফুটিয়ে রেশমার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। রেশমার কাছে গিয়ে তার কানের একেবারে কাছে মুখ নিয়ে সে কিছু একটা বলল। তখন রেশমা ঝট করে ঘুরে ইশতিয়াক হাসানের দিকে তাকাল। দেখতে দেখতে রেশমার চেহারাটা কেমন যেন বাঘিনীর মতো হয়ে গেল। টুনি এর আগে কখনো বাঘিনী দেখেনি, কিংবা কখনো কোনো মানুষকেও চোখের সামনে বাঘিনীর মতো হয়ে যেতে দেখেনি! ব্যাপারটা যদি ঘটে তাহলে নিশ্চয়ই এভাবে ঘটবে! টুনি দেখল রেশমা দাঁতে দাঁত ঘষে কিছু একটা বলে ইশতিয়াক হাসানের দিকে এগোতে থাকে আর দেখতে দেখতে ইশতিয়াক হাসানের চেহারাটা কেমন যেন উঁদুরের মতো হয়ে গেল। তার চোখ ফ্যাকাশে হয়ে যায়, নিচের ঠোঁট নড়তে থাকে আর জিবটা বের হয়ে আসে।
রেশমা খপ করে ইশতিয়াকের বুকের কাপড় ধরে ফেলল, তারপর ডান হাতটা ওপরে তুলল এবং টুনি বুঝতে পারল পরের মুহূর্তে হাতটা নেমে আসবে আর সে দেখবে যেখানে ইশতিয়াকের মাথাটা থাকার কথা সেখানে কিছু নেই!
ছোটাচ্চু চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলল, হে খোদা! তুমি রক্ষা করো। আর মনে হলো খোদা ছোটাচ্চুর কথা শুনলেন। ইশতিয়াক হাসান হঠাৎ ঝাপটা মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে উল্টোদিকে একটা দৌড় দিল। রেশমাও হুংকার দিয়ে তার পিছু পিছু ছুটতে লাগল। ইশতিয়াক ছুটতে ছুটতে একটা বুটিকের দোকানের এক দিক দিয়ে ঢুকে সমস্ত জামাকাপড় ছিটকে ফেলে অন্যদিকে বের হয়ে গেল, পেছনে পেছনে হুংকার দিতে দিতে রেশমাও গেল। বুটিকের দোকান থেকে বের হয়ে একটা খেলনার দোকান, সেখানকার সবকিছু ছিন্নভিন্ন করে একটা জুতার দোকান। সবাই দেখল জুতো-স্যান্ডেল উড়ে উড়ে যাচ্ছে, তার ভেতর দিয়ে একজন সুদর্শন যুবক ছুটে যাচ্ছে, পিছু পিছু লাল শাড়ি পরা একটা মেয়ে। শাড়ি-স্যান্ডেল পরে থাকার কারণে রেশমার একটা বিশাল অসুবিধা, তাই ইশতিয়াক হাসান একটা কম্পিউটারের দোকানে ঢুকে মাউস কি-বোর্ড উড়িয়ে অন্য দিক দিয়ে কোনোভাবে বের হয়ে মানুষের ভিড়ের মাঝে অদৃশ্য হয়ে গেল। শুধু তার একটা জুতো পা থেকে খুলে রয়ে গেল। রেশমা সেই জুতোটা হাতে নিয়ে হিংস্রভাবে সেটার দিকেই তাকিয়ে রইল।
টুনি বলল, ছোটাচ্চু, তুমি এখন তাকাতে পারো। ঘটনা শেষ।
ছোটাচ্চু জিজ্ঞেস করল, কেউ কি মারা গেছে?
না।
গুরুতর আহত?
না। হাত পা লিভার কিডনি এ রকম কিছু কি পড়ে আছে?
না। শুধু একটা জুতো।
ছোটাচ্চু তখন ভয়ে ভয়ে চোখ খুলল, শপিং মলের বিভিন্ন দোকান লণ্ডভণ্ড হয়ে আছে, এখানে-সেখানে বিস্মিত মানুষের জটলা। তার মাঝে রেশমা ইশতিয়াকের এক পাটি জুতো নিয়ে ফিরে আসছে। তাকে দেখে কেউ বুঝতেই পারবে না কিছু একটা হয়েছে।
ছোটাচ্চু ফিসফিস করে বলল, চল পালাই।
টুনি বলল, চলো।
ছোটাচ্চু গলা আরও নামিয়ে বলল, রেশমা আমাকে দেখে ফেললে কিন্তু কিছু একটা সন্দেহ করবে। তাহলে খবর আছে। বুঝেছিস?
বুঝেছি। কিন্তু–
কিন্তু কী?
আমি রেশমা আপুর একটা অটোগ্রাফ নিতে চাচ্ছিলাম।
ছোটাচ্চু ভয় পেয়ে বলল, আজকে না। আরেক দিন। আমি তোকে এনে দেব।
ঠিক তো?
ঠিক। খোদার কসম?
খোদার কসম। ছোটাচ্চু তখন টুনির হাত ধরে তাকে টেনে বের করে নিয়ে এল।
ডলি খালার কাছে ছোটাচ্চু তার আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির পক্ষ থেকে রিপোর্ট পাঠিয়েছিল—বিলসহ।
ডলি খালা বিল তো দিলই না, উল্টো ছোটাচ্চু আর তার ডিটেকটিভ এজেন্সির ওপর ভয়ানক খেপে গেল। পারলে কাঁচা খেয়ে ফেলে। কারণটা কী, ছোটাচ্চু এখনো বুঝতে পারেনি।
শুধু ডলি খালার মেয়ে ছোটাচ্চুর কাছে দুই শব্দের একটা এসএমএস পাঠিয়েছে। শব্দ দুটি হলো থ্যাংক ইউ।
ছোটাচ্চু আপাতত এই শব্দ দুইটাই তার আলটিমেট ডিটেকটিভ এজেন্সির প্রথম উপার্জন হিসেবে ধরে নিয়েছে।