ধুন্ধুমার কাণ্ড
তুমুল কাণ্ড, প্রচণ্ড কোলাহল, গোলমাল বা বিষম কাণ্ডকে আমাদের দেশে ধুন্ধুমার কাণ্ড নামে অভিহিত করা হয়। এ প্রবাদ ও বাগধারার উৎপত্তি সম্পর্কে নিচে বলা হলো—
অযোধ্যার ইক্ষবাকুবংশীয় (সূর্যবংশ) রাজা বৃহদশ্বের পুত্র হলেন রাজা কুবলাশ্ব। রাজা বৃহদশ্ব যাবেন বনবিহারে মহর্ষি উতঙ্কের আশ্রমে। কিন্তু মহর্ষি উতঙ্ক বৃহদশ্বকে তা থেকে বিরত থাকতে পরামর্শ দিলেন। কারণ উতঙ্কের আশ্রমের কাছে রয়েছে উজ্জ্বালক নামে এক বালু-সমুদ্র। সেখানে বাস করে মধু দানবের পুত্র ধুন্ধু। ব্রহ্মার বরে সে দেব, দানব, যক্ষ, গন্ধর্ব, নাগ, রাক্ষস সবার অবধ্য। ভয়ঙ্কর এই দানব নানাভাবে উতঙ্কের আশ্রমে অত্যাচার চালাতো। রাজা বৃহদশ্ব উতঙ্কের কাছে এ সংবাদ শুনে পুত্র কুবলাশ্বকে আদেশ করলেন ধুন্ধুকে দমন করে আশ্রমবাসীর শান্তি ফিরিয়ে আনতে। পুত্রের হাতে রাজ্যভার দিয়ে তিনি গেলেন বানপ্রস্থে।
মহর্ষি উতঙ্কের কঠোর তপস্যায় তুষ্ট হয়ে বিষ্ণু তাকে পূর্বে বর দিয়েছিলেন যে, তার যোগবল অবলম্বন করে রাজা কুবলাশ্ব বধ করবেন ধুন্ধুকে। ধুন্ধুর অত্যাচারে অতিষ্ঠ উতঙ্কের একান্ত অনুরোধে কুবলাশ্বের দেহে প্রবেশ করলেন বিষ্ণু। রাজা কুবলাশ্ব একুশ হাজার পুত্র (আসলে পুত্রবৎ পালিত স্বজন) ও সৈন্য-সামন্ত নিয়ে অগ্রসর হলেন ধুন্ধুকে বিনাশ করতে।
এক সপ্তাহ ধরে অবরোধ করে বালুর সমুদ্র খুঁড়ে দেখা গেল ধুন্ধু ঘুমাচ্ছে। তুমুল হট্টগোলে উঠে পড়লো সে। তার মুখ থেকে বের হচ্ছে আগুনের তেজ। কুবলাশ্বের পুত্ররা সেই তেজে ভস্ম হয়ে গেল। বিষ্ণুর শক্তিপ্রভাবে কুবলাশ্ব যোগশক্তির প্রয়োগ করে নিভিয়ে দিলেন ধুন্ধুর মুখাগ্নি। অতঃপর ব্রহ্মাস্ত্র দিয়ে বধ করলেন তাকে। ধুন্ধুকে তুমুল উত্তেজনা, কোলাহল আর প্রচণ্ড সংঘর্ষে নিহত করে রাজা কুবলাশ্ব পরিচিত হলেন ধুন্ধুমার অর্থাৎ ধুন্ধুর বিনাশকারী হিসেবে।
আমাদের প্রবাদপুরুষ ধুন্ধুমার হলেন অযোধ্যার রাজা কুবলাশ্ব যিনি তুমুল কোলাহল, ভয়ঙ্কর কাণ্ড ও বিপুল আয়োজন করে বিনাশ করেছিলেন ধুন্ধু নামক প্রবল পরাক্রান্ত দানবকে।