০৩. লরিস্টন গার্ডেন্স-এর রহস্য

স্বীকার করছি, আমার সঙ্গীর মতবাদের বাস্তবতার এই নতুন প্রমাণ আমাকে বিস্মিত করেছিল। তার বিশেল-ষণী শক্তির প্রতি আমার শ্রদ্ধা বহুগুণে বেড়ে গেল। একটা । সন্দেহ কিন্তু তখনও উঁকি দিতে লাগল যে, আমাকে চমকে দেবার জন্য সমস্ত ব্যাপারটাই আগে থেকে সাজানো, অবশ্য আমাকে চমকে দিয়ে তার কি লাভ হবে কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না। তাঁকিয়ে দেখি, সে চিঠিটা পড়ে ফেলেছে। তার চোখে এমন একটা শূন্য অনুজ্জ্বল দৃষ্টি যে দেখলেই মনে হয় সে তার মনের মধ্যে ডুবে গেছে।

জিজ্ঞাসা করলাম, ‘আচ্ছা, ওটা তুমি জানলে কেমন করে?’

সে যেন একটু চটেই বলল, ‘কোনটা?’

‘কেন? ওই লোকটা যে নৌবিভাগের অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট, সেটা?’

‘এসব তুচ্ছ কথা বলবার মত সময় নেই, ‘কোনটা?’

‘রূঢ় কণ্ঠেই জবাব সে জবাব দিল। তারপরই হেসে বলল, ‘এই রূঢ়তার জন্য আমাকে ক্ষমা কর। আমার চিন্তার সুতোটা তুমি ছিঁড়ে ফেলছিলে। কিন্তু তুমি কি সত্য সত্যই বুঝতে পারো নি যে লোকটি নৌবিভাগের সার্জেন্ট ছিল?’

‘মোটেই না।’

‘আমি কি করে জানলাম সেটা বোঝানোর চাইতে ওটা অনেক সহজ। তোমাকে যদি বলা হয় দুই আর দুইয়ে যে চার হয় সেটা প্রমাণ কর, তাহলে ব্যাপারটা নিশ্চয়ই একটু কঠিন মনে হবে, অথচ তুমি নিশ্চিত জান যে এটা সত্য। রাস্তার ওপাশে থাকতেই লোকটির হাতের উল্টো পিঠে একটা বড় নীল নোঙরের উল্কি আমার চোখে পড়ে-ছিল। তাতেই সমুদ্রের গন্ধ পেলাম। তার আচরণের এবং দুদিকে পাকানো গোঁফ ছিল সামরিক গন্ধ। কাজেই পাওয়া গেল নৌবিভাগ। লোকটির মধ্যে কিছুটা ভারিক্কি-য়ানা এবং প্রভুত্বের ভঙ্গীও আমার চোখ এড়ায় নি। যেভাবে সে মাথাটা উঁচু করে ছিল এবং হাতের বেতটা ঘোরাচ্ছিল সেটা নিশ্চয়ই লক্ষ্য করেছ।তার মুখে চোখে একটা স্থির, সম্ভ্রান্ত, মধ্যবয়স্ক মানুষের ছাপ—এই সব দেখেই মনে হল সে সার্জেন্ট ছিল।’

‘চমৎতার।’ আমি সোল্লাসে বলে উঠলাম।

হোমস বলল, ‘অতি সাধারণ।’ যদিও তার কথা শুনে আমার মনে হল, আমার বিস্ময় ও প্রশংসা শুনে সে খুশিই হয়েছে। ‘এইমাত্র বলছিলাম যে আজকাল আর অপরাধী নেই। মনে হচ্ছে-আমি ভুল বলেছি। এটা দেখ! প্রাক্তন সার্জেন্টের দেওয়া চিঠিখানা সে আমার দিকে ছুঁড়ে দিল।

‘সে কি।’ চোখ বুলিয়েই আমি চীৎকার করে উঠলাম, ‘এ যে সাংঘাতিক।’

সে শান্তভাবে বলল, ‘একটা অসাধারণ কিছু বলে মনে হচ্ছে। তুমি কি চিঠিটা আমাকে পড়ে শোনাবে?’

নীচের চিঠিটা আমি তাকে পড়ে শোনালামঃ

প্রিয় মিঃ শার্লক হোমস,

৩, লরিস্টন গার্ডেন্সে গত রাতে একটি খারাপ ঘটনা ঘটেছে। লরিস্টন গার্ডেন্স বেরিয়েছে ব্রিক্সটন রোড থেকে। প্রায় দুটো নাগাদ আমাদের বীটের পুলিশ সেখানে একটা আলো দেখতে পায়। যেহেতু বাড়িটা তখন খালি ছিল, তার মনে সন্দেহ দেখা দেয়। গিয়ে দেখে দরজা খোলা আর আসবাব-পত্রহীন সামনের ঘরে জৈনক ভদ্র-লোকের মৃতদেহ পড়ে আছে।লোকটি সুসজ্জিত। তার পকেটে একটা কার্ড পাওয়া গেছে। তাতে লেখা ‘এনক জে, ড্রেবার, ক্লিভল্যান্ড, ওহিও, ইউ, এস, এ,।’ কোন—রকম ডাকাতি হয় নি এবং ভদ্রলোক কেমন করে মারা গেলেন তারও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। ঘরের মধ্যে রক্তের দাগ আছে, কিন্তু লোকটির দেহে আঘাতের কোন চিহ্নই নেই। তিনি কি করে ঐ খালি বাড়িতে এলেন, কিছুই বুঝতে পারছি না। বস্তুতঃ সমস্ত ব্যাপারটাই যেন ধাঁধার মত। বারোটার আগে যে-কোন সময় আপনি যদি ঐ বাড়িতে আসতে পারেন, আমাকে ওখানেই পাবেন। আপনার নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত সব কিছুই যেমনটি ছিল তেমনটি রেখে দিয়েছে। যদি আসতে না পারেন, আরও বিস্তারিত বিধরণ জানাব। দয়া করে যদি আপনার মতামত পাঠান তাহলে সেটাকে আপনার সসীম অনূগ্রহ বলে বিবেচনা করব।

ভবদীয়
টোবিয়াস প্রেগসন

বন্ধু মন্তব্য করল, ‘স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের অফিসারদের মধ্যে সবচাইতে চালাক-চতুর। সে এবং লেস্ট্রেডই হচ্ছে মন্দের ভাল। দু’জনই দ্রুতবুদ্ধি এবং উদ্যমশীল, কিন্তু গতানুগতিক-ভয়ানক গতানুগতিক। তাদের মধ্যে ব্রেধরেষিও আছে। দুই পেশাদার সুন্দরীর মতই তারা পরস্পরের প্রতি ঈর্ষাকার। এই কেসে তাদের দুজনের হাতেই যদি কিছুটা সুতো ধরিয়ে দেওয়া যায়, তাহলে ভারি মজা হবে।’

তার শান্তভাবে কথা বলার রকম দেখে আমি বিস্মিত হলাম। চীৎকার করে বললাম, ‘আর এক মহুর্তেও নষ্ট করা উচিত নয়। তোমার জন্য একটা গাড়ি ডেকে দেব কি?’

‘আমি যাব কি না তাই তো বুঝতে পারছি না।আলসেমি যখন আমার উপর ভর করে তখন আমি একে-বারে আলসের গুরুঠাকুর। অবশ্য অন্য সময় আমি খুব চটপটেও হতে পারি।’

‘সে কি? তুমি তো  এই রকম একটা সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিলে।’

‘দেখ ভাই, এতে আমার কি লাভ হবে? ধরা যাক, আমি রহস্যটা উদঘাটন করলাম। ঠিক জানবে তখন ঐ গ্লেগসন, লেস্ট্রেড কোম্পানিই সব বাহাদুরিটা পকেটস্থ করবে। বেসরকারী লোকদের এই তো বরাত।’

‘কিন্তু তিনি তো তোমার সাহায্য চেয়েছেন।’

‘তা চেয়েছে। সে জানে বুদ্ধিতে আমি তার থেকে বড় আর আমার কাছে সেকথা সে স্বীকারও করে। কিন্তু কোন তৃতীয় ব্যক্তির কাছে সে কথা স্বীকার করার আগে সে বরং তার জিভটাই কেটে ফেলে দেবে। যাহোক, তবু যাওয়াই  যাক। দেখে আসি ব্যাপারটা। আমার বড়শিতে আমি মাছ ধরব। আম কিছু না পাই, তাদের দেখে একটু হাসতে পারব। চল।’

ওভারকোটটা গায়ে চড়িয়ে এমন তাড়াহুড়ো করতে শুরু করল যে মনে হল, উদাসীনতার ভাব কাটিয়ে উদ্যম-শীলতা তার উপর ভর করেছে।

‘তোমার টুপিটা নিও,’ সে বলল।

‘তুমি বলছ আমাকে যেতে?’

‘হ্যাঁ। অবশ্য যদি এর চেয়ে বড় কাজ কিছু না থাকে।’

এক মিনিট পরেই একটা ভাড়াটে গাড়ি নিয়ে আমরা দ্রুত ছুটে চললাম ব্রিকসটন রোডের দিকে।

কুয়াসাঢাকা মেঘাচ্ছন্ন সকাল। বাড়িগুলোর মাথার একটা বাদামী আবরণ ছেয়ে আছে। মনে হচ্ছে, যেন নীচে মেটে রঙের রাস্তায় ছায়া পড়েছে। আমার সঙ্গী খুব খোশ মেজাজে চলেছে। আমি চলেছি নীরবে। একে এই বিষণ আবহাওয়া, তার উপর চলেছি একটি বেদনাদায়ক কাজে। আমার মন একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে।

হোমস তখন একমনে সঙ্গীতপ্রসঙ্গে কথা বলে চলেছে। তাকে বাধা দিয়েই বললাম, ‘হাতের কাজে খুব মন দিচ্ছ বলে তো মনে হয় না।’

সে জবাব দিল, ‘এখনও কোন তথ্যই পাই নি। সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগৃতীত হবার আগেই মত গঠন করা মস্ত ভূল। তাতে বিচারশক্তি প্রভাবিত হয়।’

আঙুল বাড়িয়ে দিয়ে আমি বললাম, ‘শীঘ্রই তথ্য পেয়ে যাবে। এইটেই ব্রিকসটন রোড, আর আমার যদি ভুল না হয়ে থাকে তাহলে ঐটেই সেই বাড়ি।’

‘ঠিক। কোচম্যান, গাড়ি থামাও।’ তখনও আমরা শ’খানেক গজ দুরে। কিন্তু তার নির্দেশে সেখানেই নামতে হল। বাকিটা হেঁটে গেলাম।

৩ নম্বর লরিস্টন গার্ডেন্স একটা অশুভ ভয়ংকর চেহারা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। যে চারটে বাড়ি রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত এটা তাদেরই একটা। চারটে বাড়ির দুটোয় লোক আছে, দুটো খালি। শেষের দুটো বাড়িতে দেখা যাচ্ছে তিন সারি খোলা জানালা, আর এখানে-ওখানো ছিটানো-ছড়ানো কিছু কিছু ছোট গাছের একটা বাগান বাড়িগুলোকে রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখেছে। কাদা ও পাথরের একটা হলদেটে সংকীর্ণ পথ বাগানের ভিতর দিয়ে চলে গেছে। রাতের বৃষ্টিতে সমস্ত জায়গাটাই সত্যিসেতে। বাগানের চারধারে তিন-ফুট উঁচু ইটের পাঁচিল। তার উপরে একটুকরো কাঠের রেল বসানো দেওয়ালে হেলান দিয়ে একজন হৃষ্টপুষ্ট পুলিশ কনেস্টবল দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ভীড় করে আছে পথচারীদের একটা ছোট দঙ্গল। বকের মত গলা বাড়িয়ে চোখ বড় বড় করে তারা ভিতরে কি ঘটেছে সেটা দেখবার ব্যর্থ চেষ্টা করছে।

আমি ভেবেছিলাম, শার্লক হোমস সঙ্গে সঙ্গে বাড়ির ভিতরে ঢুকে রহস্য সমাধানের লেগে যাবে। সে কিন্তু সেদিক দিয়েই গেল না। সম্পূর্ণ অনামনস্কভাবে সে ফুটপাতে পায়চারি করতে লাগল। কখনও মাটির দিকে, কখনও আকাশের দিকে, উল্টো দিকের বাড়িগুলোর দিকে, আবার কখনও বা রেলিংএর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে রইল। সবকিছু দেখে ধীরে ধীরে পথটা ধরে—বরং বলা উঁচিত পথের দু’ধারের ঘাসের উপর দিয়ে হাঁটতে লাগল। চোখ দুটো সারাক্ষণই মাটির দিকে নিবন্ধ। দু’বার থামল। একবার তার মুখে হাসি দেখলাম। একটা খুশির উল্লাসও

যেন কানে এল। ভিজে আঠালো মাটিতে অনেক পায়ের ছাপ পড়েছে। কিন্তু এপথে তো অনেক পুলিশ যাতায়ত করছে, সুতরাং থেকে আমার সঙ্গী যে কি জিনিসের আশা করছে আমি বুঝতে পারলাম না। কিন্তু তার দ্রুত দর্শন ক্ষমতার এমন সব অসাধারণ প্রমাণ আমি পেয়েছি যাতে আমি নিঃসন্দেহ যে সে এমন অনেক কিছু দেখতে পায় যা আমাদের কাছে থাকে লুকনো।

বাড়ির দরজায়ই একটি লম্বা, সাদা-মুখ, শনের মত চুলওয়ালা লোকের সঙ্গে আমাদের দেখা হল। তার হাতে একটা নোট বুক। ছুটে এসে সে মহা উৎসাহে আমার সঙ্গীর করমর্দন করে বলল. ‘আপনি এসে পড়ায় অনুগৃহত হলাম। দেখুন, কোন কিছুই আমি স্পর্শ করতে দেই নি।’

‘ঐটে ছাড়া!’ পথটা দেখিয়ে আমার বন্ধু বলল। ‘একপাল মোষ ওখান দিয়ে হেঁটে গেলেও এর চাইতে জগাখিচুড়ি হোত না। গ্রেগসন, এটা হতে দেবার আগেই তোমার নিজস্ব সিন্ধান্তে নিশ্চয়ই উপনীত হয়েছিলে?

গোয়েন্দাপ্রবর তার কথাটা এড়িয়ে বলল, ‘বাড়ির ভিতরে আমার অনেক কাজ ছিল। আমার সহকর্মী ভিতরে আমার অনেক কাজ ছিল। এটা দেখবার ভার তার উপরেই ছিল।’

হোমস আমার দিকে তাকিয়ে বিদ্রুপের ভঙ্গীতে ভুরু দুটো তুলে বলল, ‘তুমি এবং লেস্ট্রেড যখন আসরে নেমেছ তখন আর তৃতীয় ব্যক্তির করবার কিছু থাকতে পারে না।

আত্মসন্তুষ্টিতে দুই হাত ঘসতে ঘসতে গ্রেগসন বলল, ‘যাকিছু করণীয় সবই তো করেছি বলে মনে হয়। যদিও কেসটা অদ্ভুত আর এ ধরনের কেস আপনি যে ভাল বাসেন তাও জানি।’

শার্লক হোমস প্রশ্ন করল, ‘তুমি তো ভাড়াটে গাড়িতে এখানে আসনি?’

না।’

‘লেস্ট্রেডও নয়?’

‘না স্যার।’

‘তাহলে চল ঘরটা একবার দেখি। ‘ এই অবান্তর মন্তব্য করে সে বাড়ির ভিতর ঢুকল। পিছনে গ্রেগসন। তার মুখে বিস্ময়ের ছাপ।

কাঠের পাটাতন-করা ধুলোভরা একটা প্যাসেজ রান্না-ঘর ও অফিসের দিকে চলে গেছে। বাঁয়ে ও ডাইনে দুটো দরজা। দেখেই বোঝা যায় একটা দরজা বেশ কয়েক সপ্তাহ যাবৎ বন্ধই আছে। অপর দরজাটি খাবার ঘরের। রহস্যময় ঘটনাটি ঘটেছে সেই ঘরেই। হোমস ভিতরে পা বাড়াল। আমি তাকে অনুসরণ করলাম। মৃত্যুর উপ-স্থিতির অনুভূতিতে আমার মন আচ্ছন্ন।

একটা বড় চৌকোণা ঘর। আসবাবপত্র কিছুই নেই বলে আরও বড় দেখাচ্ছে। দেওয়ালে ঝকমকে সস্তা কাগজ মোড়। ছ্যাতলা পড়ে জায়গায় জায়গায় দাগ ধরেছে। কোথাও বা অনেকটা কাগজ খুলে গিয়ে ঝুলে পড়েছে।ফলে নীচেকার হলদে প্লাসটার বেরিয়ে পড়েছে। দরজাটার উল্টো দিকে একটা সৌখিন অগ্নিকুন্ড, তার উপরে নকল শ্বেত পাথরের ম্যান্টেলপিস। তার এককোণে একটা লাল মোমবাতির শেষটুকু বসানো। ঘরের একমাত্র জানালায় এত ধুলো-ময়লা জমেছে যে ঘরের আবছা আলোয় সব কিছুতেই একটা হলদে আভা পড়েছে। সারা ঘরে ধুলোর আস্তরণ পড়ায় সেই হলুদ আভায় আরও বেশী করে চোখে লাগছে।

এ সবই আমি পরে লক্ষ্য করেছি। তখনকার মত আমার সব মনোযোগ পড়ল একটিমাত্র ভয়াবহ নিশ্চল মনু্ষ্যদেহের প্রতি। দেহটি মেঝের পড়ে রয়েছে। দৃষ্টি-হীন শূন্য চোখ যেন তাকিয়ে আছে বিবর্ণ শিলিংএর দিকে। লোকটির বয়স হবে বছর তেতাল্লিশ, মাঝারি গড়ন, চওড়া কাধ, কালো কোঁকড়ানো চুল, ছোট ঘন দাঁড়ি। পরনে মোটা কাপড়ের কোটও ওয়েস্টকোট। হালকা রঙের ট্রাউজার, চকচকে কলার ও কফ। ব্রাশ-করা তকতকে একটা টপ হ্যাট তার পাশেই মেঝের উপর পড়ে আছে। দুই হাত মুষ্টিবন্ধ। দুই বাহু, ছড়ানো, দেহের নিষ্মাংশ একসঙ্গে জড়ানো। দেখে মনে হয় মৃত্যুর বিরুদ্ধে তাকে অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে। তার শক্ত মুখে বিভীষিকার ছায়া। আমার মনে হল সে মুখে এত তীব্র ঘৃণা ফুটে উঠেছে যা আমি কখনও মানুষের মুখে দেখি নি। দেহের এই উৎকট ভয়ংকর বিকৃতির সঙ্গে নীচু কপাল, থ্যাবড়া নাক ও পুরু-ঠোঁট যুক্ত হয়ে একটি বানর-সুলভ আকৃতি গড়ে উঠেছে। তার দেহের দুমড়ানো অস্বাভিক ভঙ্গীর জন্য সেটা যেন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। নানা ধরনের মৃত্যু আমি দেখেছি,কিন্তু লন্ডনের উপ-কণ্ঠবর্তী একটি প্রধান রাজপথের এই অন্ধকার ভয়ংকর ঘরে তার যে ভয়াবহ রূপ দেখলাম তার আর কখনো দেখি নি।

ক্ষীণকায় ভোঁদড়-সূলভ আকৃতির লেস্ট্রেড দরজায়ই দাঁড়িয়েছিল। আমাদের দুজনকেই সে অভ্যর্থনা করল।

বলল ‘এই কেস নিয়ে হুলুস্থুল পড়ে যাবে স্যার। এমনটি আমি আর দেখি নি। আর আমি কিন্তু ছেলে-মানুষ নই।’

গ্রেগসন বলল, ‘কোন সূত্র পাওয়া গেল?’

লেস্ট্রেড জবাব দিল, ‘কিচ্ছু না।’

শালক হোমস মৃতদেহের কাছে এগিয়ে হাঁট গেড়ে বসে ভাল করে পরীক্ষা করল। চারদিকের চাপ চাপ রক্তের দাগ দেখিয়ে বলল, তোমরা ঠিক জান কোন ক্ষত নেই?’

উভয় গোয়েন্দাই একসঙ্গে বলে উঠল, ‘নিশ্চয়!’

‘তাহলে  এ রক্ত নিশ্চয় কোন দ্বিতীয় ব্যক্তির—সম্ভবত হত্যারারীর, অবশ্য যদি হত্যাকান্ড সত্যিই ঘটে থাকে। এ প্রসঙ্গে ’০৪ সালে ইউট্রেকট-এ ভ্যান জ্যানসেনের মৃত্যুর পারিপাশ্বিক ঘটনার কথা আমার মনে পড়েছে। গ্রেগসন, সে কেসটার কথা তোমার মনে আছে?’

‘না স্যার।’

‘পড়ো-পড়া উচিত। সূর্যের নীচে নতুন কিছু ঘটে না। যা ঘটেছে তা আগেও ঘটেছে।’

কথা বলার সঙ্গে সঙ্গেই তার হালকা আঙুলগুলিও মৃতদেহের সর্বাঙ্গে যেন উড়ে বেড়াচ্ছে—হাত বুলোচ্ছে, চাপ দিচ্ছে, বোতাম খুলছে, পরীক্ষা করছে। কিন্তু চোখে কোন সুদুরের আভাষ। পরীক্ষার কাজ অত্যন্ত দ্রুত সমাপ্ত হল। এত তাড়াতাড়ি যে এরুপ পুংখানুপুংথভাবে কাজ করা যায় তা ভাবাই যায় না। সব শেষে সে মৃতের ঠোঁট দুটি শুকল, আর দেখল তার পেটেন্ট লেদারের জুতোর তলা।

প্রশ্ন করল, ‘একে একেবারেই সরানো হয়নি তো?’

‘পরীক্ষার জন্য যতটুকু প্রয়োজন হয়েছে তার বেশী নয়।’

‘এবার একে মর্গে পাঠাতে পার’, সে বলল। ‘আর কিছু জানবার নেই।’

একটা স্ট্রেচার ও চারজন লোক মোতায়েনই ছিল। গ্রেগসনের নির্দেশে তারা  ঘরে ঢুকে আগন্তুককে তুলে নিয়ে গেল। তাকে তুলতেই একটা আংটি মেঝের উপর গড়িয়ে পড়ল। লেস্ট্রেড সেটাকে মুঠো করে তুলে হী করে দেখতে লাগল।

‘নিশ্চয় এখানে কোন স্ত্রীলোক ছিল’ সে চেঁচিয়ে উঠল। ‘এটা কোন স্ত্রীলোকের বিয়ের আংটি।’

হাতের তালুতে রেখে আংটিটা সকলেই দেখল। তাকে ঘিরে ধরে আমরাও সেটা দেখলাম। কোন সন্দেহ নেই যে এই খাঁটি সোনার বস্তুটি একসময় কোন বিয়ের কনের আঙুলে শোভা পেয়েছে।

গ্রেগসন বলল, ‘ব্যাপারটা বেশ ঘোরালো হয়ে উঠল। ঈশ্বর জানেন, আগেই যথেষ্ট ঘোরালো ছিল।’

হোমস বলল, ‘তুমি কি ঠিক জান, এর ফলে ব্যাপারটা সরলতর হল না? ওটাকে হী করে দেখে কিছু জানা যাবে না। তার পকেটে কি কি পাওয়া গেছে?’

সিঁড়ির একটা নিচু ধাপের উপর বোঝাই করা এক-গাদা জিনিসপত্র দেখিয়ে গ্রেগসন বলল, ‘ওখানে সব আছে। লন্ডনের বার্ড কোম্পানির একটা সোনার ঘড়ি, নং ৯৭১৬৩। বেশ ভারী নিরেট সোনার অ্যালবার্ট চেন। কারুকার্ষ-করা সোনার আংটি। সোনার পিন-কুকুরের মস্তকাকৃতি, চোখ দৃষ্টিতে চুনী বসানো। রাশিয়ান লেদারের কার্ড-কেস, তাতে ক্লিভল্যান্ডের এনক জে, ড্রেবারের কার্ড ভরা। তারই অদ্য অক্ষর ই, জে, ডি, লেখা জমাকাপড়ে। কোন টাকার থলি নেই, কিন্তু সাত পাউন্ড তের শিলিং খুচরো ছিল। বোকাশিওর “ডেকা-মেরন” এর একখানা পকেট-সংস্করণ, তার প্রথম পাতায় জোসেফ স্ট্যাঙ্গারসনের নাম। দু’খানি চিঠি—ই, জে, ড্রেবার ও জোসেফ স্ট্যাঙ্গারসনকে লেখা।’

‘কোন ঠিকানায়?’

‘আমেরিকান এক্সচেঞ্জ, স্ট্যান্ড না চাওয়া পর্যন্ত থাকবে। দু’খানিই  এসেছে “গুইওন স্টীমশিপ কোম্পানি”  থেকে। তাদের জাহাজ যে লিভারপুল থেকে ছাড়া হয়েছে তারও উল্লেখ আছে। পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, এই ভাগ্য-হীন লোকটির শীঘ্রই নউ ইয়র্কে ফিরবার কথা।’

‘এই স্ট্যাঙ্গারসন সম্পর্কে কোন খোঁজ-খবর করেছ?’

গ্রেগসন বলল, ‘সঙ্গে সঙ্গেই করেছি স্যার। সবগুলো খবরের  কাগজে বিজ্ঞাপন দিয়েছি। একজন লোককে পাঠিয়েছি আমেরিকান এক্সচেঞ্জ-এ। সে এখনও ফেরে নি।’

‘ক্লিভল্যান্ডে কাউকে পাঠিয়েছ?’

‘সকালেই টেলিগ্রাম করে দিয়েছি।’

‘তাতে কি লিখছে?’

‘অবস্থার বিররণ দিয়ে বলেছি, আমাদের পক্ষে সহায়ক কোন সংবাদ জানালে খুশি হব।’

‘তোমারা চুড়ান্ত মনে কর এরকম কোন খবর জানতে চেয়েছ কি?’

‘স্টারঙ্গারসনের খবর জানতে চাওয়া হয়েছে।’

‘আর কিছু নয়? এমন কোন ঘটনা কি নেই যার উপর কেসটা ঝুলে আছে? আর একবার টেলিগ্রাম করতে পার না?’

আহত গলায় গ্রেগসন বলল, ‘আমার যা বলবার সবই বলেছি।’

শার্লক হোমস মুখ টিপে হাসল। তারপর কি যেন বলতে যাবে এমন সময় সামনের ঘর থেকে খুব খুশি-খুশি ভাবে হাত দুটো ঘসতে ঘসতে লেস্ট্রেড হল-ঘরে ঢুকল।

‘মিঃ গ্রেগসন,’ সে বলল, ‘এই মাত্র একটা খুব বড় রকমের আবিষ্কার করে ফেলেছি। দেওয়ালটাককে ভাল করে পরীক্ষা না করলে সেটা ধরাই পড়ত না।’

কথা বলবার সময় এই ছোটখাটো লোকটির চোখ দুটো জ্বলজ্বল করতে লাগল। সমকর্মীর উপর একহাত নেবার আনন্দ যেন তার চোখ-মুখে ফুটে উঠেছে।

‘আমার সঙ্গে এস’ বলে সে দ্রুত সেই ঘর থেকে ফিরে গেল। ভয়ংকর লোকটির সরিয়ে নেওয়ায় সে ঘরের আবহাওয়া তখন অনেকটা হাল্কা হয়েছে। ‘এবার, ওইখানে দাঁড়াও!’

‘জুতার তলায় একটা দেশলাইয়ের কাঠি জ্বেলে সে দেওয়ালের দিকে তুরে ধরল।

‘ঐটে দেখ!’ বিজয়গর্বে বলল।

আগেই বলেছি, দেওয়ালের অনেক জায়গায়ই কাগজ খুলে খুলে পড়েছি। ঘরের ঐ বিশেষ কোণটায় অনেক বড় একখন্ড কাগজ খুলে পড়ায় হলদে প্ল্যাস্টার বেরিয়ে পড়েছে। সেই চৌ-কোণা প্লাস্টারের উপর রক্ত-লাল অক্ষরে একটিমাত্র শব্দ লেখা আছে—

RA CHE (রাসে)

একজন প্রদর্শক যেভাবে তার খেলা দেখায় সেইরকম ভঙ্গীতে গোয়েন্দাপ্রবর চেঁচিয়ে বলে উঠল, ‘এটার বিষয়ে তুমি কি বলছ? ঘরের  একেবারে অন্ধকার কোণে রয়েছে বলে এটা কারও চোখে পড়ে নি, এদিকটা দেখার কথাও কেউ ভাবি নি। খুনি নিজের রক্ত দিয়ে এটা লিখেছে। দেখ, দেওয়াল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়েছে। ব্যাপারটা-যে আত্মহত্যা নয় সেটা পরিষ্কার হয়ে গেল। লেখবার জন্য ঐ কোণটা বেছে নেওয়া হল কেন? সেটাও বলছি। ম্যান্টেলপিসের বেছে নেওয়া হল কেন? সেটাও বলছি। ম্যান্টেলপিসের উপর ঐ মোমবাতিটা দেখ। ঘটনার সময় ওটা জ্বালান ছিল, আর ওটা জ্বললে ঘরের ঐ কোণটা সবচাইতে অন্ধকার না হয়ে সবচাইতে উজ্জ্বল হয়।’

অসন্তোষের ভাব নিয়ে গ্রেগসন প্রশ্ন করল, ‘বেশ তো, তুমি ওটা দেখেছ, কিন্তু তাতে কি বোঝা গেল?’

‘কি বোঝা গেল? বোঝা গেল যে লেখক একটি মেয়ের নাম “রাসেল” লিখতে চেয়েছিল, কিন্তু লেখাটা শেষ করবার আগেই কোন বিঘ্ন ঘটে। আমার কথাটা বোঝ, এই কেসের কিনারা যখন হবে তখন দেখতে পারে রাসেল নামের  একটি মেয়ে এর সঙ্গে জড়িত আছে। মিঃ শার্লক হোমস, আপনি হাসতে পারেন। আপনি খুব তুখোড় ও চতুর হতে পারেন, কিন্তু সব কথার সেরা কথা হল—পুরেনো চাল ভাতে বাড়ে।’

হো-হো করে হেসে উঠে আমার সঙ্গী এই ছোটখাট লোকটির মেজাজ সত্যি খি’চড়ে দিয়েছিল। তাই সে বলল, ‘সত্যি, আমি তোমার কাছে ক্ষমা চাইছি। তুমি প্রথম এটা দেখেছ, এ কৃতিত্ব অবশ্যই তোমার প্রাপ্য। গত রাত্রের রহস্যের অপর অংশীদারই যে এটা লিখেছে সে বিষয়েও তোমার সঙ্গে আমি একমত। এ ঘরটা পরীক্ষা করে দেখবার সময় আমি এখনও পাই নি। তোমার অনুমতি নিয়ে সে কাজটা এবার করতে চাই।’

বলতে বলতেই সে পকেট থেকে একটা মাপের ফিতে ও একটা বড় ম্যাগ্মিফায়িং গ্লাস বের করে ফেলল। তারপর এই দুটি হাতিয়ার নিয়ে নিঃশব্দে ঘরময় দাপাদাপি শুরু করে দিল। কখনও থামছে, কখনও হাঁটুগেড়ে বসছে, একবার তো টানটান হয়ে উপুড় হয়ে শুয়েই পড়ল। নিজের কাজে তখন সে এতই মগ্ন যে আমাদের উপস্থিতি পর্যন্ত ভুলে গেল। সারাক্ষণ নিজের সঙ্গেই কথা বলে চলেছে—কখনও উল্লাস, কখনও আর্তনাদ; এই হয় তো শিস দিচ্ছে, আবার পরক্ষণেই উৎসাহে ও আশায় চীৎকার করে উঠছে। তাকে দেখে তখন আমার এক সুশিক্ষিত ভাল জাতের শিকারী কুকুরের কথা মনে হচ্ছিল; শিকারের সন্ধান না পাওয়া পর্যন্ত সেও তো এমনই তীব্র কৌতূহলে ঝোপ-ঝাড়ের ভিতরে এমনিভাবে কখনও এগোয়, কখনও পেছোয়। প্রায় কুড়ি মিনিট ধরে সে তার কাজ চালিয়ে গেল। আমার চোখে সম্পূর্ণ অদৃশ্য দাগগুলির দুরত্ব বেশ যত্ন নিয়ে সঠিকভাবে মাপল। কখনও আবার কেন যে ফিতেটাকে দেওয়ালের গায়েও ব্যবহার করল সেটা তো আমার কাছে দুর্বোধ্য। এক জায়গায় মেঝে থেকে এক –মুঠো ধুলো খুব যত্ন করে তুলে নিয়ে কামে ভরে রাখল। শেষকালে দেওয়ালের লেখার উপর কাঁচটা ধরে প্রতিটি অক্ষরকে সূক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখল। কাজ শেষ করে খুশি মনে ফিতে আর কাঁচটা পকেটে রেখে দিল।

হেসে বলল, ‘লোকে বলে, বেদনা সহ্য করবার অসীম ক্ষমতাই হল প্রতিভা। এটা খুব বাজে সংজ্ঞা কিন্তু গোয়েন্দাদের কাজে এটা সত্যি খাটে।’

গ্রেগসন এবং লেস্ট্রেড তাদের সৌখিন সহকর্মীর এই সব পায়তাড়া বেশ কৌতুহল ও তাচ্ছিল্যের সঙ্গে লক্ষ্য করছিল। শার্লক হোমসের তুচ্ছতম কাজও যে একটা সুনির্দিষ্ট বাস্তব লক্ষ্যের দিকে পরিচালিত এ সত্য আমি বুঝতে আরম্ভ করলেও তারা কিন্তু এখনও বুঝতে অপারগ।

দুজনে একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করল, ‘এ ব্যাপারে আপনার অভিমত কি?’

আমার বন্ধু, জবাব দিল, ‘আমি তোমাদের সাহায্য করছি একথা মনে হলেই যে এ কেসের কৃতিত্ব থেকে তোমাদের বঞ্চিত করা হবে। তোমরা এত ভাল কাজ করছ যে জন্যর হস্তক্ষেপ খুবই দুঃখের কারণ হতে পারে।’ মজার স্বরে প্রচুর ঠাট্রা মিশিয়ে সে বলতে লাগল, ভেতরে তদন্তের কাজ কিভাবে চালাচ্ছ যদি আমাকে বল, তোমাদের কোনরকম সাহায্য করতে পারলে আমি খুমি হব। ইতিমধ্যে যে কনেস্টবল মৃতদেহটি আবিষ্কার করেছিল, তার সঙ্গে আমি কথা বলতে চাই। তার নাম, ঠিকানাটা আমাকে দিতে পার?’

লেস্ট্রেড নোটবুক দেখে বলল, ‘জন রাঞ্চ। এখ তার ছুটি, কেনিংটন পার্ক গেটের ৪৬, অডলি কোটে তাকে পাবেন।’

হোমস ঠিকানা লিখে নিল।

তারপর বলল, ‘চল ডাক্তার। তাকে খুঁজে বের করতে হবে।’ গোয়েন্দা-যুগলের দিকে ফিরে বলল, ‘খুন হয়েছে। খুনি একজন পুরুষ মানুষ। উচ্চতায় ছ’ফুটের বেশী, বয়সে যুবক, উচ্চতার তুলনায় পা দুটো ছোট, পায়ে চৌকো-মাথা বুট, ঠোঁটে ত্রিচিনোপলি সিগার। একটা চার চস্কার গাড়িতে করে শিকারকে নিয়ে সে এখানে এসেছিল। গাড়িটা ছিল এক-ঘোড়ায় টানা, আর ঘোড়াটার তিন পায়ে ছিল পুরনো নাল এবং সামনের এক পায়ে ছিল নতুন নাল লাগানো। খুব সম্ভব খুনীর মুখের রং লাল, আর ডান হাতের আঙুলের নখগুলো বেশ লম্বা। অল্প গোটাকয় লক্ষণ উল্লেখ করলাম। তবে এগুলো তোমাদের কাজে লাগতে পারে।’

লেস্ট্রেড এবং গ্রেগসন পরস্পরের দিকে তাকিয়ে অবিশ্বাসের হাসি হাসল।

লেস্ট্রেড বলল, ‘লোকটি যদি খুনি হয়ে থাকে, তাহলে কিভাবে খুব করা হয়েছে?’

‘বিষ।’ সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়ে শালক হোমস যাবার জন্য পা বাড়াল। দরজার কাছে গিয়ে ফিরে দাঁড়িয়ে বলল, ‘আর একটা কথা লেস্ট্রেড। ‘RACHE’ হচ্ছে “প্রতিহিংসা’র জামার্ন প্রতিশব্দ; কাজেই মিস রাসেলকে খুঁজতে গিয়ে সময় নষ্ট করো না।’

শব্দের তীরটি ছুঁড়ে দিয়েই সে চলে গেল। দুই প্রতিদ্বন্দ্বী হী করে তার দিকে তাকিয়ে রইল।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *