বিন্দেদূতী
শ্রীমদ্ভাগবতে রাধার কোনো উল্লেখ না থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বুঝা যায় যে, শ্রীকৃষ্ণের প্রেমিকা হিসেবে রাধার কল্পনা খুব বেশি প্রাচীন নয়। মনে হয় সেন আমলের আগে রাধার অস্তিত্ব কল্পনা করা হয়নি। তবে শ্রীমদ্ভাগবতে কৃষ্ণের এক সখির উল্লেখ পাওয়া যায়।
অনেক পরে লেখা ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ, দেবী ভাগবত ও পদ্মপুরাণে রাধার সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, গোলোকধামে শ্রীকৃষ্ণের বামপাশ থেকে রাধা উদ্ভূত হয়ে কৃষ্ণের পূজা করতে আরম্ভ করেন। তিনি নবযৌবনসম্পন্না ষোড়শী ও শ্রীকৃষ্ণের প্রাণেশ্বরী। রাজা, রাজনীতিবিদ এবং বীর শ্রীকৃষ্ণকে প্রেমের অবতারে পরিণত করা হয়েছে অভিসার, পরকীয়া এবং গল্প-কাহিনীর মাধ্যমে। সম্ভবত তখনই রাধার উদ্ভব। সেখানে আবার ধর্মীয় গাম্ভীর্য আনতে দর্শনের উপস্থাপনাও লক্ষণীয়। রা অর্থে লাভ করা অর্থাৎ মুক্তিলাভ করা এবং ধা অর্থে ধাবমান হওয়া। মুক্তির জন্য ঈশ্বরের দিকে ধাবমান হওয়াই রাধা নামের সার্থকতা।
যাহোক, লোকায়ত প্রেমকাব্যের কৃষ্ণপ্রেমিকা গোপবালা রাধা ছিলেন বৃষভানু গোপের ঔরসে জাত কলাবতীর কন্যা। বার বছর বয়সে তার বিয়ে হয় আয়ান ঘোষের সাথে। আয়ান ঘোষ হলেন শ্রীকৃষ্ণের পালক-মাতা যশোদার ভাই। আয়ানের কাছে রাধা তার ছায়া রেখে কৃষ্ণের সাথে অভিসারে সচেষ্ট থাকতেন। তাদের মিলনের জন্য অন্যতম প্রধান সাহায্যকারী ছিলেন বৃন্দা বা বিন্দে নামে রাধার সহচরী। রাধার কথা কৃষ্ণকে এবং কৃষ্ণের কথা রাধার কাছে পৌঁছানোর জন্য তার উৎসাহের অন্ত ছিল না। রাধা-কৃষ্ণের মিলনদূত হিসেবেই কাহিনীতে তার পরিচিতি।
বিন্দেদূতীর কর্মকাণ্ড আমাদের সমাজে পরিচিত অনেকের কর্মকাণ্ডের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ বলে কেউ কারো কথা পরস্পরের মধ্যে চালাচালি করলে তাকে বৃন্দাদূতী বা বিন্দেদূতী হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়।