০২. খবিরউদ্দিন ও মোষের দই

. খবিরউদ্দিন ও মোষের দই

খাবার টেবিলে আম্মা টিফিন-ক্যারিয়ার থেকে খাবার বের করতে করতে বললেন, “পরিচয় হল সবার সাথে?”

“হয়েছে। একটা মেয়ে তার নাম হচ্ছে সুমি। সেই মেয়েটা–” বুবুন হঠাৎ থেমে গেল। বাঁশের ডগায় খবরের কাগজ বেঁধে আগুন ধরানোর কথাটা বলা ঠিক হবে কি না বুঝতে পারল না।

“কী হয়েছে মেয়েটার?”

“নাহ্! কিছু না।” বুবুন প্লেটে ভাত নিতে নিতে বলল, “একটা ছেলে আছে। তার নাম পিয়াল। পিয়াল করেছে কি-বুবুন আবার থেমে গেল, পিয়াল যে তাদের বাসা প্রায় পুড়িয়ে দিয়েছিল কিংবা ইলেকট্রিক শক দিয়ে বাবাকে প্রায় মেরে ফেলেছিল সেটাও হয়তো বলা ঠিক হবে না।

“কী হয়েছে পিয়ালের?”

“নাহ্। কিছু হয় নি।”

আম্মা আড়চোখে বুবুনকে একবার দেখলেন, কিছু বললেন না। বুবুন ভাতের সাথে বিদঘুঁটে রকমের একটা সবজি মাখাতে মাখাতে বলল, “একটা ছেলে আছে, বেশি বড় না, ছোটখাটো সাইজ–তার নাম হচ্ছে গাব্ব–হি হি হি—”

“খুব যে হাসছিস? তোর নিজের নামটা কী?”

বুবুন মুখ শক্ত করে বলল, “সত্যিই আম্মা তোমরা আমার নাম বুবুন কেমন করে রাখলে?”

“আমি রাখিনি।”

“তা হলে কে রেখেছে?”

‘তোর আব্বা।” বুবুন লক্ষ করল খুব সাবধানে আম্মা একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করলেন।

“আব্বা?”

“হুম।”

আম্মা কোনো কথা না বলে অনেকক্ষণ চুপ করে রইলেন। বুবুন পরিবেশটা হালকা করার জন্যে বলল, “আব্বার কি মাথা খারাপ ছিল?”

আম্মা কিছুক্ষণ বুবুনের দিকে তাকিয়ে থেকে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বললেন, “ছিল।”

আম্মার গলায় ঠাট্টার কোনো চিহ্ন নেই–বুবুন কেমন জানি চমকে ওঠে। ভালো করে আম্মার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “কী বললে আম্মা?”

“কথা না বলে এখন ভাত খা।”

“কিন্তু আম্মা–”

“কী?”

“আব্বার কথা কী বললে?”

“কিছু না–”

“বলো-না–”

আম্মা সোজা হয়ে বসে সোজাসুজি তাকালেন বুবুনের দিকে, তারপর কেমন যেন কঠিন গলায় বললেন, “ঠিক আছে বলব। তুই এখন বড় হয়েছিস, এখন হয়তো শুনতে পারবি। আসলেই শেষের দিকে তোর আব্বার মাখা-খারাপ হয়ে গিয়েছিল।”

“কেন?”

“ঠিক জানি না। মাথায় একটা টিউমারমতো হয়েছিল, ঠিক ডায়াগনসিস করার আগেই উধাও হয়ে গেল।”

“কোথায় আম্মা? কেমন করে?”

আম্মা কোনো কথা না বলে খানিকক্ষণ প্লেটের ভাত নাড়াচাড়া করলেন, তারপর মুখ তুলে বললেন, “সারারাত মাথার ব্যথায় ছটফট করল। ভোররাতে উঠে বসল, চোখ দুটি লাল, চুল এলোমোলো। আমার দিকে কীরকম অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল, তুমি কে? আমি বললাম, মাসুদ তুমি আমাকে চিনতে পারছ না? মাসুদ বলল, না। আমি তখন কাছে গেলাম, পায়ের শিকল ধরে–”

“পায়ের শিকল?”

আম্মা ন্যাপকিন দিয়ে সাবধানে চোখের কোনো মুছলেন, বললেন, “হ্যাঁ, একটা পা শিকল দিয়ে জানালার শিকের সাথে বাঁধা ছিল। মাঝে মাঝে ভায়োলেন্ট হয়ে ঘর থেকে চলে যেত, তাই।”

“কেমন করে হল আম্মা?”

“জানি না।” আম্মা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললেন, “অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট একটা মানুষ ছিল। তোর জন্মের কিছুদিন পর থেকে মাঝে মাঝে বলত মাথায় ব্যথা করে। ভোতা একরকমের ব্যথা। ডাক্তারের কাছে যেতে চাইত না, অনেক ঠেলেঠুলে পাঠানো হল। ডাক্তার দেখেটেখে কিছু পেল না, বলল ক্যাট স্ক্যান করতে হবে। করতে চায় না–একরকম জোর করে পাঠানো হল। সেখানে ছোট একটা টিউমারের মতো দেখা গেল, কিন্তু সেটা কী সমস্যা ঠিক করে বলতে পারে না। বলল, বিদেশে নিয়ে যান।”

আম্মা একটু থামলেন, মনে হল এই অল্প কয়টা কথা বলেই কীরকম জানি ক্লান্ত হয়ে গেছেন। পেটের ভাতগুলো নাড়াচাড়া করতে করতে বললেন, “বিদেশে নেব, তার পয়সা কই? দুজনে মিলে চাকরি করে কোনোমতে সংসার চালাই। আর তোর আব্বার কীকরম একটা গো, বিদেশে যাবে না। বলে মরতে হলে। দেশের মাটিতে মরব।“

“ধার কর্জ করে কিছু টাকা জোগাড় করেছি। এর মাঝে দেখতে দেখতে অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেল। হঠাৎ হঠাৎ ভায়োলেন্ট হয়ে ওঠে, তখন ধরে রাখা যায় না। বাসা থেকে বের হয়ে যায়। কোথায় যায়, কী করে বুঝতে পারি না। একসময় দেখা গেল মানুষজনকে চিনতে পারছে না। বেশির ভাগ সময় ছটফট করছে–শুধু তোকে দেখলে শান্ত হয়ে যেত। তুই তখন ছোট ন্যাদা-ন্যাদা বাচ্চা। তোর আব্বার কাছে যাবার জন্যে খুব ব্যস্ত ছিলি। কিন্তু ডাক্তারেরা ভয় দেখাল, বলল, কাছে নেবেন না। হঠাৎ করে কিছু-একটা হয়ে যেতে পারে। আমিও নিই না–“

আম্মা হঠাৎ কাঁদতে শুরু করলেন। বুবুন এর আগে আম্মাকে কখনো কাঁদতে দেখেনি, তার এত কষ্ট হতে লাগল যে সেটি আর বলার মতো নয়। আম্মাকে শান্ত করার জন্যে তাকে ধরে কিছু-একটা বলতে গিয়ে নিজেই ভেউভেউ করে কাঁদতে শুরু করল। আম্মা তখন নিজের চোখ মুছে বুবুনকে আদর করে বললেন, “কাঁদে না বোকা ছেলে!”

বুবুন কাঁদতে কাঁদতে বলল, “তুমিও তো কাঁদছ!”

আম্মা জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললেন, “হ্যাঁ। কিরকম বোকার মতো কেঁদে ফেললাম, দেখলি? হঠাৎ করে তোর আব্বার কথা মনে হয়ে” আম্মা আবার আকুল হয়ে কেঁদে উঠলেন।

ঠিক তখন দরজায় শব্দ হল। বুবুন আর তার আম্মা একজন আরেকজনের দিকে তাকালেন। আম্মা ন্যাপকিন দিয়ে চোখ মুছে বললেন, “দরজাটা খুলে দে। মনে হয় জাহিদ সাহেব এসেছেন।”

বুবুন দরজা খুলে দিল, সত্যিই তাই–জাহিদ চাচা। হাতে একটা প্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। বুবুনকে দেখে হেসে বললেন, “কী খবর বুবুন?”

বুবুন জোর করে হাসিহাসি মুখ করে বলল, “ভালো।”

জাহিদ চাচা ভিতরে ঢুকে থতমত খেয়ে গেলেন, আম্মা তখনও মুখে আঁচলচাপা দিয়ে টেবিলে বসে আছেন, সামনে টেবিলে খোলা টিফিন-ক্যারিয়ার দৃশ্যটা মোটেও স্বাভাবিক না। জাহিদ চাচা চোখে একটা প্রশ্ন নিয়ে বুবুনের দিকে তাকালেন, বুবুন কি বলবে বুঝতে না পেরে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল। জাহিদ চাচা হাতের প্যাকেটটা টেবিলের উপর রেখে অপরাধীর মতো বললেন, “আমার একটা বহুদিনের স্বভাব–সব জায়গায় আমি ভুল সময়ে হাজির হই।”

আম্মা আঁচল দিয়ে চোখ মুছে মুখ তুলে বললেন, “আপনার দোষ কী? আপনি কেমন করে জানবেন আজ আমাদের ফ্যামিলির কান্নাকাটি করার সময়!”

“কান্নাকাটি?”

আম্মা সহজ গলায় বললেন, “বুবুন তার আব্বার কথা শুনতে চাইল। বলতে গিয়ে হঠাৎ এত ইমোশনাল হয়ে গেলাম–”

জাহিদ চাচার মুখে দুঃখের একটা ছাপ পড়ল, নরম গলায় বললেন, “আমি বুঝতে পারছি ডক্টর রওশান। একজন যে কতটুকু কষ্ট পেতে পারে, তার মাঝেও যে কতটুকু শক্ত থাকা যায় সেটা আপনাকে দিয়ে বোঝা যায়।”

আম্মা কিছু বললেন না। জাহিদ চাচা বললেন, “আমি দেখতে এসেছিলাম সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না–কিন্তু দেখতেই পাচ্ছেন ভুল সময়ে এসে গেছি! এখন যাই, পরে একসময় আসব।”

“এসেই যখন গিয়েছেন, বসুন।”

জাহিদ চাচা অপরাধীর মতো মুখ করে বললেন, “না ডক্টর রওশান, আমি এখন যাই। কোনো কোনো সময়ে মানুষের একা থাকার ইচ্ছে করে, তখন আপেশাপে অন্য কেউ থাকলে খুব যন্ত্রণা হয়। আপনারা কথা বলেন। ইট ইজ ইম্পর্ট্যান্ট। আমি পরে আসব।”

আম্মা বললেন, “ব্যস্ত হওয়ার কিছু নেই। আপনি বসুন।”

“আপনারা এখনও খাওয়া শুরু করেননি।”

“শুরু করে দেব। আপনিও আমাদের সাথে খেয়ে নিন। আপনি যত খাবার পাঠিয়েছেন সেটা দিয়ে তো প্রায় এক পল্টন খেয়ে নিতে পারবে।

জাহিদ চাচা লাফিয়ে উঠে বললেন, “না-না, সে কী করে হয়!”

জাহিদ চাচা সত্যিই চলে যেতে চাইছিলেন কিন্তু আম্মা কিছুতেই রাজি হলেন না। শেষ পর্যন্ত খাবার টেবিলে তাকে বসতে হল। আম্মা প্লেটে খাবার তুলে দিলেন, খেতে খেতে জাহিদ চাচা বললেন, “বুঝলেন ডক্টর রওশান, আমি সবসময় সব জায়গায় উলটাপালটা সময়ে যাই। একবার অনেকদিন পর এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখি তারা স্বামী-স্ত্রী ফাটাফাটি ঝগড়া করে বসে আছে। বন্ধুর বউ কামড় দিয়ে বন্ধুর কানের লতির আধ ইঞ্চির মতো ছিঁড়ে ফেলেছে। রক্তারক্তি অবস্থা–আমি না পারি থাকতে না পারি যেতে!”

জাহিদ চাচার কথা শুনে আম্মা হাসতে হাসতে বিষম খেলেন। জাহিদ চাচা বললেন, “আপনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন না? আরেকবার শোনেন কী হয়েছে। এক বাসায় গিয়ে দেখি বাসার বড় মেয়ে প্রাইভেট টিউটারকে রেজিস্ট্রি ম্যারেজ করে ফেলেছে। ভদ্রলোক একটা দোনলা বন্দুক নিয়ে লাফাচ্ছেন–মেয়ে, মেয়ে-জামাই যাকেই দেখবেন তাকেই খুন করে ফেলবেন!”

জাহিদ চাচার কথা শুনে আম্মা হাসতে লাগলেন বুবুন অবিশ্যি ঠিক বুঝতে পারল না কোর্ট ম্যারেজ করার সাথে গুলি করে মেরে ফেলার সম্পর্কটা কী। খেতে খেতে বুবুন একসময় জিজ্ঞেস করল, “চাচা, এখানে দেখার মতো কিছু আছে?”

জাহিদ চাচা মাথা নাড়লেন, নাই। কিছু নাই। এই পোড়া জায়গায় বিখ্যাত বলতে রয়েছে খবিরউদ্দিন।

আম্মা হেসে ফেললেন, বুবুন জিজ্ঞেস করল, ”খবিরউদ্দিন কে?”

জাহিদ চাচা অনেকটা বক্তৃতা দেওয়ার মতো করে বললেন, “উনিশ শো একাত্তর সালের রাজাকার কমান্ডার, জামাতে ইসলামীর লিডার এনজিও বিরোধী, নারীশিক্ষা বিরোধী, ধর্মব্যবসায়ী রগকাটা নেতা–”

আম্মা হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলেন, “এত বড় বিখ্যাত জিনিস আমরা দেখতে যাব না?”

“আপনাকে দেখতে যেতে হবে না ডক্টর রওশান। খবিরউদ্দিন যখন খবর পাবে আপনি মেয়েদের স্কুলের প্রোগ্রাম নিয়ে এসেছেন তখন সে নিজেই তার দলবল লাঠিসোটা নিয়ে আপনাকে দেখতে আসবে।”

“ভেরি গুড! তা হলে তো দেখা হবেই।”

“হ্যাঁ। আর এখানকার দ্বিতীয় বিখ্যাত জিনিস হচ্ছে মোষের দই।”

বুবুন অবাক হয়ে বলল, “মোষের দই! মোষকে কেমন করে দই বানায়?”

“মোষকে তো সোজাসুজি দই বানানো যায় না–এত বড় একটা প্রাণী, শিং টিং থাকে তাকে ঘটানোও ঠিক নয়। তাই প্রথমে নেয়া হয় মোষের দুধ। সেটা থেকে হয় দই।”

বুবুন একটু লজ্জা পেয়ে বলল, “আমি কি তাই বলছি নাকি?”

জাহিদ চাচা বুবুনের চুলগুলো একটু এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, “আমি জানি বুবুন–তোমার সাথে একটু ঠাট্টা করছি। এই মোষের দুধ অত্যন্ত বিখ্যাত, অনেক দূর থেকে মানুষেরা মোষের দই নিতে আসে। জিনিসটাতে বোটকা একধরনের গন্ধ, একই সাথে সেটা টক মিষ্টি এং ঝাল। বিক্রি হয় বড় মালশা করে। এক চামচ মুখে দিয়ে মানুষের হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেছে এরকম ঘটনা শোনা যায়।”

আম্মা টেবিলের উপর প্যাকেটটা দেখিয়ে বললেন, “আপনার ঐ প্যাকেটে তাই আছে?”

“আপনি ঠিকই ধরেছেন। আপনাদের জন্যে এক মালশা বিখ্যাত মোষের দই নিয়ে এসেছি। যদি সাহস থাকে খাবার পর এক চামচ করে খেয়ে দেখবেন!”

বুবুন নাক কুঁচকে বলল, “আমার এত সাহস নাই বাবা, আমি খাচ্ছি না।”

“এই এলাকার এত বিখ্যাত একটা জিনিস না খেলে কেমন করে হবে? তা ছাড়া তুমি যখন স্কুলে যাবে তখন তো খেতেই হবে।”

বুবুন অবাক হয়ে বলল, “কেন?”

“শুনেছি তোমাদের স্কুলে নাকি টিফিন দেওয়া হয় মোষের দই।”

“মোষের দই? স্কুলের টিফিন?”

“হ্যাঁ–”

”কেন?”

“চরিত্রের দৃঢ়তা বাড়ানোর জন্যে। স্কুলের নিয়ম-কানুন তো খুব কড়া।”

“কড়া?”

“হ্যাঁ, ড্রিল টিচার হচ্ছে একজন সুবেদার। দুপুরবেলা পাকা একঘণ্টা পিটি,তারপর পাঁচ কিলোমিটার দৌড়।”

“পাঁ-পাঁচ কিলোমিটার?”

“হুম। প্রিন্সিপালও খুব কড়া মানুষ। ডিসিপ্লিন রাখার জন্য গত বছর থেকে বেত মারার নিয়ম করেছেন।”

“বেত?” বুবুন প্রায় আর্তনাদ করে উঠল।

“হুঁ। বেত মারা শুরু করার পর পড়াশোনার মান বেড়ে গেছে। গত বছর এস. এস. সি.-তে দুইজন স্ট্যান্ড করেছে।

“তাই বলে বেত?”

“ছাত্রেরা পছন্দ না করলেও গার্জিয়ানরা খুব পছন্দ করছে। আজকাল হোমওয়ার্ক আর মিস হয় না। হোমওয়ার্ক না পারলে বেত, পড়া না পারলে বেত আর দুষ্টুমি করলে তো কথাই নেই–রীতিমতো চাবুক। গত সপ্তাহে একটা ছেলেকে হাসপাতালে নিতে হয়েছিল।”

“হা-হাসপাতাল?”

“বেশি কিছু হয়নি। শুধু পাঁজরের একটা হাড় ভেঙে গিয়েছিল।”

বুবুন ফ্যাকাশে মুখে আম্মার দিকে তাকাল, দেখল আম্মা মুখ টিপে হাসছেন এবং হঠাৎ করে বুঝতে পারল জাহিদ চাচা ঠাট্টা করছেন। তাকে এমনভাবে বোকা বানিয়েছেন জাহিদ চাচা-বুবুন হঠাৎ খুব লজ্জা পেয়ে গেল। জাহিদ চাচা হা হা করে হাসতে হাসতে বুবুনের মাথায় হাত বুলিয়ে তার চুলগুলি এলোমেলো করে দিয়ে বললেন, “ইয়ংম্যান, তোমার কোনো ভয় নেই। এই স্কুলের বোর্ড অফ ডিরেক্টরসরা অসম্ভব প্রগ্রেসিভ। কেউ কবি, কেউ দার্শনিক, কেউ ইঞ্জিনিয়ার, কেউ প্রফেসর, অর্ধেকের বেশি হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধা। খুব ভালো স্কুল তোমার। ছোট থাকতে আমি যদি এরকম ভালো একটা স্কুলে পড়তে পারতাম তা হলে আমি হয়তো তোমার মতো ব্রিলিয়ান্ট হতাম।”

আম্মা বললেন, “আপনি যদি আমাকে ব্রিলিয়ান্ট বলেন তা হলে স্বীকার করতেই হবে আপনি মানুষটা বেশি বুদ্ধিমান না।”

জাহিদ চাচা বললেন, “আপনি ঠিকই ধরেছেন। আমি আসলেই একটু গাধা টাইপের।”

বুবুন আড়চোখে তাকাল, জাহিদ চাচা মোটেই গাধা টাইপের না, ইনি সাংঘাতিক মানুষ। ইশ! তার যদি জাহিদ চাচার মতো একটা বাবা থাকত!

রাতে ঘুমানোর সময় বুবুন আম্মার কাছে এসে দাঁড়াল। আম্মা নাকের ডগায় একটা চশমা লাগিয়ে কী একটা পড়ছিলেন, বুবুনের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কী রে? কিছু বলবি?”

“হ্যাঁ”

“কী?”

“জাহিদ চাচার কি বিয়ে হয়েছে”

“না। কেন?”

“তুমি আগে বলো যে রেগে যাবে না কিংবা খপ করে আমার কান ধরে ফেলবে না।”

“কী বলছিস না শোনা পর্যন্ত আমি কোনো প্রতিজ্ঞা করছি না। আমাকে তুই এত বোকা পাসনি।”

“ঠিক আছে বলছি।” বুবুন একটা মুখ নিঃশ্বাস ফেলে বলল, “বড় খালা, নানু তারা সবাই তোমাকে আবার—”

“আমাকে আবার?”

“বিয়ে করতে বলছে। তুমি করতে চাইলে করো আম্মা–আমি কিছু মনে করব না।”

আম্মা খপ করে বুবুনের কান ধরার চেষ্টা করলেন, পারলেন না। সে ছিটকে সরে গিয়ে বলল, “আমার মনে হয় আমার যদি একটা বাবা হয় তা হলে আমার ভালোই লাগবে।”

আম্মা বিছানা থেকে উঠে বুবুনকে ধরার চেষ্টা করলেন, বুবুন আগে থেকে তৈরি ছিল বলে এবারেও ধরতে পারলে না।

রাতে ঘুমানোর সময় আম্মার চোখে একটু পরে পরে পানি এসে যাচ্ছিল, ঠিক কী কারণে কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *