2 of 3

ভেড়ার পাল

ভেড়ার পাল

বুদ্ধিহীন প্রাণী হিসেবে এদেশে ভেড়ার পরিচিতি। মনে করা হয় যে, ভেড়ার নিজস্ব বিবেচনাবোধ নেই। তাকে যেভাবে চালানো হয় সেভাবেই চলে অথবা অন্যের অনুসরণ ছাড়া আর নিজস্ব কোনো গতি নেই। ভেড়ার দলের (পাল) মধ্যে একটি ভেড়া যেদিকে যায় অন্যরাও সেইদিকে চলে। মাঝে বিপদের সম্ভাবনা থাকলেও সে বিপদের ভাবনা তার মাথায় ঢোকে না।

একইভাবে একটি শ্রেণীর লোকের মধ্যে একজন যে পথ অবলম্বন করে অন্য সকলে কিছুমাত্র বিবেচনা না করে যদি সেই পথেই চলে তাহলে ঐ শ্রেণীর লোকগুলো ভেড়ার পাল নামে কথিত হয়।

গড্ডলিকা-প্রবাহ অর্থেও ভেড়ার পাল বুঝায়। গড্ডল বা গড্ডর সংস্কৃত শব্দ। এর অর্থ ভেড়া বা গাড়ল। গড্ডলিকা বা গড্ডরিকা অর্থ পালের মধ্যে সবার আগে থাকা ভেড়ি। প্রবাহ বা স্রোতে ভেড়া সাঁতরাতে না পারলেও অন্ধভাবে নেতৃত্বের অনুসরণ করে বলে চোখে দেখেও অগ্রবর্তী নেতা বা নেত্রীর অনুসরণে প্রবহমান জলে ঝাঁপ দিয়ে মরতে পারে। ভালোমন্দ না বুঝে এরূপ অনুসরণ করাকে ভেড়ার চাল বা গড্ডলিকা প্রবাহ বলা হয়। আবার এই ভেড়ার পালের মতো অভ্যাস যাদের তারা ভেড়ার পাল নামে অভিহিত। মূর্খের মতো পরের বুদ্ধিতে পরিচালিত ব্যক্তি আমাদের দেশে গাড়ল নামে পরিচিত যা সংস্কৃতে গড্ডল (ভেড়া)।

ভেড়ার গোয়ালে যদি আগুন লাগে তবে ভেড়া পালানোর চেষ্টা না করে শুধুই চিৎকার করতে থাকে। বিপদ-আপদে মানুষজন যদি প্রতিকারের উপায় চিন্তা না করে শুধু হৈ চৈ কোলাহল করে তবে সাধারণভাবে বলা হয় ভেড়ার গোয়ালে আগুন লেগেছে। এটিও ভেড়ার আচরণ-সংক্রান্ত একটি প্রবাদ।

যেখানে কোনো বিজ্ঞ বা বুদ্ধিমান লোক নেই তেমন স্থানে অল্পজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিও অভিজ্ঞ হিসেবে মাতব্বরি করার সুযোগ পায়। এ ধরনের অবস্থাকে আমাদের প্রবাদে বলে—ভেড়ার গোয়ালে বাছুর মোড়ল। এই প্রবাদের সাথে তুলনীয় প্রবাদ হলো—দূর্বা বনে খাটাশই (খটাশ, ভাম, গন্ধগোকুল, বনবিড়াল) বাঘ অথবা নিরস্তপাদপে দেশে এরণ্ডোহপি দ্রুমায়তে—অর্থাৎ যে দেশে বৃক্ষ নেই সেখানে এরণ্ডই (ভেরেণ্ডা বা ভেলনা) বৃক্ষ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *