নখছুটের ব্রত
কুমারী ও সধবাদের জন্য
এই ব্রত করতে হলে মাঘ মাসের সংক্রান্তি থেকে ফাল্গুন মাসের সংক্রান্তি অবধি নখ কাটা এবং চৈত্রমাস থেকে ব্রত করা অবধি তেলমাখা নিষেধ। ব্রতের জন্যে চাই একজন নাপতিনী, ঝামা, পাঁচকড়া কড়ি, পাঁচটি গোটা পান-সুপুরি, পাঁচখানি বাতাসা, পাঁচখানি হলুদ, পাঁচখানি গামছা, কলা, মধু, দুধ, আলতা, কালো রং করা পাট, পটল প্রভৃতি। চৈত্রের শুক্লা চতুর্থীতে ব্রত নিতে হয়। চার বছর পরপর কিংবা একসঙ্গেও চার বছরের ব্রত করা চলে।
চৈত্রের শুক্লাচতুর্থীতে নাপতিনী দিয়ে একটি সধবার নখ কাটিয়ে, ঝামা দিয়ে পা ঘষে, সিঁদুর পরিয়ে হলুদ, পাঁচকড়া কড়ি, পাঁচটি পান-সুপুরি, পাঁচখানি বাতাসা ও গামছা পাঁচখানি তার সামনে রেখে এবং তার পিঠের ময়লা তুলে একটি পুতুল তৈরি করতে হবে। তারপর যে ব্রত করবে তার নখ ও চুলের ডগা কেটে গামছার একখুঁটে বাঁধতে হবে। এয়োর পিঠে মধু দিয়ে পুতুল এঁকে তাকে পিঁড়িতে বসিয়ে সেই আঁকা পুতুলের চোখে একটি পটল ছুঁইয়ে বলতে হবে:
হয় যেন মোর পটল চেরা চোখ।
একটি পান দিয়ে এয়োর মুখ ঢেকে বলতে হবে:
পানের মতো হয় যেন মোর বদনখানি।
এয়োর আঙুল কলা দিয়ে মেপে বলতে হবে:
হয় যেন মোর আঙুল কলার মতো।
তারপর এয়োর চুলে পাট ছুঁইয়ে বলতে হবে:
মোর যেন হয় পাটের মতো দীঘল,
রেশমের মতো কোমল, ঘনকৃষ্ণ-কুঞ্চিত
চুলের গোছা।
তারপর ওইসব গামছার আর একটি খুঁটে বাঁধতে হবে। এইভাবে পরপর তিন বছর করতে হবে।
প্রথম বছর ঘিয়ের প্রদীপ জ্বেলে, পিঁড়িতে বসিয়ে নানা রকমের মিষ্টি, ফুটকড়াই, মুড়কি, দ্বিতীয় বছর মিষ্টি, খই, দই, তৃতীয় বছর মিষ্টি, চিঁড়ে, মুড়কি, আর চতুর্থ বছর মিষ্টি, লুচি, নানারকম তরকারি আর মাছ এয়োকে খাওয়াতে হবে। খাওয়ার শেষে প্রদীপটি মাথায় নিয়ে নিজে জলে বিসর্জন দিতে হবে। তারপর এয়োদের নোয়া, সিঁদুর-চুপড়ি, কড়, আলতা, মাথাঘষা, আরশি, চিরুনি, পাখা, গামছা আর রুপোর টাকা দক্ষিণা দিতে হবে। চতুর্থ বছর চারজন এয়োকে লাল পেড়ে শাড়ি পরিয়ে পূব, পশ্চিম, উত্তর ও দক্ষিণ মুখে বসিয়ে আগেরই মতো অনুষ্ঠান করে এয়োদের খাওয়ার শেষে সেই ঘিয়ের প্রদীপ মাথায় করে জলে ডুব দিয়ে ব্রতের উদযাপন করতে হবে।
নখছুটের ব্রত সমাপ্ত।