ইব্রহিম গিয়ে তাঁর পুত্রকে আল্লাহের আদেশ শোনাতেই ইসমাইল আনন্দে উৎফুল্ল হয়ে বললেন, ‘আল্লাহকে অশেষ ধন্যবাদ আমার পরম সৌভাগ্য যে, আল্লাহ তাঁর এই বান্দাকে তাঁর পবিত্র নামে কোরবান হওয়ার জন্য কবুল করেছেন’। ইসমাইলের মাতা বিবি হাজেরাও অশ্রু-সজল নেত্রে আল্লাহ্কে ধন্যবাদ দিয়ে বললেন, ‘আমিও সত্যই পরম সৌভাগ্যবতী, নইলে আল্লাহ্ তাঁর এই বাঁদির পুত্রকে কেন তাঁর নামে উৎসর্গ করার জন্য মঞ্জুর করলেন?’ মা কাঁদতে কাঁদতে পুত্রকে তার পিতার হাতে দিলেন। ইব্রাহিম ইসমাইলকে আল্লার রাহে কোরবানি দেওয়ার জন্য পর্বত শিখরে উঠে তাঁর হাত পা বেঁধে বিসমিল্লাহ্ বলে কণ্ঠদেশে ছুরি চালালেন। আল্লার আরশ কুরসি লওহ কলম কেঁপে উঠল। ফেরেশতা হুরপরি সোলেমান মারহাবা-মারহাবা করে কেঁদে উঠল – সাত আশমান টলতে লাগল। সূর্য মেঘের নেকাবে মুখ ঢাকল। মহামৌনী মহাধ্যানী ইসরাফিলের ধ্যান ভেঙে গেল। ইব্রাহিম ছুরি যত চালান ইসমাইলের কণ্ঠের একটি লোপকূপও ভেদ করতে পারেন না। তখন ইসমাইল তাঁর পিতাকে বললেন, ‘পিতঃ বোধ হয় স্নেহবশত আপনার হাত দুর্বল হয়ে পড়েছে, তাই হাত চলছে না। আপনি কাপড় দিয়ে আপনার চোখ বন্ধ করে ছুরি চালান’। ইব্রাহিম পুত্রের কথায় আনন্দিত হয়ে নিজের চোখ বেঁধে ছুরি চালালেন। এইবার ছুরি কণ্ঠ ভেদ করল। আল্লাহ্কে ধন্যবাদ দিয়ে চোখের কাপড় খুলে ইব্রাহিম দেখলেন – যাকে কোরবানি করেছেন – যার কণ্ঠ ভেদ করে তাঁর ছুরি চলেছে – সে ইসমাইল নয় – সে একটি দুম্বা মেষ। তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে হাসছেন বন্ধন মুক্ত ইসমাইল ও হজরত জিবরাইল। আল্লার বাণী-বাহক ফেরেশতা হজরত জিবরাইল বললেন– ‘আল্লাহ্ তোমার কোরবানি কবুল করেছেন –‘ওই দেখো সাত আকাশ জুড়ে সমস্ত ফেরেশতা হুরপরি তোমায় মোবারকবাদ দিচ্ছেন। আজ থেকে তোমার পুত্রের নাম হল ইসমাইল জবিহুল্লাহ্–!’ এমনই বকরীদের চাঁদে এমনই দিনে হজরত ইব্রাহিম তাঁর প্রিয়তম পুত্রকে আল্লার নামে উৎসর্গ করেছিলেন। আজ এই বকরীদে কে আছে মুসলমান – যে মুসলমান মানে আল্লার নামে যিনি তাঁর সর্বস্ব সমর্পণ করেছেন – উৎসর্গ করেছেন – কোথা সেই আত্মত্যাগী মুসলমান যিনি তাঁর সবকিছু রাহে ফিল্লাহ্ বিলিয়ে দিয়ে আল্লার প্রিয় হয়েছেন? ঘরে ঘরে আজ গরিব কাঙাল নিরন্ন বস্ত্রহীন আশ্রয়হারা। তাদেরই পাশে আমার দালান বাড়ি, খেত খামার শস্যে ফসলে পূর্ণ, উদৃবৃত্ত অর্থে আমার বাক্স প্যাঁটরা পূর্ণ! জেওরে লেবাসে আমার পুত্র কন্যার অঙ্গ ঝলমল করছে – আর পাশের বাড়িতে কাঙালিনি মেয়ে কাঁদছে –
(গান) নাই হল মা বসন ভূষণ এই ঈদে আমার। আল্লা আমার মাথার মুকুট, রসুল গলার হার॥ নামাজ রোজার ওড়না শাড়ি ওতেই আমায় মানায় ভারী কলমা আমার কপালে টিপ, নাই তুলনা তার॥ হেরা গুহার হিরার তাবিজ কোরান বুকে দোলে হাদিস ফেকা বাজুবন্দ, দেখে পরান ভোলে। হাতে সোনার চুড়ি যে মা হাসান হোসেন মা ফাতেমা মোর অঙ্গুলিতে অঙ্গুরী মা, নবির বার ইয়ার॥