রুবাইয়াত-ই-হাফিজ – ৬১-৭৩ (শেষ)

৬১

কোরান হাদিস সবাই বলে – পবিত্র সে বেহেশ্‌ত নাকি,
মিলবে সেথাই আসল শরাব তন্বী হুরি ডাগর-আঁখি!
শরাব এবং প্রিয়ায় নিয়ে দিন কাটে মোর, দোষ কি তাতে?
বেহেশ্‌তে যা হারাম নহে – মর্ত্যে হবে হারাম তা কি?

৬২

চন্দ্র সূর্য রাত্রি দিবা বিচিত্র সে আবেগ ভরে,
ওগো প্রিয়, দেখি – তোমার ধূলির পরে নামটি করে!
হৃদয়-আঁখির সাধ হতে মোর করো না গো নিরাশ মোরে,
রইবে দূরে – বসিয়ে আমায় প্রতীক্ষার ওই অগ্নি পরে?

৬৩

মদের মতো কি আর আছে ভুলতে ব্যথা, তাতিয়ে তোলার?
যুদ্ধ করার সাধ জাগে কি সেনার সাথে এই বেদনার?
এই তো তোমার কাঁচা মাথা, এরই মাঝে বাতিল শরাব?
কাঁচা সবুজ বয়েসই তো খুশির, গানের পান-পিয়ালার॥

৬৪

পাতার পর্দানশিন মুকুল, ফুটেই হেরে তোমায় পাছে!
মাতোয়ালা ‘নার্গিস’ শরমে তোমায় হেরি মরণ যাচে।
তোমার কাছে রূপের বড়াই কেমন করে করবে গো ফুল?
ফুল পেল রূপ চাঁদ চোঁয়ায়ে, চাঁদ পেল রূপ তোমার কাছে॥

৬৫

আশ্বাসেরই বাণী তোমার প্রতীক্ষার ওই দূর সাহারায়
ফিরছে আজও, আর কতদিন ঢাকবে রবি মরুর ধুলায়?
বাঘের মুখে যাও গো যদি লালসা আর লোভের বশে,
আখেরে যে শিকার হবে গোরের হাতে মাটির তলায়!

৬৬

তোমার আঁখি – জানে যাহা বঞ্চনা আর ছল-চাতুরী,
চমকে বেড়ায় অসি যেন রণাঙ্গণে ঘুরি ঘুরি।
তড়িৎ-জ্বালার ও-চোখ ত্বরিত গোল বাধাবে বঁধুর সাথে,
যে হিয়াতে শিলা ঝরে, হায় গো তারই তরে ঝুরি॥

৬৭

দাও এ হাতে, ফুর্তি শিকার করে সদা যে বাজপাখি,
প্রিয়ার মতো প্রিয়ংবদা মদ-পিয়ালা দাও গো সাকি!
কুঞ্চিত ওই কুন্তল – যা পাক খেয়েছে শিকলি সম –
আনো গো তায় দোস্ত্, করো এই দিওয়ানার হস্ত-রাখি!

৬৮

হায় রে, আমার এ বদনসিব হত যদি মনের মতো!
কিংবা গ্রহের চক্র ঘুরে আবার আমার বন্ধু হত!
পালিয়ে যেত যৌবন মোর যখন হাতের মুঠি হতে,
রেকাব সম রাখতে ধরে এই জরারে সমুন্নত॥

৬৯

ফুল্লমুখী দিল-পিয়ারি, বীণা, বেণু, একটু আড়াল,
এক রেকাবি কাবাব, সাথে এক পেয়ালি শিরাজি লাল –
ধমনিতে উঠবে জ্বলে লকলকিয়ে অগ্নিশিখা, –
‘হাতেম-তাই’ -এর অনু্গ্রহও চাই না তখন মুহূর্ত কাল!

৭০

শাহি তখ্‌তে বসেছে ফুল – দেখনু সেদিন গুল-বাগিচায়,
কইনু – শোনো সত্য যদি দীপ্ত তুমি রাজ-মহিমায়,
নিষ্পাপ এক কিশোর আমি জ্বালাও তারেই রাত্রি দিবা,
তবু তোমার স্পর্শে না পাপ, চিরন্তনী, আপশোশ, হায়!

৭১

বন্দি বোঁটায় কইল কুসুম, থাকত যদি শক্তি আমার
পালিয়ে যাবার রাস্তা পেলে পালিয়ে যেতাম দূর বন-পার।
বিনা অপরাধেই মোরে এমন করে জ্বালায় যদি,
সত্যিকারের দোষী হলে না জানি সে করত কী আর॥

৭২

সেও এ মন্দ-ভাগ্যসম এমনি জালে ফাঁসত যদি
হত লাখো খারাবি তার শরাব নিয়ে নিরবধি।
আমি মাতাল, প্রেম-বিলাসী, পাগল, ভুবন-দাহনকারী, –
বসলে কাছে রটবে কুযশ তাই তো থাকি দুয়ার রোধি॥

৭৩

ওরে হাফিজ, শেষ কর তোর কৃত্রিম এই কলমবাজি!
হল সময় – খোলা পাতা ঝোলায় তুলে রাখার আজি।
নীরব হয়ে বসার পালা এবার রে তোর, আজকে শুধু
শূন্য গেলাস টইটম্বুর, কর রে ঢেলে শেষ শিরাজি ॥

– তামাম শোদ্ –

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *