১১
সোমদত্তা সরে দাঁড়িয়ে মৈত্রেয়কে ঢোকার জায়গা করে দিল। দরজার লক আটকে পিছনে সিঁড়ির দিকে তাকাল এক ঝলক। ঘরের একপাশ দিয়ে দোতলা ওঠার সিঁড়ি চলে গিয়েছে পাক মেরে। না, সিঁড়িতে কেউ নেই।
থাকার কথাও নয়। মাধুরী ঘুমোচ্ছেন উপরে। মায়ের কাছে রাতদিনের যে মেয়েটা থাকে, সে গিয়েছে বাড়িতে। রাতে ফিরবে। না হলে কাল সকালে। না এলে ফোনে জানিয়ে দেবে। সোমদত্তা বারবার বলে দিয়েছে, আজ না এলেও কাল সকালে যেন অবশ্যই আসে। দোতারা সকালে ফোন করে জানিয়েছে, তাকে ল্যাবরেটরিতে থাকতে হবে রাত পর্যন্ত।
এরপরই সোমদত্তা মৈত্রেয়কে ফোন করে। তার সঙ্গে আজ দেখা করে নাওডুবি থেকে জোগাড় করা খবর শোনার কথা।
“বাড়িতে কেউ নেই, বেরোতে পারব না। দুপুরে এসো৷”
মৈত্রেয় হালকা গলায়, “কেউ তোমাকে বকবে না!”
সোমদত্তা গাঢ় স্বরে বলল, “ঠাট্টা কোরো না। চলে এসো।”
মৈত্রেয় বলল, “সোমদত্তা, ঠাট্টা নয়। আমি সিরিয়াস, খবরটা বাইরেই বলব।”
সোমদত্তা একটু চুপ করে থেকে বলল, “এলে রাগ ভাঙিয়ে দেব।”
মৈত্রেয় বলল, “না, শোনো…”
সোমদত্তা ফোন কেটে দিল। সে নিশ্চিত মৈত্রেয় আসবে। এসেছেও।
সোমদত্তা তাকে বসার জায়গায় নিয়ে এল। সোফায় বসে মৈত্রেয় বলল, “কত বছর পর এই বাড়িতে এলাম?”
“অনেক।”
সোমদত্তা জানে, শরীর ভাল নেই বলে, মা আজ একটু বেশিই ঘুমোবে। না ঘুমোলেও কিছু নয়। একা নীচে নেমে আসার শক্তি তার নেই। পড়ে গিয়ে কোমরে চোট পাওয়ার পর থেকে সিঁড়িতে একা ওঠা নামা করতে পারে না।
এই মুহূর্তে স্লিভলেস নাইটির উপর একটা হাউসকোট পরে আছে সে। এই পোশাক সে বেছে পরেছে। হাউসকোটে ফুলের ছবি। গোলাপি রঙের ফুল। দু’বছর আগে শীতে শিরীষের সঙ্গে সিঙ্গাপুর বেড়াতে গিয়ে কিনেছিল। সেবার দোতারাও ছিল। পোশাকের দোকানে ঢুকে দোতারা একটা হাউসকোট দেখিয়ে বলল, “মা, এটা নিয়ে নাও।” হাউসকোট ঘিরে মস্ত একটা ড্রাগন হাঁ করে আছে। মুখ থেকে আগুন বেরোচ্ছে। সেই আগুন একপাশের বুক টপকে কাঁধ পর্যন্ত চলে গিয়েছে।
সোমদত্তা ভুরু কুঁচকে মেয়েকে বলেছিল, “এই জামা নেব কেন? আমি কি ড্রাগন?”
দোতারা মুচকি হেসে বলল, “পুরোটা না হলেও খানিকটা তো বটেই। তুমিও মুখ দিয়ে প্রায়ই আগুনের হলকা বের করো। আমরা ভয়ে মরি। এবার থেকে আর কষ্ট করে হলকা ছুড়তে হবে না। এই ছবি দেখেই আমরা ভয় পাব।”
সোমদত্তা মেয়ের রসিকতায় রেগে যাচ্ছে দেখে শিরীষ সামলেছিল। বলেছিল, “ড্রাগন হওয়া কি সহজ? সংসারে একজন ড্রাগন থাকা দরকার। নইলে তোর মতো বিচ্ছুদের শায়েস্তা করত কে?”
দোতারা গম্ভীর হয়ে বলল, “তুমিও কম নও। মাকে মাঝেমধ্যে তোমার দিকেও ফায়ার বল ছুড়তে হয়।”
শেষপর্যন্ত শিরীষই একটা জামা বেছে দিয়েছিল। খুব সুন্দর। কোটটা জুড়ে যেন গোলাপি রঙের একটা বাগান। ড্রাগন বাতিল হয়ে গিয়েছে, ফুলও যাতে বাতিল না হয় তার জন্য কাউন্টারের মেয়েটি উৎসাহ দিল। এগুলো চিনা ফুল। নাম পেওনি। চিনা উচ্চারণে বলা হয় ‘মিতাও’। ধনসম্পদ, উন্নতির প্রতীক। এসব তথ্য কতটা ঠিক, কতটা ভুল কে জানে, দোতারা এবারও লাফিয়ে পড়ল।
“মা, বাবা ঠিক জিনিস বেছেছে। জামায় টাকাপয়সা, কেরিয়ারের ব্যাপার আছে, তুমি নিয়ে নাও। কখন কাজে লেগে যাবে।”
জামাটা সুন্দর। সোমদত্তাকে দেখাচ্ছেও ভাল। এমনিতেই সে সুন্দরী। চেহারা, চোখমুখে একধরনের তীক্ষ্ম সৌন্দর্য রয়েছে। গায়ের রং খুব ফরসা না হলেও উজ্জ্বল। কোমর, বুক একটু ভারীর দিকে। তবে চেহারার সঙ্গে মানানসই। বড় বড় চোখ, টিকোলো নাক, চিবুকে বুদ্ধির থেকে জেদের ছাপ বেশি। মেয়েদের চোখমুখে জেদের ছাপ পুরুষমানুষের জন্য আকর্ষক। সোমদত্তা লম্বা। গড়পড়তা বাঙালি মেয়েদের তুলনায় বেশিই লম্বা। দেখলে বোঝা যায় না, চল্লিশ পেরিয়ে গিয়েছে। বিয়ের আগে রূপ-সৌন্দর্য, ফিটনেস নিয়ে মাথা ঘামাত। নিয়মিত সাঁতার কাটত, জিমে যেত। খাওয়াদাওয়া ভেবেচিন্তে করত। যাতে চর্বি না জমে। বিয়ের পরপরও কিছুদিন এসব মেনেছে। মেয়ে হওয়াতে ভাটা পড়েছিল। সময় কই? আবার মেয়ে বড় হয়ে যাওয়ায় নিজের দিকে মন দিয়েছিল। নিয়ম করে বিউটি পার্লারেও যেত। তিনমাসে একদিন স্পায়ে ঢুকত। বাইরে বেরোনোর সময় সেজেগুজে, ফিট হয়েই বেরিয়েছে। অফিসের জন্য আলাদা শাড়ি-জামা। খুব ঝলমলে নয়, ব্যক্তিত্বের ছাপ থাকতে হবে। পার্টির জন্য আবার অন্যরকম। নিজের বা শিরীষের অফিস পার্টিতে গেলে বোঝার উপায় নেই, মেয়ে বড় হয়ে গিয়েছে। তার স্লিভলেস বা অফ শোল্ডার পোশাকে এতটাই যৌন আবেদন থাকে যে পুরুষ সহকর্মীরা পাশে ঘুরঘুর না করে পারে না। শিরীষের কলিগরাও ফ্লার্ট করে নেয়।
দোতারা বলত, “মা তোমাকে দেখে হিংসে হয়। রূপের জন্য কত পরিশ্রমই না করতে পারো।”
সোমদত্তা বলত, “এটা শুধু রূপ নয়, নিজেকে সুন্দর রাখতে পারাটা একটা এক্সারসাইজ়ও। এখন বুঝতে পারবি না, বয়স হলে পারবি।”
দোতারা বলত, “থাক, তা হলে আমার আর বয়স হয়ে লাভ নেই।”
শিরীষের ঘটনার পর সোমদত্তা শরীরচর্চা তো বন্ধ করেইছে, এমনকী যেটুকু সাজগোজ না করলে নয়, তাও বন্ধ করে দিয়েছিল। অফিসের শ্যামশ্রী একদিন ক্যান্টিনে চা খেতে গিয়ে বকুনি দিল।
“সোমদত্তাদি, এরকম রুক্ষ, এলোমেলো হয়ে থাকছ কেন? বাড়ি থেকে বেরোনোর আগে মাথায় চিরুনি দিতে পর্যন্ত ভুলে যাচ্ছ! তোমাকে দেখলেই বোঝা যাচ্ছে, বড় সমস্যা হয়েছে। যে এতকাল টিপটপ হয়ে অফিসে আসত, তার এ কী হাল! সবাই আড়ালে আলোচনা করে। অন্যদের গসিপ করার বা সহানুভূতি দেখানোর সুযোগ দিচ্ছ কেন? যেমনভাবে আগে আসতে তেমনভাবে আসবে।”
দোতারাও বলেছে, “মা, ভিতর থেকে না পারো, বাইরে থেকে নর্মাল হও। অন্তত বাইরের লোকজন যেন তোমাকে দেখে ঘরের সমস্যা বুঝতে না পারে। সেদিন ল্যান্সডাউনে ঋষিতা তোমাকে দেখেছে। বলল, হোয়াট হ্যাপেন্ড দো? আন্টির কী হয়েছে?”
সোমদত্তা বলল, “ঋষিতা কে?”
দোতারা বলল, “আমার স্কুলের বন্ধু। তোমাকে আগে বহুবার দেখেছে। এই বাড়িতেও এসেছে। এখন দিল্লিতে পড়ছে। বলল, “দো, আন্টি অসুস্থ? চোখমুখ বসে গিয়েছে। ট্রাফিকে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়েছিল। এক ঝলক দেখেই কেমন লাগল। কী হয়েছে রে?” আমি বললাম, জ্বর হয়েছে। নিজেকে ঠিক করো প্লিজ়। আর সবসময় যেমন মাথা গরম করে আছ, এখন ক’টাদিন নিজে ড্রাইভ করাটা উচিত হবে না। সেন্টার থেকে ড্রাইভার ডেকে নাও।”
সোমদত্তা শ্যামশ্রী আর মেয়ে, দু’জনের কথা শুনেছে। আগের মতো না হলেও মোটামুটি টিপটপ হয়েই এখন বেরোচ্ছে। অফিসে তো শুধু কলিগরা নয়, বাইরের লোকজনও আসে। তার পোস্টটাও ভারিক্কি। সেই চেয়ারে এলোমেলোভাবে বসা যায় না। তবে গাড়ি নিয়ে দোতারা যা বলেছে সেটা শোনেনি। গাড়ি সে খুব ভাল চালায়। শিরীষের চেয়েও ভাল। গাড়ি চালাতে তার ভালও লাগে। ভাগ্যিস শিরীষের গাড়ি থাকা সত্ত্বেও নিজে আলাদা গাড়ি কিনেছিল!কোম্পানি অফিসে এসে সহজ ইএমআই-তে দিতে চাইল। সেই টাকা শোধ হয়ে গিয়েছে। গাড়ি কেনার ব্যাপারে শিরীষ আপত্তি করেনি। বরং খুশি হয়েছিল। আলাদা কাজের জায়গা, আলাদা সময়, আলাদা বন্ধুবান্ধব হলে গাড়িও আলাদা হওয়া উচিত। নিজেই উদ্যোগ নিয়ে গাড়ি চালানো শিখিয়ে দেয়। দোতারা বাড়ি থাকলে হয় বাবা, নয় মায়ের গাড়িতে দিব্যি কাটিয়ে দেয়। যদিও সে বেশিরভাগ সময়ে মেট্রো, অটো বা হেঁটেই যাতায়াত করে। খুব দরকারে মোবাইলে ক্যাব ডেকে নেয়। তার নিজের বাজেট আছে। স্কলারশিপের টাকার মধ্যে সব খরচ সামলায়। শুধু ইউনিভার্সিটির স্কলারশিপ নয়, দিল্লিতে একটা পরীক্ষা দিয়ে আরও একটা ছোটখাটো মেরিট স্কলারশিপ জোগাড় করে নিয়েছে। তাতে হস্টেলের খরচ উঠে আসে। এই বছরের প্রথম দিকে কানপুর আইআইটির একটা প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়েছিল। ডিপার্টমেন্ট থেকে পাঠিয়েছিল। সেখান থেকেও টাকা পেয়েছে। তারপরেও খরচ করে বুঝেশুনে। বাবা-মায়ের কাছ থেকে পয়সা নিতে চায় না। গত বছর থেকে শিরীষ তার জন্য মান্থলি ইনকাম স্কিম করিয়ে দিয়েছে। মাসে মাসে তার অ্যাকাউন্টে টাকা চলে আসে। দোতারাকে না জানিয়েই করেছে। দোতারা সেই টাকা সহজে খরচ করে না।
মৈত্রেয়কে ডাকার পর স্নানে গেল সোমদত্তা। অনেকদিন পর আজ স্নান করতে গিয়ে বাথরুমের আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখল সোমদত্তা। ক’মাসের ঝড়ঝাপটায় শরীর ভেঙেছে। চোখের তলায় কালি পড়েছে। সেই টলটলে ভাবটা নেই। ছোটাছুটি তো আছেই, তার উপর মনের উপর চাপও লাবণ্য নষ্ট করেছে। প্রথমে হত দুশ্চিন্তা, তারপর অভিমান, এখন হয় রাগ। সোমদত্তা বিড়বিড় করে বলল, এসব থেকে বেরোতে হবে। কার জন্য নিজের মন, নিজের শরীর এভাবে নষ্ট করছে? কেনই বা করবে? ওই মেয়েকে শায়েস্তা করতে পারলে শিরীষ সুড়সুড় করে ঘরে ফিরবে। নিজের নগ্ন দেহ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখতে লাগল সোমদত্তা। এ বাড়ির বাথরুমের আয়না তত ভাল নয়। কসবার ফ্ল্যাটের দুটো বাথরুমই বড় করে বানানো। শিরীষ বেশ খরচ করেছিল। সব কিছুই দামি আর আধুনিক। মাঝেমধ্যে অবাক লাগে এত বড় একটা সাজানো বাড়ি ছেড়ে কীভাবে একটা মানুষ ছেড়ে চলে যেতে পারে!
কসবায় সোমদত্তা যে-বাথরুম ব্যবহার করে, তার একটা দেয়াল জোড়া আয়না। হাফ সার্কেল করা শাওয়ার ইউনিটটা থেকে বেরোলেই সেই আয়নার মুখোমুখি হতে হয়। মনে একটা নিরাবরণ মানুষ দু’জনকে দেখছে। কোনও আড়াল নেই, আবরণ নেই। একজন অন্যজনকে জরিপ করছে আপাদমস্তক। শিরীষ ব্যাখ্যা দিত।
“বাথরুম হল নিজের সঙ্গে নিজের দেখা হওয়ার, কথা বলার একমাত্র জায়গা।”
সোমদত্তা গালে লাল আভা ফেলে বলেছিল, “নিজেকে অতটা জামাকাপড় ছাড়া দেখতে যেন লজ্জা করে।”
শিরীষ ফিসফিস করে বলেছিল, “তুমি তো একা দেখবে না, আমিও তোমাকে দেখব।”
সোমদত্তা স্বামীর হাতে ঘুষি মেরে বলেছিল, “অসভ্য।”
‘অসভ্য’ সেও কম হয়নি। বিয়ের পর একসঙ্গে দু’জনে শাওয়ারের তলায় দাঁড়িয়েছে, সাবান মাখিয়ে স্নান করিয়ে দিয়েছে একে অপরকে, চুমুতে চুমুতে ভরিয়ে দিয়েছে। তারপর ভিজে থাকা নগ্ন স্ত্রীকে শিরীষ পাঁজাকোলা করে নিয়ে এসেছে বেডরুমে। তখন অবশ্য আয়না এত বড় ছিল না।
দোতারা ওই বাথরুমে চট করে ঢোকে না। বলে, “অত বড় আয়নায় নিজেকে দেখলে ভয় করে। মনে হয় নিজেই নিজেকে কামড়াতে আসছি।” এ বাড়িতে আয়না মাঝারি। আগেরটা ছিল একেবারে ছোট। শুধু মুখটা দেখা যেত। বাবা দাড়ি কামাতেন। মায়ের ওসবে ঝোঁক ছিল না। দোতারা তার দিদিমার মতো হয়েছে। রপচর্চায় মন নেই। বাবা মারা যাওয়ার পর সোমদত্তা সেই আয়না বদলেছে। আয়নায় ঝুঁকে নিজের গালে হাত বুলিয়ে সোমদত্তা মনে মনে ভাবল, ত্রপা মেয়েটার মধ্যে কী এমন আছে যে শিরীষ এতটা মজে গেল! সে কি সুন্দরী? যৌনক্রীড়ায় পারদর্শী খুব? নিশ্চয়ই তাই। এরা পুরুষমানুষকে ফাঁদে ফেলার ছলাকলা জানে। বেশি বয়সের যৌন আকাঙ্ক্ষা ভংয়কর। রতিক্রিয়ায় এমন কিছু খেলা মনের অন্ধকার থেকে টেনে তুলে আনে যা লাগামহীন, দামাল। কিছু মেয়ে পুরুষমানুষের এই সংকটের কি সুযোগ নেয়? এতদিন সোমদত্তা এসব জানত না। সে জানত, সংসারে বাইরে পুরুষমানুষের একবারে অন্য নারী থাকবে না, তা হয় না। ভালও লাগে না। আগেকার দিনে বলা হত, স্বামীর শরীরে অন্য মেয়েমানুষের গন্ধ কামোত্তেজনা বাড়ায়। এই উত্তেজনার জন্ম হিংসে থেকে। শিরীষের তো তাও ছিল না। নাকি তলে তলে ত্রপা মেয়েটির সঙ্গে যোগাযোগ ছিল? ছিল হয়তো। গোপন রেখেছিল। শিরীষ যে বলে নাওডুবিতে চাষ করতে গিয়ে পরিচয় হয়েছে, মিথ্যে কথা বলে।
সোমদত্তা আয়নায় নিজেকে খুঁটিয়ে দেখতে লাগল। বয়স বাড়ছে বলে তার শরীর কি আকর্ষণ হারিয়েছে? পুরুষকে কাছে টানার ক্ষমতা কমে গিয়েছে? নগ্ন বুক, পেট, কোমর দেখল সোমদত্তা। ঊরু, পায়ের গোছও বাদ দিল না। মাথার ওপর হাত তুলে দেখল। কই, বুড়োটে, খয়াটে ভাব তো আসেনি! তবে কি চেনা শরীর একঘেয়ে লাগছিল শিরীষের? সেই জন্য মেয়ের বয়সি একজনকে বেছে নিয়েছে? শিরীষের সঙ্গে তার শেষ কবে শরীরের মিলন হয়েছিল? মনে করার চেষ্টা করল সোমদত্তা। তারিখ মনে পড়ছে না, তবে ঘটনাটা আবছা মনে পড়ছে। শনিবার ছিল একটা, নাকি রবিবার? শনিবারই হবে। দু’জনেরই ছুটি ছিল। দোতারা ফোন করে জানিয়েছিল, এই সপ্তাহে সে আসছে না। স্পেশাল কোচিং হবে। লাঞ্চের পর বেডরুমে একটু শুতে গিয়েছিল সোমদত্তা। সারা সপ্তাহ দুপুরে বিশ্রাম হয় না। শিরীষ খাটের এক পাশে বসে ল্যাপটপে খুটখাট করছিল। খানিক পরেই ল্যাপটপ সরিয়ে গায়ের উপর এসে পড়ল। মনে করার চেষ্টা করছে সোমদত্তা। এতদিনের দাম্পত্য জীবনের পর স্বামীর সঙ্গে কোনও একদিনের মিলন আলাদা করে মনে পড়ার কথা নয়, তারপরেও জোর করে মনে করতে চাইল সোমদত্তা। মনে পড়ল আবছা। সেদিনও অন্যদিনের মতো শান্তভাবে তার জামাকাপড় খুলেছিল শিরীষ। তারপর নিঃশব্দে ঠোঁট রেখেছিল গায়ে। আদর শুরু করেছিল একেবারে পায়ের পাতা থেকে। তারপর মুখ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল শরীর বেয়ে। এমনটাই ভালবাসে শিরীষ।
“বুঝলে সোম, শরীর হল রাগের মতো। ভাল শিল্পী তাকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নিয়ে যায়। আলাপ দিয়ে শুরু করে, জোড় হয়ে ঝালায় পৌঁছোয়। এই বিষয়ে আমি একজন ভাল শিল্পী বলতে পারো। ধৈর্য ধরে, সময় নিয়ে এগোই।”
চিরকাল তাই করে শিরীষ। মুখের স্পর্শে স্পর্শে উন্মাদ করে দেয়। ঊরুসন্ধি, নাভি, পেট, বুক হয়ে গলা বেয়ে চিতা বাঘের মতো উঠে যায় চিবুকে, ঠোঁটে, চোখের পাতায়। একসময়ে নিজেও জেগে ওঠে। সেদিনও উঠেছিল। কতদিন আগে? কই বেশি দিন তো নয়! বড়মামা আসার কয়েকদিন আগেই তো। নাকি পরে? তা হলে? এত দ্রুত শরীর ঝরে গেল? একঘেয়ে হয়ে গেল সে? হয়তো এসব নয়। হয়তো কম বয়স বলে ত্রপার শরীর আরও সুন্দর। আরও মিঠে করে বেজে ওঠে।
মৈত্রেয় সোফায় হেলান দিয়ে বলল, “তোমাকে মিষ্টি দেখাচ্ছে।”
সোমদত্তা খুশি হল। অনেকটা সময় ধরে স্নান করায় খানিকটা কাজ দিয়েছে তা হলে। স্নান করতে করতে সে ঠিক করেছে, দু’-একদিনের মধ্যে পার্লারে যাবে। পারলে কালই যাবে। ক্লাবেও কথা বলবে, সাঁতারটা যদি শুরু করা যায়। পেটে একটু চর্বি জমেছে মনে হচ্ছে।
সোমদত্তা মৈত্রেয়র উলটোদিকের সোফায় বসেছে। সোমদত্তা বলল, “আস্তে কথা বলো। মা ঘুমাচ্ছে।”
মৈত্রেয় ঘন গলায় বলল, “তা হলে পাশে এসে বসো।”
সোমদত্তা বলল, “নাওডুবির কী পেলে বলো।”
মৈত্রেয় পাশে রাখা ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করল। বলল, “তুমি ওখানে কখনও গেছ?”
সোমদত্তা বলল, “বয়ে গিয়েছে!”
মৈত্রেয় বলল, “নাওডুবির কাছে সবেরগঞ্জ বলে একটা জায়গা আছে। সেখানকার একজনের সঙ্গে আমার যোগাযোগ হয়েছে। তার নাম… থাক, নাম পরে হবে। আমি বিজ়নেস বাড়াতে চলেছি সোমদত্তা। গ্রামেগঞ্জে যেসব ছোট গাড়ি চলে, তার ডিলারশিপও নিয়েছি। সেই সূত্রেই একজনের সঙ্গে চেনাজানা হয়েছে। সে ক’দিন আগে আমার অফিসে এসেছিল। কথা প্রসঙ্গে সে আরও পাঁচটা গ্রামের সঙ্গে নাওডুবির কথা বলে। আমি চমকে উঠি। তাকে তোমার স্বামীর নাম করে বলি, এমন কাউকে চেনে কিনা। সে বলেছিল, খোঁজ নেবে। ক’দিন পর ফোন করেছিল। তোমার হাজ়ব্যান্ড নাকি ওখানে অতি ফেমাস। কালকাতা থেকে গিয়ে এক সুটবুট পরা ভদ্রলোক লাঙল কাঁধে নিক্সেম যখন, ফেমাস তো হবেই। আমি ওই লোককে গোপনে আরও খবর নিতে বলি। সম্ভব হলে, মোবাইলে ফোটো তুলে পাঠাতেও বলি। সে পাঠিয়েছে। আমি প্রিন্ট করে এনেছি। সবক’টা নয়, দুটো করেছি। আমার ধারণা, এই ফোটো তোমার ডিভোর্স মামলায় কাজে দেবে।”
সোমদত্তা উত্তেজিত হয়ে বলল, “ওই লোক তোমার হয়ে এত কাজ করে দিল!”
মৈত্রেয় মুচকি হেসে বলল, “এমনি করেনি, স্বার্থ আছে। আমার সঙ্গে সে ওই এলাকায় ব্যাবসা করতে চায়।” একটু থেমে মৈত্রেয় নিচু গলায় বলল, “কিছু করি না বলে তোমরা আমাকে তাড়িয়েছিলে সোমদত্তা, সেই কিছু করা দিয়ে আমি তার প্রতিদান দিতে চাই।”
সোমদত্তা বলল, “প্রতিদান না প্রতিশোধ?”
মৈত্রেয় বলল, “তোমার উপর আমার কোনও রাগ নেই।”
সোমদত্তা নিচু গলায় বলল, “আমি বুঝতে পারি। দাও ফোটোগুলো দেখাও। আচ্ছা, আমি তোমার পাশে যাচ্ছি।”
সোমদত্তা উঠে উলটোদিকে সোফায় গিয়ে বসল। বসল মৈত্রেয়র গা ঘেঁষে। সে জানতে চায়, পুরুষমানুষকে উত্তেজিত করার ক্ষমতা তার আজও কতটা আছে?
তিনমাসের বদলে সোমদত্তাকে লন্ডনে থাকতে হয়েছিল ছ’মাস। সেখানে তার সঙ্গে শিরীষের আলাপ। শিরীষ তখন তার বেঙ্গালুরুর অফিস থেকে ওই একই ট্রেনিং প্রোগ্রামে গিয়েছিল। বিষয় আলাদা। পার্টিতে আলাপ হল দু’জনের। সুদর্শন, শিক্ষিত, মার্জিত শিরীষকে দেখে মুগ্ধ হতে সোমদত্তার দু’দিনের বেশি সময় লাগেনি। এরপর যখন জানল, যুবক শুধু বড় কোম্পানির উচ্চপদে চাকরিই করে না, গানবাজনা, থিয়েটার, কবিতাও ভালবাসে, তখন আর নিজেকে সামলাতে পারেনি। পরপর ক’টাদিন বাইরে দেখা করে বসল। শিক্ষিত, রূপসি, স্মার্ট সোমদত্তার নিজের আকর্ষণও কম ছিল না। যুবক শিরীষের পক্ষে বিদেশ বিভুঁইয়ে এই আকর্ষণ অস্বীকার করা কঠিন হল। একদিন টেমস নদীর পাশে দাঁড়িয়ে শিরীষ কথাটা বলেই ফেলল।
“মনে হয়, আমি তোমার প্রেমে পড়ে গিয়েছি সোমদত্তা।”
সোমদত্তা গাঢ় স্বরে বলল, “মনে হয় কেন?”
শিরীষ হেসে বলল, “আমার মতো মানুষ যে কখনও প্রেমে পড়বে এটা আমারই বিশ্বাস হয় না। তাও আবার দেশ থেকে এত দূরে এসে! তাই বললাম মনে হয়।”
সোমদত্তা ঠোঁটের কোণে হাসি সাজিয়ে বলল, “কেন এমন মনে হল তোমার?”
শিরীষ বলল, “কাল রাতে কিছুতেই ঘুম আসছিল না। বিছানা ছেড়ে উঠে পড়লাম। ট্রেনিং-এর গুরুগম্ভীর প্যাড টেনে খসখস করে কবিতা লিখে ফেললাম। আমার ওল্ড ল্যান্ডলেডির গ্র্যান্ডফাদার ক্লকে ঢংঢং করে দুটো বাজল। বুঝলাম, মাঝরাতের এই কবিতাকাণ্ডের জন্য তুমি দায়ী।”
সোমদত্তা তার ভাসানো চোখ বড় করে বলল, “রাত দুটোয় কবিতা! তাও আমরা জন্য! কবিতাটি কি শুনতে পারি?”
শিরীষ একটু চুপ করে থেকে বলল, “বলতে পারি, তবে একটা শর্ত আছে।”
“কী শর্ত?”
শিরীষ হেসে বলল, “কবিতা শোনার সময় চোখ বুজে থাকতে হবে। আমি না বলা পর্যন্ত খোলা যাবে না। রাজি?”
সোমদত্তা চোখ বুজেছিল। শিরীষ ফিসফিস করে বলে, “কাছে বা দূরে সবই সমান/ সবই তোমার সাক্ষ্য প্রমাণ/ আছ তো জানি কোথাও ঠিক/ চূর্ণ করে দিগ্বিদিক/ সেটাই বলো মন্দ কী? / বিদেশ পাড়ে তোমায় দেখে নিজের মনে চমকেছি।”
চোখ বোজা অবস্থাতেই এগিয়ে আসে সোমদত্তা। চোখ বোজা অবস্থাতেই দু’হাতে গলা জড়িয়ে ধরে শিরীষের। ঘন হয়ে বুক দিয়ে স্পর্শ করে শিরীষের বুক। চোখ বোজা অবস্থাতেই মুখ তুলে তার ঠোঁট মুখে নেয়।
শিরীষ দেশে ফিরে আসে সোমদত্ত ফেরার দু’মাস আগেই। আসার আগের দিন সোমদত্তা তার অ্যাপার্টমেন্টে যায়। এই ছোট্ট ঘরটা ভাড়া নিয়েছিল শিরীষ। বাড়িওয়ালি রাগী প্রকৃতির বৃদ্ধা। ভাড়া দেওয়ার সময়ে বলে দিয়েছিলেন, কোনও মেমসাহেবকে ঘরে আনা চলবে না। রাতে তো একেবারেই নয়, দিনে এলে বসার সোফা পর্যন্ত অনুমতি। বেডরুমে ঢুকেছে জানতে পারলে চুক্তি বাতিল। শিরীষ অবাক হয়ে জানতে চেয়েছিল, “শুধু মেমসাহেবে আপত্তি কেন!”
ধবধবে ফরসা বৃদ্ধা কাঁপা ঘাড় আরও কাঁপিয়ে যা বলেছিল, তার বাংলা করলে দাঁড়ায়— “তোমরা মেমসাহেব দেখলে বড্ড আদেখলাপনা করো বাপু। একেবারে মাথা ঘুরে যায়। আমার বয়স তো কম হল না, দেখলাম অনেক। গায়ের রং ফরসা হলেই হল। মনে করো মেয়ে বুঝি কোনও ফেয়ারি টেল থেকে নেমে এসেছে। তাড়াতাড়ি তাকে নিয়ে বিছানায় ওঠো। পুরুষমানুষের এই এক উৎকট স্বভাব। অধিকাংশই বীর বিক্রমে বিছানায় ওঠে, তারপর একেবারে ভেড়া বনে যায়। প্রেমে-ট্রেমে পড়ে একাকার কাণ্ড। বিয়ে করবে বলে কান্নাকাটিও করতে দেখেছি। এদিকে দেশ থেকে বউ সমানে চিঠি লিখে চলে, ওগো ফিরে এসো। এদিকে মেম ছুঁড়ি তো নাচিয়ে যায়। নাচায় আর রস নিংড়োয়। পরে সর্বস্বান্ত হয়ে দেশে ফিরতে হয় তোমাদের। আমার বাড়িতে বসে এই অনাচার আমি হতে দেব না বাপু। বিছানা বড় ঝামেলার বস্তু। ওতে কাউকে নিয়ে একবার চড়েছ তো মরেছ।”
শিরীষ খুব মজা পায়। মেমসাহেবের মুখে এমন কথা শুনবে ভাবতে পারেনি। সে অতি আনন্দে বৃদ্ধার শর্তে রাজি হয়ে গিয়েছিল। তার সঙ্গে বৃদ্ধার খাতিরও হয়ে গিয়েছিল বেশ। একা মানুষ। স্বামী মারা গিয়েছে। দুই ছেলের একজন জাহাজে চাকরি করে, অন্যজন কানাডায়, ব্যাবসা করছে। বৃদ্ধা এটা সেটা রান্না করে শিরীষকে খাওয়াত। শিরীষও কেক, পাউরুটি, বিস্কুট এনে দিয়েছে। একবার একটা রেড ওয়াইনের বোতল উপহার দিল। বৃদ্ধা তো বেজায় খুশি। ডিনারে নেমন্তন্ন করে বসল শিরীষকে। সেই ওয়াইন খেতে খেতে বলল, “বিয়ে-থা করোনি কেন? মতলব কী? তুমিও মেম খুঁজছ নাকি?”
শিরীষ হেসে বলেছিল, “না আন্টি, এখনও ঠিক করিনি। পাত্রী পাইনি।”
শিরীষ চলে যাওয়ার আগের দিন সোমত্তা সেই বাড়িতে এল। জিনিসপত্র গুছিয়ে দেবে। আন্টি দাঁড়িয়েছিল গেটের মুখে। শিরীষ আলাপ করিয়ে দিতে সাদা ভুরু কুঁচকে বলল, “শিরি, গায়ের রং দেখে মনে হচ্ছে, মেয়ে এশিয়ান।”
শিরীষ বলল, “এশিয়ান শুধু নয়, সোমদত্তা আমার দেশের মেয়ে। আবার শুধু আমার দেশের নয়, একেবারে আমার মতোই বাঙালি, বাংলা ভাষায় কথা বলে, একই শহরে থাকি আমরা, কলকাতায়। আমরা এসেছিও একই কাজে। আমার ট্রেনিং শেষ হয়ে গেল। ও আরও ক’টাদিন থাকছে।”
আন্টি চোখ বড় করে, রাগ দেখিয়ে বলল, “তোমাদের তো অনেকদিনের পরিচয় দেখছি শিরি। তবে যে বললে পাত্রী জোটেনি এখনও! বুড়ো মানুষকে মিথ্যে বলেছিলে?”
এই কথায় থতমত খেয়ে গেল শিরীষ। একেবারে পাত্রী! তাকাল সোমদত্তার দিকে। সে মিটিমিটি হাসছে। শিরীষ ঢোঁক গিলল। এই বৃদ্ধাকে সে মিথ্যে বলতে পারবে না। নিজেকে সামলে নিয়ে বলল, “না না, আন্টি অত কিছু নয়। চেনা এই পর্যন্ত। মনের চেনা কি মিনিট, ঘণ্টা, মাস, বছর দিয়ে মাপা যায়?”
আন্টি মাথা নাড়িয়ে বললেন, “বাঃ ভাল বললে, তুমি যে একজন পোয়েট তোমার কথা শুনেই বোঝা যায়। তুমি কাল চলে যাবে ভেবে আমার মন খারাপ লাগছে। বয়সের এই আর এক সমস্যা। যতদিন বেঁচে থাকবে, দেখতে হবে এক-এক করে ভাল লাগার মানুষ সবাই চলে যাচ্ছে। যাও, দুই মনের বন্ধু এনজয় করো।”
সেদিন ঘরে ঢোকার পর ‘মনের বন্ধু’রা’ খুব দ্রুত ‘শরীরের বন্ধু’ও হয়ে যায়। পরদিন ফিরে যাওয়া বলে জিনিসপত্র ছড়ানো ছিল ঘর জুড়ে। সোফা, ডিভানে জামা কাপড়ের স্তূপ। সুটকেস, ব্যাগ পড়ে আছে মেঝেতে। সেসব ডিঙিয়ে দাঁড়ানোর জায়গা করে নিয়েছিল দু’জনে। শিরীষই প্রথমে যত্ন করে চুমু খায়। তারপর এক-এক করে পোশাক খুলে ফেলে। সোয়েটার থেকে ব্রা পর্যন্ত। সোমদত্তা হাত লাগাতে গেলে, হাত সরিয়ে দেয় আলগোছে।
সোমদত্তা ফিসফিস করে বলেছিল, “তাড়াতাড়ি হবে।”
শিরীষ অস্ফুটে বলে, “আমার কোনও তাড়া নেই।”
শিরীষ হাঁটু গেড়ে বসে যখন ধীরে ধীরে ট্রাউজ়ার এবং পরে প্যান্টি খুলতে থাকে সোমদত্তার, সে তখন শিরীষের কাঁধ চেপে ধরে। এত সুন্দর করেও পুরুষ নগ্ন করতে জানে! যেন কোনও শিল্পী পাথর কেটে তাকে তৈরি করছে। লজ্জা, কাম, মিলনের আকাঙ্ক্ষায় সে যত অস্থির হয়ে উঠছে, ধীরে ধীরে তার সৌন্দর্য তত ফুটে উঠছে। শিরীষ হাঁটু পেতে বসে থাকা অবস্থাতেই দু’হাতে সোমদত্তার কোমর ধরে এবং মুখ নামায়। তীব্র আশ্লেষে শিরীষের চুল মুঠো করে চেপে ধরে সোমদত্তা। শরীর টলে ওঠে তার। চমকে চমকে ওঠে। এমনও তার জানা ছিল না। শরীর এমনভাবে কথা বলে! জড়ানো গলায় সে বলে ওঠে, “কী করছ! এ কী করছ!”
শিরীষ কোনওরকমে বলেছিল, “রূপসাগরে ডুব দিয়েছি সোমদত্তা। বাধা দিয়ো না।”
ছড়িয়ে থাকা জামাকাপড়, জিনিসের মাঝে দুই নগ্ন যুবক-যুবতী কতক্ষণ পরস্পরে আচ্ছন্ন হয়েছিল, তা বলা মুশকিল। তাদের কখনও মনে হয়েছিল, এইভাবে রয়েছে অনন্তকাল, আবার কখনও মনে হয়েছে, এই সুখ মুহূর্তটুকু বড় তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল বুঝি।
কলকাতায় ফেরার পর এক সন্ধেতে বাবার কাছে শিরীষকে নিয়ে এল সোমদওা।
“বাবা উনি একজন ইঞ্জিনিয়ার, ম্যানেজমেন্ট পড়েছেন। এখন বড় চাকরিও করছেন, কিন্তু সেসবের চেয়ে বড় পরিচয় হি ইজ় আ পোয়েট।”
শিরীষ লজ্জা পেয়ে বলে, “না না, পোয়েট টোয়েট কিছু নই, ছোটবেলায় লিখতাম, ও তো সব বাঙালি ছেলেই লেখে।”
সৌমেন্দু সেন এরপর এই ঝকঝকে যুবকটির সঙ্গে গল্পে মশগুল হয়ে পড়েছিলেন। আলোচনার এক পর্যায়ে এসে তাঁরা কিটস এবং বায়রনকে নিয়ে পড়েন। কাব্যচর্চার মধ্যেই সৌমেন্দু সেন টুকটাক করে শিরীষের চাকরি, অফিস, উন্নতি, বাড়ি, গাড়ি, পরিবারের খোঁজ নিয়ে নেন। খুশি এবং নিশ্চিন্ত হন। শিরীষ চলে যাওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেন। রাতে খেতে বসে সোমদত্তাকে বললেন, “খুবই ভাল ছেলে। তোমার বুদ্ধি এবং রুচির প্রশংসা করছি।”
মাধুরী বললেন, “বাড়িতে কে কে আছে?”
সোমদত্তা বলল, “কেউ নেই। এক ছেলে। বাবা-মা দু’জনেই মারা গিয়েছেন। একাই থাকে। খাওয়ার-দাওয়ার খুব সমস্যা। রান্না জানে না, তাও করা চাই। হাত পুড়িয়ে ফেলে।”
সোমদত্তার কথা বলার মধ্যে মায়া ছিল। মেয়েদের সহজ মায়া। সৌমেন্দু- মাধুরী পরস্পরের মুখের দিকে তাকালেন। চোখে-চোখে কথা হল।
মাধুরী মুখ টিপে হেসে বললেন, “রোজ রোজ হাত পোড়ানোর দরকার কী? তোর বাবা কথা বলুক।”
সোমদত্তা গালে লালচে আভা পড়ল কি? পড়লেও বোঝা মুশকিল। সে রাগের ভান দেখিয়ে বলল, “মা, তুমি যে কী সব বলো! আমি কি ও কথা বলেছি?”
সৌমেন্দু সেন বললেন, “তোর আপত্তি নেই তো?”
সোমদত্তা চুপ করে মাথা নামিয়ে খেয়ে যেতে লাগল। মাধুরী স্বামীকে চোখের ইশারা করলেন। মেয়েকে বিয়েতে রাজি করানো কি সহজ কথা? সেই মেয়ে নিজেই হাতে চাঁদের টুকরো এনে দিয়েছে।
সৌমেন্দু সেন বললেন, “বাড়িতে তো কেউ নেই বললি। শিরীষের ফোন নম্বরটাই তা হলে দে।”
সোমদত্তা মুখ নামানো অবস্থাতেই নম্বর বলে দিল। বোঝাই যাচ্ছে, শিরীষের ফোন নম্বর তার কণ্ঠস্থ। মাধুরীদেবী আর নিজেকে সামলাতে পারলেন না। হেসে ফেলে বললেন, “দাঁড় বাবাকে আগে খেতে দে। বাপ রে, মেয়ের যে তর সয় না!”
সোমদত্তা লজ্জায় চোখ-মুখ লাল করে উঠে পড়ল। বলল, “যাও, আমি বিয়েই করব না।”
পরদিনই শিরীষের সঙ্গে কথা বললেন সৌমেন্দু সেন। তাকে শনিবার ডিনারে ডাকলেন।
গল্পের মতো শুনতে লাগলেও এই ঘটনার ঠিক এক সপ্তাহ পর মৈত্রেয় সোমদত্তাকে না জানিয়েই সৌমেন্দু সেনের সঙ্গে তার অফিসে দেখা করে। পিয়ন স্লিপ দেওয়ায় বিরক্ত হলেন সৌমেন্দু। মৈত্রেয়কে ঘরে ডেকে বললেন, “আবার কী হল? সেবার তো জালিয়াতির মধ্যে পড়েছিলে, এবার আবার কীসে ফাঁসলে? বাপু, আগেই বলে রাখছি বারবার কিন্তু বলতে পারব না। সেবার সোম খুব রিকোয়েস্ট করেছিল…”
মৈত্রেয় বেশ অবাক হল। অপমানিতও হল। কিছু শোনার আগেই ভদ্রলোক হড়বড়িয়ে আক্রমণ করছেন। মানুষটা কড়া এবং অহংকারী জানাই আছে, তবে আগ বাড়িয়ে এভাবে অপমান করা যায় কি? কিছু করার নেই, আজ সে যে-কথা বলতে এসেছে, তাতে এসব গায়ে মাখলে চলে না। মনে সাহস সঞ্চয় করেই এসেছে। সাহস? নাকি দুঃসাহস? সোমদত্তাকে পর্যন্ত বলেনি। বললে আটকে দিত। সময় চাইত আরও। তার তো কোনও প্রয়োজন নেই। বাইরে যাওয়ার আগে সোমদত্তা তাকে যেভাবে কাছে টেনেছিল, তাতেই তার সম্মতি মিলেছে। পাত্রীর বাবার কাছে ছেলের বাড়ির তরফ থেকে প্রস্তাব দেওয়ার মতো তো কেউ নেই। মৈত্রেয়র বাবা মারা গিয়েছেন ছেলের স্কুল বয়সে। মা শয্যাশায়ী। সুতরাং যা করবার নিজেকেই করতে হবে।
মৈত্রেয় নিজেকে সামলে বলল, “স্যার, ওসব কিছু নয়, একটা নিবেদন নিয়ে এসেছিলাম।”
“কী বিষয়?” ভুরু কুঁচকে বললেন সৌমেন্দু সেন। তাঁর গলা বলে দিচ্ছিল, এই ছেলের সঙ্গে কোনও বিষয়ে কথা বলতেই তিনি তেমন রাজি নন। মৈত্রেয় আর ভণিতায় গেল না।
“স্যার, আমি সোমদত্তাকে বিয়ে করতে চাই।”
সৌমেন্দু সেন চমকে উঠলেন। বললেন, “কী বললে?”
মৈত্রেয় মাথা নামিয়ে বলল, “আমার বাড়ি থেকে প্রস্তাব দেওয়ার মতো কেউ নেই, তাই আমাকেই বলতে হচ্ছে। স্যার, আপনার অনুমতি পেলে সোমদত্তাকে আমি বিয়ে করব।”
কয়েক মুহূর্ত চুপ করে থেকে সৌমেন্দু সেন লম্বা শ্বাস নিলেন। সম্ভবত রাগে ফেটে পড়ার হাত থেকে নিজেকে সামলালেন। শান্তভাবে বললেন, “তুমি কী বলছ, তুমি জানো?”
মৈত্রেয় বলল, “জানি স্যার।”
সৌমেন্দু সেন দাতেঁ দাঁত চেপে বললেন, “একথা বলার সাহস তুমি পেলে কী করে? সোমদত্তাকে বিয়ে করার জন্য যে-যে যোগ্যতার প্রয়োজন, তার একটাও কি তোমার আছে ইয়ং ম্যান?”
মৈত্রেয় কিছু বলতে গেল। সৌমেন্দু সেন চাপা গলায় ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ করো। ভাঙা স্কুটার নিয়ে বিয়ে করতে আসবে? জালিয়াতির মামলায় পথে পুলিশ ধরবে না তো?”
মৈত্রেয়র কান, মাথা ঝাঁঝাঁ করে ওঠে। সে কাঁচুমাচুভাবে বলল, “স্যার, আমরা পরস্পরকে ভালবাসি।”
“শাট আপ! সিনেমার ডায়লগ বলবে না। রোজগারপাতি বলতে তো ওই ছুটকো ব্যাবসা। আগে সেদিকে মন দাও। যাও এখন, অনেক কাজ আছে।”
মৈত্রেয় হতবাক হয়ে দরজার দিকে এগিয়ে যায়। সৌমেন্দু সেন নরম গলায় ডাকেন, “শোনো।”
মৈত্রেয় ঘুরে দাঁড়ায়। সৌমেন্দু সেন বললেন, “সরি। মাথাটা গরম হয়ে গিয়েছিল। তুমি বোধহয় জানো না, সোমদত্তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। সোমদত্তা নিজেই ছেলে খুঁজে নিয়েছে।” একটু থেমেছিলেন সৌমেন্দু সেন। ফের বললেন, “ইয়ং ম্যান, একটা কথা বলি… না, একটা নয়, দুটো কথা। এক নম্বর হল, নিজের কতদূর ক্ষমতা নিজেকে জানতে হয়। আমার মেয়ে সোমদত্তাকে তুমি চিনতে পারোনি। যোগ্যতার কথা বাদ দিচ্ছি, সোমদত্তার সঙ্গে সংসার করার ক্ষমতাও তোমার নেই। যে-কোনও পাত্রে অমৃত রাখা যায় না। নইলে সেই অমৃতই বিষ হয়ে যায়। তোমার জন্য এটা ভালই হল। আর দু’নম্বর হল, বিজ়নেসে কোনও ছোটখাটো দরকার হলে আমার সেক্রেটারির সঙ্গে দেখা কোরো। তাকে বলে রাখব। এবার যাও।”
সারারাত চেষ্টা করেও সোমদত্তার ফোন পেল না মৈত্রেয়। পরদিন সকালে সল্টলেকের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। সোমদত্তা দেখা করল না । মৈত্রেয় ভেবেছিল দরজার বাইরে অপেক্ষা করবে। তারপর ভাবল, সেটা যেমন লোক হাসানো নাটক হবে, তেমন অপমানেরও হবে। দুপুরে সোমদত্তাকে ফোন করলে সে ফোন ধরে। বোঝাই গেল, সে তার বাবার কাছ থেকে বিষয়টা শুনেছে।
“খ্যাপামি কোরো না মৈত্রেয়। বলেই তো ছিলাম আমাদের বাড়িতে বাবাই শেষ কথা।”
মৈত্রেয় বলেছিল, “তুমি কিছু বলবে না?”
সোমদত্তা বলল, “বলছি তো খ্যাপামি কোরো না। বন্ধু হয়ে তো রইলাম।”
মৈত্রেয় বিড়বিড় করে বলল, “তুমি আমায় ভালবাসো না?”
সোমদত্তা একটু হেসে বলল, “ভালবাসব না কেন? সে ভালবাসা মানেই তো বিয়ের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়া নয়। সেই সম্পর্ক তৈরি হলেও টিকত না মৈত্রেয়, মাথা ঠান্ডা করে বোঝার চেষ্টা করো।”
মৈত্রেয় নিঃশব্দে সরে যায়। আবার ফিরেছে। ফিরেছে সোমদত্তারই ডাকে। ভেবেছিল, এড়িয়ে যাবে। এখন আর সে ছটফটে যুবক নয়। বয়স বেড়েছে, পরিণতও হয়েছে। তারপরেও নিজেকে ঠেকাতে পারেনি।
সোমদত্তা বলল, “এবার ফোটো দেখাও।”
হাতের খাম থেকে দুটো ফোটো বের করে এগিয়ে দিল মৈত্রেয়। দূর থেকে তোলা। খানিকটা অস্পষ্ট হলেও শিরীষকে চিনতে অসুবিধে হল না সোমদত্তার। সে হাঁটু পর্যন্ত ঢোলা একটা হাফপ্যান্ট পরে আছে। চোখে সানগ্লাস। পাশের অল্প বয়সি মেয়েটি পরেছে কালো টপ, থ্রি কোয়ার্টার প্যান্ট। দু’জনে দাঁড়িয়ে আছে একটা ধান খেতের সামনে। দু’জনের মাথাতেই টুপি। শিরীষ ডান হাত বাড়িয়ে দূরের কিছু দেখাচ্ছে। মেয়েটি শিরীষের কাঁধের কাছে মাথা নিয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ফোটো বেশি স্পষ্ট। দু’জনে আলপথ ধরে হেঁটে আসছে। মেয়েটি শিরীষের হাত ধরে আছে।
সোমদত্তার শরীর জুড়ে আগুন জ্বলে উঠল। আবার খুশিও হল। সন্তোষ উকিল এবার তাকে ফেরাতে পারবে না। এই ফোটো প্রমাণ করছে, ওই স্কাউন্ড্রেল মেয়ে কীভাবে শিরীষকে ঘিরে ফেলেছে। শিরীষকে হাত করে ওই জমি কেড়ে নেওয়ার আগে ব্যবস্থা নিতে হবে। এই ফোটো কাজে দেবে।
সোমদত্তা ঘুরে বসে মৈত্রেয়র হাত দুটো চেপে ধরল।
“কী বলে ধন্যবাদ জানাব।”
মৈত্রেয় নিচু গলায় বলল, “কিছু না বলে।”
মৈত্রেয়র হাত নিজের কোলের উপর টেনে নিল।
“আমি শিরীষকে হারাতে চাই না মৈত্রেয়। আমি তাকে চাপ দিতে চেয়েছিলাম যাতে সে চাষবাসের পাগলামি ছেড়ে দেয়। একটা সময়ের পর জানতে পারলাম, চাষবাসের জীবন নয়, সে অন্য কিছুর মোহে পড়েছে। প্রথমে আমাকে মেয়েটির খবর দেয় আমার এক পুরনো বান্ধবী। তার দাদা এগ্রিকালচার বিভাগের অফিসার। ব্লকে ব্লকে ঘুরে বেড়ায়। আমাদের ছাড়াছাড়ির খবর পেয়ে বলল, ‘এতদিন তোকে বলিনি, আমার দাদা কিন্তু বলেছিল, তোর বর একটি অল্পবয়সি মেয়ের সঙ্গে ব্লক অফিসে আসে।’ ধীরে ধীরে আরও জানতে পারি। তারপরেই আমি ডিভোর্স চাই।”
মৈত্রেয় চাপা গলায় বলে, “ভেরি আনফরচুনেট।”
সোমদত্তা আগুনজ্বলা চোখে ফিসফিস করে বলে, “আমি কি এতই বুড়িয়ে গিয়েছি মৈত্রেয়? আজও তো আমার ভিতরটা পুরুষমানুষের শরীর চায়, এখনও তো আমার যৌবন যায়নি। মাসের নির্দিষ্ট দিনে…”
মৈত্রেয় সোমদত্তার হাত চেপে ধরে বলে, “ছি ছি! কেন এসব ভাবছ?”
সোমদত্তা দাঁতে দাঁত ঘষে বলে, “তা হলে কেন ওই মেয়েটা জিতে গেল?”
মৈত্রেয় বলল, “সে তোমার বর জিততে দিচ্ছে তাই। বিশ্বাস করো সোমদত্তা, তুমি আজও আগের মতো সুন্দরী। আজও তোমাকে দেখে কেমন যেন হয়।”
সোমদত্তা হিসহিসিয়ে বলে, “মিথ্যে কথা বলছ। তোমরা পুরুষমানুষরা সব সমান। লায়ার…পার্ভার্ট…”
মৈত্রেয় একটু চুপ করে রইল। তারপর দু’হাত বাড়িয়ে সোমদত্তার মুখটা ধরল। নিজের মুখ এগিয়ে ফিসফিস করে বলল, “আমি প্রমাণ করে দিতে পারি সোমদত্তা। তোমার অনুমতি পেলে প্রমাণ করে দিতে পারি।”
সোমদত্তা হাত সরিয়ে দিয়ে বলল, “বেডরুমে চলো।”
নারী শরীরের ব্যাপারে শিরীষ যেমন শান্ত, মৈত্রেয় তেমন উন্মত্ত। আবার এমন হতে পারে, না পাওয়া প্রেয়সীকে শেষ যৌবনে পেয়ে যাবতীয় সংযম সরিয়ে রাখে সে। চুমুর মধ্যেই টেনে হেঁচড়ে খুলে দেয় সোমদত্তার হাউসকোট। শিরীষের কিনে দেওয়া হাউসকোটের একটা পাশ অল্প ছিঁড়েও যায়। নাইটির ঘেরাটোপ থেকে সোমদত্তাকে মুক্ত করতে মাত্র কয়েক মুহূর্ত নেয় মৈত্রেয়। খাটের উপর নগ্ন সোমদত্তাকে জড়িয়ে ধরে পাক মারে। ঘাড়ে, হাতে, স্তনে ঠোঁট দিয়ে কামড় বসায়। জড়ানো গলায় বলতে থাকে, “কোথায় গিয়েছিলে? আমাকে ফেলে কোথায় গিয়েছিলে এতদিন?”
সোমদত্তা অনুভব করে, এই উন্মত্ত আদর তার শরীর গ্রহণ করছে না। ভাল লাগছে না তার। সে সোমদত্তাকে যেন বলছে, “একে সরিয়ে দাও। ঠেলে সরিয়ে দাও একে।” না, এখনই সরিয়ে দেওয়া যাবে না। মৈত্রেয়র উত্তেজনা কমিয়ে দেওয়ার জন্য সোমদত্তা উদ্যোগী হল। তার একটা পা তুলে দিল মানুষটার গায়ের ওপর।
বুক পর্যন্ত চাদর ঢেকে শুয়ে আছে দুই রমণ-ক্লান্ত নারী-পুরুষ।
নারীটি সিলিং-এর দিকে তাকিয়ে ফিসফিস করে বলল, “একটা গোলমাল হবে। খুব বড় গোলমাল হবে। চাষবাসের নাম করে মেয়ে নিয়ে ফুর্তি করার জন্য গ্রামের মানুষ গোলমাল করবে। বাড়ি ভাঙচুর হবে। জিনিসপত্রে আগুন ধরবে। খেতের ধান তছনছ করা হবে। বেশ্যা মেয়েটাকে ন্যাংটো করে চুলের মুঠি ধরে হিড়হিড় করে মাঠ দিয়ে টেনে নিয়ে যাবে উন্মত্ত মানুষ। পুরুষমানুষটি যাতে পালিয়ে আসতে পারে, তার জন্য গাড়ি থাকবে, লোক থাকবে।”
নারীটি নগ্ন পুরুষের বুকে হাত দিয়ে বলল, “পারবে না?”
পুরুষটি নারীর ডান স্তনে হাত রেখে বলল, “একসময়ে পারতাম না, এখন পারব সোমদত্তা। অপমানের প্রতিশোধ নিতে হবে না?”