নামরহস্য

নামরহস্য

আমার জ্ঞাতিভাই গজানন গাঙ্গুলী ফোঁত করে নাক দিয়ে আওয়াজ করলেন একটা। ঘোঁত-ঘোঁত করে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ছাগলের কী-কী নাম হতে পারে হে প্যালারাম?

এমন একটা বেয়াড়া প্রশ্নে আমি ঘাবড়ে গেলুম। ছাগলের কী নাম হতে পারে এ-নিয়ে আমি কখনও ভাবিনি। পরীক্ষায় এরকম কোশ্চেন কোনওদিন আসেনি।

আমি ঘাড়-টাড় চুলকে বললাম, ছাগলের নাম কী আর হবে। যাঁরা বাঁদর নাচায়, তাদের সঙ্গে তো প্রায়ই একটা ছাগল থাকে দেখি। তারা তাকে গঙ্গারাম বলে ডাকে। আমার ধারণা, সব ছাগলেরই নাম গঙ্গারাম।

বিকট মুখ করে গজাননদা বললেন, তোমার মুণ্ডু। নিজের নাম প্যালারাম, তাই গঙ্গারাম ছাড়া আর কীই বা ভাববে তুমি? অথচ তুমি না পরীক্ষায় বাংলায় লেটার পেয়েছিলে?

বাংলায় লেটার পাওয়াটা খুব অন্যায় হয়ে গেছে আমার, স্বীকার করতে হল সেকথা। ছাগলের নাম কী কী হতে পারে, এ যার জানা নেই, তার লেটার পাওয়ার এক্তিয়ার নেই কোনও।

আমার খুব অপমানবোধ হল। বিরক্ত হয়ে বললুম, ছাগলের কী আবার নাম হবে? রুমকি, টুমকি, মেনি—

যেই মেনি বলেছি, গজাননদা অমনি ফ্যাঁচ করে উঠলেন।

 মেনি? তোমার মাথা! মেনি তো একচেটে বেড়ালের নাম, ছাগলের হবে কী করে? বোর্ডের উচিত, তোমার লেটারটা কেটে দেওয়া।

এবার আমি চটে গিয়ে বললুম, তা হলে আপনিই বলুন না, ছাগলের কী কী নাম হয়?

 আমিই যদি জানব, তাহলে তোমায় জিজ্ঞেস করব কেন হে? ভেবেছিলাম তোমার একটু বুদ্ধিশুদ্ধি আছে, হায়ার সেকেন্ডারি পাশ করেছ, তুমি একটা বাতলে দিতে পারবে। এখন দেখছি, তোমার মাথায় স্রেফ ড্রায়েড কাউডাং-অর্থাৎ কিনা খুঁটে।

বৌদি বাড়ির ভেতরে তালের বড়া ভাজছেন, বাতাসে তার প্রাণকাড়া গন্ধ আসছে। বৌদি আবার বলে গেছেন, দুটো তালের বড়া খেয়ে যেয়ো প্যালারাম, তালক্ষীরও করে রেখেছি। এসব জটিল ব্যাপার না থাকলে অনেক আগেই উঠে পড়তুম আমি-ছাগলের নাম নিয়ে এ অপমান কে সহ্য করত এতক্ষণ!

আমি বললুম, আপনিই বা এ-নিয়ে এত ঘাবড়াচ্ছেন কেন? ছাগলের নাম যা-খুশি হোক না, আপনার তাতে কী! আপনি তো আর ছাগল পোষেন না।

 গজাননদা থেমে থেকে একটা আধপোড়া দেশলাইয়ের কাঠি কুড়িয়ে নিয়ে চটপট বাঁ কানটা চুলকে নিলেন। তারপর মুখ বাঁকা করে বললেন, ঘাবড়াচ্ছি কেন? আরে–টু হান্ড্রেড অ্যান্ড ফিফটি রুপিজ।

অ্যাঁ!

অ্যাঁ আবার কী! আড়াইশো টাকা। ক্যাশ।

কার টাকা? কিসের ক্যাশ?–আমি কাকের মতো হাঁ করে চেয়ে রইলুম গজাননদার দিকে।

অমন জগদ্দল একটা হাঁ করেছ কী বলে?–গজাননদা এবার ডানদিকের কানটা চুলকোতে লাগলেন;–টাকা আমার ব্রহ্মময়ী-মাসিমার। তাঁরই ক্যাশ।

তালের বড়ার সঙ্গে বেশ উৎসাহ বোধ করতে করতে আমি ঘন হয়ে বসলুম।

কিছু বুঝতে পারছি না, খুলে বলুন।

ঘোঁত-ঘোঁত করতে করতে গজাননদা সবটা বিশদ করলেন।

মেসোমশাই অনেক টাকা রেখে অনেক দিন আগে স্বর্গে গেছেন। ব্রহ্মময়ী-মাসিমা সেই টাকা দিয়ে এতদিন তীর্থটীর্থ করছিলেন। মেসোমশাই নামকরা ব্রাহ্মণপণ্ডিত ছিলেন, অনেক শিষ্যও তাঁর ছিল। সেই শিষ্যদের একজন হালে মাসিমাকে একটা ছাগলছানা দিয়ে গেছেন প্রণামী হিসেবে।

এখন মাসিমার তো ছেলেপুলে নেই–এই ছাগলছানাটাকে ভীষণ ভালোবেসেছেন তিনি। এর জন্যে স্পেশ্যাল ছোলাকলা বরাদ্দ, মায় ছোট্ট একটা খাট–তাতে নেটের মশারি পর্যন্ত। কিন্তু মুস্কিল হল, এমন আদরের ছাগলের জন্যে কোনও নামই তিনি ঠিক করতে পারছেন না। এর এমন একটা নাম চাই যে, শুনলে কান জুড়িয়ে যাবে, প্রাণ ঠাণ্ডা হবে। তাই ব্ৰহ্মময়ী-মাসিমা ডিক্লেয়ার করেছেন, তাঁর ছাগলের জন্যে নাম যে ঠিক করে দেবে–তাকে তিনি আড়াইশো টাকা প্রাইজ দেবেন। ক্যাশ।

ছাগলের এই আপ্যায়ন শুনে পিত্তি জ্বলে গেল আমার। মনে-মনে ভাবলুম, শ্রীমান প্যালারাম না হয়ে ব্রহ্মময়ীর ছাগল হতে পারলে জম্মটা সার্থক হত।

গজাননদা বললেন, বুঝলে, সেই জন্যেই

বললুম, ওপন কম্পিটিশন গজাননদা?

উঁহু। ঠাণ্ডা জল ছিটিয়ে গজাননদা বললেন, তুমি যদি প্রাইজটা মেরে দেবার তালে থাকো, তা হলে সে গুড়ে বালি। কম্পিটিশন মাসিমার বোনপোদের মধ্যে স্ট্রিকটলি রেস্ট্রিকটেড। আর তাও কি কম নাকি? ব্ৰহ্মময়ী-মাসিমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার মা আর বাকি পাঁচজনের ছেলেমেয়ে ফিট বত্রিশজন! জানো তো, আমার দুবোনের বিয়ে হয়ে গেছে, তাদের বলেছিলুম যে, তোরা পার্টিসিপেট করিসনি–তা হলে দুজন কম্পিটিটর কম হয়, তা তারা বললে, আড়াইশো টাকা যদি ফাঁকতালে পেয়ে যাই, ছাড়ব কেন? কী রকম মিননেস দেখেছ?

আমি বললুম, নিশ্চয়।

তা হলে প্যালারাম কাতর হয়ে গজাননদা বললেন, দাও না একটা নাম-টাম বলে। বাংলায় যখন লেটার পেয়েছ, তোমার অসাধ্য কী আছে? আর যদি পাই, বুঝেছ প্যালারাম, পঁচিশ টাকা কমিশন দেব তোমাকে।

একথা শুনে আমার মনটা নরম হল একটু। পঁচিশ টাকাই বা মন্দ কী! পাঁচ টাকাই বা কে দিচ্ছে আমাকে।

শুধু একটাই নাম পাঠাতে হবে?

না-সেরকম বাঁধাবাঁধি নেই কিছু।

তা হলে এক কাজ করা যাক। অনেকগুলো নাম পাঠিয়ে দিই। একটা লেগে যাবে নির্ঘাত।

সেকথা ভালো। আমি কাগজ-পেন্সিল নিয়ে আসি বরং।

গজাননদা কাগজ-পেন্সিল আনলে আমি বললুম, তা হলে প্রথম অ দিয়েই শুরু করা যাক।

অ?–গজানো আঁতকে উঠলেন : তোমার মতলব কী হে? গোটা স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ কপচাতে চাও নাকি?

আমি বললুম, ডিসটার্ব করবেন না। আমার মুড আসছে লিখে যান। প্রথমে লিখুন, অঞ্জনা।

অঞ্জনা? অঞ্জনা মানে কী?

অঞ্জন মানে কাজল। অঞ্জনা মানে কাজলের মতো যার রঙ, অর্থাৎ কিনা-কালো।

ধ্যুৎ!-গজাননদা আপত্তি করলেন : ছাগলটা মোটেই কালো নয়। লাল-সাদা কালো-হলদে এসব মিশিয়ে বেশ চিত্তির-বিচিত্তির চেহারা।

অ–চিত্তির-বিচিত্তির। তা হলে তা হলে–অপরূপা।

এটা বেশ হয়েছে– খুশি হয়ে গজাননদা বললেন, লেগে যেতে পারে। দিই পাঠিয়ে।

ব্যস্ত হবেন না–চানস নিয়ে লাভ কী? আরও লাগান গোটাকতক। এবারে আ। আ-আ-লিখুন আজীবনী।

আজীবনী। সে আবার কী?

মানে সারা জীবন বেঁচে থাকবে, এই আর কি! নামের ভিতর দিয়ে আশীর্বাদ করা হল ছাগলকে!

গজানননদা বললেন, সারাজীবন তো সবাই-ই বেঁচে থাকে, যখন মারা যায় তখন একবারেই মারা যায়! এ-নামের কোনও মানে হয় না।

আমি বিরক্ত হয়ে বললুম, আপনি তো বি-কম ফেল, সাহিত্যের কী বোঝেন? যা বলছি, লিখে যান। লিখুন আজীবনী।

আজীবনী লেখা হল।

এবারে ই। ই-ই-ই-ই-আচ্ছা, ইন্দ্রলুপ্তা হলে কেমন হয়?

ইন্দ্রলুপ্তা?–গজাননদা খাবি খেলেন : সে কাকে বলে? ও তো ইন্দ্রলুপ্ত মানে তো টাক। এ তুমি বলছ প্যালারাম! ছাগলের নাম টাক হলে মাসিমা আমায় প্রাইজ দেবেন?

তা হলে ওটা থাক। আচ্ছা ইন্দীবরী?

ইন্দীবরী?–গজাননদা ভুরু কোঁচকালেন।

 ইন্দীবর মানে নীলপদ্ম।

নীলপদ্ম? বাঃ-বেড়ে।–গজাননদা বেশ ভাবুকের মতো হয়ে গেলেন : আহা, নীলপদ্ম, চোখ জুড়ায়, প্রাণ জুড়ায়। কিন্তু ছাগলটার রঙ তো নীল নয়।

তাতে কী হয়েছে? আমাদের নীলিমাদির রঙও তো নীল নয়, ফুটফুটে ফরসা। পাড়ার কাঞ্চনবাবুর রঙ মোটেই সোনার মতো নয়। স্রেফ কুচকুচে কালো। জানেন তো, কবি বলেছেন–নামে কিবা করে—

গজাননদা ফিল-আপ করলেন : ছাগলকে যে নামে ডাকো–ডাকে ব্যাব্যা করে। ঠিক, ইন্দীবরীও থাক।

বললুম, এবার উ। লিখুন-উপ-উপ-উপ—

হনুমানের মতো উপ-উপ করছ কেন?

উপেন্দ্ৰবজ্রা।–এই জাঁদরেল নাম শুনে গজাননদা বিভ্রান্ত হয়ে গেলেন : ভীষণ কড়া নাম হে–উচ্চারণ করতেই হৃৎকম্প হয়। কাকে বলে?

কাকে বলে সে-কি আমিই জানি। কোথায় যেন দেখেছিলুম শব্দটা। বললুম, নামে কী আসে যায়, চালিয়ে দিন না। জাঁদরেল নামেরও তো গুণ আছে একটা।

এবার ঊ। ঊ-ঊ–নাঃ, ঊ বড় বেয়াড়া, ঊর্ধ্বময়ী ছাড়া কিছু মনে আসছে না। আর ঊর্ধ্বময়ী নাম দিলে–

গজাননদা বললেন, মাসিমা ভাবতেন–তাঁর ছাগলের ঊর্ধ্বলোক, মানে মৃত্যু কামনা করা হচ্ছে। তা হলেই প্রাইজের আশা ফিনিশ! ওসব চলবে না। তা ছাড়া প্যালারাম, তুমি যেভাবে অ-আ-ই-ঈ-চালাচ্ছ–

ঈ বাদ দিয়েছি তো। ওতে ঈশ্বরী ছাড়া আর কিছু হয় না।

না না, ঈশ্বরী নয়। ঈশ্বরী ছাগল মানে স্বর্গীয় ছাগল, উর্ধ্বময়ীও তাই। ডেনজারাস। আমি বলি কি প্যালারাম, এই স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণের প্যাঁচ ছাড়ো-নইলে গোটা দিনেও শেষ হবে না যে! গজাননদা কাতর হয়ে বললেন, ওদিকে তালের বড়াগুলো ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে!

তালের বড়ার নামে আমাকেও প্ল্যান বদলাতে হল!

তা হলে শর্টকাট করা যাক। লিখুন ক-এ কুসুমিকা, খ-এ-আচ্ছা খ থাক–গ-এ গরবিনী, ঘ-এ ঘোরাননা? না ঘোরাননা বাজে–মাসিমা ভাববেন, তাঁর ছাগলের মুখ ঘোড়ার মতো বলা হচ্ছে, চ- এচ-এ চিত্রলেখা।

না-না, চিত্রলেখা তোমার বৌদির নাম!–গজাননদা আর্তনাদ করলেন : ছাগলের ও-নাম দিলে তোমার বৌদি আর রক্ষে রাখবে না, তালের বড়া আর তালক্ষীর একেবারে গেল।

আমি ভয় পেয়ে বললুম–ছেড়ে দিন–ছেড়ে দিন। তা হলে চ-এ চারুপ্রভা, ছ-এছ-এ ছাগলিকা, জজ-এ জয়ধ্বজা, ঝ-এ-ঝ-এ ঝঞ্ঝিকা–।

ঝঞ্জিকা! ঝড়-টড় নাকি? না না, ওসবের মধ্যে যেয়ো না।–গজাননদা ছটফট করতে লাগলেন : প্লিজ প্যালারাম, শর্টকাট করো–তালের বড়াগুলো

ঠিক–তালের বড়াগুলো। আমিও উত্তেজিত হয়ে উঠলুম : তা হলে আর বর্ণমালা নয়, অ্যাট র‍্যানডম–মানে যা মনে আসে। লিখে যান–বিচিত্রিতা, নবরূপা, মনোহরা

মনোহরা কি একটা খাবার নয়? মাসিমা ভাববেন, কে তার ছাগলকে কেটে খাওয়ার

তা হলে মনোরমা। লিখুন পল্লবিকা, পাতা-টাতা খায়, ফুল্লনলিনী-দেবভোগ্যা–

গজানো আবার বাধা দিলে : দেবভোগ্যা? সে তো ঘিয়ের বিজ্ঞাপনে লেখে হে! তুমি কি ঘি দিয়ে ছাগল রান্না-টান্নার পরামর্শ দিচ্ছ?

থাক–থাক। লিখুন দেবকন্যা, টঙ্কারিণী, ডামরী

বেজায় শক্ত ঠেকছে।

হোক শক্ত। ব্রহ্মময়ী নামটাই বা কী এমন নরম? অমন নাম যাঁর, কড়া নামেই হয়তো তিনি খুশি হবেন। লিখে যান শূরসুন্দরী, সুখময়ী

লিস্টি যখন শেষ হল, তখন পুরো আঠাশটা নাম।

আমি বললুম, আরও দুটো মনে পড়েছে। য-র-ল-ব-হ-ক্ষ–লিখুন, হংসপদিকা, ক্ষুরেশ্বরী

ক্ষুরেশ্বরী?

 ক্ষুরের ঈশ্বরী যে। অর্থাৎ কিনা–মাসিমার ছাগলের মতো ক্ষুর আর কোনও ছাগলেরই নেই।

রাইট। ক্ষুরেশ্বরী চলতে পারে। কিন্তু প্যালারাম, লিস্ট একটু বড় হল না?

তা হোক। লটারিতে বেশি টিকিট কিনলে প্রাইজের আশাও বেশি– বুঝতে পারেন তো? দিন, দিন পাঠিয়ে একটা লেগে যাবে নির্ঘাত।

ফুল-চন্দন পড়ুক তোমার মুখে।

ফুল-চন্দনের আগে তালের বড়া পড়া দরকার। আর পঁচিশ টাকা কমিশন।

নিশ্চয়–নিশ্চয়। সে আর বলতে। তবে পঁচিশ টাকা একটু বেশি হল না প্যালারাম? যদি কুড়ি টাকা দিই?

আমি চটে বললুম, বলেন কী? লিস্ট ফেরত দিন আমার।

আচ্ছা-আচ্ছা, পঁচিশ টাকাই যাক। চলো তালের বড়া খেয়ে আসা যাক।

বিস্তর খাটুনি হয়েছিল। উৎসাহিত হয়ে তালের বড়া খেতে গেলুম।

 খেতে-খেতে এবার মিটমিট করে হাসতে লাগলেন গজাননদা।

কী হল, হাসছেন যে?

 জানো, ভুতো এসেছিল কাল।

ভুতোদা?

হ্যাঁ, আমার আর একমাসতুতো ভাই। এক নম্বর গবেট। আমার কাছ থেকে আবার নামের সাজেশন চায়!–গজাননদা বললেন, তা দিয়েছি বলে।

কী বলে দিলেন?

আন্দাজ করো দিকি?–চোখ মিটমিট করতে লাগল তাঁর।

বলতে পারলুম না।

গঙ্গারাম। ও যেমন হাবা গঙ্গারাম–তাতে ওনাম ছাড়া ওকে আর কী দেব। শুনে ধন্যি হয়ে চলে গেল। হা হা হা

শুনে আমিও হাসলুম : হা হা হা

প্রাইজের রেজাল্ট বেরুবে পরের রবিবার। পঁচিশ টাকার আশায়-আশায় খবর জানতে গেলাম।

দেখি, গজানো আরশোলার মতো মুখ করে বসে।

পাননি প্রাইজ?

নাঃ- হাঁড়ি ফাটার মতো আওয়াজ করে গজাননদা বললেন, তোমার ইন্দীবরী–আজীবনী–অপরূপা ফুলনলিনী হংসপদিকা–সব চিত। প্রাইজ কে পেয়েছে, জানো? ভুতো।

অ্যাঁ।

হ্যাঁ, সেই গঙ্গারাম! একত্রিশজন বোনগো-বোনঝি বাংলা ডিকশনারি উজাড় করে দিয়েছিল। মাসিমা বললেন, ছাগলের নামে ওসব কাব্যি দিয়ে কী হবে। গঙ্গারাম। আহা-মা গঙ্গা, তায় রাম-নাম! নাম করতেই পুণ্যি।–বলে, ছাগলটার পায়ে চুপ করে একটা পেন্নাম করে প্রাইজটা ভুতোকেই দিয়ে দিলেন।

আমি হাঁ করে চেয়ে রইলাম। আজও বাড়ির ভেতর থেকে ভাদ্র মাসের তালের বড়ার। গন্ধ আসছিল, কিন্তু বৌদি যে সে বড়া আমায় খেতে দেবেন, সে-ভরসা আর হল না আমার।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *