০৩. আমার এ. এল. এস-এর অভিজ্ঞতা*
[*১৯৮৭-র অক্টোবর মাসে বার্মিংহামে ব্রিটিশ মোটর নিউরন ডিজিজ অ্যাসোসিয়েশন-এর কনফারেন্সে প্রদত্ত একটি বক্তৃতা।]
আমাকে অনেক সময়ই জিজ্ঞাসা করা হয় : এ. এল. এস. নিয়ে থাকতে আপনি কেমন বোধ করেন? আমার উত্তর : খুব বেশি কিছু নয়। আমি যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চেষ্টা করি, আর চেষ্টা করি নিজের অবস্থা নিয়ে না ভাবতে কিংবা যে সব জিনিস করতে পারি না তার জন্য দুঃখ না করতে। সে কাজগুলো সংখ্যায় খুব বেশি নয়।
আমার মোটর নিউরন ডিজিজ হয়েছে জানতে পেরে আমি মনে একটা জোর ধাক্কা খেয়েছিলাম। শৈশবে আমার দৈহিক সমন্বয় খুব ভাল ছিল না। আমি বল খেলায় খুব ভাল ছিলাম না, হয়ত সেজন্য আমি খেলাধুলা কিংবা দৈহিক ক্রিয়াকর্ম গ্রাহ্য করিনি। মনে হয় অক্সফোর্ডে যাওয়ার পর ব্যাপারটা একটু বদলেছিল। আমি হাল ধরা আর নৌকা চালানো শুরু করেছিলাম। বোট রেসে* (Boat Race-নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা) [*অক্সফোর্ড ও কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা বিশ্ববিখ্যাত] যাওয়ার মতো ছিলাম না তবে ইন্টারকলেজ প্রতিযোগিতায় নামবার মতো মান আমার ছিল।
অক্সফোর্ডে তৃতীয় বছরে কিন্তু আমি লক্ষ্য করলাম চলাফেরায় আমি বজড়জং হয়ে যাচ্ছি। একবার, দুবার বিনা কারণে পড়েও গেলাম। কিন্তু পরের বছর কেমব্রিজে যাওয়ার পরেই মা ব্যাপারটা লক্ষ্য করলেন এবং পারিবারিক চিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে একজন বিশেষজ্ঞের কাছে পাঠালেন। আমার একবিংশতি জন্মদিনের কয়েকদিন পরেই আমি পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য হাসপাতালে ভর্তি হলাম। হাসপাতালে ছিলাম দুই সপ্তাহ। সেই সময় নানারকম পরীক্ষা হল। ওঁরা আমার বাহু থেকে খানিকটা বাংসপেশী কেটে নিলেন, আমার গায়ে কতগুলো ইলেকট্রোড ঢুকিয়ে দিলেন, আমার শিরদাঁড়ার ভিতরে রঞ্জনরশ্মির কাছে অস্বচ্ছ এই রকম কিছু তরল পদার্থ ঢুকিয়ে দিলেন আর খাটটা নেড়েচেড়ে দেখলেন সেটা উপর-নিচে কিভাবে যাতায়াত করে। এতশত করেও কিন্তু বললেন না আমার কি হয়েছে। বললেন, রোগী হিসেবে আমি একটি ব্যতিক্রম (a typical)। আমি কিন্তু জানতে পারলাম যে তাদের আশঙ্কা, রোগটা ক্রমশই খারাপ হবে এবং ভিটামিন দেওয়া ছাড়া তাদের আর কিছু করার নেই। আমি বুঝতে পারছিলাম ওগুলোতে কোন কাজ হবে বলে ওঁরা আশা করেননি। এর চাইতে বেশি কিছু জানতে আমার ইচ্ছে করেনি। কারণ, স্পষ্টতই খবরটা খারাপই।
আমি এমন একটা রোগে ভুগছি যেটা সারবে না এবং কয়েক বছরের ভিতরেই আমার মৃত্যু হবে। এই বোধ একটা মানসিক আঘাত সত্যিই আমাকে দিয়েছিল। আমার এ রোগ হল কি করে? কেন আমার জীবন এভাবে শেষ হবে? কিন্তু আমি যখন হাসপাতালে ছিলাম তখন আমার উল্টোদিকের বিছানায় একটি ছেলে মারা গেল। আমি আবৃছা আবৃছা বুঝতে পেরেছিলাম রোগটা ছিল লিউকেমিয়া। দৃশ্যটা খুব সুন্দর মনে হয়নি। স্পষ্টতই এমন অনেক লোক আছেন যাদের অবস্থা আমার চাইতেও খারাপ। আমার অন্ততপক্ষে নিজেকে রোগী মনে হয় না। যখন আমার নিজের জন্য দুঃখ করতে ইচ্ছা করে তখন আমি ঐ ছেলেটির কথা মনে করি।
আমার কি হবে জানতাম না। একটা অনিশ্চিত অবস্থায় আমি ছিলাম। ডাক্তার আমাকে বললেন কেমব্রিজে ফিরে গিয়ে গবেষণা চালিয়ে যেতে। আমি তখন ব্যাপক অপেক্ষবাদ’ এবং মহাবিশ্ব’ নিয়ে গবেষণা সবে শুরু করেছি। তবে বেশি এগোতে পারছিলাম না, কারণ আমার অঙ্কের ভিতটা ভাল ছিল না। আমি হয়ত পি. এইচ. ডি. শেষ করার মতো অতদিন বেঁচে নাও থাকতে পারি। নিজেকে একটা বিয়োগান্ত কাহিনীর চরিত্র বলে মনে হচ্ছিল। আমি ওয়াগনার (Wagner) শুনতে শুরু করলাম। কিন্তু পত্র-পত্রিকার প্রবন্ধগুলোতে যে বলা হয়েছে আমি খুব বেশি মদ খেতাম, সেটা একটু অতিশয়োক্তি। অসুবিধাটা হল, কোন একটা প্রবন্ধে এ কথা লেখা হলেই অন্য প্রবন্ধে সেটা নকল করা হয়। তার কারণ, কাহিনীটা ভাল। বারবার ছাপার অক্ষরে যেটা বেরোয় সেটাই সত্যি।
সে সময় আমার স্বপ্নগুলোও গোলমেলে হয়ে গিয়েছিল। রোগ নির্ণয় হওয়ার আগে জীবনটাই আমার একঘেয়ে লাগছিল, করবার মতো কিছু আছে বলে মনে হত না। কিন্তু হাসপাতাল থেকে বার হওয়ার কয়েকদিন পরই স্বপ্ন দেখলাম আমাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে। হঠাৎ মনে হল আমার মৃত্যুদণ্ড মকুব হলে আমি অনেক কাজের কাজ করতে পারি। আর একটা স্বপ্ন আমি কয়েকবার দেখেছি, সেটা হল–আমি পরের জন্য জীবন উৎসর্গ করব। আমাকে যদি মরতেই হয় তাহলে এভাবে মরলে হয়ত ভাল কিছু হবে।
কিন্তু আমি মরিনি। আসলে যদিও আমার ভবিষ্যৎ ছিল কালো মেঘে ঢাকা, তবুও আশ্চর্য হয়ে দেখলাম আমি অতীতের চাইতে বর্তমানকে বেশি উপভোগ করছি। আমার গবেষণাও এগোতে লাগল। আমার বিয়ে ঠিক হল– বিয়ে করলামও। কেমব্রিজে কীজ কলেজে (Caius College) রিসার্চ ফেলোশিপ পেলাম।
কীজ কলেজের ফেলোশিপ আমার তাৎক্ষণিক বেকার সমস্যার সমাধান করল। আমি কপালগুণে তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যায় গবেষণার কাজ বেছে নিয়েছিলাম, কারণ, যে কয়েকটা ক্ষেত্রে আমার অবস্থা বিশেষ কোন অসুবিধা সৃষ্টি করত না, তাত্ত্বিক পদার্থবিদ্যা তার ভিতরে একটা। আমার ভাগ্য ভাল ছিল–কারণ আমার অক্ষমতা যেমন বেড়েছে, বৈজ্ঞানিক হিসেবে আমার খ্যাতিও তেমনি বেড়েছে। এর অর্থ হল, লোকে আমাকে পর পর এমন পদ দিতে রাজি ছিল, যে পদে আমার শুধুমাত্র গবেষণাই করতে হত, বক্তৃতা দিতে হত না।
বাসস্থানের ব্যাপারেও আমার ভাগ্য ভাল ছিল। জেন তখনও লন্ডনের ওয়েস্টফিল্ড কলেজে (Westfield College) আন্ডার গ্র্যাজুয়েট ক্লাসে (তখনও বি. এ., বি.এস. সি র মতো স্নাতক হয়নি)। সুতরাং সমস্ত সপ্তাহ তাকে লন্ডন অবধি যেতে হত। এর অর্থ ছিল আমাদের এমন কোন জায়গা খুঁজে বার করতে হত যেখানে আমি নিজের কাজ নিজেই করতে পারি এবং যে জায়গা কেন্দ্রে অবস্থিত। তার কারণ আমি বেশি দূর হাঁটতে পারতাম না। কলেজকে জিজ্ঞাসা করলাম তারা কোন সাহায্য করতে পারেন কিনা কিন্তু কলেজের তখনকার কোষাধ্যক্ষ আমাকে বললেন : ফেলোদের গৃহ সমস্যায় কোন সাহায্য না করাই কলেজের নীতি। বাজারের কাছে কতগুলো নতুন ফ্ল্যাট হচ্ছিল, অগত্যা আমরা সেখানেই ফ্ল্যাট ভাড়া নেওয়ার জন্য নাম লেখালাম। (কয়েকবছর পর আমি আবিষ্কার করেছিলাম ঐ ফ্ল্যাটগুলোর মালিক ছিল কলেজ কিন্তু ওঁরা আমাকে সে কথা বলেননি)। গ্রীষ্মের পর আমেরিকা থেকে কেব্রিজে ফিরে দেখলাম ফ্ল্যাটগুলো তখনও তৈরি হয়নি। কোষাধ্যক্ষ আমাকে বিরাট খাতির করে গ্র্যাজুয়েট ছাত্রদের হোস্টেলে আমাদের একটা ঘর দিতে চাইলেন। তিনি বললেন, সাধারণত আমরা এক এক রাতের জন্য এই ঘরগুলোর সাড়ে বার শিলিং ভাড়া নিই, তবে আপনারা যেহেতু দুজন সেজন্য আপনাদের দিতে হবে পঁচিশ শিলিং।
আমরা ওখানে মোটে তিন রাত থেকেছিলাম। তারপর আমি ইউনিভার্সিটিতে আমার ডিপার্টমেন্টের কাছে একটা ছোট বাড়ি পেলাম। বাড়িটা ছিল অন্য একটা কলেজের। তারা বাড়িটা নিজেদের একজন ফেলোকে ভাড়া দিয়েছিল। তাদের নিজের (lease) আরও তিন মাস বাকি ছিল। সেই কয়দিনের জন্য বাড়িটা আমাদের ভাড়া দিলেন। সেই তিন মাসের ভিতরে আমরা ঐ রাস্তার উপরেই একটা খালি বাড়ি পেলাম। বাড়ির মালিক ডরসেটে (Dorset) থাকতেন। আমাদের একজন পড়শী ডরসেট (Dorset) থেকে মালিককে ডেকে এনে বললেন–’ছোকরারা বাড়ি খুঁজছে আর ঐ বাড়িটা খালি পড়ে আছে–এ এক কলঙ্ক! সুতরাং মহিলা আমাদের বাড়ি ভাড়া দিলেন। ঐ বাড়িতে কয়েকবছর থাকবার পর মেরামত করে নিতে চাইলাম। আমরা কলেজের কাছে বাড়ি বন্ধক রেখে ধার চাইলাম। কলেজ বাড়িটা সার্ভে করিয়ে সিদ্ধান্তে এল–ওটা বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে বাড়ি কিনলাম আর বাবা-মায়ের কাছে টাকা নিয়ে বাড়িটা ঠিকঠাক করলাম।
ও বাড়িতে আমরা আরও চার বছর ছিলাম। ক্রমশ সিঁড়ি ভাঙা আমার পক্ষে খুবই কঠিন হতে লাগল। এর ভিতরে কলেজে আমার একটু দাম বাড়ল আর নতুন একজন কোষাধ্যক্ষ এলেন। তাঁরা নিজেদের একটা বাড়ির একতলার ফ্ল্যাটটা আমাদের দিতে চাইলেন। বাড়িটার ঘরগুলো ছিল বড় বড় আর দরজাগুলোও ছিল চওড়া। সুতরাং আমার পক্ষে বাড়িটা ভালই ছিল। আর অবস্থান ছিল শহরের কেন্দ্রের কাছাকাছি। ইলেকট্রিক হুইল চেয়ারে করেই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার ডিপার্টমেন্টে যেতে পারতাম। বাড়িটা ছিল বাগানঘেরা আর বাগানটা দেখাশোনা করত কলেজের মালীরা। তাইতে আমাদের তিনজন ছেলে-মেয়েরও সুবিধা হল ।
১৯৭৪ সাল পর্যন্ত আমি নিজে নিজে খেতে পারতাম, বিছানাতে উঠতে পারতাম আর বিছানা থেকে নামতেও পারতাম। জেন-ই আমাকে সাহায্য করতে পারত আর বাচ্চা দুটোকেও মানুষ করতে পারত। এর জন্য বাইরের কারও সাহায্য লাগত না। এরপর কিন্তু ব্যাপারটা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়াল। সেজন্য আমরা আমাদের সঙ্গে একজন গবেষক ছাত্রের থাকার ব্যবস্থা করলাম। বিনামূল্যে থাকার ব্যবস্থা এবং আমার সযত্ন মনোযোগের বদলে ছাত্রটি আমাকে বিছানায় উঠতে ও নামতে সাহায্য করত। ১৯৮০ সালে আমি একজন কমুনিটি community) নার্স এবং একজন প্রাইভেট নার্সের ব্যবস্থা করলাম। তারা সকালে ও বিকালে দু-এক ঘণ্টা করে আসতেন। ১৯৮৫ সালে আমার নিউমোনিয়া না হওয়া পর্যন্ত এই ব্যবস্থাই চলছিল। তখন আমার ট্রাকিওস্টমি অপারেশন (Tracheostomy–শ্বাসনালীর একটা অপারেশন) হয়। সে সময় থেকে আমার চব্বিশ ঘণ্টাই নার্সের যত্নের প্রয়োজন হত। এটা সম্ভব হয়েছিল কয়েকটি দাঁতব্য প্রতিষ্ঠান থেকে সাহায্যের ফলে।
অপারেশনের আগে আমার কথা ক্রমশই বেশি বেশি জড়িয়ে যাচ্ছিল। সেজন্য যারা আমাদের ঘনিষ্ঠ ছিল শুধুমাত্র তারাই আমার কথা বুঝতে পারত। তাহলেও আমি অন্ততপক্ষে নিজের ভাব প্রকাশ করতে পারতাম। আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্রগুলো আমি একজন সেক্রেটারিকে বলতাম–তিনি সেগুলো লিখে দিতেন। আমি বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা দিতাম একজন দোভাসীর সাহায্যে। আমার কথাগুলো তিনি আরও স্পষ্ট উচ্চারণে বলে দিতেন। কিন্তু ট্রাকিওস্টমি করার ফলে আমার কথা বলার ক্ষমতা সম্পূর্ণ চলে গেল। কিছুদিন পর্যন্ত আমার ভাব প্রকাশ করার একমাত্র উপায় ছিল শব্দগুলো এক-একটি অক্ষরের সাহায্যে বানান করে বলা। যখন কেউ বানান লেখা কার্ডে সঠিক অক্ষরটা দেখাতেন তখন আমি ভুরু তলে সম্মতি জানাতাম। বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র তো দূরের কথা, এভাবে কারও সঙ্গে কথাবার্তাও বলা বেশ শক্ত ছিল। তবে ওয়াল্ট ওলটোজ (Walt Woltosz) নামে ক্যালিফোর্নিয়ার এক কম্পিউটার বিশেষজ্ঞ আমার দুরবস্থার কথা শুনেছিলেন। তিনি ইকোয়ালাইজার (Equalizer) নামে একটা কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখেছিলেন, সেটা তিনি আমাকে পাঠিয়ে দেন। এই যন্ত্রে আমার হাতের একটা সুইচ টিপলে পর্দায় অনেকগুলো শব্দের তালিকা ভেসে ওঠে। তা থেকে যে কোন একটা শব্দ আমি বেছে নিতাম। যন্ত্রটা মাথা কিংবা চোখ নাড়িয়েও নিয়ন্ত্রণ করা যেত। আমি কি বলতে চাইছি সেটা একবার ঠিক হলে সেটা বাক্য সংশ্লেষককে (speech synthesizer) পাঠাতে পারি।
প্রথমে আমি ইকোয়ালাইজারটা চালাতাম একটা ডেস্ক টপ কম্পিউটারের উপরে। পরে কেব্রিজ অ্যাডাপ্টিভ কমিউনিকেশন্ এর (Cambridge Adaptive Communications) ডেভিড মেসন (David Mason) আমার হুইল চেয়ারে একটা ব্যক্তিগত কম্পিউটার (Personal Computer) এবং একটা বাক্য সংশ্লেষক (Speech synthesizer) লাগিয়ে দিলেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে আমি আগের চাইতে অনেক ভাল ভাবপ্রকাশ করতে পারি। মিনিটে প্রায় ১৫টা শব্দ ব্যবহার করতে পারি। আমি যা দেখছি সেটা হয় বলতে পারি কিংবা ডিস্কে (কম্পিউটারের চাকতি) জমিয়ে রাখতে পারি। তারপর আমি সেটাকে ছাপিয়ে নিতে পারি কিংবা সরল করে বাক্যের পর বাক্য বলতে পারি। এই ব্যবস্থার সাহায্যে আমি দুটো বই লিখেছি আর কয়েকটা বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ লিখেছি। আমি কয়েকটা বৈজ্ঞানিক বক্তৃতা এবং সাধারণ মানুষের জন্য বক্তৃতাও দিয়েছি। সেগুলো শ্রোতাদের পছন্দ হয়েছে। আমার মনে হয় এর একটা প্রধান কারণ স্পীচ প্লাস (Speech Plus) এর তৈরি স্পীচ সিনথেসাইজারের গুণগত মান। মানুষের কণ্ঠস্বরের গুরুত্ব খুবই বেশি। আপনার কথা যদি জড়ানো হয় তাহলে লোকে ভাববে আপনি জড়বুদ্ধি। আমি যতগুলো শুনেছি তার ভিতরে এটাই বোধ হয় সবচাইতে ভাল। এ যন্ত্রে উচ্চারিত শব্দের পরিবর্তন হয়–ডালেকের মতো শোনায় না (Dalek হিব্রুর চতুর্থ অক্ষর)। একমাত্র অসুবিধা হল আমার কথায় আমেরিকান টান এসে যায়। তবে এখন আমি নিজেকে ঐ স্বরের সঙ্গে একাত্ম বোধ করি। আমাকে ব্রিটিশের মতো কণ্ঠস্বর দিতে চাইলেও আমি আমার এখনকার স্বর বদলাতে রাজি হব না। তাহলে আমার মনে হবে আমি অন্য লোক হয়ে গেছি। কার্যত আমি বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর থেকেই মোটর নিউরন ব্যাধিতে (Motor Neurone Disease) ভুগছি। কিন্তু সে রোগভোগ আমাকে আকর্ষণীয় পরিবার গঠন করতে এবং কর্মে সাফল্যলাভ করতে বাধা দিতে পারেনি। এটা সম্ভব হয়েছে আমার স্ত্রী, আমার সন্তান এবং অন্য অনেক লোকের এবং সংগঠনের সাহায্যের জন্য। আমার ভাগ্য ভাল, আমার অবস্থা ঐ অসুখের ক্ষেত্রে সাধারণত যত দ্রুত মন্দের দিকে যাওয়ার কথা তত দ্রুত মন্দ হয়নি। এ থেকে মনে হয় নিরাশ হওয়ার কোন প্রয়োজন নেই।