বয়স নেহাত কম নয় মহিলার। অন্তত বছর পঁয়তাল্লিশ তো হবেই। মুখেও ভাঙচুর এসেছে টুকটাক। তবু সাজগোজের কী বহর! চোখে গাঢ় আই লাইনার, ঠোঁটে চড়া লিপস্টিক, গালে থুতনিতে ব্লাশ অনের উৎকট ছোপ। কাঁধ ছোঁওয়া স্টেপ কাট চুলে সরু সরু সোনালি টান। দামি শিফন শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজটিও বিপজ্জনক রকমের সংক্ষিপ্ত। বোঝাই যায় খুকি সাজার চেষ্টায় মহিলার কোনও খামতি নেই।
মিতিন এক দৃষ্টে লক্ষ করছিল মহিলাকে। শুধু মেক আপই নয়, মহিলার ভাবভঙ্গিও। একটু যেন কেমন কেমন। অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়াই হাজির হয়েছে ভর সন্ধেবেলা। বলল কী যেন জরুরি দরকার, অথচ টানা পাঁচ মিনিট বসে আছে সোফায়, মুখে বাক্যিটি নেই। ঘাড় ঝুলিয়ে রং করা বুড়ো আঙুলের নখ খুঁটছে এক মনে।
নার্ভাস বোধ করছে কী? নাকি সংকোচ? পোশাকের জেল্লাই বলে দিচ্ছে, মহিলা যথেষ্ট পয়সাওয়ালা ঘরের। এই ধরনের মহিলারা যে যে কারণে পেশাদার গোয়েন্দাদের দ্বারস্থ হয়, তা মোটামুটি জানে মিতিন। হয় বর বুড়ো বয়সে কারও সঙ্গে লটঘট চালাচ্ছে, তার পিছনে ফেউ লাগাতে চায়। নয়তো নিজেই কোনও কেচ্ছা বাধিয়ে ফেঁসে গেছে, ব্ল্যাকমেলারের পাল্লায় পড়ে হাঁসফাঁস দশা, উদ্ধার পেতে শরণাপন্ন হয়েছে মিতিনদের। এর কেসটা কী? এক নম্বর? না দু’নম্বর?
মিতিন অবশ্য খোঁচাখুঁচিতে গেল না। মহিলার আড় ভাঙানোর জন্য নরম গলায় বলল, চা চলবে নাকি একটু?
মহিলা মুখ তুলেছে। চোখ পিটপিট করে বলল, যদি হয়… লিকার টি।
— উইথ সুগার?
— হ্যাঁ। এক চামচ।
উঠে আরতিকে নির্দেশ দিয়ে সোফায় ফিরল মিতিন। বসতে বসতে বলল, আপনার নামটা কিন্তু এখনও জানা হয়নি ম্যাডাম।
— বলিনি, না? মহিলা ফ্যালফ্যাল তাকাল, আমি লাবণ্য। লাবণ্য মজুমদার।
মহিলার দৃষ্টি যেন ঠিক স্বাভাবিক নয়। কেমন ঘোলাটে ঘোলাটে। উদ্ভ্রান্ত। মিতিন ফের জিজ্ঞেস করল, কাছাকাছি কোথাও থাকেন কি?
— খুব দূরে নয়। গড়িয়াহাটে।
— গড়িয়াহাটের কোথায়?
— এমারেল্ড টাওয়ার। গরচায় ঢুকেই যে দশ তলা বিল্ডিংটা…
— যে বাড়িতে বিখ্যাত গায়ক অরুণ চক্রবর্তী থাকেন?
— হ্যাঁ হ্যাঁ। উনি ফিফ্থ ফ্লোরে। আমরা আট তলায়।
— আমরা মানে?
— আমি, আর আমার হাজব্যাণ্ড।
— আপনাদের ছেলেমেয়ে?
— একটি। মেয়ে। বিয়ে হয়ে গেছে। এমারেল্ড টাওয়ারের সেকেণ্ড ফ্লোরে আমাদের আর একটা ফ্ল্যাট আছে। মেয়ে-জামাই সেখানেই থাকে।
— বেশ। মিতিন সোফায় হেলান দিল, এ বার বলুন আপনার সমস্যাটা কী?
কথায় কথায় বেশ খানিকটা সহজ হয়েছিল লাবণ্য, আবার চুপ মেরে গেছে। তাকাচ্ছে এ-দিক ও-দিক। হঠাৎই চোখের মণি স্থির করে বলল, আমার খুব বিপদ।
মিতিন মনে মনে বলল, সে আর বলতে! মুখে বলল, কী হয়েছে?
— মাই লাইফ ইজ ইন ডেঞ্জার। আপনি আমাকে বাঁচান, প্লিজ। সামওয়ান ইজ ট্রায়িং টু কিল মি।
— মেরে ফেলতে চাইছে? মিতিনের চোখ সরু, কেন?
— জানি না। তবে আমাকে স্লো-পয়জনিং করা হচ্ছে। আমি টের পাচ্ছি।
— কী ভাবে?
— আমার স্কিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেখুন, দেখুন…। লাবণ্য উত্তেজিত মুখে হাত দুটো বাড়িয়ে দিল, কী রকম র্যাশ বেরিয়েছে দেখুন। আরও অনেক জায়গায় আছে। পায়ে, পেটে, বুকে…। বাদামি বাদামি ছোপও পড়ছে। ঘাড়ে, গলায়, কপালে… অথচ তিন চার মাস আগেও আমার স্কিন কত সুন্দর ছিল। হঠাৎ কেন এ সব হচ্ছে, বলুন?
ঝুঁকে ভাল ভাবে নিরীক্ষণ করল মিতিন। লাবণ্যর হাতে শুকনো হামের মতো গুঁড়ি গুঁড়ি দানা ফুটেছে বটে, কিন্তু প্রসাধিত মুখমণ্ডলে ছাপছুপ খুঁজে পাওয়া দায়। মহিলা ম্যানিয়ায় ভুগছে না তো? অতি মাত্রায় রূপ সচেতন মধ্যবয়সী মহিলারা চামড়া টামড়ার ব্যাপারে বড্ড বেশি স্পর্শকাতর থাকে। তিলকে তাল করে ফেলে অনায়াসে। হাল্কা গলায় মিতিন বলল, শুধু এই সব দেখেই আপনি ধরে নিলেন আপনাকে স্লো পয়জনিং করা হচ্ছে?
— আরও সিম্পটম আছে। কিছু খেতে ইচ্ছে করে না। কেমন একটা বমি বমি ভাব। ওয়েট লুজ করছি। চোখ দুটো হঠাৎ হঠাৎ খুব চুলকোয়। মাঝে মাঝেই জল কাটে।
— তা এ সব তো অনেক কারণেই হতে পারে ম্যাডাম। হঠাৎ বিষের চিন্তাটা আপনার মাথায় এল কেন?
— কারণ, আমি জানি। কিছু দিন আগে একটা বইতে পড়েছি। ওখানে আর্সেনিক পয়জনিংয়ের যা যা উপসর্গ লেখা আছে, সব কটাই আমার সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
ও, এই ব্যাপার? পুঁথি পড়ে ভয়? মিতিনের ঠোঁটের কোণে চিলতে হাসি ফুটে উঠল।
অমনি লাবণ্যর নজরে পড়েছে হাসিটা। থরথর উত্তেজনা নিবে গেল দুপ করে। মুখ ফ্যাকাশে সহসা। স্তিমিত স্বরে বলল, বুঝেছি। আপনি বিশ্বাস করছেন না। কেউই করে না। এ যে আমি কী জ্বালায় পড়েছি…! আরতি চা এনেছে। ট্রে থেকে কাপ ডিশ তুলে লাবণ্যকে বাড়িয়ে দিল মিতিন। হাতে নিল লাবণ্য, তবে ডিশের ওপর কাপ কাঁপছে তিরতির। মিতিন মৃদু স্বরে বলল, এত নার্ভাস হচ্ছেন কেন মিসেস মজুমদার? বিষ যে আদৌ আপনাকে দেওয়া হচ্ছে, সে ব্যাপারে আগে ডেফিনিট হন। ডাক্তার দেখিয়েছেন?
— আমাদের ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান দেখেছেন। তাঁর মতে মুখ-টুখে এ রকম পিগমেন্টেশন নাকি এই বয়সে হয়েই থাকে। র্যাশগুলোও নাকি জাস্ট স্কিন ডিজিজ। কোনও কসমেটিক্স থেকে অ্যালার্জি। একটা মলমও দিয়েছিলেন, লাগিয়েছি। কিস্যু কাজ হয়নি। পরশু অয়েন্টমেন্টটা উনি বদলে দিলেন। লাবণ্যর গলা ফের চড়তে শুরু করেছে। সেন্টার টেবিলে নামিয়ে রাখল চা। রাগ রাগ ভঙ্গিতে বলল, ভাবুন… উনি আমার ভমিটিং টেণ্ডেন্সিটাকেও পাত্তা দিতে নারাজ। একটা লিভার টনিক লিখে দিয়েই তাঁর দায়িত্ব শেষ। আর চোখের ব্যাপারটা তো উনি শুনলেনই না। আই স্পেশালিস্ট দেখাতে বললেন।
— অর্থাৎ, ডাক্তারবাবু পয়জনিংয়ের সম্ভাবনাটা মানছেন না। তাই তো?
— হুম।
— কিন্তু ডাক্তারবাবুর কথায় আপনার আস্থা নেই!
— হুম।
— তা হলে সেকেণ্ড কাউকে দেখাচ্ছেন না কেন?
— কার কাছে যাই বলুন তো? কে বিশ্বাস করবে? বাড়ির লোকরাই যেখানে হেসে উড়িয়ে দিচ্ছে…
— বাড়ির লোক মানে কে? হাজব্যাণ্ড?
— মেয়ে জামাইও আছে। সবার ধারণা, এটা আমার একটা বাতিক। অথচ আমি তো বুঝছি কী ভাবে আমাকে…
মহিলার গলা ধরে এসেছে। নাহ্, এর মাথা থেকে বিষের ভূত নামানো বেশ কঠিন এখন। দু’এক সেকেণ্ড ভেবে নিয়ে মিতিন গুছিয়ে বসল। মুখে একটা ভারিক্কি ভাব ফুটিয়ে বলল, ঠিক আছে, ধরে নিলাম আপনিই ঠিক। কিন্তু পয়জনিং তো ছেলেখেলা নয়। এর সঙ্গে জীবন মৃত্যু জড়িয়ে আছে। অতএব এর একটা কার্যকারণ থাকবেই। প্রথমে প্রশ্ন আসবে, কে বিষ দিচ্ছে? তার পর দেখতে হবে কেন দিচ্ছে। এবং সব শেষে গিয়ে বার করতে হবে, কী ভাবে দেওয়া হচ্ছে। তাই তো?
লাবণ্য ঢক করে ঘাড় নাড়ল।
— আগে তা হলে বলুন কাকে আপনার সন্দেহ হয়?
লাবণ্য চুপ। ঢোক গিলছে।
— কী হল? বলুন?
— সম্ভবত আ আ আমার…। লাবণ্য ফের ঢোক গিলল, আমার হাজব্যাণ্ড।
মিতিন খুব একটা চমকাল না। এ রকমই উত্তর সে আশা করেছিল। নিরুত্তাপ স্বরে বলল, কিন্তু কেন তিনি আপনাকে বিষ দেবেন?
— তা আমি জানি না।
— আপনি মারা গেলে ফিনানশিয়াল ব্যাপারে তাঁর কি লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা আছে?
— নাহ্। তার নিজেরই অনেক টাকা। আমি তো প্লেন হাউস ওয়াইফ।
— আপনার বাপের বাড়ির তরফের কোনও সম্পত্তি…?
— নেই। একখানা আধভাঙা বাড়ি আছে সোদপুরে। ভাই থাকে। ও বাড়ি বেচলেও আমার ভাগে ক’পয়সাই বা আসবে!
— হুম। …আপনার হাজব্যাণ্ড কি রিসেন্টলি কোনও মোটা ইনশিওরেন্স করিয়েছেন আপনার নামে?
— না।
— তাঁর কি সম্প্রতি অন্য কারওর সঙ্গে কোনও সম্পর্ক…?
— মনে হয় না। অন্তত আমার জানা নেই।
— অর্থাৎ অ্যাপারেন্টলি তাঁকে সন্দেহ করার কোনও কারণ নেই, অথচ আপনি তাঁকেই সাসপেক্ট করছেন? কেন?
— ইদানীং আমার প্রতি ওর ব্যবহারটা কেমন বদলে গেছে।
— কী রকম?
— ফ্র্যাংকলি বলব?
— অবশ্যই।
— আমি আর অনিমেষ একেবারে ডিফারেন্ট টাইপের। আমি মানুষের সঙ্গে মিশতে ভালবাসি। ক্লাব টাবে যাই। বন্ধু টন্ধুদের সঙ্গে হইহল্লা করি। আর অনিমেষ কাজ ছাড়া কিছু বোঝে না। সে আমার লাইফস্টাইল পছন্দ করে না, আমারও তার সারা ক্ষণ কাজ নিয়ে থাকাটা ভাল্লাগে না। বেঙ্গালুরুতে থাকতে তো আমাদের এই নিয়ে রেগুলার ফাটাফাটি হত। ভয়ংকর তেতো হয়ে গিয়েছিল সম্পর্কটা। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে রুমকির, মানে আমাদের মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর থেকে অনিমেষ যেন আমার প্রতি বেশি মনোযোগী হয়ে উঠেছে। ভীষণ সফ্টলি কথা বলে, কখনও চটে না, ঝগড়া তো নেইই প্রায়… এগুলোই কি অস্বাভাবিক নয়? নিশ্চয়ই তলে তলে কোনও মতলব ভেঁজেছে, নইলে হঠাৎ এ রকম আচরণ করবে কেন?
মহিলার গলা ধরে এসেছে। নাহ্, এর মাথা থেকে বিষের ভূত নামানো বেশ কঠিন এখন। দু’এক সেকেণ্ড ভেবে নিয়ে মিতিন গুছিয়ে বসল। মুখে একটা ভারিক্কি ভাব ফুটিয়ে বলল, ঠিক আছে, ধরে নিলাম আপনিই ঠিক। কিন্তু পয়জনিং তো ছেলেখেলা নয়। এর সঙ্গে জীবন মৃত্যু জড়িয়ে আছে। অতএব এর একটা কার্যকারণ থাকবেই। প্রথমে প্রশ্ন আসবে, কে বিষ দিচ্ছে? তার পর দেখতে হবে কেন দিচ্ছে। এবং সব শেষে গিয়ে বার করতে হবে, কী ভাবে দেওয়া হচ্ছে। তাই তো?
প্রসঙ্গ ঘোরানোর জন্য মিতিন আলগা কৌতূহল দেখাল, আপনার হাজব্যাণ্ড কী করেন?
— সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। বছর ছয়েক হল বেঙ্গালুরুর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় এসে ব্যবসা করছে। ওই লাইনেই। সল্টলেকে অফিস খুলেছে।
— কেমন চলছে বিজনেস?
— ভালই তো। মাত্র চার বছরের মধ্যে সেকেণ্ড ফ্ল্যাটটা কিনে ফেলল। তিন তলার ছোট অ্যাপার্টমেন্টটা ছেড়ে আমরা আট তলায় উঠে এলাম…
— নীচেরটা বুঝি মেয়ে জামাইকে যৌতুক দিলেন?
— ঠিক তা নয়। ফাঁকা পড়ে ছিল ফ্ল্যাটটা… ওরা থাকছে…
— জামাইয়ের নিজস্ব বাড়িঘর…?
— ওদের জয়েন্ট ফ্যামিলি। পাইকপাড়ায়। ভাবলাম রুমকির হয়তো ওখানে মানিয়ে নিতে অসুবিধে হবে… রুমকির স্কুলটাও এখান থেকে কাছে হয়…
— মেয়ে জামাইয়ের সঙ্গে আপনার রিলেশন কেমন?
— নর্মাল। রুমকি তো সময় পেলেই ওপরে চলে আসে।
— জামাই কী করে?
— তার কারবার শেয়ার টেয়ার নিয়ে।
— ও। মিতিন দেওয়ালঘড়িতে ঝলক তাকিয়ে নিয়ে মূল প্রশ্নে এল, এ বার বলুন, আমি কী ভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?
— কাইণ্ডলি এক বার আমার ফ্ল্যাটে আসুন। লাবণ্যর স্বর ফের কাতর, মিট অনিমেষ।
— তাতে কী লাভ?
— একটু যাচাই করে দেখবেন। আর আপনার মতো নামী ডিটেকটিভকে দেখলে অনিমেষও নিশ্চয়ই সমঝে যাবে। হোপফুলি, আমি বিপদ থেকে মুক্তি পাব।
নেহাতই ছেলেমানুষি চিন্তা। মিতিন হাসবে, না কাঁদবে? তবু পেশার খাতিরে গাম্ভীর্যের মুখোশটা তো রাখতেই হয়। ঠোঁট টিপে মিতিন বলল, সে দেখা যাবে’খন। তার আগে আপনি বরং একটা কাজ করুন। কোনও একটা প্যাথলজিকাল ল্যাবে গিয়ে রক্তটা পরীক্ষা করান। আই মিন, ব্লাডে আর্সেনিকের মাত্রাটা। রিপোর্ট যদি অ্যালার্মিং হয়, তখন তো আমি আছিই।
লাবণ্যর চোখ চকচক করে উঠল, দারুণ একটা অ্যাডভাইস দিয়েছেন তো। গুড গুড।
— হ্যাঁ, এতে আপনার সংশয়েরও নিরসন হবে।
— দেখেছেন তো এত সহজ ব্যাপারটা আমার মাথায় আসেনি। ভাগ্যিস আপনার কাছে এসেছিলাম। লাবণ্য উল্লসিত মুখে সুদৃশ্য ভ্যানিটিব্যাগের চেন খুলছে। একটা খাম এগিয়ে দিয়ে বলল, এটা রাখুন।
মিতিন ভুরু কুঁচকোল, কী আছে এতে?
— আপনার কনসাল্টেশন ফি।
— সে কী? আমি তো কেস এখনও হাতে নিইনি!
— সো হোয়াট? আপনার মূল্যবান সময় তো নষ্ট করেছেন।
— তবু…
— কোনও তবু নেই। এটা আপনাকে নিতেই হবে। প্রায় জোর করে মিতিনের হাতে খামটা গুঁজে দিল লাবণ্য। উঠে দাঁড়িয়েছে, আমি কিন্তু আপনার কাছে আবার শনিবার আসছি। এই সময়ে।
শনিবার বুমবুমকে নিয়ে হ্যারি পটার দেখতে যেতে হবে। ছেলেকে কথা দিয়েছে মিতিন। ক্যানসেল করলে বুমবুম তুমুল হল্লা জুড়বে। একটু ভেবে নিয়ে মিতিন বলল, আপনি যদি রোববার… সকালের দিকে…
— না, না। অনিমেষ এখন ট্যুরে, শনিবার রাতে ফিরবে। তার আগেই আমি আপনার কাছে আসতে চাই। প্লিজ… শনিবার ইভনিংটা আপনি আমার জন্য ফ্রি রাখুন।
লাবণ্যর অনুনয়ে দোটানায় পড়ল মিতিন। আবার একটু ভেবে নিয়ে বলল, ঠিক আছে, আসুন। তার আগে কিন্তু অবশ্যই ব্লাড টেস্টটা… লাবণ্য চলে যাওয়ার পর মিতিন খুলল খামটা। ন’খানা পাঁচশো টাকার নোট, পাঁচটা একশো। করকরে নতুন। সম্ভবত আসার পথেই এ টি এম থেকে তোলা। বেচারা বরটার কী কপাল! তারই অর্থ ধ্বংস করে তার পিছনে কাঠি দেওয়ার তোড়জোড় চালাচ্ছে ম্যানিয়াক বউ! রাতে খেতে বসে পার্থকে লাবণ্যর গল্প শোনাচ্ছিল মিতিন। পার্থ তো বেজায় মজা পেয়েছে। ঝটিতি ঘোষণা করে দিল, শনিবার প্রেস টেস বন্ধ করে চারটের মধ্যে বাড়ি ঢুকে যাবে। ছিটিয়াল, পতিবিদ্বেষী মহিলাটিকে দর্শনের সুযোগ সে ছাড়বেই না। কিন্তু শনিবারের আগেই জোর চমক। শুক্রবার রাতে টেলিভিশনের বাংলা নিউজ চ্যানেলগুলোয় ভেসে উঠল এক দুঃসংবাদ। মধ্যবয়সী মহিলার অস্বাভাবিক মৃত্যু! গড়িয়াহাটের এমারেল্ড টাওয়ারের আট তলায়! মিতিন স্তম্ভিত। এমন ধাক্কা সে আগে কখনও খায়নি।