লুনইউ (কথপোকথন)-এর নির্বাচিত অংশ

‘লুনইউ’ (কথোপকথন)-এর নির্বাচিত অংশ

মানবিকতা

১২.২২: ফ্যান-চিহ্ন মানবিকতার ব্যাপারে জানতে চাইলো। প্ৰভু বললেন, “এটা হলো সকল মানুষকে ভালোবাসা”। সে জ্ঞান সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। প্রভু বললেন, “এটা হলো সকল মানুষকে জানা”। এসব জবাব ফ্যান-চিহ্ন তাৎক্ষণিকভাবে বুঝলো না। প্রভু বললেন, “সারল্যকে প্রয়োগ কর, আর বক্রকে সরিয়ে দাও; এভাবে বক্রকেও সোজা করা যাবে”।

৭.২৯: প্রভু বললেন, “মানবিকতা কি খুব দূরের কিছু? আমি মানবিক হতে চাই, আর দেখ! মানবিকতা আমার হাতের মুঠোয়”।

৬.২৮: সু-কুং জিজ্ঞেস করলো, “মনে করুন আমি একজন মানুষের কথা বলছি যিনি সবার প্রচুর উপকার করছে আর সবাইকে সাহায্য করতে পারছে, তাঁর সম্পর্কে আপনি কী বলবেন? তাঁকে কি পরিপূর্ণভাবে মানবিক বলা যাবে”? প্রভু বললেন, “তাঁর প্রসঙ্গে কেবল মানবিকতার কথা কেন বলছ? তাঁর কি ঋষির মতো গুণ থাকা প্রয়োজন নয়? একজন পরিপূর্ণভাবে মানবিক মানুষ নিজের প্রতিষ্ঠা চাইলে অন্যদেরকেও প্রতিষ্ঠিত করতে চাইবে; নিজেকে বড় করতে গিয়ে সে অন্যদেরকেও বড় করতে চাইবে। কাছাকাছি যা আছে তা দিয়ে সে নিজেকে বিচার করতে চাইবে; একেই আমরা আখ্যা দিই ‘মানবিকতার কলা”।

১৫.২৩: সু-কুং জিজ্ঞেস করলো, “এমন কোনো শব্দ কি আছে যা একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সারাজীবনের জন্য প্রায়োগিক রীতি হিসেবে কাজ করবে”? প্রভু বললেন, “প্রতিদান কি এরকম একটি শব্দ নয়? তুমি নিজের ক্ষেত্রে যা আশা কর না, তা অন্যের ক্ষেত্রে ঘটিয়ো না”।

১৪.৩৬: কেউ একজন বললো, “আঘাতের প্রতিদান হিসেবে দয়া প্রদর্শন – এ রীতির ব্যাপারে আপনার মতামত কী”? প্রভু বললেন, “তাহলে দয়ার প্রতিদান তুমি কী দিয়ে দিবে? ন্যায়বিচারের মাধ্যমে আঘাতের প্রতিদান দিও, আর দয়ার প্রতিদানস্বরূপ দেখিও দয়া”।

৭.১৫: প্রভু বললেন, “খাওয়ার জন্য সাদা মোটা ভাত, পান করার জন্য জল, আর বালিশ হিসেবে আমার ভাঁজ করা হাত: এগুলোর মধ্যেই আমি এখনো সুখ খুঁজে পাই। অমানবিকতার মাধ্যমে অর্জিত ধন তো আমার কাছে ভাসমান মেঘের মতো”।

৪.২৫: প্রভু বললেন, “দৃঢ়চেতা পন্ডিত ও সদগুণের অধিকারী ব্যক্তি মানবতাকে বিসর্জন দিয়ে বাঁচার চেষ্টা করবে না। নিজের মানবতাকে সমুন্নত রাখার জন্য তারা এমনকি জীবন বিসর্জন দিবে”।

৭.৬: প্রভু বললেন, “দায়িত্বশীলতার পথে ইচ্ছাশক্তির প্রয়োগ ঘটাতে হবে। মঙ্গলময় কিছু অর্জিত হলে তা শক্তভাবে ধরে রাখতে হবে। পরিপূর্ণ সদগুণকে স্বীকৃতি দিতে হবে। ভদ্র কলায় শিথিলায়ন ও আনন্দ খুঁজে পেতে হবে।

উত্তম মানব

২.১৩: ৎসু-কুং জিজ্ঞেস করলো, “একজন উত্তম মানবের বৈশিষ্ট্য কী”? প্ৰভু বললেন, “তিনি কিছু বলার আগে কাজ করেন, এবং পরে তাঁর কাজের ভিত্তিতে কথা বলেন”।

২.১৪: প্রভু বললেন, “উত্তম মানব হলো উদার ও নিরপেক্ষ। সংকীর্ণমনা ব্যক্তি হলো পক্ষপাতদুষ্ট ও অনুদার”।

২০.৩: প্রভু বললেন, “স্বর্গীয় রীতি সম্পর্কে না জেনে উত্তম মানব হওয়া সম্ভব নয়”।

২৫.১৭: প্রভু বললেন, “উত্তম মানব ন্যায়নিষ্ঠাকে সর্বক্ষেত্রে অত্যাবশ্যক মনে করে। সে ঔচিত্যের রীতির (লি) ভিত্তিতে এটা করে থাকে। মানবতার কাছে এটা সে তুলে ধরে। বিনয়ের সঙ্গে এটা সে নিয়ে আসে। সে আন্তরিকতার সাথে এটা সম্পন্ন করে। সে বাস্তবেই একজন উত্তম মানব”।

২৫.৩১: প্রভু বললেন, “উত্তম মানবের লক্ষ্য হলো সত্য, – খাদ্য নয়। উত্তম মানব সত্য খুঁজে পাওয়ার বিষয়ে উদ্বিগ্ন; দারিদ্র্যে নিপতিত হওয়ার বিষয়ে সে উদ্বিগ্ন নয়”।

৪.১৬ প্রভু বললেন, “উত্তম মানবের মানব সদগুণের সঙ্গে পরিচিত; অধম মানব লাভের ব্যাপারে সচেতন”।

৪.৫: প্রভু বললেন, “মানুষ ধন ও সম্মান কামনা করে। সুষ্ঠু প্রক্রিয়ায় না পাওয়া গেলে এগুলো গ্রহণ করা উচিত নয়। দারিদ্র্য ও নীচ অবস্থান মানুষ অপছন্দ করে। এগুলো যদি যথাযথ পন্থায় এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তবে তা এড়ানো ঠিক নয়। উত্তম মানব এমনকি আহার গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়েও সদগুণের বিপরীতে কাজ করে না। তাড়াহুড়োর সময় সে এটাকে আঁকড়ে ধরে। বিপদের সময়ও সে এটাকে আঁকড়ে থাকে”।

১.১৫: সু-কুং বলল, “আপনি সেই দরিদ্র বেচারা সম্পর্কে কী বলবেন যে এখনো চাটুকারিতা করে না, আর সেই ধনী ব্যক্তি সম্পর্কে যে অহংকারী নয়”? প্রভু বললেন, “তারা ঠিক আছে; কিন্তু তারা সেই ব্যক্তির সমকক্ষ নয় যে দরিদ্র হওয়া সত্ত্বেও হাসিখুশি থাকে, আর ধনী হলেও শালীনতার রীতিগুলো মেনে চলে”।

২৫.২০: প্রভু বললেন, “উত্তম মানব নিজের মধ্যে খোঁজে। আর অধম মানব অন্যের মধ্যে খোঁজে”।

১২.৪: সু-মা নিউ উত্তম মানব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। প্রভু বললেন, “উত্তম মানবের উদ্বেগ বা ভীতি কোনোটিই নেই”। সু-মা নিউ জিজ্ঞেস করলো “উদ্বেগ ও ভীতি না থাকলেই কি আমরা উত্তম মানব বলবো”? প্ৰভু বললেন, “যখন ভেতরটা পরীক্ষা করে দেখা যায় কোনো ত্রুটি নেই, তাহলে উদ্বেগেরই বা কী আছে, আর ভয়েরই বা কী আছে”?

১৪.২৪: প্রভু বললেন, “উত্তম মানবের অগ্রগতি হয় উপরের দিকে; আর অধম মানবের অগ্রগতি হয় নীচের দিকে”।

২৬.৮: কনফুসিয়াস বললেন, “তিনটি জিনিসকে উত্তম মানব সমীহ করে। সে স্বর্গের রীতিকে সম্মান করে। সে শ্রেষ্ঠ মানবদেরকে সমীহ করে। সে ঋষির বাক্যকে সমীহ করে। অধম মানব স্বর্গের রীতি সম্পর্কে জানে না, ফলে সে এসব রীতিকে সমীহ করে না। সে শ্রেষ্ঠ মানবদেরকে অশ্রদ্ধা করে। সে ঋষির বাক্যকে নিয়ে কৌতুক করে”।

১৪.২৯: প্রভু বললেন, “উত্তম মানব তার ভাষায় সংযত, কিন্তু কর্মে সবাইকে ছাড়িয়ে যায়”।

২৫.১৮: প্রভু বললেন, “উত্তম মানব তার সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতায় ব্যথিত। মানুষ তাকে না চেনায় সে ব্যথিত নয়”।

২৫.২১: প্রভু বললেন, “উত্তম মানব মর্যাদাশীল, কিন্ত সে কলহ করে না। সে সামাজিক, কিন্তু পক্ষপাতদুষ্ট নয়”।

২৭.২৪: সু-কুং জিজ্ঞেস করলো, “উত্তম মানবেরও কি ঘৃণা আছে”? প্ৰভু বললেন, “তার ঘৃণাও আছে। সে তাদেরকে ঘৃণা করে যারা অন্যের শয়তানি প্রচার করে। সে তাদেরকে ঘৃণা করে যারা নীচু অবস্থানে থেকে উর্ধ্বতনদের বদনাম করে। সে তাদেরকে ঘৃণা করে যাদের কেবল সাহস আছে, কিন্তু যারা শালীনতার (লি) প্রতি খেয়াল রাখে না। সে তাদেরকে ঘৃণা করে যারা অগ্রসরমান ও দৃঢ়চেতা, এবং একই সাথে সংকুচিত বোধসম্পন্ন”।

২৬.১০: কনফুসিয়াস বললেন, “উত্তম মানবের নয়টি বৈশিষ্ট্য আছে যেগুলো সে সযত্নে প্রয়োগ করে। দৃষ্টির ক্ষেত্রে সে সুস্পষ্টভাবে দেখতে চায়। কান ব্যবহারের ক্ষেত্রে সে পরিষ্কারভাবে শুনতে চায়। চেহারা বা অবয়বের ক্ষেত্রে সে প্রসন্ন মনোভাব দেখাতে উৎসুক। কথা বলার ক্ষেত্রে সে আন্তরিক হতে আগ্রহী। কাজ করার ক্ষেত্রে সে সাবধানতা অবলম্বন করতে তৎপর। যেসব ব্যাপারে তার সংশয় আছে, সেসব বিষয়ে সে অন্যদেরকে প্রশ্ন করতে আগ্রহী। সে যখন রেগে যায়, তখন রাগের কারণে কী অসুবিধা হতে পারে সে বিষয়ে সচেতন থাকে। যখন সে কোনো লাভের সম্ভাবনা দেখে, তখন ন্যায়নিষ্ঠার কথা বিবেচনা করে”।

১৯.৯: সু-সিয়া বললো, “উত্তম মানবের তিনটি পরিবর্তন দৃশ্যমান। দূর থেকে দেখলে তাকে কঠিন মনে হবে; কাছাকাছি আসলে তাকে কোমল মনে হবে; তার কথা শোনা গেলে ভাষাকে মনে হবে দৃঢ় ও সুনির্দিষ্ট”।

২৫.৩৬: “উত্তম মানব কেবল দৃঢ় নয়, সে সঠিকভাবে দৃঢ়”।

আচার ও অনুষ্ঠান

১.৬: প্রভু বললেন, “গৃহে অবস্থানকালে যুবককে পরিবারবৎসল হতে হবে, আর প্রবাসে বয়োজ্যেষ্ঠদের প্রতি হতে হবে শ্রদ্ধাশীল। তাকে হতে হবে আন্তরিক ও সত্যবাদী। তার ভালোবাসা হতে হবে সর্বব্যাপী, এবং ভালোদের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব বিকশিত করতে হবে। এসব করার পর যদি তার সময় ও সুযোগ থাকে, তখন রাজনীতি অধ্যয়নে তাকে মনোনিবেশ করতে হবে”।

৮.২: প্রভু বললেন, “শালীনতার রীতি অনুসরণ না করলে শ্রদ্ধাবোধ হয়ে পড়ে কষ্টসাধ্য প্রয়াস; শোভনতার রীতি অনুসরণ না করলে সতর্কতা হয়ে পড়ে ভীরুতা; শালীনতা অনুসরণ না করলে সাহস হয়ে পড়ে অবাধ্যতা; শোভনতার রীতি অনুসরণ না করলে সরল আচরণ হয়ে পড়ে রূঢ়তা”।

৩.৪: লিন ফ্যাং জিজ্ঞেস করলো, “যে কোনো অনুষ্ঠানে সর্বপ্রথম করণীয় কী”? প্রভু বললেন, “নিঃসন্দেহে একটি উত্তম প্রশ্ন! উৎসব আয়োজনে অপব্যয়ী হওয়ার পরিবর্তে মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। শোকের অনুষ্ঠানে আয়োজনের খুঁটিনাটির প্রতি নজর দেওয়ার পরিবর্তে শোকের গভীরতা বজায় রাখাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ”।

১.৩: প্রভু বললেন, “সত্যিকারের গুণের সঙ্গে সুন্দর বাক্য এবং কুশলী আচরণের কদাচিৎ সম্পর্ক থাকে”।

৩.২৬: প্রভু বললেন, “উঁচু পদে যথেষ্ট পরিমাণ সহৃদয়তা ও উদারতার অভাব, শ্রদ্ধা ছাড়া আচার পালন, দুঃখবোধ ব্যতীত শোক প্ৰকাশ – এ ধরনের পন্থা আমি কীভাবে কল্পনা করবো?”

২১.১: প্রভু বললেন, “বলা হয়ে থাকে অতীতের মানুষেরা অনুষ্ঠানাদি ও সংগীতের ব্যাপারে ছিলেন সাদাসিধা ও অকপট; অন্যদিকে পরবর্তী সময়ের মানুষেরা অনুষ্ঠান ও সংগীতে নিরংকুশ ভদ্রলোকের মতো আচরণ করেন। এধরনের পরিস্থিতিতে আমি পুরোনোদের পন্থাই অনুসরণ করি”।

৩.১৭: প্রতি মাসের প্রথম দিনের উদ্বোধনের সাথে মেষ বলি দেওয়ার প্রথাকে সু-কুং পরিত্যাগ করতে চাইলেন। প্রভু বললেন, “সু-কুং, তুমি ভালোবাস মেষকে; আর আমি ভালোবাসি আচারকে”।

সংগীত

৩.৩: প্রভু বললেন, “যদি একজন মানুষের মানবিকতার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ সদগুণ না থাকে, শোভন আচরণ তার জন্য অপ্রাসঙ্গিক। আর যদি কোনো মানুষের মানবিকতাসম্পন্ন গুণ না থাকে, সংগীত দিয়ে সে কী করবে”?

৩.২৩: লু রাজ্যের প্রধান সংগীত-গুরুকে উপদেশ দিতে গিয়ে প্রভু বললেন, “কীভাবে সংগীত বাজাতে হবে সেটা জেনে নেওয়া উচিত। একটি আয়োজনের শুরুতে সকল অংশের আওয়াজ একসাথে তুলতে হবে। এরপর সকল অংশের মধ্যে শব্দগত মিল রাখতে হবে, কয়েকবার স্বতন্ত্রভাবে এবং কোনো বিরতি ছাড়া; সবশেষে আসবে উপসংহার

৯.১৪: প্রভু বললেন, “আমি ওয়াই হতে লু রাজ্যে ফিরে এলাম, এবং এরপর সংগীতের সংস্কার করা হলো। এতে করে রাজকীয় সংগীত ও স্তুতি- সংগীত তাদের প্রাপ্য মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হলো”।

শেখা ও শিখানো

১.৮: প্রভু বললেন, “যদি বিদ্বান গম্ভীর না হয়, তাহলে তার প্রতি শ্রদ্ধা জাগ্রত হবে না, এবং তার শিক্ষা মজবুত হবে না। বিশ্বস্ততা এবং আন্তরিকতাকে সর্বাগ্রে অন্যতম নীতি হিসেবে গ্রহণ কর। তোমার সমকক্ষ নয় এমন কোনো বন্ধু রেখো না। তোমার যদি কোনো ত্রুটি থাকে, সেগুলো পরিত্যাগ করতে ভয় পেয়ো না”।

১.১৪: প্রভু বললেন, “যে তার আহার্যের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ গুণ বজায় রাখতে চায়, সে তার ক্ষুধাকে সন্তুষ্ট করতে চায় না; সে তার বাসগৃহেও আয়েশী সামগ্রী চায় না; কাজের ব্যাপারে সে একনিষ্ঠ এবং ভাষার ক্ষেত্রে সাবধানি; সে নীতিবান মানুষের সাহচর্য বরণ করে, যাতে সে নিজেকে শোধরাতে পারে। এ রকম ব্যক্তিকে সত্যিই বলা যায় শিখতে ভালোবাসে”।

২.১১: প্রভু বললেন, “একজন মানুষ যদি তার পুরোনো জ্ঞানকে সযত্নে লালন করে, যার ফলে সে নতুন জ্ঞান পেতে থাকে, তাহলে সে অন্যের শিক্ষক হওয়ার যোগ্য”।

২.১৮: প্রভু বললেন, “যথেষ্ট মাত্রায় শোন এবং যেসব বিষয়ে সন্দেহ আছে সেগুলো একপাশে সরিয়ে রাখ; একই সময়ে অন্যদের ব্যাপারে সাবধানে কথা বল; এগুলো করলে তুমি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে ফেলবে। প্রচুর পরিমাণে দেখ আর যেগুলো বিপজ্জনক সেগুলোকে একপাশে সরিয়ে রাখ; একই সময়ে অন্য সবকিছু চর্চা করার ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন কর; সেক্ষেত্রে তোমার অনুশোচনা করার সম্ভাবনা অনেক হ্রাস পাবে। যখন কেউ তার শব্দের জন্য দোষী সাব্যস্ত হওয়ার সুযোগ কমিয়ে ফেলে, এবং অনুশোচনা করার সম্ভাবনাও হ্রাস করে, সে তখন পুরস্কৃত হওয়ার পথে অগ্রসর হয়”।

৯.৪: প্রভু চারটি জিনিস হতে সম্পূর্ণ মুক্ত ছিলেন। তাঁর কোনো পূর্ব- নির্ধারিত সিদ্ধান্ত ছিল না; ছিল না কোনো যথেচ্ছা পূর্ব-নিৰ্ণয়, একগুঁয়েমি ও স্বার্থপরতা।

১৭.২: প্রভু বললেন, “প্রকৃতিগতভাবে মানুষ প্রায় একই রকম; কার্যক্ষেত্রে তাদের মধ্যে অনেক পার্থক্য”।

১৬.৯: কনফুসিয়াস বললেন, “যারা জ্ঞান নিয়ে জন্মগ্রহণ করে তারা মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এরপরে আসে তারা যারা শেখে ও সহজে জ্ঞান আহরণ করে। তারপর আসে সেই শ্রেণিটি যারা নির্বোধ ও বোকা কিন্তু শেখায় সচেষ্ট। সবশেষে আসে তারা যারা নির্বোধ ও বোকা এবং শেখার চেষ্টাও করে না; এরাই সবচেয়ে নিকৃষ্ট শ্রেণির মানব”।

৭.৪: প্রভু বললেন, “আমি তাদের কাছে সত্য প্রকাশ করি না যারা জ্ঞান আহরণে আগ্রহী নয়; আমি তাদেরকেও সাহায্য করি না যারা নিজেদেরকে ব্যাখ্যা করতে উদগ্রীব নয়। আমি কোনো বিষয়ের একটি দিক উপস্থাপনের পর কেউ যদি অন্য তিনটি দিক বুঝতে না পারে, তবে আমি একই পাঠের পুনরাবৃত্তি করি না”।

৪.৯: প্রভু বললেন, “একজন সত্যের পথে নিবেদিত পন্ডিত যদি বাজে পোশাক ও বাজে খাবারের ব্যাপারে লজ্জিত না হয়, তাহলে সে আলাপ- চারিতার উপযুক্ত নয়”।

৮.২: প্রভু বললেন, “তিন বছর শেখার পর ভালো হয়নি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর”।

১২.১৫: প্রভু বললেন, “যাবতীয় শিক্ষা সবিস্তারে অধ্যয়ন করলে এবং নিজেকে শালীনতার রীতির মধ্যে আবদ্ধ রাখলে কেউ সঠিক সিদ্ধান্ত থেকে বিচ্যুত না-ও হতে পারে”।

৯.১৮: প্রভু বললেন, “শেখার পথকে একটি ঢিবি গড়ে তোলার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। কাজটি শেষ করার জন্য যদি এক ঝুড়ি মাটি বাকি থাকে আর আমি কাজটি বন্ধ করে দিই, তবে বন্ধ করার জন্য আমিই দায়ী থাকবো। একে সমতল ভূমিতে মাটি ফেলার সাথে তুলনা করা যায়। যদিও প্রতিবার এক ঝুড়ি মাটিই ফেলা হয়, এর সাথে তাল মেলালে আমিও অগ্রসর হবো”।

১৪.৪৭: প্রভু ও তাঁর কাছে আগত অতিথিদের মধ্যে বার্তা আদান- প্রদানের জন্য চু’চ গ্রামের এক যুবককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। একজন তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো, “আমার ধারণা সে ভালোই অগ্রসর হয়েছে”। প্রভু বললেন, “আমি দেখছি সে বয়স্ক মানুষদের আসন দখল করা পছন্দ করে; আমি দেখছি সে বয়োজ্যেষ্ঠদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে হাঁটতে চায়। সে এরকম নয় যে শেখার ক্ষেত্রে এগুতে চায়। সে খুব তাড়াতাড়ি মানুষ বনে যেতে চায়”।

১৪.২৫: প্রভু বললেন, “প্রাচীনকালে মানুষ আত্মোন্নয়নের জন্য শিখতো। এখন মানুষ অন্যকে টেক্কা দেওয়ার জন্য শেখে”।

২৫.২৯: প্রভু বললেন, “খুঁত থাকা সত্ত্বেও না সারালে তাকে অবশ্যই খুঁত বলতে হবে”।

৯.২৮: প্রভু বললেন, “বিজ্ঞরা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত; গুণীরা উদ্বেগ থেকে, আর সাহসীরা ভয় থেকে মুক্ত”।

সরকার

১.৫: প্রভু বললেন, “সহস্র রথের একটি দেশকে শাসন করতে হলে কাজকর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে হবে; ব্যয়ের ক্ষেত্রে হিসেবি হতে হবে, মানুষের প্রতি ভালোবাসা থাকতে হবে; এবং যথাযথ সময়ে মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে”।

২.১: প্রভু বললেন, “যে তার সদগুণের জোরে সরকার চালায় তাকে ধ্রুবতারার সঙ্গে তুলনা করা যায়, যা সবসময় তার স্থান বজায় রাখে এবং সকল নক্ষত্র তার দিকেই চেয়ে থাকে”।

২.৩: প্রভু বললেন, “জনগণকে যদি আইন দ্বারা পরিচালিত করা হয়, এবং শাস্তির ক্ষেত্রে সমরূপতা বজায় রাখা হয়, তারা শাস্তি এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবে, কিন্তু তাতে কোনো লজ্জাবোধ থাকবে না। তারা যদি গুণ দ্বারা চালিত হয়, এবং শোভনতার নিয়মের ভিত্তিতে তাদের উপর সমরূপতা আরোপ করা হয়, তাদের মধ্যে লজ্জাবোধ থাকবে, অধিকন্তু তারা ভালো হয়ে যাবে”।

২.১৯: ডিউক আই জিজ্ঞেস করলেন, “মানুষের বশ্যতা পাওয়ার জন্য কী করা উচিত”? কনফুসিয়াস জবাব দিলেন, “ঋজুদেরকে অগ্রসর করেন এবং বক্রদেরকে একপাশে সরিয়ে রাখেন; তাহলে মানুষ বশ মানবে। যদি বক্রদেরকে অগ্রসর করেন আর ঋজুদেরকে সরিয়ে রাখেন, তাহলে মানুষ বশ্যতা স্বীকার করবে না”।

২.২০: চি ক্যাং জিজ্ঞেস করল কীভাবে জনগণকে শাসকদের শ্রদ্ধা করতে, তাদের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে এবং সদগুণের প্রতি অনুরক্ত থাকতে শেখানো যায়? প্রভু বললেন, “তাদের সভায় সভাপতিত্ব করার সময় তাকে গাম্ভীর্য বজায় রাখতে হবে; তাহলে তারা তাকে ভক্তি করবে। সবার সাথে তাকে নিশ্চায়ক ও দয়ালু হতে হবে; তাহলে তারা তার প্রতি বিশ্বস্ত হবে। ভালোকে এগিয়ে নিতে হবে এবং অদক্ষকে শেখাতে হবে; তাহলে তারা সৎ হতে আগ্রহী হবে”।

১১.৭: ৎসু-কুং সরকার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলো। প্রভু বললেন, “সরকারের পূর্বশর্ত হলো যথেষ্ট খাদ্য ও সামরিক সরঞ্জামাদির লভ্যতা এবং শাসকের উপর জনগণের আস্থা থাকা”। সু-কুং বললো, “যদি এ তিনটির যে কোনো একটি পরিত্যাগ করতে হয় তাহলে প্রথমে কোনটি করা উচিৎ”? প্রভু বললেন, “সামরিক সরঞ্জামাদি”। ৎসু-কুং আবারো জিজ্ঞেস করলো, “বাকি দু’টির মধ্যে যদি একটিকে বাদ দিতে হয়, সেটি কোনটি”? প্ৰভু জবাব দিলেন, “খাদ্য পরিত্যাগ কর। মানুষ বৃদ্ধ হলে মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী; কিন্তু মানুষের যদি শাসকের উপর আস্থা না থাকে, তবে রাষ্ট্রের কোনো অস্তিত্ব থাকে না”।

১২.১৪: ৎসু-চ্যাং সরকার প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলো। প্রভু বললেন, “রাষ্ট্রকলার বৈশিষ্ট্য হলো ক্লান্তি এড়িয়ে এর বিষয়াদি মনে রাখা, এবং কোনো বিচ্যুতি ছাড়া রীতিমাফিক এগুলোর চর্চা করা”।

১২.১৯: চি ক্যাঙ-ৎসু সরকার বিষয়ে কনফুসিয়াসকে প্রশ্ন করলো, “নীতিবান মানুষের স্বার্থে নীতিহীন মানুষদেরকে হত্যা করার ব্যাপারে আপনি কী বলেন”? কনফুসিয়াস উত্তর দিলেন, “সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে আপনি হত্যা কেন করবেন? যা কিছু ভালো সেটাই আপনাকে আন্তরিকভাবে কামনা করতে হবে; তাতে করে প্রজারাও ভালো থাকবে। উত্তম ও অধমের মধ্যে সম্পর্ক অনেকটা বায়ু ও ঘাসের মতো। বাতাস বইলে ঘাসকে বাঁকা হতেই হবে”।

১৩.৬: প্রভু বললেন, “একজন রাজপুত্রের ব্যক্তিগত আচরণ যখন ঠিক থাকে, আদেশ জারি ছাড়াই তাঁর সরকার কার্যকরী ভূমিকা রাখে। তাঁর ব্যক্তিগত আচরণ যদি যথাযথ না হয়, তিনি আদেশ জারি করলেও সেগুলো অনুসৃত হবে না”।

১২.১০: প্রভু ইয়েন ইউয়েনকে বললেন, “দপ্তরের ডাক আসলে এর দায়িত্বাবলি পালন কোরো; যখন এ রকম ডাক না আসে, তখন বিশ্রাম নাও”। ৎসু-লু বললো, “একটি মহান রাষ্ট্রের সশস্ত্রবাহিনীর উপর যদি আপনার নিয়ন্ত্রণ থাকে, আপনি কাদেরকে আপনার সঙ্গে রাখবেন”? প্রভু বললেন, “আমি এমন কাউকে আমার সাথে রাখবো না যে নিরস্ত্র অবস্থায় বাঘকে আক্রমণ করবে, অথবা নৌকা ছাড়া নদী পার হতে গিয়ে বিনা অনুশোচনায় মরবে। আমার সহযোগী হবে সেই মানুষ যে পূর্ণ সতর্কতাসহ কোনো কাজ নিয়ে অগ্রসর হবে, প্রয়োজনানুযায়ী পরিকল্পনা সংশোধন করবে, এবং তা বাস্তবায়ন করবে”।

১৪.২৩: ৎসু-লু জিজ্ঞেস করলো, “একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রকে কীভাবে সেবাদান করা উচিত”? প্রভু বললেন, “তার উপর কোনো কিছু চাপিও না; অধিকন্তু তার প্রতি সহনশীলতা দেখাও”।

৩.১৮: প্রভু বললেন, “রাজপুত্রের জন্য কাজ করতে গিয়ে শালীনতার রীতি পরিপূর্ণভাবে অনুসরণকে মানুষ তোষামোদি হিসেবে বর্ণনা করে”।

১১.২৩: “তিনি একজন মহান মন্ত্রী যিনি যা সঠিক তার ভিত্তিতে রাজপুত্রের সেবা করেন, এবং যখন তা করতে পারেন না তখন অবসরে যান”।

১৪.১: শিয়েন জিজ্ঞেস করলো: “লজ্জাকর কী”? প্রভু বললেন, “একটি দেশে যখন সুশাসন বজায় থাকে তখন কেবল নিজের বেতনের কথা চিন্তা করলে; আর যখন দুঃশাসন বিরাজ করে তখনও একইভাবে কেবল নিজের বেতনের কথা চিন্তা করলে। এটাই হলো লজ্জাকর”।

৯.১৩: “একটি দেশে যখন সুশাসন বজায় থাকে, দারিদ্র্য আর দুরবস্থার জন্য লজ্জা পাওয়া উচিত। একটি দেশ যখন ভালোভাবে শাসিত হয় না, ধন ও সম্মান পেলে লজ্জা হওয়া উচিত”।

১৪.২০: ওয়াইয়ের ডিউক লিং-এর অনৈতিক কার্যকলাপের ব্যাপারে প্রভু আলোচনা করছিলেন। ক্যাং ৎসু বললো, “তিনি যেহেতু এমন একটি চরিত্র, কেন তিনি সিংহাসন হারাচ্ছেন না”? কনফুসিয়াস বললেন, “তাঁর আছে অতিথি ও আগন্তুকদের উপর কর্তৃত্ব। তাঁর পূর্বপুরুষদের মন্দিরের দায়িত্বে আছেন পুরোহিত তুও; আর তাঁর সশস্ত্রবাহিনীর নেতৃত্বে আছে ওয়াং সুন চিয়া; এ ধরনের কর্মকর্তা থাকতে তিনি কীভাবে সিংহাসন হারাবেন”?

১২.১৭: চি ক্যাং-ৎসু কনফুসিয়াসকে সরকার প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলেন। কনফুসিয়াস জবাব দিলেন, “শাসন করা মানে পরিবর্তন আনা। আপনি যদি সঠিক পন্থায় জনগণকে নেতৃত্ব দেন, জনগণও সঠিকভাবে না চলার সাহস পাবে না”।

১৩.৩: ৎসু-লু বললো, “ওয়াই-এর রাজপুত্র অপেক্ষা করছিল যাতে করে আপনি সরকার পরিচালনা করেন। এটা করতে গিয়ে আপনি প্রথম কোন জিনিসটি বিবেচনায় নেবেন”? প্রভু উত্তর দিলেন, “যেটা প্রথমে প্রয়োজন সেটা হলো নামের সংশোধন”। ৎসু-লু বললো, “সত্যি? তাহলেতো আপনি নিশানা থেকে অনেক দূরে আছেন। এই সংশোধন কেন প্রয়োজন”? প্রভু বললেন, “তুমি দেখছি অমার্জিত হয়ে পড়েছ। কোনো কিছু সম্পর্কে না জানলে উত্তম মানব তার কথাবার্তায় সাবধানতা অবলম্বন করে। নাম যদি সঠিক না থাকে, তাহলে বস্তুর সঠিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ভাষার মিল থাকে না। ভাষা যদি বস্তুর সত্যকে প্রতিনিধিত্ব না করে, কার্যাদি সফলভাবে সমাধা করা সম্ভব নয়। কার্যাদি সফলভাবে সমাধা না হলে, শালীনতা ও সংগীতের বিকাশ ঘটবে না। এগুলোর বিকাশ না ঘটলে যথাযথ শাস্তি প্রদান করা হবে না। শাস্তি প্রদান না করা হলে মানুষ তার হাত ও পা চালানো শিখবে কীভাবে? তাই উত্তম মানবের মতে, যেসব নাম সে ব্যবহার করে সেগুলো সঠিকভাবে উচ্চারিত হওয়া উচিত, এবং সে যা বলে তা সঠিকভাবে সমাধা করা বাঞ্ছনীয়। উত্তম মানব চায় তার শব্দাবলিতে যেন কোনো ভুল না থাকে”।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *