২১. যুবকদের স্বাস্থ্য ক্ষয়
যুবকেরা দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সোনার শরীর ধ্বংস করে ফেলে। ও! কি যে সর্বনাশ করে, তা আর বলবার নয়। অস্বাভাবিকভাবে শুক্র ক্ষয় করে নিজের মেরুদণ্ড ভেঙ্গে ফেলে। সেই ভগ্ন শরীরে বিবাহ করে দীর্ঘদিন অত্যাচার করে একেবারে মুষড়ে পড়ে। বড়লোক হলে অবশ্য কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেগ সামলে নিতে পারে। গরিব লোক হলে সে বিবিধ রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে প্রাণ হারায়। অত্যধিক শুক্র ক্ষয়ের ফল–পুরুষত্ব হীনতা, মেহ; প্রমেহ, জ্বর, কাশি, হাঁপানী, অজীর্ণ, শিঃরপীড়া, যক্ষ্মা, আলস্য এবং আরও বড় ব্যাধি দ্বারা আক্রান্ত হয়।
যারা শুক্র রক্ষা করে তারা জীবনে অক্ষয় স্বর্গসুখ ভোগ করে। জীবনে তাদের আনন্দের সীমা থাকে না। এহেন রাজ সুখ বর্জন করে যারা সাময়িক সুখের আশায়–অযথা শুক্র নষ্ট করে জীবনে অসীম দুঃখের অন্ত থাকে না। ছাত্রাবস্থায় ব্রহ্মচর্য পালন শ্রেষ্ঠ ধর্ম। শুক্র রক্ষা ছাড়া যুবকের ইহকালে কোনো কল্যাণ সম্ভব নয়।
.
২২. অসমান প্রেম
হুগলীতে একটি মাদ্রাসায় পাঠরত সুন্দরদর্শন যুবক ছেলে স্থানীয় এক হোটেলওয়ালীর সেয়ানা যুবতী মেয়েকে বাড়িতে না জানিয়ে বিয়ে করে ফেলবেন। হয়তো মাঝে মাঝে হোটেলে দেখতে যেতেন, সেই অবকাশে মৌলবী সাহেব মেয়েটিকে দেখেছিলেন। হোটেলওয়ালী মৌলবী ছাত্রটিকে অবশ্য কিছু সম্মানের চোখে দেখতো। যাই হোক শেষকালে মৌলবী সাহেব বিদেশে এই কাজ করে বসলেন। এর ফল ভালো হল না। অতি অল্পকালের মধ্যে পরস্পরের মনোমালিন্য শুরু হল। সামান্য রকম নয়–খুব বেশি রকম। মৌলবী সাহেব শাশুড়ীর গৃহত্যাগ করে স্বতন্ত্র স্থানে জায়গীর করলেন সেখানে ভদ্রলোকের মাঝে প্রায়ই সেই ইতর শ্রেণীর প্রৌঢ়া মেয়েলোকটি জামাইকে প্রকাশ্যভাবে গালি দিয়ে যেতো। এক বিপুল লজ্জাজনক ব্যাপার। যুবকটির মুখ লজ্জা, দুঃখে কালি হয়ে যেতো–কিন্তু আর কোনো উপায় ছিল না।
যাই হোক অসমান মিত্রতা বড় খারাপ। ছোট, বড় প্রেম, একেবারেই আপত্তিজনক। ছোটর উচিত নয় বড়’র সঙ্গে মেলামেশা, ভালোবাসা করে–তাতে তার নানা প্রকার বিপদ এবং ক্ষতি হবে। বড়’র সঙ্গে মেলবার এক উকট প্রবৃত্তি ছোটদের সব সময় থাকে, এটি বড় খারাপ, বড় খারাপ ছোট, বড় প্রেম একেবারেই আপত্তিজনক। সময়ে বড় লোকের সংশ্রব থেকে দূরে সরে আসবে।
.
২৩. জাতীয় বৈশিষ্ট্য
নিজের জাতীয় রীতি সর্বোৎকৃষ্ট সংস্কারের দরকার হলে স্থানবিশেষ সংস্কৃত করতে হবে। এরূপ ধারণা প্রত্যেকের থাকা উচিত। পোশাক-পরিচ্ছদ আপন জাতির মতো হওয়াই ভালো! মুসলমানদের পোশাক পরিচ্ছেদের ধারা ধর্ম জীবনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তৈরি হয়েছে–অন্য দেশের পোশাক, দেশের আবহাওয়া অনুসারে গড়ে উঠেছে। দেশের Climate অনুসারে পোশাক হওয়াই দরকার, তবে প্রত্যেক জাতির রীতি ও পোশাকে একটা বৈশিষ্ট্য আছে, থাকাও উচিত। ইহুদীদের মতো দেশহীন, জাতীয়তাহীন, পোশাকহীন যাকে দেখে তাকেই অনুসরণ করে, এরূপ হলে মান থাকে না।
তবে একটা কথা, যেখানে নিজের জাতির লোকসংখ্যা অল্প সেখানে যে দেশে বাস করা যায় সেখানকার মতো পোশাক পরাই ভালো। নইলে ইজ্জত থাকে না। যেখানে নিজের জাতি অসম্মানিত সেখানে সুসভ্য, বলবান জাতির পোশাক পরা কর্তব্য। গোড়ামি করে নিজের বৈশিষ্ট্য বজায় রাখতে চেষ্টা করলেও কার্যে তা পারা যায় না, অথবা হাসির ও ঘৃণার পাত্র হতে হয়। আবার যে ব্যক্তি অযোগ্য তার উচিত নয়, সুসভ্য উন্নত শ্রেণীর ব্যক্তিবর্গের পোশাক পরে–তাতেও উপহসিত হতে হয়। যে যোগ্য সেই যোগ্য স্থানে বসবে এবং যোগ্য পোশাক পরবে-নিজের মনের থেকেই যোগ্যতার পরিমাপ করা যায়। বড়ও অনেক সময় সহানুভূতি ও শ্রদ্ধা লাভ করবার জন্যে ছোটদের পোশাক পরেন, যেমন Salvation ইরবহ-র ফৌজেরা বাঙালির শ্রদ্ধা লাভ করবার জন্যে অনেক সময় ধুতি ও শাড়ি পরেন। যারা বিশেষ উচ্চশ্রেণীর লোক, ভিতরে মহত্ত্বের ও আত্ম গুরুত্বের অনুভূতি আছে, তিনি নিজের ইচ্ছামতো পোশাক পরেন। তিনি কারো ধার ধারেন না।
ফিনফিনে অশ্লীল পোশাক পরা বড়ই খারাপ। গ্রীষ্মপ্রধান দেশ বলে বস্ত্র না পরে থাকবার নয় তবে যথাসম্ভব অল্প এবং রুচিসঙ্গত হওয়া চাই।
.
২৪. যুবকদের পিতৃভক্তি
কোনো কোনো যুবকের পিতৃভক্তি মোটেই নেই–সৎ শিক্ষার অভাবে কু-স্বভাবে ছেলেরা ওস্তাদ হয়ে ওঠে।
কৃতজ্ঞ হতে শেখে না। গুরুজনের প্রতি ভক্তিশীল, বাধ্য এবং অনুগত থাকা, তাদেরকে প্রেম করা–এসব সৎ শিক্ষার প্রাপ্তি, তারা পায় না–এসব কু-মাতার কু-শিক্ষার ফল। মা দুধ খাইয়ে দুধ দিয়ে সন্তানগুলিকে অসুর বা পশু করে গড়ে তোলেন, পিতৃভক্তি, গুরুজনে। ভক্তি শিক্ষা দেন না।
পিতার নিন্দা করা, তাকে অশ্রদ্ধা করা, তার আদেশ অগ্রাহ্য করা, অবহেলা করা কুলাঙ্গার নরাধম ছেলের কাজ। পিতার ইঙ্গিত মাত্র তার মনোভাব বুঝে সর্বাগ্রে সেই কাজ করতে হবে। তিনি যে আদেশ করেন, অতিশয় আহ্লাদের সঙ্গে তাই কর। যদি পিতৃনিন্দায় জিহ্বা কলঙ্কিত হয় সে জিহ্বা কর্তন করে ফেল।
যে জোর গলায় পিতামাতার সঙ্গে কথা বলে, সেই বেয়াদব পুত্রের সঙ্গে সংস্রব না রেখে তাকে গৃহ হতে অবিলম্বে তাড়িয়ে দাও।
.
২৫. যুবকদের সাধারণের সঙ্গে ব্যবহার
জগতে বিনয়ে নত হয়ে চলাই উচ্চশ্রেণীর লোকের কাজ। অহঙ্কার সর্বতোভাবে পরিত্যাজ্য।
ব্যবহারের দ্বারা জানতে পারা যায় না, যুবকেরা কোন স্তরের লোক। ভদ্রতায় ও মনুষ্যত্বে যতটুকু কলঙ্কশূন্য হতে পারে, তার চেষ্টা নিতান্তই করবে। সাবধান, যেন পশ্চাতে মনুষ্য তোমাদেরকে নীচ বলে উপহাস না করে।
জীবনে বিবেক ও প্রজ্ঞার বাণী মেনে চলবে, তা হলেই জীবন honourable হবে। যদি কোনো ভালো চাকরি জোটে, সে জন্যে কোনোমতে অহঙ্কারী হয়ো না। তোমার দুঃখী পীড়িত, পতিত পশ্চাদপদ হতভাগ্য বন্ধুদের কথা ভুলো না। যতটুকু পার সাহায্য করবে। ক্ষমতা পেয়ে কখনও তার অপব্যহার করবে না। মানুষকে হঠাৎ বিশ্বাস করবে না; হঠাৎ কাউকে বিশ্বাস করে তার উপর নির্ভর করো না। জীবনে নীচ ও হীন হয়ো না। নিজের লাভের কথাই বেশি ভেবো না, অপরের কথাও ভেবো।
দেশের লোক বড় মিথ্যাবাদী-নৈতিক মেরুদণ্ড এদের নাই। শিক্ষার অভাবে সমস্ত জাতিটা একেবারে নিম্নস্তরে পড়ে আছে। এদের ধর্ম-কর্ম সমস্তই বৃথা। তথাপি আপনার জাতিকে ঘৃণা করতে নেই। যতটা পার প্রদীপ উৎসবের আনন্দ মেলায় যোগ দিও–পথের পার্শ্বে নিজেও দুই একটা প্রদীপ জ্বেলো।
মানুষের সঙ্গে ব্যবহারে যে সুন্দর সেই প্রকৃত ভদ্রলোক।