দ্য গিফট অব দ্য ম্যাজাই
শেষ তিনদিনের প্রথম দিন শুরু হয়েছিল।
এ মুহূর্ত থেকে আমাকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য কেউ থাকবে না।
মিয়াগি আমার আশপাশে ছিল না আর।
অনেক আগেই ঠিক করে রেখেছিলাম, এই শেষ তিনদিন আমি কী কী করে কাটাব। সকালবেলাটা আমি নোটবুকে লিখেই পার করলাম। গতকালকের ঘটনা লিখে শেষ করে ফাউন্টেন পেনটা নামিয়ে রাখলাম আমি। তারপর কয়েকঘণ্টা শান্তিতে ঘুমিয়ে কাটালাম। ঘুম ভাঙার পর বাইরে গিয়ে সিগারেট ধরালাম, ভেন্ডিং মেশিন থেকে একটা আপেল সাইডার কিনে সেটা দিয়ে তৃষ্ণা মেটালাম।
মানিব্যাগে আর কেবল একশো সাতাশি ইয়েন রয়েছে। এটুকুই। আর এর মধ্যে ষাটটা কয়েন আবার এক ইয়েনের। তিনবার গুনে দেখলাম : একশো সাতাশি ইয়েন।
কাকতালীয় ব্যাপারটা দেখে না হেসে পারলাম না। তিনদিন বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ট না এ টাকা, তবে কাকতালীয় ব্যাপারটা আমকে আনন্দ দিল।
নোটবুকটা আবার খুলে বসলাম। কিছু টুকটাক গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাদি সংযুক্ত করলাম, তারপর বাইকে চড়ে বেরিয়ে পড়লাম। এতদিন মিয়াগির সাথে যে যে জায়গা ঘুরে বেরিয়েছি, সেসব জায়গা আজকে একা একা ঘুরে আসব।
খোলা নীলাকাশের নিচে বাইক চালিয়ে বাতাসে মিয়াগির সুঘ্রাণকে খুঁজে বেড়ানোর চেষ্টা করলাম আমি।
মিয়াগি অন্য কোথাও রয়েছে এখন। হয়তো ইতোমধ্যে অন্য কাউকে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পেয়েছে সে। প্রার্থনা করতে লাগলাম, মানুষটা যাতে মিয়াগি’কে আক্রমণ না করে। সে যাতে পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজকর্ম শেষ করতে পারে, ঋণমুক্ত হবার পর সে যেন এতটাই সুখী এক জীবনযাপনের সুযোগ পায় যে, আমাকে ভুলে যাওয়াটা তার জন্য সহজ হয়ে যায়। আমার থেকে বেশি ভালোবাসতে পারে এমন একটা যোগ্য মানুষ যেন তার জীবনে আসে, যাকে মিয়াগি আমার থেকেও বেশি ভালোবেসে ফেলবে।
পার্কের ভেতর দিয়ে হেঁটে গেলাম। পার্কে খেলাধুলারত শিশুকিশোররা আমাকে চিনতে পেরে হাত নাড়ল। অকস্মাৎ মাথায় একটা ঝোঁক চাপল; সিদ্ধান্ত নিলাম তাদের সামনে আমি মিয়াগি পাশে থাকার অভিনয় করে যাব।
আমি হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম, “আসো মিয়াগি,” বলে অদৃশ্য একজনের হাত শক্ত করে চেপে ধরলাম।
অন্যদের কাছে দৃশ্যটা ইতোমধ্যে পরিচিত হয়ে গিয়েছে। “ওহ, ঐ যে, পাগলাটে স্বভাবের কুসুনোকি তার কল্পনার বান্ধবীর সাথে হাঁটতে বেরিয়েছে।”
কিন্তু আমার কাছে ব্যাপারটা সম্পূর্ণ আলাদা ছিল।
সবকিছু কেমন জানি গোলমেলে ঠেকতে লাগল।
মিয়াগি পাশে থাকার অভিনয় করার সিদ্ধান্তটা আমারই ছিল। কিন্তু সে সিদ্ধান্তটা আমাকে এতটা দুঃখ দেবে তা ভাবতেও পারিনি। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও কষ্ট হচ্ছে আমার।
মিয়াগির না থাকাটা আমাকে প্রচণ্ডভাবে আঘাত করল। এরকম আঘাত আমি আগে কখনো পাইনি।
ভাবতে শুরু করলাম—আসলেই কি সবকিছু আমার কল্পনা ছিল?
আমি নিশ্চিত ছিলাম যে, আগামী তিনদিন পর আমার মৃত্যু হবে। টের পাচ্ছিলাম, আমার জীবনের একদম শেষ কয়লাটুকু পুড়ে প্রায় নিভুনিভু হয়ে আসছে। এ অনুভূতিটা মোটেও মিথ্যা হতে পারে না।
কিন্তু বাস্তবে মিয়াগি নামের কোনো মেয়ের কি আদৌ কখনো অস্তিত্ব ছিল? এমনও তো হতে পারে আমার অবচেতন মন আমার মৃত্যু ঘনিয়ে আসছে দেখে এই ‘আয়ু বেচাবিক্রির প্রতিষ্ঠান’ নামের সুবিধাজনক এই বিভ্রমটা তৈরি করেছে, যাতে আমি মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হতে পারি?
এখন সেটার উত্তর জানার আর কোনো পথ নেই।
একটা ফোয়ারার সামনে গিয়ে বসে মাথাটা নিচের দিকে ঝুলিয়ে রেখে বসলাম। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে আর মেয়ে (তাদের দেখে মিডল স্কুল পড়ুয়া বয়সের মনে হচ্ছে) এসে আমার সামনে দাঁড়াল।
ছেলেটা কৌতূকের ভঙ্গিতে প্রশ্ন করল, “আজকেও কি আপনি মিয়াগির সাথে ঘুরতে বেরিয়েছেন মিস্টার কুসুনোকি?”
“না, মিয়াগি চলে গিয়েছে,” আমি জবাব দিলাম।
মেয়েটা উত্তর শুনে শক পেয়ে হাত দিয়ে মুখে চেপে ধরল। “ক-কী হয়েছে? আপনারা দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়েছে?”
“বলতে পার। তোমাদের দুজনকে পরামর্শ দিচ্ছি : কখনো ঝগড়া করবে না।”
দুজন দুজনের দিকে তাকাল, তারপর মাথা নাড়ল। একজন বলল, “ঝগড়া বোধহয় কোনোদিন না করাটাও অসম্ভব। কারণ, আপনার আর মিয়াগির মতো মানুষদের মধ্যেও ঝগড়া হয়েছে, তাই না?”
“আপনাদের মতো এত কাছের মানুষরাও একে অপরের প্রতি রেগে যেতে পারলে আমরা কোন ছাড়!”
কথাটা যে সত্য, তা ওদের জানাতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মুখ থেকে কোনো শব্দ বের হচ্ছিল না।
আচমকা মনের বোতলের কর্ক খুলে গেল। আমি হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলাম।
যতই কল্পনা করে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করলাম যে, মিয়াগি আমার পাশেই বসে রয়েছে, ততই আমার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগল।
আমার দুপাশে দাঁড়িয়ে থেকে বাচ্চাগুলো আমাকে সান্ত্বনা দেয়ার চেষ্টা করতে লাগল।
কাঁদাকাটি শেষ করে শান্ত হয়ে ওপরে তাকালাম। আবিষ্কার করলাম, বেশ কিছু লোকজন আমার সামনে ভিড় করছে।
যতটা ভাবি তার থেকেও বেশি মানুষ আমায় চেনে দেখা যাচ্ছে। দেখতে পেলাম, বিভিন্ন জেনারেশনের মানুষ আমাকে ঘিরে রয়েছে। কুসুনোকির কী হয়েছে, তা জানতে ইচ্ছুক তারা।
শিনবাশির দুই বন্ধু সুজুমি আর আসাকুরা কেও মানুষের ভিড়ে চোখে পড়ল। সুজুমি জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে। কী বলব ভেবে উঠতে পারছিলাম না। অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম তাদের জানাব যে, বিশাল এক ঝগড়ার পর মিয়াগির সাথে আমার ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছে। আমার প্রতি ঘেন্না ধরে গিয়েছিল তার, তাই আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে সে, মিথ্যা একটা ব্যাখ্যা শোনালাম তাদের।
“আপনার মধ্যে কী এমন বৈশিষ্ট্য ছিল যা মিয়াগির পছন্দ হয়নি?” শ্যেন দৃষ্টিওয়ালা এক মেয়ে দুম করে প্রশ্ন করে বসল। কথা শুনে মনে হচ্ছিল, তার জগতে মিয়াগি নামের এক মেয়ের অস্তিত্ব আসলেই রয়েছে।
“বোধহয় কোনো কারণ ছিল তার,” মেয়েটার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক পুরুষ বলে উঠল। তাকে চিনতে পারলাম। হ্যাঁ, ঐ যে, ফটোগ্রাফির দোকানটার মালিক। তিনিই প্রথম মিয়াগির অস্তিত্বকে মেনে নিয়েছিলেন।
“এরকম নিষ্ঠুর কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব বলে কখনো মনে হয়নি।”
“তা সত্ত্বেও সে চলে গিয়েছে, তাই না?” সুজুমি বলল।
“এরকম ভালো একটা ছেলেকে ফেলে রেখে উধাও হয়ে গেল সেতার মানে মিয়াগি মোটেই ভালো কেউ ছিল না,” জগিং করতে বের হওয়া এক ছোট চুলের মানুষকে বলতে শুনলাম। সে আমাকে সান্ত্বনাস্বরূপ পিঠ চাপড়ে দিল।
মাথা উঠিয়ে কিছু বলতে চাইছিলাম, কিন্তু গলার মধ্যে শব্দগুলো আটকে গেল—
পেছন থেকে আরেকটা গলার স্বর কানে এল।
“ঠিকই বলেছেন। সে আসলেই ভালো একটা ছেলে।”
সাথে সাথে কণ্ঠস্বরটা চিনতে পারলাম আমি।
এক বা দুদিনের মধ্যে ও কণ্ঠ ভোলা সম্ভব না।
অন্তত তিনশো-তিনশো হাজার বছর লাগবে সেই কণ্ঠস্বর হৃদয় থেকে মুছে ফেলতে।
ঘাড় ঘুরিয়ে তার দিকে তাকানোর চেষ্টা করলাম।
জানি আমার ভুল হওয়া সম্ভব না।
কিন্তু নিজের চোখে দেখা না পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।
ঐ তো, সে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে।
“আমিও একমত, এই মিয়াগি মেয়েটা মোটেও ভালো না,” মিয়াগি বলে উঠল। তারপর আমাকে আলিঙ্গন করল সে।
.
“আমি ফিরে এসেছি কুসুনোকি তোমারই খোঁজ করছিলাম।”
আমিও তাকে পাল্টা আলিঙ্গন করলাম। তার চুলের সুঘ্রাণ টেনে নিতে থাকলাম।
আমার শরীর ‘মিয়াগি’ বলতে যাকে চেনে, তার সাথে ওর সবকিছু পুরোপুরি মিলে গেল।
হ্যাঁ, এই হচ্ছে আমার মিয়াগি। সে আমার সামনে এসে উপস্থিত হয়েছে।
আশপাশে তাকিয়ে দেখলাম, শুধুমাত্র যে আমি বিভ্রান্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম তা কিন্তু না। আমার আশপাশের মানুষজনও আমারই মতো বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল ।
আমি নিশ্চিত তারা সবাই একই জিনিস ভাবছে, ‘এক মিনিট, আমি তো ভেবেছিলাম মিয়াগি নামে আসলে কোনো মেয়েরই অস্তিত্ব নেই?’
তাদের মুখের প্রতিক্রিয়া থেকেই ব্যাপারটা স্পষ্ট ছিল : মিয়াগিকে এখন সবাই দেখতে পারছে।
ট্র্যাকস্যুট পরা এক পুরুষ দ্বিধান্বিত স্বরে জিজ্ঞেস করল, “ইয়ে, মাফ করবেন, আপনিই কি মিস মিয়াগি?”
“ঠিক ধরেছেন, আমিই সেই মিয়াগি নামের খারাপ মেয়ে,” সে নির্দ্বিধায় জবাব দিল।
মানুষটা এবার আমার দিকে ঘুরে পিঠে বেশ কয়েকবার জোরে চাপড়ে দিল। সে হাসতে হাসতে বলল, “তাহলে তো তোমার ভালোই হয়েছে! সত্যি, বিশ্বাসই হচ্ছে না যে, মিয়াগির অস্তিত্ব আসলেই রয়েছে। আর সে দেখতেও অপূর্ব। হিংসা হচ্ছে কিন্তু!”
কিন্তু আমি এখনও কিছু বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
মিয়াগি এখানে কী করছে?
অন্যরা এখন তাকে দেখতে পারছে কেন?
“তার মানে—এই হচ্ছে সেই ‘মিয়াগি’,” আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরী চোখ বড়বড় করে বলল। “তাকে কল্পনায় যেরকম ভেবেছিলাম-বাস্তবে দেখতে সে ঠিক সেরকমই। একদম মিলে গিয়েছে!”
আসাকুরা ভিড় হটাতে শুরু করল যাতে আমরা দুজন একলা থাকতে পারি। একে একে সবাই চলে গেল। যাওয়ার আগে কেউ অভিনন্দন কিংবা খোঁচা মারতে ভুলল না।
আসাকুরা’কে ভিড় দূর করার জন্য ধন্যবাদ জানালাম।
“আমি ঠিকই ধরেছিলাম, মেয়েটা সম্পূর্ণ আমার টাইপের,” সে হাসতে হাসতে বলল। “দুজনকেই অভিনন্দন জানাই।”
শেষমেশ আমি আর মিয়াগি বাদে কেউ থাকল না ফোয়ারার সামনে।
মিয়াগি শক্ত করে আমার হাত ধরে আমার মনের বিভ্রান্ত দূর করার চেষ্টা করল। “অবাক লাগছে, তাই না? তুমি ভাবছ, আমি কীভাবে এখানে এলাম আর কেনই বা লোকে আমাকে দেখতে পারছে? উত্তরটা খুবই সহজ তুমি যা করেছ, আমিও ঠিক তাই করে এসেছি।”
“একই জিনিস করে এসেছ?”
তার কথাটার মানে পুরোপুরি বুঝে উঠতে কয়েক সেকেন্ড লেগে গেল।
“কতখানি বিক্রি করেছ?”
“ঠিক তোমার মতোই। সবকিছু। আমার হাতেও আর মাত্র তিনদিন রয়েছে।”
স্তব্ধ হয়ে গেলাম।
“তুমি তোমার সবটুকু আয়ু বিক্রি করে দেবার পর ঐ বদলি পর্যবেক্ষক আমার সাথে যোগাযোগ করে। সে আমাকে জানায় যে, তুমি নাকি তোমার জীবনের সবটুকু বিক্রি করে দিয়ে আমার বেশিরভাগ ঋণ পরিশোধ করে ফেলেছ। তার কথা শেষ হবার আগেই আমার মন স্থির হয়ে গিয়েছিল। আমার বেলাতেও তিনি আমাকে সাহায্য করেছেন।”
কথাটা শুনে আমার কষ্ট পাওয়া উচিত ছিল।
তাকে রক্ষা করার জন্য আমার জীবনের সবটুকু আমি উজার করে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়ে নিজের জীবনটা ধ্বংস করে দিয়েছে। ভয়াবহ অবস্থা যাকে বলে।
তা সত্ত্বেও আমার কেন জানি সুখী মনে হচ্ছিল নিজেকে।
ঐ মুহূর্তে তার এই বোকামি আর বিশ্বাসঘাতকের মতো কাজটাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলাম আমি।
মিয়াগি আমার পাশে বসল। কাঁধে তার মাথা রেখে চোখ বন্ধ করল।
“তুমি একটা অসাধারণ মানুষ কুসুনোকি। মাত্র ত্রিশ দিন ব্যবহার করে তুমি আমার জীবনের বেশিরভাগ ফিরিয়ে আনতে পেরেছ-আমি অনেক দুঃখিত যে, আত্মত্যাগ করে তুমি যে সময়টা আমার জন্য ফিরিয়ে এনেছ, তা আমি ছুঁড়ে ফেলে এসেছি। আমি অনেক বড় বোকা, তাই না?”
“না, তুমি মোটেই বোকা নও,” আমি বললাম। “কেউ যদি বোকা হয়ে থাকে, তবে সেটা আমি। তোমাকে ছাড়া তিনদিন কাটানোও আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। বিপদে পড়ে গিয়েছিলাম আমি। কী করব তা হাজার ভেবেও বের করতে পারছিলাম না।”
সে মিষ্টি করে হেসে আমার কাঁধে তার গালটা ঘষল। “তোমার কারণেই হয়তো আমার জীবনের মূল্যও খানিকটা বেড়ে গিয়েছিল। ঋণ মেটানোর পরেও আরও কিছু টাকা রয়ে গিয়েছে। তিনদিন খরচ চালানোর পরেও রয়ে যাবে, এমন টাকা আছে আমার কাছে।”
“তাহলে তুমি এখন বড়লোক হয়ে গিয়েছ?” খোঁচা মারলাম আমি। তারপর তাকে শক্ত করে ধরে বামে ডানে ঝাঁকাতে শুরু করলাম।
“হ্যাঁ, আমি এখন অনেক বড়লোক,” সেও খিলখিল করে হাসতে হাসতে জবাব দিল।
চোখ থেকে আবার অশ্রুধারা বইতে শুরু করল। তবে এবার আমি একা ছিলাম না, মিয়াগির চোখ থেকে টপাটপ অশ্রু ঝরে পড়ছিল। তাই এবার আগের মতো কষ্ট পেলাম না।
মৃত্যুর পর কিছুই রেখে যাচ্ছি না আমি।
হয়তো কিছু পাগলাটে কিংবা কয়েকজন কাছের মানুষ আমার মতো বোকাকে মনে রাখবে। কিন্তু আসলে আমি খুব দ্রুত সবার স্মৃতি থেকে মুছে যাব, এটার সম্ভাবনাই বরং বেশি।
তবে সে নিয়ে আমি আর ভাবছি না।
একসময় চিরস্থায়ী, অমর হবার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু আর আমি ওতে আশা রাখছি না।
কেউ আমাকে মনে রাখুক কিংবা না রাখুক, তাতে আমার যায় আসে না।
কারণ, আমার পাশে এই মেয়েটি রয়েছে। এই মেয়েটি আর তার চমৎকার সেই হাসি।
ওটুকুই যথেষ্ট।
এখন বলুন মিস্টার কুসুনোকি,” মিয়াগি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি করে হেসে জিজ্ঞেস করল, “আগামী তিনদিন আমরা কীভাবে কাটাব?”
আমার কেন জানি মনে হচ্ছে…
—যে ত্রিশ বছর আমার দুর্ভাগার মতো কাটানোর কথা ছিল…
—যে ত্রিশটা দিন আমার আরও অর্থপূর্ণভাবে ব্যবহার করার কথা ছিল…
—এই শেষ তিনটে দিন সেগুলোর থেকেও বেশি মূল্যবান হবে।