1 of 2

ভিয়েতনামের ওপর কবিতা

ভিয়েতনামের ওপর কবিতা
নবারুণ ভট্টাচার্য

আমি অনেক ভেবে দেখেছি।
আজকে—এই সভায়
ভিয়েতনাম নিয়ে একটা কবিতা
আমার পক্ষে পড়া সম্ভব নয়
কারণ ব্যাপারটা অসম্ভব কঠিন
কীরকম দেখতে সেই কবিতা
তার হাতে কী থাকবে
সে অন্ধকারে দেখতে পায় কিনা
কতদিন তাকে জেলে থাকতে হয়েছে
আমি তার কিছুই
হদিশ করতে পারছি না

শব্দগুলো ভীষণ রক্তাক্ত, অসম্ভব বেপরোয়া
তার ওপরে অনেক শব্দ ঝলসে গেছে নাপামে
কিছু কিছু শব্দ উন্মাদ ও কালা হয়ে গেছে
কোনো কোনো শব্দকে হাত বেঁধে
হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে
অথচ এই শব্দগুলোকে সাজাতে না পারলে
ভিয়েতনামের কবিতা হবে না

শব্দ আমার কাছে চুইংগাম
মৃত বুদ্ধিজীবীর টেলিফোন নম্বর
মনোপলি দৈনিকের অশিক্ষিত
সম্পাদককে খুশি করার পাসপোর্ট বা প্রসাধন নয়
শব্দগুলোকে আমি গ্রেনেডের মতো
সাম্রাজ্যবাদী ক্যাবারের মধ্যে ছুড়ে দিতে চাই
শব্দগুলোকে আমি
রাস্তার বাচ্চাদের মধ্যে
আপেল আর বিস্কুটের মতো বিলিয়ে দিতে পারি
কিন্তু শব্দগুলো আমার হাতে চেটোর মধ্যে ফেটে যাচ্ছে
আমি লিখতে পারছি না

একটা জিনিস আমি বুঝেছি
একটা মিথ্যে কবিতা যত মিথ্যে কথা বলতে পারে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও তা পারে না
কিন্তু একটা সত্যি কবিতা
ঘুমন্ত শিশুদের সারারাত বিমান আক্রমণ
থেকে আড়াল করে

ভিয়েতনাম নিয়ে কবিতা
সারা পৃথিবী জুড়ে লেখা হতে পারে
সেই আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টায়
আমি অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত
সেই কবিতা লেখায়
ব্লাস্ট ফার্নেস, রকেট, ট্র্যাক্টর আর
পিয়ানো ব্যবহার করা হবে

বেশ, তবে সেই কবিতা লেখা হোক
আপনারা আসুন
(আমি কোনো শ্রমিক বা কৃষককে কিন্তু দেখতে পাচ্ছি না)
এখানে যারা নেই তারাও আসুক
থেকে সেই আশ্চর্য কবিতা লেখা যায়
আমি সেই কবিতার কথা একটু
ভাবতে পারি মাত্র

কবিতার শব্দগুলো দাউ দাউ করে জ্বলছে
ঝোড়ো হাওয়ায় ঝাণ্ডার মতো উড়ছে কবিতা আমার
আর ছাই হয়ে যাচ্ছে পেণ্টাগন
ফাসিস্তদের কুৎসিত মুখ
চেজ ম্যানহাটান ব্যাঙ্ক
চিলি, রোডেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়ার
কারাগার

আর সেই আশ্চর্য আলোর মধ্যে
অসংখ্য মানুষের উৎসবে
পৃথিবীর সমস্ত সাইগন
হো চি মিন নগর হয়ে উঠছে
সেই মুক্ত শহরে
প্রথম যে জিপটা ঢুকছে
তার মধ্যে কতগুলো বাচ্চাছেলে বসে
তারা আঁকা একটা ফ্ল্যাগ উড়ছে
—তাদের হাতে সাবমেশিনগান
দেখতে অনেকটা এরকম
ভিয়েতনামের ওপরে লেখা
আমাদের সেই আশ্চর্য কবিতা।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *