2 of 3

যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা

যণ্ডামার্ক বা যণ্ডামার্কা

কেউ কেউ গোঁয়ার অথচ মূর্খ— এ ধরনের মানুষকে আমাদের সমাজে যণ্ডামার্কা বা যণ্ডামার্ক বলে আখ্যায়িত করা হয়। ষণ্ড বা ষণ্ডা অর্থ ষাঁড়। গুণ্ডা প্রকৃতির মানুষকে যণ্ডামার্কা বলা হয়। আসলে ষণ্ডামার্ক শব্দ বা প্রবাদ ষাঁড় থেকে উদ্ভূত হয়নি। এসেছে অন্য উৎস থেকে। সে উৎসটি এখানে উল্লেখ করছি।

সর্বশাস্ত্রবিদ দৈত্যগুরু শুক্রাচার্য ছিলেন মহর্ষি ভৃগুর পুত্র। এ জন্য তিনি ভার্গব নামে পরিচিত। তার বংশে পরশুরামের জন্ম। পরশুরামকেও ভার্গব (অর্থাৎ ভৃগুবংশীয়) বলা হয়। ভৃগুপুত্র শুক্রাচার্য ছিলেন দৈত্যদের পুরোহিত তথা গুরু। দৈত্যগুরু নামে তিনি প্রসিদ্ধ। শুক্রাচার্যের দুই পুত্রের নাম ষণ্ড ও অমর্ক। প্রহ্লাদের বাবা হিরণ্যকশিপুর গুরু শুক্রাচার্য। সেজন্য শুক্রাচার্যের সন্তান ষণ্ড ও অমর্ক তার বাড়িতে থাকতেন।

ষণ্ডামার্ক ছিলেন জ্ঞানী ও শাস্ত্রবিদ পণ্ডিত। রাজা হিরণ্যকশিপু তাদের হাতে পুত্র প্রহ্লাদকে শিক্ষা গ্রহণের জন্য দেন। অর্থাৎ ষণ্ডামার্ক প্রহ্লাদের শিক্ষাগুরু। তারা দু’জনেই ছিলেন অসুরদের সেনানায়ক। গোঁয়ারগোবিন্দ ও বলশালী এ দুভাই যুদ্ধে দেবতাদের পরাজিত করেন। দেবতারা তখন কৌশলে এক বিশাল যজ্ঞের আয়োজন করে ষণ্ড ও অমর্ককে সেখানে নেমন্তন্ন করেন। বায়ুপুরাণ ও মৎস্যপুরাণ অনুযায়ী জানা যায় যে, দেবতারা দু’ভাইকে প্রচুর খানাপিনা করায়। সুরা পান করিয়ে দেবতারা কৌশলে এদের অনুরোধ করেন অসুরপক্ষ ত্যাগ করতে। সুরাপানে মত্ত এই দুই অসুর-সেনাপতি অসুরদের পক্ষ ত্যাগ করে। ফলে দেবতাদের কাছে অসুররা পরাজিত হয়।

যণ্ডামার্ক ছিলেন ভয়ানক গোঁয়ার ও গুণ্ডা প্রকৃতির দৈত্য। সে কারণে ঐ স্বভাবের মানুষকে আমাদের সমাজে ষণ্ডামার্ক বা ষণ্ডামার্কা বলা হয়। প্রহ্লাদের গুরু হবার কারণে প্রবাদে ষণ্ডামার্ক গুরুও বলা হয়। হিরণ্যকশিপুর কথায় ষণ্ডামার্ক প্রহ্লাদের উপর অমানুষিক অত্যাচার করেছিলেন বলেও নামটি প্রবাদে পরিণত হয়েছে। এই প্রবাদের সাথে তুলনীয় প্রবাদ— গোঁয়ার গোবিন্দ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *