2 of 3

ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির

ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির

ধার্মিক লোকের প্রকৃষ্ট উদাহরণ যুধিষ্ঠির। কোনো কোনো স্থানে অত্যন্ত অধার্মিক ব্যক্তিকে ব্যঙ্গাত্মকভাবে চিহ্নিত করতে এই প্রবাদ ব্যবহৃত হয়। আবার কোনো চতুরতার কাজে নিয়োগ করা কোনো ব্যক্তি যদি সহজ- সরলভাবে মিথ্যে বলা, অন্যায় কাজ করা কিংবা চালাকির আশ্রয় নিতে না চায় তাহলেও তার উদ্দেশে এমন প্রবাদবাক্য উচ্চারিত হয়ে থাকে। অনেক অন্যায় করেছে এমন ব্যক্তি যদি সাধুতার ভান দেখায় (অর্থাৎ প্রচ্ছন্ন পাপচারী বা ভণ্ড) তার প্রতিও এই প্রবাদ প্রযোজ্য হয়।

যুধিষ্ঠিরকে ধর্মপুত্র বলা হয় কেন? তিনি ধার্মিক ছিলেন বলে? এ প্রশ্নের উত্তর হলো—

পাণ্ডবজননী কুন্তি ছিলন যদুবংশীয় রাজা শূর ও তৎপত্নী ভোজরাজকন্য মহিষীর কন্যা। এই শূর বা শূরসেনের পুত্রই শ্রীকৃষ্ণের পিতা বসুদেব। অর্থাৎ কুন্তি হলেন শ্রীকৃষ্ণের পিসি। কুন্তির আসল নাম পৃথা। শূরসেনের পিসির ছেলে রাজা কুন্তিভোজ নিঃসন্তান ছিলেন। পৃথাকে তার কাছে দান করলেন শূরসেন। পালকপিতা কুন্তিভোজের নামানুসারে পৃথার নাম হলো কুন্তি।

সে যুগে পুত্রসন্তান লাভ করা দুর্লভ ভাগ্যের বলে বিবেচিত ছিল। একবার মহর্ষি দুর্বাসা অতিথিরূপে গৃহে এলে কুন্তি তাকে পরিচর্যায় সন্তুষ্ট করেন। দুর্বাসা তাকে এক অমোঘ মন্ত্র শিখিয়ে দিয়ে বলেন যে, এই মন্ত্রের প্রভাবে কুন্তি যে দেবতাকে স্মরণ করবেন সেই দেবতাই তার নিকটে আসবেন এবং তার সাহায্যে কুন্তির পুত্রলাভ হবে।

কৌতূহলবশে কুন্তি একদিন সূর্যকে আহ্বান করেন। তখনও তিনি কুমারী। কুমারীর সন্তান সম্পূর্ণ অবৈধ ছিল না তৎকালে। সূর্যের সাথে মিলনের ফলে কুন্তির যে পুত্র হলো তার নাম কর্ণ। অতঃপর স্বয়ংবর সভার মাধ্যমে কুন্তির সাথে বিয়ে হলো পাণ্ডুর। কিন্তু পাণ্ডু সন্তান উৎপাদনক্ষম ছিলেন না। তখনকার দিনে উত্তম বর্ণের পুরুষ কিংবা জ্ঞানী ঋষি বা দেবতা হতে (দেবতার বর?) পুত্রলাভ বৈধ ছিল। পাণ্ডু কুন্তিকে অনুরোধ করেন এ ধরনের ক্ষেত্রজ সন্তান উৎপাদন করতে। পাণ্ডুর অনুমতিক্রমে কুন্তি ধর্মদেবতাকে (যম, তিনি স্বর্গের দেবতা আবার নরকেরও অধীশ্বর) আহ্বান করেন। শতশৃঙ্গ পর্বতে যমের (ধর্মের) সাথে সহবাসের ফলে কুন্তির যে পুত্রসন্তান লাভ হয় তিনিই ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির। যুধিষ্ঠির আবার, ধর্ম, ধর্মরাজ ইত্যাদি নামেও পরিচিত।

যুধিষ্ঠির ছিলেন ধর্মজ্ঞ, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী তথা আদর্শ চরিত্রের অধিকারী। এজন্য তার মতো আচরণ কপটভাবে যে দেখায় কিংবা সততার আড়ালে অন্যায়ের প্রশ্রয় দিয়ে যুধিষ্ঠিরের নীতির উল্টোকাজ করে তবে তার প্রতি ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির—এই প্রবাদ ব্যাঙ্গার্থে প্রযোজ্য হয়।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *