শীত ঋতুর অবসান হইয়াছে। মলয় সমীরণের মধুর সঞ্চরণে উদ্ভিদ এবং প্রাণীজগতের প্রাণে প্রাণে নব-জীবন এবং নব আনন্দের সঞ্চার হইয়াছে। নবীন পত্র-পল্লবে এবং মঞ্জরী-মৌলী-ভূষণে ভূষিত হইয়া নানা জাতীয় বৃলতা অপরূপ শোভা বিস্তার করিতেছে। অনন্ত আকাশের অনন্ত নীলিমা উজ্জ্বলতর হইয়া আল্লাহতালার অনন্ত মহিমা প্রকাশ করিতেছে! পাখীর কণ্ঠে ললিত ছন্দে নানাবিধ মধুর ও মনোহর কুজন স্ফুরিত হইয়া দিগদিগন্ত মুখরিত এবং পুলকিত হইয়া উঠিয়াছে। এমন মধুর ও মনোহরি বসন্তকালে শিবাজী দিগদিগন্ত মুখরিত এবং পুলকিত হইয়া উঠিয়াছে। এমন মধুর মনোহর বসন্তকালে শিজাবী আমিনা বানুকে বিশেষ সম্বর্ধনা পুর্বক রাজধানী রায়গড়ে বিশেষ পরামর্শের জন্য নিমন্ত্রণ করিয়া পাঠাইলেন।
মালেকা প্রথমে নিমন্ত্রণে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করিলেন, নানা প্রকার ওজুহাত দেখাইতে লাগিলেন। অবশেষে বহু সাধ্য-সাধন এবং অনুনয়-বিনয়ে বাধ্য হইয়া জননী হামিনা বানু, দুইশত সিপাহী এবং স্বকীয় সহচরীগণ সহ রায়গড়ে শুভাগমন করিলেন।
শিবাজী বিপুল আড়ম্বর ও ধুমধামে মালেকাকে অভ্যর্থনা করিলেন। ফলত শিবাজী দ্বারা মালেকা আমেনা বানুর আদর-অভ্যর্থনা যতদূর হওয়া সম্ভবপর, তাহার কিছুই ক্রটি হইল না। আমিনা, তাঁহার মাতা এবং সঙ্গীয় লোকজন সকলে। শিবাজীর ভদ্রতা, সৌজন্য ও শিষ্ট ব্যবহারে পরম প্রীতি লাভ করিলেন।
শিবাজী এই সময়ে কৌশলে আমিনা বানুর রূপ-লাবণ্য বিশেষরূপে দর্শন করিয়া যার-পর-নাই লুদ্ধ এবং মুগ্ধ হইয়া পড়িলেন। আমেনা বানুর ভাসা ভাসা পটল-চেরা ভুবন-মোহন-অক্ষিযুগল এবং সর্বাঙ্গম সুঠাম ও সৌন্দর্য দেখিয়া সকলেই প্রশংসা করিতে লাগিল। শিবাজী আলোকসামান্য সুন্দরী, অগ্নিতুল্য তেজস্বিয়নী এবং প্রখর রাজনীতিজ্ঞা, এই রমণীরত্নকে পত্নীরূপে লাভ করিতে পারিলে, সমগ্র ভারতের অধিপতি হইয়া আশাও পোষণ করিতে লাগিলেন। মুসলমান কখনও কাফেরকে কন্যা দান করিতে পারে না, শিবাজী এই চিন্তাতেই অস্থির হইতে লাগিলেন। সুতরাং অসম্ভব কার্যকে সম্ভব করিবার জন্য শিবাজী কাল্পনিক পন্থা উদ্ভাবনে ব্যস্ত হইলেন। অনেক চিন্তা করিলেন, কিন্তু কিছুই নির্ধারিত হইল না। মন ক্রমেই মাতিয়া উঠিতে লাগিল। ক্রমেই লালসা বায়ু-প্রাপ্ত বহ্নির ন্যায় অতীব প্রচন্ড হইয়া উঠিল।
শিবাজী মালেকার সৌন্দর্য-সুধার এমনি পিপাসু হইয়াছিলেন যে, ক্রমশ তাঁহার হিতাহিত জ্ঞান ও পরিনামদর্শিতা একেবারেই লোপ পাইল। মালেকাই তাহার ধ্যান-জ্ঞান-চিন্তাকে আশ্রয় করিয়া ফেলিল। অবশেষে তাঁহার পরামর্শদাতা শুরু রামদাস স্বামীর পরামর্শে, ভানপূর্বক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়া মালেকা বানুর পাণিগ্রহণের জন্য চেষ্টা করিতে বলিলেন। বিবাহ করিবার পরে সুবর্ণ-নির্মিত কৃত্রিম গাভীর গর্ভে প্রবেশ করিয়া প্রসব-দ্বার দিয়া নির্গত হইয়া সেই গরু ব্রাহ্মণদিগকে দান করিলেই প্রায়শ্চিত্ত হইয়া যাইবে। আবার তিনি হিন্দুত্ব লাভ করিতে পারিবেন। রাজা, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে, মোসলেম-ললনা পাণিপীড়ন করিতে পারেন, রামদাস স্বামী এরূপ ব্যবস্থাও দিলেন।
অসাধারণ !