2 of 3

পরশুরামের কুঠার

পরশুরামের কুঠার

পরশুরামের কুঠার হলো সর্বসংহারক অস্ত্র। এই অস্ত্র দিয়ে নিষ্ঠুরভাবে একুশবার ক্ষত্রিয়কুল ধ্বংস করে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিলেন পরশুরাম।

পরশু শব্দের অর্থ কুঠার বা কুড়াল। পরশুরাম হলেন বিষ্ণুর ষষ্ঠ অবতার কুঠারধারী রাম। পৌরাণিক উপাখ্যান হলো—

মগধদেশে ভাগরথী নদীর উপনদী কৌশিকীর তীরে ভোজকট নামে এক নগর ছিল। সেখানকার রাজা ছিলেন গাধি। এই গাধির পুত্র বিশ্বামিত্র এবং কন্যা সত্যবতী। মহর্ষি ঋচিকের সাথে সত্যবতীর বিয়ে হয়। মহর্ষি ভৃগুর পুত্র এই ঋচিক। তার পুত্র ঋষি জমদগ্নি। বিদর্ভরাজ প্রসেনজিতের মেয়ে রেণুকার সাথে জমদগ্নির বিয়ে হয়। রেণুকার পাঁচপুত্র যথাক্রমে রুষশ্বান, সুসেন, বসু, বিশ্বাবসু ও রাম (পরশুরাম)।

একদিন নদীর ঘাটে একাকী স্নান করতে গিয়ে রেণুকা দেখলেন, রাজা চিত্ররথ সস্ত্রীক অপ্সরাদের সাথে মিলে জলবিহার করছেন। এতে তিনি কামাতুর হয়ে পড়েন। পুত্ররা গেছেন বনে ফলমূল সংগ্রহ করতে, জমদগ্নিও বাইরে। জমদগ্নি বাড়ি ফিরে স্ত্রীর কামাতুর হওয়ার ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন। পুত্রদের বললেন মাতৃবধ করতে। প্রথম চার পুত্র রাজি না হওয়ায় কনিষ্ঠ রামকে তিনি আদেশ করলেন। রাম পিতৃআজ্ঞা শিরোধার্য করে পরশু বা কুঠার দিয়ে মায়ের শির েদ করেন। খুশি হয়ে জমদগ্নি পুত্রকে বর দিতে চাইলে তিনি মায়ের পুনর্জীবন কামনা করলেন। রেণুকা জীবিত হলেন। কিন্তু মাতৃহত্যার মহাপাপে বহুকাল রামের হাতে আটকে থাকলো পরশু। এজন্য এই রামের নাম হলো পরশুরাম অর্থাৎ কুঠারধারী রাম।

ক্ষত্রিয়রাজ কার্তবীর্য অন্যায়ভাবে পরশুরামের পিতা জমদগ্নিকে হত্যা করেছিলেন। পরশুরাম এ কারণে পৃথিবীকে ক্ষত্রিয়শূন্য করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তার কঠোর কুঠার দিয়ে তিনি একুশবার পৃথিবী থেকে ক্ষত্রিয়দের বিনাশ করেন। সমন্তপঞ্চক (কুরুক্ষেত্র) নামক স্থানে ক্ষত্রিয়দের রক্তে পাঁচটি হ্রদ সৃষ্টি করে সেই রক্তে পিতৃতর্পণ করেছিলেন তিনি নৃশংসভাবে প্রতিশোধ গ্রহণের অস্ত্রকে পরশুরামের কুঠারের সাথে তুলনা করা হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *