পরের ধনে পোদ্দারি
পোদ্দার অর্থ খাজাঞ্চি (তুর্কি শব্দ) বা ধনরক্ষক বা ব্যাংকার। সোনা-রূপার পেশাদারি কেনাবেচা, বন্ধক ইত্যাদি তার সাধারণ কাজ। অধিকাংশ সুবর্ণবণিক সম্প্রদায়ের পোদ্দাররা এক সময় গ্রামীণ মানুষকে টাকা পয়সা ধার দিতেন। মধ্যযুগে এদের কাজ মূলত ব্যাংকিং এর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ফারসি পোদ্দার শব্দ হিন্দি ফোতাহ্ শব্দ থেকে এসেছে বলে মনে হয়। কেউ কেউ মনে করেন ফোতাহ্ শব্দ এসেছে সিন্ধুদেশ থেকে। হিন্দিতে এর অর্থ শস্যের থলে। সিন্ধুদেশে এর অর্থ ফোতা বা পরিধানের বস্ত্র। আরবিতে শব্দটি অনুপস্থিত। অথচ কিছু ভাষাবিদ্ আজো ভুলের কবলে।
আফগান আমলে (১৫৩৯-১৫৭৫ খ্রি.) ফোতাদার, খাজাঞ্চি এবং খাজনাদার ছিলেন রাজস্ব-বিষয়ক সরকারি কর্মচারী। মোগল আমলে পোদ্দারের কাজ ছিল সোনা বা রূপা খাঁটি কিনা তা পরীক্ষা করা, এগুলোর ওজন ও মূল্যমান নিরূপণ করা এবং টাকা বদল ও টাকা জমা রাখার কাজে ট্রেজারির কেরানি হিসেবে দায়িত্ব পালন করা। এদেশের সাহাদের মধ্যে পোদ্দার পদবির প্রচলন বেশি দেখা যায়। কবিকঙ্কণের ভাষায় —
পোতদার হইল যম টাকায় আড়াই আনা কম
পাই লভ্য লয় দিন প্ৰতি।
পোদ্দার তার পোদ্দারির কাজে যে ধন ব্যবহার করে তা তার নিজস্ব নয়। ব্যাংকার বা বন্ধকসূত্রে সে অন্যের গচ্ছিত আমানত থেকে সুদের ব্যবসা করতো। সেই অর্থেই আবার তার সোনারূপার ব্যবসা ও ঋণদানের কাজ। এভাবেই অন্যের অর্থে তার ভাগ্যের উন্নতি ও বাড়বাড়ন্ত। এদেশে প্রবাদে বলা হয়—
পরের ধনে পোদ্দারগিরি
লোকে বলে লক্ষ্মীশ্বরী।
পরের ধনে ধনী কেউ যদি সমাজে উঁচু চাল দেখায় তবে আলোচ্য প্রবাদটি প্রযুক্ত হয়ে থাকে।