দস্যু কেনারামের পালা (রচয়িতা – চন্দ্রাবতী)

কেনারামের জন্ম ও নানা কষ্ট

তার পরে যশোধরা শুন দিয়া মন |
মাসেকের মধ্যে হৈল গর্ভের লক্ষণ ||
সুগোল সুন্দর তনুগো লাবণি জড়িত |
সর্ব্ব অঙ্গ দিনে দিনে হইল পূরিত ||
অজীর্ণ অরুচি আর মাথাঘোরা আদি|
আলস্য জড়তা হৈল আছে যত ব্যাধি।।
সর্ব্ব অঙ্গে জ্বলে মাথা তুলিতে না পারে।
আহার করিয়া মাত্র ফেলে বমি করে।।
রুচী হৈল চূকা আর ছিকর মাটিতে |
বিছানা ছাড়িয়া শুয়ে কেবল ভূমিতে ||
এহি মতে দশ মাস দশ দিন গেল |
পরেত গর্ভেত এক ছাওয়াল জন্মিল।।

চন্দ্রাবতী কয় শুনগো অপুত্রার ঘরে।
সুন্দর ছাওয়াল হৈল মনসার বরে।।

মায়ের অঞ্চলের নিধিগো মায়ের পরাণী।
দিন দিন বাড়ে যেমন চাঁদের লাবণী।।
ছয় না মাসের শিশুগো হইল যখন।
মহা আয়োজনে করে অন্ন পরশন।।
বাছিয়া রাখিল মায়ে গো শুন কিবা নাম।
দেবীর পূজার কিনা তাই “কেনারাম”।।

হায়রে দারুণ বিধি কি লিখিয়া ভালে |
মরিলা জননী হায়রে সাত মাসের কালে ||

কোলেতে লইয়া পুত্র কান্দে খেলারাম |
“কি হেতু হৈলা মর প্রতি বাম ||
মাও ভিন্ন কে বা জানেরে পুত্রের বেদন |
যাহার স্তনেতে হয় শরীর পালন ||
সেই মায়ের নিলা কারি কিসের কারণে |
কি মতে বাঁচাইয়া পুত্র রাখিব জীবনে ||
অপুত্রা ছিলামগো মোরা সেই ছিল ভাল |
ভুলাইয়া মায়ায় পরে কেন দেও শেল ||”

কান্দিয়া কান্দিয়া তবে যায় খেলারাম |
পুত্র কোলে উপনিত দেবপুর গ্রাম ||
সোহিত গ্রামেতে হয় মাতুল আলয় |
মামার বাড়ীতে কেনা কিছুদিন রয় ||

দুগ্ধ দিয়া মামী তার পালয়ে কুমারে |
দিনে দিনে বাড়েগো শিশু দেবতার বরে।।
এক না বছরের শিশু হইল যখন।
খেলারাম গেল তীর্থ করিতে ভ্রমণ।।
এক দুই করি পার তিন বছর গেল।
খেলারাম ঘরে আর ফিরিয়া না আসিল।।

এমত সময় পরে শুন সভাজন।
আকাল হইলোগো অনাবৃষ্টির কারণ।।
এক মুষ্টি ধান্য নাহি গৃহস্থের ঘরে।
অনাহারে পথে ঘাটে যত লোক মরে।।
আগেত বৃক্ষের ফল করিল ভোজন।
তাহার পরে গাছের পাতা করিল ভক্ষণ।।
পরেও ঘাসেতে নাহি হইল কুলান।
ক্ষুধায় কাতর হইল যত লোকজন।।
গরুবাছুর বেচিয়া খাইল খাইল হালিধান।
স্ত্রীপুত্র বেচে নাহি গো গণে কুলমান।
পরমাদ ভাবিল মাতুল কেমনে বাচে প্রাণ।
কেনারামে বেচল লইয়া পাঁচ কাঠা ধান।।

Post a comment

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *