দুই দিক

দুই দিক্

তিন বন্ধুতে রাত্রির আহার শেষ করিয়া বৈঠকখানায় ফরাসের উপর গড়াইতেছিলেন। মস্ত ধুনুচির মতো একটা কলিকায় সুগন্ধি খাম্বিরা তামাক বাতাসকে সুরভিত করিয়া তুলিতেছিল। যদিও তিন বন্ধুর মধ্যে দুইজন কায়স্থ এবং একজন ব্রাহ্মণ, তবু একই গড়গড়ায় সকলের ধূমপান চলিতেছিল।

তিনজনেরই বয়স হইয়াছে—চল্লিশের কাছাকাছি। সকলেই কলিকাতার বাসিন্দা। বিনোদ একজন বড় ডাক্তার—গত দশ বৎসরে বেশ পসার জমাইয়া তুলিয়াছেন। অতুল ও শরৎ উকিল; অতুল আলিপুরে এবং শরৎ হাইকোর্টে প্র্যাক্‌টিস করেন। ইহারাও স্ব স্ব কর্মক্ষেত্রে বেশ নাম করিয়াছেন। যে যাঁহার কাজে সর্বদা ব্যস্ত থাকেন, তাই কাছাকাছি থাকিয়াও সচরাচর দেখাসাক্ষাৎ ঘটিয়া উঠে না। আজ স্ত্রীর কি একটা ব্রত উদ্‌যাপন উপলক্ষে শরৎ দুই বন্ধুকে নিমন্ত্রণ করিয়াছেন। দিনের বেলা আসিবার সুবিধা হয় নাই বলিয়া দুইজনেই সন্ধ্যার পর অবসরমত আসিয়া জুটিয়াছেন।

নানারকম কথাবার্তার ভিতর দিয়া নিজ নিজ কর্মজীবনের অভিজ্ঞতার কথা অজ্ঞাতসারে উঠিয়া পড়িয়াছিল। অতুল তাকিয়ার উপর কনুইটা ভাল করিয়া স্থাপন করিয়া মুদ্রিত-নেত্রে গড়গড়ার নলে লম্বা একটা টান দিয়া বলিলেন, “যতই এই পেশার ভেতর ঢুকছি, ততই যেন মনে হচ্ছে, দয়া মায়া ধর্ম—এ সব পৃথিবী থেকে লোপ পেয়ে গেছে। শুধু কাড়াকাড়ি ছেঁড়াছেঁড়ি। বেশী দিন এ পথে থাকলে বোধ হয় অন্যায়-ন্যায়ের প্রভেদটাও মন থেকে মুছে যায়। খালি কি করে মকদ্দমা জিতব, সেই চিন্তাই সব চেয়ে বড় হয়ে ওঠে।”

শরৎ ভাবিতে ভাবিতে বলিলেন, “তা ঠিক, আদালতে মনুষ্য-প্রকৃতির মন্দ দিকটাই বেশী চোখে পড়ে। ভাল যে থাকতে পারে, এ বিশ্বাসটা ভালর অসাক্ষাতে কমজোর হয়ে আসে। মনে হয় ঠগ বাছতে বুঝি গাঁ উজাড় হয়ে যাবে।”

অতুল বলিলেন, “শুধু মনে হওয়া নয়, সত্যিই তাই। তোমাদের কি ধারণা জানি না, আমার তো বিশ্বাস, কৃতজ্ঞতা বলে যে একটা সদ্‌গুণের কথা কাব্যে-উপন্যাসে পড়া যায়, সেটা পৃথিবী থেকে বেবাক্‌ লুপ্ত হয়ে গেছে।”

বিনোদ হাসিতে হাসিতে বলিলেন, “তোমরা সব বেজায় সিনিক হয়ে পড়েছ, ওটা ঠিক নয়। মানুষের ওপর বিশ্বাস হারানো ভাল নয়, তাতে নিজেরই বেশী লোকসান।”

অতুল বলিলেন, “লাভ-লোকসান বুঝি না ভাই—যা দেখেছি, তাই বল্লুম। কৃতজ্ঞতা পাই না বলে আজকাল আর রাগও হয় না। ম্যামথ হাতির জাত ধ্বংস হয়ে গেছে বলে যেমন শোক করা বৃথা, এও তাই। সত্যটাকে সহজভাবে স্বীকার করে নেওয়া মাত্র—”

শরৎ হঠাৎ বলিলেন, “একটা গল্প মনে পড়ল। এমন তো কতবারই হয়েছে, যার উপকার করেছি, সে জবাবে বেশ একটু খোঁচা দিয়ে গেছে। কিন্তু এই ঘটনাটা কি জানি কেন প্রাণের মধ্যে বিঁধে আছে।”

কিছুক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া বলিলেন, “মাঝে আমার চরিত্র খারাপ হয়েছিল, জানো বোধ হয়?”

অতুল বলিলেন, “হুঁ, শুনেছিলাম বটে। কে যেন বল্লে—আজকাল শরৎবাবু যে খুব উড়ছেন। আমি বল্লুম, আজকাল তো ওড়ারই যুগ, শরৎ অন্যায় কি করেছে? তোমার পয়সা থাকে, তুমি ওড়ো।”

বিনোদ হাসিয়া বলিলেন, “আমার কানেও এসেছিল কথাটা। নাম করব না, কিন্তু এমন পরিপাটী বর্ণনাটি দিলে যে, বিশ্বাস না করা কঠিন। নেহাত আমি বলেই—”

শরৎ বলিলেন, “তোমরা দু’জন আর আমার স্ত্রী ছাড়া বোধ হয় এমন আর কেউ নেই যে কথাটা ধ্রুবজ্ঞান করেনি; এমন কি, অনেক পেশাদার ইয়ারও স্ফূর্তির লোভে আমার দলে ভিড়ে যাবার মতলবে ছিল। ভাবলে, একটা শাঁসালো নতুন কাপ্তেন পাক্‌ড়েছি।”

অতুল জিজ্ঞাসা করিলেন, “হয়েছিল কি?”

শরৎ একটু হাসিয়া বলিলেন, “একজনের উপকার করেছিলুম। ব্যাপারটা খুবই তুচ্ছ—শুনে হয়তো হাসবে।

“অতুল, তুমি নিতাইকে চেন। আলিপুরে বারে প্র্যাক্‌টিস করে—জুনিয়ার উকিল। নেহাত জুনিয়ারও বলা চলে না, বছর দশ-বারো ধরে প্র্যাক্‌টিস করছে। নিতাই আমার দূরসম্পর্কে আত্মীয় হয়।

“নিতাইদের অবস্থা আগে ভালই ছিল—তার বাপ মোটা মাইনের চাকরি করতেন। কিন্তু তিনি মারা যাবার পর থেকেই ওদের দৈন্যের দশা ধরল। সংসারে উপার্জনক্ষম লোকের মধ্যে ঐ এক নিতাই—সে সবে ওকালতিতে ঢুকেছে। কাজেই আর্থিক অবস্থাটা যে কি রকম দাঁড়াল, তা না বল্লেও বুঝতে পারছ।

“আত্মীয়তা থাকলেও ওদের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বেশী ছিল না, ক্কচিৎ কখনো বিয়ে-পৈতেয় দেখাশুনো হত, এই পর্যন্ত। বছর তিনেক আগে আমার বোন শান্তার ছেলের অন্নপ্রাশনে শালকেয় গিয়েছিলুম, সেখানে নিতাইয়ের সঙ্গে দেখা হল। অনেক দিন দেখিনি, হঠাৎ দেখে যেন চমকে উঠলুম। নিতাইয়ের মুখে দারিদ্র্যের একটা ছাপ পড়ে গেছে। ছোকরা দেখতে বেশ সুপুরুষ, রং ফরসা—কিন্তু দারুণ অর্থের অনটন যেন তার মুখময় কাল আঁচড় টেনে দিয়েছে। চোখে সর্বদাই একটা ত্রস্ত সঙ্কোচের ভাব—লজ্জাকর কোনও কথা যেন লোকের কাছ থেকে লুকোতে চায়।

“আমাকে এসে প্রণাম করলে। জিজ্ঞেস করলুম, ‘কি রে, কেমন আছিস?’ বল্লে, ‘ভাল আছি।’ আমি বল্লুম, ‘ওকালতি চলছে কেমন—’ সে চুপ করে রইল।

“মনে বড় অনুশোচনা হল। সম্পর্ক যতই দূর হোক, নিতাই আমার আত্মীয় তো বটে। চেষ্টা করলে তার কিছু উপকার কি করতে পারতুম না? এই ছেলেটা সংসার-যুদ্ধে অভিমন্যুর মতো একলা লড়াই করে ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়েছে, আর আমি নিজের কাজে এতই মত্ত যে, তার দিকে একবার ফিরে তাকাবার ফুরসৎ নেই?

“মনে মনে ঠিক করলুম, নিতাইয়ের জন্যে একটা কিছু করতে হবে। কিন্তু তার আগে কোথায় তার সব চেয়ে বেশী ব্যথা, সেটা জানা দরকার। ফস্‌ করে উপকার করতে গেলেই তো আর হবে না। মান-সম্ভ্রম বজায় রেখে যাতে তার সত্যিকারের সাহায্য হয়, এমন কাজ করা চাই।

“সেখানে আর কেউ ছিল না; কৌশলে নিতাইকে জেরা করতে আরম্ভ করলুম। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দু’চারটে কথা জিজ্ঞেস করতে না করতে নিতাই তার অভাব-অনটনের সব কথা প্রকাশ করে ফেললে। খুব জোর করে চেপে রাখতে চেয়েছিল বলেই বোধ হয় হঠাৎ ফেটে বেরিয়ে পড়ল।

“শেযে বল্লে, আর কিছু নয় শরৎদা—মক্কেলও মাঝে মাঝে আসে, কাজও যে নেহাৎ মন্দ করি, তা নয়। কিন্তু একটা জিনিসের অভাবে সব নষ্ট হয়ে যায়। বই নেই! তুমিই বল, নিজের বই না থাক্‌লে কি ওকালতি করা চলে? প্রত্যেক রুলিং-এর জন্যে যদি বার-লাইব্রেরিতে দৌড়ুতে হয়, তাহলে ওকালতি করা বিড়ম্বনা নয় কি? যে মক্কেল একবার আসে, আমার অবস্থা দেখে আর দ্বিতীয়বার আসে না। বেশি আর কি বলব তোমাকে, একখানা ভাল সিভিল প্রসিডিওর যে কিনব, সে ক্ষমতা নেই—এক দমে ৩০/৩৫ টাকা কোত্থেকে খরচ করব? পেটে খেতে হবে তো!’

“আমি বল্লুম, ‘বই পেলেই তুই চালিয়ে নিতে পারবি?’

“উৎসুক হয়ে সে বল্লে, ‘মনে তো হয় পারব, তবে বলতে পারি না, আমার যা পাথর-চাপা কপাল।’

“আমি বল্লুম, ‘আচ্ছা, কি কি বই তোর চাই, একটা লিস্ট করে দিস, আমি পাঠিয়ে দেব।’

“তার চোখে জল এসে পড়ল, কাঁদো কাঁদো হয়ে বল্লে, ‘শরৎদা, এ উপকার যদি তুমি কর—কখনো ভুলব না।’

“সেদিন ঐ পর্যন্ত হয়ে রইল।

“পরদিন নিতাইয়ের কাছ থেকে মস্ত এক বই-এর তালিকা এসে হাজির। Eastern Law House-এর দোকানে লিস্টখানা পাঠিয়ে দিলুম, আর উপদেশ দিয়ে দিলুম, বইগুলো নিতাইয়ের নামে পাঠিয়ে দিয়ে আমার নামে বিল করতে। প্রায় আটশ’ টাকার বিল হল।

“তারপর কাজের ঠেলায় নিতাইয়ের কথা একদম ভুলে গেছি। হঠাৎ দিন পনেরো পরে একদিন মনে পড়ল, কৈ, নিতাইয়ের কাছ থেকে বইগুলোর প্রাপ্তিসংবাদ তো পাইনি। Eastern Law House-কে ফোন করলুম—তাঁরা উত্তরে জানালেন যে, বই অনেক দিন আগে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে—নিতাইবাবু তার রসিদ পর্যন্ত দিয়েছেন। আধঘণ্টা পরেই দোকানের চাকর এসে নিতাইয়ের রসিদ দেখিয়ে গেল।

“ভাবলুম কি হল! নিতাই নিশ্চয়ই চিঠি দিয়েছে—তবে কি চিঠি ডাকে আসতে মারা গেল? যা হোক, নিতাই যখন বই পেয়েছে, তখন ও নিয়ে আর বেশী মাথা ঘামালুম না!

“এর মাস দুই পর থেকে নানা রকম কানাঘুষা বাঁকা-ইসারা আমার কানে আসতে লাগল। প্রথমটা গ্রাহ্য করিনি, কিন্তু ক্রমে আন্দোলনের মাত্রাটা এতই বেড়ে উঠল যে, আমার স্ত্রী একদিন হাসতে হাসতে আমায় বল্লেন—‘হ্যাঁগো, এ সব কি শুনছি—তুমি নাকি বুড়ো বয়সে বাগানবাড়ি যেতে আরম্ভ করেছ?’

“—‘তুমি কোত্থেকে শুনলে?’

“—‘আজ সন্ধ্যেবেলা হীরালালবাবুর স্ত্রী বেড়াতে এসেছিলেন; কত সহানুভূতি জানিয়ে গেলেন।’

“স্থির করলুম, আর উপেক্ষা করা নয়, কোথা থেকে এই কুৎসার উৎপত্তি তার সন্ধান নিতে হবে। মনে মনে ভারি একটা বিতৃষ্ণা অনুভব করতে লাগলুম। আমি তো কারুর সাতেও নেই পাঁচেও নেই, জ্ঞানত কারুর ইষ্ট বৈ অনিষ্ট করিনি, তবে আমার নামে এই সব মিথ্যে কলঙ্ক রটিয়ে লোকের লাভ কি?

“পরদিন বিকেলবেলা ঘটনাচক্রে নিতাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল। সেই শালকেয় শান্তার বাড়ির পর আর তাকে দেখিনি। ফুটপাথ দিয়ে যাচ্ছিল, আমাকে সামনে দেখে যেন ভূত দেখার মতো চমকে উঠল। তারপর আমি কোন কথা বলবার আগেই হঠাৎ পিছু ফিরে যেন আমার সামনে থেকে ছুটে পালিয়ে গেল।

“কিছুই বুঝতে বাকি রইল না। বুকের ভেতরটা যেন বিষিয়ে উঠল। বাড়ি ফিরে এলুম।

“কি মজা দেখ! যতদিন নিতাইয়ের কোন উপকার করিনি, ততদিন সে আমার সম্বন্ধে ভাল-মন্দ কোন কথাই বলেনি, আমার সম্বন্ধে সম্পূর্ণ উদাসীন নির্লিপ্ত ছিল, কিন্তু যেই আমি তার এতটুকু উপকার করেছি, অমনি সে আমার নামে কলঙ্ক রটাতে শুরু করেছে।

“সে যাক। নিতাই যে এ কাজ করেছে, তাতে আর সন্দেহ ছিল না, কিন্তু তবু সাক্ষাৎ প্রমাণ না নিয়ে শুধু তার ডিমিনারের ওপর নির্ভর করে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা চলে না। আমি রীতিমত অনুসন্ধান আরম্ভ করলুম।

“জানতে পারলুম, এই রটনা সম্বন্ধে একজন ছোকরা-উকিলের উৎসাহ সব চেয়ে বেশী—তার নাম কেশব মিত্তির। কেশবকে একদিন বার-লাইব্রেরিতে ধরলুম। আরো অনেকেই সেখানে ছিল, আমি বল্লুম, ‘কি হে, কাজটা কি ভাল হচ্ছে? ওকালতি করতে ঢুকেছ, পেনাল কোডের শেষের দিকে পাতা ক’টা উল্টে দেখনি?’

“কেশব ফ্যাকাসে মুখ করে বল্লে, ‘কি….কি বলছেন?’

আমি বল্লুম, ‘বলছি আমার নামে যে কুৎসা করে বেড়াচ্ছ, এর পরিণাম কি হতে পারে, তা কি ভেবে দেখনি?’

“কেশব রীতিমত ভয় পেয়ে বল্লে, ‘তা আমি কি করব? আপনার নিজের আত্মীয় যদি বলে, আমার কি দোষ? আমি তো নিজের চোখে কিছু দেখিনি।’

“আমি তাকে আড়ালে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলুম, ‘নিতাই বলেছে?’

“সে বল্লে, ‘হ্যাঁ।’

“—‘শুধু শুধু বল্লে, না কোনও উপলক্ষ হয়েছিল?’

“কেশব বল্লে, ‘নিতাই আমার বন্ধু। সেদিন তার বাড়ি গিয়ে দেখলুম, আপনি কতকগুলো বই তাকে উপহার দিয়েছেন। আমার সামনেই বইগুলো দোকান থেকে এলো। নিতাই হেসে বল্লে, ‘বইগুলো ঘুষ।’ সে না কি আপনাকে কোথায় যেতে দেখেছে, তাই আপনি তার মুখ বন্ধ করবার জন্যে—’

“এই তো ব্যপার! কেশবকে আর কিছু বলতে পারলুম না। আমি শুধু নিতাইয়ের কথা ভাবতে ভাবতে ফিরে এলুম।”

অনেকক্ষণ তিনজনেই চুপ করিয়া রহিলেন।

শেষে বিনোদ একটা নিশ্বাস ছাড়িয়া বলিলেন, “হুঁ! দুনিয়ায় কত রকম বিচিত্র জীবই আছে! আমি একটা ঘটনা বলি শোন। অনেক দিনের কথা, তখন সবে ডাক্তারি আরম্ভ করেছি।

“মেছোবাজার আর বাদুড়বাগানের মোড়ে একটা ছোট ডিস্‌পেন্সারী খুলেছিলুম, নীচের তলায় ডিস্‌পেন্সারী আর উপরে দুটো ঘর নিয়ে আমি থাকি। তখনও বিয়ে করিনি। সমস্ত দুনিয়াটা পায়ের কাছে পড়ে আছে। আমি যেন রূপকথার এক রাজপুত্র, কোথাকার ঘুমনগরীর রাজপ্রাসাদে ঢুকে কোন্ রাজকন্যাকে বুকে তুলে নেব কে জানে? অজানা ভবিষ্যের কুয়াশায় ঢাকা একটা মনোহর রহস্য যেন কৌতুকবশেই ধরা দিচ্ছে না! ছলনাময়ী তরুণী প্রিয়ার মতো ধরতে গেলেই হেসে পালিয়ে যাচ্ছে। সে এক দিন ছিল, কি বল অতুল—অ্যাঁ?

“সে যা হোক। দিনগুলো দিব্যি কেটে যাচ্ছে। ডিস্‌পেন্সারী ও মন্দ চলছে না, এমন সময় একদিন মাড়োয়ারীদের সঙ্গে মুসলমানদের দাঙ্গা বেধে গেল। বলা নেই কওয়া নেই, হিন্দু-মুসলমান একদিন সকালবেলা উঠে পরস্পরের গলা কাটতে শুরু করে দিল।

“সে বীভৎসতার সবিস্তার বর্ণনা করবার কোনও দরকার দেখি না, তোমরাও তো সে সময় কলকাতায় ছিলে, অল্প-বিস্তর দেখেছ। আমার ডিস্‌পেন্সারীর সামনে গোটা তিনেক খুন হয়ে গেল, চোখে চেয়ে দেখলুম, কিন্তু কিছু করতে পারলুম না। মুসলমানের পাড়া—আমি হিন্দু; এ রকম অবস্থায় নিজের হিন্দুত্বকে যথাসাধ্য অস্পষ্ট করে ফেলাই একমাত্র নিরাপদ পন্থা।

“আমি তবু ডাক্তারখানা খুলে রেখে হিন্দু-মুসলমান-নির্বিশেষে ওষুদ-বিষুদ দিয়ে কিছু সাহস দেখিয়েছিলুম। নইলে নিজের কাছে নিজে মুখ দেখাতে পারতুম না।

“ঐ পাড়ার একটা গুণ্ডা ছিল, তার নাম নূর মিঞা। পুলিস থেকে আরম্ভ করে পাড়ার কুকুর-বেড়াল পর্যন্ত তাকে জানত, এত বড় দুর্ধর্ষ গুণ্ডা বোধ হয় কলকাতা শহরে আর দুটো ছিল না। তার গোটাতিনেক উপপত্নী ছিল—সব কটাই গেরস্তর ঘর থেকে কেড়ে আনা। প্রকাশ্যভাবে কোকেনের ব্যবসা করত, কিন্তু কারো সাহস ছিল না যে নূর মিঞাকে ধরিয়ে দেয়।

“দাঙ্গার সময় নূর মিঞা আমার ডাক্তারখানার কাছাকাছি একটা গলির মধ্যে লুকিয়ে বসে থাকত। রাস্তা নির্জন দেখে কোন হিন্দু একলা সে পথ দিয়ে গেলেই নূর মিঞা দেড় ফুট লম্বা ছুরি নিয়ে নিঃশব্দে এসে তার পিঠে কিংবা পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে দিত। ছুরি মেরেই নুর মিঞা অদৃশ্য। তারপর কিছুক্ষণ চেঁচামেচি, হাঁকাহাঁকি, পুলিসের হুইসল, অ্যাম্বুলেন্স গাড়ির শব্দ। আবার আহত ব্যক্তি স্থানান্তরিত হবার পর—সব চুপচাপ।

“এইরকম গোটাকয়েক অতর্কিত খুন হবার পর ওপথে লোক-চলাচল একেবারে বন্ধ হয়ে গেল। নূর মিঞা তার গলির মধ্যে ওৎ পেতে বসে আছে, কিন্তু শিকার আসে না। যখন আসে, তখন লাঠি-তলোয়ার নিয়ে দলবদ্ধ হয়ে শিকারী সেজে আসে। কাজেই সে-সময় নূর মিঞা ও তার স্বধর্মীরা যে-যার কোটরে প্রবেশ করে। তারা চলে গেলে আবার গর্ত থেকে বার হয়।

“এমনিভাবে দুটো দিন গেল। দাঙ্গা সমভাবে চলছে, দূর থেকে তার হৈ হৈ সোরগোল শুনতে পাচ্ছি, কিন্তু আমাদের পাড়া চুপচাপ। নূর মিঞার হাতে একেবারে কাজ নেই। আমিও সেদিন ভর সন্ধ্যাবেলা ঘরের জানলার কাছে চুপটি করে বসে আছি, এমন সময় বাইরে ফুটপাথের ওপর খট্‌ খট্‌ শব্দ শুনে গলা বাড়িয়ে দেখি, ভারী নাগরা পায়ে দিয়ে এক পশ্চিমী খোট্টা হন্‌ হন্‌ করে আসছে। তার গায়ে দোলাই-এর মতো কি জড়ানো, ন্যাড়া মাথার উপর প্রকাণ্ড টিকি—যেন পতাকার মতো পতপত করে উড়ছে। দেখেই তো আমার প্রাণ উড়ে গেল। এই রে! এল বুঝি নূর মিঞা তার দেড় ফুট লম্বা ছুরি নিয়ে!

“হলও তাই। লোকটা আমার বাড়ির সামনে পর্যন্ত আসতে না আসতে নুর মিঞা পিছন থেকে নেকড়ে বাঘের মতো এসে তার ঘাড়ে লাফিয়ে পড়ল। তারপর মুহূর্তের মধ্যে কি যেন একটা কাণ্ড হয়ে গেল। টিকিধারী খোট্টা হঠাৎ ফিরে দাঁড়িয়ে দোলাই-এর ভেতর থেকে দুটো হাত বার করলে-দু’হাতে দুটো ছুরি! নূর মিঞার হাতের ছুরি হাতেই রইল—খোট্টা বিদ্যুদ্বেগে একখানা ছোরা তার বুকে আর একখানা তার পেটে বসিয়ে দিলে। তারপর যেমন এসেছিল, সেই ভাবে হাত ঢেকে বেরিয়ে গেল।

“নূর মিঞা ফুটপাথের উপর পড়ে গোঙাতে লাগল। তারপর হামাগুড়ি দিয়ে নিজেকে টান্‌তে টান্‌তে আমার দরজা পর্যন্ত এসে মুখ থুবড়ে পড়ে গেল। রক্তে কাদায় দরজার চৌকাঠ মাখামাখি হয়ে গেল।

“আমি আর আমার কম্পাউন্ডার ধরাধরি করে তাকে ঘরের মধ্যে নিয়ে এলুম। মনে হচ্ছিল, ঐখানে পড়ে মরে থাকুক ব্যাটা—যেমন কর্ম, তেমনি ফল! ঐ কাদার মধ্যে মুখ গুঁজে পড়ে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্ত করুক!—কিন্তু ডাক্তার হয়ে সেটা আর কিছুতেই পারলুম না।

“ক্ষত পরীক্ষা করে দেখলুম, বুকের জখম তত ভয়ানক নয়, কিন্তু পেটের আঘাত সাংঘাতিক। যা হোক, তখনকার মতো ফার্স্ট্‌ এড্‌ দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সকে ফোন করতে যাচ্ছি, নূর মিঞা চোখ চেয়ে ভাঙ্গা গলায় বল্লে, ‘ডাগদর সাহেব!’

“তার কাছে যেতেই বল্লে, ‘জান্‌ বচা দিজিয়ে, আপকো লাখ রূপা দুঙ্গা।’

“বিরক্ত হয়ে বল্লুম, ‘সেই চেষ্টাই তো করছি রে বাপু! মেডিকেল কলেজে যাও—দেখ যদি বাঁচাতে পারে।’

“নূর মিঞা মিনতি করে বল্লে, ‘মিটিয়া কলেজ মৎ ভেজিয়ে বাবু, হিন্দু ডাগদর লোগ জহর পিলাকে মার ডালেগা।’

“আমি বিদ্রুপ করে বল্লুম, ‘তা তো বটেই। মিটিয়া কলেজের ডাক্তাররা সব তোমার মতো কি না। কিন্তু আমিই কি তোমাকে জহর খাইয়ে মেরে ফেলে দিতে পারি না? আমিও তো হিন্দু!’

“—‘আপ্‌ অ্যায়সা কাম নহি কিজিয়ে গা’—বলে নূর মিঞা অজ্ঞান হয়ে পড়ল। এত বেশী রক্তক্ষয় হয়েছিল যে, আর কথা কইবার সামর্থ্য রইল না।

“আমিও ভেবে দেখলুম, নাড়াচাড়া করবার চেষ্টা করলে হয়তো রাস্তাতেই মরে যাবে। নিরুপায় হয়ে, হাসপাতালে খবর পাঠিয়ে দিয়ে, তাকে নিজের বাড়িতেই রাখলুম।

“মানুষের মনের মতো এমন আশ্চর্য জিনিস বোধ হয় দুনিয়ায় আর নেই। যে লোকটার ওপর আমার ঘৃণা আর বিদ্বেষের অন্ত ছিল না, যাকে আমি নিজের চোখে তিন-চারটে খুন করতে দেখেছি, তাকেই যে কেন রাত্রি-দিন নিজের কাছে রেখে চিকিৎসা করে সারিয়ে তুললুম, তা আজও আমি জানি না। আমার মন যখন তাকে বিষ খাওয়াতে চেয়েছে, তখন আমি তাকে বেদানার রস খাইয়েছি। পূর্ণ বিকারের ঝোঁকে যখন সে ‘মারো মারো হিন্দু মারো!’ বলে চেঁচিয়েছে, আমি তখন তার মাথায় আইসব্যাগ ধরেছি। মানুষের মনস্তত্ত্ব নিয়ে তোমরা ঘাঁটাঘাঁটি কর, হয়তো এর একটা সদুত্তর দিতে পারবে; স্থূল শরীরটা নিয়ে আমার কারবার, তাই আমার কাছে এ একটা অদ্ভুত প্রহেলিকাই রয়ে গেছে।

“যেদিন তার প্রথম জ্বর ছাড়ল, সেদিন সে বিছানায় উঠে বসে প্রথম কথা কইলে, ‘আমাকে একটু কোকেন দিন।’

“তারপর থেকে প্রত্যহ কোকেন নিয়ে ঝুলোঝুলি আরম্ভ হল, আমিও দেব না, সেও ছাড়বে না।

“একদিন সে বল্লে, ‘ডাগদর সাহেব, দশ হাজার রূপা দুঙ্গা, এক পুরিয়া কোকেন দিজিয়ে।”

“আমি বল্লুম, ‘তা তো দেব, কিন্তু টাকাটা তোমার দেখি আগে!’

“সে বল্লে, ‘ইমান্‌ কস্‌ম, ভেজ্‌ দুঙ্গা।’

“আমি বল্লুম, ‘ঢের হয়েছে আর রসিকতা করতে হবে না। জেনে রাখ যে, এক রতি কোকেন একলাখ টাকার বদলেও তোমাকে দেব না।’

“আর একদিন এমনি কোকেনের জন্য খাই-খাই করছে, আমি তাকে বল্লুম, ‘আচ্ছা নূর মিঞা, আমি তো স্বচক্ষে তোমায় তিনটে খুন করতে দেখেছি, এখন যদি তোমাকে পুলিসে ধরিয়ে দিই?’

“সে মুখ সিঁটকে বল্লে, ‘কুছ নেহি হোগা। আমার সাবুদ তৈরি আছে। মাঝ থেকে আপনি ফেঁসে যাবেন।’

“আমি বল্লুম, ‘কি রকম?’

“সে বল্লে, ‘দাঙ্গার সময় আমি হাজতে ছিলুম। বিশ্বাস না হয় থানায় গিয়ে দেখে আসতে পারেন, সেখানে আমার টিপ সই পর্যন্ত মজুত আছে।’

“লোকটার শয়তানী দেখে নতুন করে অবাক হয়ে গেলুম। নিজের অকাট্য অ্যালিবাই তৈরি করে—আটঘাট বেঁধে দাঙ্গা করতে নেমেছিল।

“তারপর একদিন, তখনো তার গায়ে ভাল জোর হয়নি, চেহারা প্রেতের মতো, আমি তাকে বল্লুম, ‘তোমার ঘা সেরে গেছে, ইচ্ছে কর তো তুমি এখন যেতে পার।’

“সে কোন কথা না বলে বিছানা থেকে উঠে টলতে টলতে বেরিয়ে গেল। যাবার সময় নিচু হয়ে আমাকে একটা সেলাম করে গেল।

“প্রায় তিন মাস আর নূর মিঞার দেখা নেই। একদিন আমার কম্পাউন্ডারকে বল্লুম, ‘ওহে, সে লোকটা তো আর এলো না।’

“কম্পাউন্ডারটি তোমাদের মতো একজন সিনিক। সে বল্লে, ‘আবার কি করতে আসবে? আপনি কি ভেবেছেন, সে লাখ টাকা নিয়ে আপনাকে দিতে আসবে? মনেও করবেন না। বরং সুবিধে পেলে আপনার গলায় ছুরি বসিয়ে দিতে পারে বটে।’

“কথাটা নেহাত অসঙ্গত মনে হল না। নরহন্তা গুণ্ডাটার প্রাণ বাঁচানর জন্য নতুন করে অনুতাপ হতে লাগল।

“সেই দিন দুপুরবেলা একলা বসে আছি, হঠাৎ নূর মিঞা এসে হাজির। রুগ্‌ণভাব আর নেই, প্রকাণ্ড যণ্ডা, লম্বা এক সেলাম করে বল্লে, ‘হুজুর!’

“আমি বল্লুম, ‘কি নূর মিঞা, কি মনে করে? তোমার লাখ রূপেয়া নিয়ে এলে নাকি?”

“সে লুঙ্গির ভেতরে থেকে পুরুষ্ট একটি নোটের তাড়া বার করে বল্লে, ‘মালিক, লাখ রূপা দেবার আমার ওকাত নেই, কিন্তু পাঁচ হাজার টাকা এনেছি—এই নিয়ে আমাকে ঋণমুক্ত করুন।’

“আমি অবাক হয়ে বল্লুম, ‘পাঁচ হাজার টাকা কি হবে?’

“সে বল্লে, ‘হুজুর, এ টাকা আমার নজরানা। ইমানসে বলছি, এর বেশী দেবার এখন আমার ক্ষমতা নেই।’

“আমি হেসে বল্লুম, ‘নূর মিঞা, তুমি কি ভেবেছ, তোমার টাকার লোভে আমি তোমার প্রাণ বাঁচিয়েছিলুম?’

“নূর মিঞা চুপ করে রইল।

“আমি আবার বল্লুম, ‘তোমার কোকেন-বেচা মানুষের রক্ত-শোষা টাকা তুমি নিয়ে যাও, ও আমার দরকার নেই। তোমার মতো লোকের প্রাণ বাঁচিয়ে যে পাপ করেছি, ভগবান আমাকে তার শাস্তি দেবেন।’

“টাকা গছাবার জন্য সে ধস্তাধস্তি করতে লাগল। আমি নিলুম না। সে অনেক কাকুতি-মিনতি করলে, কিন্তু আমি অটল হয়ে রইলুম। তখন সে নোটের তাড়াটা তুলে নিয়ে এক রকম রাগ করেই উঠে চলে গেল।

“সাতদিন পরে নূর মিঞা আবার ফিরে এসে বল্লে, ‘মালিক, আপনি হিন্দু হয়ে জেনে শুনে আমার মতো দুশমনের প্রাণ বাঁচিয়েছেন, একথা আমি কিছুতেই ভুলতে পারছি না। বেশ, টাকা না হয় নেবেন না, আমাকে আপনার গোলাম করে রাখুন। যা হুকুম করবেন, তাই করব।’

“আমার মাথার মধ্যে একটা আইডিয়া খেলে গেল। বল্লুম, ‘যা হুকুম করব, তাই করবে? ঠিক বল্‌ছ?’

“সে বল্লে, ‘জান কবুল, ইমান কবুল—তাই করব।’

“আমি আবার বল্লুম, নূর মিঞা, ঠিক করে ভেবে বল, ঝোঁকের মাথায় দিব্যি গেলে বস না।’

“সে থমকে গিয়ে বল্লে, ‘ধর্ম ছাড়তে পারব না। আর যা বলবেন তাই করব। খোদা কসম।’

“আমি বল্লুম, ‘না, ধর্ম তোমাকে ছাড়তে বলব না। কিন্তু এ তার চেয়েও শক্ত কাজ নূর মিঞা।’

“সে বল্লে, ‘তা হোক, হুকুম করুন।’

“আমি বল্লুম, ‘বেশ, আমি হুকুম করছি, তোমাকে কোকেন ছাড়তে হবে, কোকেনের ব্যবসা ছাড়তে হবে, আর গুণ্ডামি ছাড়তে হবে। কেমন পারবে?’

“নূর মিঞা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে রইল। তারপর আস্তে আস্তে চেয়ারে বসে পড়ল। অনেকক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে কি যে ভাবলে, সেই জানে। শেষে প্রকাণ্ড একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে বল্লে, ‘বাবুজী, আমার দুনিয়া আপনি কেড়ে নিলেন। বহুত আচ্ছা, তাই হবে। কোকেন ছাড়বো, গুণ্ডামিও ছাড়বো। কিন্তু এতে আপনার কি নফা হল, মালিক?’

“আমি তার কাঁধে হাত রেখে বলুম, ‘যদি সত্যই ছাড়তে পার নূর মিঞা, তাহলে আমার কি লাভ হল, তা আর একদিন তোমাকে বল্‌ব।’

“গুণ্ডামি নূর মিঞা সহজে ছেড়ে দিলে। কিন্তু কোকেন ছাড়া নিয়ে যে কি কাণ্ড করতে লাগল তা বর্ণনা করা অসম্ভব। প্রথম প্রথম সন্ধ্যাবেলা এসে আমার পায়ে মাথা কুট্‌তে আরম্ভ করলে। কোকেনের ক্ষুধা যে কি পৈশাচিক ক্ষুধা, তা যে কোকেন খায়নি তাকে বোঝান যায় না। প্রত্যহ আমার পায়ে মুখ ঘষতে ঘষতে বল্‌ত, ‘মালিক, একবার হুকুম দাও, একটিবার। ছুঁচের আগায় যতটুকু ওঠে, ততটুকু খাব, বেশী নয়।’

“এক এক সময় আমারই মায়া হত, জোর করে নিজেকে শক্ত করে রাখতুম।

“কিন্তু আশ্চর্য মনের বল ঐ গুণ্ডার। আর কেউ হলে কোন্‌কালে প্রতিজ্ঞা উড়িয়ে দিয়ে বসে থাকত। নূর মিঞা বুলডগের মতো প্রতিজ্ঞা কামড়ে পড়ে রইল।

“পুরো এক বছর লাগল তার কোকেনের ক্ষুধা জয় করতে। বছরের শেষে একদিন সে আমার পা দুটো জড়িয়ে ধরলে! বল্লে, ‘মালিক, আজ বুঝেছি, কেন আমাকে কোকেন ছাড়তে বলেছিলে। তুমি মানুষ নয়, তুমি পীর নবী।’

“নূর মিঞা এখন বিড়ি-তামাকের দোকান করেছে।

“ভোরবেলা আমার ডিসপেন্সারীতে কখনো যদি যাও, দেখবে নূর মিঞা সর্বপ্রথম এসে আমাকে সেলাম করে যায়।”

১৩৩৮

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *